বাংলার বাণী
ঢাকা: ১লা জুন, বৃহস্পতিবার ১৭ই জ্যৈষ্ঠ তেরোশো ১৩৪০
মিশরের স্বীকৃতি
মিশর সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ব্যাপারে শীঘ্রই একটা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে বলে খবরের প্রকাশ। মিশর সরকার একজন দূত নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পড়ে তার নাম ঘোষণা করা হবে।
অবশেষে বাংলাদেশকে যে স্বীকৃতি দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটি আনন্দেরকথা, আশার কথা। দুটো দেশের মধ্যে প্রীতি মৈত্রী ও বন্ধুত্বের বন্ধন কে আরো সুদৃঢ় করনের সেতু রচিত হলো আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার মাধ্যমে।
একথা সত্য যে, বাংলাদেশের জন্ম লগ্ন থেকেই মিশর এই উপমহাদেশের বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার অশেষ অস্ত্রোপচার থেকে অনুধাবন করেছেন, আর তাই বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রাথমিক অবস্থাতেই এ দেশে পাঠিয়েছেন একটি প্রতিনিধি দল, তারা বাংলাদেশে এসেছেন। সরোজমিনে প্রত্যক্ষ করে গেছেন বাংলাদেশের বাস্তবতাকে। দেখে গেছেন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশে কি ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি করেছিল পবিত্র ইসলাম ধর্মের নামে। ওরা এলেন। দেখলেন। তার পর দেশে ফিরে গেলেন বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে।
মিশরের প্রভাবশালী দৈনিক আল-আহরামের সম্পাদক জনাব হাসনারেল হাইকলও এসেছিলেন বাংলাদেশে। স্বদেশে ফিরে গিয়ে তিনি তার পত্রিকায় আরব দেশগুলোর প্রতি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের সুপারিশ করেছেন। সম্প্রতি মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ জাবেদ বাংলাদেশ সফর করে গেছেন।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অস্ত্রোপচারের ফলে যেটুকু সন্দেহ বা ভুল বোঝাবুঝির কালো মেঘ ছিল তাও অপসারিত হলো মিশরের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশের সফরের ফলে। আর তাই বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব হাসনাকেল হেইকল বাংলাদেশ সফরকালে বলেছিলেন বাংলাদেশের বাস্তবতায় কেউ মানুক আর নাই মানুক বাংলাদেশ আজ বাস্তব সত্য একদিন না একদিন মেনে নিতেই হবে।
ইতিপূর্বে মিশর বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি না জানালেও গতবছর দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় চুক্তিটি এখনো বলবৎ রয়েছে।
আরব দেশ সমূহের মধ্যে ইতিমধ্যে ইরাক ও ইয়ামেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানিয়েছেন। মিশর স্বীকৃতি দানের সিদ্ধান্ত নেওয়া তে আরবের অন্যান্য দেশ সমূহ বাংলাদেশের বাস্তবতাকে মেনে নেবেন বলেই আমার ধারণা। আমরা আবার বলব মিশর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের সিদ্ধান্ত নেয়াতে আমরা আনন্দিত। আমরা আশা করব অন্যান্য আরব দেশসমূহ মিশরের পথ অনুসরণ করবেন।এটা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে বাংলাদেশ সকলের ববন্ধুত্ব কামনা করে। জোট নিরপেক্ষতায় পারস্পরিক সহযোগিতা ও সংস্কৃতিতে বাংলাদেশ বিশ্বাসী বলেই বাংলাদেশ সকলের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে।
সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে সক্রিয় ব্যবস্থা
সীমান্তে চোরাচালান বন্ধের জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বি ডি আর কমান্ডারদের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের আলোচনা করেছেন।
আলোচনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য উচ্চ পদস্থ অফিসারগনও উপস্থিত ছিলেন বলে খবরে প্রকাশ। এই সংবাদে আমরা দৃঢ়তার সাথে এই অভিমত পোষণ করি যে, দীর্ঘদিন থেকে সীমান্তে চোরাচালান বন্ধের ব্যাপারে জনগণের অভিযোগের আলোকে বঙ্গবন্ধু চোরাচালান বন্ধের যে আশ্বাস দিয়েছেন তা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে সীমান্তের একমাইল এলাকায় অবাধ বাণিজ্য চালু করা হয়েছিল। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিল কিছুসংখ্যক চোরাকারবারি। তারা এই সময়ে অবাধে দেশের খাদ্য-শস্য, পাট ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রচার করতে থাকে। অধিক মুনাফা লোভী অসাধু ব্যবসায়ী এবং চোরাকারবারীদের এহেন কার্যকলাপের ফলে দেশের খাদ্যদ্রব্য সহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাব সৃষ্টি হয়েছে এবং তার ফল ভুগতে হচ্ছে গোটা দেশবাসীকে। এবং সে কথা চিন্তা করে সীমান্ত এলাকার অবাধ বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, চোরাকারবারীরদের সংখ্যা যে অনেক তা নয়। অথচ সহজে চোরাকারবারীদের দমন করা সম্ভব হয়নি বড় বড় চোরাকারবারিদের সাথে ছোট-ছোট আরোও কিছু লোক সংযুক্ত থেকে সংঘবদ্ধভাবে চোরাচালানী কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে তো পূর্বেও বহু বার বিভিন্ন সংবাদের খবর বেরিয়েছে। সুতরাং চোরাচালান বন্ধ করতে হলে ছোট-বড় সব অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
কেবলমাত্র বি ডি আর আর সৈন্যবাহিনীকে দিয়ে সম্পূর্ণরূপে চোরাচালান দমন করা যাবে না। যদি না সীমান্ত এলাকার জনগণ কালোবাজারিদের দমন কাজে লিপ্ত সংস্থার সঙ্গে আন্তরিক সহযোগিতা করেন। কেননা একটা বিশেষ স্থানে অবস্থিত বি ডি আর ক্যাম্পের সকল বি ডি আরদের পক্ষে চোরাচালানের ছোট বড় সকল পথ খুঁজে বের করতে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু সীমান্তবাসীর কাছে মোটামুটি সব পথ গুলো জানা, এমনকি তারা অনেক কালোবাজারিকে চেনে ও সুতরাং দেশ ও জনগণের বৃহৎ স্বার্থে সীমান্তবাসীরা যদি সহযোগিতা করে ও কালোবাজারিদের কে ধরিয়ে দেয় এবং চোরাপথের সন্ধান দেন তাহলে তা পরম দেশপ্রেমিকেরই কাজ হবে। আমরা আশাকরি সীমান্ত এলাকার অধিবাসীরা দেশপ্রেমের পরিচয় দেবেন।
চোরাকারবারীদের দমনের কাজে নিযুক্ত বি ডি আর বা সেনাবাহিনীর এ দায়িত্ব অতি পবিত্র। আমরা দৃঢ়তার সাথে আশা পোষণ করি যে আমাদের বি ডি আরের ভাইয়েরা অতীতে বুকের রক্ত ঢেলে দেশপ্রেমের ও দায়িত্ববোধের যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবারেও তারা তারই পরিচয় দেবেন। আমরা আশা করি কোন ব্যক্তি স্বার্থপরতা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে তাদেরকে ছোট করতে পারবেন না। গোটা দেশবাসী এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে তাদের এই সত্য ও ন্যায় পরায়নতা দিকেই তাকিয়ে আছে আমরা তাদের সাফল্য কামনা করছি।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক