বর্তমানে প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডের বাসিন্দা ফিল ও ডায়ান রশফোর ১৪ জন দত্তকগ্রাহী মা-বাবার মধ্যে যুদ্ধশিশু রিটা (রিজা) রুফিয়া-কে ১৯৭২ সালে দত্তক নিয়েছিলেন। ফ্রেড ও বনি কাপুচিনাে বাংলাদেশের ঢাকা থেকে রশফোর দম্পতির জন্য শিশুটিকে কানাডা নিয়ে। যান। লেখক এ দম্পতির সঙ্গে বিগত বছরগুলিতে বার কয়েক যােগাযােগ করেন। তারা টেলিফোনেও কথা বলেন। দম্পতি তাদের পরিবারের ছবি তুলে পাঠান। কিন্তু রুশফোরেরা সরাসরি প্রকল্পে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। তারা লেখককে শুভেচ্ছা জানান, লেখকের প্রাথমিক কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন এ শর্তে যে, ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ প্রকাশ করা হবে না কোথাও। লেখক সেটা করতে সম্মত হন। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত ও প্রকাশ্যে প্রাপ্তব্য তথ্যাদির ভাষ্যমতে যখন রশফোরেরা রিজা রুফিয়া-কে দত্তক নেন, তারা তখন অন্টেরিওর এসপানােলা শহরে বাস করছিলেন তখন তারা অন্যান্য দত্তকগ্রাহী মা-বাবা, বিশেষ করে যারা অন্টেরিও প্রদেশে বাস করতেন, তাদের সঙ্গে বেশ ভালাে যােগাযােগ রেখেছিলেন। রশফোরেরা ছয়টি ছেলেমেয়েকে লালন পালন করেছেন। যাদের মধ্যে তিনজন দত্তক নেয়া। সন্তান এবং তিনজন তাদের ঔরসজাত সন্তান । ফিল ও ডায়ান বলেন, কানাডাতে বহুজাতিক ছেলেমেয়ের পরিবার সংঘটনের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে গিয়েই দত্তক নেবার কথা ভাবেন। ৪০ বছর পরে তারা মনে করেন তারা নিশ্চিতভাবে সেটা তাদের সন্তুষ্টি অনুযায়ী করেছেন।
যতটুকু জানা গেল সেখান থেকে বলা যায় যে, রশফোরেরা তাদের দাম্পত্য জীবনের প্রথমদিকে দত্তকগ্রাহী পরিবারগুলাের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বেশ কয়েক বছর । সময়ের সাথে সাথে তারাও নানা শহরে বাস করেন এবং পরে প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডে এসে বসতি স্থাপন করে সেখানকার জনগােষ্ঠীর সঙ্গে মিলেমিশে বাস করতে শুরু করেন। তাদের ছেলেমেয়েরা ধীরে ধীরে যখন বড় হতে শুরু করে এবং লেখাপড়ার সাথে সাথে বন্ধুবান্ধবের সাথে মেলামেশা শুরু করে তখন তারা নিজেদেরকে কানাডীয় হিসাবে দেখে । একই সময়ে তাদের নানা বর্ণীয় বন্ধুবান্ধব ও পরিবারচক্রে তারা যােগাযােগ বজায় রেখে চলেন। আজ রশফোর দম্পতির নীড়শূন্য – কারণ ছেলেমেয়েরা যার যার জীবন শুরু করেছে। তাদের সন্তানেরা বর্তমানে তিনটি বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
জন্ম হয়েছিল ১৫ জানুয়ারি ১৯৭২-এ ঢাকার শিশু ভবনে। শিশু কন্যার জন্মের সময় ওজন ছিল ২ কে জি। দাপ্তরিক নথিপত্রে বাংলাদেশে তার নাম দেখায় রিটা (রিজা) রুফিয়া । ওর। জন্মদাত্রী মা ওকে অনাথ আশ্রমে দত্তকের জন্য রেখে যান। ২০ জুলাই ১৯৭২ তারিখে খবরের কাগজে কানাড়াতে ওদের আগমন সংবাদ যে ছেপেছিল, তাতে এর নাম ছিল রিজা। রশফোরেরা ওর নাম রিজা রুফিয়া রেখে শেষে পরিবারের নাম রশফোর সংযুক্ত করেন। শিশু মেয়েটির নাম হলােঃ রিজা রুফিয়া রশফোর। লেখক ই-মেইল লিখেছিলেন রিজা-কে নিজের পরিচয় দিয়ে এবং তার প্রকল্পের ইতিবৃত্ত জানিয়ে । কিন্ত উত্তরে কোনাে আগ্রহ উদ্দীপনা লক্ষ্য না করায় পাবলিক ডমেইনে যে তথ্যাদি রয়েছে সেখান থেকেই তথ্যাদি যােগাড় করেন।
ইন্টারনেটে প্রকাশ্যে প্রাপ্তব্য তথ্যানুসারে রিজা কলেজে গ্রাফিক ডিজাইন পড়ে এবং এডভার্টাইজিং পেশাজীবী হিসাবে কাজ করে আসছে বিগত কয়েক বছর থেকে। প্রডাকশন শিল্পী হিসাবে কাজ শুরু করে রিজা প্রাদেশিক ও ফেডারেল গভর্নমেন্টেও কাজ করেছে। সে টরন্টো ডমিনিয়ন (টিডি) ব্যাংকে কাজ করেছে। তাছাড়া রয়্যাল ব্যাঙ্ক অব কানাডা এবং ব্যাঙ্ক অব মন্ট্রিয়ল-এও কাজ করেছে। আজকের টরন্টোবাসী রিজা একজন অভিজ্ঞ আর্ট ডিরেক্টর এবং ডিজাইনার। তার অভিজ্ঞতা তাকে সম্পৃক্ত করেছে প্রসিদ্ধ কর্পোরেট ক্লায়েন্টস-এর সাথে। সে পদোন্নতির সিড়ি বেয়ে ডিজাইনিং থেকে শুরু ডিজিটাল ডিরেকশন পর্যন্ত উঠতে পেরেছে। প্রকাশ্য তথ্যাদি থেকে বলা যায়, লেখকের ভাষ্যমতে রিজা দক্ষতা এবং গুণের চচরি। সমাহারে নিজের জন্য একটি সফল পেশাজীবীর ব্যস্ত জীবন গড়ে নিয়েছে। আজ যে কানাডাকে রিজা তার নিজের দেশ মনে করে, সেখানে সে সফল ও দক্ষ পেশজীবী, একথা নিশ্চিন্তে বলা যায় ।