You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.12.31 | দৈনিক পূর্বদেশ দালাল মন্ত্রী মুজিবুরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড - সংগ্রামের নোটবুক

৩১-১২-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালাল মন্ত্রী মুজিবুরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ডা, মালেকের পুতুল মন্ত্রীসভার তথ্য ও বেতার মন্ত্রী জনাব মুজিবুর রহমানকে গতকাল শনিবার ঢাকার এক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। সরকার পক্ষ তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযােগ প্রমাণ করেছেন তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ট্রাইব্যুনাল তার অতীতের মানবসেবামূলক কাজ কর্মের কথা বিবেচনা করে লঘুদণ্ড প্রদান করেছেন। সরকার পক্ষের অভিযােগে বলা হয় গত বছর ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করা হয়। এর পর বাঙ্গালী জাতি দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনীর বিরুদ্ধে এক প্রচণ্ড মুক্তি সংগ্রামে লিপ্ত থাকে। পাক সেনারা এ দেশকে তাদের করতলগত রাখার জন্য ২৫শে মার্চ থেকে বাঙ্গালীদের উপর ব্র নির্যাতন চালিয়ে যায়। বাংলাদেশেরই কতিপয় কু-সন্তান এ কাজে তাদের দোসর হিসাবে কাজ করে। আসামী তাদের অন্যতম। সরকার পক্ষ যে সব অভিযােগ প্রমাণ করেছেন তা হচ্ছে এই যে, আসামী মুক্তি সংগ্রাম চলাকালে গত বছর ৮ই অক্টোবর মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে শপথ গ্রহণ। করেন। তিনি বক্তৃতা বিবৃতি ও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হানাদার বাহিনীর যুদ্ধে সহায়তা করেন এবং বাংলাদেশের আইন সঙ্গত সরকারের বিরুদ্ধে জনমনে বিদ্বেষ সৃষ্টির কাজে লিপ্ত থাকেন। ঐ একই মাসে তৎকালীন জাতীয় পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য তিনি তথাকথিত উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হন।

ফলে হানাদার বাহিনীর হাত আরাে শক্তিশালী। হয়ে উঠে। আসামী নিজেকে নির্দোষ দাবী করেন এবং বলেন যে, বাংলাদেশী আইনের চক্ষে এবং সত্যিকার অর্থে গত ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন হয়েছে। তার পূর্বে সংঘটিত অপরাধের জন্য তার বিচার চলে না। তাছাড়া তিনি দাবী করেন যে, তিনি সরল বিশ্বাসে সে এবং জনসেবার উদ্দেশ্যে নিয়ে মন্ত্রিসভায় যােগ দিয়েছিলেন। এবং উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মনে অপরাধের কোন উদ্দেশ্য ছিল না। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারী মামলা চলে না। ট্রাইব্যুনাল তার বক্তব্য অগ্রাহ্য করেছেন। ট্রাইব্যুনালের সভাপতি শ্রী শীব্রত বড়ুয়া অত্যন্ত দ্রুততার সাথে মামলার রায় পড়ে যান। এক পর্যায়ে আসামী শুধুমাত্র দণ্ডাদেশ সম্পর্কিত অংশটুকু পড়লে চলবে এই বলে। ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানান। তখন তাকে কিছুটা বিচলিত মনে হয় এবং তার চক্ষু রক্তবর্ণ ধারণ করে। দণ্ডাদেশের পর তাকে জিজ্ঞাসা করি: রায় শুনে আপনি কি আশ্চর্যান্বিত’? তিনি জবাব দেন “মােটেই না”। তিনি বলেন যে, তিনি সুপ্রীম কোর্টে আপিল করবেন এবং সেখানেও নিজেই স্বপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ করবেন।

সূত্রঃ সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ১৯৭১ -প্রত্যয় জসীম