ওরা বেতন পেলেন
মণি মৈত্র
সেদিন ছিল ২রা মে। যশােহর সেক্টরের কোনাে এক জায়গায় বাংলাদেশ সরকার তাদের সরকারি কর্মচারীদের বেতন দিলেন। এগিয়ে গেলাম একজনের কাছে আগে ছিলেন সরকারি কর্মচারি-এখন মুক্তিযোেদ্ধা।
জিজ্ঞেস করলাম আজকে বেতন পেয়ে কেমন বােধ করছেন? বন্ধুটি বললেন- খুব আনন্দ লাগছে আমার দেশের স্বাধীন সরকারের কাছ থেকে বেতন পেয়ে।
এ টাকা দিয়ে কী করবেন? উত্তর দিলেন, এর অর্ধেক আমি মুক্তিযুদ্ধের তহবিলে জমা করব। পরে জেনেছি সেদিন ওঁদের সবাই যার যার বেতন থেকে বেশ কিছু টাকা মুক্তিযুদ্ধ” তহবিলে জমা করেছে।
কুষ্টিয়া সেক্টরের কোনাে এক জায়গায় বাংলাদেশ সরকারের একজন পদস্থ অফিসার জানালেন যে তাঁরা ইতিমধ্যেই কুষ্টিয়া জেলার সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন দিয়েছেন। কুষ্টিয়া সেক্টরের অপর একটি জায়গার একজন মুক্তিযােদ্ধার সাথে কথা হচ্ছিল! আগে ইনি ছিলেন চুয়াডাঙ্গায় আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াপদার” একজন ক্যাম্প অফিসার। বেতনের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন, “বেতন না পেলেও আমার এতটুকু দুঃখ নেই। এখন যুদ্ধক্ষেত্রে আছি, পরিবারের কারাে খবর জানি না টাকা দিয়ে আমার কী হবে? বরং আমি চাই ঐ টাকা আমার দেশ স্বাধীন করার জন্য কোনাে কাজে লাগুক! অস্ত্র কেনা হােক। আমার তাে যা হােক এক মুঠো খাবার জুটছে।
ঠিক একই কথা বলতে শুনেছি খুলনা সেক্টরের কোনাে এক স্থানে মুক্তিযােদ্ধা সেনাবাহিনীর জনৈক সেকেন্ড কমান্ডারকে। পরনে মাত্র একটি খাকী প্যান্ট, গায়ে একটি গেঞ্জী তাও ছিন্ন ভিন্ন! পকেট থেকে একতাড়া টাকার বান্ডিল বের করে বললেন “এ টাকা দিয়ে আমি কী করব। আমার ছেলে, মেয়ে বৌ ওদের পাঠাতে পারব না কারণ যেদিন থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে বিভিন্ন স্থানে আমি লড়াইয়ে ব্যস্ত ওরা কোথায় আছে কোনাে খবর জানি না। আজ এ টাকাটাই আমার কাছে বােঝা স্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শক্ত সম্পত্তি বলে ঘােষণা
পাক সেনা ও তার সাকরেদ মুসলিম লীগ ও জামায়াতি ইসলামের গুণ্ডাদের বর্বর অত্যাচারের ফলে বাংলাদেশের বিভিম্নাঞ্চল থেকে যে সব লােকজন তাদের ঘর বাড়ি ছেড়ে ভারতবর্ষে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন তাদের বাড়ি ঘর ও অন্যান্য সম্পত্তি পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ শত্রু সম্পত্তি বলে ঘােষণা করে বেঈমানদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দিচ্ছে বলে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে পাওয়া এক খবরে জানা গেছে। সম্প্রতি কুষ্টিয়া সেক্টর ভ্রমণ কালে চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট জোয়াদ্দার পরিবারের এক ব্যক্তি আমাকে এই তথ্যটি জানান।
তবুও রেহাই নেই
পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের বিভিন্নাঞ্চলে শ্মশানের শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য যে “শান্তি কমিটি গঠন করেছে বর্বর পাক সেনা ও তার চাইরা সেইসব “শান্তি কমিটির পরিবারদেরও রেহাই দিচ্ছে না। কুষ্টিয়া জেলার সুলতান পুরে এই ধরনের শান্তি কমিটির জনৈক সদস্য মি. সায়েত উল্লার দুটি মেয়েকেও পাক সেনারা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে বলে বাংলাদেশ সরকারের জনৈক পদস্থ অফিসার আমাকে জানিয়েছেন।
সূত্র: কম্পাস, ২২ মে ১৯৭১