মুকসুদপুর থানা অপারেশন ও দখল
ছাত্রলীগ নেতা সুন্দরদীর মিরাজ খান ঠাকুর মুকসুদপুর থানা আক্রমণের পরিকল্পনা করে মুক্তিফৌজ গ্রুপ কমান্ডার আশরাফউজ্জামান কোহিনুর, জাফর ও ওয়াজেদ মােল্লার সাথে যােগাযােগ করে। আক্রমণের দিন ধার্য হয় এবং অস্ত্রের জন্য গুলি সরবরাহ আসে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মুকসুদপুর থানা আক্রমণ করা হয়। একদিন রাত প্রায় চার ঘটিকার সময় মুকসুদপুর থানার গ্রুপ কমান্ডার জাফর, কোহিনুর ও ওয়াজেদ মােল্লা মিলিত ভাবে প্রথম থানা আক্রমণ করে। সকালে আমরা আরও মুক্তিযােদ্ধা ও গােলাগুলি পাঠাই। কারণ নগরকান্দা ও মুকসুদপুর থানায় যে ক’টি মুক্তিযোদ্ধা দল ছিল তার প্রত্যেটির দলকেই আমাদেরকে গুলি সরবরাহ করতে হত। রাত চারটা হতে বেলা নয়টা পর্যন্ত বিরামহীন ভাবে আক্রমণ চলল। তবুও থানা দখল করা সম্ভব হল না। এ খবর ওয়াজেদ মােল্লা আমাদের বাড়ি এসে দেয়। তখন আলতাপকে খবর দিয়ে তার দল নিয়ে মুকসুদপুরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আলতাপ তার দল নিয়ে মুকসুদপুরে চলে যায়। ঐ থানার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খুবই মজবুত ছিল। থানার চারদিকে বালির বস্তা দিয়ে এমনভাবে ঘেরাও করা ছিল যে রাইফেল বা মেশিনগানের গুলি প্রবেশ করত না। সুতরাং থানার পুলিশ ও রাজাকারদের কাবু করা যাচ্ছিল না। বেলা প্রায় বারােটার সময় আলতাফ তার দল নিয়ে মুকসুদপুরে থানা আক্রমণে যােগদান করে। তার দলে বেশ কয়েকজন সাহসী মুক্তিযােদ্ধা ছিল।
সে থানার দক্ষিণ দিক হতে আক্রমণ করে ফায়ারিং করতে করতে এক সময় হঠাৎ থানার প্রতিরক্ষা সীমানার ভেতর ঢুকে পড়ে। থানা দখল করে মুক্তিযােদ্ধারা থানায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে। থানা হতে শতাধিক রাইফেল ও বহু গােলাগুলি উদ্ধার করা হয়েছিল। পাকসেনা সহযােগী ওহাব মিয়া ও জলিল মিয়াকে তারা থানার সামনেই গুলি করে মারে। কহিনুরের বর্ণনা মতে দুপুর ৩টার দিকে কমান্ডার কোহিনুর থানার উত্তর দিক হতে প্রথম থানার মধ্যে ঢুকে পড়ে। পরপরই কমান্ডার গােপ্তর গাতীর জাফরও থানার মধ্যে আসে এবং পরে আলতাফ তার দল নিয়ে থানায় প্রবেশ করে। পাকদালাল, রাজাকার ও পুলিশসহ প্রায় ৩৭ জন মারা যায় এবং বাউষখালীর আঃ বারী খান নামে একজন মুক্তি যােদ্ধা আহত হয়। থানা দখলের তিন দিন পর গােপালগঞ্জ হতে লঞ্চ যােগে প্রায় ১৫০ জন পাকসেনা সন্ধ্যায় মুকসুদপুর আসে। ঐ রাতেই চন্ডীবরদীর সারােয়ার খার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় ও লুটতরাজ করে। বৃষ্টিতে কাজের বিঘ্ন হওয়ার রাতে ডাক বাংলার সামনে লঞ্চ নােঙ্গর করে থাকে। পরের দিন সকালে আবার চন্ডীবরদী গ্রামে পাকসেনাদের সহায়তায় রাজাকাররা লুটতরাজ শুরু করে। গজারিয়ার কে এম তােফাজ্জেল হােসেন এই অবস্থায় ৭/৮ জন লােক নিয়ে পাক। আমাদের নিকট গিয়ে উর্দুতে মুসলমানদের বাড়িঘর লুটতরাজ না করার জন্য অনুরােধ করলে পাকসেনারা ও রাজাকাররা অগ্নিসংযােগ ও লুটতরাজ হতে বিরত হয় এবং পরে গােপালগঞ্জ ফিরে যায়।। হানাদারবাহিনী পুনরায় মুকসুদপুর থানা দখল করে। তবে তাদের কর্তৃক বজায় রাখার সাহস পায়নি। মুকসুদপুর থানা দখলের পর নগরকান্দা থানা হেড কোয়ার্টার ও কাশীয়ানি থানার ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস স্টেশন ব্যতীত নগরকান্দা, মুকসুদপুর, কাশীয়ানী, বােয়ালমারী ও ভাঙ্গার আংশিক সম্পূর্ণরূপে মুক্তিফৌজের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। মুকসুদপুর। থানা দখলের সংবাদ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র ও আকাশবাণী থেকে প্রচার করা হয়েছিল। (সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর ফরিদপুর, মােঃ সােলায়মান আলী।)
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত