১১ জুলাই ১৯৭১ঃ মুক্তিবাহিনীর সেক্টর কমান্ডারদের প্রথম সম্মেলন
কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের অফিস ভবনে মুক্তিবাহিনীর সেক্টর কমান্ডারদের প্রথম সম্মেলন (১১-১৭ জুলাই) শুরু হয়। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। অধিবেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের নানা ধরনের সমস্যা ও সমন্বিত ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এ সম্মেলনেই সেক্টর ১১ টি করা হয়। এ সভায় জিয়াউর রহমান যুদ্ধ কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করেন। প্রধান সেনাপতি ওসমানীকে দেশরক্ষা মন্ত্রী পদে ‘উন্নীত’ করে সাতজন তরুণ অধিনায়কের সমবায়ে গঠিতব্য এক কাউন্সিলের হাতে মুক্তিযুদ্ধের সমগ্র ব্যবস্হাপনার দায়িত্ব অর্পণই ছিল আলোচ্য প্রস্তাবের সার কথা। কিন্তু প্রস্তাবের মূলমর্ম ওসমানীর নেতৃত্বের প্রতি অনাস্হাব্যঞ্জক হওয়ায় কর্নেল ওসমানী সম্মেলনের প্রথম দিনেই প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব থেকে মৌখিক পদত্যাগ করেন। সেক্টর অধিনায়কদের মধ্যে খালেদ মোশাররফ উত্থাপিত ‘যুদ্ধ কাউন্সিল’ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
তাজউদ্দিনের চেষ্টায় ওসমানীর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হতে কেটে যায় একদিনেরও বেশী সময়। সেক্টর অধিনায়কদের সম্মেলনের এই অপ্রীতিকর সূচনা সত্ত্বেও তারপর কয়েকদিনের আলোচনায় বিভিন্ন সেক্টরের সীমানা পুনঃনির্ধারণ,মুক্তিবাহিনীর শ্রেণীকরণ ও দায়িত্ব অর্পণ, সশস্ত্র তৎপরতার লক্ষ্য ও পরিসীমা নির্ধারণ, দেশের অভ্যন্তরে গেরিলা ঘাঁটি নির্মাণ, প্রতিপক্ষের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশের অভ্যন্তরে অনিয়মিত যুদ্ধে (irregular war) নিযুক্ত ছাত্র ও তরুণদের বাহিনীর নামকরণ হয় ‘গণবাহিনী’, যদিও ‘মুক্তিযোদ্ধা’ (Freedom Fighter of FF) নামেই তারা অধিক পরিচিতি লাভ করে। দেশের সীমান্ত এলাকায় সম্মুখ অথবা গোপন আক্রমণে শত্রুসেনাকে ঘায়েল করার জন্য ‘ইবিআর’, ‘ইপিআর’ এবং ক্ষেত্রবিশেষে আনসার, পুলিশ ও নতুন রিক্রুটের সমবায়ে গঠিত হয় ‘নিয়মিত বাহিনী’, ‘মুক্তিফৌজ’ বা MF নামেই যার অধিক পরিচিতি ঘটে। এই নিয়মিত বাহিনীর মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় কিছু ‘মুক্তাঞ্চল’ গঠনের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে নিয়মিত বাহিনীকে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।