You dont have javascript enabled! Please enable it! হেনরি কিসিঞ্জারের সহকারী রজার মরিস-এর চাঞ্চল্যকর সাক্ষাৎকার - সংগ্রামের নোটবুক
হেনরি কিসিঞ্জারের সহকারী রজার মরিস-এর চাঞ্চল্যকর সাক্ষাৎকার

রসার মরিস ছিলেন মার্কিনী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার-এর স্টাফ সহকারী। পরবর্তীকালে তার রচিত গ্রন্থের নাম : “আনসার্টেন গ্রেটনেস-হেনরি কিসিঞ্জার।” অত্র সাক্ষাৎকার নেয়া হয় ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। লিফসুজ : মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এবং অন্যান্য মার্কিন সরকারি সংস্থার বাইরে। এ কথাটা কিন্তু খুব ভালােভাবে জানাজানি হয়নি যে, ১৯৭১-এ বাংলাদেশের ঘটনাবলী মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগীয় আমলাতন্ত্রে বিরাট একটা অভ্যন্তরীণ সংকটের সৃষ্টি করেছিল। তাছাড়া এটাও তেমন সুবিদিত নয় যে, কিসিঞ্জারের সেই সময়কার পরিকল্পনা ও সম্ভাবনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঘটনাবলী খুব তিক্ত অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করেছিল। এ সম্পর্কে অপিনি যা জানেন আমাদের কিছু বলবেন কি? মরিস : ১৯৭৫-এর গােড়াতেই কিসিঞ্জারের একজন ঘনিষ্ঠ সহযােগী এবং প্রবীণতম অন্তরঙ্গ ব্যক্তির একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। সাক্ষাৎকারটি আমার বইয়ের জন্য। আমি তাকে ভালােভাবেই চিনতাম। খুব গম্ভীরভাবে, মােটেও কিসিঞ্জারের সমালােচনা না করে তিনি বলেছিলেন যে, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে কিসিঞ্জার আমলে তিনটি এলাকা আছে যেখানে নিয়তি বড় নিষ্ঠুর। এই তিনটি ঘটনার নায়ক যে তিনজন ব্যক্তিত্ব তারা কিসিঞ্জারের বিদেশী শত্রু তালিকায় সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি। এই তিনজন হচ্ছেন আলেন্দে, থিউ ও মুজিব। ব্যাপারটা ঠিক শত্রু-মিত্র, দোসর-বিদ্বেষী এরকম বিবেচনাপ্রসূত নয়। এই লােকগুলাে খুব সােজা কথায়, নানাভাবে পণেশ উল্টে দিয়েছিলেন। আলেন্দের উপর রাগ হবার কারণ সহজেই অনুমেয়। থিউ-এর ব্যাপারেও কিসিঞ্জার নিশ্চয়ই তখনই বুঝতে পেরেছিলেন যে, উত্তর ভিয়েতনামীদের সাথে যেকোনাে সমঝােতায় থিউ বাগড়া দিচ্ছেন ।

অন্যদের সাথে তুলনা করে আমার মনে হয়েছিল যে, মুজিব ঠিক এ দলে পড়েন না। কিন্তু অপর পক্ষে কিসিস্লারের মনে হয়েছিল, এতাে গুরুত্বপূর্ণ চীন কূটনীতি, যার উপর ভিয়েতনাম আলােচনাসহ অন্য এতাে কিছু নির্ভর করছে, (১৯৭১-এ) পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলী তার প্রভূত ক্ষতি করছে। এসব থেকে তার মনােযােগ সরিয়ে নিচ্ছে। এটা একটা অপ্রয়ােজনীয় উদ্ৰব। উপরন্তু (মুজিব) বেয়াড়া এক রাজনীতিবিদ, যিনি ঠিকমতাে কথা শুনে চলেন না।  পূর্ব পাকিস্তানের একজন রাজনীতিবিদ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন (পাকিস্তানের কারাগারে) অন্য একটা সমস্যাকে জটিল করে তুলতে পারেন এবং তার জন্য দায়ী হতে পারেন—একজন মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিনির্ধারক যে এমনটা ভাবতে পারেন, তাতেই বােঝা যায় এই বিষয়ে তার উপলব্ধিতে কী বিরাট ফাক ছিল।  যেখানে তার বােঝা উচিত ছিল যে, এখানে যেসব শক্তি কাজ করছিল সেটা তার (মুজিবের) নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিসিঞ্জারের কূটনীতিতে ব্যক্তিগত মনােভাবের ছাপ বরাবরই ছিল—সেই সাথে ছিল প্রতিহিংসাপরায়ণ মনােবৃত্তি। লিফসুজ; মনে হচ্ছে আপনি বলতে চাইছেন যে, ১৯৭১-এর দক্ষিণ এশিয়ার ঘটনাবলী নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতাকে কিসিঞ্জার প্রায় ব্যক্তিগত পরাজয় হিসাবে নিয়েছিলেন।
