You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.25 | আনােয়ারা থানা কমপ্লেক্স অপারেশন-১ - সংগ্রামের নোটবুক
আনােয়ারা থানা কমপ্লেক্স অপারেশন-১
অবস্থান
বঙ্গোপসাগরের উপকূল থেকে ১০ কিলােমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে এবং কর্ণফুলি নদীর মােহনা থেকে ৮ কিলােমিটার পূর্ব দিকে আনােয়ারা থানার অবস্থান। থানা কমপ্লেক্স থেকে ৪ কিলােমিটার দক্ষিণে শঙ্খ নদী। ৫ কিলােমিটার পূর্ব দিকে চানখালী খাল। থানা কমপ্লেক্সের ৩০০ গজ উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত ছিল আনােয়ারা প্রাইমারি স্কুল এবং ৩০০ গজ উত্তর দিকে অবস্থিত ছিল সার্কেল অফিসারের (সিও) অফিস। থানা কমপ্লেক্স বরকল-আনােয়ারা সড়কের ঠিক পাশেই অবস্থিত। এ থানা থেকে ৬ কিলােমিটার পশ্চিম দিকে অবস্থিত ছিল মেরিন একাডেমি, যেখানে পাকিস্তান নৌবাহিনীর এক দল সদস্য অবস্থান করত। থানা সদরে কিছু বিন্ডিং থাকলেও পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিল বৃক্ষরাজি ও ফসলি জমিতে পূর্ণ গ্রামাঞ্চল। থানা ও এর আশপাশের সবকটি সড়কই ছিল কাঁচা।
উদ্দেশ্য
পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নিরীহ বাঙালি জনগণের ওপর ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা চালানাের পর অধিকাংশ বাঙালি পুলিশ বিদ্রোহ করে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেন। প্রাথমিক প্রতিরােধ ভেঙে পড়ার পর কিছু সংখ্যক বাঙালি পুলিশ পুনরায় তাদের কর্মস্থলে যােগদান করে। পুলিশ সদস্যদের অধিকাংশ বাঙালি হলেও জীবিকানির্বাহের জন্য অনেকে চাকরিরত ছিলেন। আনােয়ারা থানায় ২০-২৫জন পুলিশ কর্মরত ছিল এবং তাদের সাথে প্রায় ৫০জন রাজাকার অবস্থান করত। স্থানীয় রাজাকার ও পাকিস্তানি সহযােগীরা তাদের কর্মতৎপরতায় সহযােগিতা প্রদান করতে থাকে। মুক্তিযােদ্ধাদের তৎপরতার কারণে রুটিনমাফিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে ব্যর্থ হলেও আনােয়ারা থানায় কর্মরত পুলিশ বাহিনী বেশ তৎপরতার সাথেই পাকিস্তানি প্রশাসনের অনেক আদেশ-নির্দেশ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছিল। তা ছাড়া এ থানা ছিল মূলত পাকিস্তানি সহযােগীদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। গ্রামাঞ্চলে মুক্তিযােদ্ধাদের অভিযানের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে তারা এ থানায় আশ্রয় গ্রহণ করত। আনােয়ারা থানা ও এর আশপাশের অঞ্চলের রাজাকারদের এখান থেকেই অস্ত্র ও গােলাবারুদ সরবরাহ করা হতাে। এ অঞ্চলের যােগাযােগ ব্যবস্থা ছিল প্রাচীন। সব সড়ক ছিল কাচা। ফলে পাকিস্তানি বাহিনীকে নৌকায় শঙ্খ নদী হয়ে আনােয়ারায় আসতে হতাে। আনােয়ারা থানাই ছিল তাদের অনুগত একমাত্র প্রশাসনিক কেন্দ্র। নিকটবর্তী মেরিন একাডেমি ও কর্ণফুলি নদীতে পাকিস্তান নৌবাহিনীর তৎপরতা তাদের মনােবল অটুট রাখতে সহায়তা করেছিল।
স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন মুক্তিযােদ্ধা দল আনােয়ারা ও এর পার্শ্ববর্তী। অধিকাংশ এলাকায় তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। কর্মরত পুলিশ আনােয়ারা থানা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মুক্তিযােদ্ধাদের তৎপরতায় তেমন কোনাে প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করতে না পারলেও রাজাকারদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ প্রদানকে মুক্তিযােদ্ধারা নিজেদের ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য করতেন। উপরি-উক্ত কারণ ছাড়া প্রশাসনকে ব্ৰিত করা, মুক্তিযােদ্ধাদের শক্তি প্রদর্শন এবং অস্ত্র ও গােলাবারুদ সংগ্রহের প্রয়ােজনে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
পর্যবেক্ষণ ও তথ্যসহ
সাহিত্যিক মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর ছেলে শাহজাহান ইসলামাবাদী এবং সার্জেন্ট মহিবুল আলম স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধাদের কাছ থেকে এবং নিজেরা পর্যবেক্ষণ করে নিম্নলিখিত তথ্যসংগ্রহ করেন: ক. থানায় আনুমানিক ২০-২৫জন পুলিশ অবস্থান করে এবং তাদের কাছে  এলএমজি ও রাইফেল প্রভৃতি অস্ত্র আছে। খ, থানা কমপ্লেক্সের মধ্যেই ওসির বাসা।  থানার উত্তর ও পূর্ব দিক সংলগ্ন ছিল পুকুর। থানা কমপ্লেক্সের উত্তর ও পূর্ব দিক ঘেঁষে আনােয়ারা-বরকল সড়কের অবস্থান। ঘ, থানার আশপাশের এলাকায় কোনাে বাড়িঘর ছিল না। পুরাে এলাকা। গ্রামাঞ্চল হওয়ায় আড়াআড়িভাবে যাতায়াতে কোনাে অসুবিধা হবে না।
পরিকল্পনা
একটি দলের পক্ষে সফলতার সাথে থানা আক্রমণ করা সম্ভব নয়। তাই আনােয়ারা থানা এবং পার্শ্ববর্তী পটিয়া ও বাঁশখালী এলাকার মুক্তিযোেদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত দল নিয়ে আনােয়ারা থানা কমপ্লেক্সে অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করা হয়। সব দলের সমন্বয়ে গঠিত প্রায় ৪০-৫০জনের অপারেশন দলকে নিমলিখিত মােট ৩টি ভাগে বিভক্ত করা হয়। ১. কভারিং, কাট অফ ও হােল্ডিং পার্টি-১: সার্জেন্ট মহিউল আলমের নেতৃত্বে এ দলে প্রায় ১৫জনের মতাে মুক্তিযােদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। আনােয়ারা প্রাইমারি স্কুলের ১০০ গজ উত্তর-পূর্ব দিকে একটি পুকুর পাড়ের ঝােপের আড়ালে অবস্থান নিয়ে সিও অফিস লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করার দায়িত্ব এ দলকে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল, শত্রুকে বিভ্রান্ত করা। এর ফলে সিও অফিসের অভ্যন্তরে রাজাকারদের যে-কোনাে অপ্রত্যাশিত উপস্থিতি অকার্যকর হয়ে পড়বে। এ দলকে থানা লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করতে নিষেধ করা হয়। কারণ, এতে থানা কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে আক্রমণ। করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযােদ্ধারা আক্রান্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা ছিল।
২. কভারিং, কাট অফ ও হােল্ডিং পার্টি-২: শাহজাহান ইসলামাবাদীর নেতৃত্বে এ দল থানা কমপ্লেক্স থেকে ১৫০ গজ পশ্চিম দিকে আনােয়ারা গ্রামের মধ্যে অবস্থান নিয়ে গুলি বর্ষণ করতে থাকবে। উদ্দেশ্য ছিল, শত্রুকে বিভ্রান্ত এবং পশ্চিম দিক থেকে রাজাকারদের সম্ভাব্য অগ্রসর হওয়াকে বাধা প্রদান করা। তা ছাড়া অপারেশন শেষে অ্যাকশন দল নিরাপদ দূরত্বে চলে যাওয়া পর্যন্ত সম্ভাব্য শত্রুদের বাধা প্রদান করে পরবর্তী সময় নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়া। অ্যাকশন পার্টি: হাবিলদার আবু ইসলামের নেতৃত্বে এ দলের কাজ ছিল। থানার দক্ষিণ দিকে মন্দিরের কাছে পজিশন নেয়া এবং দল নেতা মহিবুল।
আলমের সংকেত মতাে থানার অভ্যন্তরে হামলা করা। ৩টি গ্রুপ মিলে মােট ৪০-৪৫জন মুক্তিযােদ্ধাকে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু অস্ত্র ছিল মাত্র ১টি এলএমজি, ১ট স্টেনগান, ১০টি রাইফেল ও কিছু গ্রেনেড। এলএমজি ও স্টেনগান অ্যাকশন দলকে দেওয়া হয়। কভারিং, কাট অফ ও হােল্ডিং পার্টি-১ ও ২-কে ২টি করে রাইফেল প্রদান করা হয়। অপারেশনে আসার পথ ঠিক করা হয় চন্দনাইশের বরকল সড়ক ধরে। ভাের ৫টায় অধিনায়কের নির্দেশে অপারেশন শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। শাহজাহান ইসলামাবাদী। ও সার্জেন্ট মহিউল আলমের নেতৃত্বে এ অপারেশনের পরিকল্পনা করা হয়।
অপারেশন
রাত ১২টার দিকে বরকল আশ্রয় কেন্দ্র থেকে অধিনায়ক সার্জেন্ট আলমের নেতৃত্বে হেঁটে মুক্তিযােদ্ধাদের ১০-১২জনের ১টি দল আনােয়ারা বারখানই অধিনায়ক আবদুল লতিফের বাড়িতে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। ১০-১২জনের আরেকটি দল আনােয়ারা থানার কোয়ার্টার মাইল পূর্ব পাশে মুক্তিযােদ্ধা স্বপনের পরিচিত সােনা মিয়ার বাড়িতে অবস্থান নেয়। আনােয়ারা কেলিশহর থেকে ১০১২জনের আরেকটি গেরিলা গ্রুপ পূর্ব পরিকল্পনা ও যােগাযােগের ভিত্তিতে সােনা মিয়ার বাড়িতে মিলিত হয়। রাত ১২টার দিকে অপারেশনের দায়িত্বে নিয়ােজিত শাহজাহান ইসলামাবাদী ও সার্জেন্ট মহিউল আলম ঐ ২টি আশ্রয় কেন্দ্রে সবার সাথে যােগাযােগ করেন। রাত ১টার মধ্যে সব কয়টি দল আনােয়ারা থানার ২ কিলােমিটার পূর্ব দিকে একটি গােপন আশ্রয় কেন্দ্রে মিলিত হয়। আক্রমণের সময় ক্ষণ নির্ধারণ করে উপদলগুলােকে স্ব স্ব দায়িত্ব বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সার্জেন্ট মহিউল আলমের নেতৃত্বে কাজী ইদ্রিস, ফেরদৌস ইসলাম, নুরুল ইসলামসহ প্রায় ১০-১২জনের কভারিং, কাট অফ ও হােল্ডিং পার্টি-১ আনােয়ারা প্রাইমারি স্কুলের ১০০ গজ পূর্ব দিকে নির্দিষ্ট স্থান পুকুর পাড়ে অবস্থান নেয়। তাদের সাথে কিছু রাইফেল ও গ্রেনেড ছিল।
শাহজাহান ইসলামাবাদীর নেতৃত্বে আবদুর সবুর, মজিদ, মঞ্জুর আলমসহ আরও প্রায় ১০-১২জনের কভারিং, কাট অফ ও হােল্ডিং পার্টি-২ কিছু রাইফেল ও গ্রেনেডসহ আনােয়ারা থানার পশ্চিম দিকে ১৫০ গজ দূরে আনােয়ারা গ্রামের মধ্যে অবস্থান নেয়। হাবিলদার আবু ইসলামের নেতৃত্বে কাসেম, জব্বার, আইয়ুবসহ প্রায় ১৫২০জনের অ্যাকশন পার্টি আনােয়ারা থানার দক্ষিণ দিকে আনােয়ারা-বরকল রাস্তার পাশ থেকে ১০০ গজ পশ্চিম দিকে একটি মন্দিরের পাশে অবস্থান নেয়। রাত ৪টার মধ্যে সবাই পজিশন নেয়ার কাজ সমাপ্ত করে এবং দল নেতার ফায়ারের আদেশের অপেক্ষায় থাকেন। পূর্বেই সিদ্ধান্ত হয় যে, ভাের ৫টার সময় অধিনায়ক সার্জেন্ট আলমের দল থেকে থানা ও সিও অফিস লক্ষ্য করে ফায়ার ওপেন করা হবে। সাথে সাথে অন্য ২টি গ্রুপও ফায়ার ওপেন করবে। ঠিক ৫টায়। পরিকল্পনা মােতাবেক অধিনায়ক আনােয়ারা থানা ও সিও অফিস লক্ষ্য করে ফায়ার শুরু করলে বাকি গ্রুপ ২টি থেকে ফায়ার শুরু হয়। আনােয়ারা থানা ও রাজাকারের অবস্থানগুলাে থেকেও এলােপাতাড়ি পালটা গুলি হতে থাকে আনােয়ারা স্কুলে কয়েকজন রাজাকার অবস্থান নিয়েছিল। তারা তাদের অবস্থান থেকে অপারেশন দলের ওপর গুলি বর্ষণ করতে থাকে তাদের গুলিতে হাবিলদার আবু ইসলাম হাতে গুলিবিদ্ধ হন তবুও তিনি হামলা বন্ধ করেন নি।
এভাবে প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট গুলি বিনিময়ের এক ফাকে হাবিলদার আবু ইসলাম ও আরও কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা হামাগুড়ি দিয়ে থানার পিছন দিকে পৌছে যান। থানায় অবস্থানরত প্রায় ১০জন পুলিশ (সঠিক সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে)। ও রাজাকার গেরিলাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। থানার অভ্যন্তরে ইবিআরসি’র। ৪জন রিক্রুটের সন্ধান পাওয়া যায়। এদের ১জন অপারেশনের সময় শহিদ হয়। পাকিস্তানি বাহিনী তাদের ধরে নিয়ে এসেছিল। মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে কাজ করার শর্তে তাদেরকে সাথে নিয়ে নেয়া হয়। থানার মধ্যে অবস্থানরত যে-সকল রাজাকার