You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.05 | পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময়ের মত উদ্যোগ নিয়ে শরণার্থীদের সেবা ও সাহায্য করুন সদস্য-দরদী ও জনসাধারণের প্রতি কমিউনিস্ট পার্টির আহ্বান | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময়ের মত উদ্যোগ নিয়ে শরণার্থীদের সেবা ও সাহায্য করুন সদস্য-দরদী ও জনসাধারণের প্রতি কমিউনিস্ট পার্টির আহ্বান
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ৪ জুন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পরিষদের সম্পাদকমন্ডলী আজ এক বিবৃতিতে পার্টির সদস্য, দরদী ও জনসাধারণের কাছে বাঙলাদেশের শরণার্থীদের সেবা ও সাহায্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলার জন্য পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময়ের মত উদ্যোগ গ্রহণ ও কর্মনিষ্ঠার ডাক দিয়েছেন। বিবৃতির পূর্ণ বয়ানটি হল নিম্নরূপ :
বাঙলাদেশ থেকে শরণার্থীদের আগমনের সংখ্যা গত দশদিনে এমন দ্রুত হারে বেড়েছে যে তাদের জন্য রিলিফ সংগঠনের প্রশ্নটিও এক নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে। পশ্চিমবাঙলার মত সীমান্ত রাজ্যগুলি এই বােঝা কিছুতেই একা একা বইতে পারেন না।
কেন্দ্রীয় সরকার রিলিফের ব্যাপারে এখনাে যে ঢিলে ঢালা ভাব দেখাচ্ছেন তা রীতিমতাে ভয়াবহ। সীমান্ত রাজ্যগুলি থেকে শরণার্থীদের ব্যাপকভাবে অপসারণের ব্যাপারে দ্বিধা পশ্চিমবাঙলার মত রাজ্যের পক্ষে ভরা ডুবি হবে। সীমান্ত রাজ্যগুলি থেকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করার পরও নিয়ত শরণার্থীদের যখন আগমন হচ্ছে তখন পশ্চিম বাঙলায় লক্ষ লক্ষ শরণার্থী অবশ্যই থাকবেন। সেই জন্যই অন্যান্য রাজ্যে পশ্চিম বাঙলা থেকে সুপরিকল্পিতভাবে ব্যাপক শরণার্থী সরাবার কাজটিও কেন্দ্রীয় সরকারকে নিষ্ঠার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু শরণার্থীদের বাসস্থান আহাৰ্য্য স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিষয়ে কোনরূপ অবহেলা কিংবা পরিকল্পনাহীন অগােছাল কাজ আর এক মুহুর্তের জন্যও চলতে পারে না। মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য বাঙলাদেশ যখন লড়াই করছে তখন তাদের প্রতি সহানুভূতির জন্যই শুধু ভারতের এই দায় নয়। পশ্চিমবাঙলা তথা ভারতের অর্থনীতিকে রক্ষার জন্য এদেশের মানুষের স্বাস্থ্য সামাজিক পরিবেশকে রক্ষার জন্যও ভারত সরকারকে এই দায়িত্ব বহন করতে হবে। শরণার্থীদের মধ্যে মহামারীর যে প্রকোপ দেখা যাচ্ছে তা গােটা রাজ্যে ছড়াবার আগেই পরিকল্পিতভাবে বিকেন্দ্রীয়করণের দ্বারা শরণার্থীদের স্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পরিষদের সম্পাদক মণ্ডলী এইরূপ পরিস্থিতিতে পার্টির সদস্য দরদী এবং ব্যাপকভাবে জনসাধারণের কাছেও সােজাসুজি এই বক্তব্য তুলে ধরতে চায় যে শরণার্থীদের বাসস্থান, রিলিফ ও স্বাস্থ্যের জন্য আর্থিক দায়িত্ব ভারত সরকারের উপরই ন্যস্ত করতে হবে। এবং সেজন্য সর্বত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তবে রিলিফের ব্যবস্থাপনায় ও পরিচালনায় দেশের আপামাের জনসাধারণেও গুরুতর কর্তব্য রয়েছে। স্পেনের গৃহযুদ্ধে একদিন বিশ্বগণতন্ত্রের সঙ্গে ভারতের গণতন্ত্র একাত্মতা ঘােষনা করেছিলাে। আজ প্রতিবেশী বাঙলাদেশের মুক্তি ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে আমরা যখন আরও প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছি তখন পিছপা হবার চিন্তাও মারাত্মক। একদিন পঞ্চাশের মন্বন্তরে রিলিফ কার্য কমিউনিস্টরা যে দৃষ্টান্তের সৃষ্টি করেছিলাে আজ নতুন পরিস্থিতিতে তার শতগুণ পুনরাবৃত্তির প্রয়ােজন, শরণার্থীদের জন্য ও সেবা কার্যের জন্য নিজেরা নিজেদের দায়িত্ব পালনে উদ্যোগী হয়ে সরকারের গড়িমসি ভাঙ্গাবার কর্তব্যটিও পালন করতে হবে। পার্টির সকল পরিষদও সদস্যদের কাছে এখনই কর্তব্য স্থির করে লেগে পড়ার জন্য পার্টি নির্দেশ দিচ্ছে।

সূত্র: কালান্তর ৫.৬.১৯৭১