খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস্ তৎকালীন পকিস্তানের কাগজ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় কারখানা। এই উৎপাদিত নিউজপ্রিন্ট দেশের খবরের কাগজ শিল্প ও লেখার কাগজের চাহিদা মেটানাের পরও বিদেশে রপ্তানি হত। এই মিলের উৎপাদিত কাগজ ছিল অত্যন্ত উন্নতমানের। এই মিল চালু রাখার জন্য প্রয়ােজন হত হাজার হাজার টন গেউয়া কাঠ। আর এই কাঠ সারাবছর ধরে আসত সুন্দরবন থেকে। গেউয়া কাঠ আহরণ ও আনয়নের নামে ব্যবস্থা সারা বছর চালু রাখার জন্য লালশিরা’ নামে একটা আবাসিক জাহাজ সুন্দরবন অভ্যন্তরে সর্বদাই অবস্থান করত। অফিসার এবং কর্মচারীদের আবাসস্থল ও অফিস হিসেবেই এ জাহাজটা ব্যবহৃত হত। তাই তকালীন পাকিস্তানের সংবাদপত্র শিল্প ও নিউজপ্রিন্ট কারখানা সাময়িকভাবে অচল করে দেয়ার উদ্দেশ্যে এই জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। লেঃ আরেফিন ও তার দল এই গুরুদায়িত্ব পালন করেন। হাতিয়ার ডাঙ্গা মনােরঞ্জন ক্যাম্প থেকে মাত্র ১১ জনের একটা দল গহীন সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে রওনা হন লালশিরা’ জাহাজ অপারেশন করার উদ্দেশ্যে। নৌকাযােগে উজান-ভাটি মােকাবিলা করে এক সময় লেঃ আরেফিনের দল লালশিরা’র কাছাকাছি এক স্থানে পৌঁছান। দুই তিনজন চলে যায় জাহাজে অবস্থান সহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর আনার জন্য। তৃষ্ণার্ত, ক্ষুধার্ত মুক্তিযােদ্ধারা সঙ্গে আনা চিড়ামুড়ি খেয়ে কিঞ্চিত বিশ্রাম করেন জঙ্গলের মধ্যে।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত