বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ৭ই সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, ২১শে ভাদ্র, ১৩৮০
দিল্লি চুক্তি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় আন্তরিকতা
দিল্লি চুক্তি বাস্তবায়িত করার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের যে আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে তা আশাব্যঞ্জক। জাতিসংঘের ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি এবং পাকিস্তানে আটক বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে বিপুল অর্থ ব্যয়ে সাপেক্ষে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এ পরিকল্পনা শুধু কয়েক লাখ মানুষের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্যই নয় বরং তাদের পুনর্বাসনও এই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত। দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে শুভ সূচনা হয়েছিল তা বাস্তবায়নের সম্ভাব্য সকল বাধা অপসারিত হবার পরেই কেবল স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
আসলে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর এর বাস্তবায়নের যে সমস্যাগুলো দেখা দেবে তাকে ছোট করে দেখবার অবকাশ নেই। পাকিস্তানে বাংলাদেশের যে নাগরিকেরা আটকা পড়ে রয়েছে অথবা যেসকল পাকিস্তানি বাংলাদেশে অবস্থান করছে তাদের নিজ নিজ দেশে আনা নেয়ার ব্যাপারে এবং সর্বোপরি তাদের এই সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘ সহযোগিতার সম্প্রসারিত করেছেন তা সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সমস্যা লাগবে সহায়তা করবে।
সমস্যা যেহেতু ছোট নয় সুতরাং তা সমাধানের সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের আগ্রহ এবং আন্তরিকতা সবচাইতে বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানে আটক বাঙ্গালীদের দেশে ফিরিয়ে আনা এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। ভারত সেদেশে আটক যুদ্ধবন্দীদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রী পর্যায়ের একাধিক বৈঠকে বসেছেন। যদিও সেপ্টেম্বর মাসটিতে ভারতে খাদ্য পরিবহনের ব্যাপারে রেলপথকে অনেক চাপের সম্মুখীন হতে হয় তবুও মানবিক দিকটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ভারত রেলপথের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সুযোগ করে দিতে প্রয়াসী হচ্ছে। আমরা পাকিস্তানের কাছ থেকে অনুরূপ আন্তরিকতা আশা করছি। যে মানসিকতা নিয়ে পাকিস্তান দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল এখন সেই চুক্তি বাস্তবায়নে মানসিকতা এবং আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে পাকিস্তান এগিয়ে আসবে এটাই শান্তিকামী মানুষ আশা করে।
ফেরী সার্ভিস উন্নত করা হোক
স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের অতি বড় সমালোচকও বলতে বাধ্য হবেন যে, যুদ্ধের কারণে দেশের অসংখ্য কপুল, ব্রিজ-কালভার্ট প্রকৃতির যে নিদারুণ ক্ষতি সাধিত হয়েছিল তা আশাতীতভাবে সরকার পুনর্গঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। যাতায়াত ব্যবস্থা দ্রুত ও সহজ সাধ্য না হলে কোন দেশের উন্নতি হতে পারে না। এই সাধারন সত্যটিকে সামনে রেখে দেশের সরকার তার উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে। একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধের শেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। লক্ষ লক্ষ প্রাণহানির মাধ্যমে শত শত গ্রাম-নগর ধ্বংস হবার পর দখলদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। আত্মসমর্পণের প্রাক্কালে দখলদার বাহিনী দেশের বাঁকি পুল, ব্রিজগুলো ধ্বংস করে দিয়ে যায়। যুদ্ধের স্ট্রেডিজের কারণেও মুক্তিযোদ্ধা ও দখলদার বাহিনীর উভয় কমান্ডো যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিতে বাধ্য হয়। স্বাধীনতা লাভের পর পরই নবগঠিত বিপ্লবী সরকার যোগাযোগব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য আত্মনিয়োগ করেন। এ ব্যাপারে ভারতের সেনাবাহিনী যারা আমাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা যোগাযোগ ব্যবস্থার পুনরুদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। তাতে অচলাবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। তবু নানা প্রতিকূল কারণে আজ অবধি কিছু কিছু ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল রয়েছে। এতদিন ভৈরব সেতুর পুনঃ নির্মাণ কাজ চলছিল। অনতিবিলম্বে সে কাজ সমাধান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ভৈরব সেতু অকেজো বলে এতদিন ঢাকার সঙ্গে পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা নিদারুণ সংকটের মধ্যে দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে রক্ষা করা হচ্ছিল। এই বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যম ছিল ফেরী সার্ভিস। অথচ দেশের বিভিন্ন ঘাট বা নদীপথে ফেরীর অপ্রতুলতা রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফেরী নেই বলে যাতায়াত ব্যবস্থায় দারুন সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে ঘাটপার ও নদী পথ অতিক্রমের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফেরির অভাব যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে। ঢাকা-আরিচা, আরিচা-নগরবাড়ী, আরিচা-ফরিদপুর ও আরিচা-গোয়ালন্দ পারাপারে ফেরীর অপ্রতুলতা একটি দারুণ ব্যাপার। প্রতিদিন এই সকল পথে হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। তাদের পারাপার বা যাতায়াতে ফেরির অভাব অসম্ভব দুর্ভোগের কারণ। এমনি অসুবিধা রয়েছে ঢাকার সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী বন্দর চট্টগ্রামের। এপথে সরকারের যে সকল গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ হয় তার দ্রুত অতিক্রমের পথ একমাত্র বিমানপথ। অথচ শুধু বিমান পথে এত বিপুলসংখ্যক কাজের সমাধান হতে পারে না। এছাড়া এই পথেই রয়েছে নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট প্রভৃতি জেলার যোগাযোগ। বর্তমানে যে ফেরী ব্যবস্থা রয়েছে তা যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়িয়েই চলেছে। আমরা সরকারকে অনুরোধ করবো -দেশের প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফেরী জরুরী ভিত্তিতে তৈরি করা হোক। নদী পথের ও ঘাট পারাপারের ব্যবস্থা অবিলম্বে সহজসাধ্য করা হোক। এ খাতে যে খরচ হবে তা কোনক্রমেই যোগাযোগের অব্যবস্থার দরুণ প্রতিদিন যে খরচ হয় তার চাইতে বেশী হবেনা। তাছাড়া অতীতের অব্যবস্থার দরুন যে দুর্নাম তার মাশুল আজকের দিনে টেনে বেড়ানোও কম অপচয় নয়। সরকার দ্রুত একটি কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক