You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.11 |নিউ ইয়র্ক টাইমস, রবিবার, ১১  এপ্রিল ১৯৭১ আমরা সকলে বাঙালি - সংগ্রামের নোটবুক

নিউ ইয়র্ক টাইমস, রবিবার, ১১  এপ্রিল ১৯৭১

আমরা সকলে বাঙালি

 

এজেন্স ফ্রান্স- একজন প্রেসে সংবাদদাতা যিনি গত সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তানে গিয়েছিলেন তিনি নিম্নলিখিত লেখাটা লিখেছিলেন।

 

কলকাতার বর্ডার পেরুলেই “বাংলাদেশ” । “বাঙ্গালী জাতী’’ – পূর্ব পাকিস্তান হিসাবে পরিচিত ।  সেখানে প্রবেশ করলে দেখবেন হয় পুরনো দিনের কোন চিত্রায়িত দৃশ্য দেখছেন। বিপ্লবীদের হাতে প্রাচীন অস্ত্র, এবং গ্যারান্ড রাইফেল, শরণার্থী বোঝাই ট্রলি, পথের পাশে পড়ে থাকা লাশ  – যেন স্পেনীয় গৃহযুদ্ধ বা চীনা বিপ্লব।

 

এক ডজন “মুক্তিযোদ্ধা” এবং দুই বা তিনটি রাইফেল নিয়ে একটি “লিবারেশন আর্মি” লরি যশোরের পথে যাচ্ছে – ভারতীয় সীমান্ত থেকে ৩০ মাইল দূরে, রক্তাক্ত যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী থেকে ফিরে আসছে তারা।  যশোর প্রবেশ করার আগে আপনি বিভিন্ন গ্রাম দেখবেন ভাঙ্গাচোরা। লাশের ধ্বংসাবশেষ। যশোরের এইসব ধ্বংসাবশেষ দেখলে বুঝবেন পশ্চিম পাকিস্তানী বিমান বাহিনী কোন সতর্কতা অবলম্বন করেনি আক্রমণের সময়।

 

মাত্র কয়েক মাস পূর্বেই, পূর্ব পাকিস্তানে জনগণ “নোংরা ও উদ্ধত হিন্দু” সাংবাদিকদের কাছে যেতে অসন্তোষ প্রকাশ করতো। এখন তারা বলছে, “হিন্দু, মোসলেম, কোনো বিষয় না। আমরা সব বাঙালি।” শত্রু এখন ‘পাঞ্জাবি’, পশ্চিম পাকিস্তানীদের ডাকার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত নাম।

 

গ্রাম গ্রামে স্লোগান চলছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উধৃতি, প্রাক পার্টিশন ভারতের মহান কবি , মাওসেতুঙ এর বানি ‘ ‘’ জনতার সংগ্রাম দীর্ঘজীবী হউক।’’ “রাজনৈতিক ক্ষমতা বন্দুকের নল থেকে বেড়িয়ে আসে.” মাওবাদীরা পূর্ব পাকিস্তানে তিন সংগঠিত গ্রুপ এর একটি। তারা এখনও শেখ মুজিবের দুই প্রভাবশালী গ্রুপ-আওয়ামী লীগ ও বাঙালি সেনাবাহিনীর ২৫০০০ লোকের থেকে অনেক ক্ষুদ্র । কিন্তু তাদের শক্তি বাড়ছে। শেখ মুজিব, যিনি অতিশয় জনপ্রিয় (এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে তাঁর বিরোধিতার জন্য পরিচিত) হয় মৃত বা জেলে আছেন ।

 

 

কিভাবে এটা শুরু হল?

 

কেউই ভাবেনি যে এমন অবস্থা হবে। গরিব জনগোষ্ঠীকে অন্য রা এভাবে হত্যা করবে যাদের সাথে ২০ বছর ধরে অবস্থান এবং একই ধর্ম ও জাতীয়তার লোক। চুয়াডাঙ্গা, ভারত সীমান্ত থেকে ২০ মাইল দূরে – সেটাকে “বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী করা হয়েছে। মেজর. এম এ ওসমানীকে দক্ষিণ-পশ্চিম সাব সেক্টর এর কমান্ডার একথা  আমাদের জানান।

 

২৪  মার্চ রাতে যখন ‘পাঞ্জাবি’ সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে মেজর ওসমান তখন তার পাঞ্জাবি কমান্ডিং অফিসার মেজর আতিকের সাথে আলোচনা করছিলেন। “তিনি অত্যন্ত ভদ্র ছিলেন এবং আমাকে আমার জীপ্, আমার বন্দুক এবং আমার ড্রাইভারের রাখতে দিলেন। ‘’ পরের দিন শেখ মুজিব বাঙালির কাছে মুক্তির ড্যাক দিলেন এবং আতিক শাহ কে গ্রেফতার করা হল এবং হত্যা করা হল।

 

কি হবে এই দুঃখজনক নতুন শত্রুতা করে? অদূরদর্শী স্বায়ত্তশাসনের পরিণতি কি? পাকিস্তান এর থেকে কি সুবিধা অর্জন করবে? ডঃ হক, মেজর ওসমানের রাজনৈতিক ডেপুটি, একটি সবুজ সমভ্রেরো ছিল, সাথে ২ টি ৪৫ ক্যালিবার বন্দুক এবং প্রায় বিপ্লবী নেতার নিখুঁত ক্যারিক্যাচার, শ্মশ্রুধারী এই মানুষটি বললেন উত্তর “খুব সহজ”।

 

তিনি বলেন,  এদেশে ৭২ মিলিয়ন মানুষ। এত মানুষের ভেতরেরও এখানে পাকিস্তানী পকেট আছে। যেহেতু এখানে অনুর্ধ ১০০০০০ পাকসেনা  আছে জিততে হলে প্রত্যক্টা সৈন্যকে ১০০০ বাঙ্গালী মারতে হবে। যা একেবারেই অসম্ভব। অতএব জয় সুনিশ্চিত।

 

– জিন ভিনসেন্ট