You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.31 | ১৩ কার্তিক ১৩৭৮ রবিবার ৩১ অক্টোবর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

১৩ কার্তিক ১৩৭৮ রবিবার ৩১ অক্টোবর ১৯৭১

রাওয়াল থেকে জেনারেল ইয়াহিয়া খান এক বিবৃতি বলেনঃ পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক গোলযোগের পর আমাদের যে সমস্ত নাগরিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন, আমি বার বার তাঁদেরকে ঘরবাড়ীতে ফিরে এসে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানিয়েছি। তাঁদের কে পূর্ণ নিরাপত্তার এবং প্রত্যাবর্তন ও পুর্নবাসনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব রকম সুযোগ সুবিধা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়ের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির উদ্দেসশ্যে পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক সরকারে তাদের একজনকে মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে।(দৈঃপাঃ)

  কাকরাইল পেট্রোল পাম্পে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল দক্ষতার সাথে বিস্ফোরণ ঘটায়।

  পশ্চিম দেওঘর শান্তি কমিটির সদস্য ডাঃ হাবিবুর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধারা খতম করেন। উল্লেখ্য, তার দালালী স্থানিয়ভাবে অশান্তি সৃষ্টি সহ ত্রাশের রাজস্ব কায়েম করেছিল।

   ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী মিঃ এডয়ার্ড হীথের মধ্যে পাক-ভারত সংকট ও বাংলাদেশ বিষয়ের ওপর আনুষ্ঠানিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পল্লী নিবাস ‘চোকারস’ এ দু’দিন একান্ত কথাবার্তা হয়। এতাকে ভারত- ব্রিটেন শীর্ষ সম্মেলন বলা হয়েছিল।  উল্লেখ্য সরকার মহলে, সাংবাদিকদের কাছে এবং সাধারণ মানুশের চোখে এ সম্মেলন জল্পনা –কল্পনা সৃষ্টি হয়েছিল।

    নয়াদিল্লীতে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা দফতরের একজন মুখপাত্র বলেন, সীমান্তে পাকিস্তান ও ভারতের সেনাবাহিনী মাত্র এক কি দুই মাইলের ব্যবধানে পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থান করছে। ইতিমধ্যে ভারতীয় সৈন্যরা পূর্ব সীমান্তে বেশ কয়েকটি পাকিস্তানী হামলা প্রতিহত করছে। কয়েকটি বড় রকমের সংঘর্ষ হয়েছে।

  পূর্বপাকিস্তানের গভর্নর ডাঃ এ.এম.মালেক পাকিস্তানের উর্দু ডাইজেক্ট এর সাথে এক সাক্ষাতকারে বলেন, আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিক্তিতে বেশ কয়েক বছর আগে পরিচালিত হিসেব করা আন্দোলনেরই ফল। বাঙালী জাতীয়তাবাদ যে পাকিস্তানের বিরোধী তা নিশ্চিতভাবে প্রমানিত হয়েছে।

  এই সময়ে মুক্তিবাহিনী অবরুদ্ধ বাংলাদেশে আক্রমনাত্নক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। পাকবাহিনীর দালাল, রাজাকারদের নভিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল। জামাতে ইসলাম, মুসলিম লীগের রাজাকার সংগঠক, পাক সেনাদের দোসররা পালিয়ে শহরে আশ্রয় নিতে থাকে। এই সময়ের মুক্তিবাহিনীর গেরিলা সহ অন্যান্য তৎপরতা সম্বন্ধে সাংবাদিক D.R. Manekekar লিখেছেন, “ The  Bahini now displayed increasing aggressiveness. Their guerrillas’ disrupted Pakistani communications blew up bridges, ambused army convoys, attacked their ships carrying arms and supplies in ports and rivers and cut off Pakistani garrisons from each other and from the headquarters in Dhaka. So much so, the Pakistani troops dared not move out after dusk expect in platoon strength, but with guarantee of safety. (p41-42)

করতে থাকে তখন থেকে সাড়া বিশ্বকে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা আমরা করছি। কিন্তু তেমন কোন ফলোদয় হয় নি। যখন আমাদের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা আশংকার সম্মুখীণ তখনই সীমান্তে আমরা সৈন্য মোতায়েন করছি। আমাদেরকে সৈন্য প্রত্যাহার করার জন্য জাতিসংঘ থেকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে জাতিসংঘ পরিদর্শক দল প্রেরণ করবে। তিনি বলে,ভারত জাতিসংঘ পরিদর্শক দল পাঠানোর বিরুদ্ধে নয়। ভারতেও দশটি জাতিসংঘ উদ্বাস্তু পরিদর্শক দল রয়েছে। তাঁরা যেখানে খুশী ঘুরে দেখতে পারে।” (কে সি এ পৃঃ ২৪৯৯৩) উল্লেখ্য, লন্ডনে পাকপন্থী কতিপয় বাঙালী ইন্দিরাজীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান। এটা ছিলা পাকিস্তানের হাস্যকর প্রয়াস। তাঁর পাশে ইন্দিরাজীকে স্বাগত জানিয়েছে দেশপ্রেমিক প্রবাসী বাঙালীরা। তাঁদের বলিষ্ঠ সমাবেশগুলো খুব স্পষ্ট ভাবেই দুইয়ের পার্থক্য ফুটিয়ে তুলেছিল।

-আনন্দ বাজার পত্রিকায় তারাপদ বসু এক প্রতিবেদনে শ্রীমতি গান্ধীর ব্রিটেন সফরকে পর্যালোচনা করেছে তাতে তিনি তিনটি জিনিষ উল্লেখ করেছেন। প্রথমটি হ’ল বাংলাদেশ পূর্ণ স্বাধীন হবে। দ্বিতীয় হ’ল, পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে যত শরণার্থী ভারতে পাঠিয়েছে তারা সকলে সসম্মানে স্বদেশে ফিরে যাবেন। ব্রিটেন বুঝছে যে, ইন্দিরাজী তাঁর এই প্রতিজ্ঞা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন। তৃতীয়টি হ’ল পাকিস্তানী অপপ্রচার। পাকিস্তান বলেছে যে, হিন্দুরা বাংলাদেশের ব্যাপারে উৎসাহী নয়। তারা ভারতে চলে যেতে চায়। অথচ যারা দেখেছেন তারা জানেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সাম্প্রদায়িক পথে চলছে না। মুক্তিবাহিনীর শতকরা তিরশজন সৈন্য হিন্দু। বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ করে তরুনদের কাছে পাকিস্তান একটি ঘৃণ্য, বর্জনীয় স্মৃতি। প্রবীনরা একদা পাকিস্তানকে সমর্থন করে প্রচণ্ড ভুল করেছেন বলে স্বীকার করেন শেষোক্তদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মওলানা ভাসানী। (আনন্দসঙ্গী পৃঃ৩১৪) উল্লেখ বিদেশে অবস্তানরত শিখদের দিয়ে পাকিস্তান সরকার ‘শিখিস্তান’ বা খালিস্তান সংগ্রাম লন্ডনে ঘোষণা করে।

-“দি সানডে টাইমস’ এ প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, মুক্তিবাহিনী প্রায় আট’শ জন সদস্য ঢাকা শহরের কয়েকটি এলাকায় দিনে-দুপুরে গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীকে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাধ্য করে। ঢাকা থেকে বিশ্বস্ত সূত্রে প্রাপ্ত এই সংবাদে বলা হয়, ১৯ অক্টোবর সকাল ১০ টা ৫৭ মিনিটে মতিঝিল এলাকায় হাবিব ব্যাংকের সামনে এক বোমা বিস্ফোরণের ফলে ৫ জন নিহত, ১৩ জন আহত এবং ৭টি মোটরগাড়ী একটি ট্যাক্সি ও দুটি সাইকেল –রিক্সা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরদিন ষ্টেট ব্যাংক ভবনেও একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এই সংবাদের সঙ্গে বোমা-বিধ্বস্ত মতিঝিল এলাকার একটি আলোকচিত্র প্রকাশিত। মুক্তিবাহিনীর কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে বলে বাংলাদেশ বেতারে ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁদের আক্রমণের ফলে ঢাকার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওায়ার আশংকা থাকার কর্তৃপক্ষ ৩৫০ টি অগভীর নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করেছে। ধাকার প্রাপ্ত এক সংবাদে প্রকাশ মুক্তিবাহিনী নেতৃত্বোধীন এক লক্ষ গেরিলা যোদ্ধা বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মতৎপরতা রয়েছে। গত কয়েক মাসে তারা বিভিন্ন এলাকায় ১৬৫ টি পুল ধ্বংস, খুলনা ও চট্টগ্রামের ৫৩ ট জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ঢাকায় একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। তাছারা ১,৬০০ টন মাল বহনের উপযোগী একটি বজরাও ধ্বংস করা হয়।  

আগষ্ট একটি প্যারেড গ্রাউণ্ডে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গেরিলা যোদ্ধারা ৮ জন রাজাকারকে হত্যা এবং ১৫ জনকে আহত করে। (“দি সানডে টাইমস”, ৩১ অক্টোবর,১৯৭১)

-মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা সম্বন্ধে ইতিপূর্বে যে সব ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে তা ছাড়াও কতিপয় উল্লেখযোগ্য ঘটনা বিদেশী পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সে সব বিবরণের সারাংশ দেয়া হল। এসব ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মনিটরিং করা হয়েছিল। (লেখক)

PROGRESS OF THE MUKTI BAHINI FOR THE MONTH OF OCTOBER, 1971 (1October-15 October)

Intensive fighting was reported from across the border in all sectors. The Pakistan Army and civil forces suffered heavy casualties in fierce encounters with the Liberation Army in the Jessore, Barisal, Sylhet and Rangpur sectors. During the previous week the Mukti Bahini had killed at least 118 Pakistani troops in several actions in the Comilla, Sylhet and Noakhali districts. In the Tangail district during the same period about 80 Pakistani soldiers were killed and several severely wounded. Heavy fighting was also reported from the Dawki area, particularly around Jaintipur and sarighat. Jaintiapur holds the key to ferry crossing which leads to the stretch to Sylhet Intense fight during this fortnight was also reported from the Haripur areia in Sylhet district where two important Installations are located-one, the Haripur Power plant and second, the Salutikar air base. The intensity of the fighting was so evident in these two regions, that all lights were switched off during the night for fear of guerrilla attacks. Frightened by the increasing guerrilla activity near Salutikar the Pakistani troops moved their regulars in the direction of Company gunj, supported by artillery, but they were repulsed by the Mukti bahini on 1 October. In the Jessore sector, the guerrillas raided the Baniarehung Police Station. IN the Netrakona area they captured Dharmapasha police station. In the Dianjpur sector an Army Major and a capitan were killed besides a member of Pakistani troops. In the Chittagong sector the Mukti Bahini occupied four villages in the Belonia area. Sabotage: Many bomb attacks were reported from Dacca. Bombs were thrown at a regional election office, Dacca State Bank, Dacca High School. A jute mill was also burnt during the fortnight. Monem khan, a former Governor of East Pakistan and a supporter of the military regime was killed (13 Oct) in his hosue in Dacca by the goerilnas. A robbery was committed by the guerrillas in Habib Bank. Railway Communicatiosn between Dacca and Mymensing were frequently disturbed because of sabotages, The guerrillas destroyed a barge in Chittagong and along with it several hundred bales of jute on2.October. The Times (25 Sept.) reported the severe damage caused to a 16000 ton British Cargo ship Teviot Bank on 19 Sept. It was attacked by frogmen with limpet mines. Another British ship, 10,000 ton Chakdina was attacked on 21 Sept. At the chalna port. Besides these two ships Several other vessels including two ocean going steamers, a Pakistani tanker and several barges were reported to be lying damaged in the Chalna port. It is reported that representatives of shipping companies as a result of these heightened guerrilla activites, warned their principals against operating in East Bangal ports (The times 25 Sept). The guerrilla also damaged a Greek tanker with mines. During the same period, they destroyed a 3000 ton Cargo steamer near Ashuganj three bogies of a train. Naval Commandos blasted a massive Pakistani Ship M.V Nasin on8 October and put out of

October and put ot of commission two jetties in theChittagong port. As a result of this action fifty Pakistani troops were killed. The same day, the commandos blasted another oil tanker at chalna. To reduce the danger of guerrilla attacks on ships and other river crafts, it is reported that naval crafts have been employed to prevent fishing boats from playing in rivers after sun set.

              (16 October-31 October)

About 100 Pakistani soldiers including a lieutenant were killed when the Mukti Bahini launched a fierce offensive on an enemy position at khejuricherra Tea Estate in Eastern Sylhet. Regarded as the second biggest tea estate in Bangladesh, freedom fightes completely destroyed it after setting fire to sprawling plantations on 16 October. The Mukti Bahini foiled an attempt by the Pakistani Army to recapture Saldandai area in the Comilla district on 18 October, killing two officers and eighteen troops. About 100 Pakistani troops were killed by guerrillas on different dates during the first fortnight in the Sylhet sector, when three major Pakistani artillery installations along with hundreds o bunkers were completely destroyed as a result of heavy Mukti Bahini shelling. A substantial quantity of arms and ammunitions along with 6,000 rifles were captured in these engagements, while retreating Pakistani forces killed about 100 villagers in a neighbourning village Sasthala in retaliation. The Mukti Bahini was also reported to have be sieged Chhatak, the important industrial township of Sylhet. Heavy Pakistani casualties were also reported from Rangpur-Dinajpur, Sylhet- Mymensingh and Dacca-Comilla-Chittagong sectors.

Pakistani ruling classes no longer claim that East Bengal has returned to a normal. On the otherhand, the growing strength of Bangladesh resistance has frightened them. For example Major General Farman Ali, Adviser to Governor A M Malik admitted (19 oct) that there have been greater increase in sabotage as compared with June and July period. He said taht Southern districts were the worst hit areas. He admitted thatcasualties were few ‘but its bang that counts.’ A member of operation Omega. Mr. Jin scarlett reported (28 sept.) that he had seen fighting in daylight in three areas in the Jessore sector. During the fortnight Mukti Bahini men shelled Comilla town, causing heavy damage to establishments and in inflicting heavy casuality on Pakistani army personnel. As a result of these actions panic sticken people almost deserted the town forcing the closure of markets and other commercial and industrial establishments. Pakistani troops were also reported to have withdrewa from most of the camps in the out skirts of teh town, presumably to avoid casualties and to protect the main town area from any possible guerrilla attack. The Mukti Bahini was reported to have liberated large areas of Feni in the Noakhali district by pushing back the Pakistani troops on 24 October. They have also occupied more areas in the Mandabhag area of Comilla secotr and Araibari in the Kasba area, cutting off the road link between the southern and Northern parts of Camilla. In Jessore Sector, about 20 Pakistani soldiers were Killed and several more injured in an encounter in Darsana area of Kusthia district on 29 October.

Sabotage: A 10000 ton oil tanker Burmah Jade was crippled on 28 October. Muzaffar Ahmed, Vice-President of district Muslim League, Chittagong was shot dead on 31 October.

      “জয় বাংলা বাংলার জয়

      হবে হবে হবে নিশ্চয় 

      কোটি প্রাণ একসাথে

         জেগেছে অন্ধরাতে

       নতুন সূর্‍্য উঠার এইতো সময়

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী