বাঙলাদেশে জন মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য চোর-জোচ্চোর দিয়ে ভূয়া মুক্তিবাহিনী তৈরি
পাকিস্তানী সমর চক্রের আর এক শয়তানী
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ২৭ সেপ্টেম্বর- বাঙলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সুনামকে কলঙ্কিত করার জন্য পাক সামরিক চক্র চোর-জোচ্চোর গুণ্ডা-বদমায়েদের দিয়ে এক ভূয়াে “মুক্তিবাহিনী তৈরি করিয়ে তার মাধ্যমে জনসাধারণের উপর উৎপীড়ন ও জুলুম চালাচ্ছে। উদ্দেশ্য : মুক্তিবাহিনী সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা ও মুক্তিবাহিনীর প্রতি তাদের বিদ্বিষ্ট করে তােলায় বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাপ্তাহিত মুখপত্র “মুক্তিযুদ্ধের সর্বশেষ সংখ্যায় (২৬ সেপ্টেম্বর) উপরােক্ত মর্মে সংবাদ দেওয়া হয়েছে।
“মুক্তিযুদ্ধ”র এই সংবাদে বলা হয়েছে যে, বাঙলাদেশের স্বাধীনতা যযাদ্ধাদের সুনামকে কলঙ্কিত করার জন্য এবং মুক্তিবাহিনীর প্রতি জনগণের মনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের সামরিক শাসকচক্র নানা ধরণর ঘৃণ্য উপায় অবলম্বন করছে। শহর ও গ্রামের চরিত্রহীন গুপ্ত ও সমাজ বিরােধী লােক, মুসলীম লীগ, জামাত ও নেজামে ইসলাম প্রভৃতি দালাল দলগুলির লােকদের এই কাজে লাগানাে হচ্ছে এমনকিজেল ও হাজত থেকে চোর ডাকাতদের ছেড়ে দিয়ে তাদের এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ঢাকা জেলার টঙ্গী ও তেজগাঁও থানা এলাকায় সম্প্রতি এই ধরণের লােকেরা মুক্তিবাহিনী সেজে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গ্রামবাসীকে ভয় দেখিয়ে জোর করে চাঁদা আদায় করছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। যারা চাঁদা দিতে অক্ষমতা বা অস্বীকৃতি জানায়, তাদের কাছে এই গুণ্ডা আর দালালরা মুক্তিবাহিনীর নামে হত্যা করার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠায়। মুক্তিবাহিনীর নামে ধ্বনি দিয়ে এরা অনেক জায়গায় ডাকাতি করছে।
“মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বস্তসূত্রে প্রাপ্ত সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আরাে জানিয়েছে যে, পাক সামরিক চক্র বাঙলাদেশের বিভিন্ন জেল থেকে প্রায় তিন হাজার চোর-ডাকাতকে ছেড়ে দিয়ে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। ইয়াহিয়া চক্রের মতলব হল : এদের দিয়ে মুক্তিবাহিনীর নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানান দুম করানাে এবং তার দ্বারা দেশবাসীর কাছে মুক্তিযােদ্ধাদের হেয় প্রতিপন্ন করা। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছু কিছু এলাকায় মুক্তি বাহিনীর নামে এইসব লােকের অত্যাচার দিন দিন বেড়ে চলেছে, টঙ্গী অঞ্চল থেকে মুক্তিযুদ্ধার প্রতিনিধি এই ভূয়া মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি পাণ্ডার নাম পাঠিয়েছেন। এই বদমায়েশ দালালগুলির নাম টঙ্গী থানার আরিচপুর গ্রামবাসী চান্দুমিঞার দুই ছেলে গাজী আব্দুর রসিদ ও গাজী আব্দুল লতিফ; ঐ গ্রামেরই সব্দর আলি মাস্টার এর ছেলে সাহাজউদ্দীন; … গ্রামের আসকর আলির ছেলে ঠোটকাটা হাশেম এবং তেজগাঁও থানার রাজবাড়ী গ্রামের জহিরুল হক খােন্দকারের ছেলে আবরাফ।
সূত্র: কালান্তর, ২৮.৯.১৯৭১