বিলােনিয়ার পতন
বিলােনিয়ার উপর পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের চাপ বৃদ্ধির ফলে সেক্টর অধিনায়ক খালেদ মােশারফের আদেশে মন্দভাগ সাব-সেক্টর অধিনায়ক ক্যাপ্টেন গাফফার ৪র্থ বেঙ্গলের সি কোম্পানি নিয়ে ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের সাহায্যার্থে বিলােনিয়া এলাকায় এসে পজিশন গ্রহণ করেন। ১৭ই জুলাই আনুমানিক রাত ৮ ঘটিকায় পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর ব্যাপকভাবে আক্রমণ চালায়। সংঘর্ষ শুরু হবার পরপরই পাকিস্তানিরা হেলিকপ্টার যােগে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ঠিক পেছনে ছত্রীসেনা নামিয়ে চার দিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম, ক্যাপ্টেন শহীদ, ক্যাপ্টেন গাফফার তাদের বাহিনী নিয়ে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রাথমিক আক্রমণ প্রতিহত করে। ক্রমে পাকিস্তানিদের আক্রমণের তীব্রতা বাড়তে থাকলে মুক্তিবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এটা পরিষ্কার বােঝা যায় যে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিদের ঘেরাও করে রাখতে পারলে দিনের আলােয় ট্যাঙ্ক ও কামানের বিপুল শক্তি নিয়ে ধ্বংস করা সহজ হবে। পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পেরে সেক্টর অধিনায়ক লে. কর্নেল খালেদ মােশাররফ তার বাহিনীকে রাতের অন্ধকারেই তেতুলিয়ায় অপসারণ করেন। কিন্তু পরদিন তেতুলিয়া অবস্থান মজবুত করার পূর্বেই পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনীর পেছনে হেলিকপ্টারের সাহায্যে সৈন্য অবতরণ শুরু করে।
অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে লে. কর্নেল খালেদ তার সব ট্রপস। বর্তমান অবস্থান থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন। ওদিকে মুক্তিবাহিনীর বাম ফ্রন্টে লে, ইমামুজ্জামানের অবস্থান থেকে প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ আসছিলাে। পাকিস্তানি বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে সৈন্য অবতরণ করার সময় ঘটনাচক্রে লে, ইমামুজ্জামানের বাহিনীর সামনে পড়ে যায়। লে, ইমামুজ্জামান তার বাহিনী নিয়ে শত্রুদের উপর প্রচণ্ড গােলাগুলি করে বাম দিক থেকে পেছনে সরে গিয়ে মূল বাহিনীর সাথে মিলিত হতে সক্ষম হন। তারপরই ১৮ জুলাই পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বিলােনিয়ার পতন ঘটে। অপরদিকে জুলাই মাসেই পাকিস্তানি বাহিনী কবা ও মন্দবাগ পুনঃ দখলের জন্য গােলন্দাজ বাহিনী ও ৩১ তম বেলুচ রেজিমেন্টের সমাবেশ ঘটায়। ১৯শে জুলাই। ৩১তম বেলুচের একটি কোম্পানি শালদানদী দিয়ে মন্দভাগের দিকে অগ্রসর হবাব খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনীর একটি প্লাটুন সুবেদার ওহাবের নের্তৃত্বে তাদের বাধা দিতে অগ্রসর হয়। মন্দভাগ বাজারের কাছাকাছি পৌছে সুবেদার ওহাব তার প্লাটুন নিয়ে অতর্কিতে।
———
* ইতােমধ্যে প্রমােশন পেয়েছেন।
পাকিস্তানি বাহিনীর উপর প্রচণ্ড আক্রমণ করে। এই অতর্কিত আক্রমণের তীব্রতায় পাকিস্তানি বাহিনী নদীতে ঝাপ দিয়ে বাঁচবার চেষ্টা করলে অধিকাংশই ডুবে মারা যায়। জানা যায় এই সংঘর্ষে ৬০ জনের মতাে পাকিস্তানি নিহত এবং তাদের মধ্যে ৩১তম বেলুচের অধিনায়ক লে. কর্নেল কাইয়ুম এবং কুমিল্লা শহরে বহু নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জঘন্য নায়ক এবং গােলন্দাজ বাহিনী অফিসার ক্যাপ্টেন বােখারীও ছিলেন। এদিকে বিলােনিয়ার পতন হলেও মুক্তিবাহিনী মন্দভাগ, শালদানদী, কসবা ইত্যাদি এলাকায় বিরামহীনভাবে শক্রর বিরুদ্ধে সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছিল।
সূত্রঃ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ – লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী