রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকালে মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনার উপর জাস্টিস এলিসের রিপোর্ট, পাকিস্তান সরকার, ২৭ এপ্রিল, ১৯৫২
২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ তারিখে ঢাকায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকালে মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ঢাকা হাই কোর্টের মহামান্য জাস্টিস এলিসের প্রতিবেদন
পূর্ব বাংলার সরকারি (পুলিশ) বিভাগ
অনুবন্ধ নং২১৪৮ পি এল
৩রা জুন ১৯৫২
ব্যাখ্যা- সরকারি ইশতিহার নং-৯৪৩পিএল,১৩ই মার্চ ১৯৫২বলছে১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার গুলাগুলির ঘটনাকে বিবেচনা করে বিবৃতি দেওয়া হলো,প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত ঢাকা হাইকোর্টের একজন বিচারপতি দ্বারা একটি অনুসন্ধান করতে হবে এসকল নিশ্চিত করতে যে-
১. পুলিশ দ্বারা যে গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল তা দরকার ছিল। এবং
২. পুলিশ দ্বারা ব্যবহৃত বাহিনীকে সে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা হবে।
ব্যাখ্যা- প্রতিবেদন,২৭শে মে ১৯৫২, মাননীয় বিচারপতি টি. এইচ এলিস কর্তৃক উপস্থাপিত হয়েছিল,যিনি সেই অনুসন্ধানের জন্য সরকারিভাবে এবং মাননীয় প্রধান বিচারপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত। পূর্ব বাংলার সরকার অনুসন্ধানের সে সকল রায় গ্রহণ করতে সন্তুষ্ট হয়েছিল যে-
১. পুলিশ দ্বারা যে গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল তা দরকার ছিল। এবং
২. পুলিশ দ্বারা ব্যবহৃত বাহিনীকে সে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা হবে।
অনুবদ্ধের একটা কপি তথ্যের জন্য অনুসন্ধানের বিচারক মাননীয় বিচারপতি টি এইচ এলিসকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য আজ্ঞাপিত হয়েছিল। আরো আজ্ঞাপিত হয়েছিল যে, অনুবদ্ধের একটি কপির সাথে প্রতিবেদনের একটি কপি সহ তথ্য এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঢাকা ডিভিশনের কমিশনার এবং পুলিশের জেনারেল ইন্সপেক্টরকে পাঠিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও আজ্ঞাপিত হয়েছিল যে, অনুবদ্ধের সাথে প্রতিবেদনের কপি সহ ঢাকা গেজেটের বিশেষ সংস্করণে প্রচার করতে হবে।
আজিজ আহমেদ
সচিব
প্রেরক:
মহামান্য বিচারক এলিস
উচ্চ আদালত
ঢাকা।
প্রাপক,
প্রধান সচিব
পূর্বাঞ্চল সরকার,
পূর্বাঞ্চল ঢাকা।
তারিখ -ঢাকা ২৭মে,১৯৫২
জনাব,
সম্মানপূর্বক এর সাথে নিবেদন করছি যে,ঘোষণাপত্র নং ৯৪৩ পিএল.১৩মার্চ১৯৫২ অনুসারে ঢাকায় ২১ফেব্রুয়ারি,১৯৫২ তারিখে পুলিশ কর্তৃক গুলিবর্ষণ সংক্রান্ত আমার প্রতিবেদন ১৩মার্চ,১৯৫২ ঢাকা গেজেটে প্রকাশিত হয়।
নিবেদক
জনাব,
আপনার বাধ্যগত কর্মকর্তা
টি.এইচ.এলিস
ঘোষণাপত্র নং ৯৪৩ পিএল,১৩ মার্চ ১৯৫২ অনুসারে ঢাকায় ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ তারিখে পুলিশ কর্তৃক গুলিবর্ষণ সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন উচ্চ আদালত,ঢাকার মহামান্য বিচারক এলিস কর্তৃক যা ১৩মার্চ,১৯৫২ ঢাকা গেজেটে প্রকাশিত হয়।
১.বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যে আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে চলছিলো তাকে দিক নির্দেশনা দেয়ার লক্ষ্যে ৩১ জানুয়ারি ১৯৫২ সালে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।এই পরিষদ দাবী করে যে তারা চলমান আন্দোলনকে নির্দেশনা দিচ্ছিলো ও নিয়ন্ত্রণ করছিলো এবং গনমাধ্যমের সাহায্যে প্রচার করেছিলো যে ২১ফেব্রুয়ারি,১৯৫২ তারিখে এক বিশাল জনসভার অবতারণা করতে যাচ্ছে।তারা ওই দিন সারা দেশ ব্যাপী হরতাল আহবান করেছিলো।২১ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ পূর্ববঙ্গের আইন সভার অধিবেশন ছিলো এবং একই দিনে প্রাদেশিক মুসলিম লীগ কাউন্সিল বৈঠক আহবান করেছিলো।এমতাবস্থায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ধারণা করেন যে এসবকিছুর ফলস্বরুপ শহরের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে,তাই আগের দিন ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে বেলা ৫ টায় ১৪৪ ধারা জারি করার মাধ্যমে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর পূর্ব অনুমতি ছাড়া সকল ধরনের ৫জন ব্যক্তির অধিক মিছিল ও সভা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।ঢোল পিটিয়ে সারা শহরে উক্ত নির্দেশ প্রচার করা হয়।
একটি প্রচার ভ্যান মাইক দ্বারা এর প্রচার করেছিল এবং এর কপিও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পাঠানো হয়েছিল। পুলিশ প্রস্তুত রাখা হয়েছিল অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়ানোর জন্য এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ এর সকাল ৭.৩০ মিনিটে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ছিল মানুষে পূর্ণ এবং সেই অনুযায়ী পুলিশ বাহিনী এটি সাজিয়েছিল। অনেক সকালেই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং বিভিন্ন থানায় দোকান এবং গাড়িঘোড়া বন্ধ করে, যাত্রীদের জোরপূর্বক বাস, ট্যাক্সি, রিক্সা এবং ভাড়া গাড়ি থেকে নামিয়ে জোর করে যে হরতাল বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে তার খবর পৌঁছে গিয়েছিল। পুরো দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে এবং বিকেল ৩.২০ এর দিকে পুলিশ মেডিকেল কলেজ গেট লক্ষ্য করে গুলি চালায়, ফলে সেখানেই একজন মারা যায় এবং আরও তিন জন আহত হয়ে পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করে। আবুল বরকত নামে একজন ছাত্রও ছিল নিহতদের ভেতর।
২. মঙ্গলবার, ১৩ মার্চ, ১৯৫২; ৯৪৩-পিএল বিজ্ঞপ্তি নাম্বারে ১৩ মার্চ, ১৯৫২ তারিখ দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি ঠিক ঐ তারিখেই ঢাকা গেজেটে প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিটি নিম্নরূপঃ
“২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ তে ঢাকায় সংঘটিত পুলিশের গোলাগুলি প্রসঙ্গে পূর্ব বাংলার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ঢাকা উচ্চ আদালতের মাননীয় প্রধান বিচারপতির মনোনীত একজন বিচারক এই তদন্ত করবেন। তদন্ত নির্দেশের শর্তাবলী গুলো নিম্নে দেওয়া হল
জিজ্ঞাসা এবং তদন্তের জন্য-
- পুলিশের গুলি চালানো প্রয়োজন ছিল কিনা এবং
- পুলিশের শক্তি প্রয়োগ ন্যায় সঙ্গত ছিল কিনা অথবা সেসময় পরিস্থিতি পূর্বাবস্থায় আনার জন্য শক্তি প্রয়োগ বাড়াবাড়ি ছিল কিনা।
এই তদন্ত ক্যামেরাতে ধারণ করা হবে। তদন্তকারী বিচারক তার তদন্তকাজে সাহায্যের জন্য একজন উকিলকেও সঙ্গে নিতে পারেন।
তদন্তকারী বিচারক গুলি চালানোর দিন থেকেই তদন্ত কাজ শুরু করবেন এবং যত দ্রুত সম্ভব শেষ করবেন।”
৩. বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ব বাংলার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ঢাকা উচ্চ আদালতের মাননীয় প্রধান বিচারপতির মনোনীত একজন বিচারক এই তদন্ত করবেন। পূর্ব বাংলার মহামান্য গভর্নর থেকে এই তদন্তটি করার জন্য ১৭ই মার্চ, ১৯৫২ তে আমি আদেশের একটি অনুলিপি পাই। তাতে নিম্নলিখিত নির্দেশটি লেখা ছিলঃ-
“পূর্ব বাংলার মহামান্য গভর্নর ঢাকা উচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারপতি জনাব টি.এইচ.এলিসকে ঢাকা গেজেটে প্রকাশিত ৯৪৩-পিএল বিজ্ঞপ্তি নাম্বারে ১৩ মার্চ, ১৯৫২ তারিখ অনুযায়ী ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ তে ঢাকায় সংঘটিত পুলিশের গোলাগুলির বৈধতার তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বাধিত করেছেন। তারিখ ১৩ মার্চ, ১৯৫২।
এ.ও.রাজিউর রহমান
পূর্ব বাংলার গভর্নরের ব্যক্তিগত সচিব
৪. আদেশ প্রাপ্তির উপর আমি নিম্নলিখিত নির্দেশ জারি করিঃ
নোটিশ
“২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ তে ঢাকায় সংঘটিত পুলিশের গোলাগুলি প্রসঙ্গে বিভিন্ন জন প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, ছাত্র গ্রুপ অথবা প্রাদেশিক সরকারের সংস্থা এবং অন্যান্য দলগুলোর উদ্বেগের লিখিত বিবৃতি, মূলত মুদ্রালিখিত বিবৃতি প্রদানের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
বিবৃতি অবশ্যই সাক্ষীদের পূর্ণনাম এবং ঠিকানা সহ হতে হবে।
বিবৃতিটি অবশ্যই উচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারক জনাব এলিসের উদ্দেশ্যে হতে হবে এবং ৩১শে মার্চ, ১৯৫২ এর আগেই পৌঁছাতে হবে।”
টি.এইচ.এলিস
বিচারক, উচ্চ আদালত, ঢাকা
২০-০৩-১৯৫২
এই বিজ্ঞপ্তিটি প্রাদেশিক সংবাদপত্রগুলোতে ব্যাপক প্রচারসহ প্রকাশ করা হয় এবং রেডিও পাকিস্তানে বারবার ঘোষণাটি সম্প্রচার করা হয়।
৫. লিখিত বিবৃতি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশটি ছিল আসলে ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ তে ঢাকায় সংঘটিত পুলিশের গোলাগুলি প্রসঙ্গে জনগণ হতে সঠিক তথ্য গ্রহণ। আমি মোট ২৮ জন সংবাদদাতা পেয়েছি এবং এই ২৮ জন সংবাদদাতার মধ্যে একটি ২২শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ এর ঘটনা নিয়ে যা আমার তদন্তের আওতাধীন নয় এবং তাই সেটিকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ১১ জন সংবাদদাতা ছিল তারা যারা মনে করে ঘটনার ঐ পরিস্থিতিতে পুলিশের গুলি চালানো উচিত হয়নি। দুই জন সংবাদদাতা ছিল সর্বদলীয় রাজ্য ভাষা কমিটির আহ্বায়ক এবং পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। তারা তাদের সংস্থার পক্ষ থেকে এই মর্মে ঘোষণা দিয়েছে যে তাদের তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তাব করা হয়নি যেহেতু তারা এর সুযোগ এবং সীমাবদ্ধতা নিয়ে আপত্তি করেছিল। ছাত্র এবং জনতা থেকে একটি বেনামী আবেদন এসেছিল যাতে অভিযোগ ছিল যে ছাত্রনেতা এবং জননেতা যারা সঠিক ঘটনাটা জানেন তাদের জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে এবং তারা পুলিশের গুলি চালানোর এই ঘটনাই কোন বিবৃতি দেওয়ার অবস্থানে নেয়। ময়মনসিংহ থেকে সাইদুল হক নামে একজন একটি সাক্ষরিত পত্র পাঠায় যাতে তিনি আমাকে তার পত্রটি সংবাদপত্রে প্রকাশের অনুরোধ করেন। মনে হচ্ছিল তার কোন ব্যক্তিগত অভিযোগ, দুঃখ, ক্ষোভ রয়েছে এবং তিনি তা প্রকাশের একটি সহজ ও নিরাপদ উপায় খুঁজছিলেন। বাংলায় ২৮শে মার্চ, ১৯৫২ সম্বলিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোঃ আব্দুল মতিন নামে এক ছাত্রের চিঠি এসেছিল কিন্তু পরবর্তীতে ৯ই এপ্রিল, ১৯৫২ তে আরেকটি চিঠির মাধ্যমে সে তার পূর্ববর্তী চিঠির বিবৃতি এবং তার সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নেয়। সর্ব পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগের সভাপতি আক্তারউদ্দিন ২৭শে মার্চ, ১৯৫২ ২৪, এস.এম.হল ঢাকা থেকে একটি বিবৃতি পাঠায়। যা আমার হাতে ১লা এপ্রিল, ১৯৫২ পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি, বিবৃতি গ্রহণ শেষ হওয়ার একদিন পর এটি আসে। যেহেতু এটি ২৭শে মার্চ, ১৯৫২ তে পাঠানো হয়েছিল তাই আমি তা গ্রহণ করি।
এতে একটি বিস্ময়কর বিবৃতি ছিল যে বর্ধমান বাড়ি থেকে একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে পুলিশের কাছে গুলি চালানোর জন্য একটি লিখিত আদেশ হস্তান্তর করা হয়েছিল। এর সাথে একটি চিঠিও সংযুক্ত ছিল তদন্তের সীমিত সুযোগের প্রতি ছাত্রদের বিরক্তি এবং সেইসাথে প্রকাশ করে যে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয়ত অসম্ভব হবে অথবা ইচ্ছেকৃত অসম্ভব করে তোলা হবে।
৬. দিওয়ান হারুন মোঃ মনিরুদ্দিন নামে ঢাকা জগন্নাথ কলেজের এক ছাত্র যে পুলিশের গোলাগুলির প্রতি আপত্তি তুলেছিল সেটি ছিল সংবাদদাতাদের মধ্যে প্রধান বিবৃতি। সে ছিল একমাত্র ব্যক্তি যে পুলিশের গুলি চালানো সরাসরি দেখেছে বলে বিবৃতি দিল। সে ২১শে মার্চ, ১৯৫২ তে একটি বিবৃতি দিয়েছিল যাতে সে ৫ জন সাক্ষীর নাম উল্লেখ করে কিন্তু দুই দিন পর ২৩শে মার্চ, ১৯৫২ অন্য এক বিবৃতিতে একই লাইনে সে আরও ১৭ জন সাক্ষীর নাম যোগ করে দেয়।
৭. ষোলটি অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের কাছ থেকে যারা অভিযোগ করেছেন যে তারা ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ তে ছাত্রদের উপর সংঘটিত অরাজকতার শিকার। তাদের মধ্যে কেউ ছিল বাসের কন্ডাক্টর, চালক এবং রিক্সাওয়ালা যারা স্পষ্টতই ধারণা করেছে যে তদন্তের একটি উদ্দেশ্য হল ক্ষতির মূল্যয়ন করা এবং যাদের গাড়ি নষ্ট হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া। গোলাগুলি নিয়ে প্রধান সাক্ষী হিসেবে বিবৃতি দিয়েছে ২১ জন সাক্ষীর নাম এবং তদন্তের প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি সহ পূর্ব বাংলার সরকার।
৮. আমি সেসব মানুষের বিবৃতি সংরক্ষণ প্রয়োজন মনে করি যাদের নাম বিভিন্ন বিবৃতিতে দেওয়া হয়েছে এবং সে অনুসারে তাদের তদন্ত কাজে যোগদানের জন্য নোটিশও জারি করা হয়েছে। অপর্যাপ্ত ঠিকানার জন্য ৮ জন সাক্ষী যাদের নাম দেওয়া হয়েছিল তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তাই তাদের কোন নোটিশও পাঠানো যায়নি। তাদের মধ্যে সাতজন নোটিশ পেয়েছিল কিন্তু উপস্থিত হয়নি। তারা হয় সাক্ষী দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে অথবা জানিয়েছে যে তারা তদন্তে সুবিধার জন্য কোন প্রকার সাক্ষী দেওয়ার অবস্থানে নেই।
৯. ১৩ই মার্চের সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে, আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে আমার বিবেচনামত তদন্তে আমাকে সাহায্যের জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগ দিতে। আমার অনুমতিতে তদন্তকারী কয়েকজন সরকারী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে জনাব হামেদুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্য কোন আইনজীবী অনুমতির জন্য আবেদন করেননি, এমনকি কোন দলও আইনজীবীর প্রতিনিধিত্ব করতে চাননি। যদিও পূর্ব বাংলার সরকার একটি বিবৃতি জমা দিয়েছিল কিন্তু তা তদন্তের জন্য কোন দল হিসেবে বিবেচনা হয়নি এবং আইনত প্রতিনিধিত্ব করেনি। যদিও আমার অনুরোধে তথাপি জনাব সাইদ আব্দুল গণিকে সরকার তদন্ত কাজে আমাকে সাহায্য করার জন্য নিয়োগ দেন।
১০. ৭ই এপ্রিল, ১৯৫২ ক্যামেরাতে শুনানি শুরু হবে কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট প্রাথমিক ব্যবস্থা সময়মত সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে নির্দিষ্ট তারিখে সাক্ষীদের জেরা করা সম্ভব হবে না। সাক্ষীদের জেরা মূলত ৮ই এপ্রিল শুরু হবে।
১১. যেসব সাক্ষী পুলিশের স্বপক্ষে ছিল তারা দাবি করলো গুলি চালানো ন্যায় সঙ্গত ছিল এবং তাদের জেরা ৮ই, ৯ই, ১০ই, ১৫ই, ১৬ই, ১৭ই এবং ১৮ই এপ্রিল অর্থাৎ মোট ৭ দিনের বেশি হয়নি।
সাক্ষী হিসেবে যাদের নাম সাক্ষগ্রহনে সনাক্ত করা গেছে, গুলি করার অনুমোদন বাতিল করা হয়েছিল কিনা তা পরীক্ষা করা হয়েছিল ২১,২২,২৪,২৫,২৬ এবং ৩০ এপ্রিল ৭ দিন এর মত সময়ের জন্য।সাক্ষিদের সাক্ষগ্রহন করবার পরে যুক্তি তর্কের জন্য দুই দিন নেয়া হয়েছিল।জনাব হামিদুর রহমান তার মক্কেলের জন্য উপস্থিত ছিলেন ২ মে এবং জনাব আব্দুল গনি তার মামলার পক্ষে লড়াই করেছিলেন ৩ মে।তদন্ত শেষ হবার পরে,গুলি করার স্থানবিবরনীর সাথে পরিচিত থাকার পরেও আমি পজিশন অনুযায়ী এলাকা পরিদর্শন করেছিলাম আমার স্মৃতি সতেজ করার জন্য এবং বিল্ডিং এ শুয়ে এবং তদন্তে উল্লেখিত মাটিতে থাকা দাগ সনাক্ত করে এবং আমার জন্য দেখতে মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে কোন গুলির দাগ আছে কিনা।
১২. সুবিধাজনকভাবে ৫ ভাগে ভাগ করে সাক্ষিদের সাক্ষগ্রহন নথিভুক্ত করা হয়েছিল।প্রথম ভাগ গঠন করা হয়েছে ১-২১ এবং সাক্ষি নং ৩৬,আশরাফ আলী ওয়াহিদ,একজন ফটোগ্রাফের যিনি মেসার্স যাইদি এন্ড কোং ফার্মে কর্মরত আছেন যিনি ঘটনা শেষ হবার পরে ছবি তুলেছিলেন পুলিশের অনুরোধে ।
সাক্ষি নং
জনাব মোঃ ইদ্রিস পি এস পি, এস পি ঢাকা ১
জনাব এস এইচ কুরাইশ সি এস পি, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকা রেঞ্জ
জনাব এ জে ওবায়দুল্লাহ, ডি আই জি-ঢাকা রেঞ্জ ২
জনাব মোঃ সিদ্দিক দেওয়ান ডি এস পি, শহর ঢাকা ৩
জনাব নুরুদ্দিন আহমেদ, এস ডি ও, সদর দক্ষিন ঢাকা ৪
জনাব মাসুদ মাহমুদ পি এস পি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার,শহর,ঢাকা ৫
জনাব নবী শের খান,ততকালীন আর আই ঢাকা,
বর্তমানে আর আই ফরিদপুর ৬
জনাব মোঃ ইউসুফ বিশেষ পুলিশ সুপার আই বি, ইস্ট বেংগল, ঢাকা ৭
জনাব আব্দুল গোরফান,ততকালীন ওসি,লালবাগ ঢাকা।
বর্তমানে বরিশালের ওসি ৮
জনাব মীর আশরাফুল হক,পুলিশ পরিদর্শক,ঢাকা ৯
জনাব জে ডি মিলো পুলিশ পরিদর্শক,ঢাকা ১০
মাননীয় সি বি আই মন্ত্রী জনাব হাসান আলী ১১
পশ্চিম বাংলা ঢাকার সরকারি বিভাগ ১২
জনাব সৈয়দ আব্দুল মজিদ,পরিচালক ভুমি সংরক্ষন এবং জরিপ,
পশ্চিম বাংলা ঢাকা ১৩
জনাব আওলাদ হোসেন খান,সংসদীয় সচিব
মানননীয়বেসামরিক সরবারহ মন্ত্রী,পশ্চিম বাংলা সরকারঢাকা ১৪
ডাঃ আলতাফউদ্দিন আহামেদ সিভিল সার্জন ঢাকা ১৫
জনাব আব্দুর রহমান,উপ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট,ঢাকা ১৬
জনাব এ জব্বার পুলিশ পরিদর্শক,লালবাগ সার্কেল,ঢাকা ১৭
ডা. হাবিবুল্লাহ আহমেদ,প্রফেসর ধাত্রীবিদ্যা এবং
স্ত্রীরোগবিদ্যা,মেডিকেল কলেজ,ঢাকা ১৮
ডা. আহমেদ হোসাইন,ইলেক্ট্রোথেরাপিস ১৯
সংযুক্ত ১০টি মেডিকাল কলেজ হসপিটাল,ঢাকা
ডা. হামিদুর রহমান,মেডিকেল প্র্যাক্টিশনার,ঢাকা ২০
ডা. শেখ আব্দুস শুকর, মেডিকেল প্র্যাক্টিশনার,ঢাকা ২১
জনাব আশরাফ আলী ওহাইদি
স্থির চিত্রগ্রাহক সংযুক্ত মেসরস,যাইদি এন্ড কোং ৩৬
(১৩) বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা প্রত্যক্ষদর্শী আছেন ৩জন:-
ডা. এস.এম হোসাইন, উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩৫
ডা. আই.এইচ জুবেরি, ডিন কলা অনুষদ এবং ৩৭
ইংরেজী বিভাগের প্রধান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডা. এম.ও গনি, অধক্ষ্য,সলিমুল্লাহ মুসলিম হল,ঢাকা ৩৮
(১৪): তৃতীয় শ্রেণী প্রত্যক্ষদর্শী হচ্ছে ১০জন ছাত্র।তাদের মধ্যে ৭জন মেডিকেল হোস্টেলে অবস্থান করত আর বাকি ৩জন বাইরে থাকত।
৭জন হচ্ছে —-
আব্দুল মালিক ৪২
সাইফুদ্দীন চৌধুরী ৪৭
মো. গোলাম জুলফিকার ৫২
আমিনুর রহমান ৫৩
রফিকুর রেজা চৌধুরী ৫৪
সাঈদ আব্দুল মালিক ৬০
এবং বাইরের ৩জন হল:-
আহসানুল্লাহ,আবাসিক সলিমুল্লাহ ইসলামি এতিমখানা ৫৮
শেখ মো. আব্দুল হাই ৬২
দেওয়ান হারুন মো. মনিরুদ্দীন ৬৪
(১৫):- চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তারা মেডিকেল কলেজে যা দেখেছেন তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তাদের চারজন ডাক্তার:-
ডা. জিন্নুর আহমেদ চৌধুরী ৩৯
ডাঃ আবদুল মাসুদ খানমাজলিশ ৪০
ডাঃ নয়াব আলী ৪১,এবং
ডাঃ আবদুস সামাদ খান চৌধুরী ৫৫
সাক্ষীদের মধ্যে তিনজন হচ্ছেন সেবিকা,যথা- সাক্ষী নং
সিস্টার মিস এলিজা কুরুনালা ৪৩
মিস নূর জাহান বেগম ৪৪,এবং
মিস পুলু কস্টা ৪৮
সাক্ষীদের মধ্যে পাচজন হচ্ছেন ওয়ার্ড বয়,এ্যাম্বুলেন্স যথা- সাক্ষী নং
দিদার বক্স ৪৫
মোহাম্মাদ মিয়া ৪৬
সেকান্দার আলী ৪৯
মুসলিম খান ৫৯, এবং
রমজান খন্দকার ৬১
সাক্ষী নং. ৫১ জনাব.আব্দুস সাত্তার দেওয়ান যিনি মেডিকেল কলেজ এর সঙ্গে হিসাব কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত ছিলেন এবং সাক্ষী নং. ৬৩ জনাব এখলাস উদ্দিন আহমেদ ,মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান খোন্দকার এন্ডকোং এর একজন প্রতিনিধি ।
১৬)৫ম এবং শেষ গ্রুপ এর সাক্ষীগণ হচ্ছেন যারা জনগণের পক্ষ হতে এমন সাক্ষীগণ যারা নিজেদের সুবিধামত একত্র হয়েছিলেন।
তারা হচ্ছেন- সাক্ষী নং
মির মুসলিম,বাস ড্রাইভার ২২
মানসুর,বাস কন্ডাক্টর ২৩
সোনা মিয়া,রিক্সা চালক ২৫
পিয়ার বক্স,রিক্সা চালক ২৭
ফাকু মিয়া,রিক্সা চালক ২৯
কালা চান,রিক্সা চালক ৩০
নওয়াব মিয়া,রিক্সা চালক ৩১
আসরাফউদ্দীন,রিক্সা চালক ৩২
আবদুল হামিদ,রিক্সা চালক ৩৩
সাক্ষীনং২৬, খাইরুল্লাহ, একজনরিকশাযাত্রী।
এইভাগেআরোআছেন-
ড. এ. মুসাএ. হক, একজনচিকিৎসক ২৪
জনাবমোঃকামাল , এম. এ. বর্তমানেবেকার ২৮
জনাবআব্দুসসাত্তার, এ.পি.পিএরএকজনটেকনিশিয়ান ৩৪
মাতিলইসলাম, সি.এল. এবংআই. ডিপার্টমেন্টেরএকজনসহকারি, ৫৬
পুর্ববাংলাসরকার, ঢাকা
জনাবনূরমোহাম্মদ, বিমানকাস্টমঅফিসেরএকজনসহকারি, ৫৭
তেজঁগা, ঢাকা
১৭.জনাবহামিদুররহমানেরপ্রতিনিধিত্বকাররীসাক্ষীরাইতিমধ্যেইতাদেরজবানবন্দীরেকর্ডকরেছেনএবংএগুলোকরাহয়েছেযখনপ্রত্যেকসাক্ষীজিজ্ঞাসাবাদেরজন্যহাজিরহন।যুক্তিযুক্তমনেহওয়ায়জনাবহামিদুররহমানপ্রত্যেকসাক্ষীকেপরীক্ষাকরেনএবংজনাবগনিতাদেরপুনঃপরীক্ষাকরেন।যেসবসাক্ষীগোলাগুলিহয়নিবলেউল্লেখকরেছিলতারাযখনউপস্থিতহয়তখনসবারআগেপ্রিজাইডিংঅফিসারতাদেরকেজিজ্ঞাসাবাদকরেনএবংএরপরজনাব, আঃগনিএবংজনাবহামিদুররহমানপালাক্রমেতাদেরজিজ্ঞাসাবাদকরেন।এটাযোগকরাযেতেপারেযেযেহেতুজিজ্ঞাসাবাদেরসময়সাক্ষীহিসেবেআগতকোনব্যক্তিকেশপথগ্রহনকরানোরক্ষমতাতদন্তকর্মকর্তারনেইতাইকোনসাক্ষীইশপথনিয়েজবানবন্দীদেননি।
এটাহয়তএখানেপরিলক্ষিতহয়েছেযে, এইতদন্তেযেসবসাক্ষীরতথ্যএকেবারেইঅবাঞ্চিততারাহলেন, ৮জনসরকারীসাক্ষী , ৬জনপুলিশঅফিসার-
সাক্ষীনং
জনাবমোঃইদ্রিস, পি.এস.পি., এস.পি., ঢাকা ১
জনাবআ.জ. ওবায়দুল্লাহ , ডি.আই.জি., ঢাকা-রেঞ্জ ৩
জনাবমোঃসিদ্দিকদেওয়ান, ডি.এস.পি. ঢাকাশহর ৪
জনাবমোহাম্মদইউসুফ, পুলিশেরবিশেষঅধ্যক্ষ, আই.বি. পুর্ববাংলাঢাকা ৮
জনাবআব্দুলগফরান, তৎকালীনদায়িত্বপ্রাপ্তকর্মকর্তা, লালবাগ, ৯
ঢাকা, বর্তমানেপুলিশইন্সপেক্টর, বরিশাল।
জনাবমীরআশরাফুলহক, পুলিশইন্সপেক্টর, গোয়েন্দাবিভাগ,
ঢাকা, এবং২জনম্যাজিস্ট্রেট ১০
জনাবএস.এইচ. কুরাইশি, সি.এস.পি., জেলাম্যাজিস্ট্রেটঢাকা ২
জনাবনুরুদ্দিনআহমেদ, এস.ডি.ও., সদর, উত্তরঢাকা ৫
এবংবেসরকারিসাক্ষী
জনাবমোঃকামাল, এম.এ. ২৮
দেওয়ানহারুনমোঃমনিরুদ্দিন ৬৪
এরাইএকমাত্রসাক্ষীযারাসত্যিইপুলিশকেগুলিকরতেদেখেছেবলেদাবিকরছে।এখনপর্যন্তঅন্যসাক্ষীদেরতথ্যশুধুমাত্র২১শেফ্রেব্রুয়ারিভোরথেকেদুপুর৩-২০এসত্যিকারঅর্থেপুলিশেরগুলিচালানোরসময়পর্যন্তপরিস্থিতিআন্দাজ়েসহায়তারজন্যপ্রয়োজন।
১৯. সকালেরঘটনারবিষয়েপুলিশসাক্ষীরাদাবিকরেনযে, দিনটিশুরুহয়সকাল৭-৩০এবিশ্ববিদ্যালয়এলাকায়যানবাহনচলাচলেবাধাদেওয়ারমাধ্যমে।পুলিশধারনাকরেছিলযে২১শেফেব্রুয়ারিঘোষিতহরতালশীঘ্রইবিশ্ববিদ্যালয়এলাকায়ঝামেলারউদ্রেককরবেএবংজরুরীঅবস্থামোকাবেলারব্যবস্থাকরেছিল।সেইঅনুসারেপুলিশবাহিনীসকাল৭-৩০এরমধ্যেপুর্বনির্মিতব্যবস্থাঅনুযায়ীতাদেরঅবস্থাননেয়।ঢাকাশহরেরডি.এস.পি. জনাবসিদ্দিকদেওয়ানকেবিশ্ববিদ্যালয়প্রাঙ্গনেরবিশেষদায়িত্বদেওয়াহয়েছিল।শহরেরঅতিরিক্তপুলিশসুপারিনটেনডেন্টজনাবমাসুদমাহমুদ, তাঁরটহলেবেরহনএবংভোরথেকেপুলিশফাঁড়িগুলোপরিদর্শনকরেন।বিশ্ববিদ্যালয়এলাকায়তিনিদেখেনযে, ছাত্ররাযানচলাচলেবাধাদিচ্ছিল, বাস, ট্যাক্সি, রিকশাএবংগাড়িথেকেযাত্রীদেরনেমেযেতেবাধ্যকরছিলওপরবর্তীতেএইযানবাহনগুলোরব্যবহারঠেকানোরজন্যসেগুলোরচাকারহাওয়াবেরকরেদেওয়াহয়।পুলিশঅফিসাররাযানচলাচলঅব্যাহতরাখারজন্যহস্তক্ষেপকরেনএবংতাদেরকেঅকথ্যভাষায়গালাগালিকরাহয়আরবিশেষকরে- শহরেরঅতিরিক্তএস.পি. ছাত্রদেরআক্রমনেরলক্ষ্যবস্তুতেপরিনতহন।পুলিশসুপারিনটেনডেন্টজনাবইদ্রিসসকাল৭০-৪৫এখবরপানযেছাত্রদেরএকটিবড়অংশভেতরে, বিশ্ববিদ্যালয়প্রাঙ্গনেরবাইরেওমেডিকেলকলেজহোস্টেলপ্রাঙ্গনেজড়হয়েছেএবংতারাঘোষিতহরতালকেজোরদারকরতেগাড়িরচালকদেরগাড়িথামাতেওযাত্রীদেরনেমেযেতেবাধ্যকরছিল।পুলিশসুপারিনটেনডেন্টদ্রুতসকাল৮-১৫এগোলযোগপুর্নস্থানেপৌছানএবংদেখেনযেছাত্ররাসত্যিসত্যিযানচলাচলথামানোরজন্যবলপ্রয়োগকরছিল, ঠিকযেমনটাতাকেরিপোর্টকরাহয়েছিল।তিনি, এস.পি., ছাত্রদেরএসবকর্মকান্ডথেকেবুঝিয়েনিরস্তকরারসর্বোচ্চচেষ্টাকরেনকিন্তুতিনিদেখলেনযেতাঁরপ্রতিবাদেরকোনপ্রভাবইপড়ছিলনাএবংযখনতিনিবুঝলেনযেঝামেলাহবেতখনতিনিওইএলাকায়পুলিশমোতায়েনকরলেন।সকাল৯টায়বিশ্ববিদ্যালয়গে্টেতিনিডি.এস.পি., সিটি, একজনইন্সপেক্টর, ২জনহেডকন্সটেবলএবংএস.এ.এফ. এর২০জনকন্সটেবল, একজনইন্সপেক্টর, একজনসাবইন্সপেক্টর, একজনসার্জেন্ট, দুইজনহেডকন্সটেবলও১৪জনকন্সটেবলকেঅস্ত্রওলাঠিসহমোতায়েনকরেন।মেডিকেলকলেজেরগেটেতিনিএকজনহেডকন্সটেবলওএস.এ.এফ. এর১০জনকন্সটেবলএবংসলিমুল্লাহমুসলিমহলেরকাছেএকজনহেডকন্সটেবলও১০জনকন্সটেবলরেখেছিলেনএবংকন্সটেবলরাসসস্ত্রছিল।
২০. প্রায়এইসময়েজনতাছোটছোটভাগেবিশ্ববিদ্যালয়প্রাঙ্গনেজড়োহতেশুরুকরে, সকাল১০টায়বিশ্ববিদ্যালয়প্রাঙ্গনেএকটিবিশালজনসমাগমনাহওয়াপর্যন্তছাত্ররাছোটছোটদলেএবংবহিরাগতরাপ্রাঙ্গনেআসতেথাকেএবংএকটিসভারপ্রস্তুতিনেওয়াহচ্ছিল।সকাল১০টানাগাদপরিস্থিতিএতউত্তেজনাপুর্নহয়েপরেছিলযে, জেলাম্যাজিস্ট্রেটজনাবকুরাইশিরকাছেএকটিবার্তাপাঠানোহয়এবংতিনিততক্ষনাৎবিশ্ববিদ্যালয়েরগেটেরদিকেঅগ্রসরহন।যখনতিনিঘটনাস্থলেপৌছানতখনজনাবকুরাইশিদেখেনযেগেটেরসামনেওবিশ্ববিদ্যালয়প্রাঙ্গনেরভেতরেএকটিবড়ভীড়জমাহয়েছেযারাপুলিশকেগালাগালকরছিলএবংব্যাপকভাবে১৪৪ধারাভঙ্গেরপ্রস্তুতিনিচ্ছিল।জনাবকুরাইশিবিশ্ববিদ্যালয়েররেজিস্টারকেদিয়েউপাচার্যকেটেলিফোনকরিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কর্তৃপক্ষকেছাত্রদের১৪৪ধারাভঙ্গনাকরারজন্যরাজিকরতেবলারজন্য।জেলাম্যাজিস্ট্রেটপৌছানোরকিছুক্ষনপরেইউপাচার্য, ডা. জুবেরিএবংডা. গনিকেনিয়েঘটনাস্থলেপৌছান।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব কুরেশি তাদের অনুরোধ করলেন শিক্ষার্থীদের বেআইনি কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বাধ্য করার জন্য ও জনপথ এবং ট্রাফিকে হস্তক্ষেপ এবং দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা থেকে তাদের বিরত রাখতে।উপাচার্যযখন শিক্ষার্থীর কাছে গেলেন,যাদের সংখ্যা তিনি অনুমান করেছিলেন প্রায় এক হাজার বলে,তারা প্রথমে তাকে অনুরোধ করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের মিছিলে নেতৃত্ব দিতে।তিনি প্রস্তাব দিলেন যেএকটি মিটিং এর আয়োজন করে সমাধান এ এসে বিষয়টি মিমাংসা করা যায়।এই প্রস্তাবে ছাত্ররা তাকে অনুরোধ করল যে তিনি যেন এই বিষয়টির অগ্রগতি তাদের জানান এবং মিটিং এ সভাপতিত্ব করেন।তিনি রাজি হলেন না,কিন্ত তিনি বললেন তিনি তাদের সাহায্যে আসবেন যদি তারা নিশ্চয়তা দেয় যে তারা শান্তিপূর্ণ আচরণ করে এবং মিটিং এর পর শান্তিপূর্ণভাবে চলে যাবে।এই নিশ্চয়তা মোটেইদেয়া যায়নি, যদিও কিছু নেতৃস্থানীয় ছাত্র চেষ্টা করেছিল সাধারণ ছাত্রদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে।মিটিং এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেরায়শিক্ষার্থী দের প্রস্তাবটিতে উপাচার্য সম্মত হলেন না। এটা সম্পূর্ণ পরিষ্কার ছিল যে,শিক্ষার্থীরা কোনরকম প্রস্তাব শুনতেই রাজি ছিল না এবং মনস্থির করেছিল ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য।
২১. ইউনিভারসিটি কম্পাউন্ড এর ভেতরে চলা মিটিংটি শেষ হয় ১১টার দিকে।ড.জুবেরির বক্তব্য অনুযায়ী, “ভয়ংকর উত্তেজিত” ছাত্ররা তখন ইউনিভারসিটি গেটের দখল নেয় এবং উপাচার্য ও তার দুজন সহকর্মীর বক্তব্য অনুযায়ী, তারা তখন ৫,৭অথবা ১০ জন করে একত্রে গেইট দিয়ে বের বের হতে শুরু করে গ্রেফতার হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে।পুলিশের সাক্ষ্য অনুযায়ী তারা ২৫/৩০ জন করে বের হচ্ছিল।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে,ছাত্ররা একটি নোট বুকের রেজিস্ট্রার লিস্ট হতে তাদের নাম ডাকা হলে একে একে বের হচ্ছিল যা দেখে নিঃসন্দেহ হওয়া যায় যে,মিটিংটি কেবলই একটি ভাল অজুহাত ছিল।প্রকৃতপক্ষে ছাত্ররা ১৪৪ধারা ভঙ্গের সকল প্রস্তুতিই সম্পন্ন করেছিল এবং নাম ঠিক করে রেখেছিল যে কোন নির্দিষ্ট ছাত্ররা ১৪৪ ধারাকে অগ্রাহ্য করবে এবং এই উদ্দেশ্যে কোন সুনির্দিষ্ট অর্ডার এ তারা ইউনিভারসিটি প্রাঙ্গণ হতে বের হবে তা ও নির্দিষ্ট করেছিল।ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় গেট দিয়ে বের হলে ছাত্রীদের এড়িয়ে পুলিশ ছাত্রদের এরেস্ট করে এবং কিছু ছাত্র সত্যিই নিজ থেকেই পুলিশের গাড়িতে চড়ে যেগুলো তাদেরকে পুলিশ স্টেশন এ নিয়ে যাওয়া জন্য ছিল।৯১জন কে গ্রেফতার করার পর পুলিশের গাড়িতে জায়গা শেষ হয়ে যায় এবং পুলিশ আর কাউকে এরেস্টকরার জন্য নিতে না পেরে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।পুলিশের বিব্রতভাব আঁচ করতে পেরে জনতা আরও বর্বর হয়ে ওঠে এবং পুলিশের দিকে ইটে পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।পুলিশকে পুরো বাহিনীর সন্নিবেশ পুনরায়আয়োজন করতে হল। গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদের নিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকজন কন্সটেবল পাঠাতে হয়। অতিরিক্ত এসপি(সিটি) তাকে পাঠানো হয় এসেম্বলি ভবনে নিরাপত্তার জন্য যেহেতু এসেম্বলি হাউজের উদ্দেশ্যে ছাত্রদের মিছিল নিয়ে এগুবার পরিকল্পনা ছিল,এমন রিপোর্ট তারা পেয়েছেন।বিশ্ববিদ্যালয় গেট এ একটি গ্যাস স্কোয়াড আনা হয়।সেই সময়ে পুলিশ বাহিনীর সন্নিবেশ ছিল এরকম -বিশ্ববিদ্যালয় গেট এ একজন ইন্সপেক্টর, একজন সাব ইন্সপেকটর,একজন হেড কন্সটেবলএস এ এফ আর ছয়জন কন্সটেবল।একজন হেড কন্সটেবল আর চারজন কন্সটেবল এর কাছে ছিল লাঠি।১৪ জন কন্সটেবল ছিলেন গ্যাস স্কোয়াড এর। মেডিকেল কলেজ গেট এ ছিলেন ডি এস পি(সিটি)।একজন হেড কন্সটেবল এবং এস এ এফ এর ১০ জন কন্সটেবল।এসেম্বলি হাউজ এর কোণায় ছিলেন অতিরিক্ত এস পি(সিটি),তিনজন সার্জেন্ট, একজন সাবইন্সপেক্টর, দুইজন হেড কন্সটেবল,১৮ জন কন্সটেবল (অস্ত্রধারী) ১ জন হেড কন্সটেবল ও চার জন কন্সটেবল লাঠি সহ,একজন হেড কন্সটেবল ও ছয়জন কন্সটেবল গ্যাস স্কোয়াড এর।
২২. ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী ৯১ জন অপরাধী কে গ্রেপ্তার করার পর বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাউন্ডের এর ভিড়ের মধ্যে বেশ তাড়া দেখা গেল।জনতা এসেম্বলি ভবনের দিকে ধাবিত হতে থাকে এবং চিৎকার করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে যেমন -“রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”, “পুলিশ জুলুম চলবে না”। এদের কে এসপি এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছিলেন যে,তারা একটি বেআইনি সমাবেশ সংঘটিত করছে এবং যদিনা তারা নিজ থেকে এটি ভঙ্গ করে চলে যায়,তাদের পাঠাতে শক্তি প্রয়োগ করা হবে।তারা যাচ্ছিল না ফলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস শেল এবং গ্যাস গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে।গ্যাস হামলার ফলাফল ছিল যে,ছাত্ররা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে মেডিকেল কলেজ এলাকায় আবার একত্রিত হয়,সেক্রেটারিয়েট রোডের অপর পাশে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাউন্ড এলাকা হতে মেডিকেল কলেজ কম্পাউন্ড এলাকায় যেতে পারছিল কারন যে দেয়ালটি এ দুটিকে পৃথক করে রাখে সে সময়ে সেটিতে ফাটল ছিল এবং শারীরিকভাবে ইউনিভারসিটি এলাকার মধ্যে থেকেই একটি থেকে আরেকটিতে যাওয়া সম্ভব ছিল সেক্রেটারিয়েট রোডে না এসেই।গ্যাস হামলা জনতার ভীড়কে সাময়িক ভাবে বিদীর্ণ করেছিল কিন্ত একই মধ্যে এডিশনাল এস পি(সিটি) জনাব মাসুদ মাহমুদ আহত হয়েছিলেন,একটি জিপ ভাঙচুর করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও মেডিকেল কলেজ এলাকা হতে পুলিশের ওপর থেকে থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হচ্ছিল।পরিস্থিতি ঢাকা রেঞ্জ এর ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেলএ.যে.ওবাইদুল্লাহকে ডেকে পাঠানোর জন্য যথেষ্টই সঙ্কটজনক ছিল।তিনি সেখানে আসেন ১টা বাজে।তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সুপারের সাথে দেখে করলেন এবং দেখলেন যে বিশ্ববিদ্যালয় এর সামনে এবং মেডিকেল কলেজ এরিয়া হতে প্রায় এসেম্বলি হাউজ পর্যন্ত বিস্তৃত জনতার ভীড় রাস্তায়।জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেন ও পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট দ্বারা উচ্চারিত সাবধান বাণীকে কোন পাত্তা না দিয়ে ভীড় হতে পুলিশের ওপর আক্রমণ তীব্রতর হয় এবং ইটপাটকেল বর্ষণ হতে থাকে পুলিশের দিকে।গ্যাস হামলায় বিক্ষিপ্ত হয়ে তারা নিছক সাময়িক পশ্চাদপসরণ করে,বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাদের “আশ্রয়স্থল” এবং নতুন করে আক্রমণ করতে জড়ো হয়।বুঝা গেল যে,ঝামেলার কেন্দ্র হল মেডিকেল কলেজ গেট এবং সেই অনুযায়ী সেখানটায় পুলিশ ফোর্স বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হল যেহেতু ওখানেই জরুরি প্রয়োজন। ২টা থেকে ২:৩০ এর মধ্যে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয় এবং পুলিশ সেক্রেটারিয়েট রোড এর পশ্চিম পাশের দোকানগুলোর পিছনে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।আইনসভার একজন সদস্য মৌলভি অওলাদ হোসাইনকে এসেম্বলি যাওয়ার পথে আটকে দেয়া হয় এবং এবং গাড়িসহ মেডিকেল কলেজ কম্পাউন্ড এর দিকে যেতে বাধ্য করা হয়।তাকে ভীতিপ্রদর্শন করে একটি কাগজে সই করা হয় যেখানে বলা ছিল-বাংলা হবে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং তিনি লাঠিচার্জ হতে ও কয়েকজন ছেলেকে তাতে আহত হতে দেখেছেন যদিও তা তিনি দেখেন নি।উনি ৯ টা পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারেননি।প্রায় একই সময়ে ডি এস পি(সিটি) জনাব মো: সিদ্দিক দেওয়ান জনতার মাঝে আটকা পড়েন ও নির্যাতিত হন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির দুপুরের দুটি দৃঢ় লাঠিচার্জ এর একটি করা হয়েছিল তাকে জনতার হাত হতে উদ্ধার করতে।পুলিশ পুনঃপুন টিয়ার গ্যাস গ্রেনেড ও শেল ব্যবহার করছিল কিন্ত ফলাফল হচ্ছিল খুবই ক্ষণস্থায়ী এবং জনতা দ্রুতই এগুলো কাটিয়ে উঠছিল।একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে তারা পুলিশের সাথে “ইঁদুরবেড়াল” খেলছিল এবং পানি ঢেলে গ্রেনেড ও শেল অকার্যকর করে দিয়ে পথচারী ও পুলিশের ওপর তাদের ইটপাটকেল বর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছিল।
২৩। এটা এমন অবস্থা ছিল যখন জনাব হাসান আলী তার গাড়িতে করে প্রাদেশিক মুসলীম লীগের সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ -আল- বাকী, এম.এল.এ, এম.সি.এ এর সাথে ঐ পথে সমাবেশে যাচ্ছিলেন। গাড়ীর টায়ার নষ্ট হওয়ায় ভিড়ের পাশে গাড়ীটা থামলো। দুইজন যুবক গাড়ীর ভিতরে উঠলো- একজন বাম দরজা দিয়ে এবং অন্য জন ডান দরজা দিয়ে।তারা মাননীয় মন্ত্রীকে তার দলবলসহ তাদের সাথে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার জন্য জোর করল। তার সাথের লোকজন গাড়ী থেকে বের হয়ে সেটাই করলো। কিন্তু সেখানে অনেক ঢিল ছোড়াছুড়ির কারনে স্থানটা অনিরাপদ মনে হওয়ায় তার অনুসারীদের গাড়ীটা পিছনে নিতে বললো।পুলিশ মাননীয় মন্ত্রী এবং তার সাথের লোকজনদের একটা পুলিশের গাড়িতে নিলেন এবং সমাবেশের ঘরে নামিয়ে দিলেন কিন্তু জীপ থেকে নামার সময় মাননীয় মন্ত্রী তার মাথায় ইটের খোয়ার আঘাত পেলেন। এই সময়ে পুলিশ শহরের ডি আই জি, জেলা নির্বাহী, পুলিশ সুপার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সহ ইটের খোয়ার আঘাতে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করলো। পুলিশ ফোর্সের অন্যান্য সদস্যরাও আহত হয়েছিল। কিন্তু ঐ ধরনের প্রতিবন্ধকতা সত্বেও তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলো।
২৪। দুপুর তিনটার দিকে পুলিশ বুঝতে পারল যে, পরিস্থিতি ক্রমেই তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পুলিশ রাস্তায় উত্তেজিত জনতার উপর দ্বিতীয় ও শেষবারের মত লাঠিচার্জ করল। কিন্তু এবারে লাঠিচার্জে কোন কাজ হল না। বরং জনতা না পিছিয়ে ইটপাটকেল ছুড়ে পুলিশকে পিছু হটতে বাধ্য করল। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের অনুমান অনুযায়ী মিছিলে প্রায় ৫০০০লোক ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠ ও মেডিকেল কলেজ হোস্টেল – দু’দিক থেকে পুলিশের উপর জনতার ভয়ংকর চাপ আসতে লাগল। পুলিশের দল বিপদে কোণঠাসা হয়ে পরাজয়ের প্রান্তে চলে গিয়েছিল। পরিস্থিতি এতই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল যে, গুলি ছোঁড়া আবশ্যক হয়ে পড়েছে মর্মে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ডিআইজি ও পুলিশ সুপার একমত হন। সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে দাঙ্গা থামাতে জনতার উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হল। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেটের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী এবং পুলিশ সুপারের প্রত্যক্ষ নির্দেশে পুলিশ বাহিনী দাঙ্গাকারীদের উপর গুলি বর্ষণ করে। গুলি বর্ষণকারী পুলিশের মধ্যে তিনজন হেড-কন্সটেবল ও ত্রিশজন কন্সটেবল ছিল। তারা মেডিকেল কলেজ গেট ও কলেজ হোস্টেলের একটি চতুষ্কোণ তৈরি করে অবস্থান নেন। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ও মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের মাঝে প্রতি পার্শ্বে পাঁচজন করে পুলিশ দাঁড়ায়। অন্যরা পশ্চিম দিক অভিমুখে অবস্থান নেন। ডিআইজির সৈন্যবিন্যাসের ধারণার সাথে এসপির ধারণা না মিললেও এসপি যেহেতু কার্যস্থলে উপস্থিত ছিলেন, তাই তার ধারণাই শ্রেয়তর বলা যায়। পুলিশের অন্য সদস্যসহ এসপি নিজে চতুষ্কোণের ভিতরে অবস্থান নেন। এসপি দুই পার্শ্বের সৈন্যদের এক রাউন্ড গুলি করার আদেশ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জনতার দলটি পিছু হটলেও মেডিকেল হোস্টেল সংলগ্ন জনতার দলটি মুহূর্তের জন্য থমকে গেলেও ইটপাটকেল ছুঁড়তে ছুঁড়তে আবার সামনে অগ্রসর হতে লাগল। এমন অবস্থায় এসপি মেডিকেল হোস্টেলের দিকের জনতাকে রোধকারী পুলিশের দলকে দ্বিতীয়বারের মতন গুলি চালাতে নির্দেশ দেন। জনতার এই দলটি যখন পিছু হটতে শুরু করল, পুলিশ সুপার তখন গুলি বর্ষণে বিরতি দিলেন। এরপরে গুলির হিসাবে দেখা গেল, ২৭ রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের দিকের বিক্ষোভকারীদের উপর পাঁচ রাউন্ড এবং মেডিকেল হোস্টেলের দিকে ২২রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়েছে। গোলাগুলির সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেরদিকে একজনকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
গুলিবর্ষণ এর সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ এ একজন নিহত হলে তাকে এম্বুলেন্স এ হসপিটাল এ সরানো হয় কিন্ত পুলিশের পক্ষে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল এর দিকের হতাহতের সংখ্যা নির্ধারণ করা অসম্ভব ছিল কারন দাঙ্গাবাজরা তখনো বেশ উত্তেজিত ও অনমনীয় অবস্থায় ছিল। শেষতক আবিষ্কৃত হয় যে গুলিবর্ষণ এর ফলে নয়জন নিহত হন যার মধ্যে তিনজন ছাত্র এবং ছয়জন বহিরাগত। দুইজন রাত আটটায় হাসপাতাল এ মারা যায়,যাদের একজন ছিল ছাত্র এবং আহত তৃতীয় আরেকজন মারা যায়তদন্তকালীন। গোলাগুলির পরেও জনতা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ থামায়নি এবং মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে একটি মাইক্রোফোন স্থাপন করে সেটিতে সরকার এবং পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ বক্তব্য দেয়া হচ্ছিল। উত্তেজনা তুঙ্গে রাখতে জনগণকে রক্তাক্ত পোষাকগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছিল। সাড়ে চারটা অথবা পাঁচটার দিকে সমবেত জনতার আরেকটি জোয়ার এসেম্বলির দিকে ধাবিত হওয়া রোধ করতে পুলিশকে লাঠি চার্জ করতে হয়েছিল।
২৫।জনাব হামদুর রহমান তর্ক করলেন যে,পরিস্থিতি দানা বেঁধে ওঠা সম্বন্ধে পুলিশ অফিসারদের বক্তব্য স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রত্যক্ষদর্শী দের ইঙ্গিত দ্বারা জোরালো হয়ে উঠেছে। এই প্রত্যক্ষদর্শী দের মধ্যে ছিলেন উপাচার্য ড. জুবেরী এবং ড. গনি, যারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের ভেতরের অবস্থা তথা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা এবং গোলমাল সম্পর্কে আঁচ করার মত অবস্থানে ছিলেন, যদিও বাইরের রাস্তায় আসলে কী ঘটছিলো, তা সম্পর্কে তারা কিছুই জানতেন না। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হতে যে ইট-পাটকেল ছোড়া হচ্ছিলো এবং এর কারণে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা আহত হয়েছিলো এবং তাদের বেশ কয়েকটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো বলে কর্মচারীরা যে তাদের নিকট অভিযোগ করেছিলো তা তারা স্বীকার করে নেন। ড. জুবেরী কে (সাক্ষী নং ৩৭) ইট-পাটকেল ছোঁড়ার ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্ন করাহয়।
প্রশ্ন নং ১৪০- অনুগ্রহ করে মনে করার চেষ্টা করুন, এই গ্রেপ্তার চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর থেকে ঢিল নিক্ষেপ করা হচ্ছিলো কিনা যা নিয়োজিত পুলিশ ও তাদের জীপে এসে লাগছিলো?
উত্তর- গ্রেপ্তার চলাকালীন সময়ে আমার মনে হয় না কোন ধরণের ঢিল ছোঁড়া হচ্ছিলো।
প্রশ্ন নং ১৪১-পরবর্তীতে?
উত্তর- কিন্তু কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের পর পুলিশ উপাচার্যের কাছে অভিযোগ করে যে তাদের উপর ঢিল ছোঁড়া হয়েছে।
প্রশ্ন নং ১৪২- সেখানে রেলিং থেকে পুলিশের উপর ঢিল ছোঁড়া হয়েছিলো কিনা তা নিশ্চিত করতে উপাচার্য কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?
উত্তর- আমার মনে হয় না যে উপাচার্য তা নিশ্চিত করতে কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আমি রেলিং এর বাইরে ছিলাম। আমি নিজে ছাত্রদের বুঝিয়ে নিরস্ত করার চেষ্টা করছিলাম, যে তাদের এখন ঢিল ছোঁড়া উচিত হচ্ছে না। আমার এটা খুব ভালোভাবেই মনে আছে।
২৬. যদিও উপাচার্য মহোদয় এবং ড. গনি নিজে কোন ঢিল ছোঁড়াছুড়ি হতে দেখেন নি, তথাপি ৫৯, ৬৪ এবং ২৪৫ নং প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য মহোদয় স্বীকার করেছেন যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হবার পর তিনি রাস্তায় অনেক ইটের টুকরো দেখেছেন এবং ২৪৬ নং প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্বীকার করেছেন, তিনি যখনে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে চলে যাচ্ছিলেন, তার কাছাকাছি কিছু ইট পড়েছিলো যা তাকে দ্রুত ওই বিশেষ স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করে। সাক্ষ্যদানকারী চিকিৎসকরাও বলেছেন যে দায়িত্বপালনের জন্যে তারা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছেন এবং বের হয়েছেন, তখন রাস্তায় ইটের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
সাক্ষ্য নং ৩৯, ড. জিন্নুর আহমেদ চৌধুরী,৪০নংড. আবুল মাসুদ খান মজলিস,৪১ নংড. নওয়াব আলী এবং অন্যান্য সকল পুরুষ নার্স, ৪৬ নংমোহাম্মদ মিয়াঁ, ৪৯নংসেকান্দার আলী তাঁদের বিবৃতিতে ইট-পাটকেলের কথা উল্লেখ করেছেন এবং সাক্ষ্য নং ৬৩, এখলাসউদ্দিন আহমেদ, একজন ঠিকাদারের প্রতিনিধি একই কথা বলেছেন। সেসব ইট-পাটকেল ছোঁড়া হয়েছিল এবং রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল যা আপাতত ছবি-প্রদর্শনীতে দেখা গিয়েছে এবং সাধারণ জনগণ, বাস-চালক, ডাক্তার, রিক্সাওয়ালাসহ যারা নিজস্ব যানের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তাঁদের বিবৃতিতেও উঠে এসেছে। (সাক্ষ্য নং. ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ এবং ৩৪)
সাক্ষ্য নং. ২৪, ড. এ. মুসা এ. হক, ঢাকার একজন চিকিৎসক যিনি জবানবন্দি দিয়েছে যে মেডিকেল কলেজের একজন রোগীর সাথে দেখা করতে যাবার সময় রাস্তায় তার গাড়ি থামানো হয়েছিল। তিনি নির্ধারিত রাস্তার মোড়ে উত্তেজিত জনতার মাঝে এসব বলেছেন এবং পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ছুড়ে মারার ঘটনাও বিবৃত করেন। এই ভদ্রলোক একজন ডাক্তার হওয়ায় তার বক্তব্যের সত্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো মানে নেই, দুপুর ২টায় মেডিকেল কলেজ গেটের সামনে আসলেই ভয়াবহ অবস্থা বিরাজমান ছিল।
২৭.জনাব গনি কর্তৃক উপস্থাপিত হয়েছে যে পুলিশের গুলিবর্ষণের এর আগে ঘটিত এই ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করা হয় এবং উপস্থিত জনতার সংখ্যা পুলিশের বক্তব্যের সত্যতা প্রদান করে যে তারা বিপদে পড়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। এটাও উল্লেখ করা হয় যে পুলিশের সাক্ষ্যমতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে আনুমানিক ৪০০০ বা ৫০০০ মানুষ উপস্থিত ছিল যদিও উপাচার্যের মতে এই সংখ্যা বড় জোর ২৫০০। এমনকি এটাও বলা হয়েছে যে যদি সকল শিক্ষার্থী এবং মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ছাত্ররাও যদি উক্ত বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করতো তবুও তা পুলিশের কর্তৃক নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে কম হবে। আরো বলা হয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সকাল বেলায় দুইজন বহিরাগত, জনাব শামসুল হক এবং জনাব ওলী আহাদকে দেখা গিয়েছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, উপাচার্য, ড. জুবেরী এবং ড. গনি তাদের বিবৃতিতে ১০০০ জনের উপস্থিতির কথা বলেছেন এবং জনাব গনি উল্লেখ করেন মিটিং শেষ হবার পরে মিটিং এ অংশগ্রহণ করেছে এরকম বিরাট সংখ্যক মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে চলে যায়। ছাত্রদের পদাধিকার বের করা হয়েছে এবং কিছুসংখ্যক ছাত্র সভায় সামান্যই মনোযোগী ছিল যারা কিনা কিছুক্ষন বাদেই সভা ত্যাগ করে এসেছিলো। লক্ষ্য করা হয়েছে এসব ছাত্রদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুমানিক ১০০০ জনের উপস্থিতিকেই সঠিক বলে মনে করে, এবং যদি একটা বিরাট সংখ্যক ছাত্র আগেই শান্তিপূর্ণ ভাবে স্থানত্যাগ করে থেকে তাহলে পুলিশ কর্তৃক বিবৃত বেলা ১:৪৫ এর দিকে৪০০০-৫০০০ জনের উপস্থিতির তথ্য অগ্রহনযোগ্য। এই তর্কের আসলে কোনো নিশ্চয়তা নেই কারণ পুলিশ ৩:২০ এর দিকের গুলি চালানো শুরু করে এবং ইহা সম্ভব যে সভার সমাপ্তি এবং গুলিবর্ষণের মাঝামাঝি সময়েই সাধারণ জনতা বিক্ষুব্ধ হয়েছিল। অবশ্যই যদি, পুলিশ সাক্ষী, ২৮, জনাব মোহাম্মদ কামালের সাক্ষ্য বিশ্বাস করা হয়- তাহলে সেটাকেই আসল ঘটনা মনে হবে এবং সেটা ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করা গেছে যে ছাত্র এবং বহিরাগতদের জন্য মূল সড়ক এড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ কম্পাউন্ডের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া খুব কঠিন ছিল না। এবং এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সেখানে সেসময় বহিরাগত লোকজন ছিল যা কিনা সাক্ষীদের বক্তব্যে এবং আহত লোকের তালিকায় উঠে এসেছে।
২৮. উপাচার্য শিক্ষার্থীদেরকে “বিক্ষুব্ধ” বলে সম্মোধন করেছেন, পুলিশ তাদের উপর টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে এবং এটি সম্পূর্ণ তাৎপর্যতার বাহিরে নয় যে কেউ দেখেনি।সাক্ষ্য নং৫৫ড. আব্দুল সামাদ খান চৌধুরী, নাক-কান-গলা বিভাগের সহকারী সার্জন বিবৃত করেছেন যে তিনি প্রথম টিয়ার সেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়ার পরে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিলো, তারা উত্তেজিত হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছিলো এবং তিনি আবাসিক সার্জনকে তাদের উপর আসন্ন বিপদের কথা জানিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্টের জিজ্ঞাসাবাদে তাকে জিজ্ঞাসে করা হয় যে কেন তার মনে হয়েছিল যে বিপদ আসন্ন, এর জবাবে তিনি ১৯৪৭ সালে কলকাতায় ঘটে যাওয়া ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষের কথা তুলে ধরেন। তিনি তার কলকাতার অভিজ্ঞতা থেকে বিশাল সংখ্যক ছাত্রের আহত হবার ব্যাপারটি অনুমান করেছিলেন। এজন্যই তিনি আবাসিক সার্জনকে ডাক্তারদের একটি তালিকা করতে বলেছিলেন যারা কিনা আসন্ন আহত ছাত্রদের চিকিৎসা দিবেন।
২৯. এটা উল্লেখ করা হয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভুল করেছে, তারা বহিরাগতদের রুখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজাগুলো বন্ধ করে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। উপাচার্য এতে জবাব দেন যে এহেন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে প্রবেশের জন্য পুলিশকেও ভোগান্তি পোহাতে হতো। তাকে তার সহযোগীরাও এই বিবৃতির সমর্থন দিয়ে জানিয়েছেন যে আসলেই এরকম পদক্ষপ গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না কারণ গেটগুলি তখন ছাত্রদের তত্বাবধায়নে ছিল।
৩০. জবা গনি কর্তৃক উল্লেখ্য যে পুলিশ ঠিকঠাকভাবে পূর্বে থেকেই পরিস্থিতি সামাল দেয়নি এবংতারা যখন দেখলো যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে কিছু ঘটতে চলেছে তারা গুলিবর্ষণের পরিবর্তে বিশাল ফোর্স নিয়ে চারপাশে বেষ্টনী তৈরী করতে পারতো। এটা আসলে গ্রহণযোগ্য কোনো বিতর্কে যাচ্ছেনা। যেকোনো সম্ভাব্য উত্তেজনামূলক পরিস্থিতি সমাধান করতে হলে পুলিশের একটি নির্দিষ্টি এলাকা না বরং সম্পূর্ণ শহর নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা উচিত। এবং এটাও বিবেচনা করা উচিত যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এত বেশি পুলিশ মোতায়েন করায় অন্যান্য এলাকা বিভিন্ন ধরণের দুষ্কর্মের জন্য উন্মুক্ত হয়ে পরবে।
৩১. এইতদন্তথেকেকিবেরহচ্ছেতাআসলেইগুরুত্বপুর্ননা, এটা জানতেহবে যে ২১শে ফেব্রুয়ারি বেলা ৩:২০ এর দিকে উক্ত স্থানে পুলিশ ফোর্সের গুলিবর্ষণ এড়ানো যেত কিনা।
৩২. পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি দ্রুততার সাথে খারাপ হচ্ছিলো এবং ৩টা নাগাদ পুলিশের বিশাল ফোর্স টিয়ার সেল নিক্ষেপ করা শুরু করে, মোটের উপর তারা ৩৯টি গ্যাস গ্রেনেড এবং ৭২টি টিয়ার সেল বিস্ফোরণ করেছিল। মেডিকেল কলেজ গেট, কম্পাউন্ড, সামনের মূলসড়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে উপস্থিত উত্তেজিত জনতার সাথে তারা কোনোভাবেই আপোষে যেতে পারছিল না। হোস্টেল এরিয়া ছাত্রদের “অভয়ারণ্য” স্থান ছিল এবং তারা সেখান থেকে পুলিশের উপর সহজেই আক্রমণ করতে পারতো। হয়তো এজন্যই ছাত্ররা জানিয়েছে যে তারা কম্পাউন্ডের ভিতরে রেলিঙের পিছনে তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শামিল ছিল।
৩৩।৩-২০ মিনিটে পুলিশ বাহিনীর অবস্থান এবং জনসমাবেশে পুলিশের গুলি করবার প্রয়োজনীয়তা অফিসিয়াল সাক্ষিদের সাক্ষ্য অনুযায়ী যথাযথভাবে উল্লেখ করা থাকবে।
৩৪। জনাব ইদ্রিসকে যখন তিনি গুলি ছুড়েছিলেন সেই সময়ের অবস্থা অনুযায়ী নিচের প্রশ্ন করা হয়েছিল।
প্রশ্ন নং ৭৫- এখন ফিরে আসি লাঠি চার্জ করার নির্দেশের ব্যাপারে,আপনি কি আমার মহাশয়ের নিকট বলবেন লাঠিচার্জের কোন প্রভাব ছিল কি না?
উত্তরঃ লাঠিচার্জ পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছিল।জনগণ দূরে সরে যাবার এবং ইটপাটকেল মারা বন্ধের পরিবর্তে তারা সামনে এগুচ্ছিল আরো বেশি বৃষ্টির মত ইটপাটকেল ছুড়তে ছুড়তে,প্রধানত দুই দিক থেকে “বিশ্ববিদ্যালয়য়ের খেলার মাঠের কর্নার থেকে এবং মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের পাশ থেকে”
প্রশ্ন নং ৭৬- আপনি যেই দিক থেকে লোকজন সামনে এগুচ্ছিল বলে বলছেন তাদের সংখ্যা কি পরিমান হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তরঃ ৫-৬ হাজার
প্রশ্ন নং ৭৭-ঐ সময়ে,ঐ জায়গায় পুলিশবাহিনীর সংখ্যা কেমন ছিল?
উত্তরঃপুরো সময় জুড়েই সেখানে তিনজন হেড কনস্টেবল,আর্মড শাখার ৩০ জন কনস্টেবল,দুই জন হেড কনস্টেবল এবং আন আর্মড শাখার ১৪ জন কনস্টেবল, গ্যাস স্কোয়াডের একজন হেড কনস্টেবল এবং ১৪ জন কনস্টেবল,একজন পরিদর্শক ও দুই জন সার্জেন্ট।
প্রশ্ন নং ৭৮- যখন মানুষজন সামনে এগুচ্ছিল,আপনি বলেছিলেন লাঠিচার্জের কোন প্রভাব ছিল না।আপনি কি আমার মহাশয়কে বলবেনাপনি সেই সময়ে কি বিবেচনা করেছিলেন?
উত্তরঃবৃষ্টির মত ইটপাটকেল ছুরতে ছুরতে মানুষজন সামনে এগুচ্ছিল এবং আমাকে আমার সশস্ত্র সদস্যদের কাছে আসতে হয়েছিল এবং তাদের কে পজিশনে রাখতে হয়েছিল।যখন অবস্থা এমন একটি পর্যায়ে এসে উপনিত হয়েছিল যে আমরা চতুর্দিক থেকে ঘেরাও হয়েছিলাম এবং পরাভূত হয়েছিলাম,আমি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর সাথে আলাপ করেছিলাম এবং ডি আই জি এর সাথে যারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।আমরা গুলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
প্রশ্ন নং ৭৯- আপনি কি মহাশয়কে বলবেন গুলি আপনার দ্বারা কিভাবে করা হয়েছিল এবং কার নির্দেশে করা হয়েছিল?
উত্তরঃ গুলি আমার নির্দেশে করা হয়েছিল।আমি আমার লোকদের পজিশন অনুযায়ী দাড় করিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক ৫ জন নিয়ে একটি ফ্ল্যাংক বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের কোনার দিকে এবং মেডিকেল কলেজের হোষ্টেলের দিকে মুখ করিয়ে রেখেছিলাম।আমি উভয় ফ্ল্যাংকে থাকা আমার লোকদের এক রাউন্ড করে গুলি করতে নির্দেশ দিয়েছিলাম।তারা সেটি করেছিল।বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠ এবং এর কোনার দিকে থাকা মানুষজন পিছু হটে গেল এবং আমি একজনকে পেলাম,যে পরে ছিল কিন্তু মেডিকেল কলেজের হোষ্টেল এর দিকে থাকা লোকজন মুহুর্তের মধ্যে বেরিয়ে এল এবং পুনরায় আমাদের দিকে বৃষ্টির মত ইট পাটকেল ছুরতে ছুরতে এগিয়ে আসছিল।আমি ৫ জনের একটি ফ্ল্যাংক কে নির্দেশ দিলাম একের পর এক গুলি ছুড়তে।তারপর আমি যদ তাদের থামার নির্দেশ দিলাম,যত তারাতারি দেখলাম লোকজন পিছু হটছে।আমি গুলি বন্ধের নির্দেশ দিলাম এবং তারপরে গুলি চেক করাম এবং সেখানে ২৭ টি শেল খুজে পেলাম।
প্রশ্ন নং ৮০- গুলি করবার ব্যাপারে জনসমাবেশ কি কোন সতর্কতা দেয়া হয়েছিল?
জবাব – “হ্যা, আমরা তাদের বারবার সতর্ক করেছি।“
প্রশ্ন নং. ৮১ – কোর্টের কাছেঃ “কে সতর্ক করেছিলো?”
জবাব – “আমরা সবাই।“
প্রশ্ন নং. ৮২ –“আমরা সবাই বলতে আপনি কাকে বুঝাচ্ছেন*?”
জবাব – “ডি.আই.জি, ডি.এম এবং আমি নিজে তাদের সতর্ক করেছি এবং তারপর গুলি চালিয়েছি।“
প্রশ্ন নং. ৮৩ – জনাব. এইচ. রহমানকেঃ “আন্দাজ করে বলতে পারবেন কোন সময়ের দিকে গুলি চালানো হয়েছিল?”
জবাব – “দুপুর ৩টার দিকে।“
প্রশ্ন নং. ৮৪ –“এর ফলে কি হয়েছিল?”
জবাব – “একজন মানুষ ইউনিভার্সিটির খেলার মাঠে পরে গিয়েছিলেন।“
প্রশ্ন নং. ৮৫ –“এরপরে কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল?”
জবাব – “আমরা সেটা হিসাব করতে পারিনি।“
প্রশ্ন নং. ৮৬ –“কেন পারেননি?”
জবাব – “কারণ দুষ্কৃতিকারীরা খুবই আগ্রাসী ছিল। দাঙ্গাকারীদের মাঝে থেকে আমরা যদি নিহত এবং আহতদের নিয়ে আসতে চেষ্টা করতাম, তাহলে মারামারি আরও খারাপ আকার ধারণ করতো। এটা সেই মুহূর্তে আমার কাছে মনে হয়েছে কারণ গুলিবর্ষন শেষ হওয়ার পরেও ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়েছে।“
প্রশ্ন নং. ৮৭ –“আপনি বলেছেন যে দ্বিতীয়বার গোলাগোলির পর দুষ্কৃতিকারীরা পিছু হটে এবং আপনি গোলাগোলি বন্ধের নির্দেশ দেন। দুষ্কৃতিকারীরা যখন পিছু হটে যায়, তখন কাউকে কি আপনি রাস্তায় পরে থাকতে দেখেছেন?”
জবাব – “না।“
প্রশ্ন নং. ৮৮ –“যে মানুষটি মারা গিয়েছিল, তার কি হয়েছিল?”
জবাব – “অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।“
প্রশ্ন নং. ৮৯ –“কে সরিয়েছিল?”
জবাব – “সেটা আমি আপনাকে বলতে পারবো না।“
প্রশ্ন নং. ৯০ –“আপনি বিচারককে বলেছেন আপনি কোন পরিস্থিতিতে গুলি চালাতে বলেছেন। এখন বিচারককে বলেন কি হতো যদি আপনি সেদিন ওপেন ফায়ার করতে না বলতেন?”
জবাব – “আমি যদি ওপেন ফায়ার না করতাম তবে তারা পুরো দলকে কোণঠাসা করে ফেলতো।“
প্রশ্ন নং. ৯১ –“এই যদি পরিস্থিতি হয়, তবে গুলি বর্ষন আপনার এবং আপনার দলের নিরাপত্তার জন্য দরকারি ছিল?”
জবাব – “আমার উদ্দেশ্যও সেটাই ছিল। না হলে আরও আগেই গোলাগোলি হতো। আমরা তখনই গুলি চালিয়েছি যখন আমরা কোণঠাসা হয়ে পরেছিলাম।“
প্রশ্ন নং. ৯২ –“এক কথায়, জনাব ইদ্রিস, আপনার কি মনে হয় না গুলি না করলেও হতো এবং সেই পরিস্থিতিতে দরকার ছিল না?”
উত্তর- “গোলাগুলি খুব বেশি হয়নি।এই গুলিবর্ষন সবচেয়ে জরুরী ছিল। আমরা যদি গুলি না করতাম তাহলে আমি আজকে এখানে সাক্ষ্য দিতে আসতে পারতাম না। আমার সামনে দুটি বিকল্প ছিল, আমার সৈন্য বাহিনী নিয়ে পালিয়ে যাওয়া অথবা আক্রমনের শিকার হওয়া ও মারা যাওয়া”।
৩৫. জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (সাক্ষী নং ২) একই ভাবে প্রশ্ন করা হয়েছিলঃ-
৫৯ নং প্রশ্ন- ‘বেলা ৩টার দিকে ক্রসিংয়ের চারদিকে জড়ো হওয়া জনতা সম্পর্কে আপনার অনুমান কি”?
উত্তর- “জনতা অনেক ছড়িয়ে পড়েছিল- প্রায় ৫,০০০ এর মতো লোক হবে”।
৬০ নং প্রশ্ন-“সেখানকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ বাহিনীর শক্তি সম্পর্কে আপনার কোন ধারনা আছে”?
উত্তর-“পুলিশ বাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৫০-এদের মধ্যে কেউ কেউ সশস্ত্র ছিল এবং কারো কারো কাছে টিয়ার গ্যাস ছিল”।
৬১ নং প্রশ্ন-“মহামান্য আদালতকে বলুন যে আপনারা কি পদক্ষেপনিয়েছেন”?
উত্তর-“আমরা ভিড়ে জমায়েত হওয়া লোকেদের ঢিল না ছোড়ার জন্য বুঝিয়ে নিরস্ত্ করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কোন কাজ হয়নি।কিছু পুলিশ ভিড়ে নিষ্পেশিত হয়েছেন। তারপরও আমরা যখনই সম্ভব লাগাতার লাঠি চার্জের মাধ্যমে জনতাকে গেট থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছিলাম এবং সেটা করতে গিয়ে ততক্ষন পর্যন্ত পুলিশের দিকে আহত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছিল যতক্ষন পর্যন্ত না পরিস্থিতি এমন হলো যে, লাঠি চার্জ করা হচ্ছে কিন্তু জনতার উপর এর কোন প্রভাব পড়ছে না। বরং আমাদের আহতের সংখ্যা বাড়ছিল। টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেও কোন ফল হচ্ছিল না, এবং প্রকৃতপক্ষে এক পর্যায়ে বর্ষন এত তীব্র হয় যে পুলিশ বাহিনীকে একত্রিত করা হয় এবং অস্ত্র ও ইটপাটকেলের বিরুদ্ধে সুরক্ষার নেয়ার জন্য দোকানগুলোর কাছে রাখা হয়। এসবই বেলা ৩টার পর ঘটছিল কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও জনতা থামছিল না। তারা আবার পুলিশ পোষ্টের জায়গার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল এবং ধরাছোঁয়ার নাগালের মধ্যে চলে আসে ও প্রবল ভাবে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে”।
৬২ নং প্রশ্ন-“তখন পুলিশ কি করল”?
উত্তর-“পুলিশ বাহিনী প্রায় হতবিহ্বল হয়ে পরেছিল। উচ্ছৃংখল জনতাকে দূরে রাখার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল। জনতা থেকে একটু দূরে রাখার আমাদের চেষ্টা আবারও বিফল হল”।আমরা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করলাম-ডেপুটি ইন্সপেক্টর-জেনারেল, পুলিশ সুপারিন্ট্যান্ট ও আমি-এবং আমাদের দৃঢ় মত ছিল যে গুলিবর্ষন করতেই হবে; তা না হলে পুলিশ বাহিনী পরাস্ত্ হয়ে যাবে। তখন প্রায় সোয়া তিনটা বাজে। আমরা আবার সিদ্ধান্ত নিলাম যে, লাঠি চার্জের মাধ্যমে জনতাকে বিক্ষিপ্ত করার একটি শেষ চেষ্টা করা উচিত এবং আমরা সেটা করেছি। আমাদের লোকেরা এগিয়েছে, লাঠি চার্জ ব্যর্থ হয়েছে কারন তাদের কাছাকাছি আসার আগেই আমরা ইটপাটকেলে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিলাম এবং পুলিশ বাহিনী যা এখন রাস্তায় অবস্থান করছিল, তারা একটা অতিশয় অসহায় অবস্থায় পরে। জনতা এটা দেখে আবার একত্রিত হয় এবং আরো প্রবলবেগে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দাওয়ার জন্য, আমার মতে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য বা পুলিশ বাহিনীকে নিমজ্জিত হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য গুলি চালানো ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। এস.পি.আমার কাছে অনুমতি চেয়েছে এবং আমি গুলি চালানোর অনুমতি দিয়েছি।
৬৩ নং প্রশ্ন-“কার হুকুমে এই গোলাগুলি শুরু করা হয়”?
উত্তর-“অনুমতি আমার ছিল এবং নির্দেশ এস. পি. এর ছিল”।
৬৪ নং প্রশ্ন-“আপনি কি বলতে পারেন কোন দিকে গোলাগুলি করা হয়েছিল”?
উত্তর-“গোলাগুলি ভিড়ের ২ দিক থেকে করা হয়েছিল,একটা ক্রসিংয়ের দিক থেকে ও হাসপাতালের গেটের সামনে এবং অন্যটা গেটের দিকে ও মেডিকেল কলেজের হোষ্টেলের সামনের রাস্তায়”।
৬৫ নং প্রশ্ন-“আপনি কি জানেন কত রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছিল”?
উত্তর-“গোলাগুলি শেষ হওয়ার পর আমাকে বলা হয়েছিল সব মিলিয়ে ২৭ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে। আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে, নামমাত্র গুলি চালানোর পর গোলাগুলি বন্ধ করা হয়েছিল এটা দেখার জন্য যে তা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে যথেষ্ট কিনা, কিন্তু জনতা আবার অগ্রসর হয়”।
৬৬ নং প্রশ্ন-আদালতের কাছেঃ “কার নির্দেশে ফায়ারিং বন্ধ করা হয়, আপনার নাকি এস.পি. এর”?
উত্তর-“এস.পি. এর।আরো কিছু রাউন্ড গুলি চালানো হয়। এই দুইয়ে মিলিয়েই সব রাউন্ড গোলাগুলি”।
৬৭ নং প্রশ্ন-জনাব রহমানকেঃ “ফায়ারিং এর নির্দেশ দেওয়ার আগে আপনি কি কোন সতর্কবানী দিয়েছিলেন”?
উত্তর-“আমি এবং অন্য পুলিশ অফিসাররা জনতাকে ছত্রভঙ্গ হতে বার বার সতর্ক করেছি এবং পুলিশের কাছ থেকে দূরে থাকতে বলেছি তা না হলে গুলি চালানো হবে”।
৬৮ নং প্রশ্ন-“আপনি গুলিবর্ষণের ফলে কোনো হতাহতের ঘটনা লক্ষ্য করেছেন?”
উত্তর-“আমি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠের কোণায় একজনকে দেখেছি”।
৬৯ নং প্রশ্ন-“তার কি হয়েছিল”?
উত্তর-“জনতা তাকে সরিয়ে নিয়েছিল এবং একটি ভ্যানে নিয়েছিল, যেটা ওখানে ছিল অথবা কোথাও থেকে এসেছিল-আমার ঠিক মনে নেই-গোলাগুলি চালানোর পর”।
৭০ নং প্রশ্ন-গোলাগুলি শুরু হওয়ার পর আপনি কি করেছিলেন”?
উত্তর-“গোলাগুলি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলাম”।
৭১ নং প্রশ্ন-“আপনি কি ঘটনাস্থলে ছিলেন নাকি অন্য কোথাও গিয়েছিলেন”?
উত্তর-“আমরা বিধানসভা ভবনে গিয়েছিলাম কারন আমাদের পাঠানো হয়েছিল”।
১৫৩ নং প্রশ্ন-“আপনি কি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার জন্য গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন নাকি পুলিশ বাহিনীকে রক্ষা করার জন্য নাকি দুটোই?”
উত্তর-আমি পুলিশ বাহিনীকে নিজেদের নিষ্পেশিত হওয়া থেকে বাচানোর জন্য গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম”।
১৫৪ নং প্রশ্ন-“তারা আপনার কাছে নিজেদেরকে রক্ষার জন্য গুলি চালানোর অনুমতি চেয়েছিল নাকি নিষ্পেশিত হওয়া থেকে বাচার জন্য?”
উত্তর-“আমি নিজে পুলিশের অবস্থা দেখতে পাচ্ছিলাম”।
১৫৫ নং প্রশ্ন-“তারা কি আপনার কাছে নির্দেশ চেয়েছিল?”
উত্তর-“জি”।
১৫৬ নং প্রশ্ন-আদালতকেঃ “কে নির্দেশ চেয়েছিল?”
উত্তর-“এস.পি আমাকে বলেছিল যে, পরিস্থিতি এমন যে যেকোন সময় পুলিশ বাহিনী প্রায় হতবিহবল হয়ে যাচ্ছে”। আমিও তাদের ঠিক সেই অবস্থাই দেখলাম, এবং আমি বুঝতে পারলাম যে গুলি করার নির্দেশ দিতে হবে”।
৩৬. এরপর পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (৩নং সাক্ষী) কে প্রশ্ন করা হলঃ
২০নং প্রশ্ন- “এই পরিস্থিতিতে পুলিশ কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল?”
উত্তর- “দুপুর প্রায় ৩.০০ ঘটিকার দিকে পরিস্থিতি যখন প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল তখন লাঠি চার্জের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।”
২১নং প্রশ্ন- “লাঠি চার্জের প্রভাব কি ছিল?”
উত্তর- “ভিড় ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে কিন্তু একটু পরেই আবার একত্রিত হয় এবং ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে।”
২২নং প্রশ্ন- “ঠিক কোন নির্দিষ্ট দিকে বা জায়গায় ঐ মুহূর্তে জনতা জমা হতে থাকে?”
উত্তর- “জনতা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ভিড় করতে থাকে।”
২৩নং প্রশ্ন- “আপনার কি ধারণা আছে ভিড় কত বড় ছিল?”
উত্তর- “অবশ্যই ৫ থেকে ৬ হাজার জনের।”
২৪নং প্রশ্ন- “লাঠি চার্জ তেমন কোন প্রভাব ফেলছে না বোঝার পর আপনি কি আর কিছু করেছিলেন?”
উত্তর- “সেসময় আমরা সম্পূর্ণ ঘেরাও হয়ে পড়েছিলাম এবং মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের গেটের নিকটে দোকানের পিছনে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এস.পি. তার লোকজনকে সংঘটিত করেন এবং গুলি ছোঁড়ার অবস্থান নেন। আমি জনতাকে সাবধান করি যদি তারা পুলিশকে ইটপাটকেল ছোঁড়া বন্ধ না করে তবে তাদের উপর গুলি ছোঁড়া হবে।”
২৫নং প্রশ্ন- “তাতে কি কোন প্রভাব পড়েছিল?”
উত্তর- “এর কোন প্রভাব হয়নি। ভিড় ইটপাটকেল ছুঁড়তে ছুঁড়তে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।”
২৬নং প্রশ্ন- “তখন আপনারা কি করলেন?”
উত্তর- “সে মুহূর্তে এস.পি. এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আমার সাথে পরামর্শ করলেন এবং শেষ সতর্কবাণীর পরেই গুলি ছোঁড়া হয়েছিল।”
২৭নং প্রশ্ন- “কার নির্দেশ বা আদেশে গুলি ছোঁড়া হয়েছিল?”
উত্তর- “পুলিশ নিয়ন্ত্রকের সরাসরি নির্দেশে গুলি ছোঁড়া হয়েছিল।”
২৮নং প্রশ্ন- “আপনার কি মনে হয় গুলি ছোঁড়াটা কি সমর্থনযোগ্য?”
উত্তর- “আমি মনে করি তিনি গুলি ছোঁড়ার সঠিক নির্দেশ দিয়েছিলেন।”
২৯নং প্রশ্ন- “আপনি সে সময় কোথায় ছিলেন?”
উত্তর- “আমি সে সময় এস.পি., সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট এবং অন্যান্য অফিসারদের সাথে ছিলাম।”
৩০নং প্রশ্ন- “ঠিক কোন দিকে গুলি ছোঁড়া হয়েছিল?”
উত্তর- “মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস এবং বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের দিকে।”
৩১নং প্রশ্ন- “জনাব আপনি কি আমাকে রাস্তার ঠিক কোন দিকে ফায়ারিং দল অবস্থান করছিল তা সঠিকভাবে বলতে পারবেন?”
উত্তর- “এরা দোকানের সামনে দুইটি লাইনে বিপরীত দিকে মুখ করে দোকানের সাথে কোনাকুনি অবস্থান করছিল।”
৩২নং প্রশ্ন- “ঐ মুহূর্তে আপনার কি মনে হয়েছিল গোলাগুলি করা আবশ্যক?”
উত্তর- “অবশ্যই প্রয়োজনীয়। আর নয়তো পুলিশের দল অসহায় হয়ে পরছিল।”
৩৭. ৪নং সাক্ষী, নগর ডি.এস.পি., যিনি জনতার রোষানলে পড়েছিলেন তাকে প্রশ্ন করা হলঃ
৩০নং প্রশ্ন- “আপনি কি জানেন কি পরিমাণ কাঁদুনে গ্যাস ছোঁড়া হয়েছিল?”
উত্তর- “বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে তিন-চারবার কাঁদুনে গ্যাস ছোঁড়া হয়েছিল- অনেকবার কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহৃত হয়েছে।”
৩১নং প্রশ্ন-“তারপরে কি হয়েছিল?”
উত্তর- “পরিস্থিতি খারাপ হয়ে পড়ছিল এবং আন্দোলনকারীরা সবদিক থেকে এগিয়ে আসছিলো এবং বৃষ্টির মত ইটপাটকেল ছুঁড়ছিল এবং আমাদের কাছে আশ্রয় নেওয়ার মত কোন জায়গা ছিল না এবং অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবল আহত হয়ে পড়েছিলো। পরিস্থিতি এত খারাপ ছিল যে সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট গুলি ছোঁড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”
৩২নং প্রশ্ন- “কে গুলি ছোঁড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন?”
উত্তর- “সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট।”
৩৩নং প্রশ্ন- “গুলি ছোঁড়া হয়েছিলো?”
উত্তর- “হ্যাঁ।”
৩৪নং প্রশ্ন- “কয়টার দিকে গুলি ছোঁড়া হয়েছিলো?”
উত্তর- “৩.৩০ টার দিকে।”
৩৫নং প্রশ্ন- “গুলি চলাকালীন সময়ে আপনি কোথায় ছিলেন?”
উত্তর- “আমি মেডিকেল কলেজ গেট এবং মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের গেটের মাঝে ছিলাম, ঠিক দোকানগুলোর সামনে।”
৩৬নং প্রশ্ন- “দোকানের পিছনে ছিলেন না?”
উত্তর- “দোকানের সামনে রাস্তার উপর।”
৩৭নং প্রশ্ন- “আপনি কি জানেন ঠিক কোনদিকে গুলি ছোঁড়া হয়েছিলো?”
উত্তর- “সবদিকে গুলি ছোঁড়া হয়েছিলো- একদল বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের দিকে এবং অন্যদল মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণের দিকে।”
৩৮নং প্রশ্ন- “আপনি কি গুলি ছোঁড়ার ফলে কোন হতাহত দেখতে পেয়েছিলেন?”
উত্তর- “আসলে আমি এক ব্যক্তিকে দেখেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের সামনে পড়ে যেতে। এর বাইরে আর কোন হতাহত মানুষ আমি দেখিনি।”
প্রশ্ন নং ৩৯ কর্মপন্থা নির্ধারন করার কোন চেষ্টা করা হয়েছিল কি,গুলির পরে আহত নিহত কেমন ছিল?
উত্তরঃ হ্যা,আমরা চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আমাদের পক্ষে এটা করা সম্ভব ছিল না,এমনকি কম্পাউন্ডের ভেতরে ঢোকা।
প্রশ্ন নং ৪০- তুমি কেন মনে কর এটা তোমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না?
উত্তর কারন গুলি ছোড়ার পরেও,ছাত্ররা কলেজ হোস্টেল এর ভিতরে এবং মেডিকেল কলেজ কম্পাউন্ড এর ভিতরে ছিল।তারা সেখানে অবস্থান নিয়েছিল এবং ইটপাটকেল ছুড়ছিল।
প্রশ্ন নং ১৩০- এবং বিক্ষোভের এই অবস্থায় ,তুমি যেভাবে বলছ,তুমি এই ৩ টার দিকে বুঝতে পেরেছিলে এবং কোন সময় থেকে, ২ টা,১ টা অথবা ১-৩০ মিনিটের থেকে?
উত্তর- তারা আমদের ঐ সময়েই ঘিরে রেখেছিল এবং তার আগে আমরা টিয়ার গ্যাস ও লাঠি চার্জ করেছিলাম।
প্রশ্ন নং ১৩১-তারা ক্রমশই দূরে স্যরে যাচ্ছি এবং আবার এগিয়ে আসছিল?
উত্তর- হ্যা
প্রশ্ন নং ১৩২-এখন, প্রথম যখন তুমি এসেছিল তুমি তাদের কোন জায়গায় পেয়েছিলে?তারা কি কাছে এগিয়ে আসছিল?
উত্তর-তার ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিল।তারা কখনো কখনো দৌড়ে পালাচ্ছিল যখন আমরা লাঠিচার্জ এবং কাদুনে গ্যাস ব্যাবহার করছিলাম এবং আবার তারা ফিরে আসছিল।
প্রশ্ন নং ১৩৩- এই মানুষগুলো একপাশে ছিল,তুমি যেভাবে বলেছিলে,৪০-৪৫ ফুট দূরে এবং অন্যদিকে ২৫-৩০ ফুট দূরে।তারা কি এই অবস্থানে তোমরা আসার আগে থেকেই ছিল?
উত্তরঃ তার ধীরে ধীরে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিল
প্রশ্ন নং ১৩৪- কত সময় ১০ মিনিট অথবা ১৫ মিনিট?
উত্তর তারা ধীরে ধীরে আমাদের দিকে আসছিল।এট ছিল প্রায় ১০ মিনিট
প্রশ্ন নং ১৩৫- কখন তারা ইটপাটকেল মারা শুরু করেছিল এবং নিকট থেকে আরো নিকটে আসছিল?
উত্তরঃ ৩ টার দিকে হবে।অবশ্যই, সঠিক সময় বলা সম্ভবও না।
প্রশ্ন নং ১৩৬- এবং তোমার অনুমান অনুযায়ী ৩-৩০ মিনিটের দিকে গুলি করা হয়েছিল?
উত্তর সোয়া তিনটা এবং ৩-৩০ এর মাঝখানে।
প্রশ্ন নং ১৩৭- এবং শেষ লাঠিচার্জের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল কোন সময়ে, তিনটার আগে?
উত্তরঃ তিনটার আগে।
প্রশ্ন নং ১৩৮- এটাই ছিল শেষ বিষয় যেটি শেষে করা হয়েছিল, মানে শেষ লাঠিচার্জ এবং এর পরে গুলি।শেষ লাঠিচার্জের পরে সেখানে গুলি করা হয়েছিল?
উত্তর হ্যা, সেখানে গুলি করা হয়েছিল।
৩৮। জনাব নুরউদ্দিন আহমেদ এস ডি ও ( সাক্ষি নাম্বার ৫) এর উত্তর নিম্নে দেয়া হল
প্রশ্ন নং ২৯ উল্ল্যেখিত সময় অনুযায়ী কখন আপনি ফিরে এসেছিলেন এবং সেখানকার পরিস্থিতি কেমন ছিল?
উত্তরঃসেখানে আমি বিপুল সংখ্যক মানুষ সমবেত হতে দেখেছিলাম মেডিকেল কলেজ গেটের সামনের রাস্তায় এবং বিশ্ববিদ্যায়ের খেলার মাঠের পাশে এবং সম্ভবত ফুলার রোডের দিকে যে রাস্তাটি গেছে সেখানেও।
প্রশ্ন নং ৩০- ঐ পয়েন্টে তোমার অনুমান অনুযায়ী কত সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন?
উত্তরঃসবদিকের মানুষ মিলিয়ে প্রায় ৫০০০ এর মত হবে কিন্তু অধিকাংশের বেশি মানুষ ছিলেন মেডিকেল কলেজ হোষ্টেল গেট এর সামনে এবং মেডিকেল কলেজ গেটে।
প্রশ্ন নং ৩১- তুমি কি এটা খেয়াল করেছিলে ঐ সময়ে মানুষের মনোভাব কেমন ছিল?
উত্তরঃ তারা খুবই হুমকিপ্রবন ছিল এবং সব দিক থেকে ইটপাটকেল ছুড়ছিল,বেশিরভাগই মেডকেল কলেজের হোষ্টেল গেট এর সামনে থেকে এবং আমি এটাও উল্ল্যেখ করতে চাই বিপুল সংখ্যক পুলিশ এতে আহত হয়েছিল।পুলিশ সুপ্যার নিজে্রও তার কলার বন থেকে রক্ত ঝরছিল।
প্রশ্ন নং ৩২- ঐ সময়ে তুমি সহ পুলিশ বাহিনীর অবস্থান কোথায় ছিল?
উত্তরঃ পুলিশকে চতুর্দিক থেকে জনগণ দ্বারা ঘিরে রাখা হয়েছিল এবং তারা দাঁড়িয়ে ছিল ও তাদের হতবুদ্ধ দেখাচ্ছিল ;তাদের হাতে অস্ত্র আছে অথচ তারা একশন নিতে পারছে না। একই সময়ে তারা ইটপাটকেল দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছিল এবং আহত হচ্ছিল।এই অবস্থায় ডি আই জি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে গুলি করবার জন্য অনুমতি চাইল।জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যিনি ঐখানে উপস্থিত ছিলেন তিনি লাঠিচার্জের নির্দেশ দিলেন।
প্রশ্ন নং ৩৩ লাঠিচার্জ কি করা হয়েছিল?
উত্তরঃ হ্যা এটা করা হয়েছিল।
প্রশ্ন নং ৩৪ এর কি কোন প্রভাব ছিল?
উত্তরঃদুই থেকে তিন মিনিটের জন্য এর প্রভাব ছিল;কিছু সময়ের জন্য মানুষজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছিল কিন্তু পুনরায় তারা বিভিন্ন দিক থেকে একই জায়গা মিলিত হল এবং তাতক্ষনিকভাবে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল মারা শুরু করেছিল।পুরো রাস্তায় ইটপাটকেলে ভরা ছিল।আমি নিজেও একটি দোকানের পিছনে আশ্রয় নিয়েছিলাম।
প্রশ্ন নং ৩৫- লাঠিচার্জের পরে পুলিশের দারা কোন একশন নেয়া হয়েছিল কি?
উত্তরঃ লাঠিচার্জের পরে,যখন এটা বোঝা গেল যে পুলিশ খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পরছে,আগে যে সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি করতে লাগল।কিন্তু যেহেতু এর কোন প্রভাব ছিল না,তাই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন নং ৩৬- গুলি কি করা হয়েছিল?
উত্তরঃ হ্যা
প্রশ্ন নং ৩৭- কত রাউন্ড গুলি করা হয়েছিল,এই ব্যাপারে কি কোন ধারনা আছে?
উত্তরঃএটা একটু পরে গননা করা হয়েছিল এবং দেখা গেল ২৭ রাউন্ড গুলি করা হয়েছে।সতর্ক করা এবং কয়েকটি গুলি করার পরে এটা বন্ধ করা হয়েছিল এর প্রতিক্রিয়া দেখতে।
প্রশ্ন নং ৩৮ প্রতিক্রিয়া কি ছিল?
উত্তরঃপ্রথম গুলির কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না;মানুষজন এগিয়ে এসেছিল এবং ইটপাটকেল মারছিল।গুলি দুই দিক থেকে করা হয়েছিল একটি মেডিকেল কলেজ হোস্টেল এর দিক থেকে অন্যটি বিশ্ববিদ্যালয় এর খেলার মাঠের দিক থেকে।
৩৯ নং প্রশ্ন- “এবং আপনি কি লক্ষ্য করেছিলেন, কখন গোলাগুলি বন্ধ হয়েছিল?”
উত্তর- “দ্বিতীয়বার গুলি ছোঁড়ার পর জনতা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলে গোলাগুলি বন্ধ হয়। ”
৪০ নং প্রশ্ন- “গোলাগুলির ফলে আপনারা কি কাউকে হতাহত হতে দেখেছেন?”
উত্তর- “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে একজনকে পড়ে থাকতে দেখেছি এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গনের ভেতরে কিছু আহত ব্যক্তিকে দেখেছি। তাদের সংখ্যা কত ছিল আমি বলতে পারব না কারন ছাত্ররা প্রচন্ড ক্ষিপ্ত ছিল তাই আমি সেখানে যাওয়ার সাহস করিনি। ”
৩৯. পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ সুপার, জনাব মো. ইউসুফ, (সাক্ষী নং ৮) বলেনঃ
২৪ নং প্রশ্ন- “দয়া করে বিজ্ঞ আদালতকে বলুন আপনি যখন মেডিকেল কলেজের গেটে ছিলেন, জনতাকে বিক্ষিপ্ত করার জন্য পুলিশ কি পদক্ষেপ নিয়েছিল?”
উত্তর- “আমি যখন সেখানে ছিলাম, লাঠি সহ কিছু পুলিশকে সেখানে আনা হয়েছিল এবং তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে জড় করা হয়েছিল। এরপর ডি.এম. এর নির্দেশে লাঠি চার্জ করা হয়। আমি ছাত্রদের এবং অন্যান্য অংশগ্রহনকারী দেখেছি যারা সেখানে ছিল। তারা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে একটু পিছিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারা পাল্টা ইটপাটকেল ছুঁড়ে শোধ নিয়েছিল আর পুলিশকে আক্রমন করছিল এবং পুলিশ সত্যিই সেই আক্রমনের সামনে দাঁড়াতে পারছিল না। তারা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই পিছু হটলো। পুরোটা সময় ছাত্ররা পুলিশের দিকে তীব্রবেগে ইটপাটকেল ছুঁড়ছিল। ইটপাটকেল সবদিক থেকে আসছিল এবং বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ ও হাসপাতাল প্রাঙ্গনের দিক থেকে, আর ছাত্র ও অংশগ্রহনকারীরা সেই জায়গায় ঘনীভূত হচ্ছিলো। পরিস্থিতি খুবি খারাপ ছিল এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গুলি চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিছু সংখ্যক পুলিশও আহত হয়েছিল এবং তাদের কেউ কেউ মাথায়ও আঘাত পেয়েছিল। আমি দেখলাম ডি.আই.জি., এস.পি., এবং ডি.এম. এর দিকেও ইটপাটকেল পড়ছে এবং তারাও ইটপাটকেলে আহত হয়েছিলেন।”
২৫ নং প্রশ্ন- “গোলাগুলি চালানো হয়েছিল?”
উত্তর- “হ্যাঁ তখন গোলাগুলি চালানো হয়েছিল।”
২৬ নং প্রশ্ন- “কয়টার সময়?”
উত্তর-“প্রায় ৩-১৫ বা ৩-১০ এর দিকে।”
২৭ নং প্রশ্ন- “কোন দিকে গোলাগুলি চালানো হয়েছিল?”
উত্তর- “দুই দিক থেকে গুলি চালানো হয়েছিল- একদল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের দিকে এবং অন্য দল হোষ্টেলের গেটের দিকে।”
২৮ নং প্রশ্ন- “আপনি তখন কত দূরে ছিলেন?”
উত্তর- “আমি গুলি চালানো দুই পক্ষের মাঝখানে এবং মেডিকেল কলেজ হসপাতাল প্রাঙ্গনের সামনের রাস্তায় দোকান গুলোর পেছনে ছিলাম।”
২৯ নং প্রশ্ন- “এবং আপনি কি জানেন কয় রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছিল এবং কত দূর থেকে গুলি চালানো হয়েছিল?”
উত্তর- “আমার মনে হয় প্রায় ২০ বা ২৫ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছিল। আমি আগে যেমন বলেছি, গুলি দুই দিক থেকে চালানো হয়েছিল। প্রথমবারে দুই পক্ষ থেকে এক রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছিল এবং এরপর কয়েক মিনিট বিরতি ছিল।”
৩০ নং প্রশ্ন- “কেন?”
উত্তর- “কারন গুলি বর্ষনের পর অংশগ্রহনকারীরা একটু পিছিয়ে গিয়েছিল কিন্তু এই গোলাগুলির পরে তারা আবার ইটপাটকেল ছুঁড়তে ছুঁড়তে পুলিশের দিকে ছুটে আসে এবং তখন এস.পি দ্বিতীয়বারের মত গুলি করার নির্দেশ দেন। ”
৩১ নং প্রশ্ন- “আপনি কি গুলিতে কাউকে আহত হতে দেখেছেন?”
উত্তর- “আমি আসলে মেডিকেল কলেজ হোষ্টেল প্রাঙ্গনে সেই একজন যাকে দুই বা তিন জন ধরে নিয়ে যাচ্ছিল তাকে ছাড়া অন্য কোন আহত ব্যক্তিকে দেখিনি। এটা গোলাগুলি বন্ধের কিছুক্ষন পরেই ঘটেছিল। ”
৪০. যখন জনাব আব্দুল গফরান যিনি তখন লালবাগের সি.ও. ছিলেন (সাক্ষী নং ৯) বলেনঃ
৩২ নং প্রশ্ন- “বেলা ৩টা বা এর একটু পরে অবস্থা কেমন ছিল?”
উত্তর- “ছাত্ররা মেডিকেল কলেজ হষ্টেল, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের ভেতর থেকে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছোঁড়া শুরু করে এবং আমরা সবাই দ্বিতীয় বারের মত সচিবালয়ের রাস্তার পশ্চিম পাশের দোকান গুলোর পুর্বপাশে আশ্রয় নেই এবং রেঞ্জ ডি.আই.জি ও এস.পি. সহ আমাদের অনেকে ইটপাটকেলে আহত হয়। ”
৩৩ নং প্রশ্ন- “আপনি আহত হয়েছিলেন?”
উত্তর- “জি না, হয়ত আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে আহত হয়নি।”
৩৪ নং প্রশ্ন- “এই সময়ে পুলিশ কি কিছু করেছিল?”
উত্তর- “তারা বার বার টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছিল এবং তাদের ছত্র ভঙ্গ করতে লাঠি চার্জ করেছিল কিন্তু তাদের পিছু হটার কোন লক্ষনই ছিল না। বরং তারা ইটপাটকেল নিয়ে আর আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে এবং মেডিকেল কলেজ হষ্টেল, বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ ও মেডিকেল কলেজের গেটের দিক থেকে কর্তব্যরত পুলিশ বাহিনীকে প্রায় ঘিরে ফেলে। ”
৩৫ নং প্রশ্ন- “এরপর কি হয়?”
উত্তর-“যখন বারবার সতর্ক করা হচ্ছিল তখন পরিস্থিতি পুরোই নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গিয়েছিল এবং তখন তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য লাঠি চার্জ করা হয় কিন্তু সব ব্যার্থ হয় ও তাদের মধ্যে পিছু হটার কোন লক্ষন ছিল না বরং তারা ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের দিকে এগিয়ে আসছিল। অবশেষে নিজেদেরকে বাচানোর আর কোন উপায় না পেয়ে কর্তৃপক্ষ গুলি চালানোর নির্দেশ দেয় এবং প্রায় বেলা ৩-৩০ এর দিকে গুলি চালানো হয়। ”
৩৬ নং প্রশ্ন-“আপনি কি জানেন কোন দিকে গুলি চালানো শুরু হয়?”
উত্তর- “মেডিকেল কলেজ হোষ্টেলের গেট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠের দিকে।”
৩৭ নং প্রশ্ন- “ঠিক সেই সময় আপনি কোথায় ছিলেন?”
উত্তর- “আমি মোড়ের দোকান গুলোর সামনে ছিলাম।”
৩৮ নং প্রশ্ন- “কয়বার গুলি চালানো হয়েছিল?”
উত্তর- “দুইবার।”
৩৯ নং প্রশ্ন- “আপনি কি গোলাগুলির ফলে কাউকে আহত হতে দেখেছিলেন?”
উত্তর: বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের কাছে একজন মানুষকে লুটিয়ে পড়তে দেখা যায়। সেখান থেকে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
৪১. সর্বশেষে পুলিশ ইন্সপেক্টর জনাব মীর আশরাফুল হক (সাক্ষী নং ১০)-কে ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়:
প্রশ্ন ১৫— “তারপর কী হলো? আপনি কী করলেন?”
উত্তর: “ঢিল ছোঁড়াছুঁড়ি চলতে থাকে। ৩টার দিকে জোরালো লাঠিচার্জ করা হয়, কিন্তু তাতে কোনো ফল পাওয়া যায় না। ঢিল ছোঁড়াছুঁড়ির পরিমাণ আরো বেড়ে যায়।”
প্রশ্ন ১৬— “তারপর?”
উত্তর: “সে সময় ডিআইজি, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, এসপি, আমি এবং আরো কয়েকজন পুলিশ অফিসার আহত হই। ঢিল বর্ষণ চলতে থাকে। বেশ কিছু পুলিশ অফিসার আঘাত পান।”
প্রশ্ন ১৭— “পুলিশ কি এরপর আর কোনো অ্যাকশন নেয়?”
উত্তর: “পুলিশ আর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাদের সতর্ক করতে থাকে, কিন্তু কোনো কাজ হয় না। তারপর এসপি গুলি চালাবার নির্দেশ দেন। সেটা ছিলো বোধহয় ৩.২০ মিনিটে।”
প্রশ্ন ১৮— “আপনি কি জানতেন কোনদিকে গুলি চালানো হচ্ছিলো?”
উত্তর: “প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠের দিকে চালানো হয়, তারপর মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের দিকে। তার কিছুক্ষণ পর দাঙ্গাবাজরা দ্বিগুণ উৎসাহে পুলিশকে আক্রমণ করতে শুরু করে।”
প্রশ্ন ১৯— “কী হচ্ছিলো?”
উত্তর: “তার দুই বা তিন মিনিট পর আবার মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের দাঙ্গাবাজদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।”
প্রশ্ন ২০— “তাতে কি কাজ হয়?”
উত্তর: “কিছু সময়ের জন্য মারামারি থেমে যায়। কিন্তু তারপর আবার ঢিল ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়।”
প্রশ্ন ২১— “গুলি চালাবার পর ঢিল আসছিলো কোথা থেকে?”
উত্তর:“মেডিকেল কলেজ হোস্টেল, বিশেষ করে অ্যাসেম্বলি কর্নারের দিকে।”
প্রশ্ন ২২— “গোলাগুলির কারণে কি কেউ আহত হয়?”
উত্তর: “বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠের কাছে একজনকে আমি লুটিয়ে পড়তে দেখেছি।”
প্রশ্ন ২৩— “পরে তার কী হয়? জানেন আপনি?”
উত্তর:“কয়েকজন দাঙ্গাবাজ তাকে ধরে নিয়ে যায়।”
প্রশ্ন ২৪— “কোথায়?”
উত্তর:“একটা অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যায়।”
প্রশ্ন ২৫— “গুলি চালাবার কারণে কতোজন আহত বা নিহত হয়েছে, সে ব্যাপারে কি তদন্ত করা হয়েছে?”
উত্তর:“পরিস্থিতি তখনো গরম ছিলো। ছাত্ররা তখনো উত্তেজিত ছিলো। তাই সে সময় কিছু করা যায়নি। আহত বা নিহতের খোঁজ নিতে গেলে আমাদেরই আহত হবার সম্ভাবনা ছিলো।”
প্রশ্ন ৬৭— “আর আপনি সেখানে পৌঁছানো থেকে শুরু করে গুলি চলা পর্যন্ত পরিস্থিতি একইরকম ছিলো?”
উত্তর: আমি পৌঁছানো থেকে গুলি চলা শুরু হবার সময়ের মাঝে দুইবার লাঠিচার্জও করা হয়।
প্রশ্ন ৬৮— “এই লাঠিচার্জের সময় ছাড়া কি আর ঢিল ছোঁড়াছুঁড়ি হয়নি?”
উত্তর: পুরো সময় জুড়েই ঢিল বর্ষণ হচ্ছিলো। লাঠিচার্জের পর তা বেড়ে যায়।
প্রশ্ন ৬৯— “আর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ডিআইজি, এসপি, ডিএসপি, সবাই ঢিলের আঘাতে আহত হন?”
উত্তর:“জী, স্যার।”
প্রশ্ন ৭০— “যখন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গুলি চালাবার নির্দেশ দিচ্ছিলেন, তখন আপনি কোথায় ছিলেন? ম্যাজিস্ট্রেট থেকে ঠিক কতো দূরে?”
উত্তর:“আমি শুনতে পাইনি। আমি নিজের কানে ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিতে শুনিনি।”
প্রশ্ন ৭১— “যখন গুলি চালানো শুরু হয় তখন আপনি কোথায় ছিলেন?”
উত্তর:“বাইরে, রাস্তার সামনের দোকানগুলোর কাছে।”
প্রশ্ন ৮২— “কতোক্ষণ যাবত গুলি চালানো হয়?”
উত্তর:“প্রথমে এক বা দুই মিনিট যাবত। তারপর কিছুক্ষণের বিরতি। দ্বিতীয়বার চলে দুই বা তিন মিনিট। হয়তো দুই মিনিটের বেশি না-ও হতে পারে।”
৪২. গুলি চালাবার নির্দেশের জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী তিনজন সরকারী কর্মকর্তা। তারা হচ্ছেন— জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এবং পুলিশ সুপারইন্টেন্ডেন্ট। সমালোচনার অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয় যে যেসব কনস্টেবল স্বহস্তে গুলি চালিয়েছে তাদেরকে জেরা করা হয়নি বা তাদের সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। যদি এ মর্মে পুলিশ কেস হতো যে নির্দেশ বাদেই কনস্টেবলরা গুলি ছুঁড়েছে, তাহলে তাদের প্রত্যেকের সাক্ষ্য নেয়ার প্রয়োজন পরতো। তাদের গুলি চালাবার সিদ্ধান্ত কি আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যেই ছিলো কিনা তা খতিয়ে দেখা হতো। কিন্তু যেহেতু কনস্টেবলরা নিজ থেকে গুলি চালাবার সিদ্ধান্ত নেয়নি, তাদের প্রত্যেকের সাক্ষ্যের প্রয়োজন নেই। তদন্তের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যারা গুলি চালাবার নির্দেশ দিয়েছে তাদের সিদ্ধান্ত কি পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক ছিলো কিনা তা যাচাই করা।
৪৩. সাক্ষী নং ২৮ একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী (তিনি হচ্ছেন জনাব মো. কামাল, এম.এ.) কারণ তিনি একজন নিরপেক্ষ সাক্ষী যিনি পুলিশ গুলি চালাবার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। জনাব জামাল জানান যে তিনি ২১শে ফেব্রুয়ারির বিকেলে হাই কোর্টে যান, এবং হাই কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসেন ২.৩০ মিনিটে। অ্যাসেম্বলি হাউসে যাবার পথে তার সাথে জনৈক মৌলভী নাজিবুল্লাহ্’র দেখা হয়। তারপর তিনি পায়ে হেঁটে ফুলার রোড ধরে এগিয়ে যান। সেখানে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের নিকটবর্তী পেট্রোল স্টেশনের সামনে তিনি মানুষের ভীড় দেখতে পান। তার সাক্ষ্যমতে প্রায় ১০০০ মানুষ স্লোগান দিচ্ছিলো এবং পুলিশের উদ্দেশ্যে ঢিল ছুঁড়ছিলো। প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশ্যে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে। কিছুক্ষণের জন্য টিয়ার গ্যাস কার্যকর হয় এবং প্রতিবাদকারীরা পিছু হটে যায়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে প্রতিবাদকারীরা ফিরে আসে এবং পুলিশকে পুনরায় আক্রমণ করতে শুরু করে।
জনাব কামাল জানান যে তিনি ফুলার রোডেই অপেক্ষা করেন, কারণ গণ্ডগোল ভেদ করে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তিনি পুলিশকে গুলি চালাতে দেখেন এবং দেখতে পান পেট্রোল স্টেশনের কাছে এক ব্যক্তি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনা দেখে জনাব কামাল ঘুরে দাঁড়ান এবং নাজিমুদ্দিন রোড ধরে পালিয়ে আসেন। গুলি চালাবার ঘটনার নিরপেক্ষ দু’জন সাক্ষীর মধ্যে জনাব কামাল একজন। তিনি বলেন প্রতিবাদকারীদের থেকে তার অবস্থান প্রায় ১০০ গজ দূরে ছিলো। যদিও তদন্ত অনুযায়ী এ তথ্য সঠিক বলে মনে হয় না। খুব সম্ভবত তিনি ১০০ ফিট দূরে ছিলেন। তবে অ্যাসেম্বলি হাউস তার গন্তব্য ছিলো এবং সে পথে বাস্তবিক তিনি বাধার সম্মুখীন হন। প্রশ্ন নং ৭৪ এবং ৭৫-এর উত্তরে তিনি জানান যে তার জীবনঝুঁকি হতে পারে তা ভেবে তিনি অগ্রসর হননি। জনাব কামাল আরো বলেন যে পুলিশ বা প্রতিবাদকারী উভয় দল তার বিপদের কারণ হতে পারতো। তার সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুযায়ী পেট্রোল স্টেশনের সামনের রাস্তায় একজন ব্যক্তি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। জনাব হামুদুর রহমান তার সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করেন এবং দাবী করেন এ বিবৃতি পুলিশের বিবৃতির সাথে মিলে যায়। পুলিশের সাথে সরাসরি সম্পর্কমুক্ত একজন নিরপেক্ষ নাগরিক হিসেবে তার সাক্ষ্য পুলিশের সাক্ষ্যকে সত্য প্রমাণ করতে সাহায্য করবে।
৪৪. যে সাক্ষীরা পুলিশ ফায়ারিং-এর বিপক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন তাদের সাক্ষ্য নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত হয়নি। তাদের অনেকেই তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এবং সন্দেহ নেই যে সাক্ষ্যদানকারী ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক অপ্রিয় তথ্য এবং সত্য এড়িয়ে গেছে। জনাব হামুদুর রহমান মন্তব্য করেন যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা এবং মেডিকেল কলেজ গেটের সামনে কী হয়েছে সে প্রসঙ্গে কিছুই বলেনি। বেড়ার ভেতরের এলাকা-যে এলাকাটিকে তারা পুলিশমুক্ত মনে করে-সেখানে মাইক্রোফোনের সাহায্যে জ্বালাময়ী বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছিলো। গুলি চালানো হয় সেই মাইক্রোফোন এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায়। এ প্রসঙ্গটিও তারা উল্লেখ করেনি।জনাব গণির মতে ছাত্রদেরকে উত্তেজিত করা হয় এবং তাদের নিজেদের খাতিরে ক্যাম্পাস কম্পাউন্ডের বাইরে যা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানে না দাবী করাই ভালো। তাদের সব সাক্ষ্য ক্যাম্পাসের ভেতরে যা ঘটেছে সে সংক্রান্ত হওয়া উচিত। এই ব্যাখ্যার জবাবে জনাব হামুদুর রহমান বলেন যে ক্যাম্পাসের বাইরে কী ঘটেছে তা জানাতে অস্বীকার করলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না, কারণ সে ঘটনাবলীতেও তারা অংশগ্রহণ করেছিলো। যে সাক্ষী ব্যক্তিগত কারণে সাক্ষ্য বদলায় বা সত্য গোপন করে, তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।
৪৫. সাধারণ নাগরিকেরা যে বিবৃতি দিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো দেওয়ান হারুণ মো. মনিরুদ্দিন (সাক্ষী নং-৬৪)-এর বিবৃতি। তিনি একমাত্র সাক্ষী যিনি সচক্ষে ফায়ারিং হতে দেখেছেন। তিনি জানান যে তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজের একজন ছাত্র। তিনি স্বীকার করেন যে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণের প্রেক্ষিতে তিনি দু’টি বিবৃতি প্রদান করেন। তার প্রথম বিবৃতি অনুযায়ী তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজের ছাত্র। তিনি অল পার্টি স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ কমিটি’র ডাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। ল্যাঙ্গুয়েজ কমিটির দাবী ছিলো বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাতে পরিণত করা। মনিরুদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে আসেন সকাল ১০.৩০-এর দিকে। জড়ো হওয়া ছাত্রদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো এমএলএ এবং এমসিএ-দেরকে নিজেদের দাবী জানানো। অর্থাৎ একটি সাক্ষ্যে মনিরুদ্দিন স্বীকার করেছেন তিনি অল পার্টি স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ কমিটি’র ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন, এবং সে উদ্দেশ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন।
তার দ্বিতীয় বয়ানে নীচের কথাগুলো পাওয়া যায়-
দেওয়ান হারুন মোহাম্মদ মনিরুদ্দিন, ২৩-৩-৫২ ঢাকার জগন্নাথ কলেজের একজন ছাত্র, রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের উপর গোলাগুলির সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল এবং তাতে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। “তদন্তের সময় অবশ্য সে সুর বদলে বলেছিল সে ভার্সিটিতে নয় বরং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর ডিপার্টমেন্টে গিয়েছিল চিকিৎসার জন্য, এবং ভাষা আন্দোলনের উপর লিখিত বিবরণীতে প্রদত্ত নিজের অবস্থানের কথা অস্বীকার করেছে। তার প্রদত্ত সাক্ষীগণের কথা বলতে গেলে, সে সাক্ষীগণের নাম প্রদানের সময় তাদের সাথে কোনরকম আলোচনা করে নি যে তারা গোলাগুলির ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানে কিনা; বরং এই ভেবে সে নামগুলো দিয়েছিল যে তারা ‘ভাল সাক্ষী’ হতে পারে। এই ভেবেই সে জনাব ফজলুল হক, জনাব শামসুদ্দিন এবং মতিউল ইসলাম (সাক্ষী নং ৫৬, ঘটনার সময় যে চাঁদপুর ছিল), নূর মোহাম্মদ (সাক্ষী নং৫৭, ঘটনার সময় যে নোয়াখালী ছিল) প্রভৃতি নামগুলো প্রদান করে। তার ভাষ্যপ্রমাণমতে, সে সত্যি সত্যি পুলিশদের মেডিকেল হোস্টেল চত্ত্বরে প্রবেশ করতে এবং হোস্টেলে যাওয়ার পথের পাশে অবস্থান নিতে দেখে। এবং সেখান থেকেই পুলিশ গুলি ছোড়া শুরু করে, যার ফলশ্রুতিতে হোস্টেল বারান্দা থেকে একজন পড়ে যায় এবং ৭-৮ জন আহত হয়।
প্রশ্ন নং-(৫২) “তারপর কী ঘটে?”
উত্তরঃ “তারপর, আধাঘণ্টা বা তার কিছু পরে কিছু পুলিশকে হোস্টেলের ভিতরে যেতে দেখি এবং হোস্টেল প্রবেশের পথগুলোতে অবস্থান নিতে দেখি।”
প্রশ্ন নং-(৫৩) “তারপর তারা কী করে?”
উত্তরঃ “লোকজনের উপর গুলি ছোঁড়ে।”
প্রশ্ন নং-(৫৪) “ঐ সময় লোকজন সেখানে কী করছিল?”
উত্তরঃ “তারা হোস্টেল এবং কলেজ চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে ছিল।”
প্রশ্ন নং-(৫৫) “তুমি তখন কোথায় দাঁড়িয়ে ছিলে?”
উত্তরঃ “আমি মেডিকেল কলেজ কম্পাউণ্ডে দাঁড়িয়ে ছিলাম।”
প্রশ্ন নং-(৫৬) “পুলিশ কতবার গুলি ছোঁড়ে?”
উত্তরঃ “গুনি নি”।
প্রশ্ন নং-(৫৭) “পুলিশের গুলি কি কাউকে আঘাত করেছিল?”
উত্তরঃ “যখন গুলি করা হয়েছিল তখন দেখতে পাই নি কে গুলি করল, কে আহত হল। কিন্তু, তার পরপরই একজনকে বারান্দা থেকে পড়ে যেতে দেখি”।
প্রশ্ন নং-(৫৮) “সে কি মরে গেছিল?”
উত্তরঃ “জ্বী স্যার”।
প্রশ্ন নং-(৫৯) “তুমি একজনকে গুলি খেয়ে মরতে দেখেছ, তুমি আর কাউকে গুলি খেতে দেখেছ?”
উত্তরঃ “পরবর্তীতে দেখেছি”।
প্রশ্ন নং-(৬০) “তুমি আর কাউকে গুলি খেতে দেখেছ?”
উত্তরঃ “৭-৮ জনকে”।
প্রশ্ন নং. ৬১ –“মৃত?”
জবাব – “মৃত না কিন্তু আহত। আমি তাদের যখন দেখেছিলাম তখন মানুষজন তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলো।“
প্রশ্ন নং. ৬২ –“আপনি হাসপাতালের ভেতরে গিয়েছিলেন?”
জবাব – “না স্যার।“
প্রশ্ন নং. ৬৩ –“আপনি দেখলেন ৭ অথবা ৮ জন মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর আপনি কি করলেন?”
জবাব – “এরপর আমি ই.এন.টি বিভাগের দেওয়ালের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে দেওয়ানী বাজার রোডের দিকে চলে গেলাম এবং ইউনিভার্সিটি চত্বর পার হলাম।“
প্রশ্ন নং. ৬৪ –“আপনি কোথায় যাচ্ছিলেন?”
জবাব – দেওয়ানি বাজার রোড এবং নাজিমউদ্দিন রোড হয়ে আমি আগামসি লেনের দিকে গেলাম এবং সেখানে থেকে সোজা নিজের বাসার দিকে।“
সত্যি বলতে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন একজনের কথাকে আমি সত্য বলে মানতে রাজি না। পুনরায় জিজ্ঞাসার সময় তিনি তার কথার সুর পাল্টে ফেলেছিলেন যেটা আগে উল্লেখ করা হয়নি এবং বলেছেন যে তিনি নিজের চোখে কোন পুলিশক কনেস্টেবলকে অযাচিত ভাবে মেডিকেল কলেজের হোস্টেল প্রাঙ্গনে ঢুকতে দেখেননি এবং সেখানে থেকে বাইরে জমায়েত হওয়া ছাত্র এবং অন্যদের উপর গুলি চালাতে দেখেননি। বলা হয়েছে যে একজন কনস্টেবল মেডিকেল কলজের হোস্টেলের গেটের দিকে অবস্থিত দ্বি-তল দোকান “মাষ্টার কেবিন”র দিকে অগ্রসর হন এবং সেখানে থেকে চত্বরের দিকে গুলি চালান। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা এই তথ্য অস্বীকার করে বলেন যে তারা কখনোই চত্বর অতিক্রম করেননি এবং সেখানে উপস্থিত পুলিশ কর্তার নির্দেশেই নিজেদের অবস্থান থেকেই গুলি চালিয়েছেন।
প্রশ্ন নং. ২৮১ –“আমি আপনাকে জিজ্ঞাস করছি যে আপনার কনস্টেবলরা রাস্তার ডান পাশে অবস্থিত দ্বি-তল ভবনের নিচে আশ্রয় নিয়েছিল এবং সেখানে থেকে বেরিয়ে এসে তারা গুলি করেন এবং চলে যায়?”
জবাব – “আমার মানুষজন কখনোই তাদের অবস্থান থেকে সরেনি।“
প্রশ্ন নং. ২৮২ –“এটা কি ঠিক যে তারা তাদের অবস্থান থেকে সরেছিল এবং একটি দ্বি-তল হোটেলের নিচে আশ্রয় নিয়েছিল?”
জবাব – “আমি তাদের যে অবস্থানে থাকতে বলেছিলাম তারা সেখানেই ছিল এবং সেখানে থেকে এক ইঞ্চিও সরেনি।“
প্রশ্ন নং. ২৮৩ –“এবং তারা তাদের অবস্থান থেকে একে একে গুলি চালিয়েছে?”
জবাব – “না মহামান্য, তারা একে একে গুলি করেনি।“
প্রশ্ন নং. ২৮৪ –“আপনার মানুষজন হোস্টেল চত্বরের ভেতরে গুলি চালিয়েছে?”
জবাব –“গুলি হোস্টেল চত্বরের ভেতরে যেতে পারে কেননা সেটা মাত্র কয়েক ‘শ গজ দূরে ছিল।“
হোস্টেল নং ১২ এবং হোস্টেল নং ২০ এ যে গুলির দাগ পাওয়া গিয়েছে – ২টা ১২ নং হোস্টেলের পূর্ব দিকের দেওয়ালে এবং একটা ২০ নং হোস্টেলের পূর্ব দিকের দেওয়ালে এবং একটি ১২ নং হোস্টেলের উত্তর দিকের দেওয়াল ভেদ করে গিয়েছে।
আমার মতে, এটা পরিষ্কার ভাবে নির্দেশ করে যে পুলিশের কর্তা ব্যক্তি যেমনভাবে বলছেন সে রকমই হয়েছে এবং গোলাগোলির সময় পুলিশ তাদের অবস্থান থেকে সরে যায়নি এবং নিশ্চিতভাবে মেডিকেল কলেজের হোস্টেল চত্বরে তারা সেই উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেনি।
৪৬) জনাব গনি এই বিষয়টি সবার নজরে আনেন যে মেডিকেল কলেজের হোস্টেল চত্বরে গুলি প্রবেশ করেছিল, যেটা কিনা বাতিল করে করে দেয় যে পুলিশ আসার পথে রাস্তার এক ধারে এবং ইউনিভার্সিটির খেলার মাঠের দিকে গুলি চালায়। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে গুলি মেডিকেল কলেজের হোস্টেল চত্বরে প্রবেশ করেছিল কিন্তু এই কেসের যাবতীয় জবানবন্দি এবং হোস্টেল পরিদর্শন করে আমার অন্তত এটা মনে হয়নি যে পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে হোস্টেল চত্বরে প্রবেশ করে এবং রাস্তা থেকে গুলি করে। এমন হতে পারে যে চত্বরের কিছু অংশ গুলির সীমানার মধ্যে চলে এসেছিল, বিশেষ করে মেডিকেল কলেজের গেটের সামনে তাদের অবস্থান থেকে।
৪৭) গোলাগুলির ব্যাপারে আমাদের আরেকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, যে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে অর্ডার পালন করা হয়েছে (P.W.2- জনাব কুরেইশী)তিনি একজন নতুন ম্যাজিস্ট্রেট তার অভিজ্ঞতা সীমিত, যাকে মাত্র একদিন আগে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং যাকে সাথে সাথেই কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর এর অধীনে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে। এটা সত্যি যে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে উনার অভিজ্ঞতা খুবই কম কিন্তু অনুসন্ধানের সময় এমন কিছু আমার সামনে আসেনি যাতে প্রমাণ হয় যে জরুরী অবস্থা চলাকালীন তিনি তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন অথবা তিনি এমন কিছু করেননি যাতে প্রমাণ হয় যে তিনি ডি.আই.জি এবং এস.পি’র উপর প্রভাব খাটিয়ে তাদের ওপেন ফায়ার করতে বলেছেন। এস.পি’কে জিজ্ঞাস করা হয়েছিল যে তিনি ক্রমাগত ইটপাটকেল নিক্ষেপের কারণেই তা করতে বলেছেন এবং পুলিশের উপর ছাত্র এবং অন্যদের আক্রমণের কারণেই এমনটি করেছেন কি না। তিনি তা অস্বীকার করেন এবং বলেন যে তিনি গুলি চালান কারণ তার আর কোন উপায় ছিল না, যা কারণে তারা কোণঠাসা হয়ে পরেছিলেন। তিনি প্রচুর কাদানে গ্যাস ব্যবহার করেছিলেন। এমনকি তার সর্বশেষ লাঠি চার্জও ব্যর্থ হয়। হয় তিনি তার ফোর্স নিয়ে পালিয়ে যেতে পারতেন অথবা তাদের হাতে রাজপথ ছেড়ে দিতেন যারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ইচ্ছায় রাস্তায় নেমেছিল অথবা তিনি ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে পারতেন এবং তার ফোর্সকে নির্যাতিত হতে দেখতে পারতেন। একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে এর কোনটাও তিনি না করতে পারতেন। পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ ছিল যে শুধু জেলা ম্যাজিস্ট্রেট না, ডি.আই.জি, এস.পি, ডি.এস.পি ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন কিন্তু ৬০ জনের মধ্যে ২৪ জন পুলিশ সদস্য দুপুর ৩.২০ এর মধ্যে আহত হন। এমতবস্থায়ও যদি পুলিশ প্রধান ওপেন ফায়ারের নির্দেশ দেন যাতে তার ফোর্স জনগণের হাতে নির্যাতিত না হয়, তারপরেও আমি মনে করি না, সেটা ওপেন ফায়ার করার মতো কোন পরিস্থিতি।
৪৮) আমাদের এখন দেখতে হবে যে গুলি করাটা সীমা লঙ্ঘন করেছে কি না। এটা পূর্বেই বলা হয়েছে যে ফায়ারিং স্কোয়াডের দুই পাশে অবস্থিত পুলিশ সদস্যরা এক রাউন্ড করে গুলি চালিয়েছিল। এতে একজন মানুষ ইউনিভার্সিটির খেলার মাঠে মৃত হয়ে লুটিয়ে পরেন এবং সেই মুহূর্তেই মানুষের ভীড় সেখানে কমে যায়। অপরদিকের জনস্রোত, মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের দিকের, সাময়িকভাবে কমে কিন্তু তারা আবার সামনে আসতে থাকে এবং পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে এবং সেই সময় দ্বিতীয়বারের মতো ২ পাশে থেকে ওপেন ফায়ার করা হয়। রেজিষ্টারের নথি থেকে দেখা যায় যে ২৭ রাউন্ড গুলি করা হয়েছিল যাতে আমি সন্তুষ্ট এবং এই ২৭ রাউন্ড গুলিতে ৯ জন আহত হন যার মধ্যে ৪ জন নিহত হন।
৪৯। মেডিক্যাল কলেজ হসপিটালের রেজিস্টার থেকে আমি আরও জানতে পেরেছি যে পুলিশের গোলাগুলির কারনেহতাহতের পরিমান আমার সম্মুখে জিজ্ঞাসাবাদেযেমনটি বর্ণিত হয়েছে তেমনটিই। এটা সত্য যে রেজিস্টারের হিসেব অনুযায়ী অনেক সংখ্যক মানুষ টিয়ার গ্যাস, লাঠি চার্জ এবং মাটিতে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে তথাপি পুলিশের ছোঁড়া গ্যাস গ্রেনেড, গ্যাস শেল এবং দুই দফা লাঠি চার্জের ঘটনার বিপরীতে এটা অপ্রত্যাশিত কিছু নয়।
৫০। তদন্ত কার্যক্রম থেকে জেনে আমি অবাক না হয়ে পারছি না যে, পূর্ব বাংলা পুলিশ বাহিনীর (ইস্ট বেঙ্গল পুলিশ ফোর্স) কোন ষ্টীল হেলমেট নেই, আছে কেবল কিছু পুরনো এআরপি হেলমেট। এটা অভাবনীয় যে, প্রতিরোধ করতে আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাপড়ের টুপি পরতে হয় এবং ইট, পাথর ও এজাতীয় অস্ত্রের বর্ষণের বিপরীতে মাটি আঁকড়ে থাকতে হয়। ঢাকার বর্তমান গঠনশীল পরিস্থিতিতে আইন অমান্যকারীদের কাছে যথেষ্ট পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। জনাব ইদ্রিসের অধীনে পুলিশ ফোর্স যদি প্রয়োজনীয় অস্ত্রে সজ্জিত থাকতো, তবে সম্ভবত এমন তদন্ত তৎপরতার কোন প্রয়োজন হতো না।
৫১. তদন্ত কার্যক্রমের সকল বক্তব্য বিবেচনা করে, সমাপনি সিদ্ধান্তে এসে আমাকে পেয়েছি যে—
(১) পুলিশের গুলি ছোঁড়া প্রয়োজন ছিল।
(২) পুলিশের বলপ্রয়োগ এক্ষেত্রে পরিস্থিতির দাবি ছিল।