You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.12 | ঢাকা ডায়েরি ডেইলি অবজার্ভার, ১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

ডেক্কা (ঢাকা) ডায়েরি
ডেইলি অবজার্ভার, ১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১
-গ্যাভিন ইয়াং

১৯৭১ সালে ইন্দো-পাক যুদ্ধের শুরু থেকেই ডেইলি অবজার্ভারের সাংবাদিক গ্যাভিন ইয়াং ঢাকার ঘটনা নিয়ে অনেক গুলো রিপোর্ট করেছিলেন। ঐ সপ্তাহ গুলোতে গ্যাভিন ইয়াং এর কাছ থেকে নীচের মেসেজ গুলো আমাদের কাছে পৌছেছিল। যুদ্ধ অবস্থার কারনে তিনি একবারে একটা মেসেজই পাঠাতে পারতেন।

মঙ্গলবারঃ
আমি ভারতীয় মিগ বিমান গুলোর ক্রমবর্ধমান আনাগোনা দেখেছিলাম, খুবই কাছ দিয়ে তারা উড়ে যেতো যা আমি সবসময়ই দেখতে চাইতাম। ভূপাতিত ভারতীয় বিমান দেখবার জন্য আমি এবং আমার এক সাংবাদিক বন্ধু একদিন ঢাকা বিমান বন্দরের দিকে গিয়েছিলাম। আমরা সেখানে গিয়ে আক্রমনের স্বীকার হই। আমি আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য একটা মাঝারি ধরনের খেজুর গাছের তলায় শুয়ে পড়েছিলাম। আমি প্রচন্ড হতচকিত হয়ে গেছিলাম এবং নিজেকে মনে হচ্ছিল সদ্য স্নান ঘরে ঢোকা নারীর মত যার পায়ে শুধু একটা জুতো আছে। খুব নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছিলাম। বিভিন্ন দিক থেকে আসা মর্টারের গোলা গুলো মাথার খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। আমার মনে হলো তাদের মর্টার গুলো ছোড়ার পর সেগুলো মাথার ২০ থেকে ৩০ ফুট উপর দিয়ে যাচ্ছিল। বিস্ফোরণের শব্দগুলোও খুব জোরে জোরে হচ্ছিলো। এদিকে পাকিস্তানীদের শত্রু বিমান আক্রমন প্রতিরোধী ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবার কারনে তাদের প্রতিরোধ ঝিমিয়ে গেছিলো। দেখলাম বিমান বন্দরের হ্যাংগারে রাখা জাতিসংঘের একটা বিমান মর্টারের গোলায় আগুন ধরে গেলো। গোটা ব্যাপারটাই ছিল শ্বাসরুদ্ধকর। ঐ দিন ভারতীয় বিমান গুলোতে যদি রকেট কিংবা নাপাম বোমা থাকত তাইলে অনেক সাংবাদিককে হয়ত বেঁচে ফিরতে হতো না।

বুধবার:

আজ আমি ঢাকা থেকে ১২ মাইল দূরের বড় একটা নদী বন্দর নারায়ণগঞ্জে নিজে গাড়ি চালিয়ে গিয়েছিলাম। আগেই শুনেছিলাম সেখানে বিশাল কিছু ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, কিন্তু পৌছানোর পরে ততটা মনে হলো না। নারায়ণগঞ্জ বন্দরের চারিদিকে কাঁটাতার আর ফেলে যাওয়া বন্দুক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখেছি। গতরাতেই ভারতীয় বিমান সেনারা একটা আবাসিক এলাকায় বিমান হামলা করেছে যেটা পাওয়ার স্টেশন থেকে মাত্র আধা মাইল দূরে অবস্থিত। এলাকাটার অধিকাংশ মানুষই প্রচন্ড গরীব। এই হামলায় চার থেকে পাঁচশত জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং ১৫০ জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। মৃতরা যে যেভাবে ঘুমিয়েছিল সেভাবেই সমাহিত হয়ে গেছে।
আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করলাম যে, রাস্তার পাশের কিছু গ্রাম যেগুলো পুড়ে গেছে বলে মনে হলো সেগুলো কিন্তু ভারতীয় বিমান হামলার কারনে পুড়ে যায় নি। আসলে সেগুলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন যে, লন্ডনের সম্পাদকেরা ঢাকার যুদ্ধাবস্থা সম্পর্কে কি ধরনের খবর জানতে চান। লন্ডন থেকে প্রতিদিনই দেরিতে খবর পৌছানোর কৈফিয়ত জানতে চাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে রাখি এখানে বিভিন্ন দৈনিক সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার করেসপন্ডেন্টসরাও অনেক দেরিতে তাদের এজেন্সি থেকে নির্দেশনা পাচ্ছেন। অথচ লন্ডন প্রতিদিনের খবরই আমাদের কাছে জানতে চাইছে। আরো জানতে চাইছে কেন প্রতিদিন একটা করে সংবাদ ফাইল বা তার বার্তা তাদেরকে পাঠানো হচ্ছে না? লন্ডন কি বুঝতে পারছে না যে আমরা ঢাকাতে ঘর থেকে বেরই হতে পারছি না সেখানে আমরা সংবাদ কিভাবে তাদেরকে পাঠাবো? এখানে একজন সংবাদ কর্মীকে তার এডিটর জিজ্ঞাসা করেছিল, অন্যান্য এয়ার লাইন্সের বিমান চলাচল যখন বন্ধ আছে তাইলে কেন সে পাকিস্তান এয়ার লাইন্সের বিমানে করে সেখান থেকে চলে আসছে না? যাই হোক প্রশ্নটা আমার কাছে হাস্যকর লাগল। তার এডিটর কি জানে না যে, এখানে পাকিস্তান এয়ার লাইনের শেষ বিমানের ফ্লাইটটাও গত শুক্রবারেই ছেড়ে চলে গেছে?

বৃহস্পতিবার

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ খবরটা হলো গতকাল ভোর ৪টার সময় ঢাকাতে একটা ইসলামী এতিমখানায় ভারতীয় বিমান সেনারা বোমা হামলা করেছে। তিনশোর মত ছেলে-মেয়ে থাকত সেখানে। আমি সূর্য ওঠার পরেই সেখানে গিয়েছিলাম। বিমান হামলায় সব কিছু তছনছ হয়ে গেছে, প্রায় সব কিছুই ধবংস হয়েছে এলাকাটার। প্রায় সবাই মারা গেছে। ধ্বংসস্তুপের নীচে তখনো কেউ কেউ বেঁচে ছিল। তবে কতজন, কিভাবে, আহত হয়ে পড়ে আছে কেউ বলতে পারল না। কারন উদ্ধার করার মত সেখানে কেউই ছিল না। এখানে রাতকালীন বিমান হামলায় প্রচুর প্রানহানী ঘটাচ্ছে, এবং এই রাতকালীন হামলার কোন দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। এই বোমা গুলো বিমান বন্দরের রানওয়ে তাক করে ছোড়া হয়েছিল। গত পাঁচদিন ধরে ভারতীয়রা রানওয়ে ধ্বংস করার জন্য দিনের আলোতে হামলা করেছিল তবে তারা পর পর পাঁচ দিনই ব্যার্থ হয়। তবে আজ মধ্যদুপুরে এক পাইলট সেই বহু কাঙ্ক্ষিত কাজটা করতে পেরেছে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ রানওয়েটা এখন ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত আমরা সবাই অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকের দেয়া এক তত্ত্বের সাথে একমত ছিলাম। তত্ত্বটাও বেশ মজার যে, ভারতীয় সেনাদের হাতের নিশানা এতই খারাপ যে, তাদের ১০ মিটার দূরে যদি একটা গরুও রাখা হয় তাও তারা সেটাকে ঠিকঠাক নিশানা করতে পারবে না। আমরা ভারতীয় জেট বিমান গুলোকে আকাশ থেকে গোত্তা খেতে খেতে পড়ে যেতে দেখেছি, একের পর এক গুলি খেয়ে ভুপাতিত হতে দেখেছি। আমি গত মাসেই সাত থেকে নয়টা এমন গোত্তা খেতে খেতে পড়ে যাওয়া বিমান দেখেছি তবে সংখ্যাটা আরো বেশিও হতে পারে এখন ঠিক মনে পড়ছে না। বড় আকারের রাশিয়ান সুখোই-৭ জেট বিমান গুলোকে গোত্তা খেয়ে পড়তে দেখতে আরো বেশি মজার। ধীরে ধীরে, পাক খাওয়া ঘুড়ির মতো করে পড়ে যায়। মনে হয় আকাশে বিমানের ব্যালে নৃত্য দেখছি।

বোমা হামলার পর আমরা রাস্তায় এসেছিলাম। আমি আর আমার সহকর্মী নিরাপদ আশ্রয় খুজতে শুরু করলাম। বাইরের অবস্থাটা একেবারেই জগাখিচুড়ি পাকানো সাথে আমাদের অবস্থাও ঠিক সেরকমই ছিল। সাদা শার্ট-প্যান্ট, কালো জুতা, অগোছালো চুল মনে হচ্ছিল ছাইয়ে ডুবে গেছি। চারিদিকে প্রচন্ড ধোয়া। কঙ্গালসার রিক্সাওয়ালা গোত্তা খেয়ে নীচে পড়ে আছে। রাস্তার মরা দেহ, মাংস সব কাকে টেনে টেনে খাচ্ছে। মুখে নিয়ে উড়ে চলে যাচ্ছে। একজায়গায় দেখলাম জীর্ণ-শীর্ন অনেক মানুষ একটা বট গাছের নীচে বসে আছে। যাদের নিস্প্রভ চোখ, রোদে পোড়া কালো চামড়া, বুভুক্ষ চেহারাই বলে দিচ্ছে তারা অনেক অনেক গরীব। না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। তারা কেন সাইরেন বাজাতো? বোমার শব্দেই তো পৃথিবী কেঁপে উঠতো। সাথে সাথে দেখতাম বৃদ্ধ লোকটি বড় কদমে শহরের অন্য প্রান্তে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তার মলিন সাদা চুল বাতাসে উড়ছে তার হাতে দৌড়ানোর অবলম্বনের জন্য একটা লাঠি। তিনি দৌড়াচ্ছেন যেন মনে হচ্ছে ভাববাদী এক পাগল। লক্ষহীন ভাবেই দৌড়াচ্ছেন তবে ঐ লক্ষে সময় মত পৌছাতে পারলেই হয়ত তার সেই অদ্ভুত ভাববাদ সত্য হয়ে যাবে।

শুক্রবার সকাল

আজানের শব্দে আমার চিন্তার জগতে ছেদ পড়ে গেলো। এখন আমরা প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দ শুনছি। মনে হলো খুব কাছেই শব্দ হচ্ছে। ভারতীয় বিমানগুলো প্রচন্ড বোমা বর্ষন করছে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের লম্বা ইস্পাত কাঠামোটা একটা চারা গাছের নড়ে ওঠার মতো করে নড়ে উঠল। আবারও জাতিসংঘ দ্বারা পরিচালিত অনির্ধারিত মার্সি ফাইট এবং সিঙ্গাপুর থেকে ছাড়তে চাওয়া রয়েল এয়ার ফোর্সের বিমানের ফ্লাইট গুলা বাতিল ঘোষনা করা হয়েছে। ঢাকাতে বহু নারী ও শিশু আটকা পড়ে আছে। কে বা কারা এই ন্যাক্কার জনক কাজের জন্য দায়ী আমরা সেটা বুঝতে পারছি না। তবে যেই করুক না কেন তাদেরকে আমরা প্রচন্ড ধিক্কার দিয়েছি যে কেন তারা এই নিরীহ মানুষ গুলাকে বাধা দিচ্ছে? আমরা জানি না। তবে সেটা কি ভারত সরকার? পাকিস্তানিদের এই ধরনের কাজ করার কোন কারণ নেই।

একটা ব্যাপারে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরী করা দরকার। সেটা হলো ভারতীয় বিমান বাহিনীর রাতকালীন বিমান হামলাকে বন্ধ করা। যেখানে অন্যান্য দেশের মতো রাতকালীন বিমান হামলায় ভারতীয় বিমান সেনারাও প্রচন্ড ভাবে অদক্ষ। আরেকটা কাজ করা যায় যে, ঢাকাকে মুক্ত শহর বলে ঘোষনা করা যেতে পারে। আমি এটাও বিশ্বাস করি যে পাকিস্তানিরাও আমার সাথে একমত হবে কারন পরিকল্পিত গণহত্যা বন্ধ এবং একটি বেসামরিক অভ্যুত্থান ঠেকাতে ঢাকাকে মুক্ত রাখা জরুরী। যেখানে ঢাকার রাস্তায় দুটো রিক্সা পাশাপাশি রাখলে একটা ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে। সেখানে অবশ্যই দুই পক্ষের সম্মতিতেই ঢাকাকে মুক্তাঞ্চল বলে ঘোষনা করা যেতে পারে। অভিযান চলা সত্ত্বেও ঢাকা শহরে একটা স্থিরতা আছে। ব্যাংক এবং দোকানগুলো আগে যেমন চলতো এখনও তেমনিই চলে। ঢাকার মানুষেরা শুধুমাত্র ভারতীয় জেট বিমানের হামলা ও পাকিস্তানি শত্রু বিমান আক্রমন প্রতিরোধী গোলার আঘাত থেকে বাঁচতেই ঘর এবং দেয়ালের পিছনে আশ্রয় নেয়। এখানে চারিদিকে ট্রেঞ্চ খোড়া রয়েছে। হোটেল লন গুলো সুন্দরভাবে একটা ফালি করা কেকের মতো করে সোজা লাইন করে কাটা হয়েছে। এটা কি তবে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য শেষবার ঘুরে দাড়ানো কোন বীরের শেষ প্রচেষ্টা? বলা অসম্ভব।

আমরা বিবিসি থেকে জানতে পারলাম যে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কিছু সাঁজোয়াযান রয়েছে এবং তারা মুহুর্তের মধ্যেই নদী পার হবার জন্য ব্রিজ বানাতে সক্ষম। তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ভারতীয় সেনারা আসল নদীর পাড়ে এসে উপস্থিত হয়েছে যেখানে তারা আসলে ব্রিজ বানাতে অক্ষম। তারা বোধ হয় পশ্চিমের পদ্মার উপর এসে পড়েছেন এবং পূর্ব অংশে যার সবচেয়ে বড় উপনদী। পদ্মার স্রোত এখানে সবচেয়ে বেশি এবং হ্রদের ধারার স্রোতস্বীনি। এইরকম একটা জায়গায় সেনা নামানো খুবই কঠিন কারণটা হলো সেনাদের স্রোতের পাশাপাশি শত্রু সেনাদেরকেও প্রতিরোধ করতে হতে পারে। এছাড়া মাটি ও মাঠগুলো খুবই ভেজা ও স্যাতস্যাতে সাথে শত্রু সেনাদের দ্বারা খোড়া পরিখা গুলো ট্যাংকের জন্য একেকটা ফাঁদ হিসাবে কাজ করবে।

ভারতীয় বাহিনীর এই সকল দুর্বলতাই পাকিস্তানিদের সাহায্য করতে পারে। যদিও তাদের এখনও খাবার ও অন্যান্য সরবরাহ, যোগাযোগ ও প্রচুর গোলাবারুদ আছে। কিন্তু তারা কি পারবে?

শুক্রবার সন্ধ্যা
শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ ঢাকাকে একটি মুক্ত শহর ঘোষনায় ব্যর্থ হয়। কিছু কৌশলে অসুবিধায় পড়ে যাবার ভয়ে ভারতীয়রা এতে একমত হবে না এটা আমি ঠিকই বুঝতে পারছি।

পল মার্ক হেনরি (জাতিসংঘের স্থানীয় প্রতিনিধি), জাতিসংঘের হয়ে মানবিক বেষ্টনী গড়ে তোলার প্রতি আহ্বান জানান। মিঃ হেনরি যিনি আসলে রুপকথার গল্পের মতো অস্থির একজন লোক বলে মনে হয়, যার প্রতিটা কাজেই তড়িঘড়ি করতে দেখা গেছে। যিনি অতি সহজেই ডি গলের মন্ত্রীসভার একজন সভ্য হতে পারতেন অথচ তাকে এখন দেখা যায় জাতিসংঘের নীল সাদা মার্ক পতাকা হাতে নিয়ে হেড অফিসে গিয়ে নিরপেক্ষতার জন্য দৌড়াদৌড়ি করছেন। হাস্যকর ব্যাপার বটে! তার প্রতিদিনের কাজের মধ্যে প্রধান কাজটা হলো কনসোল প্রতিনিধিদের সাথে মিনিটে মিনিটে আলোচনা করা যাতে একটা উপায় বের হয় যে কিভাবে এই আটকে পড়ে যাওয়া নারী ও শিশুদের বের করে নিয়ে যাওয়া যায়।

আরেকটা অভিযোগ সবসময়ই উঠছে যেটা আসলেই বন্ধ করা দরকার সেটা হলো ত্রানবাহী ভারতীয় বিমান গুলো ঢাকা থেকে কলকাতায় ত্রান আনা নেয়া করছে। তাদের দাবি তারা “বাংলাদেশ” নামক রাষ্ট্রকে গুরুত্বের সাথে সহায়তা করছে। সুতরাং এই সব কারনে আমরা প্রায় এক সপ্তাহ যাবত যুদ্ধ এলাকা ছাড়তে চাইলেও ছাড়তে পারছি না। আজ সকালে জাতিসংঘের ভবন থেকে কিছুটা দূরে ভারতীয় বিমান থেকে বোমা হামলা চালানো হয়েছে।

কিছুক্ষন পর হেনরি ও তার সহকর্মীরা জাতিসংঘের স্থানীয় অফিসটা বন্ধ করে দেবার জন্য নিউইয়র্কে বার্তা পাঠিয়েছে।

চারিদিকে প্রচুর গুজব ছড়িয়ে আছে এবং এখনো ছড়াচ্ছে। এগুলো মূলত ছড়াচ্ছে ভারতীয় রেডিও চ্যানেল গুলা থেকে। দুই দিন আগে পাকিস্তানী এক কমান্ডারকে নিয়ে একটা মারাত্বক গুজব ছড়ানো হয়েছিল। গুজবটা ছিল কোন এক রাতে জেনারেল নিয়াজি ছোট একটা বিমানে করে ঢাকাতে চলে গেছেন। খবরটা শুনেছিলাম দিল্লি থেকে প্রচারিত একটা রেডিও সংবাদে।

কিন্তু গুজব সত্য বলে প্রমাণিত হয় যখন নিয়াজীকে আজই ঢাকার রাজপথে দেখলাম। তার গাড়িটা মাঝখানে আর চারিপাশে তার আত্নরক্ষার জন্য এসকর্ট দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমার বিশ্বাস নিয়াজী তার সাহসের জন্য কখনোই তিরোস্কৃত হননি। তিনি রিবন দিয়ে মোড়ানো একটি সামরিক ক্রস পরে ছিলেন যা তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের সাথে যুদ্ধ জয়ের পর অর্জন করেছিলেন। দ্বিতীয় ব্যাপারটা হলো মেজর জেনারেল ফরমান আলী খান গত সপ্তাহেই কয়েকবার সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। এখানে এখন ছোট-গ্রুপ থেকে শীর্ষ প্রশাসনিক পদাধিকারীরা চব্বিশ ঘন্টাই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা আসলে কি কাজ করছেন এই ব্যাপারে মনে হচ্ছে তাদের কিছুই বলার নাই। এইসব কর্মযজ্ঞে তারা অনেকেই খুশি না।