You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.03 | গার্ডিয়ান, লন্ডন, এপ্রিল ১৪ ১৯৭১ সম্পাদকীয় বাগাড়ম্বর ও বাস্তব - সংগ্রামের নোটবুক

গার্ডিয়ান, লন্ডন, এপ্রিল ১৪ ১৯৭১
সম্পাদকীয়
বাগাড়ম্বর ও বাস্তব

নোংরা রক্তপাতের তিন সপ্তাহ পরে পাকিস্তানের সামরিক শাসকেরা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ? ভাসা ভাসা ভাবে তারা উন্নতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের নানা স্থানের “ স্বাধীনতা যোদ্ধারা” কখনোই এবং ভবিষ্যতেও কখনোই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর শক্তির সাথে পারবে না। শহরের এই শক্তি প্রতিরোধ চ্যাপ্টা করার জন্য মোতায়ন করা হয়েছে। ইয়াহিয়া খান খুব শীঘ্রই প্রায় সমস্ত শহরগুলোকেই কঠিন নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসবে । তিনি আরও বেশি উড়ার জন্য চীনের খুচরা যন্ত্রাংশ আনবে এবং যত বেশি নেয়া যায় সেই পরিমান ভাড়াতে অলংকারশাস্ত্র ক্রয় করবে। যেই মুহূর্তে আওয়ামীলীগের “ দুর্বৃত্তরা ” মৃত, বন্দী অথবা উপেক্ষনীয় হবে তাতে পাকিস্তান আতঙ্কগ্রস্ত হবে কিন্তু ঐক্য বদ্ধ নয়।

তা সত্ত্বেও হিসাব নিকাশ পত্র সত্যিই খুবই ভিন্ন রকমের সম্ভবত ( আদর্শ ভাবে এবং বিভিন্ন খরচের বিষয়ে) পাকিস্তান পৃথক হওয়ার চেয়ে একসাথে থাকাটা উত্তম। সম্ভবত ক্রমাগত সামরিক শাসন রাষ্ট্রে বজায় রাখতে পারে এবং দুর্ভিক্ষ প্রান শক্তির মাঝে বিদ্রোহ করে ধিকি ধিকি আকারে নতজানু করেছে। কিন্তু ইয়াহিয়ার অব্যশই একটি বিস্তৃত দৃশ্য দেখা উচিত। হয়তবা সমন্বিত বাঙ্গালীর প্রতিরোধ আন্দোলন সংগঠিত করতে বছর লাগবে কিন্তু বাঙ্গালীর এই সময়ের মাঝে পৃথিবীতে সবচেয়ে জনবহুল মানুষ হয়ে থাকবে। সবসময়ই অভিভূত ভাবে প্রস্তুত থাকবে অল্প ফুটন্ত অবস্থায় টহল বধ অথবা সঙ্গিহীন অবস্থায় থাকা পাঞ্জাবী সেনা বধ করার জন্য। প্রদেশটির সংখ্যা গরিষ্ঠ পাকিস্তানী যারা মাথার বিনিময়ে মাথা প্রদান করেছে আর যা ট্যাংক, প্লেন এবং বিশাল সৈন্য বাহিনী কেন্দ্রীভূত করে ধরে রাখা হয়েছে যতক্ষণ না পর্যন্ত কোন দৈববাণী ঘোষণাকারীকে না দেখা যায়। সেখানে কোন বেশভূষাসক্ত ব্যক্তির পক্ষে বেসামরিক বাহিনীর কোন আশাই নেই। ফলত প্রায় প্রতিটি প্রাচীন বেসামরিক রাজনীতিবিদ বাঁধার মাঝে আছে। গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে দুর্বল ভাবে নুরুল আমিন ধ্বংস হয়েছিল। ইসলামাবাদের সহযোগীদের কোন গণতান্ত্রিক আত্মপক্ষ সমর্থন নেই এবং তারা জনসম্মুখে প্রাণসংশয় ছাড়া আবির্ভাব হতে পারবে না।

সংক্ষেপে পশ্চিমীয়দের প্রত্যাশা দীর্ঘ ক্লান্ত বিষাদ পূর্ণ অর্থনৈতিক স্থবিরতা অনাহার এবং চরমপন্থিদের হত্যার মাধ্যমে তাদের প্রবৃদ্ধি বিলম্বিত করা। এমনকি চীনের বন্ধুতের আলিঙ্গনের মাঝেও বিষাক্ত ছোঁয়া রয়েছে। পিকিং হয়তও মাওবাদি বাঙ্গালী যেমন মাওলানা ভাসানিদের মত মানুষদের উপর ইয়াহিয়ার বেয়নটের খোঁচাকে ভুল হিসাবে তদারক করে। যদিও প্রো- আমেরিকান শেখ মুজিব যে কোন কিছুর চেয়ে নিকৃষ্ট। কিন্তু একবার আওয়ামীলীগ বিলুপ্ত এবং পূর্ব পাকিস্তানের উন্মত্ত মানুষের উপর বিদ্রোহ শেষ হওয়ার পর মূর্খ জেনারেলরা গুপ্ত ভাণ্ডারে চায়নিজ অস্ত্র খুজে পেয়ে খুবই বিস্মিত হবে। এবং পশ্চিমের অবস্থানেও নগ্নতা থাকবে। জনাব ভূটো হয়তো আজকের এই সেনাবাহিনীর আক্রমন দেখে আনন্দিত হতে পারে কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন এই আনন্দ ধরে রাখতে পারবেন না । যদি ভোটপত্র থেকে পাওয়া শক্তি তার কাছ থেকে ধরে রাখা হয়। পাকিস্তান জাতি বিশ্ব ব্যাংক এর কাছে বন্ধক আছে এবং বিশ্বের কাছে তারা আশ্রয় দাতা । তারা ইতিমধ্যে পাকিস্তানী প্রতিরক্ষার নীতি দ্বারা বর্বরতার গুরুভোজ করে ফেলেছে ( এবং জেনারেলদের পুরো অস্তিত্ব ) এবং বাকিরা ভারতের সাথে কাশ্মীর নিয়ে মোকাবিলা করেছে। পাকিস্তানের অভিযোগ ভারত প্রেমময় কাশ্মীরকে ইস্পাতের মত দমন করে রেখেছে। এটা এখনের সবচেয়ে হাস্যকর ঘটনা। যেমন ইসলামাবাদের জানতা খোলাখুলি ভাবে ৭৫ মিলিয়ন আন্তরিক পাকিস্তানীর উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। যদি কাশ্মীর বিষয়টি আবারো সম্মুখে আসে জাতিসংঘ নিশ্চয়ই তির্যক হাসিতে ভেঙ্গে পড়বে। এই বিষয়টি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মত মৃত।

কেউ সঠিকভাবে বলতে পারেনি তিন সপ্তাহ আগে ইয়াহিয়া গোপনে কি কৌশল ইঙ্গিত করেছিলেন। কেউই বলতে পারে না কিন্তু যে কেউই তা অনুমান করতে পারে। অবিকল বিপরীতভাবে তারা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের মাথা কেটে তা বিনষ্ট করার চিন্তা করতে দেখা যায়। তারা বিশ্বের মতামত সম্পর্কে বিস্মৃত হয়েছে বলে মনে হয়। তারা সবচেয়ে অন্যায্যভাবে ভারতের উপর শাসন করার জন্য সামরিক হিসাব নিকাশ ছাড়াই আবির্ভূত হচ্ছে। যাতে অনিয়ন্ত্রিত সীমান্ত এবং যা কূটনৈতিক জটিলতার গলা বর্ধিত করতে পারে। আবারো তা পুনরাবৃত্তি করছি। বাংলাদেশের বিষয় দ্বিতীয় বায়াফ্রাতে নয় অথবা অন্তহীন ফল যা দিল্লী এবং রাওয়ালপিন্ডির মাঝে তার মত কিছু। এটা শুধুমাত্র তখনই উঠে আসে যখন ভালো ভাবে শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত নির্বাচনের ফল যা সেনাবাহিনী সহ্য করতে পারে নি। শেখ মুজিব নিজে কোন নিশ্চিত দৃশ্যে বাঙ্গালীর স্বাধীনতা ঘোষণা করেন নি।

তিনি বৈধভাবে নির্বাচন জেতার পরও প্রোগ্রাম পরিচালনার কথা বলেন নি। অব্যশই সেখানে ধুসর রঙের মত্রা ছিল। অব্যশই হত্যা কাণ্ডের দায়িত্ব ভাগ করা হয়। কিন্তু পশ্চিমের প্রভাবশালী এবং বুদ্ধিমানরা আগামীকাল হত্যা কাণ্ড বন্ধ করতে পারবে যদি তারা তাদের হিসাব নিকাশ পত্র সঠিক ভাবে এবং তাদের সৈন্যদের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার মাঝে রাখে। এটা সিনো- সোভিয়েতের গালাগালির ম্যাচ নয় বরং মার্ক্সবাদী পরিভাষা। এটা রুট, স্বাধীনতা, নৈতিকতা এবং মানবতার একটি সহজ বিষয়।