বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মুক্তি আনবে
জোড়াবাগানে জনসভায় কমিউনিস্ট নেতার ঘােষণা
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ২৫ জুলাই- বাঙলাদেশের মানুষের বর্তমান সংগ্রাম আমাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পাক জঙ্গীশাহীর বিরুদ্ধে নিপীড়িত মানুষদের রক্তঝরা এই সংগ্রাম ব্যর্থ হবে না। বাঙলাদেশের মানুষদের এই মুক্তিযুদ্ধ জনযুদ্ধে পরিণত হয়ে সাম্রাজ্যবাদের ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়ে মানুষের মুক্তি আনবে।” আজ বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে জোড়াবাগন পার্কে “সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে কমিউনিস্ট নেতা শ্রীঅজয় দাসগুপ্ত… ঘােষণা করেন।… ভারত সরকার যাতে বাঙ সরকারকে স্বীকৃতি দেয় তার জন্য দেশের মধ্যে ব্যাপকতর আন্দোলন গড়ে তােলার আহ্বান জানান। ভিয়েতনামের ক্ষেত্রের ন্যায় বাঙলাদেশের সরকারকে স্বীকৃতি দেবার ব্যাপারে দুর্বলতা দেখানাের জন্য শ্রীদাসগুপ্ত ভারত সরকারের তীব্র সমালােচনা করেন।
ভারতীয় প্রারম্ভে বাঙলাদেশের ও ভারতের রাষ্ট্রীয় পতাকা উত্তোলন করেন মেয়র শ্রী শ্যামসুন্দর গুপ্ত। বাঙলাদেশের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন করার পর “বাঙলার মাটি কাউকে আমরা ছুঁতে দেব না।”—গানটি পরিবেশন করেন শ্রী সুকুমার মজুমদার।
মেয়র শ্রীগুপ্ত তাঁর ভাষণে বলেন যে বাঙলাদেশের সমস্যা সমাধানে যুদ্ধ অনিবার্য এবং সুনিশ্চিত।
বাঙলাদেশের জননেতা ও “একতা” পত্রিকার সম্পাদক জনাব বজলুর রহমান বাঙলাদেশের বর্তমান অবস্থার একটা দীর্ঘ বিবরণ দিয়ে বলেন, “জনগণের একতাই আমাদের সংগ্রামে বিজয়কে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে।” তিনি জানান যে ভারত ও বাঙলাদেশের সময় এসেছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার। সােভিয়েতের নেতৃত্বে সমস্ত সমাজতান্ত্রিক শিবির বাঙলাদেশের মানুষদের সাহায্য দেওয়ায় তিনি তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা শ্ৰীনির্মল বসু বলেন যে, যে চীন একদিন পর্তুগীজকে সমর্থন করেছিল, সে যে আজ ইয়াহিয়ার পক্ষে দাঁড়াবে তা স্বাভাবিক। তিনি বলেন যে ভুলে গেলে চলবে না যে বাঙলাদেশের মানুষের এ লড়াই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের লড়াই, শশাষণের বিরুদ্ধে লড়াই।
সভার শুরুতেই এই অনুষ্ঠানের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন বাঙলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম সহায়ক সমিতির উত্তর কলকাতা প্রস্তুতি কমিটির অন্যতম সম্পদক শ্রী শান্তি মুখার্জী। এছাড়াও বক্তৃতা দেন বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে সর্বশ্রী সমর মুখার্জী, মিহির সাহা, মলয় দাস, রামপ্রসাদ দত্ত ও তারা দত্ত।
সভায় ভারতীয় গণসংস্কৃতি সংঘ বিদ্রোহী বাঙলা” নামে যে নাটকটি মঞ্চস্থ করেন তা সকলকে মুগ্ধ করে, সভায় সভাপতিত্ব করেন পৌরপিত্য শ্রী অশােক ব্যানার্জী।
সূত্র: কালান্তর, ২৬.৭.১৯৭১