ভাটিয়াপাড়া পাকসেনাদের আত্মসমর্পণ
গােপালগঞ্জ শহরে পাকসেনাদের আগমনের সময়কাল হতেই একজন পাঞ্জাবী সাবইনসপেক্টর অব পুলিশের অধিনায়কত্বে পাকসেনা ও পাক মিলিশিয়া পুলিশ সময়ে প্রায় ৪০ জন ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস স্টেশন পাকসেনাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিরাপত্তা ফৌজ হিসাবে সেখানে অবস্থান করছিল। তারা খুব মজবুত ভাবে বাংকার করে সেখানে ছিল। এমন ভাবে মজবুত ছিল যে গুলিবর্ষণ বা মর্টারের শেল বিস্ফোরণ কোন কিছুতেই ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা ছিল না। এক বাংকার হতে সুড়ঙ্গ পথে অন্য বাংকারে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। ফলে বহু সময়ে বহু মুক্তিযােদ্ধার দল তাদের আক্রমণ করে কোন ক্ষতি করতে পারেনি। ১৬ই ডিসেম্বর পাকসেনাদের আত্মসমর্পন ও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ভাটিয়াপাড়া ঐ পাকসেনাদল আত্মসমর্পন করেনি। তখন কামিয়ানী, আলফাডাঙ্গা, লােহাগাড়া, নড়াইল প্রভৃতি থানার কয়েকহাজার মুক্তিযােদ্ধা চারদিক হতে ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস স্টেশনের পাকসেনাদের আক্রমণ করে গুলি বর্ষণ ও মর্টারের নিক্ষেপের মাধ্যম তাদের আত্মসমর্পনে বাধ্য করাতে চেষ্টা করে। মাইকের সাহায্যে তাদের প্রতি বার বার ঘােষণা দেওয়া হচ্ছিল যে, যুদ্ধ শেষ হয়েছে। পাকসেনা আত্মসমর্পন করেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে, তােমরা সারেন্ডার কর। কিন্তু তারা বিশ্বাস করছিল না। এমতাবস্থায় ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা ও লেফটেনেন্ট কমল সিদ্দিকী ভাটিয়াপাড়ায় যুদ্ধরত মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে এসে মিলিত হয় ১৯ শে ডিসেম্বর।
২১শে ডিসেম্বর পাঞ্জাবী পুলিশ সাব-ইনসপেক্টর সকালে এসে মুক্তিযােদ্ধাদের নিকট বলে যে, তােমরা যদি কুরআন শপথ করে ওয়াদা করতে পার যে, আমাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেবে তাহলে আমরা সারেন্ডার করব। তখন ক্যাপ্টেন হুদার নির্দেশে কাশিয়ানী থানা মুক্তিবাহিনী কমান্ডার জয়নুল কাদের জুলু কুরআন স্পর্শ করে শপথ করার পর সৈন্যরা সারেন্ডার করে। ২১শে ডিসেম্বর বিকালে ৯নং সেক্টর কমান্ডার মেজর মুঞ্জুও যশাের হতে ভাটিয়াপাড়া আসন। তিনি ঐ সব পাকসেনা ও মিলিশিয়াদের গ্রেপ্তার করে বেঁধে যশাের ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। জয়নুল কাদের জুলু, কমান্ডার ইসমত কাদির গামা, কামান্ডার হাফিজ, কমান্ডার খেপু, এম বি গ্রুপ কমান্ডার মনির হােসেন মুঞ্জু, কমান্ডার আবুল হােসেন কমান্ডারদের নেতৃত্বে প্রায় তিন হাজার মুক্তিযােদ্ধা এই শেষ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। জয়নাল নামে একজন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হয় এবং লেফটেনেন্ট কমল সিদ্দিকীর চোখে গুলি লেগে আহত হয়। ( সূত্র ও মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর ফরিদপুর, মােঃ সােলায়মান আলী।)
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত