You dont have javascript enabled! Please enable it! কুমিরার লড়াই - সংগ্রামের নোটবুক
কুমিরার লড়াই
মেজর এম এস এ ভূঁইয়া ইচ্ছা ছিল সন্ধ্যার আগেই ক্যান্টনমেন্ট দখল করব; কিন্তু শত্রুর শক্তি বৃদ্ধির জন্যে কুমিল্লা থেকে যে ২৪নং এফএফ (ফ্রন্টিয়ার ফোর্স) এগিয়ে আসছে, তাকে বাধা দেওয়াই প্রথম কর্তব্য হয়ে দাড়াল।  তখন বিকেল ৫টা। ২৪ নং এফএফ-কে প্রতিহত করার জন্যে কুমিল্লার দিকে অগ্রসর হলাম। বেঙ্গল রেজিমেন্ট আর ইপিআর-এর মাত্র ১০২ জন যােদ্ধা সমবায়ে সংগঠিত দল নিয়ে এই অভিযানে আমরা বের হলাম। আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পশ্চিমা হানাদার সৈন্যদলের মােকাবিলা করার জন্যে আমাদের সম্বল মাত্র একটি এইচএমজি, কয়েকটি এলএমজি আর বাকীসব রাইফেল। এত অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে পুরাে একটি সুসংগঠিত ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাওয়ার ঝুঁকি যে কি বিরাট এবং তার পরিণাম যে কি মারাত্মক হতে পারে সেদিন তা আদৌ উপলব্ধি করতে পারিনি। কোনাে বাস্তব লড়াইয়ে এর আগে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার সুযােগ পাইনি বলেই যে এত বড় একটা ঝুঁকির পরিণাম উপলব্ধি করতে পারিনি তা নয়; আসলে মনটা ছিল তখন প্রতিশােধ স্পৃহায় উন্মত্ত; দেশের মুক্তি কামনায় উত্তপ্ত; ক্ষোভে, ক্রোধে, আবেগে উত্তেজিত। সুতরাং ঠান্ডা মাথায় অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা করে পরিকল্পনা করার আদৌ অবসর ছিল না তখন। অন্য কিছু সম্বল না থাকলেও যুদ্ধে সবচেয়ে বড় যে জিনিসের প্রয়ােজন হয় সেই সাহস, সেই উদ্দীপনা, সেই উদ্দীপ্ত প্রাণের আকাঙ্ক্ষা ছিল আমাদের সম্বল। আমদের এই অপরিমেয় মনােবল ও দুর্জয় আত্মবিশ্বাস সেদিন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার শক্তি দিয়েছিল। এছাড়া ছিল পরম করুণাময়ের অপার করুণা, যা বার বার নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করে আমাদেরকে সাফল্যের স্বর্ণদুয়ারে পৌছে দিয়েছে। আজ আমার এ প্রত্যয় দৃঢ়তা লাভ করেছে যে, সত্য ও ন্যায়ের সেই পবিত্র মুক্তি চিরদিনই অন্যায়কে প্রতিরােধ করতে এভাবেই সাহায্য করে থাকে। 
আগেই খবর পেয়েছিলাম, শত্রুবাহিনী ফেনীর কাছে শুভপুরের ব্রীজ পেরিয়ে এগিয়ে এসেছে। অতএব, যত দ্রুত তাদের অগ্রগতি প্রতিহত করা যায় ততই আমাদের জন্য মঙ্গল। আমার কথামতাে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী ৫টি সাধারণ পরিবহণ ট্রাক এসে হাজির করলেন। তখন আমার সৈন্যবাহিনী ও জনসাধারণের প্রত্যেকেরই যেন একটা যুদ্ধাদেহী ভাব। তাদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল যে, অনেকদিনের পুঞ্জীভূত বেদনা, বঞ্চনা, ক্ষোভ, আক্রোশ বিদ্রোহের আগুনে ফুঁসে উঠেছে এবং তা এক দুর্জয় সংগ্রামের মাধ্যমেই যেন স্ফুরিত হতে চায়। চব্বিশ বছরের পাকিস্তানী বুর্জোয়াদের শাসনশােষণ ও অত্যাচার উৎপীড়নের জগদ্দল পাথরকে টুকরাে টুকরাে করে ভেঙ্গে ফেলতে আজ সবাই যেন বদ্ধপরিকর। আমি আমার ক্ষুদ্র দলের ১০২ জন যােদ্ধাকে ৪টি ট্রাকে ওঠালাম এবং বাকি ট্রাকটিতে কয়েকটি গুলির বাক্স উঠিয়ে দিলাম। আমি নিজে একটি মােটর সাইকেলে চড়ে সবার আগে চললাম। উদ্দেশ্য ঃ এগুবার সাথে সাথে পথের দু’পাশে এমন একটি উপযুক্ত স্থান খুঁজে নেওয়া যেখান থেকে শত্রুর উপর সাফল্যের সাথে প্রচন্ড আঘাত হানা যায়। শুভপুরে সেদিন আমাদের যাত্রাপথের দৃশ্য অবিস্মরণী। রাস্তার দু’পাশে হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমিয়েছে। তাদের মধ্যে কল-করখানার শ্রমিকই বেশি। মুখে তাদের নানান শ্লোগান। হাজার হাজার কণ্ঠের সেই শ্লোগান আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তুলছিল।
গতরাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেওয়া বর্বর বাহিনী কর্তৃক অতর্কিত আক্রমণ, নির্মম হত্যা, পাশবিক অত্যাচার, বিশেষত বেঙ্গল রেজিমেন্টের জওয়ানদেরকে পাশবিকভাবে হত্যা করার খবর এরই মধ্যে প্রতিটি মানুষের কানে পৌঁছে গেছে। যেকোনভাবে এই বিশ্বাসঘাতকতার উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য তারা প্রস্তত। সুতরাং যখনই তারা দেখতে পেল খাকি পােশাক পরা বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর এর জওয়ানরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শত্রুর মােকাবিলা করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে তখন তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠল। মুহুর্মুহু তারা শ্লোগান দিতে লাগল—‘জয় বাংলা, বেঙ্গল রেজিমেন্ট জিন্দবাদ, ইপিআর জিন্দাবাদ।’ এদিকে তাদের কেউ কেউ সৈন্যদেরকে কি দিয়ে এবং কিভাবে সাহায্য করতে পারবে তাই নিয়ে মহাব্যস্ত। আমাদের সৈন্য বােঝাই ট্রাকগুলি তখন ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। এমন সময় একজন বুড়াে লােক তার পথের পাশের দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে সে আমার হাতে তুলে দিল। বলল, স্যার, আমি গরীব মানুষ, কিছু দেওয়ার মতাে আমার ক্ষমতা নেই, এই নিন আমার দোকানের সিগারেট (সিগারেট ৩ কার্টুন ছিল); আপনার জওয়ানদের মধ্যে বিলিয়ে দিন।’ বৃদ্ধের এই সহানুভূতি ও আন্তরিকতায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার মন ভরে উঠল। আর একজন একটি ট্রাকে করে প্রায় এক ড্রাম কোকাকোলা নিয়ে এল। কেউ কেউ খাদ্যসামগ্রীও নিয়ে এল।  আন্তরিকতা ও ভালােবাসার সেই উপহার আমাদের মনকে আনন্দে উদ্বেল করে। তুলেছিল। কেমন করে, কি ভাবে তারা সেসব জিনিস যে সেদিন সংগ্রহ করেছিলেন তা ভাবলে আজও বিস্মিত হই।  সন্ধ্যা তখন ৬টা। আমরা কুমিল্লায় পৌছে গেলাম। শত্রুকে বাধা দেওয়ার জন্য স্থানটি খুবই উপযুক্ত বিবেচিত হল।
পথের ডাইনে পাহাড় এবং বামদিকে আধ মাইল দূরে সমুদ্র। শত্রুর ডানে এ প্রতিবন্ধকতা আছে এবং শত্রুকে এগুতে হলে পাকা রাস্তা দিয়েই আসতে হবে। তাই সেখানেই পজিশন নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি যেখানে পজিশন নেয়ার সিদ্ধান্ত নেই তার পিছনে একটি খাল ছিল। ঐ খাল থেকে ৫০০/৬০০ গজ সামনে অর্থাৎ উত্তর দিকে আমি পজিশন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। খালটি একটি পদাতিক বাহিনীর জন্য তেমন একটা বাধা নয়। তবু এটা পেছনেই রাখলাম। উদ্দেশ্য ছিল যদি বর্তমান পজিশন শত্রু আমাদেরকে ছাড়তে বাধ্য করে তখন খালের পারে পজিশন নিতে পারব। এটা ছিল আমার বিকল্প পরিকল্পনা। জমিনের স্বরূপ দেখে কয়েক মিনিটের মধ্যে পরিকল্পনা তৈরি করে নিলাম। আমার তিনজন প্লাটুন কমান্ডারকে ডেকে খুব সংক্ষেপে আমার পরিকল্পনার কথা জানালাম এবং নিজ নিজ স্থানে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পজিশন নেওয়ার নির্দেশ দিলাম। আমার নির্দেশ অনুযায়ী এইচ এম জি’টা ডান পাশে পাহাড়ের ঢালুতে ফিট করা হল। স্বয়ং সুবেদার সাহেব ভারী মেশিগানটির সঙ্গে রইলেন। কারণ এই ভারী মেশিনগানটিই আমাদের প্রধান হাতিয়ার এবং সবচেয়ে বড় সম্বল। আমি বামদিকের কয়েকটি এলএমজি ‘র পজিশন ঠিক করে দিলাম। আমার নির্দেশমতাে সবাই মাটিতে পজিশন নিয়ে নিল। পজিশনের অবস্থাটা হল অনেকটা U (ইউ)-এর মতাে। অর্থাৎ ডানে, বাঁয়ে এবং পিছনে আমাদের সৈন্য। যেদিক থেকে শত্রু এগিয়ে আসছে কেবল সেই সামনের দিকটা সাড়াশীর হায়ের মতাে খােলা। কুমিল্লা পৌছেই মােটর সাইকেলযােগে একটি লােককে আমরা পাঠিয়েছিলাম শত্রুর অগ্রগতি সম্পর্কে খবর নিতে।
এরই মধ্যে সে খবর নিয়ে এসেছে যে, শত্রু আমাদের অবস্থানের আর বেশি দূরে নেই, মাত্র চার-পাঁচ মাইল দূরে। তবে তারা ধীরে ধীরে গাড়ি চালিয়ে আসছে। যে লােকটিকে পাঠিয়েছিলাম সে পাঞ্জাবীদের নিকটে গিয়ে রাস্তার পাশে একটি দোকান থেকে সিগারেট কিনে ফিরে এসেছে। সে আমাকে জানাল যে, পাঞ্জাবীদের পরণে কাল বেল্ট, কাঁধে কালাে ব্যাজ এবং কি যেন একটা কাঁধের উপর, তাও কালাে। তখন আমার সন্দেহ রইল না যে, ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের সৈন্যরাই এগিয়ে আসছে। আমাদের অবস্থানের ৭০/৮০ গজ দূরে বড় একটি গাছ ছিল। জনসাধারণের সাহায্যে গাছের মােটা ডালটা কেটে রাস্তার ঠিক মাঝ খানে ফেলা হল। গাছের ডাল দিয়ে আমাদের সুন্দর একটা ব্যারিকেড সৃষ্টি হয়ে গেল। জনসাধারণ রাস্তার আশপাশ থেকে কিছু ইট এনে। ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত রাখল।  এত অল্পসময়ে জনসাধারণ কিভাবে গাছের ঐ মােটা ডালটা কেটে ফেলল এবং ইট সংগ্রহ করে ব্যারিকেড সৃষ্টি করল আজ তা ভাবতে আশ্চর্য লাগে। সৈন্যদের জানিয়ে দেওয়া হল যে, শত্রুসৈন্য যখন ব্যারিকেড সাফ করার জন্য গাড়ি থেকে নামবে এবং সাফ করার জন্য একত্র জমা হবে তখন সকলে একযােগে শত্রুর উপর গুলি ছোঁড়া শুরু করবে। বিশেষ করে ভারী মেশিনগান দ্বারা অবিরাম গুলি ছুড়বে।  প্রায় এক ঘন্টা সময় আমাদের প্রতীক্ষার মধ্যে কেটে গেল। সন্ধ্যা তখন ৭টা বাজে। আমরা শত্রুবাহিনীর অপেক্ষায় ওৎ পেতে রইলাম। আমাদের সামনে শুক্রবাহিনীর উপস্থিতি প্রায় আসন্ন বলে মনে হল। আরাে কিছুক্ষণ প্রতীক্ষার পরই সম্মুখসমরে ঝাঁপিয়ে পড়ার সুযােগ এল। শত্রুবাহিনী ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। ব্যারিকেড দেখে সামনের গাড়িগুলি থেমে গেল। কিছু সংখ্যক সিপাহী গাড়ী থেকে নেমে ব্যারিকেডের কাছে এল। এবং কেউ কেউ ইটগুলি তুলে দূরে ফেলে দিতে লাগল । পিছনের গাড়িগুলিও তখন সেই দিকেই এগিয়ে আসছিল। সন্ধ্যা তখন সােয়া সাতটা। শত্রুরা যখন ব্যারিকেড সাফ করতে ব্যস্ত এমনি সময়ে আমাদের ডানদিকের ভারী মেশিনগানটি গর্জে উঠল।
শুরু হল শনিধন পালা। চারদিক থেকে কেবল গুলির আওয়াজই শােনা যেতে লাগল। ভারী মেশিনগানটি থেকে তখন মাঝে মাঝে ট্রেসার রাউন্ড বের হচ্ছে। উহ্! সে কি দৃশ্য! শত্রুকে এত কাছাকাছি অতর্কিত অবস্থায় পেয়ে আমার মন খুশিতে নেচে উঠল। মনে মনে বললাম—তােমরা (পাঞ্জাবীরা) এতদিন মনে করতে বাঙালিরা যুদ্ধ করতে জানে না, এখন যুদ্ধ ক্ষেত্রেই বাঙালিরা তােমাদেরকে জানিয়ে দেবে তারা যুদ্ধ করতে জানে কিনা। হানাদারবাহিনীর অগ্রগতি রােধ করাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। আমাদের আকস্মিক আক্রমণে তারা তখন হতচকিত। তাদের সামনের সৈন্যগুলির অনেকেই আমাদের গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তাদের মৃত্যু-কাতর আর্তনাদ আমাদের কানে আসছিল। যারা দিশেহারা হয়ে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করছিল তাদের অনেকেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই শত্রুদের পিছনের সৈন্যরা এ অবস্থা সামলে নিয়ে মেশিনগান, মর্টার এবং আর্টিলারী থেকে অবিশ্রাম গুলিবর্ষণ শুরু করল। এবার উভয় পক্ষে তুমুল লড়াই লেগে গেল। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও শত্রুরা আমাদের ব্যুহ্য ভেদ করতে পারল না। তাদের সৈন্য বােঝাই তিনটি ট্রাকে আগুন ধরে গেল। আমাদের মেশিনগান নিউট্রালাইজ করার জন্য তারা প্রচুর পরিমাণে আর্টিলারী গােলা নিক্ষেপ করল। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবাণীতে শত্রুর সকল প্রচেষ্টা মাঠে মারা গেল। প্রায় দু’ঘন্টা প্রাণপণ লড়ে তারা শেষ পর্যন্ত দু’ট্রাক অস্ত্রশস্ত্র ফেলে রণে ভঙ্গ দিল।

ঘন্টা দুয়েক এই লড়াই চলেছিল। উভয় পক্ষের গােলাগুলির শব্দ স্তব্ধ হয়ে গেল। তারপর তারা পিছু হটতে বাধ্য হল। প্রথম দিনের লড়াইয়ে অর্থাৎ ২৬ তারিখের রাতেই শত্রুবাহিনীর ভীষণ ক্ষতি হয়েছিল। শত্রুবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্নেল ও একজন লেফটেন্যান্টসহ বিভিন্ন পক্ষের ১৫২ জন সৈনিক প্রাণ হারিয়েছিল। আমরা শত্রুদের দু’ট্রাক এমুনিশন কবজা করি; আমাদের পক্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামের চৌদ্দজন বীর সৈনিক সাহাদৎ বরণ করেন। কুমিল্লায় লড়াই চলেছিল সর্বমােট তিনদিন। শত্ৰু এই সময়ের মধ্যে তাদের আর্টিলারি ও মর্টার দিয়ে বার বার আক্রমণ চালিয়েছিল আমাদের বাহিনীর উপর। অবশেষে ২৮ তারিখে তারা ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। পিছন থেকে তারা নৌবাহিনীর সাহায্যে আক্রমণ চালায়। সাগর থেকে গানবােট দিয়ে ফায়ার সাপাের্ট দেয়। রাতের আঁধারে শত্রুরা পাহাড়ের উপরে অবস্থিত টি বি হাসপাতালের নিকটে মেশিনগান বসায়। ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে আমাদের সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে ২৮ তারিখে কুমিল্লা পাকিস্তানী সৈন্যের দখলে চলে যায়। কুমিল্লা পতনের পর হানাদারবাহিনী চট্টগ্রাম অভিমুখে রওয়ানা হয়। তারা অগ্রসর হওয়ার সময় রাস্তার দু’পাশে অবস্থিত সমস্ত গ্রাম ও হাটবাজার জ্বালিয়ে দেয় এবং সামনে যাকে দেখে তাকেই গুলি করে হত্যা করে। লােকমুখে শুনেছি কুমিল্লা পতনের পর রাস্তার দু’পাশে কয়েকদিন ধরে আগুন জ্বলেছিল। আমার মনে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কুমিল্লার যুদ্ধটাই একমাত্র প্রথম যুদ্ধ, যেখানে বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও তৎকালীন ইপিআর বাহিনী সম্মিলিতভাবে হানাদার বাহিনীর উপর এক প্রচন্ড আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই যুদ্ধে ২৪ নং এফ এফএর একটা পুরাে কোম্পানী একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। একথা আমি জানতে পেরেছিলাম ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের কাছে। তিনি কুমিল্লার যুদ্ধে ২৪ নং এফ এফ-এ কর্মরত ছিলেন। সাক্ষাৎকার ঃ লেঃ কর্নেল মাহফুজুর রহমান। ২৫-৮-৭৩ (সূত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, নবম খণ্ড)

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত