You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.01 | ১৪ অগ্রহায়ণ ১৩৭৮ বুধবার ১ ডিসেম্বর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

১৪ অগ্রহায়ণ ১৩৭৮ বুধবার ১ ডিসেম্বর ১৯৭১

মুক্তিসংগ্রামের সুদীর্ঘ আট মাসের ইতিহাসে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই প্রত্যেকটি রণাঙ্গনে বীর মুক্তিবাহিনীর গেরিলা বাহিনী অভূতপূর্ব অগ্রগতি ও সাফল্যের সংবাদ পাওয়া যায়। নভেম্বর মাসের শেষের এক সপ্তাহে রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, টাংগাইল ও নোয়াখালীর রণাঙ্গনগুলোতে দূর্বার মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদল ব্যাপকভাবে জল ও স্থল উভয়ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করে। পাকবাহিনী বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনেকগুলো মুক্তাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। এসব স্থানের মধ্যে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক রংপুরে নাগেশ্বরী থানা, দিনাজপুরের পচাগড় মহকুমা, টাংগাইল জেলার ব্যাপক অংশ, সিলেটের শমসের নগর শহর, নোয়াখালীর পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া প্রভৃতি স্থান দখল ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের গণমাধ্যমেও এইসব সাফল্যের সংবাদ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্যোদয়ের নিশ্চিত সংকেত সূচক।–লেখক

মুক্তিবাহিনী এ দিন কুষ্টিয়ার দর্শন ও সিলেটের শমসের নগর আক্রমণ করে। খুলনার ভোমরা ও খালিশপুর, যশোরের বেনাপোল, আফা, সিমুলিয়া, উস্তালি, আন্দাবাড়ি, ময়মনসিংহের কামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও সালদা নদী, কুমিল্লার গংগাসাগর, পাথর নগর ও হরিমংগল এবং চট্টগ্রামের হরিনা এলাকায় যুদ্ধ চলে।

মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাকসেনারা পদে পদে মার খাচ্ছে বলে বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে খবর পাওয়া যায়। কাটুলিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা, গেরিলাবাহিনী ও পাকসেনার মধ্যে এক তুমুল লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধার মেশিনগান ও রাইফেলের গুলিবর্ষণের মুখে পাকসেনারা নাজেহাল হয়ে পিছু হটে যায়। এ সংঘর্ষে পাঁচজন পাকসেনা খতম হয়েছে বলে জানা যায়।

কুষ্টিয়ার নিকট মুন্সীগঞ্জ ও আলমডাংগা রেল স্টেশনের মধ্যে মুক্তিসেনারা মাইন বিস্ফোরণের মাধ্যমে একটি পাক সৈন্যবাহী ট্রেন সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়। বহু শত্ৰুসেনা হতাহত হয়।

সিলেটের ছাতক শহরে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষে পঞ্চাশ জনেরও বেশী নিহত হয়েছে। পাকসেনাদের পক্ষে এই যুদ্ধে লিপ্ত ৬৫ জন রাজাকারও খতম হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজার মুক্ত করে আরো সামনে এগিয়ে যায়।

চট্টগ্রাম সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধারা প্রবল চাপ সৃষ্টি করার দরুণ পাকবাহিনীর নাভিশ্বাস দেখা দেয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা জেলার কসবা রণাঙ্গনে বিশেষ সাফল্য অর্জন করে। সালদা নদী অঞ্চলের যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের ইস্পাতকঠিন আক্রমণ প্রতিহত করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও পাকবাহিনী প্রচণ্ড মার খায়। এই যুদ্ধে ৬০ জনেরও বেশী পাকসেনা নিহত হয়।

রংপুর জেলার সীমান্ত এলাকা চিলমারী ভুরঙ্গমারীতে বাংলা গেরিলা বাহিনী(মুজিব বাহিনী) বিশেষ তৎপরতা চালিয়ে পাকসৈন্য ঘাঁটিগুলি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। বহু খানসেনা খতম হয়।

মুক্তিযোদ্ধা গেরিলাদল শান্তাহার ও পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুরের মধ্যবর্তী রেল সেতুটি ডিনামাইট বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছে।

পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সাথে সত্তর মিনিট ব্যাপী একান্ত বৈঠকশেষে সাংবাদিক সম্মেলনে জামাত-ই-ইসলামের নেতা গোলাম আযম বলেন, প্রেসিডেন্টকে তিনি এ মর্মে পরামর্শ দিয়েছেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আস্থা অর্জনই হইবে বর্তমানের প্রধান কর্তব্য। প্রেসিডেন্টের দিক থেকে উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে জনগণের প্রধান কাজ হইতেছে দেশের প্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় একত্রিত হওয়া। মুক্তিবাহিনীকে শত্রবাহিনী আখ্যা দিয়ে গোলাম আযম বলেন, তাহাদিগকে মোকাবিলা করার জন্য রাজাকাররাই যথেষ্ট। -(দৈ.ই.)

শ্রীহট্টের শমশের নগর ও কুষ্টিয়ার দর্শনা দখলের লড়াই শেষ পর্যায়ে পৌঁছে, মুক্তিবাহিনী শমসেরনগর বিমানঘাঁটি থেকে পাকসেনাদের হটিয়ে দিতে তুমুল লড়াই চলে। রেডিও পাকিস্তান এ সংবাদ কবুল করে।

রংপুরে পাকবাহিনীর ঘাঁটি নাগেশ্বরী মুক্তিবাহিনীর দখলে এসেছে। ধরলা নদী পার হয়ে মুক্তি বাহিনীর এখন লক্ষ্য কুড়িগ্রাম ও কুড়িগ্রাম দখলের জন্য মরণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

এ দিন রাতে কর্নেল সফিউল্লাহ ২য় বেঙ্গলের কমাণ্ডিং অফিসার মেজর মঈন, ১১ বেঙ্গলের কমাণ্ডিং অফিসার মেজর নাসিমের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী ও বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেরাসানী, সিঙ্গারাইল, গৈয়ালসানী, রাজাপুর ও আজমপুর এলাকা শত্রুমুক্ত করে। এই যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন খাঁ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শহীদ হন। ২৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।

সিলেটের কানাইঘাটে লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৩০ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়েছে। পাকবাহিনী জুড়ি, বড়লেখা এলাকা থেকে কামান ইত্যাদি সরিয়ে ফেলেছে। মুক্তিবাহিনীর তাড়া খেয়ে পাকসেনারা কুলাউড়ায় পালিয়ে যায়।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শ্রীহট্ট, রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, রাজশাহী ও যশোর জেলার ৬২টি থানা এবং নোয়াখালী জেলার সমস্ত চর এলাকা জুড়ে অসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (আ বা প)

বাংলাদেশ সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, জীবননগরকে কেন্দ্র করে মুক্তিবাহিনী এখন যশোর-কুষ্টিয়া সেক্টরে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে চারদিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে মুক্তিবাহিনী দর্শনা, আনসেরবাড়ি ও উথলি রেল ষ্টেশন মুক্ত করেছে। (আ বা প)

সাতক্ষীরা মহকুমার কালিগঞ্জ পাকবাহিনী-মুক্ত হওয়ায় বিপ্লবী বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান, জননেতা শ্ৰী ফণি মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ এম.এন.এ.অর্থসচিব কে এ জামান, আইজি পুলিশ জনাব এম এ খালেক কালিগঞ্জে অসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠাক্যাম্পে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এ এলাকার শরণার্থীরাও ফিরে আসতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, নভেম্বর ১৯ তারিখে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর হাত থেকে কালিগঞ্জ মুক্ত করে।

দিনাজপুরের বোদা দখল করার জন্য মুক্তিবাহিনী মরণপণ লড়াই করে চলেছে। ২৩ জন পাকসেনা মারা গেছে। মুক্তিবাহিনী দুটি কামান আর ৩২ হাজার গুলি কেড়ে নিয়েছে। পঞ্চগড় দখলের তিনদিন পরে মুক্তিবাহিনী বোদা মুক্ত করেছে। এখন তাদের যাত্রা ঠাকুরগাঁর দিকে।

পাকসেনারা হিলি থেকে বালুর ঘাটে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করেছে। আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছেঃ বালুর ঘাটে হিলিতে অবিরাম গোলাগুলি চলছে। গোলার শব্দে কান পাতা দায়। বুধবার পাকবাহিনীর গোলায় সাতজন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মারা গিয়েছে পাঁচজন। তার মধ্যে এক পরিবারেরই চার জন। এ পর্যন্ত মোট নিহত ৩৩। উল্লেখ্য এপ্রিল মাস থেকে মাঝে মাঝেই পাক বাহিনী বালুরঘাটে গোলাবর্ষণ করে। ফলে বেশ কিছু সংখ্যক বেসামরিক লোক নিহত হয়। লেখক দু’বার এই এলাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে পরিদর্শন করেছিলেন।

ভারতীয় সেনাবাহিনী পশ্চিম ফ্রন্টে আক্রমণাত্মক এবং পূর্ব-ফ্রন্টে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশকে হানাদার বাহিনী থেকে মুক্ত করার পরিকম্পনা গ্রহণ করে। অবশ্য পশ্চিমফ্রন্টে ভারতীয় সেনাবাহিনী অনুকূল পরিস্থিতির সুযোগে কোন কোন সেক্টরে পুরোপুরি আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে যতদূর সম্ভব অগ্রসর হওয়ারও পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামরিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যগুলো নিম্নরূপঃ

(এক) যথাসম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে সর্বাধিক তিন সপ্তাহের ভেতরে) মুক্তিফৌজের সহযোগিতায় বাংলাদেশ স্বাধীন করা।

(দুই) চীনের দিক থেকে সম্ভাব্য হামলার বিরুদ্ধে ভারতের উত্তর সীমান্ত রক্ষা করা।

(তিন) আক্রমণাত্মক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতের সংহতি রক্ষা করা।এবং

(চার) নাগাল্যাণ্ড, মনিপুর এবং মিজোরাম এলাকার বিদ্রোহ তৎপরতা দমন করা। এই কাজগুলো মোটেই সহজসাধ্য নয়। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি দ্রুত সৈন্য চলাচলের জন্য অনুপযুক্ত। পুরো দেশ জুড়ে রয়েছে নদী নালা খালবিল। এগুলোর জন্য যে-কোন বাহিনীর অভিযাত্রা ব্যাহত হতে বাধ্য। (১০ম খণ্ডঃ ৩৭ পৃঃ)

রাওয়ালপিণ্ডিতে জনৈক সরকারী মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান, অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমানের বিচার এখনও শেষ হয়নি। তিনি উল্লেখ করেন পূর্ব পাকিস্তানের চারটি রণাঙ্গনে যে আক্রমণাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধী পার্লামেন্টের উচ্চপরিষদে (রাজ্য সভা) বক্তৃতাকালে উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানী সৈন্য অপসারণের নির্দেশ দেবার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানী সৈন্য অপসারণই সমস্যার শ্রেষ্ঠ সমাধান। তিনি ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের জনসাধারণকে প্রস্তুত থাকারও আহবান জানান।

পদ্মা নদীর দক্ষিণ ও মেঘনা নদীর পশ্চিমে দক্ষিণ-পশ্চিম সেক্টরে ফরিদপুর এবং খুলনাকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে দ্বিমুখী অভিযান চালান হয়। উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় আগষ্ট মাস থেকে সেক্টর কমাণ্ডার ছিলেন মেজর মঞ্জুর। জুলাই মাসে তিনি তিনজন অফিসারসহ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসেন এবং ৮নং সেক্টরের কমাণ্ডার নিযুক্ত হন। এই এলাকায় অপর সেক্টর ৯নং সেক্টরের কমাণ্ডার ছিলেন মেজর জলিল। দক্ষিণ পশ্চিম এলাকা দুভাগে বিভক্ত ছিল। পশ্চিমে চৌগাছার উত্তর থেকে মধুমতি নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। চৌগাছা অঞ্চলে সম্মিলিত মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর সংগে পাকবাহিনীর প্রথম প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ শুরু হয় ২০ নভেম্বর থেকে। ২৪ নভেম্বর চৌগাছা মুক্ত হয়। ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মিলিত বাহিনী ঝিকরগাছা মুক্ত করে এবং যশোরের ওপর ত্রিমুখী আক্রমণ শুরু করে।

মেঘনা নদীর উত্তর-পূর্ব সেক্টরে সিলেট অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর অভিযান পরিচালিত হয়। এই অঞ্চলে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে ‘জেড ফোর্স’ যুদ্ধ করছিল অক্টোবর মাস থেকে। প্রথম ব্যাটেলিয়ান শ্ৰীমংগলে, তৃতীয় বাটেলিয়ান ছাতকে, আর অষ্টম ব্যাটেলিয়ান কুলাউড়াতে তৃতীয় ব্যাটেলিয়ান ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী মুক্ত করে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে, তারপর তারা ২৮ নভেম্বরের মধ্যে একে একে ভিট্টিখেল, লুনি দাউরিখেল, গোয়া, শিমুলতলা, ছোটখেল মুক্ত করে। ২ ডিসেম্বরের মধ্যে পাকিস্তানীরা সমগ্র রাধানগর এলাকা ছেড়ে যায়।

মেঘনা নদীর পূর্ব-সেক্টরে সম্মিলিত বাহিনীর যুগপৎ আক্রমণ পরিচালিত হয় আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, আশুগঞ্জ ও নরসিংদীতে। মেজর শফিউল্লার অধিনায়কত্বে এস ফোর্স এ অঞ্চলের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। ১ ডিসেম্বর থেকেই ‘এস ফোর্সের’ তিনটি ব্যাটালিয়ান আখাউড়া এলাকায় আক্রমণ শুরু করে। আজমপুর রেল ষ্টেশন পর্যন্ত এলাকা মুক্ত হয় দুদিনের মধ্যেই।

ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর ও নোয়াখালির অংশ নিয়ে গঠিত দুই নম্বর সেক্টরে বাংলাদেশ বাহিনীর ‘কে ফোর্স’ তৎপর ছিল। মেজর খালেদ মোশাররফ ‘কে ফোর্সের’ অধিনায়ক ছিলেন। কে ফোর্সের মধ্যে ছিল চতুর্থ, নবম ও দশম ইষ্টবেংগল রেজিমেন্ট এবং প্রায় ৩৫ হাজার গেরিলা। দুই নম্বর সেক্টরে নয় মাস ধরে শালদা নদী গংগাসাগর, বেলোনিয়া, ফেনী, মিয়ারবাজার, চৌদ্দগ্রাম এবং কসবায় পাকবাহিনীর সংগে নিয়মিত সংঘর্ষ চলে। কসবা অঞ্চলে ২৩ অক্টোবর এক ভয়াবহ যুদ্ধে মাথায় শেলের স্পিন্টার লেগে মেজর খালেদ মোশাররফ আহত হন এবং কয়েক মাস পুনা সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন। ‘কে ফোর্সে’ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন মেজর আবু সালেক চৌধুরী।

এ দিন (১ ডিসেম্বর) জাতিসংঘ থেকে‘দি গার্ডিয়ান’-এর সংবাদদাতা ম্যাল্‌কম্‌ ডীন কর্তৃক প্রেরিত এক সংবাদে বলা হয়, ১৬ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল কর্তৃক প্রায় একশোটি দেশের প্রতিনিধিদের সংগে সাক্ষাতের পরও জাতিসংঘের ১৩১টি সদস্য-দেশের একটিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করেনি।

ঢাকা হাইকোর্টের প্রবীণ বিচারপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত উচ্চ মর্যদাসম্পন্ন প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন আরও একজন ভাইস-চ্যান্সেলর, দুজন রাষ্ট্রদূত এবং আওয়ামী লীগের ৮ জন গণপরিষদ সদস্য।

সাংবাদিকদের নিকট প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা বিচারপতি চৌধুরী বলেন, বর্তমানে জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা অনুচিত। মার্চ মাসে ইয়াহিয়া খান যখন হত্যাযজ্ঞ শুরু করে তখন এ ব্যাপারে তাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল।

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী