You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.10 | স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র | মুজিবনগর, বাংলাদেশ | তারিখ ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র | মুজিবনগর, বাংলাদেশ | তারিখ ১০ এপ্রিল, ১৯৭১

 

যেহেতু ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল,

এবং

যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৬৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল,

এবং

যেহেতু জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ তারিখে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিবেশন আহ্বান করেন,

এবং

যেহেতু তিনি এই অধিবেশন স্বেচ্ছায় এবং বেআইনীভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন,

এবং

যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করার পরিবর্তে বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পারষ্পরিক আলোচনাকালে অন্যায় ভাবে এবং প্রতারণা করে  যুদ্ধ ঘোষণা করে,

এবং

যেহেতু উল্লেখিত প্রতারণামূলক কাজের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান,

এবং

যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনা করেছে এবং এখনও বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে,

এবং

যেহেতু পাকিস্তান সরকার অন্যায় যুদ্ধ ও গণহত্যা এবং নানাভাবে নৃশংস অত্যাচার চালিয়ে বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের একত্রিত হয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব করে তুলেছে,

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

<003.004.005>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র – তৃতীয় খণ্ড

 

এবং

যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের কার্যকরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে,

 

আমরা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ যে ক্ষমতা দিয়েছেন, সে মোতাবেক, তাদের সর্বোচ্চ চাওয়া দ্রষ্টব্য যে আমাদের সংগঠিত করে একটি শাসনণতন্ত্র গঠন করা। সমাবেশ করে পারষ্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে

 

বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা গঠন করছি এবং আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা নিশ্চিত করছি, এবং

 

এতদ্বারা আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন, এবং

 

রাষ্ট্রপ্রধান প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন,

 

ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ সর্বপ্রকার প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতার অধিকারী থাকবেন,

 

প্রয়োজন মনে করলে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা রাখবেন,

 

কর ধার্য করা ও অর্থব্যয়ের ক্ষমতা থাকবে,

 

বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য আইনানুগ ও নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতারও তিনি অধিকারী হবেন।

 

আমরা, বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, কোনো কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান না থাকেন অথবা যদি রাষ্ট্রপ্রধান কাজে যোগদান করতে না পারেন অথবা যে কোনো কারণেই তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে যদি অক্ষম হন, তবে রাষ্ট্রপ্রধানের সকল ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্য উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পালন করবেন।

 

আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, বিশ্বের একটি জাতি হিসাবে এবং জাতিসংঘের সনদ মোতাবেক আমাদের উপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তেছে তা যথাযথভাবে আমরা পালন করবো।

 

আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।

 

আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য আমরা অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলীকে যথাযথভাবে রাষ্ট্রপ্রধান ও উপ-রাষ্ট্রপ্রধানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য দায়িত্ব অর্পণ ও নিযুক্ত করলাম।