২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
- পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী দল ১৭টি নৌকায় মুক্তিবাহিনীর রেইডিং দলকে আক্রমণ করার জন্য নবীনগরের দিকে অগ্রসর হয়। পাকসেনাদের নৌকাগুলো বিদ্যাকোর্ট গ্রামের নিকট পৌঁছালে মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে অতর্কিত আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৫টি নৌকা ডুবে যায় এবং ২৫ জন পাকসেনা নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়।
- সিলেটে মুক্তিযোদ্ধারা সিন্দরখানÑকলেঙ্গা রাস্তার উপর ছোট ছোট পাহাড়ের উপর অ্যামবুশ লাগিয়ে পাকসেনাদের অপেক্ষায় ওঁৎ পাতে। পাকবাহিনীর একটি বড় দল ২৫/২৫ জন রাজাকারকে সামনে দিয়ে কালেঙ্গার দিকে অগ্রসর হয়। রাজাকার দল অ্যামবুশের আওতায় এলে মুক্তিযোদ্ধারা নিরব থাকে। কিছুক্ষণ পর পাকসেনারা এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এই যুদ্ধে পাকসেনাদের একজন অফিসারসহ ৬১ জন সৈন্য নিহত ও অনেক আহত হয়। অপরদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েক আবদুল মান্নান শহীদ হন।
- ৩নং সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন ভুঁইয়ার নেতৃত্বে ধর্মঘর নামক স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালায়। এই যুদ্ধে লে. হেলাল মুর্শেদের কোম্পানি বামদিকের ফ্ল্যাঙ্ক প্রোটেকশনে এবং ক্যাপ্টেন নাসিমের কোম্পানি ডান দিকে ফ্ল্যাঙ্ক প্রোটেকশনে অবস্থান নিয়ে ক্যাপ্টেন ভুঁইয়ার মুক্তিযোদ্ধা দলকে সাহায্য করেন। এতে পাকবাহিনীর একজন জুনিয়র কমিশণ্ড অফিসারসহ ১০ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে কোন হতাহত হয়নি।
- ৪নং সেক্টরে ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল খড়মপুরে পাকবাহিনীর ৪০ জনের একটি দলকে আক্রমণ করে। পাকসেনারাপ ৩ ইঞ্চি মর্টার, এমজি ও এলএমজি’র সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে পাকবাহিনীর ৫ জন সৈন্য নিহত ও ১০ জন আহত হয়।
- ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্যকে অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে ৪ জন পাকসেনা নিহত ও ২ জন আহত হয়। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা একই স্থানে এক প্লাটুন পাকসৈন্যকে আবার অ্যামবুশ করে। এতে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়।
- পিডিপি’র সভাপতি নুরুল আমিন ঢাকায় বলেন, বে-আইনী আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানেক মুক্তি দেয়া হলে পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের যৌক্তিকতাকেই নস্যাৎ করা হবে।
- বিবিসি প্রচারিত সংবাদ : পূর্ব পাকিস্তানের একজন সরকারী মুখপাত্র বলেন, গঙ্গা ব-দ্বীপের চালনায় একটি মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়। জাহাজটি পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে এসেছিল। সম্প্রতি একটি বৃটিশ জাজাও চালনা বন্দরে বোমা বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অবস্থা যথেষ্ট গুরুত্বের দাবীদার।
- তেজগাঁও শান্তি কমিটি নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের সম্বর্ধনা দেয়। জামায়াতে ইসলামীর ডেপুটি আমীর মাওলানা আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় আব্বাস আলী খান, মওলানা এ. কে. এম. ইউসুফ, আখতার উদ্দিন আহমদ, মওলানা ইসহাক, আউং শু প্র“ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত হন। সভায় মন্ত্রীদের উদ্দেশে মানপত্র পাঠ করেন তেজগাঁও শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান।
- গোলাম আযম পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক আহ্বান করেন। এই বৈঠকে ২ অক্টোবর জামায়াতের নাখালপাড়ার প্রাদেশিক কার্যালয়ে হবে এবং বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, উপনির্বাচন এবং পার্টি-কর্মীদের করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
- জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানকারী সদস্য এ.টি. সাদী বলেন, ‘বিচ্ছিন্নতার কারণে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছিলো অনিবার্য। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যেটুকু না করলে নয়, সেনাবাহিনী তাই করছে। বাংলাদেশ আন্দোলন হচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’
- Source: Bangladesh Liberation War Museum