You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.18 | বাল্টিমোর সান, ১৯ অক্টোবর, ১৯৭১ “এশিয়ার নাজুক পরিস্থিতি” - সংগ্রামের নোটবুক

বাল্টিমোর সান, ১৯ অক্টোবর, ১৯৭১
“এশিয়ার নাজুক পরিস্থিতি”

আমরা আশা রাখছি যে, ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবশ্যম্ভাবী দুঃখজনক পরিস্থিতি শুধুমাত্র দৃশ্যত হবে (কার্যত হবেনা) এবং দুটি জাতি পুনরায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অলাভজনক কোন যুদ্ধের মুখোমুখি হবেনা। কিন্তু অবস্থা বিশেষ প্রয়োজন অনুযায়ী নয়া দিল্লী এবং রাওয়ালপিন্ডি যেমন সামরিক প্রস্তুতির ব্যবস্থা গ্রহন করছে তাতে অশুভ লক্ষন দেখা যাচ্ছে।

ভারত কোন যুদ্ধ চায়না কারণ যুদ্ধে খরচ ও মানুষের দুর্ভোগের নতুন অসহনীয় বোঝার সৃষ্টি হয়। যুগোশ্লাভিয়ার পরিদর্শক টিটোর প্রতি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিবৃতি দেন যে, ইন্দিরা যুদ্ধ চায়না কিন্তু নিজেকে রক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, শুধু কার্যত নয় বরং বাস্তব অবস্থান থেকেও, যদিও এটা উল্লেখ করা আবশ্যক ভারতে কেউ কেউ মনে করেন যুদ্ধ এড়ানো যাবে না, এবং যেহেতু অনিবার্য সেহেতু এমন চাওয়াটাই উচিত। এই দৃষ্টিভঙ্গি মোটেই, “পাকিস্তানি সামরিক মহল থেকে যদি আমাদের উপর যুদ্ধ নেমে আসে, আমাদের বাহিনীও সামনে আগাবে এবং শিয়ালকোট ও পশ্চিম সীমান্তের লাহোর শহর দখল করবে, এবং পাকিস্তান অঞ্চল থেকে এই অবস্থা আমরা প্রত্যাহার করবোনা, যাই ঘটুক না কেন” ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর এরুপ মন্তব্য দ্বারা প্রভাবিত নয়।

যেকোন ব্যাপারে, জনাব রাম বলেন, যতদিন বাংলাদেশ বা পূর্ব বাংলা হুমকির সম্মুখীন হবে ততদিন পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী থাকবে। অন্তরের গহীন থেকে আজকের টানাপোড়নের প্রকৃত কারণ হলো নৃশংস পশ্চিম পাকিস্তানি কতৃক গত মার্চে পূর্ব পাকিস্তানিদের দমন, এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় সমস্যা যেটা হলো ভারতে নয় মিলিয়ন শরনার্থীর উপস্থিতিসহ প্রতিদিন চল্লিশ হাজার হারে যারা আসছে।

ভারত জোরাজুরি করছে, পাকিস্তান একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তিতে পৌঁছাতে বাধ্য যার অধীনে উদ্বাস্তুদের নিরাপদে ফিরে আসতে পারে। সে ধরনের কোন বন্দোবস্ত দূরবর্তী। উদ্বাস্তুদের বেশিরভাগ বাঙালি হিন্দু এবং খুব সম্ভব যে শুধুমাত্র এই একটি কারনেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক তাদের প্রস্থানকে অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে অব্যাহতি হিসাবে বিবেচনা করছে। এছাড়াও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের খুব চমৎকার একটা আপোষের প্রস্তাব আছে, যদি ভারত তার নিজস্ব বাহিনী এবং অনুপ্রবেশ ও অন্যান্য প্রতিকূল কর্মকান্ড, যা মূলত পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে প্রতিকূল কাজ বলে গন্য হবে, থেকে অব্যাহতি দেয় তাহলে সীমান্ত থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সরিয়ে নিবে।

চরনভূমির কারনেই পাকিস্তান যুদ্ধ করতে চায় না। এমনকি শীতকালের আগে যুদ্ধ আসলেও কি হিমালয় বন্ধ করা যাবে, এসব কারণ চীন সীমান্ত নিয়ে ভারতকে অতিরিক্ত ভাবাচ্ছে, পাকিস্তানের নেতাদের অবশ্যই জানা উচিত ভারতের সামরিক বাহিনী কতটা উন্নত, এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বিখ্যাত শহর (প্রকৃত ও রূপক) লাহোরকে দখল ও ধরে রাখতে প্রকৃত অর্থে ভারতীয় সেনাবাহিনী কতটা সম্ভাবনাময়। লাহোরের পতনে খুব ছোটখাটো বিশৃঙ্খলা হবে। পশ্চিম পাকিস্তান যদি মরিয়া হয়েও ইচ্ছুক হয়।

ধারনানুযায়ী প্রত্যাশা করা যাচ্ছে এই মুহুর্তে যুদ্ধে জয় আসছেনা। কিন্তু সামরিক বাহিনীর হালচাল যেভাবে বাড়ছে এবং উভয় পক্ষের ক্রম্বর্ধমান উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করছে যেখানে দৈবক্রমে ঘটা যুদ্ধ বন্ধ করা যাবেনা।