You dont have javascript enabled! Please enable it! টেংরাটিলা যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক
টেংরাটিলা যুদ্ধ

৩০শে নভেম্বর রাধানগর শত্রুমুক্ত হওয়ার পরে পাকিস্তানীদের হতাহতের সংখ্যা ব্যাপক বলে জানা যায়। সেই তারিখে সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী গােয়াইনঘাটের দিকে অগ্রসর হয় এবং গােয়াইনঘাট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। | শেলা সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হেলালও তার সেবা-সেক্টরে ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছিলেন। নভেম্বরের মধ্যে পাকিস্তানীদের যােগাযােগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক (সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক) বিচ্ছিন্ন করার জন্যে সেক্টর কমান্ডার মেজর শওকত, লেঃ মাহবুবুর রহমান এবং লেঃ রউফকে নির্দেশ দেন। লেঃ মাহবুব অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে তার বাহিনী নিয়ে পাগলা সেতু ধ্বংস করলেন। এখানে প্রহরারত পাকসেনাদের বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। লেঃ রউফ তার বাহিনী নিয়ে অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়েও জাওয়া রেল এবং সড়কসেতু ধ্বংস করতে সমর্থ হন। টেংরাটিলাতে ছিল পাকিস্তানীদের একটা বড় ঘাটি। টেংরাটিলা আক্রমণের পূর্বে সেক্টর কমান্ডার মেজর শওকত তার বাশতলা সেক্টর হেড কোয়ার্টারে ২০শে নভেম্বর এক কনফারেন্স আহ্বান করলেন। সভাতে টেংরাটিলা আক্রমণের বিষয় নিয়ে মেজর শওকত বিস্তারিত আলােচনা করলেন। ঐ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা। হলেন-ক্যাপ্টেন মহসিন, ক্যাপ্টেন আকবর, ক্যাপ্টেন হেলাল, লেঃ মাহবুবুর রহমান এবং কিছু সংখ্যক এফএফ লীডার।

সিদ্ধান্ত অনুসারে ২৭/২৮শে নভেম্বর টেংরাটিলা রেকি করা হল। ২৯শে নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর ৪টি কোম্পানি টেংরাটিলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে ৩০শে নভেম্বর নির্দিষ্টস্থানে পৌছে নিজ নিজ প্ররিতক্ষা ব্যুহ রচনা করে। পরিকল্পনা অনুসারে ৩য় বেঙ্গলের ক্যাপ্টেন মহসিন তার কোম্পানি নিয়ে ডান দিকে এবং ৩য় বেঙ্গলের কোম্পানি ক্যাপ্টেন নিয়ে। বাঁদিকে ফ্লাঙ্কগার্ড হিসাবে রইলেন। লেঃ রউফ রইলেন ডানদিকের ফ্লাংগার্ডে। এই অপারেশন পরিচালনার ভার নিলেন সেক্টর কমাণ্ডার নিজে। ৩০শে নভেম্বর ৭টায় মুক্তিবাহিনী প্রথম আক্রমণ করল। পাকিস্তানীরা সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা গুলি চালায়। উভয়পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। মুক্তিবাহিনীর ধারণা ছিল চারিদিক থেকে ঘেরাও করে আক্রমণ অব্যাহত রাখলে নিশ্চয়ই পাকসেনারা আত্মসমর্পনে। বাধ্য হবে। কিন্তু পাকিস্তানীদের প্রতিরক্ষা ব্যুহ এমন দৃঢ় ছিল যে, মুক্তিবাহিনী কিছুতেই সামনে অগ্রসর হতে পারছিল না। অবশ্য পাকসেনারা তাদের সঙ্গীণ অবস্থার কথা অনুমান করতে পেরেছিল। আর তাই কয়েকবার তারা পালাবার চেষ্টাও করে। কিন্তু মুক্তিবাহিনী সে চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। অবশেষে প্রচন্ড গােলাগুলির মধ্যে রাতের আঁধারে তারা একটি পায়ে চলা পথে জলের ভিতর দিয়ে তাদের যাবতীয় রেশন,গােলাগুলি ফেলে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। ৫ই ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী তাদেরকে ঘেরাও করে রেখেছিল। 

সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত