বসুরহাটের যুদ্ধ
বসুরহাট ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ থানায় অবস্থিত। সেপ্টেম্বর মাসে এখানে পাকিস্তানি বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনী উভয়ের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়। বিস্তারিত জানা সম্ভব হয় নি।
পিটিআই-এর যুদ্ধ
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ২ নম্বর সেক্টরের অধীনস্থ ৪টি জেলার মাঝে একটি হলাে নােয়াখালী। নােয়াখালী পৌরসভা ভবনের পাশেই অবস্থিত পিটিআই। পিটিআই সুধারাম থানার অন্তর্গত। এ যুদ্ধটি ৬ ডিসেম্বর শুরু হয় এবং ৭ ডিসেম্বর শেষ হয়। জনসাধারণের মতামত থেকে জানা যায়, এ যুদ্ধটি শেষ হয়। ৭ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় । পিটিআই-এ রাজাকাররা তাদের ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। মূলত সেখান থেকেই তারা নােয়াখালী শহর নিয়ন্ত্রণ করতে যা মুক্তিবাহিনীর জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল। তাই এদেরকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করা মুক্তিবাহিনীর জন্য একান্ত প্রয়ােজন হয়ে পড়ে। মূলত এ যুদ্ধ দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। প্রথম পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী চারদিক থেকে ধীরে ধীরে শহরে প্রবেশ করে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে তারা পিটিআই এলাকা। আক্রমণ করে। যুদ্ধ শুরুর পূর্বে ৪ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর ক্রমাগত আক্রমণের কারণে পাকিস্তানি স্থল ও মিলিশিয়ারা ধীরে ধীরে কুমিল্লা অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। এতে করে রাজাকাররা মনে করে, পাকিস্তানিরা বােধহয় কোনাে বড় ধরনের অপারেশনে বের হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সাের্সের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে তারা বুঝতে পারে যে পাকিস্তানি সৈন্যরা স্থান ত্যাগ করছে। মুক্তিবাহিনী এ সুযােগটি হাতছাড়া করতে চায়নি। তৎক্ষণাৎ ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম প্রতিটি থানা সদরের অধিনায়ককে আদেশ দেন, যে-কোনাে মূল্যেই হােক কেন তাদেরকে থানা সদর দখল করে ধীরে ধীরে জেলা সদরের দিকে অগ্রসর হতে হবে। তিনি এ আদেশ দেন ৫ ডিসেম্বর। তিনি আরও বলেন, ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা সদর নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসতে হবে। সেই নির্দেশমতাে মুক্তিবাহিনী খুব অল্প সময়ের মাঝে তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে।
ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম পিটিআই দখলের জন্য জেলা সদরের সব। মুক্তিবাহিনীর ওপর দায়িত্ব দেন। মুক্তিবাহিনী পিটিআই আক্রমণ করতে এসে যাত্রাপথে মাইজদী কোর্ট স্টেশন রাজাকার ক্যাম্প এবং দত্তেরহাট রাজাকার ক্যাম্প গুড়িয়ে দেয়। পিটিআই আক্রমণের নেতৃত্ব দেন পশ্চিম অঞ্চলের সি জোনের অধিনায়ক আদমজী শ্রমিকনেতা মােহাম্মদ উল্লাহ ও আদমজী চটকলের। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীদের জনৈক নেতা। সাথে সহকারী হিসেবে নায়েক মােশারফও ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত আনসার, সামরিক কর্মকর্তা এবং পুলিশের অনেকেই। এ সম্মিলিত বাহিনী প্রথমে জামে মসজিদের পশ্চিমে অবস্থিত রেনু মিয়া কন্ট্রাক্টরের বাড়িতে এসে মিলিত হয়। পরবর্তী সময় এ বাড়ি থেকে শুরু করে মাইজদী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সম্পূর্ণ দখল করে ফেলে এবং অন্যদিকে বিভিন্ন থানা সদরের মুক্তিযােদ্ধারা শহরের বাকি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলেন।
৬ ডিসেম্বর রাত ৩টা থেকে আক্রমণ শুরু হয়। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সুবিধার নয় বুঝতে পেরে বেশ কিছু রাজাকার সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আর যারা সেখানে থেকে যায়, তারা সারারাত ধরে গুলিবর্ষণ করে। সেই স্থানটি ছিল যথেষ্ট সুরক্ষিত। ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম এ খবর পেয়ে তার একটি দল নিয়ে এসে মুক্তিবাহিনীর সাথে যােগদেন এবং তিনি মটার নিয়ে গােলাবর্ষণ শুরু করেন পিটিআই-এর ওপর। একপর্যায়ে পিটিআই-এর ভেতর থেকে সব রাজাকার বের হয়ে আত্মসমর্পণ করে। এভাবেই পিটিআই এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। পিটিআই-এর যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর জয় হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধাদের দুজন। আহত হন। একজন হলেন গ্রামের মাে. আমিনুল হক। তার গলায় গুলি লাগায় তিনি তাঁর কণ্ঠস্বর হারিয়ে ফেলেন এবং রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মাে. গােলাম মােস্তফার পেটে গুলি লাগে। অন্যদিকে প্রায় ১২জন রাজাকার মারা যায়। পিটিআই-এর যুদ্ধ জয়ের ফলেই নােয়াখালী সদর পুরােপুরি শত্রুমুক্ত হয়। পরবর্তী সময় পিটিআই-এর প্রবেশদ্বারে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়।
সােনাইমুড়ির অ্যামবুশ
নােয়াখালী জেলার একটি উল্লেখযােগ্য স্থান হলাে সােনাইমুড়ি। মুক্তিযুদ্ধের । সময় যে কয়টি স্থানে যুদ্ধ হয়েছিল, সেগুলাের মাঝে সােনাইমুড়ি অন্যতম। সােনাইমুড়ি থেকেই নােয়াখালীর স্বাধীনচেতা মানুষের নবজাগরণ শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীকে রুখে দেওয়ার জন্য। সােনাইমুড়িতে পাকিস্তানি বাহিনী বারবার পরাস্ত হতে থাকে। একপর্যায়ে। তারা মুক্তিযােদ্ধাদের পুরােপুরি ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য সােনাইমুড়িতে বেশ কয়েকটি ঘাঁটি স্থাপন করে। এগুলােয় নিয়মিত বিভিন্ন অস্ত্র ও গােলাবারুদ ও অন্যান্য যুদ্ধসরঞ্জাম এনে পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। অন্যদিকে সুবেদার লুম্ফর রহমান যে-কোনাে মূল্যে তাদের এ অবাধ বিচরণ প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে পাকিস্তানি বাহিনী পরবর্তী সময় এত সহজেই তাদের রসদ ও সরঞ্জামাদি আনা নেয়া না করতে পারে। পরিকল্পনা মতােই সুবেদার লুৎফর রহমান সিপাহি শাহজাহানকে সঙ্গে নিয়ে যে অবস্থানে অ্যামবুশ করা হবে, সেটি পর্যবেক্ষণ করেন। এ কাজের জন্য। সােনাইমুড়ি আউটার সিগন্যালটিই বেছে নেন। ২৯ এপ্রিল নায়েক শফি ১টি সেকশন নিয়ে আউটার সিগন্যালে অবস্থান নেন। শত্রু অ্যামবুশের মাঝে চলে আসার পর পরই মুক্তিযােদ্ধারা ফায়ার শুরু। করেন এবং ৩টি গাড়ি তাঁদের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে পর্যায়ক্রমে ফায়ার শুরু হয়। এরফলে শত্রু পক্ষের সামনের গাড়িটি অকেজো হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও পাকিস্তানি বাহিনী তাদের পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে ফায়ারিং চলার পর মুক্তিবাহিনীর গােলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে তারা। সেখান থেকে চলে আসে। সােনাইমুড়ি অ্যামবুশে পাকিস্তানি বাহিনীর একজন গুরুতর আহত হয়। অন্যদিকে, পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে ১জন বৃদ্ধ ও অপর একটি ছেলে শহিদ হন।
বিপুলারের অ্যামবুশ
বিপুলার ইউনিয়ন নােয়াখালী সদর থানায় অবস্থিত। এপ্রিলের দিকে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান ধীরে ধীরে দৃঢ় ও শক্তিশালী হতে থাকে। তঙ্কালীন কয়েকজন ছাত্রনেতা এ দেশের সহজ সরল জনগণের মনে দেশপ্রেমের দাবানল। জাগিয়ে তােলেন। এ মুক্তিযুদ্ধে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ হয় বিপুলারে। এর মাঝে একটি হলাে বিপুলার স্টেশনের অ্যামবুশ। মার্চ মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানি বাহিনী ধীরে ধীরে নােয়াখালী সদর পুরােপুরি তাদের আয়ত্তে নিয়ে আসে। তারা বিপুলার স্টেশনের পার্শ্ববর্তী রাস্তা দিয়ে ক্রমাগত রশদ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি আনা নেয়া শুরু করে। তাদের এ অবাধ বিচরণ বন্ধ করা মুক্তিবাহিনীর জন্য একান্ত জরুরি হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সুবেদার লুৎফর রহমান গােয়েন্দা সূত্রে জানতে পারেন যে পাকিস্তানি বাহিনীর ২টি গাড়ি বিপুলাশরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তৎক্ষণাৎ তিনি তার কয়েকজন যােদ্ধাসহ বিপুলার স্টেশনের দক্ষিণ পাশে অ্যামবুশ করার সিদ্ধান্ত নেন। রাতের মাঝেই মুক্তিবাহিনী অবস্থান গ্রহণ করে ফেলে। ২৬ এপ্রিল সকালের দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর ৬জন সিগন্যালম্যানসহ ২টি গাড়ি যখন স্টেশনের কাছাকাছি চলে আসে, তখনই মুক্তিযােদ্ধারা | এলএমজি ও রাইফেলের সাহায্যে ফায়ার শুরু করলে একটি গাড়ি সাথে সাথেই নষ্ট হয়ে যায়। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ২জন সৈন্য গুরুতর আহত হয়। কিন্তু আরেকটি গাড়ি ধ্বংস না হওয়ায় ঐ দুজনকে নিয়ে খুব দ্রুত পাকিস্তানি বাহিনী পালিয়ে যায়। এ অ্যামবুশের সময় মুক্তিবাহিনী ২টি রাইফেল উদ্ধার করে। এ অ্যামবুশের পর থেকে এ এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর অবাধ যাতায়াত অনেকাংশে কমে যায়।
চাপরাশির হাটের যুদ্ধ
চাপরাশির হাট নােয়াখালী জেলায় সুধারাম থানায় ১৪ নম্বর ইউনিয়নে অবস্থিত। এ যুদ্ধটি সংগঠিত হয় রাজাকার ও মুক্তিযােদ্ধাদের মাঝে। রাজাকাররা তখন চাপরাশির হাটে অবস্থান নেয়। যুদ্ধটি সংঘটিত হয় ১৩ সেপ্টেম্বর এবং তা রাত ১টা হতে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। রাজাকাররা মুক্তিযােদ্ধাদের বিভিন্ন তথ্য পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে সরবরাহ করছিল এবং গ্রামবাসীদের কাছ থেকে ধনসম্পদ লুট করছিল। কেউ তাদের এ কার্যকলাপে বাধা দিলেই তাকে হত্যা করা হতাে। রাজাকার ক্যাম্পটি গ্রামবাসীর জন্য রীতিমতাে বিভীষিকা হয়ে দাঁড়ায়। সেই মুহূর্তে তাদের এ ক্যাম্পটি ধ্বংস করে দেওয়া মুক্তিবাহিনীর জন্য একান্তই জরুরি হয়ে পড়ে। নােয়াখালী জেলার ডি জোনের অধিনায়ক সুবেদার ছামসুল হককে নির্দেশ দেন, ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাপরাশির হাট এলাকা রাজাকারমুক্ত করার জন্য। তখন চাপরাশির হাট এলাকা রাজাকারদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রাজাকাররা মূলত দিনের বেলায় তাদের কার্যকলাপগুলাে সমাধা করত এবং রাতের বেলা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের হতাে না। তাদের ধারণা ছিল, রাতের বেলা মুক্তিবাহিনী তাদের ওপর আক্রমণ করার সাহস পাবে না। তাই তারা কোনাে প্রহরী ছাড়াই সেখানে অবস্থান নেয়। সুবেদার ছামসুল হক এ সুযােগটিই কাজে লাগান। তিনি তার প্রায় ৩০জন যােদ্ধা নিয়ে রাজাকারদের অবস্থানটি ঘিরে ফেলেন এবং তিনি ফায়ার করার আদেশ দেন। তার আদেশ মতােই মুক্তিযােদ্ধারা রাজাকারদের ওপর হামলা করেন। রাজাকাররা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের ৩জন মারা যায়। কিন্তু তারা তবুও আত্মসমর্পণ করতে রাজি ছিল না।
তারাও তাদের সাধ্যমতাে পাল্টা জবাব দিতে থাকে মুক্তিযােদ্ধাদের গােলাবর্ষণের। মুক্তিযােদ্ধারাও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন, যে করেই হােক এ রাজাকারদের শেষ করে ফিরবেন তারা। এর মাঝেই একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন একজন সাহসী মুক্তিযােদ্ধা। হঠাৎ করেই তিনি রাজাকারদের গুলির আঘাতে গুরুতর আহত হন। কালবিলম্ব না করে তাকে সেই স্থান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তী সময় তিনি মুক্তিযােদ্ধা ও গ্রামবাসীর অক্লান্ত সেবায় বেঁচে যান। এরপর মুক্তিযােদ্ধারা আক্রমণ আরও জোরদার করেন। এ যুদ্ধে আনুমানিক ২০জন রাজাকার নিহত হয় কিন্তু মুক্তিযােদ্ধার কোনাে ক্ষতি হয়নি। কারণ মুক্তিযােদ্ধারা যে গুপ্তাশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই অবস্থানটি ভালােভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি রাজাকাররা। তাই মুক্তিযােদ্ধারা সেই অবস্থান থেকে খুব সহজেই রাজাকারদের ওপর আক্রমণ করতে সক্ষম হন। ১৫ থেকে ১৬জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। তৎক্ষণাৎ তাদের হত্যা করা হয়।
ফেনাকাটা পুলের সংঘর্ষ
চৌমুহনী চন্দ্রগঞ্জের রাস্তার ওপর অবস্থিত ফেনাকাটার পুলটি। মূলত পাকিস্তানি বাহিনীর বিভিন্ন যানবাহনগুলাে এ পথেই যাতায়াত করতাে, যা চৌমুহনী ও চন্দ্রগঞ্জের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনী এ রাস্তাটি দিয়ে অবাধে চলাচল করতে পারত না। ফলে মুক্তিবাহিনীর জন্য এ রাস্তায় ফাঁদ পেতে পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচলে বিঘ্ন ঘটানাে খুব জরুরি হয়ে পড়ে। চৌমুহনী চন্দ্রগঞ্জের রাস্তায় যখন পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচল হচ্ছে, এ অবস্থায় সুবেদার লুত্যর রহমান সিদ্ধান্ত নেন, পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচলের পথে অ্যামবুশ (ফাদ) করবেন। কিন্তু মােক্ষম সুযােগ মিলছিল না। অবশ্য তাকে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ৬ মে তিনি খবর পান, পাকিস্তানি বাহিনীর রসদবােঝাই ৩টি ট্রাক চন্দ্রগঞ্জ থেকে চৌমুহনীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তৎক্ষণাৎ সুবেদার লুৎফর রহমান নায়েক শফির একটি সেকশনকে অ্যামবুশ করার জন্য। পাঠিয়ে দেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর ৩টি পাকিস্তানি ট্রাক মুক্তিবাহিনীর দৃষ্টিগােচর হয়। | মুক্তিবাহিনী পূর্বপরিকল্পনা মতাে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা করে। এর ফলে পাকিস্তানি বাহিনী কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনীর যােদ্ধারা পাল্টা জবাব দেওয়ার পূর্বেই তাদের কয়েকজন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পরমুহূর্তেই তারা তাদের ভারী অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। ফেনাকাটা পুলের সংঘর্ষের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ কয়েকজন সৈন্য নিহত হয় এবং তাদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সুবেদার লুঙ্কর রহমান তার সৈন্যদের সাহায্যে শহিদদ্বয়ের দাফনের ব্যবস্থা করেন। চৌমুহনী হােটেল জায়েদীর মালিক এবং পাদিপাড়ার নূর মােহাম্মদ সাহেবের তত্ত্বাবধানে তাদের পাদিপাড়ায় সমাধিস্থ করা হয়। এ যুদ্ধের পর থেকে চৌমুহনী চন্দ্রগঞ্জের রাস্তায় পাকিস্তানি বাহিনী আর অবাধে চলাচল করতে পারে নি।
বগাদিয়ার যুদ্ধ-১
বগাদিয়া বেগমগঞ্জের একটি ইউনিয়ন এবং বর্ধিষ্ণু অঞ্চল। বগাদিয়ায় দ্বিতীয়বার যে যুদ্ধটি হয়েছিল মূলত সেটি দু’ধরনের। প্রথমত মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর একটি পিকআপ অ্যামবুশ করতে চেয়েছিল কিন্তু অ্যামবুশ করার পর সেটি খণ্ডযুদ্ধে পরিণত হয়। বগাদিয়া যুদ্ধটি সংগঠিত হয়েছিল ৯ মে। ফেনাঘাটার যুদ্ধের পর জনসাধারণ ও মুক্তিযােদ্ধাদের মাঝে বেশ সাহসের সঞ্চার হয়। বগাদিয়ায় পূর্বেও বেশ কয়েকবার পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে যুদ্ধ হয়। তারপরও পাকিস্তানি বাহিনীকে এ এলাকা থেকে পুরােপুরি সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। বরং প্রতিদিনই প্রচুর সৈন্য বেগমগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল পিকআপ বা ভ্যানে করে। তাদের এ অবাধ বিচরণ রােধ করা মুক্তিবাহিনীর জন্য সে মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। সুবেদার লুম্ফর রহমান বগাদিয়ায় অবস্থানকালে খবর পান, চৌমুহনীতে পাকিস্তানি বাহিনীর তৎপরতা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। বগাদিয়ায় অবাধে পাকিস্তানি বাহিনী প্রবেশ করছে। এ দুটি এলাকার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল সুবেদার লুত্যর রহমানের ওপর। তিনি স্থির করেন চৌমুহনীর অবস্থা তার পর্যবেক্ষণ করা দরকার। তিনি সুবেদার জাবেদকে সঙ্গে নিয়ে চৌমুহনীর দিকে রওনা দেন। এবং নায়েব সুবেদার ওয়ালীউল্লাহকে বগাদিয়ায় অ্যামবুশ করার দায়িত্ব হন।
সুবেদার লুৎত্যর রহমান চৌমুহনী থেকে ফেরার আগেই নায়েব সুবেদার ওয়ালীউল্লাহ খবর পান, পাকিস্তানি বাহিনীর ১টি পিকআপ কয়েকজন সৈন্য এবং বেশকিছু রসদসহ বগাদিয়ার দিকে আসছে। তিনি সেটিকে অ্যামবুশ করার নির্দেশ দেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বেশকিছু মুক্তিযােদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে একটি অ্যামবুশ সাইট ঠিক করে তিনি সেখানে অবস্থান নেন। যখন পিকআপটি তাদের অ্যামবুশ অবস্থানের মাঝে চলে আসে, তখন তিনি ফায়ার করার আদেশ দেন। মুক্তিবাহিনী একটানা গুলিবর্ষণ শুরু করে। ঘটনাস্থলেই পাকিস্তানিদের গাড়িটি রাস্তায় উল্টে পড়ে যায় এবং তাদের ১জন জেসিওসহ মােট ২জন সৈন্য নিহত হয়। তৎক্ষণাৎ সেখানে আরও ২টি পাকিস্তানি সৈন্যভর্তি পিকআপ এসে উপস্থিত হয় এবং দুই বাহিনীর মাঝে প্রচণ্ড গােলাগুলি শুরু হয়। এরই মধ্যে সুবেদার লুৎফর রহমান তাঁর দল নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে যান এবং নায়েব সুবেদার ওয়ালীউল্লাহর সাথে যােগ দেন। শুরু হয় উভয় পক্ষের আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণ। অবশ্য এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি বাহিনী খুব একটা সুবিধাজনক। অবস্থানে ছিল না। কারণ, তাদের ওপর চতুর্দিক থেকেই আক্রমণ আসতে থাকে। প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা এ যুদ্ধ স্থায়ী হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে অবশেষে পাকিস্তানিরা তাদের আহত ও নিহত সৈন্যদের নিয়ে চৌমুহনীর দিকে চলে যায়। এ যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা আর বগাদিয়ার দিকে আসেনি। যুদ্ধের সময় নায়েব সুবেদার ওয়ালীউল্লাহর কপালে গুলি লাগে। তিনি এ যুদ্ধে অসামান্য সাহস ও বীরত্বের প্রমাণ দেন। সেদিনের পর থেকে বগাদিয়া পুরােপুরি শত্রুমুক্ত হয়। এরপর বগাদিয়ায় মুক্তিবাহিনী সেখানকার কিছু সাধারণ মানুষকে রণকৌশল শিখিয়ে মুক্তিযােদ্ধা হিসেবে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেন। মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য।
কাজীরহাটের যুদ্ধ
নােয়াখালী জেলার সেনবাগ থানার অন্তর্গত কাজীরহাট বাজার। কাজীরহাট বাজারে পাকিস্তানি বাহিনী, রাজাকার ও মিলিশিয়া বাহিনীর বেশ কয়েকটি ক্যাম্প ছিল। কাজীরহাট বাজারে পাকিস্তানি বাহিনীর একক আধিপত্য ছিল। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সুবেদার লুৎফর রহমান সেটি প্রতিহত করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। | ২২ আগস্ট ডা. মােহাম্মদউল্লাহর কমান্ডে কাজীরহাটে মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রায় ২৫০জন মুক্তিযােদ্ধা, মিলিশিয়া ও রাজাকার এখানে মুক্তিযােদ্ধাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। সকাল ৯টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ যুদ্ধ স্থায়ী হয়। আনুমানিক ১২৫জন মুক্তিযােদ্ধা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এ যুদ্ধে রহিমসহ ৫জন মুক্তিযােদ্ধা শহিদ হন। অন্যদিকে মুক্তিযােদ্ধা, রাজাকার ও মিলিশিয়াদের পক্ষে আনুমানিক ৩০ হতে ৩৫জন নিহত হয়।
গজারিয়ার যুদ্ধ
নােয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানায় গজারিয়া অবস্থিত। ৪ জুলাই ভােররাতে পাকিস্তানি বাহিনী আর্টিলারিসহ গজারিয়া গ্রামের ওপর আক্রমণ করলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সুবেদার অলিউল্লাহ, হাবিলদার মন্তাজ, আবদুল হামিদ ও আবদুস সহিদসহ প্রায় শতাধিক মুক্তিযােদ্ধা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সুবেদার লুম্ফর রহমান নিজেই এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উত্তরাঞ্চলে অবস্থানরত মুক্তিযােদ্ধারাও দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে তাকে সহায়তা প্রদান করেন। বেলা ২টা পর্যন্ত এ যুদ্ধ অব্যাহত থাকে এবং গােলাগুলির আঘাতে রাস্তার দুই পাশের গাছগুলাে পর্যন্ত ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী সাফল্যলাভে ব্যর্থ হয়ে টেকনিক্যালে ফিরে আসে। এ যুদ্ধে আনুমানিক ৫জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং ৩জন মুক্তিযােদ্ধা আহত হয়। মুক্তিবাহিনীর ফলপ্রসূ আক্রমণের ফলে অত্র এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আধিপত্য অনেকাংশে দুর্বল হয়ে পড়ে।
সােনাইমুড়ি-বপুলারের যুদ্ধ
বেগমগঞ্জ থানায় সােনাইমুড়ি রেল স্টেশন অবস্থিত। সুবেদার লুৎফর রহমান। ২১ এপ্রিল ভােরে পাকিস্তানি সেনাদের পুনরায় অগ্রসর হবার খবর পান। এর আগে ২০ এপ্রিলের যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধারা অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তা ছাড়া তাদের গােলাবারুদেরও ঘাটতি ছিল। এ অবস্থাতেও পাকিস্তানি বাহিনীর অগ্রগতি রােধ করার সিদ্ধান্ত নেন মুক্তিযােদ্ধারা। সে অনুযায়ী সােনাইমুড়ি রেল স্টেশনের আউটার সিগন্যালের কাছাকাছি মুক্তিবাহিনীর অ্যামবুশ পার্টি অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ পর পাকিস্তানি বাহিনী স্টেশনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পাকিস্তানি বাহিনী ৩ ইঞ্চি মর্টার ও মেশিনগান নিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর (বালুচ রেজিমেন্টের) বেশ কয়েকজন সৈন্য হতাহত হয়। ইতােমধ্যে মুক্তিযােদ্ধাদের গােলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে সেখান থেকে অন্যত্র চলে যান। পাকিস্তানি বাহিনী সােনাইমুড়ি দখল করে এরপর চৌমুহনীর দিকে অগ্রসর হয়। পরে আবিরপাড়ায় মুক্তিযােদ্ধাদের একটি গােপন বৈঠক ডাকা হয় পরবর্তী অপারেশনের পরিকল্পনার জন্য।
কাদিয়ার যুদ্ধ
বেগমগঞ্জ থানাধীন কাদিয়ায় এপ্রিলের শেষের দিকে পাকিস্তানি সৈন্যদের সাথে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ স্থানটির নাম বারবার উচ্চারিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমগুলাে এ স্থানের চিত্রসংবলিত যুদ্ধসংবাদও প্রচার করেছে। সেই সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে এ স্থানটির নাম বােগদাদ (ভয়ংকর স্থান) হিসেবে পরিচিত ছিল। এর আশপাশের সমস্ত ঘরবাড়ি পাকিস্তানি বাহিনী জ্বালিয়ে দেয়, এমনকি গাছপালাগুলাে পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। তবু তারা রুখতে পারেনি মুক্তিযােদ্ধাদের। ৪২টি গেরিলা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে এ জায়গায়। মতান্তরে, এ স্থানে যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনীর আনুমানিক দুই শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। তাদের প্রায় ২২টি যানবাহন আর সড়ক পরিবহন সংস্থার ১টি বাস ধ্বংস হয় । আংশিক ক্ষস্তি যানবাহনের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩০টির মতাে। কৌশলগত কারণ এবং প্রায় জনশূন্য অবস্থানগত কারণে মুক্তিযােদ্ধারা এ স্থানটিকে আদর্শ যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন। জনপদগুলােয় যুদ্ধ সংঘটিত হলে পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক গণহত্যা চালাতে পারে এ আশঙ্কায় মুক্তিবাহিনী এ স্থানটিকে বেশি প্রাধান্য দেয়। অন্যদিকে দু’দিক থেকে হামলা করার মতাে উপযুক্ত স্থান থাকায় যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবেও স্থানটি গুরুত্ব পায়। এ গুরুত্বপূর্ণ ও সফল যুদ্ধগুলাে পরিচালনা করেন।
নােয়াখালীর মুক্তিযুদ্ধের দুই কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব সুবেদার লুত্যর রহমান ও প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা রুহুল আমিন ভূঁইয়া। বগাদিয়া মুক্তিবাহিনীর ক্রমবর্ধমান গেরিলা অপারেশন পাকিস্তানি বাহিনীর নােয়াখালী-কুমিল্লার মধ্যে অবাধ যাতায়াতকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছিল, যে কারণে পাকিস্তানি বাহিনী এবং অন্যদিকে মুক্তিযােদ্ধারাও একে রক্ষায় অপরিসীম গুরুত্বসহ বিবেচনা করেন। মে মাসের প্রথম থেকে কাদিয়া দখলের চেষ্টা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। নায়েক সিরাজ এক প্লাটুন যােদ্ধা নিয়ে কাদিয়া সেতুর কাছে এপ্রিলের শেষ দিকে অ্যামবুশ করেন। ১ মে সেতু দিয়ে ৩টি ৩ টনের লরি কিছু দূরত্ব বজায় রেখে অগ্রসর হওয়ার সময় নায়েক সিরাজ তার দল নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালান। প্রথম ও শেষ গাড়িটির ওপর গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই ১টি গাড়ি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়। এখানে প্রায় ১৫-২০জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। পাকিস্তানি সেনারা ৩ ইঞ্চি মর্টার ও মেশিনগান থেকে অবিরাম গুলিবর্ষণ করে। দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চলার পর একপর্যায়ে নায়েক সিরাজ তার দলকে নিয়ে পিছু হটে যান। পাকিস্তানি সেনারা এখানে কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধা হাবিলদার নুরুল আমিন গুরুতর আহত হন। বগাদিয়ায় পুনরায় যুদ্ধ হয় ৯ মে। নায়েব সুবেদার ওয়ালিউল্লাহ ঐদিন পাকিস্তানি বাহিনীর ১টি পিকআপ ভ্যানের ১জন অফিসারসহ ৬জন পাকিস্তানি সৈন্যের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের ২জনকে হত্যা করতে সক্ষম হন। অবশ্য পরে পাকিস্তানি বাহিনীর ২টি গাড়ি ঘটনাস্থলে চলে আসে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়।
এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ওয়ালিউল্লাহর দল ছাড়াও সুবেদার লুৎফর রহমানের দল অংশ নেয়। প্রায় ৪-৫ঘণ্টা গুলিবিনিময় হয়। একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে অবশেষে পাকিস্তানিরা হতাহত সৈন্যদের নিয়ে চৌমুহনীর দিকে চলে যায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধা সুবেদার ওয়ালিউল্লাহ আহত হন। ১৯ মে কাদিয়ায় পুনরায় সংঘর্ষ হয়। ২০জন পাকিস্তানি সৈন্য বেবিট্যাক্সি দিয়ে। লাকসাম যাওয়ার সময় বগাদিয়ায় মুক্তিযােদ্ধাদের পাতা মাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়। ২৮ জুনের বগাদিয়া যুদ্ধে প্রায় ৫০জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। প্রতিশােধ নেয়ার জন্য পাকিস্তানি বাহিনী কাদিয়ায় ব্যাপক গণহত্যা চালায়। আশপাশের ৫-৬টি গ্রাম থেকে প্রায় ৮৩জন নিরীহ লােক ধরে এনে হত্যা করে। পরবর্তীকালে অর্থাৎ অক্টোবর মাসে তারা আরও ব্যাপক গণহত্যা চালায় সােনাইমুড়ি-লাকসাম সড়কের কাঠালিতে। মুক্তিযােদ্ধাদের পুঁতে রাখা মাইনের বিস্ফোরণে পাকিস্তানি বাহিনীর ২টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বিস্ফোরণে ৯জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হলে প্রতিশােধস্বরূপ তারা গ্রামের ১৭জনকে হত্যা করে।
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড