You dont have javascript enabled! Please enable it! অপারেশন আউটার এংকর - সংগ্রামের নোটবুক
অপারেশন আউটার এংকর
সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখ। মুক্তিযুদ্ধ তখন চরমে। পাবাহিনী দিশেহারা। অপারেশন জ্যাকপটের সফলতায় নৌকমান্ডােরা আরাে তেজীয়ান হয়েছে। পাকবাহিনী এখন ভীষণ হুশিয়ার। নদীতে তারা টহল বসিয়েছে। সার্চ লাইট দিয়ে পানিতে আলাে ফেলছে। এমনি অবস্থায় ১১ জন নৌকমান্ডাে গহিনা থেকে পানিতে নামেন। রাত তখন ১২টা। আবু মুছা চৌধুরী, তাহের, কাজল, নুরুল হক, শফিকুন নূর মাওলা, আমীর হােসেন, মােহাম্মদ হােসেন ফরিদ, আবুল হাসেম, মনু, রশিদ, এই এগারাে জন প্রাণকে বাজি রেখে চলেছেন। বুকে বেঁধেছেন মিষ্টি মাইন। অপারেশন জ্যাকপটের মতােই তারা চলেছেন নির্দিষ্ট লক্ষের দিকে। অবশ্য পূর্বে অপারেশনের পুরাে রেকি সম্পন্ন করেন। ফারুখ-ই আজম। তিনি এ অপারেশনে অধিনায়ক। অবশ্য এ অপারেশনে অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে আসেন মােজাহার উল্লাহ কিন্তু ভারত থেকে আসার পথে সীতাকুন্ড থানার মহানগর গ্রামে মন্টু চৌধুরীর বাড়ি গােপন আশ্রয় কেন্দ্রে তাঁর পায়ে খেজুর কাঁটা বিদ্ধ হয়। এতে তিনি আহত হন। তাই পরে ফারুখ-ই -আজমকে অধিনায়ক করা হয়।
কর্ণফুলী মােহনা অতিক্রম করে চলছেন ১১জন বীর নৌকমান্ডাে। সাগরের তীব্র ঢেউ-এর সাথে যুদ্ধ করে এগুচ্ছেন তারা। উদ্দেশ্য আউটার নােঙ্গর করা জাহাজগুলােকে আঘাত করবেন। সেই লক্ষ্যে অবিরাম সাঁতরিয়ে চলছেন। কোনদিকে তাদের খেয়াল নেই। এগুচ্ছেন তাে এগুচ্ছেনই। কিছুক্ষণ পর পর মাথা তুলে দেখছেন আর কতদূরে আছে টার্গেট। প্রতিবারই মনে হচ্ছে আর একটু গেলেই পাওয়া যাবে। এ ভাবে অনেকক্ষণ সাঁতার কেটে তারা দেখলেন টার্গেট মনে হচ্ছে পিছিয়ে যাচ্ছে। সাগরের মাঝে টার্গেটের দূরত্ব কতটুকু তা তারা বুঝতে পারেননি। অবশেষে ক্লান্ত হলেন।  আর পারছিলেন না। একে অন্যের বন্ধন থেকে ছুটে গেলেন। একান্ত ক্লান্ত হয়ে অপারেশনের আশা ত্যাগ করে ফিরে চলছেন। পুরাে রাত সাঁতার কেটে দিক হারিয়ে তারা বিভিন্ন পথে পাড়ে ওঠেন। শফিকুর নূর মাওলা, নুরুল হক, মােহাম্মদ হােসেন ফরিদ ও আমীর হােসেন পথ ভুলে নৌবাহিনীর ওখান দিয়ে ওঠেন এবং গ্রেফতার হয়ে যান। কমান্ডাে মােহাম্মদ হােসেন ফরিদকে গ্রেপ্তার করে পাকবাহিনী তাঁকে রাস্তার ম্যানহােলে অর্ধেক শরীর ঢুকিয়ে উল্টোদিকে চাপ দিয়ে মেরুদন্ড ভেঙ্গে হত্যা করে। অন্যান্যদের পাকবাহিনী গ্রেপ্তার করে প্রদর্শনীর জন্য ঢাকা পাঠিয়ে দেয়। তাদের ভারতীয় ফ্রগম্যান বলে টেলিভিশনে প্রদর্শন করে।
পাকসরকার নিয়ন্ত্রিত পত্র-পত্রিকায় তাদের ভারতীয় ফ্রগম্যান বলে প্রচার করেছে। এদের বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছিল পাকিস্তানী নৌঅফিসার মমতাজ। শুধু কি তাই, তার সহযােগিতায় অপারেশন জ্যাকপট সম্পন্ন। হয়েছে। তাঁর বাসায় অনেক নৌকমান্ডাে গিয়ে প্রয়ােজনীয় তথ্য নিয়ে আসতেন। নৌকমান্ডাে আবু মুছা চৌধুরীও তার বাসায় তথ্যের প্রয়ােজনে গিয়েছিলেন। এ অপারেশন ব্যর্থ হয়েছে সত্যি কিন্তু বিশ্বব্যাপী আলােড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। এ ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নৌকমান্ডােরা আরাে সাহসী ও জেদ নিয়ে আরাে ক’টি সফল অপারেশন করেছে। বিশ্ববিবেক জানতে পেরেছে বাঙালিরা স্বাধীনতার জন্য কত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পরে নৌকমান্ডােদের ক’জন চলে যান ভারতে।

(সূত্র : রণাঙ্গনে সূর্য সৈনিক, সাখাওয়াত হােসেন মজনু)

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত