You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.02.14 | গান্ধীজী কি পাকিস্তানের শত্রু? | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

গান্ধীজী কি পাকিস্তানের শত্রু?

ভারতবর্ষের উগ্র সন্ত্রাসবাদ গান্ধীজীর মূর্তি ভাঙতে, বই পােড়াচ্ছে আর পাকিস্তানের মিলিটারিতন্ত্রের নায়কের কণ্ঠে গান্ধীজীকে শত্রু বলে ঘােষণা করার আহ্বান শােনা যাচ্ছে। ইতিহাসের এ বড়াে বিচিত্র লীলা যে একই সঙ্গে তিনি চরম বামপন্থীয়ানা ও সামরিক একনায়কতন্ত্রের চিহ্নিত দুশমন। গান্ধীজীর সঙ্গে মতাদর্শ নিয়ে অনেকেরই বিরােধ থাকতে পারে কিন্তু তিনি যে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে একজন অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন, এ নিয়ে কোনাে বিতর্ক ওঠার অবকাশ নেই। ছেচল্লিশের সারা উপমহাদেশব্যাপী ভ্রাতৃহত্যার রক্তরঞ্জিত ভয়ঙ্কর দিনগুলিতে তিনি শান্তি স্থাপনের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করে দূর দূরান্তে ছুটে বেড়িয়েছিলেন। এই প্রয়াসের সামান্য স্বীকৃতি হিসেবে গান্ধীজির নােয়াখালি সফরের সময় তাকে স্মারক হিসেবে এক টুকরাে ভূমি দান করা হয়েছিল। নােয়াখালি ত্যাগের প্রাক্কালে ঐ ভূমিখণ্ড তিনি একটি জনহিতকারী দাতব্য সংস্থার হাতে অর্পণ করে আসেন ইয়াহিয়া খাঁর সরকার সেই জমিটুকুকেই শত্রু সম্পত্তি বলে বাজেয়াপ্ত করার কথা ঘােষণা করেছেন।
পাকিস্তানের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক মাত্রেই এই ঘােষণা শুনে পরম বেদনা ও লজ্জা অনুভব করছেন। গণতান্ত্রিক নেতাদের কণ্ঠ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে মুখর হয়ে উঠেছে।
আমরা বুঝতে পারছি না, ইয়াহিয়া খা কি চান। ভারতের বিমান ধ্বংসকারীদের প্রতি পাক সরকারের প্রশ্রয় দান, গান্ধীজীর স্মৃতিমণ্ডিত জমি বাজেয়াপ্তকরণের ভেতর দিয়ে তিনি কি রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রমণের মুহুর্তে পাক-ভারতের অতীতের তিক্ত সম্পর্কের ঘা-টাকেই খুঁচিয়ে তুলতে চাইছেন?

সূত্র: কালান্তর, ১৪.২.১৯৭১