মহিলা সভায় “রােশেনারা দিবস” পালনের আহ্বান
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ১ এপ্রিল- আজ “বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সমর্থনে একটি মহিলা সভায় আগামী ৫ই এপিল “রােসেনারা দিবস” হিসাবে পালন করার জন্য পশ্চিম বাঙলার নারী সমাজের কাছে আহ্বান জানানাে হয়। শ্ৰীমতী রােসেনারা বেগম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বার্ষিক শ্রেনির ছাত্রী, যিনি নিজের বুকে মাইন বেধে পাকসৈন্যদের প্যাটন ট্যাঙ্কের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ট্যাঙ্কটি বিধ্বস্ত করেন। পূর্ব বাঙলার ভাই-বােনেদের আত্মত্যাগের জ্বলন্ত দৃষ্টান্তের মৃত প্রকাশ শ্রীমতি বেগম।
পূর্ব বাঙলার মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সংহতিজ্ঞাপন, ওষুধপত্র, অর্থ, বস্ত্র, খাদ্য ও সাহায্য সংগ্রহের জন্য পশ্চিমবাংলার মেয়েরা ৫ এপ্রিল রাস্তায় নামবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
ভারতীয় মহিলা ফেডারেশনের পশ্চিমবঙ্গ কমিটির আহ্বানে এই সভা ভারত মহাসভা হলে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় গৃহীত মূল প্রস্তাবে বলা হয়েছে “পশ্চিম বঙ্গের মা-বােনদের পক্ষ থকে আমরা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছে এবং দাবি করছি যে বাঙলাদেশ থেকে অনতি বিলম্বে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হােক। বাঙলাদেশের জনসাধারণের এই গণহত্যা বন্ধ করার জন্য আমরা জাতিসংঘের আশু হস্তক্ষেপ দাবি করছি।”
প্রস্তাবটি সমর্থন করেন শ্রীমতী গীতা মুখার্জি। তিনি বলেন, পূর্ব বাঙলায় এখন সর্বাগ্রে প্রয়ােজন অস্ত্রের। তিনি মেয়েদের খাদ্য বস্ত্র এবং ঔষুধ পত্র ও অর্থ সংগ্রহের জন্য মিলিতভাবে এগিয়ে আসার আবেদন জানান।
সভনেত্রীর ভাষণে ডঃ রমা চৌধুরী বলেন, আমাদের এই সভা সার্থক তখনই হবে, যখন আমরা ওপারের ভাইবােনেদের সেবার জন্য অন্ন বস্ত্র খাদ্য সংগ্রহ করতে পারব।”
সভার প্রারম্ভে পূর্ব বাঙলা থেকে আগত একটি মুক্তিসংগ্রামী ছাত্র শ্রী মহম্মদ সিয়াদ উল ইসলাম তার দেশের শাসনের দীর্ঘদিনের শােষণের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাঙলাদেশের মা-বােনেরা যে লড়াই করছেন, তাদের সাহসিকতা পুরুষদের চাইতেও বেশী।” তিনি সর্বপ্রকার সাহায্যের জন্য আবেদন জানান।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন সর্বশ্রী অপর্ণা বন্দোপাধ্যায়, ইলা মিত্র, অরুণা মুন্সী, কমলা মুখার্জি, মায়া দাস প্রমুখ। কবিতা পাঠ করেন অধ্যক্ষা মীরা দাত্তগুপ্তা।
উইমেনস্ কো অডিনেৰ্টি কাউন্সিল’ ও ‘অল ইণ্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্স’ সহ অন্যান্য বহু মহিলা সংগঠনের প্রতিনিধিরা এইসভায় যােগ দেন। বেতারশিল্পী শ্রীমতী মেঘলা দাশগুপ্ত দেশাত্মেবােধক সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
সূত্র: কালান্তর, ২.৪.১৯৭১