You dont have javascript enabled! Please enable it! পাকসেনাদের সহিত চান্দহাটের ঐতিহাসিক যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক

পাকসেনাদের সহিত চান্দহাটের ঐতিহাসিক যুদ্ধ

পরপর দুদিন যুদ্ধে জয় লাভ করলাম। তৃতীয় দিন আমাদের উপর আরও ভারী ভাবে আক্রমণ আসতে পারে বলে সন্দেহ হচ্ছিল। ফলে আমরাও সম্ভাব্য হামলার মােকাবেলা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সমস্ত মুক্তিযােদ্ধারা চান্দহাটে ক্যাম্প করে রইল। স্থানীয় লােকজন খাদ্যসংগ্রহ করে মুক্তিযােদ্ধাদের খাওয়ানাের ব্যবস্থা করল। কিন্তু রাতে নগরকান্দা থানায় তােক পাঠিয়ে যা জানতে পারলাম তাতে পরবর্তী দিন আক্রমণের কোন সম্ভাবনা আছে বলে মনে হল না। তথাপি আমরা সবাই হুঁশিয়ার হয়ে রইলাম। ২৯শে মে, ১৯৭১ সাল। সকাল প্রায় সাতটায় সময় কোন এক বিশেষ কারণে বাস্তপুটি গিয়েছিলাম। সেখানে মালেক মিঞার সাথে আলাপ করছি। এমন সময় আঃ মাজেদ এসে বলল, ভাইজান, ছােট পাইককান্দির সামনা দিয়ে বহু পুলিশ চান্দহাটের দিকে যাচ্ছে। মনে হয় মুক্তিবাহিনীকে আক্রমণ করবে।’ তার কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য সেখানেই একটি তাল গাছে উঠে দেখি সংবাদ ঠিকই। তখনই চুড়িয়ার চরের ঐ মাজেদ মােল্লাকে চান্দহাট আজিজ মােল্লার নিকট খবর দেওয়ার জন্য পাঠালাম। মাজেদ তখনই দৌড়ে চান্দহাটে গিয়ে সংবাদ দেয়।

খবর পেয়েই বেলা আটটার দিকে আজিজ মােল্লা ১ টি চাইনিজ ষ্টেনাে মেশিনগান, ১০টি ৩০৩ রাইফেলসহ ১১ জন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে তৎক্ষণাত রওয়ানা হন। চান্দহাট হতে অর্ধমাইল উত্তরে কুমারদিয়া গ্রামের সামনে দমদমার দক্ষিণ দিকের শেষ প্রান্তে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করেন। এদিকে আমি বিভিন্ন গ্রামে তােক পাঠিয়ে লাঠি, ঢাল, সড়কি ইত্যাদি অস্ত্রসহ মুক্তিবাহিনীর পিছনে আসার জন্য জনসাধারণকে আহ্বান করলাম। দু’দিন তথাকথিত মুজাহিদ বাহিনী ও দালাল পুলিশদের সাথে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ বিজয়ের ফলে জনসাধারণের মানােবল আরও দৃঢ় হয়েছিল। ফলে তৃতীয় দিনে পুলিশ আসার সংবাদ পেয়েই জনসাধারণ নিজ নিজ গ্রাম্য হাতিয়ার নিয়ে জড়াে হচ্ছিল।। ঐদিন আক্রমণকারীগণ আসলে কয়েকজন ছিল পুলিশ এবং বাকী সবাই ছিল পাঞ্জাবী সৈন্য। কিন্তু দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল পুলিশ, কেননা তাদের মাথায় কোন হেলমেট ছিল না।
মাত্র ১১ জন ছিল মুক্তিযােদ্ধা। কমান্ডার আজিজ মােল্লা বেশ কৌশল করে এক লাইনে বহু জায়গা নিয়ে ডিফেন্স নিলেন। একজন অন্যজন হতে প্রায় একশত গজ দূরে ছিল। যে পথ দিয়ে মিলিটারী আসবে সেই পথের উপর একটা তালগাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে তিনি খান সেনাদের গতিবিধির প্রতি লক্ষ্য করছিলেন। ওয়াজেদ মােল্লার কাছে নির্দেশ ছিল যে, প্রথম ফায়ার করবেন কমান্ডার নিজে এবং পর পরই চাইনিজ ষ্টেননা মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ার চালাবেন ওয়াজেদ মােল্লা। তারপর শুরু হবে তুমুল যুদ্ধ।  হানাদার বাহিনীর সাথে ছিল নগরকান্দার জাফর, খােকন ও বল্লভদীর দু’জন পাকসেনা সহযােগী। আক্রমণকারিগণ যখন মুক্তিবাহিনীর ডিফেন্স লাইন হতে বেশ কিছুদূরে লাইন ধরে হেঁটে আসছিল তখন কামন্ডার আজিজ মােল্লা বুঝতে পারলেন এরা পাঞ্জাবী সৈন্য। অল্প কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা নগণ্য হাতিয়ারসহ উন্নতমানের অস্ত্রধারী পাকসৈন্যের সাথে যুদ্ধের সম্মুখীন। এ খবর পেলে মুক্তিবাহিনীর লােকেরা ঘাবড়িয়ে যেতে পারে। তাই তিনি কারও নিকট এ সংবাদ দিলেন না। প্রতিরক্ষা ব্যুহ হতে দুইশত বা আড়াইশত গজ দূরে থাকতেই তিনি হুইসেল দিয়ে প্রথম ফায়ার করলেন। সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সমস্ত রাইফেল এক সাথে গর্জে উঠল । খানসেনারা মুক্তিবাহিনীর হঠাৎ আক্রমণে ভীষণভাবে ভয় পেয়ে যে যেখানে পারল মাটিতে শুয়ে পড়ল এবং এই ভাবেই মেশিন গানের ব্রাশ ফায়ার চালাতে লাগল। তাদের গুলি অনেক উপর দিয়ে যাওয়ার ফলে মুক্তিযােদ্ধাদের গায়ে লাগছিল না। পক্ষান্তরে মুক্তিযােদ্ধাদের গুলি মিলিটারীদের গায়ে লাগছিল। এই রকম প্রায় ১৫/২০ মিনিট দু’পক্ষের মধ্যে অবিরাম যুদ্ধ চলতে থাকে। অতঃপর পাকবাহিনী টিকতে না পেরে পিছু হটতে শুরু করে। মাঝে মাঝে পিছনের দিকে ফিরে মেশিন গানের ব্রাশ ফায়ার করছিল।
এদিকে মুক্তিযােদ্ধাদের সহযােগী জনসাধারণ যখন দেখল পাকসেনারা টিকতে না পেরে দৌড় শুরু করেছে, তখন তারা মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে বিপুল উদ্দীপনা সহকারে অগ্রসর হতে লাগল। মঝে মাঝে জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলছিল। তাই দেখে পাকসেনারা মনে করল হাজার হাজার মুক্তিযােদ্ধারা বুঝি হামলা করেছে। সুতরাং তারা ভীষণ ভাবে ঘাবড়ে গেল এবং রণক্ষেত্রের সাধারণ নীতি ও নিয়ম ভুলে প্রাণভয়ে পিছন দিকে দৌড়চ্ছিল। মুক্তিবাহিনীও তাদেরকে অনুসরণ করে গুলি করছিল। খানসেনারা মুক্তিবাহিনীর গুলিতে ধরাশায়ী হচ্ছিল। পাকসেনারা আহত হয়ে পড়লে মুক্তিযােদ্ধারা তাদেরকে মারত না। জনসাধারণই লাঠি, সড়কি, প্রভৃতির সাহায্যে তাদের ভবলীলা সাঙ্গ করছিল। এই রকম মুক্তিযােদ্ধাগণ খানসেনাদের তাড়া করত। হানাদারবাহিনীর সাথে জাফর ও খােকন দুভাই-ই ছিল। ওরা দু’জনই আগে আগে দৌড়াচ্ছিল আর পাকসেনারা তাদের অনুসরণ করছিল। নগরকান্দা হতে প্রায় এক মাইল দক্ষিণে ছােট পাইককান্দি, কোদালিয়া, শেখরকান্দি ও ঈশ্বরদী গ্রাম সমূহের মাঝে অবস্থিত একটি বিলের ভিতর জাফর পালাতে চেষ্টা করছিল। পাকসেনারাও তাকে অনুসরণ করে বিলের মধ্যে নামল। মুক্তিযোদ্ধারা ও জনসাধারণ বিলের তিনদিকে। ফলে তাদের গায়ে কোন গুলিই লাগছিল না। জনসাধারণের কাছে বেতের তৈরি ঢাল ও সড়কি ছিল। এগুলাে ছিল পাঞ্জাবীসেনাদের অচেনা।
তাই তারা এগুলােকে বাঙাল মুলুকের নতুন অস্ত্র মনে করে আরও বেশি ঘাবড়ে গেল। যুদ্ধে মাত্র কয়েকজন খানসেনা ব্যতীত সবাই ঐ বিলে এবং পালিয়ে আসার সময় মারা যায়। কমান্ডার আজিজ মােলা ফায়ার করতে করতে বিলের উত্তর দিকে গিয়েছিলেন। যখন জীবিত উক্ত ক’জন খানসেনা তার নিকট দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল, তখন তাঁর নিকট কোন গুলি ছিল না। মােহাম্মাদ আলী সব সময় তার সাথে ছিল। গুলি ফুরিয়ে গেলে মােহাম্মদ আলী অন্য লােকের নিকট থেকে গুলি নিয়ে আসার পূর্বেই ঐ কয়েকজন হানাদারবাহিনীর লােক পালিয়ে যায়। যদি তাঁর গুলি ফুরিয়ে না যেত তাহলে ঐদিন হয়ত একজন খানসেনাও পালিয়ে যেতে পারত না। যে সকল পাকসৈন্যরা গুলিতে আহত হয়ে বিলের মধ্যে পড়েছিল জনসাধারণ বিলের মধ্যে নেমে তাদেরকে আঘাতে জর্জরিত করে শেষ করেছিল। জাফর গুলি লেগে বিলের পাড়ে মরেছিল। তাকে দেখার জন্য যে লােকই গিয়েছিল, তাদের মধ্যে এমন কোন একজন লােক বােধহয় ছিল না যে, জাফরের গায়ে একটা ক্ষত সৃষ্টি না করেছিল। জাফরের গায়ে আঘাত ব্যতীত কোন জায়গাই ছিল না। আমি নিজে তাকে দেখিনি, তবে প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে শুনেছি যে জাফরের গায়ে আশী থেকে নব্বইটি ক্ষত চিহ্ন ছিল। নাক ও কান কাঁচি দিয়ে কেটেছিল। শুধু তাই নয়, তার পুরুষাঙ্গ কেটে মুখের মধ্যে দিয়ে রেখেছিল। মানুষ মারা গেলে সাধারণত শবদেহের উপর কেউ কোন অত্যাচার করে না। কিন্তু জাফর এত বড় মারাত্মক অত্যাচারী ছিল যে, মৃত্যুর পরেও জনসাধারণের আক্রোশ তার উপর থেকে যাচ্ছিল না।
বেলা ১টা পর্যন্ত যুদ্ধ করে আমাদের লােকজন অত্যাধিক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। ঈশ্বরদী গ্রামের মা, বােনেরা ঐ দিন মুক্তিযােদ্ধাদেরকে যে সাহায্য করেছিল তা মনে রাখার মতাে। তারা চিড়া, মুড়ি, গুড়, দুধ, ডাব প্রভৃতি এনে মুক্তিযােদ্ধাদের দিয়েছিল। এদিনের যুদ্ধে প্রায় ৩০জন পাকসেনা নিহত হয়। পক্ষান্তরে একজন মুক্তিযােদ্ধাও মারা যায়নি। এমন কি কেউ আহতও হয়নি। তবে কয়েকজন সাধারণ লােকের গায়ে গুলি লেগে গেলে আহত ও নিহত হয়। একজন ক্যাপ্টেনসহ দু’জন লেফটেন্যান্টও খানসেনাদের সাথে মারা যায়। এই যুদ্ধে জয়ের ফলে তিনটি মিডিয়াম মেশিনগান, চারটি চাইনিজ রাইফেল ও একটি স্টেনাে মেশিন গানসহ বহু মেশিন গানের গুলি আমাদের হাতে আসে। এই সব অটোমেটিক হাতিয়ার পরবর্তীকালে বিভিন্ন অপারেশনে যথেষ্ট সহায়ক হয়েছিল। খানসেনাদের সাথে যে সকল পাকদালাল এসেছিল তার মধ্যে জাফরসহ দু’জন যুদ্ধক্ষেত্রেই মারা যায় এবং বাকী কয়েকজনকে স্থানীয় জনসাধারণ জীবিত অবস্থায়ই ছেড়ে দেয়। আমাদের এই বিজয়ের সংবাদ বিদ্যুৎ বেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। মুকসুদপুর থানা হতে বহু বেঙ্গলরেজিমেন্টের জোয়ান, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর লােকজন এসে বিকাল নাগাদ আমাদের দলে যােগ দিল। এই যুদ্ধে কমান্ডার আজিজ মােল্লা অসীম সাহস ও রণ নিপুণতার পরিচয় দিয়েছিলেন। আরও যারা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছিল তারা হল রশিদ ইসরাইল, বারিক হাবিলদার (শহীদ), আলতাফ, ইসহাক ও আওয়াল প্রভৃতি।
ঐদিন যুদ্ধের যে ক’জন খানসেনা জীবিতাবস্থায় ফিরে গিয়েছিল তাদের রিপাের্ট অনুসারে ঢাকা আর্মি হেডকোয়ার্টারে এই সংবাদ পরিবেশিত হয়েছিল যে, চান্দহাট এলাকায় প্রায় ১০ (দশ) হাজার যুক্তিযােদ্ধা পাকসেনাদের আক্রমণ করেছিল। ফলে পরের দিন পাকবাহিনী বেশ ভারী ভাবে আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছিল। এই সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য আমরাও প্রস্তুত ছিলাম। তাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য আমরাও দৃঢ় সংকল্প করেছিলাম। আমাদের ধারণা ছিল দিগ গর থেকে বাটিকামারী হয়ে ফরিদপুর হতে নগরকান্দা এবং ভাঙ্গা হয়ে চান্দাহাট ক্যাম্প আক্রমণ করতে পারে। দলে প্রায় সশস্ত্র ৬০ (ষাট) জন মুক্তিযােদ্ধা ছিল। তাদেরকে তিনটি ভাগ করে সম্ভাব্য তিন পথেই বাধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হল এবং প্রত্যেক দলেই চান্দহাট হতেই ৩/৪ মাইল দূরে গিয়ে ডিফেন্স নেয়া হবে। রাতের খাওয়া শেষেই রওয়ানা হতে হবে। সকালে একরকম না খেয়েই প্রত্যেকে যুদ্ধ করেছিল এবং অত্যাধিক প্ররিশ্রমে সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। সবাই ঘুমে। ঢুলু ঢুলু। কিন্তু দেশমাতার এই সংকটময় মুহূর্তেও দেশকে হানাদারবাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ে কেউ ঐ রাতে দূরবর্তী এলাকায় ডিফেন্স নেওয়ার জন্য যেতে অসম্মত হল না। ক্লান্ত কলেবরে খাওয়ার পর পরই দবরতী এলাকায় ডিফেন্স নিতে যাওয়া যে কত বড় কষ্টকর তা যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তারাই উপলদ্ধি করতে পারেন।
 রাত প্রায় আটটা বাজে। আমরা আমাদের অস্ত্র রেখে খেতে বসেছি। খাওয়া যখন। আধাআধি তখন বাটিকামারী এলাকা থেকে তিন চারটি ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে আজিজ মােল্লার কাছে বলল, “দিগনগর বাটিকামারী হয়ে প্রায় এক হাজার পাকসৈন্য ভারী। অস্ত্র নিয়ে মুকসুদপুরের দিকে যাচ্ছে। অন্যান্য দিক হতে আরও যে সব খবর পেলাম তাতে পরিষ্কার জানতে পারলাম যে আমরা চারদিক হতেই ঘেরাও হয়েছি। যেভাবে আমরা মারাত্মক আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছি তাতে হানাদারবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করা মানেই সমূহ বিপদের সম্ভাবনা। তাছাড়া প্লেন আক্রমণের ভয়ও ছিল। সুতরাং যুদ্ধ না করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কমান্ডার আজিজ মােল্লা ও দলের সব লােকজন তাদের অস্ত্রসহ মুকসুদপুর থানা এলাকার নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার জন্য রওয়ানা হলেন। ক্যাম্পে যে সকল গুলির বাক্স ছিল সেগুলাে আমি মােহনকে দিয়ে। চান্দাহাট কুমার নদীতে ডুবিয়ে রেখে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম। আসন্ন মারাত্মক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে আমার সারা রাত ভাল ঘুম হল না। রাতে স্বপ্ন দেখলাম যে, আমাদের এলাকায় বিভিন্ন গ্রামে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। খারাপ স্বপ্ন দেখে আরও চিন্তিত হয়ে পড়লাম।
পরদিন ৩১শে মার্চ ভােরবেলা আমাদের আক্রমণ পুরােপুরি সফল হতে পারেনি তুমুল গােলাগুলির সাহায্যে শত্রুপক্ষ আমাদের মাথা নিচু করে রাখতে বাধ্য করে। সারাদিনের যুদ্ধের পর আনুমানিক জীবিত শত্ৰু সংখ্যা ছিল ৪০/৪৫ জন। তার মধ্যে অফিসাররা সকলেই জীবিত। গত্যন্তর না দেখে রাতের অন্ধকারে তারা দুটি জীপ ও একটি ডজ গাড়িতে আরােহণ করে আমাদের ব্যুহ ভেদ করে তীব্র গতিতে ঝিনাইদহের দিকে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। আমার সৈন্যরা সাথে সাথেই তাদেরকে অনুসরণ করে। শত্রুদের ভাগ্য মন্দ। শৈলকুপার পুলের গােড়ায় আমরা গর্ত খনন করে তারপেলিন দিয়ে সেই গর্তকে ঢেকে রেখেছিলাম সেটা তারা জানত না। তাদের প্রথম ২টা জীপ উপর্যপুরি গর্তে পড়ে গিয়ে মারাত্মক ভাবে দুর্ঘটনায় পড়ে। মেজর শশায়েব ও কয়েকজন শত্রুসেনার সেখানে ভবলীলা সাঙ্গ হয়। বাকীরা আশেপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু সজাগ মুক্তিযােদ্ধা, স্বেচ্ছাসেবক ও জনগণের হাত থেকে একটি শত্রুসৈন্যও বাঁচতে পারেনি। আমার নির্দেশে উৎসাহিত হয়ে তারা এক একজনকে হত্যা করে তার হাতের একটা একনলা শর্টগান দিয়ে। একজন এলএমজি ধারী শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে তার হাতের একটি আঙ্গুল ও এলএমজি আমার সদর দপ্তরে জমা করে। এই ছেলেটির বয়স ছিল ১৮/২০ বছর। নাম তার সুলতান আলী জোয়ারদার। যুদ্ধের প্রচণ্ডতা ও হৈ হুল্লোড়ে এই ছেলেটির সাথে দেখা করা আর আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
সেই রাতেই লেঃ আতাউল্লাহ শাহ ধরা পড়ে। তাকে ঝিনাইদহে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ২রা এপ্রিল বিকেলের দিকে আবার সদর দপ্তরে আনা হয়। ১লা এপ্রিল কুষ্টিয়া সম্পূর্ণরূপে আমাদের হাতে মুক্ত হয়। এরপর সামান্য সংখ্যক সৈন্য কুষ্টিয়ায় রেখে বাকী সৈন্যদের আমি ঝিনাইদহের দিকে পাঠিয়ে দিই। কিছু সংখ্যক সৈন্য মাগুরা, কিছু সংখ্যক ঝিনাইদহের দক্ষিণে বিশাখালী ও কিছু সংখ্যক সৈন্য কোটচাঁদপুরে অবস্থান করে। উদ্দেশ্য, যশাের থেকে উত্তর দিকে শত্রুদের অগ্রসর হবার সব পথ অবরােধ করে রাখা। | এদিকে ২৮শে মার্চ তারিখেই কলকাতা হয়ে বহির্বিশ্বের সাথে টেলিফোন যােগাযােগ স্থাপন করা হয়। আমার মনে আছে টেলিফোনে আমি ও ডাঃ আসহাবুল হক পালাক্রমে কলিকাতার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার কাছে যুদ্ধের খবর সরবরাহ করতাম।
এক রাতের কথা আমি ভুলব না। সেদিন বােধহয় ২৮ কি ২৯ তারিখ রাতের ঘটনা। ঢাকা থেকে খবর পেলাম যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট উপাধিধারী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিজ নিজ ঘরে পাকসেনাবাহিনী অত্যন্ত ঘৃণ্যতমভাবে হত্যা করেছে। কলকাতার স্টেটসম্যান পত্রিকাকে টেলিফোনে এই খবর দিতে দিতে আমি ও ডাঃ আসহাবুল হক কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলাম। সেদিন তাদেরকে এও বলেছিলাম যে, আমারও এর প্রতিশােধ সমভাবেই গ্রহণ করব। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গার অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তথা জনাব ইউনুস আলী এমপিএ, ব্যারিস্টার বাদল রশীদ, প্রিন্সিপাল ফুলে হােসেন, ইঞ্জিনিয়ার সাইফ উদ্দিন ও আরাে অন্যান্যকে নানা বেসামরিক সংযােগ, অভ্যর্থনা, সাহায্য গ্রহণ ইত্যাদি কাজকর্মে নিযুক্ত করা হয়েছিল। স্থানীয় জনসাধারণ ও ছাত্র সমাজ প্রত্যেকেই আপন সামর্থ্য ও সাধ্যানুযায়ী এই যুদ্ধের আয়ােজন ও সরঞ্জামে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে দিনরাত সাহায্য করেছিল।
বিদ্রোহ করার অব্যবহিত পরে বর্তমান বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সাথে সংযােগ হওয়ার সাথে সাথেই আমার স্ত্রীকে সেখানকার কোন নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। বেশ পরে অনেক সুহৃদই এই প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু আমার স্ত্রী ও মেয়েরা আমার সাথে যুদ্ধক্ষেত্রেই হাসিমুখে যে কোন পরিস্থিতিতেই থাকবার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল, তাই আর যাওয়া হল না। থাকল ওরা আমারই ট্যাকনিক্যাল হেডকোয়ার্টারের একটি কামরায় । সেখানে থেকেই মিসেস ওসমান স্থানীয় সেনাদের খাবার ও পানীয় সরবরাহের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেন। এ কাজের ভার তাকে সঁপে দিতে হয়নি, নিজেই চিন্তা করে তা শুরু করেন। এমনকি সেই রণাঙ্গনের যেসব সেনাদের স্ত্রী-পুত্রপরিবার সেখানে থাকত, তাদের খাবার ও পানীয়, টাকা-পয়সা পৌছিয়ে দেবার দায়িত্বও তিনি পরিচালনা করেন। তার উপর হেডকোয়ার্টারে আমাকে বা প্রয়ােজনবশত ডাঃ আসহাবুল হক ও অন্যান্য অফিসারকে নানাভাবে সাহায্য করতে দ্বিধা করেননি। প্রয়ােজনবশত মাটিতে পজিশন নেওয়া, পরিখাতে ঢুকে সতর্ক পাহারা দেওয়া, ঔষধপত্রের ব্যবস্থা করা, এমনকি অস্ত্রশস্ত্র-গােলাবারুদের ও সেনাসামন্তের স্ট্যাটিসটিক্স মেইনটেন করা, এ জাতীয় বহু কাজেও আমাদেরকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করতে তিনি অত্যন্ত আনন্দ বােধ করেছিলেন। তিনি যুদ্ধ করেননি সত্য, কিন্তু যুদ্ধের যে সরঞ্জাম তিনি দিয়েছিলেন, তা সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করার চেয়ে কোন অংশে কম নয়।  পরিকল্পনা ও নির্দেশ অনুযায়ী কুষ্টিয়ার সৈন্যদের তুলে নিয়ে ঝিনাইদহের দক্ষিণপশ্চিম ও পূর্ব-দক্ষিণের ভিন্ন ভিন্ন সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ােগ করা হয়। যশাের সেনানিবাস থেকে শত্রুপক্ষ যাতে কোনাে দিক দিয়ে পালিয়ে আমাদের পিছনে বা মধ্যে আসতে না পারে তার জন্য জোর পেট্রলিং করা হচ্ছিল।
এদিকে পূর্বনির্দেশ অনুযায়ী ক্যাপ্টেন আজম চৌধুরী কুষ্টিয়ায় অধিকৃত সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র, গােলাবারুদ ও গাড়ি ৩রা এপ্রিল অতি প্রত্যুষে হেডকোয়ার্টার চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে পাঠিয়ে দেয়। সেদিন আমি ও ডাঃ আসহাবুল হক সাহেব যখন আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করছি, এমন সময় সেখানে এসে উপস্থিত হল ফরাসী টেলিভিশন কর্পোশেনের ভ্রাম্যমাণ দল। তারা আমার কাছে বিশ্বময় টেলিভিশন পাবলিসিটির জন্য আমার সাক্ষাৎকার চাইলেন। আমি চিন্তা করে দেখলাম সেই পর্যন্ত একমাত্র বিবিসি ও আকাশবাণী ছাড়া আর কোথাও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক রূপ প্রকাশ পায়নি। এমনকি বিবিসি থেকেও ২/৪টা খুচরাে সংবাদ ছাড়া বিশেষ কিছু প্রকাশ পেত না। অথচ বিশ্ববাসী আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক রূপ এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞার বিষয়ে জানতে না পারলে তাদের সমর্থন পাওয়া অসম্ভব। বিশ্বের সমর্থন ছাড়া যে কোন মুক্তিযুদ্ধ লােকালাইজড় হতে হতে শেষ পর্যন্ত নিঃশেষ হয়ে যেতে বাধ্য হয়। তাই এ সুযােগ আমি হেলায় ফেলতে পারলাম না। দীর্ঘ ১৫ মিনিট পর্যন্ত আমার সাক্ষাৎকার নেয়া হল। আমার ৬ বছরের ছােট মেয়ে, ডাক নাম তার কলি, তখন কাগজের উপর বাংলাদেশের পতাকা বানিয়ে সেটাকে ছােট একটা কঞ্চিতে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কচি শিশুর এত উদ্দীপনা ও মনােবল তদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। সেই মুহূর্তেই তারা কলির সেই ভঙ্গিমার মুভি শট নিলেন। আরও নিলেন আমার স্ত্রী, বড় মেয়ে চম্পা এবং অন্যান্য আরও দু’চারজনের সংক্ষিপ্ত কথা ও ছবি। আমাদের সৈনিকদের মনােবল দেখানাে হল নানাস্থানে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায়। বেলা তখন প্রায় সকাল ১০টা। এসে গেল কুষ্টিয়া হতে প্রেরিত অধিকৃত অস্ত্রশস্ত্র ও যানবাহনের কনভয়। কুষ্টিয়ার যুদ্ধে আমাদের অভাবনীয় জয়ের সেগুলাে ছিল জীবন্ত নিদর্শন।
টেলিভিশন কর্পোরেশনের সদস্যরা বেশ উৎসাহিত হলেন। সাথে সাথে সমস্ত কনভয়’কে হেটকোয়ার্টারের সম্মুখে অবস্থিত রাস্তার উপর সার দিয়ে বড় বড় কামান ও মেশিনগানগুলি ভাল করে ডিসপ্লে করে রাখা হল। একের পর এক সুষ্ঠুভাবে তারা নিলেন এ জীবন্ত ছায়াছবি। আমাদের হাতে বন্দি লেঃ আতাউল্লাহ শাহকেও আনিয়ে মাথাও ব্যাণ্ডেজ বাঁধা অবস্থায় সেই লাইনের অধিকৃত একটা জীপের পাশে বসিয়ে দেয়া হল। দীর্ঘ ১৫ মিনিট পর্যন্ত ধরা পড়ল তার জীবন্ত সাক্ষাৎকার।
 আল্লাহর কি ইচ্ছা শুটিং শেষ করে কর্পোরেশনের সদস্যরা তাদের টেপরেকর্ডার ও মুভি ক্যামেরা গুটাতে যাবে, ঠিক এমনি সময় আসল চুয়াডাঙ্গার উপরে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বিমান হামলা। চলল বিমানে-জমিনে লড়াই। কর্ণবিদারী আওয়াজে মুখরিত হল চুয়াডাঙ্গা। এই সুযােগের অপচয় করেননি ফরাসি টেলিভিশন কর্পোরেশনের নির্ভীক সদস্যরা। অসম সাহসের সাথে তারা নিতে লাগলেন বিমানের উড্ডয়ন, বােমা ও রকেট নিক্ষেপ, জমিনমুখী গুলি ও এ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ফায়ারের-ছবি ও আওয়াজ। ধরা পড়ল তাতে সৈন্যদের ব্যস্তসমস্ত এ্যাকশন ও রিএ্যাকশনের জীবন্ত ছবি। বাংলার মাটিতে নিক্ষিপ্ত হল প্রথম নাপাম বােমা চুয়াডাঙ্গার ইপিআর উইং-এর প্রাক্তন হেডকোয়াটার ভবনে। ধরে গেল আগুন। কর্পোরেশনের সদস্যরা ভাগ্যবশত ঠিক সেখানটায় উপস্থিত ছিলেন। নাপাম বােমার নিক্ষেপ থেকে শুরু করে টারগেট হিট, আগুন ধরা সবকিছুর জীবন্ত ছবি উঠে গেল তাদের ক্যামেরায়। ওরা এত নিউকি যে ত্রস্ত গতিতে গাছের উপর উঠেও তারা এই আকাশ ও জমিন যুদ্ধের ছবি তােলা পরিচালনা করেন।  এই যুদ্ধে আমাদের বিশেষ কিছু ক্ষতি হয়নি, শুধু একজন স্বেচ্ছাসেবক গায়ে বােমার সামান্য একটা টুকরা লেগে সামান্য আহত হয়। তবে চুয়াডাঙ্গা শহরের ঠিক দক্ষিণ ভাগে একটা বাড়ির কুঁড়েঘরে নাপাম বােমা নিক্ষিপ্ত হলে সেই ঘরটা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এত সুষ্ঠুভাবে, এত সাহসের সাথে টিভির সদস্যরা এই জীবন্ত ছবি তােলার কাজ সমাপন করেন যে, তাদেরকে আমি সালাম না জানিয়ে পারিনি।
আমার মনে আছে, এই মুভি রীলের মধ্যে আমি একটা কথা পরিষ্কারভাবে বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চেয়েছি যে, আমরা পৃথিবীর স্বাধীন দেশগুলাের শুধু নৈতিক সমর্থন চাই, হস্তগত সমর্থনের দরকার আমাদের নেই কারণ আমার হাতের চীনা। এসএম জি’টা দেখিয়ে ওরদেরকে বলেছিলাম শত্রুর অস্ত্র দিয়েই আমরা শত্রুকে হনন করব। | পরিশেষে এই টিভি সদস্যদল আমাদের কাছে বিদায় গ্রহণ করে কলকাতা চলে যান। বলে গেলেন যে, তারা প্যারিসে সেদিনই চলে যাবেন এই এ্যাকশন ফিল্মের পাবলিসিটি দেবার জন্য।
পরবর্তীকালে এই সদস্যদলের দ্বিতীয়বার আগমনে জানতে পারলাম, তারা নাকি এই ফিল্মের কপি আরও ৫১টি বিদেশী রাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করেছে। আরাে জানতে ও শুনতে পেলাম নামকরা চলচ্চিত্র পরিচালকের মাস্টার পিস ফিল্ম প্রােডাকশনের মতাে এই যুদ্ধের ফিল্মটিও সারা বিশ্বে সুপারহিট করেছিল, কারণ এটাই সে পর্যন্ত বহির্বিশ্বের আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘােষণা ও প্রতিজ্ঞা সাফল্যজনকভাবে বিশ্বের স্বাধীনচেতা লােকদের মনােযোেগ ও সমর্থন আকর্ষণ করতে পেরেছিল। লণ্ডন, ওয়াশিংটন ও অন্যান্য জায়গা থেকে আগত সামরিক ও বেসামরিক অফিসাররাও এই সত্যের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
ইতিমধ্যে ভারতীয় সীমান্তবাহিনীর কাছ থেকে কিছু কিছু ৩০৩ রাইফেল, ২/১টা এলএমজি, কিছু স্টেনগান ও সামান্য পরিমাণ গােলাবারুদ পেয়েছিলাম। অনেকে ভারত থেকে আমার কাছে এসেছিলেন দেখা করতে সামান্য কিছু রিলিফ সামগ্রী নিয়ে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির খ্যাতনামা সেক্রেটারী শ্রী এম কে ভিমানী এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী এসে আমার কাছ থেকে আমার কি কি প্রয়ােজন তার একটা ফর্দ করে নিয়ে গেলেন। কিন্তু ঐ ফর্দের কোন জিনিসই কোনকালে পেলাম না, তাদেরও আর সাক্ষাৎ পেলাম না। অবশ্য শ্রী ভিমানী আমার সৈন্যদের যে পরিমাণে রিলিফ সামগ্রী পাঠিয়েছিলেন, তাতে যুদ্ধক্ষেত্রে বুট, কাপড়, ঔষধপত্র থেকে আরম্ভ করে ওদের কোন কিছুরই অভাব হয়নি।

( সূত্র ও মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর ফরিদপুর, মােঃ সােলায়মান আলী )

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত