১৯৭১: চুকনগরে গণহত্যা
পরিসংখ্যান, তা যত বৈজ্ঞানিক বা বস্তুনিষ্ঠই হােক না কেন, তাতে কখনােই সত্যের পূর্ণ অবয়ব আবিষ্কৃত হয় না, ধরা পড়ে না সত্যের ভেতর যে সন্ত্রাস লুকিয়ে থাকে তার সঠিক চিত্র। একাত্তরের গণহত্যার কথা ধরুন। আমরা এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলি তিরিশ লাখ শহীদের কথা কী ভয়ানক, বুক ভেঙে আসা এক পরিসংখ্যান। কিন্তু সে পরিসংখ্যানে কি ধরা পড়ে প্রতিটি শহীদের মুখ, তাদের আর্তনাদের ধ্বনি, তাদের বেদনার বিবৃতি? সে পরিসংখ্যান উচ্চারণ করতে গিয়ে কি কখনাে আমাদের চোখ ভিজে আসে বেদনায়? ১৯৭১: চুকনগরে গণহত্যা গ্রন্থটি পড়তে গিয়ে এ প্রশ্নটি নতুন করে মনে হলাে বাংলাদেশ চর্চা কেন্দ্র থেকে ২০০২ সালে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় মুনতাসীর মামুনের সম্পাদনায়। একাত্তরের ২০ মে খুলনার চুকনগরে পাকিস্তান বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হয় ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার বাঙালি সেটি ছিল একাত্তরে সংঘটিত বৃহত্তম গণহত্যা চুকনগরের সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের যারা প্রত্যক্ষদর্শী, যাদের নিহত হওয়ার কথা কিন্তু দৈবাৎ বেঁচে গেছেন, তাদের ব্যক্তিগত বয়ানের ভিত্তিতে এই প্রামাণিক গ্রন্থটি সংকলিত হয়েছে। তাদের কারাে বয়স ৭০ বা তার চেয়েও বেশি। কারাে বয়স ৩৫ বা ৪০। কিন্তু ভয়াবহ সে ঘটনার স্মৃতি তাদের প্রত্যেকের মনে এখনাে একই রকম প্রবল সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালানাের উদ্দেশ্যে সেদিন চুকনগরে হাজার হাজার মানুষ জড়াে হয়েছিল। একই দিনে এক জায়গায় এত মানুষ কেন, তার কোনাে সঠিক ব্যাখ্যা মেলে না। একাত্তরে মানুষ তাে এভাবেই দল বেঁধে পালিয়েছে। হাতে অস্ত্র নেই প্রতিরােধের কিন্তু অসহায় মানুষ সব সময় সংখ্যায় বল পায়, সংহতির বল সম্ভবত সে জন্যই একে অপরের হাতে হাত ধরে তারা রাস্তায় পা ফেলেছিল অন্য আরেক কারণ, যারা পালাচ্ছিল তারা অধিকাংশই সংখ্যালঘু।
প্রান্তিক মানুষ সর্বত্রই তাদের ভীতি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে সাহসের সন্ধান করে। চুকনগরে জমায়েত সেসব সংখ্যালঘুর ক্ষেত্রেও হয়তাে তা-ই ঘটেছিল। তাদের কয়েকজনের কথা বলি কমলা রায়ের তখন বয়স ৪৫। তিন ছেলে নিয়ে চুকনগরে এসেছিলেন। সেদিন সকালে নাশতা করাও হয়নি তাদের মাত্র খেতে বসেছেন, এমন সময় হামলা শুরু হলাে। খাওয়া ছেড়ে পালাতে চাইলেন, কিন্তু পালাবেন কোথায়, কত দূর? নৌকায় লুকিয়ে থাকা এক ছেলেকে ধরে নিয়ে গেল পাকবাহিনী। বাকি দুটি ছেলে কোথায় ছিটকে পড়ল, কে জানে। পাগলের মতাে খুঁজতে লাগলেন ছেলেদের হঠাৎ চোখে পড়ল, মাঠের মধ্যে সৈন্যরা বেয়ােনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারছে তার এক ছেলেকে পা জড়িয়ে ধরলেন তাদের নিজের শেষ সম্বল দেড় ভরি সােনার গহনা দিয়ে বললেন, আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও। রক্তাক্ত, মৃতপ্রায় ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে এলেন নদীর ধারে তাকে জল দিতে। জীবনের সলতে তখনাে নেভেনি তার নদীতে একটি নৌকা দেখে ঝাপ দিয়ে তাতে উঠে বসলেন। বাড়ি ফিরলেন বটে, কিন্তু ছেলেটিকে বাঁচাতে পারলেন না। তুলাবতি বৈরাগীর তখন বয়স ৩৫। স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার চারদিকে গণহত্যা শুরু হয়ে গেছে, এখনই পালাতে হবে, এই ভেবে তারা সপরিবারে চুকনগরে এসেছিলেন। দুপুরের রান্না সদ্য চড়িয়েছেন। হঠাৎ গুলির শব্দ পালানাের সময়টুকু পেলেন না । গুলি এসে লাগল আধশােয়া ছােট একটি ভাইয়ের গায়ে।
এক কান দিয়ে ঢুকে গুলি অন্য কান দিয়ে বেরিয়ে গেল। ভাই তখনাে বেঁচে, আর্তনাদ করে বলছে, পানি, পানি। পানি আনতে ছুটলেন তিনি। ফিরে এসে দেখেন ভাই নেই। গুলিতে মাথার খুলি উড়ে গেছে তার বাবার ও স্বামীর । একইভাবে মারা গেছে এক মামাতাে ভাই ও কাকা। গুলি লেগেছে ছােট এক মেয়ের। প্রবােধ চন্দ্র রায়ের তখন বয়স ৩৮। সপরিবারে তিনিও নৌকা করে পালাচ্ছিলেন। অন্যদের সঙ্গে চুকনগরে এসে যাত্রা থামালেন। ঘাট ছেড়ে বড় রাস্তা ধরে হাঁটার সময় প্রথম টের পেলেন পাকবাহিনী অপারেশনে নেমেছে, লাইন ধরে ব্রাশ ফায়ার করে মানুষ মারছে। এ অবস্থায় কোথায় পালাবেন তারা? জলের আড়ালে আশ্রয় পাবেন ভেবে নদীতে ঝাপ দিলেন। তার মামা নিশিকান্ত ঘাড়ে শিশুপুত্রকে নিয়ে বুকসতার দিয়ে পালাতে চেষ্টা করছিলেন। হঠাৎ গুলি এসে লাগল শিশুটির মাথায়। তারপর গুলি লাগল নিশিকান্তের পিঠে। পাঁজর ভেঙে গেছে, দর দর করে রক্ত পড়ছে। নিশিকান্ত প্রবােধ চন্দ্রের হাত ধরে বললেন, বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও। তিনি বাঁচলেন না। দুঘণ্টা ধরে চলল গােলাগুলি। চারদিকে লাশের পর লাশ। মা মরে আছে, তার বুকের কাছে আঁকড়ে থাকা শিশু সে মায়ের দুধ খাচ্ছে। চোখের জল মুছতে মুছতে মৃত মানুষের ওপর দিয়ে হেঁটে পালিয়ে এলেন তিনি।
আরাে কত অসংখ্য কাহিনী এক মা মেয়েকে নিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন গাছের নিচে। হঠাৎ গুলি এসে লাগল সে মেয়েটির পায়ে । আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেল সে এখন, তিরিশ বছর পর, পূর্ণ যুবতী সে, কিন্তু পঙ্গু সে মেয়ে অনূঢ়াই রয়ে গেছে। এক স্ত্রী, রক্তাক্ত স্বামীকে নিজ শরীর দিয়ে বাঁচাতে চেষ্টা করেছিলেন, পারেননি আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছ, আমাকেও মেরে ফেল বিলাপ করে খুনিদের তিনি অনুরােধ করেছিলেন। মুসলমান পরিচয় দিয়ে এক হিন্দু প্রতিবেশীকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয় গ্রামবাসী। তার সারা জীবনের সঞ্চয় ফেলে পালাতে চাননি এক বৃদ্ধ ভেবেছিলেন তাকে মেরে কার কী লাভ তিনিও বাঁচতে পারেননি। এক কৃষক বন্দুকের নলের সামনে দাড়িয়ে লাশের পর লাশ নদীতে ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন প্রথম প্রথম লাশের সংখ্যা গুণে রাখার চেষ্টা করেছিলেন পারেননি অগুণতি লাশ, কত মৃত মানুষের হিসাব তিনি রাখবেন আরেক কৃষক, তিনিও রাজাকার নেতার নির্দেশে সারা রাত ধরে লাশ নদীতে ফেলেছেন। লাশ ভেবে ফেলে দিতে গিয়ে দেখেন একজন তখনাে বেঁচে। তাকে রক্ষা করেছিলেন তিনি প্রতিটি মানুষের কাহিনী যেন একাত্তরের সেই গণহত্যার জীবন্ত ইতিহাস প্রত্যেকের আলাদা জীবন, আলাদা আলাদা অভিজ্ঞতা কিন্তু একসঙ্গে জড়াে করলে তা-ই পরিণত হয় এক দীর্ঘ রক্তবর্ণের নদীতে। চুকনগরের সেই ভয়াবহ দিনের ঘটনার স্মৃতি নিয়ে যারা এখনাে বেঁচে আছেন, তাদের প্রত্যেকের চোখ এখনাে সেই রক্তবর্ণের নদী।
একাত্তরের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, তার স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখা, তা কি খুব জরুরি? এ প্রশ্নের জবাবের জন্য আমরা হাত বাড়াতে পারি ইতালীয় লেখক প্রাইমাে লেভির দিকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা ও নিগ্রহের শিকার হয় ইহুদিরা। ইহুদি হওয়ার কারণে লেভি ও ফ্যাসিস্ট বাহিনীর হাতে নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি সেই ভয়াবহ গণহত্যা যেন কেউ ভুলে না যায় তার বিরুদ্ধে সাবধানবাণী উচ্চারণ করে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়: ফ্যাসিবাদের যে উত্থান তা পৃথিবীর মানুষের চোখের সামনেই ঘটেছে। ঘটেছে ইউরােপে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে কিন্তু হিটলারের মতাে একটি হাস্যকর লােকের কথায় উঠ-বস করেছে পুরাে একটি জাতি। তার প্রশংসা করা হয়েছে সেই গণহত্যার সময় পর্যন্ত এ ঘটনা একবার ঘটেছিল, তা আবারও ঘটতে পারে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে লেভির কথাগুলাে প্রয়ােগ করুন। ইয়াহিয়া খানের মতাে একটি হাস্যকর লােকের কথায় পুরাে পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ কি সায় দেয়নি? চীন-যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে প্রতিটি মুসলিম দেশ কি সমর্থনের হাত বাড়ায়নি সে জল্লাদের দিকে? তার উচাননা বেয়ােনেটের পেছনে বল্লম নিয়ে প্রস্তুত হয়ে দাঁড়ায়নি কি বাংলাদেশের রাজাকার আল-বদর? যে জাতি নিজের ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তাকে বারবার একই পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। স্বল্পস্মৃতি বাঙালি নিজের ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে, তার কী ফল হয়েছে চোখ মেলে দেখুন। একাত্তরের জল্লাদ হয়তাে আর নেই, কিন্তু তার পেছনে বল্লম ধরেছিল যারা, তারা বার বার ক্ষমতার মধ্যমঞ্চে উঠে এসেছে।
একাত্তরের ইতিহাস বিকৃতিতে তারা এখন ব্যস্ত। গণহত্যায় তাদের ভূমিকার কথাই যে তারা অস্বীকার করছে তা-ই নয়, গণহত্যার নারকীয়তা, তার ব্যাপকতা নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছে তারা। নিউইয়র্কে এসে তাদেরই একজন বলে গেলেন, একাত্তরে বড়জোর ২৫-৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়। দেখুন কী পরিহাসের কথা, জুলফিকার আলী ভুট্টো পর্যন্ত একাত্তরে তার দ্বিগুণ মানুষ খুন করার কথা স্বীকার করেছিলেন। যাদের হাতে এখনাে রক্তের দাগ, তারা ব্যস্ত সে দাগ মুছে ফেলতে। বুক পকেটে লুকানাে খঞ্জর হাত দিয়ে ঢেকে তারা বলছে, না, একাত্তরে কোনাে হত্যাকাণ্ডই হয়নি। এসবই। বানানাে কথা, সত্যের অপলাপ। মিথ্যা যাতে শেষ পর্যন্ত সত্যে পরিণত না হয়, তার জন্যই প্রয়ােজন একাত্তরের স্মৃতিকে জাগিয়ে রাখা। যাতে আরেক একাত্তর না ঘটে, সেজন্যই প্রয়ােজন প্রতিটি নিহতের কাহিনী বুকে আগলে রাখা সময় যত গড়ায়, স্মৃতি তত বিবর্ণ হয়ে আসে। তাতে ধুলাে এসে জমা হয়। অথচ সে স্মৃতিতে যদি ধুলাে জমতে না দেওয়া হয়, তাকে নিত্য সাফসুতরাে করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে?
বিস্মৃতির বিরুদ্ধে এই দৈনন্দিন যুদ্ধটা সবচেয়ে ভালােভাবে করছে ইহুদিরা। তাদের লেখায়, তাদের কাজে, তাদের রাজনৈতিক সংগঠনে সর্বতােভাবে সচেষ্ট নাৎসি গণহত্যার স্মৃতিকে ধরে রাখতে পশ্চিমের অনেক বড় শহরেই হলােকস্ট মিউজিয়াম আছে। ইহুদিদের অব্যাহত চেষ্টার ফলে হলােকস্টের ইতিহাস এখন হাইস্কুল পর্যায়ে অনেক দেশেই অবশ্যপাঠ্য। চলচ্চিত্রে, গবেষণায়, রাজনৈতিক বিশ্লেষণে, গল্প-উপন্যাসে তারা পৃথিবীর মানুষকে প্রতিদিন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ৬০ বছর আগে নাৎসি খুনিরা ইহুদি হত্যাযজ্ঞে কীভাবে মেতে উঠেছিল। একাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও অসংখ্য ব্যক্তি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে জীবিত শেষ নাৎসি খুনিকে খুঁজে বের করতে। যারা এখনাে মুখােশ সেঁটে আছে, তা খুলে ফেলার জন্য। যে ৬০ লাখ ইহুদি নাৎসিদের হাতে নিহত হয়, তাদের প্রায় প্রত্যেকের নামধাম নথিবদ্ধ করা হয়েছে। যারা বেঁচে আছেন, তাদের প্রত্যেকের সাক্ষ্য-ভাষ্য নিয়ে নির্মিত হয়েছে বিশাল ‘কথ্য ইতিহাস’ ইহুদিরা জানে সেই নির্মম ঘটনা আবারও ঘটতে পারে, আর তা ঠেকানাের জন্যই বারবার, প্রতিদিন তার নির্মমতার বিবরণ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তারা পৃথিবীর মানুষকে। বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতকরা পুনরায় সংঘটিত হচ্ছে, তা আমরা জানি। মৌলবাদকে অন্ধ করে ঘৃণা ও সন্ত্রাসের এক নতুন অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইছে। তারা। সেই ঘৃণা ও সন্ত্রাসকে ঠেকাতে আমরা যে সচেতন নই, মােটেই তা নয়। এ বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, একাত্তরের চেতনাকে ধরে রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক বেশি তৎপর, অনেক বেশি উদ্যোগী।
গবেষণায়, চলচ্চিত্রে, শিল্পে ও সাহিত্যে সে উদ্যোগের প্রমাণ মিলছে। তিরিশ বছর পরে হলেও চুকনগরে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ যে আজ লেখা হচ্ছে, তার মানেই হলাে বাঙালি একাত্তরকে ভােলেনি। দেশের বাইরে বসেও বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধরে রাখতে নিবেদিত ক্রাই ফর জাস্টিস’ ও ‘টিয়ারস অব ফায়ার নামে দুটি শক্তিশালী তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে এই নিউইয়র্ক থেকে সাম্প্রতিক সময়ে। এখানে বসেও মুক্তিযুদ্ধের ‘ওরাল হিস্ট্রি’ নিয়ে কাজ করছেন কয়েকজন। মুক্তিযুদ্ধে সব খুইয়েছেন এমন সাতজন বীর নারী মুক্তিযােদ্ধাকে পুনর্বাসনে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন একদল তরতাজা তরুণ একাত্তরের পক্ষের এই শক্তি ও তারুণ্যকে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করা সম্ভব হলে বাংলাদেশের চেহারাই বােধহয় বদলে যেত আমাদের প্রধান ব্যর্থতা সেখানেই। যেহেতু তেমন রাজনৈতিক সংগঠনের আশা করা এই মুহূর্তে বাতুলতা, তাই সে কথায় যাব না। কিন্তু সাংস্কৃতিক সম্মিলনের ভেতর দিয়ে যে আমরা আরাে সংগঠিত হতে পারি এবং তার ভেতর দিয়ে প্রতিরােধের ব্যুহ নির্মাণ করতে পারি, তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লেখা প্রতিটি কবিতা, প্রতিটি উপন্যাস, প্রতিটি তথ্যচিত্র, এমনকি তাদের স্মৃতির উদ্দেশে লাগানাে প্রতিটি গাছ ঠিক সে কাজটিই করে যাচ্ছে। আমরা জানি, আবারও ঘটতে পারে একাত্তর আর তা ঠেকানাের একমাত্র পথ বিস্মৃতির বিরুদ্ধে লড়াই।
সূত্র : একাত্তর যেখান থেকে শুরু – হাসান ফেরদৌস, সময় প্রকাশনী,২০১৬