অপারেশন পটিয়া বাজার
প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য
প্রাথমিক প্রতিরােধ যুদ্ধের পর ভারত পাড়ি দেওয়া মুক্তিযােদ্ধারা প্রশিক্ষণ শেষে দেশে প্রবেশ শুরু করেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযােগীদের হামলা করে মনােবল নষ্ট করে দেওয়া। কালুরঘাট যুদ্ধের পর ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর-এর বেশ কিছু সৈনিক পটিয়ায় কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। তারা সরে যাওয়ার পর পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযােগীরা। পটিয়ায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। মুক্তিযােদ্ধারা প্রাথমিকভাবে পটিয়ায় অবস্থিত পাকিস্তানি বাহিনীর সহযােগীদের ঘাঁটি আক্রমণ করে তাদের নেতৃস্থানীয়দের হত্যা এবং আস্তানা ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন।
অবস্থান
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের ওপর পটিয়া বাজার অবস্থিত। বাজারের পূর্ব দিকে চট্টগ্রাম-দোহাজারি রেললাইন অবস্থিত রেললাইনের পাশে অবস্থিত ছিল পটিয়া মাদ্রাসা। এখানকার অধিকাংশ ছাত্র ও শিক্ষক পাকিস্তানি বাহিনীর সহযােগী ছিল। তাদের অনেকে সশস্ত্র ছিল বলে মুক্তিযােদ্ধারা খবর পান। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার প্রধান সড়ক ও রেললাইনের মধ্যবর্তী কামাল বাজারে অবস্থিত ছিল একটি রাজাকার ক্যাম্প পটিয়া কলেজের প্রিন্সিপাল ওবায়দুল্লা মজুমদার ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর সহযােগী। কলেজের পাশেই রাহাত আলী হাই স্কুলে এক দল পাকিস্তানি সৈন্য অবস্থান করত।
পর্যবেক্ষণ
৪০জনের এক দল মুক্তিযােদ্ধা ভারত থেকে এসে পটিয়া বাজারের পূর্ব দিকে পাহাড়ের অভ্যন্তরে সাতগাছিয়া দরবার শরিফে অবস্থান নেন। এ দলের অধিকাংশ ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর-এর সদস্য, যারা এক সময় পটিয়ায় অবস্থান করেছিলেন। তাদের সহযােগিতা করার জন্য ৪জন বিশ্বস্ত স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের মূলত গাইড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পুরাে দলের অধিনায়ক ছিলেন হাবিলদার সুজা। সুফি আহমদুর রহমান স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধা। তাকে রেকি করার জন্য পাঠানাে হয়। তিনি ছিলেন শ্মশ্রুধারী একজন মুক্তিযােদ্ধা। তাই কোনাে সমস্যা ছাড়াই পুরাে এলাকার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযােগীদের অবস্থান, শক্তি, তৎপরতা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করেন। তার বর্ণনা মতে, মাদ্রাসায় একদল সশস্ত্র ছাত্রের অবস্থান ছিল। রাজাকার ক্যাম্পে ৮ /১০জন সশস্ত্র রাজাকার অবস্থান করত। কিন্তু তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হন।
পরিকল্পনা ও অপারেশন পুরাে দলকে ৩টি ভাগে বিভক্ত করে নির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টন করা হয়: প্রথম দল: পটিয়া রেল স্টেশনে অবস্থান নিয়ে আদেশ মতাে পটিয়া মাদ্রাসার দিকে ক্রমাগত গুলি চালাতে থাকবে, যাতে তারা রাজাকারদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে না পারে। দ্বিতীয় দল: কামাল বাজারে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে তাদের সব অস্ত্র ছিনিয়ে নেবে এবং তাদের হত্যা করবে। তৃতীয় দল: পটিয়া কলেজে গিয়ে প্রিন্সিপালকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে আসবে। আরও ২টি ছােটো দল ছিল। এর ১টি টিএনটির বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেবে এবং অন্য দল থানা থেকে যাতে কেউ বের হতে না পারে, সে জন্য কাট অফ পাটি হিসেবে কাজ করবে। পরিকল্পনানুযায়ী একই সময়ে গােলাগুলি শুরু করা হয়। প্রথম গ্রুপ মাদ্রাসা লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে, দ্বিতীয় গ্রুপ রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালায়। আক্রমণের প্রচণ্ডতায় অধিকাংশ রাজাকার পালিয়ে যায়। ২জন রাজাকার গােলাগুলিতে নিহত হয়। তৃতীয় দল কলেজে ঢুকতে ব্যর্থ হয়। কারণ, কলেজের পাশেই অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান থেকে অনবরত গুলি চলতে থাকে। অবশেষে পুরাে দল পুনরায় তাদের অবস্থানে চলে যায়। তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা নাসিরউদ্দিন।
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড