দাঙ্গাবাধাতে চর তৎপর
(বিশেষ প্রতিনিধি)
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের খবর ইয়াহিয়া সরকার পশ্চিমবঙ্গ আসাম ও ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাবার ষড়যন্ত্র আটছেন। আওয়ামী লীগের এক দায়িত্বশীল নেতা আমাদের বলেন, দাঙ্গা বাঁধাবার জন্য পাকিস্তানী চরেরা সীমান্তের দুই পারেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অতএব সীমান্তের দুই পারের মানুষেরই এ সম্পর্কে হুশিয়ার থাকা দরকার। ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণের প্রতি ভারতীয় জনগণের মনে যে সহানুভূতি, সমবেদনা ও সাহায্য দানের ইচ্ছা জেগে উঠেছে, এটা বিনষ্ট করতে পারলে ভারত থেকে বেসরকারি স্তরে যে সাহায্য যাচ্ছে তা বন্ধ হয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এইভাবে তাদের মনােবল ভেঙ্গে দেওয়া যাবে বলে পাক সরকার মনে করছেন।
দ্বিতীয়ত ভারতে দাঙ্গা বাধাতে পারলে, বহির্বিশ্বে ইয়াহিয়া সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার দায়ে যে জনমত ক্রমশ দানা বেধে উঠছে, তার দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে সুবিধা হবে। ওয়াকিবহাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইয়াহিয়ার সৈন্যদের নৃশংস অত্যাচারের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে যেসব শরণার্থী ভারত সীমান্তে চলে আসছেন, ইয়াহিয়া সরকার নিযুক্ত ভাড়াটে চরেরা পথিমধ্যে হিন্দু, মুসলমান নির্বিশেষে তাদের উপর লুটতরাজ চালাচ্ছে এবং সেইসব চরেরাই আবার ভারতে ঢুকে ‘হিন্দু নির্যাতনের কাহিনী প্রচার করে হাওয়া গরম করে তােলবার চেষ্টা করছে। মুক্তি ফৌজের হাতে এইসব চর কিছু কিছু ধরা পড়ায় এই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছে। কয়েক জায়গায় মুক্তি ফৌজ এইসব চরের প্রাণদণ্ড দিয়েছে। তবে এবার জনমত এত সচেতন যে পাক সরকারের এই পুরাতন খেলা’ এখনও পর্যন্ত ফলপ্রসু হয়নি।
পাক ফৌজের হাতে আহত হাসপাতালে
পাক হানাদারদের গুলিতে আহত বাংলাদেশের চার ব্যক্তিকে শনিবার রাত দশটায় কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের নাম সর্ব শ্ৰী মহেন্দ্রনাথ বর্মন (২৫), আবদুল হােসেন (২০), আবদুল হামিদ (২০) ও আবদুল মান্নান (২০)। আহত হওয়ার পর প্রথমে ওঁদের বনগাঁ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর নীলরতনে পাঠান হয়।
Reference:
২৫ এপ্রিল ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা