এম আর সিদ্দিকী
একাত্তরের পহেলা মার্চ। রেডিওর সংবাদে ভেসে আসলো একটি খবর। নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত। হোটেল পূর্বাণিতে তখন শেখ মুজিবুর রহমান একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছিলেন। খব শুনে তিনি ক্ষিপ্ত হলেন। বেরিয়ে আসলেন এবং ২রা মার্চে ঢাকা এবং ৩ তারিখে সমগ্র বাংলাদেশে হরতাল ডাকলেন। ডাক দিলেন ৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসমাবেশের। ঘোষণা দিলেন, সরকারের সাথে আর কোন সহযোগিতা নয়। আর কেউ ট্যাক্স দেবে না। স্থানীয় আওয়ামী প্রধানের নির্দেশনা ছাড়া কোন ব্যাঙ্ক কোন লেনদেন করবে না। সংগ্রাম শুরু হলো।
চট্রগ্রামে আমি জেলা আওয়ামিলীগ এর সভাপতি ছিলাম। দ্রুত একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হল এবং আমি এই কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলাম। অবাঙালি সংস্থাগুলো ব্যাঙ্ক থেকে টাকা নেওয়ার সময় আমার কাছ থেকে অনুমতি দিত। এমনকি সেনাবাহিনী পরিবারের সদস্যদের পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করার পূর্বেও আমার অনুমতির দরকার ছিল। ওদিকে বাঙালিরা উত্তেজিত হয়ে পড়ল এবং তারা মিছিল ও শ্লোগান দেওয়া শুরু করল। চট্রগ্রামে রেলওয়ে কলোনিতে একটা বড় বিহারী সম্প্রদায়ের লোক থাকত । যখন কলোনির পাশ দিয়ে একটি মিছিল যাচ্ছিল, তখন তারা লাঠি, ধারালো অস্ত্র, বন্দুক দিয়ে আক্রমন করল। পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকটা বিহারী পরিবারকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন। কিন্তু এটা আমাদের জানা ছিল না। অনেক বাঙালি আহত হয়েছিল এবং নিহত হয়েছিলেন। বিহারী এবং বাঙালীদের মাঝে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ল। দিন দিন তা খারাপ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হল। সেনাবাহিনী নিয়োগ দেয়া হল। পূর্ব পাকিস্তানি প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন কর্নেল চৌধুরী । উনি বাঙালীদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন। শীঘ্রই তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে একজন পশ্চিম পাকিস্তানিকে প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো। তিনি অবাঙালীদের পক্ষাবলম্বন করলেন। সরকারি সার্কিট হাউজের প্রধান দপ্তরে সামরিক শক্তি নিয়োগ দেওয়া হল। নৌবাহিনীও যোগ দিয়েছিল।
আহত বাঙালিদের পাহাড়তলি এলাকার মেডিকেল হাসপাতালে আনা হলে আমি তাদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাক্তিগতভাবে সার্কিট হাউসে যাই। তারা আমাকে সাহায্যের জন্য আশ্বস্ত করল। যখন আমি বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য সাহায্য চাইলাম তখন তারা আমাকে একটি নৌবাহিনীর ট্রাকে তুলে দিল যেটি বিহারী কলোনির দিকে যাচ্ছিল। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে তারা আমাকে হত্যা করার জন্য বিহারিদের হাতে তুলে দিতে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাদের থামার জন্য বললাম কিন্তু তারা আমার কথা শুনল না। একটা সময়ে অন্য একটা মিলিটারীর ট্রাক বিপরীত দিক থেকে আসছিল। যখন তারা গাড়ির গতি কমিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা করছিল ঠিক তখনই আমি সুযোগটা নিলাম এবং ট্রাক থেকে লাফ দিলাম।
ঢাকাসহ বাদবাকি বাংলাদেশের অবস্থা ক্রমশঃ খারাপ হতে লাগলো। এক ধরণের সমান্তরাল সরকার চালু হয়ে গেল।
এসময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আওয়ামির সাথে একটি সংলাপের ঘোষণা দিয়ে ১৫ই মার্চে সকল আর্মি সহকর্মী এবং প্রধান সারির নেতাদের নিয়ে ঢাকা আসলেন। উনাদের সাথে প্রয়াত জুলফিকার আলী ভুট্টোও ছিলেন। সংলাপ চলাকালীন তাঁরা বেসামরিক পোশাকে আর্মির সদস্যদের প্লেনে এবং জাহাজে এ দেশে নিয়ে আসতে লাগলেন।
চট্রগ্রামে মেজর রফিক এবং পরে ই পি আর ক্যাপ্টেন আমাদের সাথে যোগাযোগ করল এবং তারা আমাদের জানাল পুরো ই পি আর অফিসার এবং জওয়ানরা আমাদের সাথে আছে। সে রাঙামাটি, কাপ্তাই এবং কক্সবাজার এ নিয়োজিত সবার সাথে যোগাযোগ করল এবং তাদের ইশারা দেওয়ার সাথে সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহন করার জন্য বলা হল।
বিগ্রেডিয়ার মজুমদার ক্যান্টনমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদ চৌধুরীর মাধ্যমে প্রতি রাতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতেন এবং তাদের সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি জানালেন। তারপর চট্রগ্রামের ডি.সি. মোস্তাফিজুর রহমান এবং এস পি তাদের সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি জানালেন। আওয়ামিলীগকে সহায়তার জন্য পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা এস পি নিহত হন।
এম.ভি. “সোয়াত” নামে একটা জাহাজ অস্ত্র, গুলি, বিস্ফোরক ও সেনাবাহিনী সহ চট্রগ্রাম এ পৌছাল। সদা সতর্ক থাকা আওয়ামিলীগ এর কর্ম পরিষদ বন্দরে নিয়োজিত শ্রমিকদেরকে জাহাজ এর মালামাল না নামানোর নির্দেশ দিলেন। সেনাবাহিনীরা বন্দুক উচিয়ে শ্রমিকদের ভয় দেখাল কিন্তু তাতে কাজ হল না। যারা কাজ করতে না করেছিল, তাদেরকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ই পি আর জওয়ানদের গুলি করতে নির্দেশ দিল। ইপিআর সদস্য রা অস্বীকৃতি জানালে পরে ৭ জন ইপিআর সদস্যকে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে হত্যা করা হয়।
তারপর তারা ক্যান্টনমেন্টের সেনাবাহিনীকে জাহাজের মালামাল নামানোর নির্দেশ করল। বিগ্রেডিয়ার মজুমদার আমার উপদেশ জানতে চাইল যে তার কি করা উচিত। আমি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষনা এবং তাদের মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না।
২৩ শে মার্চ আমি সরাসরি ঢাকায় গেলাম বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ নেওয়ার জন্য এবং তাঁর নির্দেশনার জন্য। আমি তাঁর বাসায় মিলিত হলাম। তিনি জানালেন যে আলোচনার মাধ্যমে ভালো একটি সমাধানের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। যেহেতু ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট সেখানে উপস্থিত সেহেতু তিনি ভাবেন নি যে, যুদ্ধ হবে। আমি তাঁকে জানালাম যে, চট্রগ্রাম এ যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে এবং পুরোপুরিভাবে আক্রমনের জন্য তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। তিঁনি আমাকে দ্রুত চট্রগ্রামে ফিরে যেতে বললেন এবং সকল বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে বললেন ও চট্রগ্রামে প্রতিরোধ করতে বললেন। যদি কোন কারনে আক্রমন করে তিনি চট্রগ্রামে পালিয়ে চলে আসবে এবং আমাদের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কখন সেনাবাহিনী, ইপিআর, পুলিশ এবং সামরিক প্রশাসনকে যুদ্ধের সবুজ সংকেত দিবো। তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। কর্নেল ওসমানিকে পরামর্শের জন্য ডাকা হল। উনি ওসমানীর পরামর্শ মোতাবেক বললেন যে, যখন রেডিও প্রচারণা বন্ধ হবে তখন বুঝে নিতে হবে আমরা শেষ সময়ে এসে গেছি। কিন্তু আমি বললাম যে, বৈদ্যুতিক শক্তির কারনেও এমনটা হতে পারে। তারপর সে বলল যে যখন তারা আমাদের নিরস্ত্র করার চেষ্টা করবে তখন আমাদের ধরে নিতে হবে যে যুদ্ধ শুরু হয়্র গেছে এবং তা প্রতিরোধ করতে হবে। যাই হোক আমি চট্রগ্রামে ফিরে আসলাম কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ের মধ্যে বিগ্রেডিয়ার মজুমদার এবং ক্যাপ্টেন আমিন কে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ঢাকায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। চট্রগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট তখন এক অবাঙালী অফিসারের নির্দেশে চলছিল। সেনাবাহিনীরা সব অস্ত্র ‘সোয়াত’ থেকে নামিয়ে ফেলেছিল এবং সেগুলো ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু জনগন রাস্তার প্রতি ইঞ্চি জায়গায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিল। উপায় না দেখে সেনাবাহিনীরা হালিশপুর ট্রানজিট ক্যাম্পে সব অস্ত্র জমা করে।
২৫ শে মার্চ চট্রগ্রামের অবস্থা খুবই ভয়াবহ ছিল। আমরা জানতাম না ঢাকায় কি ঘটছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে শেখ সাহেবের প্রতিবেশী মোশাররফ হোসাইন এবং নাঈম গুহের মাধ্যমে তাঁর সাথে যোগাযোগ করলাম। তিনি তাদের মাধ্যমে আমাকে জানাতে বললেন যে আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। সেনাবাহিনী, ইপিআর এবং পুলিশ কে অস্ত্র জমা দিতে না করলেন এবং জনগনকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বলল। তারপরে ঢাকার সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
সংগ্রাম পরিষদ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করল এবং গোপনে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। ২৬শে মার্চ সকাল ৬:৩০ মিনিটে আমার স্ত্রী লতিফা মি. মইনুল আলম (ইত্তেফাক পত্রিকা চট্রগ্রাম এর সাংবাদিক) এর কল রিসিভ করলেন এবং চট্রগ্রাম ওয়ারলেস অপারেটরের মাধ্যমে পাওয়া একটি মেসেজ গ্রহণ করলেন। মেসেজে বলা হয়েছে
“বাংলাদেশ এবং বিশ্বের জনগনের কাছে বার্তা। হঠাৎ গভীর রাত ১২ টায় সেনাবাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং পিলখানার ইপিআর আক্রম করেছে। হাজার হাজার লোক হত্যা করা হয়েছে। প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। আমাদের মুক্তির সংগ্রামে বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন কর। যার যা কিছু আছে, তা নিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তোল। আল্লাহ তোমাদের সহায় হোন। জয় বাংলা। শেখ মুজিবুর রহমান।“
সংবাদটি দ্রুত আমাকে আমার কানে এল। সংগ্রাম পরিষদ শীঘ্রই মেসেজটি নিয়ে আলাপ করল এবং রেডিওতে তা ঘোষনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এই সময়ের মধ্যে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর উপস্থিতির জন্য আগ্রাবাদ রেডিও স্টেশনে প্রবেশ করা গেল না। আমরা বেলাল চৌধুরী, সুলতান আলী এবং রেডিও পাকিস্তানের অন্যান্য কর্মকর্তাদের খুঁজছিলাম যারা আমাদের বার্তাটি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। ড. আবু জাফর এবং অন্যান্য বাঙালী ঘোষনার একটি খসড়া তৈরী করেন। এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে জেলা আওয়ামিলীগ এর সাধারন সম্পাদক এম,এ, হান্নান ঘোষনাটি দিবেন। সে অনুযায়ী তিনি ২৬ শে মার্চ দুপুর ২:৩০-এ শেখ মুজিবের পক্ষ থেকে সেই ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। তার উপর ভিত্তি করে পরে বাংলাদেশ সরকার ২৬ শে মার্চকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষনা করে।
মেজর জিয়া এবং তার সৈন্যদল কালুরঘাট রেডিও স্টেশন পাহারার দায়িত্ব নেয়। পরের দিন ২৭ শে মার্চ জিয়া নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষনা দেন। আওয়ামিলীগ নেতা এবং সাধারন মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পরে। প্রাক্তন মন্ত্রী এ, কে খান সেই ঘোষণা শুনে মনে করেন যে, এর মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে ধারণা হবে যে এখানে একটি আর্মি ক্যু হয়েছে। তাই এর গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বব্যাপী ক্ষুণ্ণ হবে। তাই তিনি পুনরায় ভাষণের একটি খসড়া তৈরি করে দেন এবং মেজর জিয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেই নতুন খসড়া মোতাবেক শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিসেবে আখ্যায়িত করে তাঁর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
পুরোদমে যুদ্ধ চলছিল। সেনাবাহিনী ট্যাংক নিয়ে রাস্তায় বের হয় কিন্তু জনগন রাস্তা ব্লক করে, আলকাতরা মেশানো নুড়ি তে আগুন ধরিয়ে সেনাবাহিনী কে তাদের ট্যাংক নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট এর দিকে পশ্চাৎপদসারণ করতে বাধ্য করে। ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে বেলুচ রেজিমেন্ট কর্নেল এম, আর, চৌধুরী এবং প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বাঙালী অফিসার ও জওয়ান কে হত্যা করে। কেউ কেউ অস্ত্র নিয়ে পাহাড়ের উপর দিয়ে পালিয়ে বাঁচে। সিডিএ মার্কেটের কাছে অবস্থিত অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টকে করাচীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো। ইপিআর, পুলিশ এবং আওয়ামীলীগ স্বেচ্ছাসেবক সহ আরাকান রাজার ৪০০ বেতনভূক্ত কর্মচারীসহ সর্বমোট প্রায় ২০০০ জন রেডি ছিল। পরে আক্রমনটি পরিচালিত হয় নি।
পরে ২৭ শে মার্চ পাকিস্তান সরকার কুমিল্লা থেকে একটি বড় সৈন্যদল চট্রগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট এ পাঠান। আমরা রেলওয়ে স্টেশন এর টেলিফোন এর মাধ্যমে তথ্যটি পাই। নোয়াখালী আওয়ামিলীগ এর সহযোগীতায় আমরা রাস্তা ব্লক করে দিই, সবচেয়ে বড় কাজটি ছিল শোভাপুর ব্রিজ এর একটা বড় পার্ট আমরা উড়িয়ে দিই। যাই হোক, সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাস্তার অবরোধ গুলো ধীরে ধীরে সরাতে সক্ষম হয়। ত্যাগী ইবিআর বাহিনী এবং ইপিআর বাহিনী সুসজ্জিত সৈন্যদলকে তছনছ করে দেয়। ক্যাপ্টেন ভুঁইয়া এবং ক্যাপ্টেন রফিক এর নেতৃত্বে আমরা খাবার এবং অন্যান্য জিনিস পত্র সংগ্রহ করি। ওৎ পেতে থাকা অতর্কিত বাহিনীর আক্রমনে তারা তাদের সমস্ত যুদ্ধাস্ত্র যানবাহন নিয়ে পিছু হঠতে বাধ্য হয়। এবং বাকিরা নিরাপত্তার জন্য পাহাড়ের আড়ালে চলে যায়। তারা এক পাকিস্তানি সিনিয়র আফিসারকে হারায়। আমাদের বাহিনী তখন উত্তরের দিকে ধাবিত হয় এবং ফেনী নদী পর্যন্ত রাস্তার নিয়ন্ত্রন দখল করে।
স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি চট্রগ্রাম বিমানবন্দর ও কুমিল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে অগ্রসরমান শত্রু পক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় এবং তাদের প্রতিহত করে। কিন্তু তারপর নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী যোগ দেয় ওদের সাথে। নৌবাহিনী সমুদ্র থেকে শেল নিক্ষেপ শুরু করল এবং পাকিস্তান এয়ার ফোর্স আমাদের কেল্লা এবং বাজারগুলোতে আক্রমন করল। আমাদের যোদ্ধারা পাহাড়ের উপর দিয়ে ভারতের দিকে অপসৃত হতে লাগল কিন্তু যুদ্ধ চালিয়ে গেল।
আমার কিছু হিন্দু বন্ধুর সহায়তায় আমি জহুর আহমেদ চৌধুরী, আতাউর রহমান খান এবং আবদুল্লাহ আল হারুনকে সাথে নিয়ে ৩০ মার্চ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের সাবরুমে যাই। ভারতের সীমান্তবর্তী পুলিশ আমাদের ভালোভাবে নিল, তারা আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করলেন এবং পরে আগরতলায় তাদের প্রধানের কাছে নিয়ে গেলেন। আমাকে অনেক ধরনের প্রশ্ন করা হল এবং তাদের প্রধানের অনুরোধে মানচিত্রে চট্রগ্রামের কিছু নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করলাম। সেখানে আমাদের ট্রুপের ঘনত্ব বেশি ছিল। উনি জানালেন যে অবরূদ্ধ পাক আর্মি এসব জায়গায় বোমা নিক্ষেপ করতে পারে। পরে আমরা জানতে পেরেছিলাম যে ঐ জায়গা গুলোতে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তারা আমার অনুরোধে গুলি ব্যবস্থা করে দিল এবং তারা বলল যে আমাকে অবশ্যই দিল্লী সরকারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং সেখান থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে।
এমএনএ, এমপিএ-র বহু লোক চট্রগ্রাম,নোয়াখালি এবং কুমিল্লা থেকে আগরতলায় পৌঁছে। তারা সকলে একটি মধ্যবর্তী সরকার গঠনের জন্য আমাকে চেপে ধরে যাতে আমরা ভারত সরকারের সাথে একটি মধ্যস্থতা করতে পারি। কিন্তু সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খন্দকার মোস্তাক, তাজউদ্দিন আহমেদ, কামরুজ্জামান, মনসুর আলীর মত শীর্ষস্থানীয় নেতা না থাকায় আমি তা প্রত্যাখান করি। শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে তারা বিশেষ ক্ষমতায় ছিলেন।
তখন আমাকে ত্রিপুরার রাজ্য প্রধান সচিন্দ্র সিং এর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সাথে সাথে বেগম গান্ধীর সাথে ফোনে কথা বলেন। আলোচনার পরে তিনি আমাকে নয়া দিল্লী যাওয়ার পরামর্শ দেন। ওইদিনই ড. আনিসুর রহমান এবং প্রফেসর রহমান সোবহান আগরতলায় পৌছান। আমার সাথে সঙ্গী হওয়ার জন্য তাদেরকে জানালাম। আমাদের জন্য গুপ্ত হিন্দু নাম দেওয়া হয়। দিল্লী পৌছার পর, আমাকে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে অফিসার ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ত্রিগুনা সেনসহ অনেকের সাথে সাক্ষাৎ হয়। প্রধানমন্ত্রীর সাথে একটি এপয়েনমেন্ট নেওয়া হয়। সন্ধ্যাববেলায় আমাকে জানানো হল যে বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য নেতারাও সেখানে এসে পৌঁছেছেন। আমি খুব আনন্দিত হলাম ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দিন আহমেদকে দেখে। আমি তাদের সাথে কিছু সময় কথা বললাম এবং তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার অনুরোধ করলাম যাতে আমি পরেরদিন সকালে আমাদের সৈন্যদলের কাছে ফিরে যেতে পারি। যথারীতি ফিরে গেলাম।
কিছু দিনের পরে বেগম তাজউদ্দিন এবং আমিরুল ইসলাম আগরতলায় পৌছালেন। এই সময়ের মধ্যে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং খন্দকার মোস্তাক আহমেদও এসে পৌছালেন । সরকার গঠন করার একটি প্রস্তাব গুরুত্বের সাথে নেওয়া হল। আমরা আশা করেছিলাম যে, শেখ মুজিব পরবর্তী ১ম উপরাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কিন্তু তাজউদ্দিন বলল যে সে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মিসেস গান্ধীর সাথে কথা বলেছে এবং সে বলল যে যদি এখন আমরা তা পরিবর্তন করি তাহলে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা শেষ হয়ে যাবে। খন্দকার মোস্তাক আহমেদ রাজী ছিল না এবং অধিকাংশ এমএনএ দ্বিমত ছিল। ফলস্বরুপ একটা অকার্যকর অবস্থার সৃষ্টি হল।
সকাল পার হল। সবাই অধৈর্য হয়ে গেল। একটা সময় আমি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাথে কথা বললাম এবং তার সর্বশেষ অবস্থান কি জিজ্ঞাসা করলাম। সে আমাকে বললেন, তাজউদ্দিন যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে চায়, তাহলে তাকে আন্দোলনের সুবাদে তা করতে দাও। এই ব্যাপারে আমার কোন ব্যক্তিগত অভিলাষ নেই। এটা সিদ্ধান্ত হল যে, সবাই একসাথে কলকাতায় গিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করবে এবং তারপর কলকাতায় ফিরে আসবে।
এ সময়ের মধ্যে হাজারো মানুষ আগতলায় এসে পৌছেছে আশ্রয়ের জন্য। তাদেরকে চিহ্নিত করা, থাকার এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা অফিস হিসেবে একটা কক্ষ নিয়েছিলাম। এটি “জয় বাংলা” অফিস নামে পরিচিত ছিল। আমরা সকল আশ্রয়ী লোকদের একটি তালিকা করলাম এবং তাদের একটি পরিচয় পত্র দিলাম। আগরতলার চারিদিকে ক্যাম্প তৈরী করা হল। প্রত্যেক ক্যাম্পের জন্য একজন এমএনএ অথবা এমপিএ নিযুক্ত করা হল। রেশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। যখন এইকাজ গুলো করছিলাম তখন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়টি মাথায় আসল যে,আমরা কিভাবে পাকিস্তানীদের প্রতিহত করব এবং তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ করব। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সেনা প্রধান কর্নেল এম. এ. জি. ওসমানি কে যুদ্ধের সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হল। সমস্ত যুদ্ধকে কতগুলো সেক্টরে ভাগ করা হল এবং একজন করে মেজর সেক্টর প্রধান নির্বাচন করা হল। মেজর দত্ত সিলেট সেক্টরে, মেজর জিয়া চট্রগ্রাম সেক্টরে, মেজর খালেদ মোশাররফ কুমিল্লা সেক্টরে এবং মেজর শফিউল্লাহ পূর্বাঞ্চল জোন ময়মনসিংহ সেক্টর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উনারা যখন যুদ্ধ পরিচালনা করবেন, তখন আমাদের দায়িত্ব থাকবে তাদেরকে রেশন, তাবু ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা।
অনুধাবন করলাম, যুদ্ধে জয়ী হতে হলে আমাদের সেনাবাহিনীর পাশাপাশি ‘ মুক্তি বাহিনী ‘ গঠন করা দরকার। ১ লক্ষ আশ্রয় গ্রহনকারী যুবককে ট্রেইনিঙের পরিকল্পনা নেওয়া হল। শীঘ্রই পৃথক ‘যুব ক্যাম্প’ তৈরি করা হল এবং ব্যবস্থাপকদের জন্য সবকিছু ব্যবস্থা করা হল। ভারত সরকারের সাথে সমঝোতা হতে হতে আমরা আমাদের সেক্টর কমান্ডারদেরকে বললাম যে, যদি তারা চায় তাহলে প্রশিক্ষন দেয়া শুরু করতে পারে। শুধু মেজর খালেদ মোশাররফ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুবকদের প্রশিক্ষণ দিলেন এবং ঐ সকল যুবক রেশন না পাওয়া পর্যন্ত তিনি নিজের রেশন যুবকদের সাথে শেয়ার করে নিলেন। কমান্ডো হিসেবে এদেরকেই প্রথমে দেশে পাঠানো হয়েছিল।
আগরতলায় মাহাবুব আলম চাষী এবং তাহেরউদ্দিন ঠাকুর আমাকে সব সময় সহায়তা করেছিলেন। তৌফিক ইমামকে অফিসের মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হল। তিনি রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক ছিলেন কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন এবং আমাদের সাথে আগরতলায় এসেছিলেন। নির্বাসিত অবস্থাতেও এক ধরণের বেসামরিক সরকার কাজ শুরু করেছিল।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র
রেডিও পাকিস্তানের বাঙালি অফিসাররা ভারতে পালিয়ে আসার সময় ৫ কিলোওয়াট এর একটি একটি ট্রান্সমিটার নিয়ে এসেছিল। আগরতলায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কাজ শুরু করে। প্রফেসর মোহা. খালেদ, এমএনএ কে প্রচারনার কাজের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। যেহেতু পুরা বাংলাদেশে প্রচারনার জন্য ট্রান্সমিটারটি যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না, তাই আমরা ভারত সরকারকে আরো শক্তিশালী একটি ট্রান্সমিটার ধার দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। তাই একটি ৫০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সমিটারের ব্যবস্থা করা হল। কিন্তু এটা স্থাপন করা হল কলকাতায়। তাই রেডিও স্টেশন আগরতলা থেকে কলকাতায় স্থানান্তর করা হলো।
মন্ত্রীসভা গঠন করার পরে আমি কলকাতায় গিয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম কাজগুলো যথেষ্ট পরিমাণে গুছানো হচ্ছে না। আমি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এবং খন্দকার মোস্তাক আহমেদকে পরামর্শ দিলাম যে তাদের উচিত প্রতিনিয়ত সরকারিভাবে অফিসের কাজ পরিচালনা করা। তাঁরা আমাকে জানাল যে তাঁরা এমন কাউকে পাচ্ছে না যে তাদের সাহায্য করবে। আমি আগরতলা থেকে অফিসার দিয়ে তাদের সাহায্য করার কথা প্রতিশ্রুতি দিলাম। ডেপুটি হাই কমিশনের ২য় তলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বসানো হল এবং মাহাবুব আলমকে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হল। আমি তৌফিক ইমাম কে মন্ত্রীসভার সচিব হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ এর কাছে পাঠিয়েছিলাম এবং আসাদুজ্জামানকে অর্থসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হল।
আমাকে পূর্ব জোন এর “ইনচার্জ” হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হল এবং কর্তৃপক্ষ আমাকে সকল ব্যাংক একাউন্ট এবং অন্যান্য ফান্ড পরিচালনার জন্য ” গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ” লেখা একটি সীলমোহর দিলেন। চাষী সাহেব পাকিস্তান এম্বাসিতে নিয়োজিত সকল বাঙালিদের সাথে যোগাযোগ করলেন এবং তাদেরকে বেরিয়ে এসে নির্বাসিত সরকারের সাথে কাজ করার জন্য বললেন। তাৎক্ষণিক একটা ফলাফল পেলাম এবং ওয়াশিংটন এ নিযুক্ত সকল বাঙালি অফিসাররা প্রবাসী মিশন ‘ডিফেক্ট’ করার জন্য প্রস্তুত হলেন। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধে আমি আমেরিকা এবং কানাডাতে নির্বাসিত সরকারের প্রথম এম্বাসেডর হিসেবে প্রেরিত হলাম।
১৯৭১ সালের জুলাই মাসে আমেরিকাতে যাই। আমরা কানেকটিকাট এভিনিউর অফিস ব্লক এ একটি ফ্লোর নিই যেটি ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম দূতাবাস। যেহেতু বাংলাদেশকে তখনও অ্যামেরিকা স্বীকৃতি দেয় নাই, সেহেতু আমিও একজন ‘দূতাবাসের কর্মকর্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাই নাই। কিন্তু আমি একটি ‘মিশনের প্রধান’ হিসেবে নিবন্ধন করার অনুমতি পেলাম যার ফলে আমি বৈধভাবে রাজনৈতিক তদবির চালিয়ে গেলাম। যদিও পাকিস্তান সরকারের সাথে আমেরিকার সরকারের বন্ধুত্ব সম্পর্ক ছিল তবুও আমেরিকার সংবাদ মাধ্যম, সভা, পরিষদ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং সাধারন জনগন আমাদের ব্যাপকভাবে সমর্থন দিয়েছিল কারন আমাদের দাবী সঠিক ছিল এবং বিশ্ববাসী পাকিস্তানের গণহত্যার বিষয়টি জেনেছিল। কিছু আমেরিকান, যারা বাংলাদেশে ছিল তারা নিজেদের মধ্যে একটি দল বানায় এবং ওয়াশিংটনে “বাংলাদেশ তথ্য কেন্দ্র” স্থাপন করে। এটা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত যে এদের মধ্যে ড. গ্রিনাফ, ড. ডেভিড নালিন, টম ডিনি, আন্না টেইলর উল্লেখযোগ্য। রাজনীতিবিদদের মধ্যে সিনেটর চার্চ, সিনেটর কেনেডি, সিনেটর পারসেই, সিনেটর সাক্সবি, কংগ্রেসম্যান গাল্লাহার তারা আমাদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং আমাদের কাছে যুদ্ধের কারণগুলো শুনে তারা এটাকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছিলেন। তাঁদের অফিসটা আমাদের ‘ক্যাম্পেইন সেন্টার’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিলো। সেই সাক্সবে-চার্চ সংশোধনীর মাধ্যমে পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্য বন্ধ করা হয়েছিল।
আমেরিকার প্রত্যেক শহরে অবস্থিত বাঙালিরা নিজেদের মধ্যে সংস্থা গড়ে তুলে এবং তহবিল গঠন করা সহ যতভাবে সাহায্য করা যায়, তা করেছিল। এফ.আর. খান, বিখ্যাত স্থপতি, তিনি শিকাগোর ‘বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’-এর প্রধান হিসেবে কাজ করেছিলেন, তাঁর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দূতাবাসের জন্য সকল প্রকার রাজনৈতিক বাধা দূর করার লক্ষে মন্ত্রী এনায়েত করিম, কাউন্সিলর কিবরিয়া, অর্থনৈতিক কাউন্সিলর মুহিত, প্রেস কাউন্সিলর আবু রুশদি মতিন উদ্দিন এবং সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী সকল অফিশিয়াল প্রোটকল ভেঙে নির্বাচনী প্রচারণার মতো করে ব্যাপক লবিং করেন।
১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ আসলো। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আত্নসমর্পন করলো। বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হল। আমরা শেখ মুজিবকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। অবশেষে তিনি আমাকে ১৯৭২ সালের ১লা জানুয়ারী টেলিফোন করলেন। আমি উনার সাথে ফিরতে পারি নি। কয়েকদিন পর ফিরেছিলাম। মুক্তির সুবাতাস বইছিলো। এ যেন এক নতুন জীবনের অনুভূতি।
এরপর বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা হওয়াটা একটা স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। উনি আমাকে উনার উষ্ণ আলিঙ্গনে টেনে নিয়েছিলেন। পরে তিনি আমাকে তাঁর মন্ত্রীসভার বাণিজ্য এবং বৈদেশিক বানিজ্য মন্ত্রী হিসেবে যোগদান করতে অনুরোধ করেছিলেন।
-এম. আর. সিদ্দিকী
মার্চ, ১৯৮৪