মরিস কিসিঞ্জার নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ঘটনাবলীকে ব্যক্তিগত পরাজয় হিসেবে নিয়েছিলেন। আমি বাংলাদেশের গুরুত্ব ঠিক বাড়িয়ে দেখাতে চাই না। কারণ মার্কিন স্বার্থের জন্য দীর্ঘকালীন কোনাে কৌশলগত পরাজয় সেটা ছিল না। আন্তর্জাতিক শক্তি ভারসাম্যে এমন কিছু পরিবর্তন হয়তাে হয়নি, তবে ব্যাপারটা ভীষণ বিব্রতকর ছিল। হাভানায় ট্যাঙ্কে চড়ে ক্যাস্ট্রোর পুনরাগমনের পর, নির্বাসিত নির্যাতিত নেতা হিসাবে মুজিবের পুনরাগমন সম্বর্ধনা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য সবচাইতে ব্রিতকর মুহূর্ত। সারা বিশ্বে মার্কিন নাক গলানাের যত নজির আছে, সেদিকে তাকালে দেখতে পাবেন যে, ছলে-বলে মার্কিনীরা গােপনে বা প্রকাশ্যে যেসব রাজনীতিবিদদের ক্ষমতায় আরােহণ ঠেকিয়ে রাখতে চায়, যেমন ভাবেই হােক শেষ অব্দি ওয়াশিংটনের খায়েশ কিন্তু পূরণ হয়ে যায় । আমি দক্ষিণ ভিয়েতনাম পতনের আগের সময়কার কথাই বলছি। চেয়ে দেখুন, সে সময় কোনাে বেয়াড়া রাষ্ট্রযন্ত্র খুঁজে পাবেন না। ম্যাকারিয়সকে ক্যাস্ট্রোর মতাে দেখালে কী হবে, সাইপ্রাসে তার গদিনসীন হওয়ার ব্যাপারটা কিন্তু মার্কিনীদের সাথে বােঝাপড়া করেই। একটা অবাধ নির্বাচনে জয়লাভ করে আলেন্দে ক্ষমতায় আসেন, যদিও মার্কিনীরা নির্বাচনে টাকা ঢেলে নানা ধরনের গোপন তৎপরতার মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তক্ষুণি ব্যাপারটা নিয়ে অত কেলেংকারি হয়নি। খুব নীরবে সব কাজ হয় এবং আলেন্দে ক্ষমতায় আসার পরপরই মার্কিন নাশকতা কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়।
কিন্তু মুজিবের ক্ষমতায় আরােহণ যুক্তরাষ্ট্র ও তার বশংবদ পাকিস্তানের প্রতি একটি প্রকাশ্য বিদ্রোহ ঘোষণা এবং প্রশাসনের জন্য মস্ত লজ্জা। এক অর্থে কিসিঞ্জারের স্বভাবটা বেশ বিস্ময়ৰ্কীয় অর্থাৎ তার চোখে পৃথিবীটা মােটের উপর নায়ক, খলনায়ক ও অনায়ক দ্বারা পরিচালিত। তার কাছে ব্যক্তিত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। নিঃসন্দেহে তার মনে হয়েছিল মুজিব, আলেন্দে, থিউ বা ম্যাকারিওস, অথবা যেই তাকে ঝামেলায় ফেলেছিল, এরা সবাই তাকে অর্থাৎ হেনরি কিসিঞ্জারকে জ্বালানাের জন্যই আবির্ভূত হয়েছেন। বাংলাদেশের ঘটনাবলী তিনি ব্যক্তিগত পরাজয় হিসাবে নিয়েছিলেন।… লিফসুজ। আচ্ছা, এটা একটু পরের দিককার কথা। মানে ১৯৭৪ ও ১৯৭৫-এর ঘটনাবলী সম্পর্কে আপনার ধারণাটা একটু জানতে চাই। ১৯৭৪ সালে মুজিব শাসনামলের দারুণ সংকটের সময়। দেশের ভেতরে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিরাট বিরাট রাজনৈতিক বিক্ষোভ হচ্ছিল। দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ হওয়ার পর এই বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে উঠে। যে মুজিব ১৯৭১-এ জাতীয় আন্দোলনের নেতা ছিলেন, তিনি ১৯৭৪-৭৫-এ এক ধরনের ‘নন্দঘােষ’ হয়ে উঠলেন, যার উপর সমস্ত দোষ চাপানাে হতে লাগলাে। হতাশা এবং তিক্ততা তার বিরুদ্ধে তীব্রভাবে কাজ করতে লাগলাে। আমাদের বলা হয়েছে যে, কোলকাতায় গােপন আলাপ-আলােচনার সময় যাদের সাথে যুক্তরাষ্ট্র গােপনে ১৯৭১-এ যোগাযোগ করেছিল, তারা নাকি ১৯৭৫-এ জানতে চেয়েছিল যে, একটা সম্ভাব্য অ্যুত্থান ঘটাতে পারলে তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে? এখন যেহেতু আপনি তাে এই দেশ দুটোর সম্পর্কের পটভূমি সম্বন্ধে এবং মুজিবের প্রতি কিসিঞ্জার-এর দৃষ্টিভঙ্গি ভালােভাবেই জানেন সেহেতু আপনার কি মনে হয় যে, কিসিঞ্জারের পক্ষে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে কোনাে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেওয়া সম্ভব ছিল? অথবা যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের পরিবর্তন সমর্থন করবে এ ধরনের কোনাে কথা কি তিনি বলে থাকতে পারেন? মরিস : হ্যা, হ্যা। দুটো কারণে এ ধরনের ঘটনা আমার খুবই বিশ্বাসযােগ্য এবং সম্ভব বলে মনে হয়।
প্রথমত, যেসব সরকার এমনিতেই নড়বড়ে সেগুলােকে গদিচ্যুত করতে কিসিঞ্জারের একটুও বাধতে দ্বিতীয়ত, ওয়াশিংটনে গদিতে যেই বসে থাকুক না কেন এবং বিবেচ্য বিষয়াটার আদর্শগত বা রাজনৈতিক দিকটি যেমনই হােক না কেন; যেকোনাে সিআইএ স্টেশনের প্রবণতা হচ্ছে অভূত্থানে ইতিবাচক সাড়া দেওয়া আর যােগাযােগের দরজা খােলা রাখা। লিফসুজ । কিন্তু ঘটনাটা তাে ১৯৭৫ সালের; যখন বিদেশে নেতা হত্যাকাণ্ডের উপর ‘চার্চ কমিটির শুনানি নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। এরকম ক্ষেত্রে কি কিসিঞ্জার ইতিবাচক ইঙ্গিত দিতে ইতস্তত করতেন না? মরিস : প্রশাসনের মধ্যে কতরকম খেলা যে চলতাে তা আন্দাজ করা আপনার ও আমার অসাধ্য। এক্ষেত্রে একটা নড়বড়ে সরকারকে উৎখাত করতে এর যতাে ঝুঁকিই থাক—তার জায়গায় একটা সম্ভাব্য উন্নততর অন্তত নিকৃষ্ট নয়—এমন একটা মার্কিন বশংবদ সরকার বসাতে কিসিঞ্জার বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতেন না। কিসিঞ্জার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা এককালে ক্যাস্ট্রোকে বিষ খাওয়ানাে বা লুমুম্বাকে খুন করবার চক্রান্তের ব্যাপারগুলাে থেকে তাদের নিজেদের এসব কর্মকাণ্ড আলাদা মনে করতেন। কিসিঞ্জার হয়তাে একে বলতেন ‘রাজনৈতিক পালাবদলের জোয়ার-ভাটা অবলােকন’। তাতে তিনি একটা ভূমিকা পালন করতেন।… লিফসুজ : আমাদের কাছে বেশ কিছু সূত্র যুক্তি দেখিয়েছে যে, অভ্যুত্থানের পর মার্কিন সমর্থন ও সাহায্য চাইছে এমন একটা বিরুদ্ধ পক্ষকে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়ার জন্য স্থানীয় ও পররাষ্ট্র দফতরকে পাশ কাটিয়ে একটা আলাদা স্বতন্ত্র যােগসূত্র ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে।
পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা তখন চার্চ কমিটির শুনানি এবং হেস্ ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আইনগত ব্যবস্থার কথা ভেবে অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত ছিলেন। স্থানীয় কূটনৈতিক কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দেওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত সাবধান হয়ে যাওয়ায় এবং বিশেষত কিছু পররাষ্ট্র দফতর কর্মকর্তা যােগাযােগটা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করায় কিসিঞ্জারের পক্ষে কি আলাদা কোনাে সূত্র ব্যবহার করা সম্ভব ছিল? পররাষ্ট্র দফতর ও সিআইএকে পাশ কাটিয়ে কাজ করাটা কি তার ধরনের সাথে মিলতাে? অভিযােগ আছে যে, ১৯৭১-এ তিনি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে কর্মরত স্যানডার্স-এর সাহায্যে পররাষ্ট্র দফতরকে পুরােপুরি পাশ কাটিয়ে যান এবং তিনি কোলকাতায় ও দিল্লীতে সিআইএ স্থানীয় ঘাটিকে একাজে ব্যবহার করেন। সেই ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র ও সিআইএ দুটোকেই সম্পূর্ণভাবে পাশ কাটিয়ে সরাসরি একটা যােগসূত্রের ব্যবহার তার স্বভাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল কি? | মরিস : হ্যা, এটা সম্পূর্ণ বিশ্বাস্য আর বাংলাদেশের ব্যাপারগুলাে বিবেচনার বাইরে রেখেই কথাটা বলছি।…. লিফসুজ : এই পুরাে সময়টা, মানে ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫-এর মধ্যে দক্ষিণ এশীয় বিষয়ে কিসিঞ্জারের প্রধান সহায়তাকারী ছিলেন হ্যারল্ড স্যানডার্স। এর সম্বন্ধে বলা হয়ে থাকে যে, স্যানডার্স নাকি ১৯৭১-এ মােশতাকের সাথে গােপনে আলােচনা করেছিলেন। আইসেনহাওয়ার ও কেনেডীর আমলে এমনকি জনসনের আমলেও পররাষ্ট্র দফতরের উঁচু পদে সিআইএ কর্মকর্তাদের নিয়ােগকে খানিকটা কুরুচিপূর্ণ মনে করা হতাে। স্যানডার্স-এর সম্বন্ধে, বিশেষ করে এই ঘটনাবলীতে ‘মুজিব নগর ষড়যন্ত্রে’ তার ভূমিকা সম্বন্ধে কী জানেন? মরিস : কর্মজীবনে সাফল্য লাভের জন্য স্যানডার্স দুটো কৌশল ব্যবহার করে এসেছেন।

এক, একজন আদর্শ অনুগত এবং সদাপরিশ্রমী কর্মচারী হিসাবে নিজেকে উপস্থাপিত করা। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে তার বিন্দুমাত্র রাজনৈতিক অভিমত নেই এবং তিনি অত্যন্ত সরল লােক। মানে আমি বলতে চাইছি যে, আমলা বলতে যদি আপনি এমন কাউকে বােঝান যিনি আদর্শ ও প্রশাসন নির্বিশেষে সমস্ত নির্দেশ পালন করেন, তাহলে স্যানডার্সকে একজন আদর্শ আমলা বলতে পারেন। নির্বাচনে ক্ষমতা বদল হলেও মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে কেন কোনাে পরিবর্তন হয় না; তার কারণ হচ্ছে স্যানডার্স ও তার সগােত্র লােকদের অস্তিত্ব। হিসাব কষলে দেখতে পাবেন যে, স্যানডার্স এতােদিনে পাঁচটি প্রশাসনে কাজ করেছেন। দারুণ রেকর্ড। ক্ষমতায় যিনিই আসুন না কেন স্যানডার্স ঠিক টিকে যান। কারণ ডেমােক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে যারা ভেতরের খবর রাখেন, তারা জানেন যে, আগের সরকারে স্যানডার্স ঠিক যতখানি অনুগত, সতর্ক এবং কাজের ছিলেন, নতুন সরকারেও স্যানডার্স ঠিক তাই থাকবেন। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে বড় গলদ হচ্ছে হ্যারল্ড স্যানডার্স-এর মতাে ব্যক্তিদের উপস্থিতি। আমলাতন্ত্রকে ঝাকুনি দিয়ে এখানে ওখানে ধাক্কা দিয়ে কিছু মন্দ বিভ্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এমন কিছু কঠিন নয়। কিন্তু আজকের দিনে বিলেত কিংবা অন্যান্য বড় শিল্পোন্নত দেশের মতাে এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওভাবে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয় না। বরঞ্চ মসৃণ অন্তরালবাসী এবং ‘ভদ্র’ ব্যক্তিরাই পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করেন। এদের সাথে বসে আপনি বিনা দ্বিধায় চা-কফি খেতে পারেন। এরা কিন্তু কখনাে খুব স্পষ্টভাবে কোনাে বিষয় নিয়ে কথা বলেন না। এরা বিমূর্ত উপায় এবং বাছাই এর ধােয়াটে জগতে বাস করেন। কিন্তু এরাই প্রয়ােজনবােধে অত্যন্ত নির্মম ও বর্বর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আরে ভাই, ভিয়েতনামে যারা বােমার আদেশ দিয়েছিলেন কিংবা পেন্টাগনে বসে যেসব আমলারা মৃতদেহের হিসাব কষেছিলেন তারা কেউ বৌপেটানাে, ছেলেপেটানাে বদমায়েশ ছিলেন না। এরা সবাই স্যানডার্স-এর মতােই আপাত নিরীহ আমলা ছিলেন।

সূত্রঃ মুজিবের রক্ত লাল – এম আর আখতার মুকুল