আর দ্বিধা নয়, বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দিন
বাঙলাদেশের অভ্যুদয় (২৫/২৬ শে মার্চ) এবং পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আত্মপ্রকাশ (১৭ ই এপ্রিল) বাস্তবিকই চলতি ইসিহাসের এক বিস্ময়কর ঘটনা। যে অভাবনীয় পরিবেশে এর আবির্ভাব এবং যে রক্তঝরা ইতিহাসে এর জয়যাত্রা শুরু হয়েছে তার তুলনামূলক নজির পাওয়া যাবে না। এর ফলে পাকিস্তানের ৫৪ শতাংশ জনসাধারণ (অর্থাৎ, গণতান্ত্রিক সংখ্যাধিক্যে)—১৫ শতাংশ এলাকায় নতুন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। অর্থাৎ, পাকিস্তান দুটি সম্পূর্ণভাবে পৃথক ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে গেল। চির-পরিচিত পাকিস্তানের অপমৃত্যু হলাে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্যে গুরুতর পরিবর্তনের সূত্রপাত হলাে বাংলাদেশ যেন এশিয়ার অচলায়তন ইতিহাসে এক হঠাৎ আলাের ঝলকানি। অনেকেরই চোখ স্বাভাবিক কারণেই ধাঁধিয়ে গেল। এর অর্থ ও মূল্যায়ন প্রসঙ্গে শুরু হলাে প্রশ্ন, অনুসন্ধান ও পবেষণা। এই ঘটনা প্রবাহে যে দেশ সবচেয়ে বেশী আলােড়িত হলাে সেটি নিঃসন্দেহে এই ভারত, বাংলাদেশকে তিন দিক থেকে উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম—যেন আঁচল দিয়ে ঘিরে রেখেছে। সুতরাং এর রূপান্তর ও সমস্যাবলী ভারতের উপর গভীরভাবে রেখাপাত করেছে এবং করতে বাধ্য। বাংলা দেশের নবজাগরণ যেন ভারতর্ষের নবজাগরণও ত্বরান্বিত করে চলেছে। যে কোনও দিক থেকে এই যুগান্তকারী ঘটনাকে বিশ্লেষণ কর। হােক না কেন, এর সর্বাত্মক মঙ্গলজনক প্রতিফল সহজেই চোখে পড়বে এবং এর থেকে সব চেয়ে বেশী লাভবান হবে ভারতবর্ষ। এই কারণেই বাংলা দেশ সম্মন্ধে, বিশ্বের অপরাপর রাষ্ট্রের তুলনায়, ভারতবর্ষের দায় দায়িত্ব অনেক বেশী। এর স্বীকৃতি দানের দাবীও ঠিক এই ঐতিহাসিক কারণেই ভারতবর্ষ এত সােচ্চার হয়ে উঠেছে আজ।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ৫ মে ১৯৭১