২৫ মার্চের পর পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সদস্যরা বিদ্রোহ করে ২ মে পর্যন্ত প্রতিরােধ অব্যাহত রাখেন। অসম সমর শক্তির কারণে প্রতিরােধ যুদ্ধের ব্যর্থতার পটভূমিকায় নিজেদেরকে সংগঠিত ও প্রশিক্ষিত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের বিদ্রোহী সেনারা ভারতে আশ্রয় গ্রহণ শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে সমস্যার আন্তর্জাতিক গুরুত্ব অনুধাবন করে ভারত সরকার সীমান্ত রক্ষীবাহিনীকে (বিএসএফ) বাঙালি বিদ্রোহী সেনাদের সামরিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেয়। কিন্তু সমন্বয়হীনতা ও পর্যাপ্ত সাহায্য সহযােগিতার অভাব তীব্রভাবে অনুভূত ও পরিলক্ষিত হয়। ভারতীয়দের অপ্রতুল সাহায্য এবং প্রতিরােধপর্বে বাঙালি যােদ্ধাদের অনিবার্য পশ্চাদপসরণ নেতৃস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের ভাবিয়ে তােলে। বিএসএফ-এর সীমিত সাহায্য ও সমর্থন সশস্ত্র প্রতিরােধ রচনাকারী যােদ্ধাদের মনােবল চাঙ্গা করতে ব্যর্থ হয়। সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের লক্ষ্যে সামরিকবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়ায় | মেজর খালেদ মােশাররফের অস্থায়ী দপ্তরে এক বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকে কর্মকর্তারা সামগ্রিকভাবে বিদ্রোহ ঘােষণাকারী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাঁচটি ইউনিট, ইপিআর, পুলিশ, মুজাহিদ, আনসার ও ছাত্র সংগঠনগুলােকে এলাকাভিত্তিক সংগঠিত করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন। সমগ্র বাংলাদেশকে ৪টি অঞ্চলে বিভক্ত করে বিদ্রোহী উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের এক একটি অঞ্চলের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। যেমন: চট্টগ্রাম অঞ্চল: মেজর জিয়াউর রহমান, কুমিল্লা অঞ্চল: মেজর খালেদ মােশারফ, সিলেট অঞ্চল: মেজর সফিউল্লাহ এবং যশাের অঞ্চল: মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর অধীনে ন্যস্ত ছিল। অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এম এ জি ওসমানীর ওপর সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্ব প্রদান করে সবাই তার অধীনে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের শপথ নেন। বাস্তবে এ প্রচেষ্টা সফল না হলেও মুক্তিবাহিনী গঠন এবং পরবর্তীকালে যুদ্ধ পরিচালনায় এ উদ্যোগ অগ্রণী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্ততপক্ষে এ প্রচেষ্টা প্রবাসী সরকার গঠন পর্যন্ত সফলভাবে অব্যাহত থাকে।
প্রবাসী সরকার গঠন
১৯৭০ সালের নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিজয়ী জাতীয় পরিষদের সদস্যবৃন্দ ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ভারতের আগরতলায় একত্র হয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র প্রস্তুত করেন। এ ঘােষণা দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি করা হয়। ঘােষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, যেহেতু নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছেন এবং ইয়াহিয়া তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসে গণহত্যা চালিয়ে জনগণের ওপর একটি অন্যায় ও প্রতারণামূলক যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছেন; সেহেতু পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা স্বাধীনতা ঘােষণা করতে বাধ্য হয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ১৩ এপ্রিল তাজউদ্দিন আহমেদের প্রধানমন্ত্রিত্বে একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হয়। ১৪ এপ্রিল কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে লিবারেশন ফোর্সের কমান্ডার ইন চীফ হিসেবে নিয়ােগ দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার (বর্তমানে জেলা) বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে শপথ গ্রহণ করেন। উক্ত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পুলিশ, ইপিআর, আনসার ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১টি দল এ সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদান। করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে বৈদ্যনাথতলার নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। মুজিবনগর বাংলার অস্থায়ী রাজধানীর স্বীকৃতি পায় এবং সে সরকার পরিচিতি পায় মুজিবনগর সরকার নামে। এভাবে সাংবিধানিকভাবে একটি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ করার পথ প্রশস্ত হয়। আইনগতভাবে স্বাধীনতার ঘােষণা ও প্রবাসী মুজিবনগর সরকার গঠন মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটি সংঘবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল নির্দেশনা প্রদানের নতুন দিক উন্মোচন করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন ভাষণে নবগঠিত সরকারের রূপরেখা ও প্রয়ােজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। এসব ভাষণে উল্লেখ করা হয় যে, সরকারের প্রথম দায়িত্ব হবে মুক্তিযুদ্ধকে চূড়ান্ত সফলতার দিকে পরিচালিত করা এবং দ্বিতীয় দায়িত্ব হবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশের পুনর্গঠন। প্রধানমন্ত্রী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)-এর সমন্বয়ে একটি সেনাবাহিনী গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য জোনাল কমান্ড প্রতিষ্ঠারও ঘােষণা দেন। তিনি সব রাজনৈতিক দলকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরােধ গড়ে তােলার আহ্বান জানান।
প্রবাসী সরকার গঠনের পূর্ব পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ সাংবিধানিক ও রাজনৈতিকভাবে নির্দেশনাহীন ছিল। সামরিক নেতারাও একটি প্রবাসী সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। কারণ, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতার জন্য আমরণ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। যুদ্ধকালীন কূটনৈতিক ও কৌশলগত সুবিধা প্রাপ্তিতে এবং সৈনিকদের মনােবল বৃদ্ধিতেও একটি সরকারের অধীনে যুদ্ধ পরিচালনা ছিল অত্যন্ত জরুরি। এতবিষয়ক একটি মন্তব্য এখানে উল্লেখযােগ্য Bengali army officers were insisting on the declaration of Bangladesh so that if they are captured by the Pakistan Army they could be treated as prisoners of war and not shot for being deserters (Kamal Matinuddin, 1994: 227). মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি করে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অধীনে একটি যুদ্ধ কাউন্সিল গঠন করা হয়। এ কাউন্সিলকে দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা। হয়। এর সদস্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মেজর সফিউল্লাহ, মেজর জিয়াউর রহমান। অল্প সময়ের মধ্যেই ওসমানী মুক্তিবাহিনীর সকল পর্যায়ে সমন্বয় করে এর ওপর, নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত এবং প্রতিটি সেক্টরকে যুদ্ধ করার জন্য নির্দিষ্ট এলাকা বণ্টন করে দেয়া হয়। কর্নেল ওসমানী কলকাতায় তাঁর সদর দপ্তর স্থাপন করেন। লে. কর্নেল রব ও গ্রুপ ক্যাপটেন এ কে খােন্দকার তাঁর স্টাফ অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হন। পূর্বাঞ্চলীয় জোনের যুদ্ধ সমন্বয় করার জন্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল রবের অধীনে আলাদা ফোর্সেস হেডকোয়ার্টারস স্থাপন করা হয়।
মুক্তিবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামাে
প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অধীনে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ন্ত্রিত হয় বাংলাদেশ ফোর্সেস’-এর নির্দেশনায়। বাংলাদেশ ফোর্সেসের সদর দপ্তর কর্তৃক মুক্তিবাহিনীর জন্য প্রস্তুতকৃত অপারেশন পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ফোর্সেস’-কে সংজ্ঞায়িত করা হয় এভাবে: ‘বাংলাদেশ ফোর্সেস বলতে সামরিক, অসামরিক, নিয়মিত ও অনিয়মিত সব ধরনের যােদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত বাহিনী বুঝাবে’ (দেখুন এ গ্রন্থের দলিল নম্বর ১০৬)। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুগত বাংলাদেশ ফোর্সেসের কমান্ড ছিল সরকার কর্তৃক নিয়ােগ প্রাপ্ত প্রধান সেনাপতির হাতে। ব্যক্তি, সংগঠন, অপারেশন, প্রশাসন এবং অন্যান্য বিষয় যেমন: অস্ত্র, নিয়ােগ, বদলি, সরঞ্জাম, যানবাহন প্রভৃতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন প্রধান সেনাপতি। তিনি সেক্টর অধিনায়কদের মাধ্যমে কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতেন। তার অপারেশন পরিকল্পনা মােতাবেকই সেক্টর কমান্ডাররা অপারেশন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতেন। প্রণীত পরিকল্পনার বাস্তব রূপ প্রদানের জন্য তিনি সাহায্যকারী বাহিনীর সেক্টর অধিনায়কদের সাথে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় সাধন করতেন। বাংলাদেশ ফোর্সেসের অধীনে পরিচালিত বিভিন্ন বাহিনী মুক্তিবাহিনী হিসেবে পরিচিত ছিল। জুলাই মাসের মাঝামাঝি মুক্তিবাহিনীর সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১,২০,০০০জনে। এর মধ্যে ইপিআর, পুলিশ বাহিনীর প্রায় ৪০ হাজার এবং ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক (হাসান হাফিজুর রহমান: স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্র, ৩য় খণ্ড, ১৯৮২: পৃ. ৭০)। এঁদের নেতৃত্বে ছিলেন পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনী হতে আগত বাঙালি অফিসাররা। বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ২টি ভাগে বিভক্ত ছিল: ক. নিয়মিত বাহিনী এবং খ. গণবাহিনী। তা ছাড়া বিএলএফ, সি-ইন-সি ইত্যাদি নামে বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়। স্থানীয়ভাবেও অনেক দল ও উপদল গড়ে ওঠে। নিচে এসব বাহিনী সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে: নিয়মিত বাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ, আনসার ও মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে এ বাহিনী গঠিত হয়েছিল। নিয়মিত বাহিনী। গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কর্নেল ওসমানী মন্তব্য করেন, …বইয়ে লেখা ক্লাসিক্যাল গেরিলা ওয়ারফেয়ার করে দেশ মুক্ত করতে হলে বহুদিন যুদ্ধ করতে হবে এবং ইতােমধ্যে আমাদের দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।
এজন্য আমার অনেক নিয়মিত বাহিনীরও প্রয়ােজন ছিল। এ প্রয়ােজনের কথা আমি মে মাসের শুরুতে সরকারকে লিখিতভাবে জানাই এবং এর ভিত্তিতে মিত্রদের কাছ থেকে সাহায্যও চাই। তাতে আমার উদ্দেশ্য ছিল, (ক) কমপক্ষে ৬০ থেকে ৮০ হাজার গেরিলা সংবলিত বাহিনী ও (খ) ২৫ হাজারের মতাে নিয়মিত বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। এ বাহিনী সত্বর গড়ে তুলতে হবে। কারণ, একদিকে গেরিলা পদ্ধতি এবং সঙ্গে সঙ্গে শত্রুকে নিয়মিত বাহিনীর কমান্ডাে ধরনের রণকৌশল দিয়ে শক্তিকে বণ্টন করার জন্য বাধ্য করতে হবে, যাতে শক্তি হ্রাস পায় (রফিকুল ইসলাম, ১৯৯৬: পৃ. ৭১-৭২)। প্রাথমিকভাবে সরকারি পর্যায়ে নিয়মিত বাহিনীর নাম মুক্তিফৌজ (এমএফ) হলেও বিমান ও নৌবাহিনীকে এর সাথে যুক্ত করার জন্য ১৯৭১ সালের ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন এক ঘােষণীয় মুক্তিফৌজের নাম পরিবর্তন করেন (হাসান হাফিজুর রহমান: স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্র, ৩য় খণ্ড, ১৯৮২: পৃ. ৭০)।
প্রধান সেনাপতির চেষ্টায় অল্প দিনের মধ্যে সাধারণ পদাতিক যুদ্ধের অস্ত্রে সজ্জিত নিয়মিত বাহিনী গড়ে উঠেছিল। এ বাহিনীকে সেনাবাহিনীর বিধিবিধান ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হতাে এবং জীবন ধারণের জন্য এদেরকে একটা যুক্তিসংগত অঙ্কের অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সীমিত কনভেনশনাল যুদ্ধ করার দায়িত্বের অংশ হিসেবে ১ নম্বর সেক্টরের নিয়মিত বাহিনী মূলত ছাগলনাইয়াশুভপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ফেনীচট্টগ্রাম রাস্তাকে পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তােলে।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৫টি ব্যাটালিয়নকে ৮টিতে উন্নীত করে ৩টি ব্রিগেডের বা ফোর্সের, যেমন: ‘এস (S), ‘কে’ (K) ও ‘জেড’ (2) ফোর্সের অধীন করা হয়। এগুলাে ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ১, ২, ৩, ৪, ৮, ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ব্যাটালিয়ন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৮ ব্যাটালিয়ন পর্যন্ত থাকলেও ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ছিল নতুন ব্যাটালিয়ন। ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই লে. কর্নেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১, ৩ ও ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে ‘জেড’ ফোর্স নামে ১ম ব্রিগেড গঠিত হয় মেঘালয়ের তুরা পাহাড়ে। ‘জেড’ ফোর্স মূলত ময়মনসিংহ জেলা ও আশপাশের অঞ্চলে অপারেশন চালায় এবং পরবর্তীকালে সিলেট গিয়ে যৌথবাহিনীর সাথে অভিযানে অংশ নেয়। সেপ্টেম্বর মাসে মেজর খালেদ মােশারফের অধীনে মেঘালয় ও আগরতলার কাছে ৪র্থ, ৯ম ও ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে ‘কে’ ফোর্স গঠিত হয়। লে. কর্নেল সফিউল্লাহর নেতৃত্বে ২য় ও ১১তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে সিলেটকুমিল্লা সীমান্তের বিপরীতে হাজামারা নামক স্থানে ‘এস’ ফোর্স গঠিত হয় অক্টোবর মাসে। নিয়মিত ব্রিগেড গড়ে তােলার সাথে সাথে গােলন্দাজ সহায়তার জন্য আর্টিলারি ব্যাটারিও গড়ে তােলা হয়। ‘কে’ ফোর্সের অধীনে সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম মুজিব ব্যাটারি গড়ে তােলা হয়। ব্রিগেড গড়ার পর বাংলাদেশ ফোর্স সীমিত আকারে আক্রমণ অভিযান শুরু করে। ইতােমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে গেরিলাদের তৎপরতা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানি বাহিনীও অত্যাচারের তীব্রতা বৃদ্ধি করে। নভেম্বরের শেষ দিকে ভারতীয় বাহিনী ও বাংলাদেশ ফোর্স যৌথ অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
গণবাহিনী
এফএফ বা গণবাহিনী নামে আরেকটি বাহিনী গড়ে তােলা হয়। গণবাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জেনারেল ওসমানীর মন্তব্য প্রণিধানযােগ্য:.আমাদের বিরুদ্ধে তখন শত্রু বাহিনীর ছিল তিন-চারটি ডিভিশন। এ ডিভিশনগুলােকেই নিমতম সংখ্যা হিসেবে ধরে নিয়ে আমরা দেখতে পেলাম যে এদের প্রতিরােধ করা ও ধ্বংস করা সােজা নয়, তাই এপ্রিল মাস নাগাদ এটি আমার কাছে পরিষ্কার ছিল যে আমাদের একটি বিরাট গণবাহিনী গড়ে তুলতে হবে। এই গণবাহিনী শত্রুপক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে নিউট্রালাইজ করবে (রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, ১৯৯৬: ৭১)। দেশের ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবকদের, কৃষক-শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীচাকরিজীবী অর্থাৎ দেশের আপামর জনগণকে এ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা। হয়েছিল। এরা দেশের অভ্যন্তরে গেরিলা কর্মকাণ্ড ও অন্তর্ঘাতমূলক (সাবােটাজ) কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। সারা দেশে এ বাহিনীর সদস্য প্রায় দেড় লক্ষ ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। এ বাহিনীর অস্ত্রের মধ্যে ছিল গ্রেনেড, স্টেনগান, রাইফেল, পিস্তল ও এসএলআর। তা ছাড়া নির্দিষ্ট অপারেশনের জন্য প্রয়ােজনানুযায়ী বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক থাকত। এ বাহিনী গঠিত হয় গেরিলা (সাধারণ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও বিশেষ বাহিনী (বিশেষ ধরনের গেরিলা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত) এ দুইয়ের সমন্বয়ে (এই গ্রন্থের দলিলপত্র অধ্যায়: দলিল নম্বর ১০৫)। বিএলএফ দীর্ঘমেয়াদি একটি যুদ্ধ পরিচালনা ও নেতৃত্ব রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়াসে বিভিন্ন জেলাভিত্তিক তুলনামূলক শিক্ষিত ছাত্র-যুবকদের নিয়ে বাংলাদেশ লিবারেশন। ফোর্স (বিএলএফ) গঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা এ বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বে আসীন হন। প্রচলিত পদ্ধতিতে ভারত সরকারের সহযােগিতায় ভারতের তান্দুয়া, জাফলং, দেরাদুন, ডিমগিরি প্রশিক্ষণ শিবিরে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসব কেন্দ্রে আনুমানিক ৪ হাজার ছাত্র-তরুণ-যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়ে অক্টোবর মাস নাগাদ এ বাহিনীকে সব। সেক্টরের যুদ্ধ তৎপরতার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়।
এ বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষিত, এলাকায় পরিচিত ও রাজনৈতিকভাবে অগ্রসর হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে অন্যান্য মুক্তিযােদ্ধার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অজ্ঞাতসারে এ বাহিনী গড়ে ওঠার ফলে সেক্টর অধিনায়ক ও নিয়মিত বাহিনীর সদস্যরা এ বাহিনীর কর্মকাণ্ড ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন (রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, ১৯৯৯: পৃ. ২৭৭)। আওয়ামী লীগের একটি অংশ। বিএলএফ-এর রিক্রুটিংয়ের সাথে জড়িত থাকলেও এর গঠন ও প্রশিক্ষণ সম্পর্কে মুজিবনগর সরকার এবং বিভিন্ন সেক্টরের অধীনে পরিচালিত প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা কিছুই জানতেন না। বিভিন্ন ট্রানজিট ক্যাম্প ও প্রশিক্ষণ শিবির থেকে গােপনে বাছাই করে বিএলএফ সদস্যদের আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ বাহিনীর গঠন রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের মধ্যেও বিতর্কের জন্ম দেয় ।
সি-ইন-সি দল
যুদ্ধের শেষ দিকে প্রধান সেনাপতির সরাসরি তত্ত্বাবধানে চাকুলিয়া নামের জায়গায় ৬ সপ্তাহের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থা করে সি-ইন-সি নামে অনেক দলকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানাে হয়। এ বাহিনীকে শুধু গেরিলা নেতৃত্ব। প্রদানের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং এর সাথে শহর এলাকায় বিশেষ কায়দায় যুদ্ধ করার কৌশলও শেখানাে হতাে। প্রকৃতপক্ষে এঁরা কোনাে স্বতন্ত্র বাহিনী ছিল না; শুধু বিভিন্ন গেরিলা বাহিনীর সম্পূরক হিসেবে তাদের গড়ে তােলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল । নৌ-কমান্ডাে বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে কমান্ডাে অভিযান পরিচালনার জন্য এ বাহিনী গড়ে তােলা হয়, যারা অত্যন্ত সফলতার সাথে অনেক অপারেশন। পরিচালনা করে (এ সম্পর্কে গ্রন্থের ৭ম অধ্যায়ে বিস্তারিত আলােচিত)। বর্ণিত সব বাহিনী গঠন ও পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ফোর্সেসের সদর দপ্তর সুস্পষ্ট নীতিমালা ও নির্দেশিকা প্রস্তুত করেছিল। বাংলাদেশ ফোর্সেসের সদর দপ্তর কর্তৃক মুক্তিবাহিনীর জন্য যে অপারেশন পরিকল্পনা ছিল, তা নিচে উল্লেখ করা হলাে: বাংলাদেশ বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সঠিক পরিকল্পনাটি হবে প্রাথমিকভাবে গেরিলা অপারেশননির্ভর। গেরিলা যুদ্ধের নেতৃত্ব ও নিউক্লিয়াস গঠিত হবে নিয়মিত বাহিনী কর্তৃক। তারা গেরিলাদের নির্দেশনা প্রদান ও সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবে। বাকি নেতৃত্ব প্রদান করবে নব্য প্রশিক্ষিত অফিসার, এমএনএ ও এমএলএ। গেরিলাদের কাজ হবে দেশের অভ্যন্তরে শত্রু হত্যা করা এবং সেক্টর টুপসদের অপারেশনের উদ্দেশ্য হবে সীমান্ত এলাকায় শত্রুকে ব্যস্ত রাখা। এতে শক্র ছােটো ছােটো গ্রুপে ভাগ হয়ে এবং দুর্বল টার্গেটে পরিণত হলে সেক্টর ট্রপসরা এক পর্যায়ে দেশের অভ্যন্তরে গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করবে। সফল গেরিলা রিক্রুটমেন্টের জন্য ইয়ুথ ক্যাম্পের সাথে কার্যকর সমন্বয় রক্ষার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক একজন পেশাদার লােক নিয়ােগ করা হবে। বাংলাদেশের গেরিলা বাহিনীর কার্যকর আধুনিক অস্ত্রের সংখ্যা কম থাকায় এ লক্ষ্যে দ্রুত বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া আশু প্রয়ােজন বলে এতে উল্লেখ করা হয় (গ্রন্থের নবম অধ্যায়, দলিল নম্বর ১০১)। প্রশিক্ষণ ও অপারেশনের জন্য মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বিভিন্ন বাহিনীর সাথে সমন্বয় রক্ষা করে চলে।
কারণ, এ বিষয়ে ভারতীয়দের সহযােগিতা ছিল অপরিহার্য। মুক্তিবাহিনীর প্রয়ােজনীয় অস্ত্রশস্ত্র ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সেক্টর অধিনায়ক ও সেনাবাহিনীর ফরমেশন অধিনায়করা বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত বাংলাদেশ সেক্টরকে সহযােগিতা করেছেন। তারা বাংলাদেশ ফোর্সের সাথে নিবিড় সমন্বয় রক্ষা এবং পরিকল্পনা প্রণয়নে সাহায্য করেন। সমাধান-অযােগ্য জটিল বিষয়গুলাে উর্ধ্বতন সদর দপ্তরে জানানাে হতাে। মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ, অপারেশন ও দায়িত্ব সম্পর্কে বাংলাদেশ ফোর্সেস ও প্রধান সেনাপতির সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল। এ নির্দেশিকা ছিল নিমরূপ: ট্রেনিং শেষে গেরিলাদের তার নিজস্ব এলাকা যে সেক্টরের অধীনে পড়েছে সেই সেক্টর কমান্ডারের কাছে পাঠানাে হবে। ঐ সমস্ত সেক্টরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলারা সেক্টর বাহিনীর সাথে অ্যামবুশ অথবা বিস্ফোরণ যথা: রেইড আক্রমণের ওপর বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে। এ বাস্তব প্রশিক্ষণ তারা ১৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করবে।
যে এলাকায় অফিসার নেই, সেখানে সেক্টর কমান্ডারের ব্যবস্থাপনায় অসামরিক বিষয়ক পরামর্শক কর্তৃক নিয়ােগকৃত এমএনএ-এমপিএ থাকবেন। তবে তিনি গেরিলাদের অপারেশন পরিকল্পনা সম্পর্কে জানবেন না। সেক্টর কমান্ডাররা গেরিলাদের চিকিৎসা ও অন্য বিষয়াদির প্রতি নজর রাখবেন। একটি কোম্পানির ৫০% লােক থাকবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলা আর বাকি ৫০% নিয়মিত যােদ্ধা (গ্রন্থের নবম অধ্যায়, দলিল নম্বর ১০৯)। এতদবিষয়ে বাংলাদেশ ফোর্সেসের সদর দপ্তরের পত্র নম্বর ১০২০, রিক্রুট তারিখ: ২০ জুন, ১৯৭১ থেকে জানা যায়: ..গেরিলাদের ভর্তিকরণ চলবে এমএনএ-এমপিদের মাধ্যমে। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে গেরিলাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করবে সাহায্যকারী বাহিনী (ভারতীয় বাহিনী)। এ ক্ষেত্রে সেক্টর কমান্ডার সাহায্যকারী বাহিনীর ফরমেশন কমান্ডারের সাথে যােগাযােগ করে ব্যবস্থা করবেন। সব ধরনের লজিস্টিক সাহায্য (বাসস্থান, গােলাবারুদ, অস্ত্র, সরঞ্জাম, রসদ, তেল, ব্যয়) সবকিছুর দায়িত্ব সাহায্যকারী বাহিনীর। তারা বিভিন্ন ধরনের পলিসি প্রস্তুত (অপারেশন, সংগঠন, লােকবল, প্রশাসন, লজিস্টিক প্রভৃতি, অস্ত্র, সরঞ্জাম, গাড়ি, টেলিযােগাযােগ, নিয়ােগ ও বদলিবিষয়ক), যােগাযােগ ও পােস্টিং নিয়ন্ত্রণ করবে (গ্রন্থের নবম অধ্যায়, দলিল নম্বর ১০৯)। মুক্তিবাহিনী সংগঠন, গেরিলা নির্বাচন, প্রশিক্ষণ ও পরিচালনাসংক্রান্ত বিষয়ে ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বরের একটি পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফোর্সেস হেডকোয়ার্টারসের চিন্তা-মানসিকতা এবং স্বাধীন চিত্ততা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। সে জন্যই এর উল্লেখ এখানে যথাযােগ্য। এ পত্রে ইয়ুথ ক্যাম্পের
১ নম্বর সেক্টরের ৫টি সাব-সেক্টর ছিল নিম্নরূপ: ১. ঋষিমুখ সাব-সেক্টর। সাব- সেক্টর কমান্ডার: ক্যাপটেন সামছুল হুদা বাচ্চু দায়িত্বপূর্ণ এলাকা ২. শ্রীনগর সাব-সেক্টর পরশুরাম, দেবপুর, চাঁদগাজী, ছাগলনাইয়া সাব- সেক্টর কমান্ডার: যথাক্রমে(ক) ক্যাপটেন অলি আহমদ, (খ) ক্যাপটেন মতিউর রহমান এবং (গ) ক্যাপটেন মাহফুজুর রহমান। দায়িত্বপূর্ণ এলাকা ৩. মনুঘাট সাব-সেক্টর করেরহাট, জোরারগঞ্জ, হিঙ্গুলী, ধুম ও কাটাছড়া (চট্টগ্রাম জেলা) সাব- সেক্টর কমান্ডার: যথাক্রমে(ক) ক্যাপটেন মাহফুজুর রহমান (খ) ক্যাপটেন মতিউর রহমান এবং (গ) লেফটেন্যান্ট ফজলুর রহমান দায়িত্বপূর্ণ এলাকা ৪. তবলছড়ি সাব-সেক্টর। রামগড়-হেঁয়াকো, মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি, (পার্বত্য চট্টগ্রাম)। সাব- সেক্টর কমান্ডার সুবেদার আলী হােসেন দায়িত্বপূর্ণ এলাকা সীতাকুণ্ড, বাড়বকুণ্ড, কুমিরা, মীরসরাই (চট্টগ্রাম), পানছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি সাব- সেক্টর কমান্ডার: জনৈক সুবেদার ৫. ডিমাগিরী সাব-সেক্টর দায়িত্বপূর্ণ এলাকা ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, রাউজান, বাগানবাজার, হাটহাজারী