You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.08.30 | বাংলার বাণী সম্পাদকীয় | সমাজতান্ত্রিক দেশের সাহায্য | শেখ মণি - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ৩০শে আগস্ট, শুক্রবার, ১৩ই ভাদ্র, ১৩৮১

সমাজতান্ত্রিক দেশের সাহায্য

সোভিয়েত ইউনিয়ন ও দুইটি পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রে উনিশ দিনব্যাপী সফরের পর শিল্পমন্ত্রী নূরুল ইসলাম গত বুধবার ঢাকায় ফিরে এসেছেন। বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রকল্পে সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুগোস্লাভিয়া, রুমানিয়ার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সাহায্য পাওয়া যাবে।
চলতি বছরে বাংলাদেশের খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুগোস্লাভিয়া ও রোমানিয়া খাদ্যশস্য সরবরাহ করবে বলে তিনি জানান। সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুগোস্লাভিয়া ও রোমানিয়া সফরের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে বন্যা দুর্গতদের জন্য ৩০ লক্ষ রুবলের সাহায্য সামগ্রী প্রদান করেছেন। উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সোভিয়েত ইউনিয়ন সাহায্য প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানা সম্প্রসারণ সম্পর্কে খসড়া চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে এবং শিগগিরই তা স্বাক্ষরিত হবে। এছাড়া একটি টেক্সটাইল মিল প্রতিষ্ঠা এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি সহ বিভিন্ন প্রকল্পে কাঁচামাল সরবরাহ সংক্রান্ত প্রশ্নাবলীও আলোচিত হয়েছে।
যুগোস্লাভিয়া বাংলাদেশের বন্যা দুর্গতদের জন্য ১ লক্ষ ২৫ হাজার ডলার সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন। জরুরী ভিত্তিতে সাহায্য সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে।
রুমানিয়া পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধীনে পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স এর পি,ভি,সি এবং পি,এস,সি প্রকল্প দুইটি নির্মাণে রুমানিয়া কারিগরি ও যন্ত্রপাতি সাহায্য প্রদানের সম্মত হয়েছে। এছাড়া রোমানিয়া একটি লেদার কমপ্লেক্স ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান সাহায্য করবে। ২৫ হাজার স্পিন্ডল ও ৫শত তাঁত বিশিষ্ট একটি টেক্সটাইল মিল স্থাপনে স্বীকৃত হয়েছে রোমানিয়া। এবং অনুরূপ আরেকটি মিল স্থাপনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। বন্যা দুর্গতদের প্রতি সহানুভূতির নিদর্শন স্বরূপ ৫০ হাজার ডলার সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন।
গত বছরের আগস্ট মাসে কমনওয়েলথ প্রধানমন্ত্রীও সরকারপ্রধানদের সম্মেলন শেষে টরন্টোর সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা গ্লোব এণ্ড সেনোর প্রতিনিধির কাছে আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের জাতীয় পূনর্গঠনের জন্য আমাদের সাহায্য চাই। সরকারের নীতি হচ্ছে এই সাহায্য সম্পূর্ণ শর্তহীন হতে হবে। সমাজতান্ত্রিক দেশ গুলি থেকে পৃথিবীর উন্নয়নকামী সদ্য স্বাধীন দেশ গুলি এইরূপ সাহায্য আশা করতে পারে। কারণ সাম্রাজ্যবাদী সাহায্য তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কোনো না কোনোভাবে সরকার দ্বারা আবদ্ধ। প্যারিস শান্তিচুক্তির পর ইতিমধ্যেই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো উত্তর ভিয়েতনামকে গড়ে তোলার জন্য ৮০০ কোটি ডলারের একটি সাহায্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পৃথিবীতে অনেক স্বাধীন দেশ তাদের জন্মের পরপরই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির সাহায্য পেয়ে টিকে রয়েছে। চীনের বিপ্লবের পর পরই সোভিয়েত ইউনিয়ন সেখানে সাহায্যের হাত সম্প্রসারণ করেছিল। কিউবার বিপ্লব সরকারকে শক্ত সমর্থক করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং সাম্রাজ্যবাদী অবরোধ ছিন্ন করার ক্ষেত্রে সোভিয়েত ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের সাহায্যের কথা সর্বজনবিদিত। পাশাপাশি পর্যাপ্ত বাস্তবিক সাহায্যের অভাবে চিলির অর্থনীতি আলেন্দে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। জনগণ আলেন্দেকে ভুল বুঝতে আরম্ভ করেছিল। আর সাম্রাজ্যবাদের অনুচররা তার পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে সেখানকার প্রগতিশীল সরকারকেও উৎখাত করেছে। একটি নতুন প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে তাই বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক শিবির থেকে বিশেষ সমর্থন আশা করে। একটি অনগ্রসর সমাজ ব্যবস্থা এবং অনুন্নত দেশকে দ্রুত গড়ে তোলার জন্য যে প্রকৃত সমর্থন দরকার তার প্রয়োজনীয়তার কথা কারোর পক্ষেই ভোলা চলবে না। সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক দায়িত্ববোধ শিথিল হলেই সাম্রাজ্যবাদ মচ্ছব মিলিয়ে বসে তার নজির আমাদের সামনেই রয়েছে। তাই কেবলমাত্র রাজনৈতিক সমর্থনের উপর ভিত্তি নির্ভর না করে প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সরকার চাইবে তার দেশের অর্থনীতিকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে। জাতীয় স্বাধীনতাকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য এবং সংহত করার জন্য তাদের কাছে এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের বিশ্বাস বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম সমাজতান্ত্রিক শিবিরের বন্ধুদেশগুলোকে বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন করে এসেছেন।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন