১৩ জানুয়ারি ১৯৭১
- ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে ৩ ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডিস্থ স্বীয় বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসহ জাতীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে প্রেসিডেন্টের সাথে তাঁর আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনায় আমরা সন্তষ্ট হয়েছি।” প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনার সময় বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন – সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খোন্দকার মোস্তাক আহমদ, তাজউদ্দিন আহমদ, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান। আলোচনায় প্রেসিডেন্টের সাথে কারা উপস্থিত ছিলেন তা জানা যায়নি। বঙ্গবন্ধু বলেন, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকাতেই অনুষ্ঠিত হবে। তবে অধিবেশনের তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি। অধিবেশনের বিভিন্ন সম্ভাব্য তারিখ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। নিকটবর্তী যে কোন সুবিধামত তারিখে অধিবেশন শুরু হবে। বৈঠকে প্রেসিডেন্টের সাথে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কেই আলোচনা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের সাথে বঙ্গবন্ধুর আর বৈঠক হবে না বিধায় তিনি সাংবাদিকদের আর কোন প্রশ্ন না করার অনুরোধ জানান।
- পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড. এ ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডিতে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দেশের জন্য তিনি একটি গ্রহণযোগ্য ও স্থায়ী শাসনতন্ত্র চান। দেশ হবে একটি খাঁটি ফেডারেশন এবং এভাবে তিনি আওয়ামী লীগের ৬-দফার প্রথম দফাটি সোজাসুজি স্বীকার করে নেন। ভুট্টো বলেন, চলতি মাসের শেষ দিকে তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, একটি ফেডারেশনের জন্য শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে মতৈক্য হওয়া উচিত।
- ইডেন গার্লস কলেজ ছাত্র ইউনিয়ন শাখার নবীন বরণ ও বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সহ-সভানেত্রী এবং পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদের আহবায়িকা মালেকা বেগম। বিশেষ আমন্ত্রণক্রমে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি নূরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে নবাগতাদের সম্মানে এক বিচিত্রানুষ্ঠান হয়। বিচিত্রানুষ্ঠানে সঙ্গীতে অংশগ্রহণ করেন, তাজিম সুলতানা, হেলেন আরজু, মেরী, খুকুমণি, পারভীন, লুৎফা, রাণী, রোজী, আজমেরী ও লুলু। কবিতা পাঠ করেন লুলু ফায়েজী, ইফফত মীর্জা। নৃত্য পরিবেশন করেন পলি। অনুষ্ঠানে পুরনোদের পক্ষ থেকে বক্তৃতা করেন দীপা দেব। নতুনদের পক্ষ থেকে আয়েশা সিদ্দিকা শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
- জে. এম সেন হলে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর বিপ্লবী নেতা সূর্য সেনের স্মৃতি দিবস উদযাপন করা হয়। প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক আবুল ফজলের সভাপতিত্বে মাস্টার দা সূর্য সেনের বিপ্লবী জীবনের বিভিন্ন দিক আলোকপাত করে বক্তৃতা করেন সূর্য সেনের অন্যতম সহযোগী পূর্ণেন্দু দস্তিদার, কালিপদ চক্রবর্তী, আবদুস সাত্তার, বিনোদবিহারী চৌধুরী, মওলানা আহমেদুর রহমান আজমী ও অনিল গুহ। মাস্টারদার স্মরণে কবিতা পাঠ করেন দীপক জ্যোতি আইচ। সভায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়:-
১. মাস্টার দা সূর্যসেনের স্মৃতি রক্ষায় রাউজান থানার নয়াপাড়া গ্রামে তাঁর ভিটিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ।
২. ১৯৫৬ সালে জালালাবাদে শহীদ স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ব পাকিস্তান পরিষদে যে সর্বসম্মতি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল আইয়ুবের স্বৈরাচারী শাসনের জন্য তা প্রতিষ্ঠিত করা হয়নি- এখন ঐ প্রস্তাবকে অবিলম্বে কার্যকর করা হোক।
৩. এই সভা চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক ও নব নির্বাচিত এম. এন. এ. এম. এ আজিজের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে এবং তাঁর মৃত্যুতে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার শপথ গ্রহণ করছে এবং তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছে।
Source: Bangladesh Liberation War Museum