হাতেনাতে ধরা পড়ে, তাদের থানার পাশে পুকুর পাড়ে গুলি করে হত্যা করী হয়। এ অপারেশনে মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে হাবিলদার আবু ইসলামসহ ৩জন গুলিতে আহত হন। তা ছাড়া বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ অপারেশনের ফলে এ এলাকায় রাজাকারদের উৎপাত কমে যায়। রাজাকাররা এ এলাকা ত্যাগ করে আনােয়ারার পশ্চিম সীমান্তে গহিরায় চলে যায়। ঘটনার পরদিন চট্টগ্রাম শহর। থেকে এসে বেশ কিছু পাকিস্তানি সৈন্য আনােয়ারা থানার আশপাশে দোকানপাট ও বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং লুটপাট করে চলে যায়।
বিশ্লেষণ
গেরিলা যুদ্ধের প্রধান নীতি ও উদ্দেশ্য বিবেচনায় এ অপারেশনটি একটি উল্লেখযােগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন। এর লক্ষ্যবস্তুও ছিল যথার্থ। সাফল্যও ছিল। পর্যাপ্ত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গেরিলাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু হিসেবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জনবল ও স্থাপনাকে বিবেচনা করলেও সরঞ্জাম, জনবল ও প্রশিক্ষণের অপ্রতুলতার কারণে সব সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্থাপনা কিংবা জনবলের ওপর গুপ্তভাবে আঘাত সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া বিপথগামী যুবক দ্বারা সৃষ্ট রাজাকার ও আলবদর প্রভৃতি বাহিনীও মুক্তিযােদ্ধা ও পাকিস্তানি বাহিনীর মাঝে অনেক সময় দেয়াল হিসেবে বিরাজমান ছিল। বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে। যারা দেশমাতৃকার প্রয়ােজনকে উপেক্ষা করে পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকাণ্ডে হানাদার বাহিনীকে সহায়তায় লিপ্ত ছিল, তাদের ওপর ক্ষেত্র বিশেষে আঘাত হেনে মনােবল ক্ষুন্ন করার মাধ্যমে এহেন কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টার বিষয়টি এ অপারেশনে পরিলক্ষিত হয়। পরিচালনায় উন্নত মনােবল, সাহস, আত্মত্যাগ ও উদ্যমে সমুজ্জ্বল এ অপারেশনে ছােটোখাটো দুর্বলতা। পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রথমত পর্যবেক্ষণের সুবাদে প্রাপ্ত তথ্য পর্যাপ্ত ছিল না।
একটি ক্ষুদ্র অপারেশন বা গেরিলা যুদ্ধের সার্বিক সাফল্য লক্ষ্যবস্তুর যথাযথ তথ্য প্রাপ্তির ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে সিও অফিস এলাকার শত্রুর উপস্থিতি সম্পর্কে কোনাে তথ্য অপারেশন দলের কাছে ছিল না। তা ছাড়া সার্জেন্ট মহিউল আলম সার্বিকভাবে অপারেশনের অধিনায়ক ছিলেন। তাই তাঁর অবস্থান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অ্যাকশন দল বা মূল দলে তাঁর অবস্থান থাকাই বাঞ্ছনীয় ছিল। তা ছাড়া এ ধরনের অপারেশনের পূর্বে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও মহড়ার ব্যবস্থা করার বিষয়টি পরিকল্পনায় উপেক্ষিত ছিল। ছােটোখাটো এসব দুর্বলতা থাকলেও এ অপারেশনের মাধ্যমে মুক্তিযােদ্ধারা বিভিন্নভাবে লাভবান হন। উল্লেখ্যযােগ্য সংখ্যক অস্ত্র ও গােলাবারুদ মুক্তিযােদ্ধাদের হস্তগত হয়। এ অপারেশনের ফলে রাজাকারদের তৎপরতা হ্রাস পায়। তা ছাড়া যে-কোনাে সফল অপারেশনলব্ধ মনােবল, উদ্যম ও সাহসের নবতর উৎস, যা মুক্তিযােদ্ধারা এ অপারেশনে পরিপূর্ণভাবে লাভ করতে সক্ষম হন।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযােদ্ধা হাবিলদার আবু ইসলাম, মুক্তিযােদ্ধা শামসুল আলম মাস্টার।
(আনােয়ারা থানা কমপ্লেক্স অপারেশন-১-এর নকশাটি ১১৪২ পাতায়)

সূত্রঃ   মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড