You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.14 | ২৮ ভাদ্র ১৩৭৮ মঙ্গলবার ১৪ সেপ্টম্বর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

২৮ ভাদ্র ১৩৭৮ মঙ্গলবার ১৪ সেপ্টম্বর ১৯৭১

-মুক্তিবাহিনীর ৩০০ সদস্যের একটি দল রাজশাহী খানজানপুর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে শত্রু বাহিনী পর্যুদস্ত করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রপ গোলাবারুদ দখল করেন।

-সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পোদগর্নি পূর্ববাংলায় সত্ত্বর রাজনৈতিক সমাধান ও এশিয়ার শান্তির বাতাবরণ বজায় রাখার জন্য গুরুত্ব আরোপ করেন।

-ইরান ও পাকিস্তান পারস্পারিক স্বার্থ রক্ষায় ঐকমত্য প্রকাশ করে।

-কমনওয়েলথ পার্লামেন্টাটারী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ব্রিটিশ উপমন্ত্রী মিঃ কে বেকার বলেন, ভারতে বাংলাদেশ শরণার্থীদের ৯৫০টি শিবিরই পাক ভারত যুদ্ধের সম্ভাব্য কারণ। সাবেক কমনওয়েথ সচিব মিঃ আর্থার বটমলী কুয়ালামপুরে এই সুম্মেলনে বলেন, ইয়াহিয়া খানকে এই সাতটি উপলব্ধি করতে হবে, একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমানই পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে কথা বলতে পারেন।

-বরেণ্য কথাশিল্পী তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী সাহিত্য বুদ্ধিজীবী সহায়ক গঠন ও বাংলাদেশের সংগ্রামে তিনি সরব সমর্থন দান করেছেন। তারাশংকরের ‘গণ দেবতা’র’ সার্থক অভ্যুত্থান দেখেছেন বাংলাদেশেই-তাঁর জীবনের শেষ বছরটি। এই সহায়ক সমিতির একজন নিরলস কর্মী হলে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ তাঁর শোক বাণীতে বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামকে অকুন্ঠ সমর্থণ জানাবার জন্য বাংলাদেশের জনগণ এই প্রখ্যাত সাহিত্যিকের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।”

-বিলম্বে প্রাপ্ত সংবাদে প্রকাশঃ চীনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় উত্তরাধিকারের সংগ্রাম অত্যন্ত তীব্র হয়ে ওঠে, দেশরক্ষা মন্ত্রী লিন পিয়াও (সেপ্টম্বর ৮-১০) মাও সে-তুং জীবনাশের ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছেন বলে জানা যায়।

-পাকবাহিনী ঢাকা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করেছে। বুড়িগঙ্গা নদীতে সশস্ত্র টহলদার বাহিনী গানবোট ও লঞ্চ যোগে দিবারাত্র ঘোরাফেরা করছে। শহর থেকে বর্হিগামী সড়ক সমূহের প্রবেশ পথে সশস্ত্র বাহিনী কড়াচেক পোষ্ট ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে। উল্লেখ্য, এপ্রিল মাসের শেষ থেকে চেক পোষ্ট ব্যবস্থা কড়াকড়িভাবে চালু হয়। এসময়ে ধাকা-বরিশাল লঞ্চ চলাচল অনিয়মিতভাবে দিনের বেলার চালু থাকে।

-ফিলিপাইনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত জনাব কে কে পন্নি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুগত্য ও ঐকমত্য প্রকাশ করেন।

-সামরিক সরকারের বেসামরিক গভর্ণর ডাঃ এ এম মালিক বেতার ভাষণে বলেন, ‘আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আশ্বাস দিতে চাই যে, পাকিস্তানের অন্যান্য নাগরিকদের মত তারাও নাগরিকত্বের সম অধিকারে অধিকারী। তাদের বাড়িঘর ও অন্যান্য সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়া হবে ১৯৫০ সালের লিয়াকত-নেহরু চুক্তি মোতাবেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিষয়ক মন্ত্রীপদ আমি গ্রহণ করেছিলাম। আমি তাদের সমস্যা সম্পর্কে অবগত আছি, কাজেই যাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তির প্রতি কোন প্রকার অবিচার না করা হয়, সেদিকে আমি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবো।’ (পাঃ তথ্য বিভাগ। ৭খঃপৃঃ৫৬১)

-মস্তোতে আফগানিস্তানে রাজার সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিঃ পদগর্নী তাঁর ভাষণে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তান সমস্যার একটা ন্যায় সঙ্গত রাজনৈতিক সমাধানের ওপর দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি বহুলাংশে নির্ভর করছে। চুক্তি কোন দেশের বিরুদ্ধে করা হয়নি। এশিয়া তথা সাড়া বিশ্বে ও নিরপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য একটা গরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আফগান রাজা জহির শাহ এই বক্তব্য সমর্থন করেন।(বিডি-১ পৃঃ১৬১)

-বাংলাদেশের সহায়ক শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী সমিতি, (১৪৪ লেনিন সরনী কলকাতা ১৩) সিপি আই এর প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ শিল্পীদের সহায়তা করার জন্য পশ্চিমবাংলার  শিল্পীগণ চিত্র ভাস্কর্য্য ও গ্রাফিক প্রিন্টের প্রদশর্নীর আমন্ত্রণ পত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। এই প্রদর্শনী ১৪-২৬ সেপ্টম্বর বিকাল ৩-৮ পর্যন্ত চালু ছিল।

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী