You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.12 | বাংলাদেশ বাহিনীর সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত  - সংগ্রামের নোটবুক

১২ জুলাই ১৯৭১ঃ বাংলাদেশ বাহিনীর সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত 

সম্মেলনে সেক্টর সমূহ সম্পর্কে সিদ্ধান্তের পর সৈনিকদেরও নিম্নলিখিত গ্রুপে পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। নিয়মিত আর্মি ব্যাটালিয়নঃ তখনকার স্বল্প সংখ্যক ব্যাটালিয়নগুলো নিয়ে বাংলাদেশ বাহিনী গঠিত হয়। এইসব ব্যাটালিয়নের জনশক্তি ছিল খুবই কম। প্রত্যেক সেক্টর থেকে লোক সংগ্রহ করে শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা চলে। তারপর এগুলোকে ব্রিগ্রেডগ্রুপে ভাগ করা হয়। কে-ফোর্স , এস- ফোর্স এবং জেড-ফোর্স নামে এগুলো পরিচালিত হয়। এসব বাহিনীর অধিকাংশ লোকই ছিল ইপিআর এর।
সেক্টর ট্রুপসঃ উপরোক্ত ব্যাটালিয়নগুলোতে যেসব ইপিআর,পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি তাদেরকে যার যার সেক্টরে যুদ্ধ করার জন্য ইউনিটও সাব-ইউনিটে ভাগ করা হয়। নিয়মিত বাহিনীগুলোর চেয়ে সেক্টর ট্রুপের অস্ত্রবল ছিল কিছুটা কম।ওপরের প্রথমও দ্বিতীয় গ্রুপ, মুক্তিফৌজ, এম এফ মুক্তিবাহিনী অথবা নিয়মিত বাহিনী হিসেবে পরিচিত। এদেরকে সেনাবাহিনীর বিধিবিধানও নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। এদেরকে জীবন-ধারণের ভাতা হিসেবে একটি যুক্তিসংগত অর্থের অংক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় কিন্ত তারা কোন বেতন গ্রহণ করেননি।সরকারীভাবে তাদের নাম রাখা হয় ‘নিয়মিত বাহিনী’। অনিয়মিত বাহিনী অথবা ফ্রিডম ফাইটার্স(এফ এফ)ঃ গেরিলা পদ্ধতিতে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য জেসব লোককে ট্রেনিং দেওয়া হতো তারা ছিল ফ্রিডম ফাইটার্স। এর সরকারী নাম ছিল অনিয়মিত অথবা গণবাহিনী। এরা সেনাবাহিনীর নিয়ম-কানুন অনুসারে চলতে বাধ্য ছিলো না। অনেকক্ষেত্রে নিয়ম-শৃঙ্খলার অভাব ছিলো এই গ্রুপের বৈশিষ্ট।তবে, আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে, সুদীর্ঘ এবং কঠোর সংগ্রামী জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে তারা আপনা থেকেই সুশৃঙ্খল হয়ে উঠবে।সাধারণতঃ এদেরকে বলা হত ‘গেরিলা’। মুক্তিফৌজ এবং ফ্রিডম ফাইটারদেরও সাধারণভাবে এফ-এফ অথবা ফ্রিডম ফাইটার্স বলা হতো এবং এই নামে সকল যোদ্ধাই সুপরিচিত ছিল।

অনিয়মিতবাহিনীর লোকেরা কোন বেতন কিংবা জীবনধারণ ভাতা পেতো না। ট্রেনিংয়ের পর বাংলাদেশের ভেতরে পাঠানোর খরচ হিসেবে রাহা খরচ হিসেবে কিছু অর্থ দেওয়া হতো।একে বলা হতো ‘ইনডাকশন মানি’ বা নিযুক্তি ভাতা। আমাদের নিয়মিত(এম এফ) এবং অনিয়মিত(এফ এফ) বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো এবং সদস্য সংখ্যা হিসেব করে তাদের জন্য কাপড় চোপড়, রেশন,অস্ত্র, গোলাগুলি অয়ারলেসসেট, টেলিফোন সেট কম্পাস, বাইনোকুলার ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করে পুরো সেক্টরের অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের সাকুল্য তালিকা সরকারের কাছে পেশ করতে হতো।আমাদের সরকার আবার ভারত সরকারের কাছ থেকে জিনিসগুলো সংগ্রহ করতেন। অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতার কথা আগেও বলেছি। নিঃসন্দেহে এই সমস্যার জন্য আমরা প্রথম দিকে মার খেয়েছিলাম। সেক্টরগুলোতে ব্যবহৃত অশ্ত্র-শস্ত্রের তেমন কোন সামঞ্জস্য ছিলো না। কিছু ছিল চীনের তৈরি,কিছু ব্রিটিশ আবার কিছু আমেরিকান। এগুলোর গোলাগুলির নিয়ে আমাদের নিদারুণ সংকটে পড়তে হতো। শেষপর্যন্ত আমাদের শুধু একধরণের( সম্ভবত ভারতীয়) অস্ত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
মেজর রফিকের ভাষ্য