You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.08.15 | চক্ৰান্তের আবর্তে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় - সংগ্রামের নোটবুক
চক্ৰান্তের আবর্তে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়
১২ জুন ১৯৯৬ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন। নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ সকল কালাকানুন বাতিলের মাধ্যমে অইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাদ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায়ে আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করে এবং ২৩ জুন সরকার গঠন বিশেষ কমিটিতে প্রেরণের জন্য আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু The Indemnity Ordinance ১৯৭৫-এর রহিতকল্পে আনীত বিল ১০ই নভেম্বর ‘৯৬ সনে মহান জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। বিলে বলা হয়, “এই আইন বলবৎ হবার পূর্বে যে কোনাে সময় উক্ত Ordinance-এর অধীন কৃত কোনাে কার্য, গৃহীত কোনাে ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোনাে সার্টিফিকেট বা আদেশনির্দেশ অথবা অর্জিত কোনাে অধিকার বা সুযােগ-সুবিধা, অথবা সরকার বা কোনাে কর্তৃপক্ষের জন্য সৃষ্ট কোনাে দায়-দায়িত্ব, যদি থাকে, এর ক্ষেত্রে General Clauses Act, ১৮৯৭ (x of 1897)-এর Section 6-এর বিধানাবলী প্রযােজ্য হইবে না এবং উক্তরূপ কৃতকার্য গৃহীত ব্যবস্থা, প্রদত্ত সার্টিফিকেট বা আদেশ-নির্দেশ বা অর্জিত অধিকার বা সুযােগ-সুবিধা বা সৃষ্ট দায়-দায়িত্ব উপ-ধারা (১) দ্বারা Ordinance রহিতকরণের সঙ্গে সঙ্গে অকার্যকর ও বাতিল হয়ে যাবে।” উদ্দেশ্য ও কারণসংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়-“১৯৭৫ সালের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি মৌলিক মানবাধিকার এবং সংবিধানে সংরক্ষিত মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার সংরক্ষণ তথা দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উক্ত অধ্যাদেশটি ব্যতিল সংরক্ষণ তথা দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উক্ত অধ্যাদেশটি বাতিল করা সমীচীন ও প্রয়ােজনীয় বিধায় অত্র বিল অনীত হইয়াছে।” 

এই বিলটির ব্যাপারে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে একটি ছয় সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি ড: এফ. কে. এম. এ মুনীম-এর নেতৃত্বে গঠিত একটি স্থায়ী আইন কমিশনে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের ব্যাপারে মতামত প্রদানর জন্য প্রেরণ করা হয়। বিচারপতি আমিন-উর-রহমান খান ও বিচারপতি নাইম উদ্দিন আহমেদও কমিশনে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তারা ১৭ অক্টোবর ‘৯৬ তারিখে নিম্নরূপ মতামত প্রদান করেছেন— “The Law Commission has examined the Indemanity Ordinance, 1975, with reference to paragraph 18 of the 4th schedule to the constitution inserted by S.2 of the Con ution (Fifth Amendment) Act. 1979 and Article 142 of the Constitution.

The Commission is of opinion that the Indemnity Ordinance, 1975, can be repealed by an Act of Parliament passed by a simple majority under Article 80 the Constitution or by promulgation an Ordinance under Aticle 93 of the Constitution and for repealing the indemenity Ordinance, 1975, the procedure laid down in Article 142 for amendment of the constitution need not be followed.
১০ নভেম্বর ১৯৯৬ ইং তারিখে জাতীয় সংসদ ইনডেমনিটি বাতিল বিল উত্থাপিত হয়। উত্থাপনের সময় বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্যগণ অনুপস্থিত ছিল। সংসদে সর্বসম্মতভাবে বিলটি জাতীয় সংসদের বিশেষ কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। বিশেষ কমিটির সভাপতি এডভােকেট রহমত আলী (আওয়ামী লীগ) বিলটি উত্থাপন করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, কর্নেল অব, শওকত আলী, ড, মিজানুল হক ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম। বিরােধী দলীয় সদস্যরা হলেন, খন্দকার দেলােয়ার হােসেন (বিএনপি), ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার (বিএনপি), এডভােকেট ফজলে রাণী (জাতীয় পার্টি), তাজুল ইসলাম । উল্লেখ্য যে বিএনপি এই কুখ্যাত অধ্যাদেশ যাচাই বাচাই করার জন্য বিশেষ কমিটির সদস্য হয়েও কমিটির সভাতে ইচ্ছাকৃতভাবে অনুপস্থিত ১২ নভেম্বর, ১৯৯৬। সুদীর্ঘ ২১ বছর ১ মাস ১৬ দিনের মাথায় জাতীয় সংসদে ভাবগঞ্জীর ও বেদনাবিধুর পরিবেশে ইনডেমিনিনটি (বাতিল) আইন ‘৮৬ সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। বিলটি উত্থাপিত হয় রাত ৮-৪৬ মিনিটে। পাস হয় রাত ১০-০৮ মিনিটে। বিএনপি যথারীতি খুনিদের পক্ষ অবলম্বন করে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের প্রক্রিয়ার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত না করার অভিপ্রায়ে সেদিনও জাতীয় সংসদে অনুপস্থিত ছিল।
জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং বেগম খালেদা জিয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচারের নিমিত্তে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেননি। জিয়াউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং বেনিফিসিয়ারী। হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছিল। এরশাদও বেনিফিসিয়ারী হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের কোনাে উদ্যোগ নেয়নি। আত্মস্বীকৃত খুনিদের বহাল তবিয়তে চাকুরিতে বহাল রেখেছিল এবং খুনিদের দল গঠণের সুযােগ করে দিয়েছিল এবং খুনি ফারুককে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য তথকথিত নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল। | অনুরূপভাবে বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সনের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনে খুনি রশিদকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে পবিত্র সংসদে বিরােধী দলীয় নেতার আসনে বসিয়ে সংসদকে কলংকিত করেছিল। খুনি মােশতাক অবৈধভাবে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করলেও জিয়াউর রহমান সংবিধানে সেই কালাে আইন অন্তর্ভুক্ত করে এবং জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ঐ কুখ্যাত অধ্যাদেশ সংরক্ষণ করে। কিন্তু কালাে আইন বাতিলের সময় বিএনপি-জামাতের অনুপস্থিতি প্রমাণ করে যে তারা হত্যা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি অব্যাহত রাখতে চায় ।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মাধ্যমে আজ দেশবাসীর নিকট অত্যন্ত পরিষ্কার যে, একদিকে হত্যা কু, ষড়যন্ত্র, চকান্ত ও স্বাধীনতা বিরােধী ধারা, অন্যদিকে স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবােধ প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার, আইনের শাসন ও সমাজ প্রগতির ধারা। আওয়ামী লীগ জনগণের প্রত্যাশা পূরণে শেষােক্ত ধারা এগিয়ে নিয়ে চেয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে সামরিক বেসামরিক খুনি চক্রের ষড়যন্ত্রে নিহত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবার্গ। ২৬ সেপ্টেম্বর ‘৭৫ মােশতাক জারি করে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। পরবর্তীকালে জেনারেল জিয়উর রহমান ১৯৭৯ সালে ৯ এপ্রিল তার অনুগত জাতীয় সংসদে সংবিধানের ৫ম সংশােধনী পাস করিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জারি করা সকল সামরিক অইন-বিধিকার্যক্রমকে বৈধতা দেন। ৭৫ পরবর্তী ক্ষমতাসীন চক্র খুনিদের পৃষ্ঠপােষকতা, পুরস্কৃত করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের রাজনৈতিক দল ও শক্তি সব সময়েই ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে সােচ্চার।
 ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়। ১৯৯৬ সালের ২রা অক্টোবর ধানমণ্ডি থানায় সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়ের করেন পঁচাত্তরে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাসভবনের রেসিডেন্ট পি.এ.আ.ফ.ম মহিতুল ইসলাম। এ দিনেই গ্রেফতার হয় মােশতাকের প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর। এর আগেই বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৩ আগস্ট ভােরে গ্রেফতার হয় কর্ণেল ফারুক ও কর্ণেল শাহরিয়ার। পরবর্তীতে গ্রেফতার হয় আরাে দুই লে. কর্ণেল মহিউদ্দিন (আর্টিলারি) ও অনারারি লেফটেন্যান্ট আব্দুল ওয়াহাব জোয়ারদার। পরবর্তীকালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কর্ণেল ফারুকের মা মাহমুদা রহমান ও কর্নেল শাহরিয়ার সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দুটি পৃথক রিট মামলা করেন। ‘৯৭-এর ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে ঐ দুটে রিট মামলা খারিজ করে দেন। তদন্ত শেষে এএসপি এ. কাহার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার চার্জশিট বা অভিযােগপত্র প্রদান করেন ১৫ জানুয়ারি ‘৯৭। সবার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৪, ১২০-বি ও ২০১ ধারায় হত্যা, হত্যার সহযােগিতা, হত্যার ষড়যন্ত্র ও হত্যার আলামত বিনষ্টের অভিযােগ আনা হয়। আসামি করা হয় ২০ জনকে। সাক্ষী ৭২ জন। খন্দকার মােশতাক, মাহবুব আলম চাষী, ক্যাপ্টেন সৈয়দ সারােয়ার হােসেন ও ক্যাপ্টেন এম মােস্তফা আহম্মদ এই ক’জনের আগেই মৃত্যু হওয়ায় আসামি তলিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। আসামিদের মধ্যে শেষ অবধি গ্রেফতার হয় ৬ জন, পলাতক থেকে যায় ১৪ জন। বিচার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ রাখার জন্য সরকার প্রচলিত আইন সাধারণ আদালতেই বিচারের সিদ্ধান্ত নেয়।
এ অবস্থাতেই চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মামলা ঢাকা। জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য স্থানান্তরিত হয় ১লা মার্চ ‘৯৭। আসামি, আইনজীবী ও বিচারকের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে সরকার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন একটি ভবনকে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের আদালত চিহ্নিত করে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ৩রা মার্চ ‘৮৭। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ কাজী গােলাম রসুলের আদালতে মামলার চার্জ গঠন হয় ৭ই এপ্রিল ‘৯৭। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ৪ঠা মে ‘৯৭ সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কার্যক্রম ৪ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে। হাইকোর্ট যােবায়দা রশিদকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আদেশ দেয় ১৪ মে ‘৯৭। মামলার আসামি সংখ্যা ২০ থেকে কমে ১৯ হয়। অবশেষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ কাজী গােলাম রসুলের আদালতে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয় ৬ জুলাই “৯৭। মামলার কার্যক্রমের প্রতিটি দিনে এই আদালত ও আশপাশের এলাকায় নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপশি নিয়ােজিত করা হয় বিডিআর । পলাতক ১৪ জন আসামির প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র ১৪ জন আইনজীবী নিয়ােগ করে। আদালতের অনুমােদন সাপেক্ষে গ্রেফতারকৃত ৫ আসামির নিকট-আত্মীয়, সাংবাদিক ও দর্শক-শ্রোতাদের মামলার কার্যক্রম অবলােকনের সুযােগ নিশ্চিত করা হয়। কখনাে সপ্তাহে ৫ দিন, কখনাে ৩ দিন এভাবেই সাধারণত মামলার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কাঠগড়ায় উপস্থিত ৫ আসামির আইনজীবীরা মামলার কার্যক্রম ব্যাহত-প্রলম্বিত করার জন্য নানা কৌশল।
অবলম্বন করে। বিচারক কাজী গােলাম রসুলের গুরুতর অসুস্থভাজনিক কারণেও মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকে প্রায় দেড় মাস। বিএনপি-জামায়াতসহ বিরােধীদলীয় হরতাল আন্দোলনের কারণেও মামলার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এতসব প্রতিকূল অবস্থা মােকাবিলা করে পরিচালিত হয় এ মামলার কার্যক্রম। সামরিক-বেসামরিক মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত ৬১ ব্যক্তি এ মামলার সাক্ষ্য প্রদান করেন। এদের মধ্যে ৩৯ জন সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বা কর্মরত সদস্য, ২২ জন বেসামরিক ব্যক্তি। বিচারক কাজী গােলাম রসুল আসামিদের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পড়ে শুনিয়ে কাঠগড়ায় উপস্থিত ৫ আসামির মতামত নেন। এরা সবাই নিজদের নির্দোষ দাবি করে। সর্বশেষে হয় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আইনি যুদ্ধ-আরগুমেন্ট বা যুক্তিতর্ক প্রদর্শন। রাষ্ট্র পক্ষের মুখ্য আরগুমেন্ট উপস্থাপন করেন, সহযােগী আইনজীবীরা দেন সহায়তা।
১৩ অক্টোবর ‘৯৮ শেষ হয় মামলার দীর্ঘ শুনানির পালা। প্রায় দেড় বছরব্যাপী ১৪৯ কার্যদিবসে অনুষ্ঠিত হয় এই শুননি। শুনানির সমাপনী দিনে বিচারক কাজী গােলাম রসুল ৮ নভেম্বর ‘৯৮ সকাল ১০ টায় মামলার রায় ঘােষণার দিনক্ষণ নির্ধারণ করেন। রায়ে তিনি বলেন, “এই মামলায় প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ইহা প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ বিশেষ করে যারা ঢাকায় অবস্থান করেছেন তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে নাই, এমনকি পালনের কোনাে পদক্ষেপও গ্রহণ করেন নাই যথেষ্ট সমায় পাওয়া স্বত্ত্বেও। ইহা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে বঙ্গবন্ধুর টেলিফোন আদেশ পাওয়ার পরও তারা নিরাপত্তার জন্য কোনাে পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সাক্ষ্য প্রমাণে ইহা পরিষ্কার যে মাত্র দুটি রেজিমেন্টের খুবই অল্প সংখ্যক জুনিয়ার সেনা অফিসার/সদস্য এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেন এই কতিপয় সেনা সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ/রিরস্ত্র করার চেষ্টা করেনি তা বােধগম্য নয়। ইহা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সেনাবাহিনীর জন্য একটি চিরস্থায়ী কলংক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
এই মামলায় প্রাপ্ত মৌখিক, দালিলিক, তথ্যগত, অবস্থাগত, সাক্ষ্য ও আলামত পরীক্ষা/পর্যালােচনা ও বিচার বিশ্লেষণে আদাল এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, এই মামলায় আসামি ১. লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, ২. লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, ৩, লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক আহমেদ (আটিলারি), ৪. পলাতক আসামি লে. কর্নেল আব্দুর রশিদ, ৫. পলাতক লে. বজলুর হুদা, ৬. পলাতক লে. কর্নেল এ,এম, রাশেদ চৌধুরী, ৯. লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (লালার), ১০. লে. কর্নেল এস.এইচ.এম.বি. নুর চৌধুরী ১১. লে. কর্নেল আব্দুল আজিজ পাশা, ১২. ক্যাপ্টেন মােঃ কিসমত হাশেম, ১৩. ক্যাপ্টেন নজরমুল হেসেন আনসার, ১৪. ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ, ১৫. রিসালদার মােসলেমউদ্দিন ওরফে মােসলেমউদ্দিনগণ ১৯৭৫ সনে ১৫ আগস্ট অনুমান ভাের ৫টার সময় ধানমণ্ডিস্থিত নিজ ৬৭৭ নম্বর বসভবনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু, তার পরিবারবর্গ আত্মীয়স্বজন ও অন্যান্যকে ষড়যন্ত্র ও পূর্ব পরিকল্পনা মােতাবেক গুলি করে হত্যা করার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ড বিধি ৩০২/৩৪ এবং দঃবিঃ ১২০-ক ধারার অভিযােগ সন্দেহাতিতভবে প্রমাণিত হয়েছে। ঘটনার পর কোনাে কোনাে আসামি দেশ-বিদেশে নিজেকে আত্মস্বীকৃত খুনি হিসেবেও পরিচয় দিয়ে দাম্ভিকতা প্রকাশ করে। ঘটনাটি কেবল নৃশংস নহে এই ঘটনায় ২ জন সদ্য বিবাহিতা মহিলাকে ও ১০ বৎসরের একজন শিশুকেও নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। উল্লেখ্য যে, আসামিদের এই অপরাধ এমন একটি ক্ষতির কার্য যা শুধু ব্যক্তি বিশেষের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষেও পরিণতির বিষয় স্বজ্ঞানে জ্ঞাত থাকিয়াও ষড়যন্ত্র পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে। সুতরাং তাদের প্রতি কোনাে প্রকার সহানুভূতি ও অনুকম্পা প্রদর্শনের যুক্তি নেই। এই অনুকম্পা পাওয়া কোনাে যােগ্যতাও তাদের নেই। তাদের কৃত অপরাধের জন্য তাদের প্রত্যেককে দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারা মতে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত হল। তাদেরকে উক্ত চরম দণ্ড প্রদানের পর ১২০-ক ধারায় অভিযােগে কোনাে শাস্তি প্রদান করা হল না।
আসামি ১. তাহের উদ্দিন ঠাকুর, ২, আনাররি ক্যাপ্টেন আব্দুল ওহাব জোয়ারদার, ৩, দফাদার মারফত আলী ও ৪, এলডি আবুল হাশেম মৃধা এর বিরুদ্ধে আনিত অভিযােগ এই মামলায় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি বিধায় তাদেরকে অভিযােগের দায় হতে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হল। অতএব, আদেশ হল যে,  এই মমলায় উপরােক্ত সিদ্ধান্ত মােতাবেক আসামি ১. লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, ২, লে, কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, ৩ লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), ৪, পলাতক আসামি লে. কর্নেল আব্দুর রশিদ, ৫. পলাতক মে, বজলুর হুদা, ৬. পলাতক লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, ৭, মে, শরিফুল হােসেন ওরফে শরফুর হােসেন, ৮, লে, কর্নেল এ,এম, রাশেদ চৌধুরী, ৮, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), ১০, লে. কর্নেল এস,এইচ,এম.বি, নুর, চৌধুরী ১১, লে. কর্নেল আব্দুল আজিজ পাশা, ১২. ক্যাপ্টেন মােঃ কিসমত হাশেম, ১৩, ক্যাপ্টেন নাজমুল হােসেন আনসার, ১৪, ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ, ১৫. রিসালদার মােসলেম উদ্দিনকে দঃ বিঃ ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হল। একটি ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে প্রকাশ্যে তাদের প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ হইল। নির্দেশ মোতাবেক তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করিতে কর্তৃপক্ষের কোনাে অসুবিধার কারণ থাকিলে তাহাদের মৃত্যুদণ্ড প্রচলিত নিয়মানুসারে ফাঁসিতে ঝুলাইয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ রইল । আসামি ১. তাহের উদ্দিন ঠাকুর, ২. অনারারী। কাপ্টেন আব্দুল ওহাব জোয়ারদার, ৩. দফাদার মারফত আলী ও ৪, এল, ডি আবুল। হাশেম মৃধা-কে অন্য কোনাে মামলায় প্রয়ােজন না হলে এই মামলা হতে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ হল। আমার জবানিতে (কাজী গােলাম রসুল) জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকা।৩
চাতুর্যপূর্ণ প্রতারণা
১৯৯১ সনের ৬ আগস্ট সংবিধান সংশােধন করে সংসদীয় পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তিত হয়। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের ফিরে আসার প্রাক্কালে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রাক্তন স্পীকার রাজ্জাক আলী গং বঙ্গবন্ধু ভবনে এসে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তারা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের জন্য কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাদের অঙ্গীকারের সঙ্গে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, যা তাদের রাজনীতিতে মজ্জাগত। তিন জোটের রূপরেখায় হত্যা, কু, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির অবসানের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু হত্যা, কু, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই যেহেতু বিএনপি’র জন্ম ও বিকাশ। সেহেতু হত্যা, কু, ষড়ন্ত্রের চির অবসনের লক্ষ্যে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাদের প্রদত্ত অঙ্গীকারের সঙ্গে তারা বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করে। এমন অবস্থায় তৎকালীন বিরােধী দলীয় নেত্রী জননেতী শেখ হাসিনার নির্দেশ ১৯৯১ সালের ৮ই আগস্ট তৎকালীন বিরােধী দলীয় চিফ হুইপ মােহাম্মদ নাসিম “The Indemnity Ordinance বাতিলকরণ বিল’ ১৯৯১” জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন। বিল উত্থাপন বিলটি সংশ্লিষ্ট আইন বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক মাসের মধ্যে সংসদে একটি রিপাের্ট পেশ করার জন্য প্রস্তাব পেশ করেন।
তৎকালীন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয় মন্ত্রী মির্জা গােলাম হাফিজ’কে কমিটির চেয়ারম্যান এবং সদস্য হিসেবে ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী জনাব আদুস সামাদ আজাদ, বিরােধীদলীয় নেতা, মেজর জেনারেল (অব.) মােহাম্মদ মজিদউল-হক, কৃষি সেচ, পানি উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী, শেখ রাজ্জাক আলী, ডেপুটি স্পীকার; জনাব আব্দুস সালাম তালুকদার, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী; খন্দাকর দেলােয়ার হােসেন চিফ হুইপ; ব্যারিস্টার মােঃ রফিকুল ইসলাম, শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী; ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, খাদ্য প্রতিমন্ত্রী; সৈয়দা বেগম সাজেদা চৌধুরী, জনাব সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত; জনাব সুধাংশু শেখর হালদার; জনাব মােহাম্মদ নাসিম; এ্যাডভােকেট ফজলে রাব্বী; শেখ আনসার আলী সমন্বয়ে কমিটির প্রস্তাব করা হল। সংসদের ঐ অধিবেশনে সভাপতিত্বকালে ডেপুটি স্পীকার আইন মন্ত্রীকে এ ব্যাপারে কিছু বলার আহ্বান জানালে জনাব মির্জা গােলাম হাফিজ বলেন, “জনাব নাসিম সাহেব যে প্রস্তাব করলেন যে, “The Indemnity Ordinance ১৯৭৫ এর একটি বাছাই কমিটি হােক। আমি এ প্রস্তাব সর্বান্তকরণে সমর্থন করছি। আজকে যদিও বক্তব্য রাখার সময় নয়, তাও আমি সমর্থনে একটু কথা বলব। ইতােপূর্বে আমি দুইবার বলেছি যে, এই আইনটি বেশ জটিল এবং পরে বলেছি বহু জট আছে সেটা খুলতে হবে। আগে আমি একাই জট খুলবার চেষ্টা করছিলাম; এখন ১৫ জন হল। এখন আমরা সম্মিলিতভাবে এ জট খুলবার চেষ্টা করলে নিশ্চয়ই সফলতা অর্জন করব বলে বিশ্বাস করি।
তিনি আরাে বললেন, “আজকে বাছাই কমিটির সদস্য হিসেবে যে সব মাননীয় সদস্যের নাম শুনলাম তাদের দুই-একজন ছাড়া সবাই সংবিধানের একাদশ এবং দ্বাদশ সংশােধনের বাছাই কমিটিতে ছিলেন। সেখানেও তারা এরকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং বহু জট ছিল যেগুলাে খুলতে সমর্থ হয়েছিলেন। আমরা যে দুটো বিল এখানে সর্বসম্মতিক্রমে পাস করেছি। এটা একটা বিরাট সাফল্য আমার মনে হয়, সাংবিধানিক ক্ষেত্রে এরকম একটি সাফল্য বেশি নেই যে, সংবিধান বিল সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। আমরা ঐ সব মাননীয় সদস্যদের সমন্বয়ে বসব, চেষ্টা করব এবং এই জটিল আইনকে একটা আন্তরিক ও সুস্থ পরিবেশের মাধ্যমে অত্যন্ত সহজ করে দেবাে বলে আশা করি। যত শ্রীঘ্র সম্ভব আমরা এই বাছাই কমিটি বসে আমাদের নিজেদের মধ্যে আলাপ করে জটগুলাে কুলে চুড়ান্ত রিপাের্ট দাখিল করার চেষ্টা করব।” | কিন্তু দেখা গেলাে বাস্তবিক অর্থে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সেজন্য ১৯৯১ সনের ১১ই অক্টোবর আরাে ৬০ দিনের জন্য উক্ত কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলাে। তাতেও কোনাে কাজ হলো না।
সুতরাং ১৯৯২ সনের ২৫শে জুন ২য় দফায় আরাে ৭০ দিনের জন্য আবারাে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলে। তাতেও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের তেমন কোনাে অগ্রগতি সাধিত হলাে না। এরপর ১৯৯৩ সনের ১১ মার্চ তৃতীয় দফায় আরাে ৭০ দিনের জন্য সময় সীমা বর্ধিত করা হলাে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কিছুই হলাে না। শুধু টালবাহান, প্রতারণা এবং সময়ক্ষেপণের কৌশল।
তারপরও ১৯৯৩ সনের ১৫ জুলাই হতে চতুর্থ দফায় আরাে ৮০ দিনের জন্য উক্ত কমিটির সময় বর্ধিত করা হলাে। কিন্তু ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের কোনােই অগ্রগতি হলাে না। সমাপ্তি নিয়ে সংশয় হত্যাকাণ্ডের ৩২ বছর পার হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলা চূড়ান্ত নিষ্পতি হয়নি। অনেক চড়াই উতরাই পার করে এ সময়ে মামলাটির বিচার হয়েছে এবং আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হাইকোর্ট থেকে অনুমােদনও করা হয়েছে। কিন্তু রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা স্থগিত রয়েছে। কবে নাগাদ এ অবস্থার অবসান হবে তাও অনিশ্চিত হয়ে গেছে। যদি কারাগারে অটক চার জন ছাড়া পলাতকদের জন্য এটা নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া মামলা। যাদের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কার্যকর করা সম্ভব তাদের বিষয়টি আপিল বিভাগে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে ঝুলে আছে।
কারাগারে আটক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি হাইকোর্টের বিচার মেনে নিতে পারেনি। তারা সর্বোচ্চ আদালতে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ পিটিশন) করে। তাদের এই আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ঝুলে আছে ২০০১ সালের ১৬ জুলাই থেকে। সেদিন আসামি পক্ষের আপত্তির মুখে বিচারপতি গােলাম রব্বানী মামলাটির শুননি গ্রহণে অসম্মতি পকাশ করেন। এ অবস্থায় আপিল বিভাগে প্রয়ােজনীয় সংখ্যক বিচারপতির অভাব দেখা দেয়। এই বিভাগ কোনাে মামলা শুনানি করে নিষ্পত্তি করতে হলে সর্বনিম্ন তিন জন বিচারপতির সমন্বয়ে পূর্ণঙ্গ বেঞ্চ গঠন করতে হয়। অথচ পাঁচ বিচারপতিদের আপিল ভািগে বিচারপতির সংখ্যা বাড়িয়ে সাত করার পরও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা শুনতে পারবেন এমন বিচারপতির সংখ্যা কখনােই দুই থেকে তিনে উন্নীত হয়নি। বর্তমানে বিচারপতি মােঃ তফাজ্জল ইসলাম এবং বিচারপতি জয়নুল আবেদীন মামলাটি শুনতে পারেন। এখন আপিল বিভাগে একজন নতুন বিচারপতি নিয়ােগ দেয়া হলে মামলাটি শুনানির জন্য আদালত পাওয়া যাবে। যদিও সে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট পর্যায়ে ব্রিত হয়েছিলেন এমন কেউ আপিল বিভাগে নিয়ােগ পেলে অবস্থার কোনাে পরিবর্তন হবে না। এরপরও সরকার বা রাষ্ট্রপতি চাইলে মামলাটি শেষ করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট থেকে একজন অতিরিক্ত বিচারক নিয়ােগ করতে হবে।
তারপরও পরিস্থিতি হচ্ছে, আপিল নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখন কোনাে নির্দিষ্ট আইনজীবী নেই। মামলাটি পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ােজিত রাষ্ট্রপক্ষের এককালীন বিশেষ পিপি অ্যাডভােকেট আনিসুল হককে বিগত সরকার অব্যাহতি দেয়। অব্যহতি পত্রে বলা হয়েছিল, রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়ােজনীয় সংখ্যক অভিজ্ঞ আইন কর্মকর্তা নিয়ােজিত থাকায় তাদের এই দায়িত্ব বহাল রাখার কোনাে যৌক্তিকতা নেই। আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর শাখার বক্তব্য অনুযায়ী, এই মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব তখন থেকেই অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের।
এ পরিস্থিতিতে আপিল মামলাটি কোথায় কী অবস্থায় আছে অ্যাটর্নি জেনারেল দফতরের কেউ খোঁজও রাখে না। আপিলকারী আসামি পক্ষের আইনজীবীদেরও মামলাটি ফয়সলা করার কোনাে তাগিদ নেই। নিজেদের আপিল আবেদন শুনানি করতে তারা আজ পর্যন্ত আদালতের কাছে তারিখ নির্ধারণ করার আবেদন করেন নি। তাদের মক্কেলরা মৃত্যুদণ্ডের আসামি হয়ে জেলের কনডেম সেলে বন্দীজীবন। কাটাচ্ছেন। আদালত কৃর্তক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘাতক মহিউদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতারের খবর মার্কিন সরকার ১৪ মার্চ ‘০৭ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারকে জানায়নি। পলে সরকারও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনাে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত বা পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেনি।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র সচিব মােঃ আব্দুল করিম সরকারকে বলেন, আমরা এখনাে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানি না। মার্কিন সরকার বিষয়টি আমাদের জানালে আমরা অবশ্যই সরকারের নীতনির্ধারকদের নির্দেশমতাে পদক্ষেপ নেব। এ ব্যাপারে পুলিশের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি মহিউদ্দিন আমেরিকায় গ্রেফতারের ব্যাপারে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে বা আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপােলের পক্ষ থেকে কোনাে কিছু এখনাে জানানাে হয়নি। বিষয়টি পত্র-পত্রিকার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সরকার নিজ উদ্যোগে বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিতি বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে। প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।
আসমিরা কে কোথায়? বঙ্গবন্ধু হতা মামলায় মােট ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড হাইকোর্ট থেকে অনুমােদন করা হয়। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বিচারপতির রায় ঘােষণার মধ্য দিয়ে এই মামলার নিষ্পত্তি হলে আজ পর্যন্ত কাউকে ফাঁসি দেয়া সম্ভব হয়নি। ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মাত্র চার জন বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন। তারা হচ্ছেন লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান সুলতান রশিদ খান এবং মেজর (অব.) বজলুল হুদা। বর্তমানে আরাে এক খুনী মহিউদ্দিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যাগত হয়ে কারাগারে আছে। অন্যরা পলাতক। ক্যাপ্টেন আব্দুল মজিদ ও ক্যাপ্টেন আবুল হাশম মৃধার কোনাে সন্ধান নেই। লে. কর্নেল আব্দুল আজিজ পাশা (আর্টিলারি) রায়ের পর ২০০২ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতাসীন হয়ে সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করায় আব্দুল আজিজ পাশাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর আজিজ পাশার স্ত্রী মাহফুজা পাশার আবেদনের ভিত্তিতে তাকে বরখাস্তের পরিবর্তে অবসর দেখানাে হয়। তার পরিবার অবসর ভাতা ও অন্যন্য সুযােগ সুবিধা পাচ্ছে বলে জানা গেছে। মেজর ডালিম রিবিয়া ও কেনিয়ায় বেশ কিছু সহায়-সম্পদ গড়ে তুলে বহাল তবিয়তে আছেন বলে খবর পাওয়া যায়। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরােপে মাঝে মধ্যে তার উপস্থিতির খবর পাওয়া যায়। নূর চৌধুরী কানায় অনেকা স্থায়ীভাবেই। বসবাস করছেন বলে পররাষ্ট্র দফতরে খবর ছিল। কানাডা সরকার তাকে দেশে ফেরত পাঠানাের জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের চেয়েছিল। কিন্তু হাইকমিশন তখন গরজ দেখায় নি। এমনকি শমসের মবিন চৌধুরী পররাষ্ট্র সচিব থাকাকালে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মরত খন্দকার মুশতাকের সৎছেলে তার পাসপাের্ট সংক্রান্ত সমস্যার সমাধন করে দেন। মেজর একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্মার্ড) ও মেজর এএম রাশেদ চৌধুরীর (ইস্ট বেঙ্গল) যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার সংবাদ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার এক সময় তাদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছিল। রিসালদার মােসলেমউদ্দিন ভারতে আত্মগােপন করে আছেন বলে কখনাে কখনাে বলা হয়েছে। ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলাে তাকে ধরতে একাধিকবার তৎপর হলেও তার হদিস মেলেনি।
ফিরিয়ে আনতে বাধা কোথায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এসব আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার কোনাে উদ্যোগ নেই। এর জন্য প্রয়ােজনে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি। ১৯৯৮ সালে থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি সই করে। চুক্তির ফলে খুনি বজলুল হুদাকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘােষণার দিনই (৮ নভেম্বর ১৯৯৮) দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানডার সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রশ্নে অনেকটাই অগ্রগতি হয়। সিএম সফি সামির নেতৃত্বে গঠন করা ৫ সদস্যের একটি দল ২০০১ সালের এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র সফর করে। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিনিধি ব্যারিস্টার শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, পররাষ্ট্র দফতরের মহাপরিচালক মুন্সী ফয়েজ, আইন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্মসচিব বর্তমানে হাইকোর্টের বিচারপতি আনােয়ারুল হক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্মসচিব (রাজনৈতিক) মােহাম্মদ জানিরুল হক। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে তারা লাগাতার ৫ দিন আলােচনা করে শেষ পর্যন্ত সব ধরনের অপরাধী হস্তান্তরের জন্য একটি সাধারণ চুক্তি সম্পন্ন করতে সম্মত হন। এরই আলােকে উভয়পক্ষের মধ্যে অপরাধী প্রত্যর্পণের একটি প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সিএম শফি সমি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুয়ায়ী চূড়ান্ত স্বাক্ষরের আগে অনুমােদনের জন্য পাঠানাে হয় মার্কিন সিনেটে। ইতােমধ্যে বাংলাদেশ সরকার পরিবর্তনের পর অবশিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পক্ষ থেকে আর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
উদ্যোগের অভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরের অপরাপর চেষ্টাও থেমে যায়। পাশপাশি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী সাজা পাওয়া আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সেলটিও বিলুপ্ত করা হয়। এরপরও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার সম্ভব বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাবেক বিশেষ কৌসুলি আনিসুল হক, তার মতে, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে ইন্টরপােলের আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরােয়ানা রয়েছে। ইন্টারপােলের মাধ্যমে এদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হওয়া মহিউদ্দিনকে এ পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
আপিল বিভাগে ঝুলন্ত বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা
১৬ মার্চ ২০০৭। সপরিবারের বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা কার্যক্রম শুরুর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বিচারপতি এম এ আজিজ এবং বিচারপতি সৈয়দ জে আর মােদাচ্ছির অবসরে যাওয়ায় এ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। জান গেছে, তাদের শূন্যস্থান পূরণের জন্য একাধিক জ্যষ্ঠতম বিচারপতিকে হাইকের্ট থেকে আপিল বিভাগে নিয়ােগের প্রক্রিয়া চলছে। আইনজ্ঞদের মতে, ইতিপূর্বে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানি গ্রহণ করেননি এমন ৩ জন বিচারপতি হলেই আপিল বিভাগে মামলাটি চালু হতে পারে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানি করতে পারেন আপিল বিভাগে বর্তমানে এমন ২ জন বিচারপতি রয়েছেন। আপিল বিভাগে আর একজন বিচারপতি নিয়ােগ দিলেই এ মামলার কার্যক্রম শুরু করা যায়। আইনজ্ঞরা মনে করেন, বিচারপতি নিয়ােগ হওয়ামাত্র সরকারের সদিচ্ছা থাকলে চলতি মাসেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা আপিল বিভাগে উঠতে পারে। বঙ্গবন্ধুর ৮৭তম জন্মদিনকে উপলক্ষ করে এ সুযােগ কাজে লাগানাের ব্যাপারে আশাবাদী আইজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জনায়, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরুর নতুন সুযােগ সৃষ্টি হয়েছে। আপিল বিভাগে বর্তমানে ৬ জন বিচারপতি রয়েছেন। প্রধান বিচারপতি মােঃ রহুল আমিন, বিচারপতি মােহাম্মদ, ফজলুল করিম, বিচারপতি মােঃ তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী এবং বিচারপতি মােঃ জয়নুল আবেদীন। তাদের মধ্যে বিচারপতি মােঃ রুহুল আমিন ও বিচারপতি মােহাম্মদ ফজলুল করিম হাইকোর্টে থাকাকালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানি গ্রহণ করেছেন। ২০০২ সালের ১৯ মার্চ এ মামলা কবির চৌধুরী শুনানি গ্রহণে বিব্রতবােধ করেন। মামলায় কোনভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন নাআপিল বিভাগে এমন বিচারপতি হচ্ছেন, বিচারপতি তফাজ্জাল ইসলাম এবং বিচারপতি মােঃ জয়নুল আবেদীন। এ মামলা শুনানির জন্য কমপক্ষে ৩ জন বিচারপতি প্রয়ােজন। সে ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে আরও একজন বিচারপতি নিয়ােগ দিতে হবে। আপিল বিভাগে ৭ জন বিচারপতি ছিলেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসর নেন বিচারপতি সৈয়দ জে আর মােদাচ্ছির হােসেন। শূন্যস্থান পূরণের লক্ষ্যে একজন বিচারপতিকে আপিল বিভাগে নিয়ােগদানের প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে হাইকোর্টের ৩ বিচারপতির নামের একটি পানেল সরকারের মধ্যমে প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানাে হয়েছে। তারা হলেন, বিচারপতি মােঃ হাসান আমীন, এ কে বদরুল হক এবং মােঃ আবদুল মতিন।
তাদের মধ্য থেকে এক বা একাধিক বিচারপতিকে আপিল বিভাগে নিয়ােগ দেয়া হবে। একজন বিচারপতিকে নিয়ােগ দেয়া হলে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী বিচারপতি মােঃ হাসান আমীনই এ নিয়ােগ প্রাপ্য। উক্ত নিয়ােগ সম্পন্ন হলেই আপিল বিভাগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু হতে পারে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি এডভােকেট আনিসুল হক মামলা শুরুর ব্যাপারে বলেন, “এ হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির সদিচ্ছ বিগত জোট সরকারের ছিলাে না। মামলাটি শুরুর ব্যাপারে তৎকালীন এটর্নি জেনারেল কোন চেষ্টাই করেন নি। বরং ২০০২ সালের ১৯ ডিসেম্বর এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌসুলিদের অব্যাহতি দেয়া হয়। এছাড়া এ হত্যা মামলার পলাতক ৮ আসামীকে গ্রেফতারের কোন উদোগ নেয়নি জোট সরকার। আপিল বিভাগে। একজন বিচারপতি নিয়ােগ দিয়ে বর্তমান সরকার মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যবে বলে আমি আশা করছি।” এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা পুনরায় শুরু করার ব্যাপারে এটর্নি জেনারেল ব্যরিস্টার ফিদা এম. কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ মুহুর্তে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। এক পলকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা মামলা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারের বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে এর বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। সে বছর ২ অক্টোবর দায়ের করা এজাহারের ভিত্তিতে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর নিম্ন আদালতে বিচার কার্যক্রম শেষ হয়। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ কাজী গােলাম রসুল পলাতক ১১ আসামীসহ ১৯ জন আসামীর ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড ঘােষণা করেন। এ মামলার ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু হলে হাইকোর্ট ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিচারপতি মােঃ রহুল আমিন এবং বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক দ্বিধা বিভক্ত রায় দেন। রয়ে বিচারপতি মােঃ রুহুল আমিন ১০ জনে মৃত্যুদণ্ড বহল এবং বিচারতি এ বি এম খায়রুল হক ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখেন। নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টের তৃতীয় বিচারপতি মােহাম্মদ ফজলুল করিম ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। খালাস পায় ৩ জন।
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের মাঝে মাত্র ৪ জন কারাবন্দী রয়েছেন। তারা হলেন, কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) এবং বজলুল হুদা। বিভিন্ন দেশে আত্মগােপন করে আছেন, কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশিদ, শরীফুল হক ডালিম, এ এম. রশিদ চৌধুরি, এম এইচ এস বি নূর চৌধুরি, আব্দুল মাজেদ, মােসলেম উদ্দিন এবং মঙ্গলবার। লসএঞ্জলেসে গ্রেফতার হওয়া এ কে এম, মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার)। অপর আসামী আব্দুল আজিজ পাশা ইন্তেকাল করেছেন। পলাতক আসামীদের মধ্যে শরীফুল হক ডালিম এবং এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ইন্টারপােলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরােয়ানা জারি করে যায় আওয়ামী লীগ সরকার। এদিকে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামী এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (৬০) কে ১৫ মার্চ মঙ্গলবার লসঅ্যাঞ্জেলেহে বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। মার্কিন ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস আইনের আওতায় তাকে। গ্রেফতার করা হয়েছে। এ.কে.এম. মহিউদ্দিনকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার রায় কার্যকর হয়নি। বর্তমানে আসামীদের লিভ অব আপীল সুপ্রীম কোর্ট গ্রহণ করেছে। শুনানীর অপেক্ষায় আছে।

সূত্রঃ ফ্যাক্টস্ এন্ড ডকুমেন্টস্  বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড  অধ্যাপক আবু সাইয়িদ