You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.01.06 | বাংলার বাণী সম্পাদকীয় | বঙ্গবন্ধু—এ নামের অবমাননা সহ্য করা হবেনা | শেখ মণি - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলার বাণী
৬ই জানুয়ারী, ১৯৭৩, শনিবার, ২২শে পৌষ, ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধু—এ নামের অবমাননা সহ্য করা হবেনা

সাড়ে সাত কোটি বাঙালী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশী-বিদেশী কুচক্রীদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে কোন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রয়েছেন। প্রয়োজন হলে বাঙালীরা রক্ত দেবেন, কিন্তু জাতির পিতা বাঙালীর কন্ঠস্বর, বাংলার নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ ‍মুজিবুর রহমানের কোন রকম অবমাননা বাঙালীরা সহ্য করবে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ গত বৃহস্পতিবার বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ঢাকা নগরের বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের এক বিশাল সমাবেশে একথা ঘোষণা করেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উক্ত সমাবেশে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে, চীন-মার্কিন বিদেশী দালালরা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অশোভন উক্তি করে দেশে-বিদেশে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাঁরা বলেন, এর আসল উদ্দেশ্য হলো বহু কষ্টার্জিত বাংলার স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করা। নেতৃবৃন্দ বলিষ্ঠ কন্ঠে আরো ঘোষণা করেন যে, বাংলার মানুষ ঐসব ষড়যন্ত্রকারীদের ঠিক সময় মত দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেবেই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করে দেবার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত যে চলছে এটা সুস্পষ্ট। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন সময় থেকেই যে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের সৃষ্টি হয়েছিলো তা আজো অবদমিত হয়নি। ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে। তবে দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করতে হচ্ছে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকারীরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকারের উদারতার সুযোগ নিয়ে এমন একটা স্তরে এসে আজ দাঁড়িয়েছে যে, তারা এখন বঙ্গবন্ধুর অবমাননা করতেও এতটুকু দ্বিধা বা সংকোচ করছে না। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, যে কোন উপায়ে যদি একবার বঙ্গবন্ধুকে ঘরে-বাইরে হেয় প্রতিপন্ন করা যায় তাহলে তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ হবে। বঙ্গবন্ধুশূন্য বাংলাদেশকে তখন যে কোন বিদেশী শক্তির তাবেদার রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে আর কোন অসুবিধাই হবে না। তারা একথা বেশ ভালোভাবেই জানে যে, বঙ্গবন্ধু যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন পর্যন্ত কোন বিদেশী শক্তির পকেটে বাংলাদেশ যাবে না। বাংলাদেশ সব সময়ে সর্ব অবস্থাতেই নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতিতে অবিচল থাকবে। ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব—কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’—এ মূলনীতির কথা বহুবার বঙ্গবন্ধু বলেছেন এবং এখনো বলছেন। সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা বিশেষভাবে শুরু হয়েছে রাজধানীতে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যাবার পর। চলতি সপ্তাহে ভিয়েতনামে মার্কিন বোমা বর্ষণের প্রতিবাদে আয়োজিত ছাত্র বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে দু’জন ছাত্র নিহত ও অন্যান্য কয়েকজন আহত হওয়ার পর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় সুযোগ সন্ধানীদের অশুভ তৎপরতা।
অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গেই আমাদের উল্লেখ করতে হয় যে, রাজধানীতে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যাবার পর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী যুব লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতৃবৃন্দ গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অথচ তথাকথিত অতিবিপ্লবীরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দলের এ উদারতাকে সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা সহ জনসাধারণের সামনে উপস্থাপিত করেছেন এবং এখনো করছেন। একথা তো সত্য যে, যে কোন বিদেশী দূতাবাসের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের দায়িত্ব। যেমন সমান দায়িত্ব হলো সকল বিদেশী রাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসের জানমাল রক্ষা করা। এ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপন না করেই রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সহ সকলেই দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তারপর ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে এগিয়ে গেলো তাকে কোন অবস্থাতেই উপেক্ষা করা যায় না।
স্বাভাবিকভাবে জনসাধারণের মনে আজ প্রশ্নের উদয় হয়েছে যে, এরা দেশকে কোন্ পথে এগিয়ে নিতে চায়। যে কন্ঠস্বর, যে নাম বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে এবং এখনো জোগাচ্ছে—সেই নামটিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে ওরা চায় কেন? এ প্রশ্ন আজ বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের। বায়তুল মোকাররমের জনসভায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ যে কথা বলেছেন তা বাংলার আপামর দেশপ্রেমিক জনসাধারণের প্রাণের কথা। বাংলার মানুষ এক বাক্যে আজ একথাই বলবে, প্রয়োজন হলে বাঙালীরা রক্ত দেবেন। কিন্তু জাতির পিতা, বাঙালীর কন্ঠস্বর, বাংলার নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোনরকম অবমাননান বাঙালীরা সহ্য করবে না।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন