You dont have javascript enabled! Please enable it! Draft - সংগ্রামের নোটবুক

This is a temporary post for collecting data. Not for posting and not for publishing. Saved only as readable for the editors. Not clickable and not downloadable.

তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি ১৯৫১ ৩য় খন্ড
সিমিন হোসেন রিমি

– সােমবার –
১.১. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ইংরেজি নববর্ষের দিন সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত নাজিরা বাজারে চুল ছাঁটালাম। সােয়া ১০টায় ডাক্তার করিমের সঙ্গে তার ফার্মেসিতে দেখা করলাম এবং ব্রিটানিয়াতে একটি ছবি দেখব বলে ঠিক করলাম। হলে ফিরেছি পৌনে ১১টায়। দুপুর সাড়ে ৩টায় ব্রিটানিয়াতে গেলাম। ডাক্তার করিমের সঙ্গে তারই খরচে লাভ অব কারমেন’ ছবিটা দেখলাম । বিকেল ৫টায় ছবি শেষ হল। সন্ধ্যা ৭টায় কেমব্রিজ ফার্মেসি থেকে হলে ফিরে এলাম। আবহাওয়া : সপ্তাহখানেকের মত কম ঠাণ্ডার পর আজ ভাল ঠাণ্ডা পড়েছে। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন হলেই কাটল। সন্ধ্যা ৭টায় সােয়ারি ঘাট গেলাম। আতাউর রহমান সাহেব তখন বাইরে যাচ্ছিলেন, ফলে আমাদের মামলা নিয়ে বসা হল না। এরপর সরাসরি কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে গেলাম। কিন্তু তিনিও বাইরে ছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে হলে ফিরে এলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ৩. ১. ৫১ সকাল সাড়ে ৭টায় উঠেছি। আজ বিশ্ববিদ্যালয় খুলল । দুপুর ১টা থেকে ক্লাস হল। আজ ড. নূরুল হুদা ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভােস্ট হিসেবে যােগ দিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ওয়াদুদ এবং অলি আহাদের সাথে দেখা হল। বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাঙ্গণে শামসুল হক এক ঘন্টারও বেশি সময় প্রাইভেট ফরেস্ট অ্যাক্ট নিয়ে কথা বললেন। সাড়ে ৩টায় হলে ফিরলাম। বিকেল ৪টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে আতাউর রহমান সাহেবকে দেখলাম। কিন্তু কামরুদ্দীন সাহেবকে পেলাম না। তিনি বাড়িতেও ছিলেন না। বিকেল ৫টায় ফিরে এলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আতাউর রহমান সাহেবের কাছে গেলাম। ওয়ারিস এবং মফিজও সেখানে এসেছিল। পরামর্শ শেষে রাত ১১টায় ফিরলাম। যাবার পথে এবং ফেরার সময় কামরুদ্দীন সাহেবকে খোঁজ করেছিলাম। কিন্তু তিনি ছিলেন না। আবহাওয়া : আগের মতই। ৪, ১, ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। ক্লাসে যাইনি। সকাল সাড়ে ৮টায় কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে গিয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে ৯টায় আতাউর রহমান সাহেবের ওখানে গেলাম। ১০টা পর্যন্ত মামলা বিষয়ে আলােচনা শেষে বের হলাম। বেলা ১১টায় কোটে গেলাম। আমাদের কেস উঠল বিকেল ৪টায়। কিন্তু কার্যক্রমে ম্যাজিস্ট্রেট দেখতে পেলেন নওয়াব আলীর আত্মগােপন প্রমাণিত হচ্ছে না, সুতরাং নওয়াব আলী কিছু করেছে এই সংক্রান্ত কর্মধারা বাতিল বলে গণ্য করা হল। আমাদের কে দেখতে এবং শুনতে বহু মানুষ এসেছিলেন। আইনউদ্দীন, জামালউদ্দীন মাস্টার, আসার আলি মাস্টার, নিয়ামত সরকার, কুদ্স, জব্বার, জাবু এবং আরও অনেকে। আব্বাস মাঝি এবং সােবহান সরকারের দেখা পেলাম। আজ গােসল করতে পারিনি। প্যারামাউন্ট রেস্তোরায় দুপুরের খাবার খেয়েছি। মফিজউদ্দীন মাস্টার সাহেব এবং আবদুল হাই কোর্ট চত্বরে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। আসুর সঙ্গে রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত গেলাম এবং মফিজউদ্দীন ও আমাদের গ্রামের বাড়ির অন্যান্যদের সন্ধ্যা সােয়া ৭টার ট্রেনে উঠিয়ে দিলাম। সাড়ে ৭টায় হলে ফিরলাম। অ্যাসেমব্লি হলে ডি, এইচ, কমিটির নির্বাচনী সভায় যােগ দিয়েছি। ঠিক হল আমাদের হলের প্রভােস্টদের জন্য বিদায় এবং অভ্যর্থনার আয়ােজন করা হবে। জনাব সাইদ উপস্থিত ছিলেন। আবহাওয়া : আগের মতই। ডি, এইচ. : ঢাকা হল
৫. ১. ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। বেলা ৩টায় আরমানিটোলা ময়দানের জনসভায় যােগ দিলাম। সালেহ আহমদ মােড়ল আমাকে কমলা লেবু দিলেন। সভা শুরু হল বেলা সাড়ে ৩টায়। মওলানা ভাসানী সভাপতিত্ব করলেন। শামসুল হকের দেয়া পরিচিতি পর্বের পর হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বললেন। এটি ঢাকার সবচেয়ে জনাকীর্ণ সভার একটি। সমস্ত ময়দান পরিপূর্ণ। ছিল দর্শক শ্রোতায়। তিনি এবং তাঁর দল কি নীতি অনুসরণ করবেন সেটা জনাব সােহরাওয়ার্দী উল্লেখ না করে এড়িয়ে গেলেন। রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে উর্দুর প্রতি তার আকাক্ষা বােঝা গেল। তাঁর সম্পূর্ণ বক্তৃতাটাই আবেগপূর্ণ ও নির্বাচনী চমকে ভরা মওলানা ভাসানী তার স্বভাবসুলভ নির্মম অকপটতায় প্রায় ২০ মিনিটের মত বললেন। যা তাঁর প্রেসিডেন্টকেও আঘাত করেছে। তিনি ব্যক্তি মানুষ নয়, আদর্শের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন। যেখানে জনাব সােহরাওয়ার্দী তাঁর নিজের নীতির গুণকীর্তণে মুখর ছিলেন। জনসভায় উপস্থিতি ছিল প্রায় ৫০ হাজারের মত। সভা শেষে ময়দানে কামরুদ্দীন সাহেব, জহিরুদ্দীন, জমিরউদ্দীনকে পেলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হলে ফিরলাম। রাত ৮টায় জনাব এস, এ. চৌধুরীর সঙ্গে অ্যাসেমব্লি হলে এক আলােচনায় যােগ দিলাম। সিদ্ধান্ত হল রােববারে প্রভােস্টদের বিদায় সম্ভাষণ ও সংবর্ধনা জানানাের ব্যবস্থা করা হবে। আবহাওয়া : দুপুরের পর থেকে আকাশ মেঘলা। উষ্ণ তাপ। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বেশ কিছু বৃষ্টির ফোঁটা পড়ল। তারপর সব ঠিকঠাক। ৬, ১. ৫১ সকাল ৭টায় উঠলাম। আজ কোন ক্লাস হল না। দুপুর আড়াইটায় ইস্ট বেঙ্গল সেকেন্ডারি এডুকেশন বাের্ড অফিসে গেলাম। কিন্তু সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা হল না। তিনি একটি মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। দুপুর ৩টায় চলে এলাম। নবাবপুরে কিছু কেনাকাটা করলাম। কেমব্রিজ ফার্মেসিতে ডাক্তার করিমের সঙ্গে চা খেলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় হলে ফিরে এলাম। আজ রাতে এন ১৪ নম্বর রুম থেকে এন ৩ নম্বর রুমে উঠে এলাম। আবহাওয়া : ঠাণ্ডা কম অনুভূত হল। ৭. ১. ৫১ সকাল ৭টায় উঠলাম। অপরাহ্ন সাড়ে ৩টায় বাইরে বের হলাম। সরাসরি কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে
২০

গেলাম। হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর আগমন এবং স্থানীয় আওয়ামী নেতাদের ভূমিকা নিয়ে কথা হল। এ. রহমান সাহেবের বাড়িতে নৈশভােজে জনাব সােহরাওয়ার্দীর সঙ্গে কামরুদ্দীন সাহেবের দেখা হলে তিনি তাকে বিপিসি রিপাের্ট প্রদান এবং সিসির অধীন বিভিন্ন সংস্থা যে ভূমিকা পালন করছে সে সম্পর্কে অবহিত করেছেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় কামরুদ্দীন সাহেবের ওখান থেকে বের হলাম। জালালকে বাড়িতে পেলাম না। বিকেল ৫টায় হলে ফিরে এলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অ্যাসেমরি হলের সভায় যােগ দিলাম। সেখানে আমাদের নতুন প্রভােস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের পরিচয় দিলেন। রাত সাড়ে ৮টায় সেখান থেকে বের হয়ে এলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ৮.১, ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। বেলা ১১টা, দুপুর ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। সকাল ৯টায় আমাদের প্রভােস্ট ড. হালিমের বিদায় উপলক্ষে প্রস্তাবিত নৈশভােজের বাজেট অনুমােদনের জন্য অ্যাসেমব্লি হলে ডি, এইচ, কমিটির সভায় যােগ দিলাম। ডি. এইচ. কমিটির তৈরি করা বাজেট অনুমােদন করা হল। সভা শেষ হল ৯টা ৪৫ মিনিটে। পুরাে বিকেল হলেই ছিলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত আবদুল হাকিম আমার ঘরে বসে কোরিয়া এবং কাশ্মীর সম্পর্কে কথা বললেন। আবহাওয়া : আগের মতই শুকননা। ১.১, ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। বেলা ১২টা এবং দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম । খুব সকালে আবদুল খান এবং আজিজ খান এসেছিলেন। আমি প্রথম জনকে বললাম তাদের কেস সংক্রান্ত ব্যাপারে ডিএফও-র সঙ্গে দেখা করতে সকাল।

৮টার দিকে তারা চলে গেলে দেওয়ান আলীকে সঙ্গে নিয়ে সাইয়িদ আলী এল। তারা হাফিজ বেপারির সঙ্গে তাদের জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে কথা বলল। আমি তাদের পরামর্শ দিলাম বলধার ম্যানেজার ও ফকির মান্নানের সঙ্গে দেখা করে কালেক্টরের কাছে দরখাস্ত পেশ করতে। পনের বিশ মিনিট পর তারা চলে গেল। দুপুর সাড়ে ৩টায় কোর্টে গেলাম। কাপাসিয়ার রশীদ, ইয়াসিন, বশির এবং গাছার সিরাজুল হকের সঙ্গে দেখা হল। আবদুল খান প্রমুখ বাড়ি চলে গেল। আবদুল মােড়ল কোর্টে হাজিরা দিল। এরপর হামিদ মােক্তারের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করে আবদুল খানের কেস নিয়ে কথা বলল। বিকেল সাড়ে ৫টায় ইন্টারমিডিয়েট সার্টিফিকেটের জন্য সলিমুল্লাহ কলেজে গেলাম। কিন্তু প্রিন্সিপাল অনুপস্থিত থাকায় তা পাওয়া গেল না। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হলে ফিরলাম। আবহাওয়া : ভাল ঠাণ্ডা। কিন্তু শুকনাে। ১০.১, ৫১ ভাের ৫টায় উঠেছি। দুপুর ১টায় ক্লাস করলাম । দুপুর সােয়া ২টায় কার্জন হলে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সভায় যােগ দিলাম। ড. হেদায়েতুল্লাহ তার সভাপতির বক্তব্যে পূর্ব বাংলার কৃষি সমস্যা একটি পর্যালােচনা’-পেপারটি পড়লেন। সাড়ে ৪টায় হলে ফিরলাম। বাকি সময় হলেই ছিলাম। আবহাওয়া : বেশ ভাল ঠাণ্ডা।

১১.১. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিট থেকে ৫টা পর্যন্ত লিটন হলে শিল্প মেলা দেখলাম। সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়ামে শারীরিক সক্ষমতার টেস্ট হবার কথা ছিল। আমি সেখানে যেতেই মতিউর রহমানের সঙ্গে দেখা হল। তিনি আমাকে সরে পড়তে বললেন। কোন ছাত্রই সেখানে উপস্থিত ছিল না। আবহাওয়া : আগের মতই।

১২.১, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। দুপুর ৩টা ২০ মিনিটে জগন্নাথ কলেজে কমরেড ব্যাংকের আমানতকারীদের সভায়। যােগ দিলাম। কে, বি, খালেক, গণি, সেরাজউদ্দীন প্রমুখ এবং আরও অনেকেই। সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সােয়া ৫টায় সভা শেষ হল। ফেরার পথে রায় সাহেব বাজার স্ট্রীটে মহসীনের সঙ্গে দেখা হল। সন্ধ্যা ৬টার দিকে মহসীনের সঙ্গে রেসকোর্সের পাশ দিয়ে তার পলাশি ব্যারাকের বাসায় গেলাম। ওর সঙ্গে চা খেলাম। আনােয়ারুল আজিমের ঠিকানা নিয়ে রাত ৮টায় হলে ফিরলাম। রাত ১টার দিকে সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ের সামনে রেলওয়ে কলােনীতে আগুন লাগল। আমরা সবাই সেখানে ছুটে গেলাম। রাত আড়াইটার দিকে ফায়ার বিগ্রেডের তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে আমরা ফিরে এলাম। এক বিশাল ক্ষতি। হয়ে গেল। রাত ৩টা থেকে ৪টা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট রাত বলতে গেলে কোন ঘুমই হল না। আবহাওয়া : শীতল ১৩, ১, ৫১ – বাড়ির পথে – ভাের ৪টায় উঠেছি। সকাল ৬টার ট্রেনে বাড়ি রওনা হয়েছি। স্টেশনে তরগাঁওয়ের আফতাবউদ্দীনকে। পেলাম। সে জালালউদ্দীনের কাছে যাবে। শ্রীপুর পর্যন্ত হােসেন খান আমার সঙ্গে। একই কামরায় ছিল। সে সাহেব আলী বেপারির অপকর্মের কথা বলল।

স্টেশনে কালু মােড়ল, আজিজ, হামিদ মােড়ল এবং সালেহ আহমদ মােড়লের সঙ্গে দেখা। শেষের জন আমাকে চা খাওয়াল। তার সঙ্গে প্রায় এক ঘন্টার মত কথা হল। সাত্তার খান ও মুজাফফর আমাদের কেস ও অন্যান্য বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলল। সাহাদ আলী সরকার, রুস্তম আলী খান প্রমুখ স্টেশনে ছিল। দুপুর ১টা নাগাদ বাড়ি পৌছলাম। পথে বাঘিয়ার গিয়াসউদ্দীনকে পেলাম। তিনি গােসিঙ্গা পর্যন্ত আমার সঙ্গে এলেন। স্কুলের পথে সরাফতউল্লাহ মাস্টারের সঙ্গে দেখা হল। দুপুরের পর খেয়াঘাটের ফালু, সােবহান, গােসিঙ্গা স্কুলের তৃতীয় মাস্টার এলেন। ঘরােয়া কথাবার্তা শেষে তারা চলে গেলেন। বিকেলে কালবাড়ি ও ঠাকুরা বিলে গেলাম এবং ফিরে এলাম। সন্ধ্যার পর আবদুল খানের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। রজব আলী আর ওয়ারিস আলীও সেখানে এসেছিল। রাত ৯টার দিকে ফিরলাম। ১৪. ১. ৫১ তারিখে জনসভা নিশ্চিত হবে কি না তা জানার জন্য বিকেলে একটি চিরকুট লিখে রঙ্গুকে আইনুদ্দীনের কাছে পাঠালাম।। আবহাওয়া : আগের মতই। ১৪. ১. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সকাল ১০টা নাগাদ জাবু, কাগুর বাপ এল। তারপর জব্বার এল । সােবহানের বিয়ে সংক্রান্ত বিরােধ নিয়ে কথা হল। আমি জব্বারকে এই বিষয়ে সমাধান করে নিতে বললাম। সােবহান দেরি করে এল। সবাই দুপুর ২টা নাগাদ চলে গেল। বিকেলে বাগিরহাটের নবাব আলী এবং অন্যান্য আরও কয়েকজন এল। তারা মিনিট পনের পরে চলে গেল। ঢাকা যাবার পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওয়াহাব বেপারি, গফুর, সাদ আলী, পরান সরকার প্রমুখ আমার কাছে এল। তারা নবার জমি নিলামে তােলার জন্য হাফিজ বেপারি ও হরিমােহন দাসের চক্রান্তের কথা বলল। আমি তাদের এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বলধা এস্টেটের ম্যানেজারের কাছে যেতে বললাম। এরপর তারা চলে গেল। আবহাওয়া : ভাল ঠাণ্ডা।
১৫.১. ৫১ – ঢাকার পথে – ভাের ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ২টা ২০ মিনিট এবং ৩টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। শ্রীপুর থেকে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের ট্রেন ধরলাম। দিগধার ওয়াহাব আলী আর গনি খেয়াঘাট থেকে আমার সঙ্গে এল। আমরা যখন নদী পার হচ্ছিলাম তখন জব্বার গােসিঙ্গা ঘাটের দিকে ছিল। আবদুল হাকিমকে স্টেশনে দেখলাম। সােমেদ খান এবং সাত্তার খানকেও দেখলাম। সােমেদ খান দুলুর মৃত বােনের স্বামীর সঙ্গে মরিয়মের বিয়ের কথা বলল। আমি তাদেরকে এ ব্যাপারে কোন কথা দিলাম না। বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা পৌছলাম। বিকেল ৫টায় কোর্টে গেলাম। আবদুল খানের কেসের নকল তােলার জন্য মােহাম্মদ আলীকে ২ টাকা দিলাম। ওখানে গাছার এস, হক, মমতাজ মােক্তার, কালু মোড়ল প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। ডাক্তার করিমের সঙ্গে তার ফার্মেসিতে কথা বলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হলে ফিরলাম। ওয়াহাব, গফুর প্রমুখ আমার সঙ্গে হলে দেখা করল এবং জানাল তাদেরকে সম্পূর্ণ ভাড়াই পরিশােধ করতে হবে। আমি তাদের এফ. এ. মান্নানের কাছে যেতে বললাম। তারা চলে গেল। আবহাওয়া : আগের মতই। ১৬, ১. ৫১ সকাল সাড়ে ৭টায় উঠেছি। আজ কোন ক্লাস হয়নি। সলিমুল্লাহ দিবস-অর্ধ দিবস ছুটি। দুপুর সাড়ে ৩টায় হল থেকে বের হলাম। তােয়াহা সাহেব কিংবা অলি আহাদ কাউকে পেলাম না। এরপর সরাসরি বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। এছাড়া আসাদুল্লাহ, শ্ৰীশ চ্যাটার্জি, জি, সামদানি, কে,
২৫

চৌধুরী, মােহসীন এবং হাশিম প্রমুখও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাদের সঙ্গে বিপিসি রিপাের্টের ওপর পীরজাদা আবদুস সাত্তারের বক্তব্য নিয়ে কথা বললাম। ৫টা ১০ মিনিটে কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে বার লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে হেঁটে জিন্দাবাহার পর্যন্ত গেলাম। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ হলে ফিরলাম । আবহাওয়া : আগের মতই। ১৭.১.৫১ ভাের ৬টায় উঠেছি। বেলা ১২টা, দুপুর ১টা, ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। ড. শহীদুল্লাহর সঙ্গে তার কক্ষে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কথা বললাম। সাড়ে ৫টায় বের হলাম। নাজিরা বাজার রেলওয়ে ক্রসিংয়ে পৌনে ৬টায় জালালের সঙ্গে দেখা হল। সে আকবর আলীর মামলার বিষয়ে কথা বলল। আমার অনুরােধে জালাল আমাকে কথা দিল সে আজিজের বিরুদ্ধে আর কিছু করবে না। সন্ধ্যা ৬টায় ওখান থেকে চলে এলাম। তারপর নবাবপুর, সদরঘাট এবং ইসলামপুর থেকে মিটফোর্ড পর্যন্ত হাঁটলাম। একটি বদনা কিনে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সরাসরি হলে ফিরে এলাম। আবহাওয়া : আজ প্রায় সারাদিনই সূর্য মেঘে ঢাকা ছিল। দুপুর থেকে বাতাস বইতে শুরু করেছে। বেশ ঠাণ্ডা। ভাের থেকে বেশ কুয়াশা। ১৮.১. ৫১ ভাের ৬টায় উঠেছি। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। আজ বিদায়ী প্রভােস্ট ড, এ, হালিম এবং নতুন প্রভােস্ট ড. এম. এন, হুদার সম্মানার্থে আনুষ্ঠানিক ভােজের আয়ােজন ছিল। এ উপলক্ষে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকা হল এবং রান্না ঘরে তদারকির কাজ করলাম। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ভাইস চ্যান্সেলর, ড, হালিম, ড. শহীদুল্লাহ, ড. কিউ. এম. হােসেন, শ্ৰী শৰ্মা, ঢাকা হলের প্রভােস্ট, এ. হাদি তালুকদার এবং মি. বিসলে নামে নিউজিল্যান্ডের একজন ছাত্র উপস্থিত ছিলেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন মুশাররফ হােসেন। আমি অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কথা বললাম। সেই সাথে ভিসি এবং ড. নূরুল হুদার দৃষ্টি আকর্ষণ। করে জরুরী কিছু সমস্যার কথাও বললাম। মি. দাস, ড. হালিম, ড. শহীদুল্লাহ, কিউ, এম, হােসেন, বিসলে এবং ড. নূরুল হুদার বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠান শেষ হল। সব দিক থেকে অনুষ্ঠানটি খুবই স্বার্থক ছিল। আবহাওয়া : আজ তুলনামূলকভাবে কম ঠাণ্ডা অনুভূত হল। ১৯, ১.৫১ সকাল সাড়ে ৭টায় উঠেছি। আজ সারাদিন হলেই ছিলাম। দুপুর ২টায় ৬ নম্বর কক্ষে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিস অর্গানাইজেশনের ব্যাপারে নিউজিল্যান্ডের মি. বিসলের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা হল। আমাদের হলের ভলিবল কোর্টে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সদস্যরা আমাদের ভলিবল টিমের সঙ্গে খেলায় অংশ নিল এবং তারা ১-২ সেটে হেরে গেল। আবহাওয়া : আগের মতই। ২০.১. ৫১ সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেল সাড়ে ৪টায় আশু তরগাঁওয়ের কুদরত আলীকে সঙ্গে নিয়ে আমার রুমে এল। ওদের সঙ্গে লিটন হলের চিত্র প্রদর্শনীতে গেলাম। সেখানে উজুলির মুরশিদ এবং এ. হামিদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সন্ধ্যাবেলায় ইমান সাহেবের স্টলে ওদের সবাইকে চা নাস্তা খাওয়ালাম। নাজিরা বাজার ক্রসিংয়ে কুদরত আলী ও আশুর সঙ্গে তরগাঁও ইউনিয়নের রাজনীতি নিয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত কথা বললাম। তারপর হলে ফিরে এলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ২১. ১. ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। দুপুর দেড়টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। কেশব বাবু ও মাহমুদ সাহেবের সুপারিশপত্র নিলাম। পরে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে দেখা করে তার সঙ্গে আমার নামের বানান সম্পর্কে আলােচনা করলাম। এরপর কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে যাবার পথে তার সঙ্গে রেডিও স্টেশনের সামনে দেখা হয়ে গেল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওল্ড বয়েজ অ্যাসােসিয়েশনের বাৎসরিক সভায় যােগ দেয়ার জন্য কার্জন হলে যাচ্ছিলেন। আমাদের হলের মাঠে বিকেল সাড়ে ৪টায় আমাদের হল এবং এস, এম, হলের মধ্যে ভলিবল প্রতিযােগিতা হল। এস, এম, হল হেরে গেল। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হল বৃত্তির জন্য অফিসে গিয়ে সেকেন্ড ক্লার্কের কাছে দরখাস্ত জমা দিয়েছি। আবহাওয়া : ভাল ঠাণ্ডা। মধ্য রাত থেকে মৃদু বাতাস ঠাণ্ডাকে আরও তীব্রতর করেছে। সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। বেলা ১১টা, দুপুর ১টা ও ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম । সারাদিন হলেই কাটালাম। আবহাওয়া : বেশ ঠাণ্ডা।

২৩, ১, ৫১ ভাের ৬টায় উঠেছি। বেলা ১২টা, দুপুর ২টা ২০ মিনিট, ৩টা ২০ মিনিট এবং বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় আমার কাছে আশু এসেছিল। সে আমার কাছ থেকে ২০/নিল এবং সাড়ে ১০টায় চলে গেল। বিকেল সােয়া ৪টায় তােয়াহা সাহেব আমার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা করলেন। তিনি জলিলের ব্যাপারে আলাপ করার জন্য আমাকে আগামীকাল বিকেল ৫টায় হাশিম সাহেবের বাসায় যেতে বললেন। আবহাওয়া : আরও ঠাণ্ডা। ২৪. ১. ৫১ ভাের ৬টায় উঠেছি। বেলা ১২টা, দুপুর ১টা, ২টা ২০ মিনিট এবং ৩টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। আমাদের হলের খেলার মাঠে আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় রেজা ও জালালউদ্দীন টেনিস দলের জন্য ক্যাপ্টেন ও ভাইস ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়েছে। রাত পৌনে ৯টায় তােয়াহা সাহেব কয়েক মিনিটের জন্য হল গেটে এসে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। আবহাওয়া : আজ কনকনে ঠাণ্ডা। ২৫.১.৫১ ভাের ৬টায় উঠেছি। বেলা ১২টা এবং দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। বিকেল ৫টায় অ্যাসেমব্লি হলে হল ইউনিয়নের সভায় যােগ দিলাম। প্রভােস্ট এম. এন, হুদা সভায় সভাপতিত্ব করলেন। সভার বিষয় ছিল বার্ষিক সাধারণ নির্বাচনের আগে স্পাের্টস হতে হবে। ছাত্রদের একটি অংশের উপর ড. হুদা প্রভাব বিস্তার করে কার্যত এই প্রস্তাব পাশ করাতে চেয়েছিলেন। আমরা নীতিগতভাবে প্রস্তাবের বিপক্ষে বললাম। এই প্রস্তাবটি কণ্ঠ ভােটে খারিজ হয়ে গেল। সম্পূর্ণ বিষয়টি ভুল। করে দিল এ. এইচ. টি., শামসুল হক ও বদিউর রহমান। আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, হল ইউনিয়ন নির্বাহীদের প্রতিষ্ঠানকে এড়িয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে চলার ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে রুদ্ধ করতেই প্রতিবাদী অবস্থান নেয়ার সমস্ত দায়ভার আমারই। আবহাওয়া : আগের মতই। ২৬. ১. ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। দুপুর ২টায় হাফিজ বেপারির ছেলে হাসান আমার কাছে এসেছিল। সে আমাকে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে তার পরীক্ষার ব্যাপারে সহযােগিতা করার জন্য অনুরােধ জানাল। দুপুর পৌনে ৩টায় হল থেকে বের হলাম। ডিবি অফিস পর্যন্ত হাসান আমার সঙ্গে এল। সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে গেলাম। কিন্তু হেড মাস্টারকে পেলাম না। সেখান থেকে সরাসরি কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে গিয়ে তাকে হামিদুল হক চৌধুরীর ষড়যন্ত্রের কথা বললাম। বিকেল ৪টায় সেখান থেকে বের হয়ে কামরুদ্দীন সাহেব ও টিটু মিয়ার সঙ্গে রেজাই করিমের বাসার গেট পর্যন্ত গেলাম। এরপর জালালের বাসায় গেলাম। সে বাসায় ছিল না। বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ হলে ফিরলাম। আবহাওয়া : কনকনে ঠাণ্ডা এখনও চলছে। ডিবি অফিস : ড্রিস্টি বাের্ড অফিস। ২৭.১, ৫১ সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠলাম। বেলা ১২টার ক্লাস করলাম। দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে গেলাম। হেড মাস্টারের সঙ্গে দেখা করে
৩০

তার কাছ থেকে ম্যাট্রিক সার্টিফিকেটে আমার নামের বানান পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ পত্র নিলাম। দুপুর ২টায় স্কুলে থেকে বের হলাম। তারপর কোর্টে এসে | মােহাম্মদ আলীকে পেলাম। সে আবদুল খানের কেসের নকল তখনও সংগ্রহ করেনি। দুপুর ৩টায় সেকেন্ডারি এডুকেশন বাের্ড অফিসে গেলাম। সেখানে কেরানিসুলভ ভুল নির্দেশনা এবং বিশৃঙ্খলার পর সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করলাম। তিনিও আমাকে কোন সঠিক পরামর্শ দিতে পারলেন না। এরপর প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম খানের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি ধৈর্য সহকারে সব শুনে আমাকে কিছু ভাল পরামর্শ দিলেন। আমার আরবি নামের সঠিক উচ্চারণ কী হবে সে মতামত জানতে চেয়ে তিনি ঢাকার ইসলামিক সেন্টারের প্রিন্সিপাল জনাব শরফুদ্দীনের কাছে। পরিচিতি পত্র দিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওখান থেকে বের হলাম। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। মধুর দোকানে তােয়াহা সাহেব, মাসুদ এবং বাহাউদ্দীনের সঙ্গে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কথা বললাম। এরপর হলে ফিরলাম। আজ হল নির্বাচনের নােটিশ প্রকাশিত হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ঢাকা হলে (উত্তর) গেলাম। ওখানে এস. আলম, কাজী বশির, নাসিরউদ্দীন, মােবারুদ্দিন, নুরুর রহমান, ওয়াহিদুর রহমান ও মুশাররফ হােসেন উপস্থিত ছিলেন। মােবারুদ্দিন ও মােশাররফ হােসেনকে যথাক্রমে ভিপি ও জিএস পদের জন্য মনােনিত করা হল। রাত ১০টার নাগাদ হলে ফিরলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ২৮,১. ৫১ সকাল সােয়া ৮টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। দুপুর সাড়ে ৩টায় হল অফিসে বসে যখন হেড ক্লার্ক জনাব রকিবের সঙ্গে কথা বলছিলাম তখন অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ চৌধুরী আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন।

বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমাদের আলােচনা চলল। অধ্যাপক চৌধুরী আমাদের চা। খাওয়ালেন। বিকেল সােয়া ৫টায় আমি অফিস ত্যাগ করলাম। বিকেল ৪টায় পুরানা পল্টনে আগা খানের জনসভায় যাওয়া হয়নি। রাত ৯টার দিকে হলের নির্বাচনের ব্যাপারে ডব্লিউ সি রুমের সভায় যােগ দিলাম। এই সভায় কোন সিদ্ধান্তই হল না। রাত সাড়ে ১০টায় সেখান থেকে চলে এলাম। এরপর কাজী বশির, মুশাররফ প্রমুখ আমাকে আবার ডব্লিউ ১৯ রুমে নিয়ে গেল। সেখানে ভিপির পদ নিয়ে আলােচনা হল। শামসুল আলম আমাদের আলােচনায় যােগ দিল। রাত ১টায় সভা শেষ হল। আবহাওয়া : আগের মতই। পুনশ্চ : সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রভােস্ট ১৫ মিনিটের জন্য হল নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিলেন। সকাল ৭টায় উঠেছি। দুপুর ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। দুপুর ৩টায় তােয়াহা সাহেবের বাসায় গেলাম। কিন্তু কাউকে পেলাম না। ডাক্তার করিমের সঙ্গে দেখা করলাম। এরপর বাহাউদ্দীনের বাসায় গেলাম। সেও বাসায় ছিল না। তারপর বিকেল সাড়ে ৪টায় সরাসরি আওয়ামী লীগ অফিসে গেলাম। সেখানে অলি আহাদ এবং ওয়াদুদের সঙ্গে দেখা হল। তাদেরকে হল নির্বাচনের ব্যাপারটা জানালাম। এরপর সরাসরি গেলাম ঢাকা হলের এক্সটেনশন ১০ নম্বর রুমে। সেখানে সভায় যােগ দিলাম। ছাত্র ঐক্য বিগ্রেড গঠন করে ভিপি এবং জিএস ঠিক করা হল। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ই-৯ নম্বর রুমে সভা হল। সেই সভায় আমাকে সভাপতি। করে পার্টির কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হল। রাত ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মতিন সাহেব আমার সঙ্গে কথা বললেন এবং জানালেন, তিনি কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করবেন না। ভিপি পদের জন্য তিনি রেজার নাম প্রস্তাব করলেন।

রাত ১টায় রেলওয়ে হাসপাতালের কাছে আগুন লাগল। আবহাওয়া : আগের মতই। ৩০.১. ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। সকাল ৯টায় তােয়াহা সাহেব এসেছিলেন। তিনি কথা দিলেন বিকেল ৪টায় মধুর স্টলে আমার সঙ্গে দেখা করেন। সকাল সাড়ে ৭টায় ওয়াহাব, গফুর, পরান সিকদার প্রমুখ আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদেরকে এমএলএ এফ. এ. মান্নানের সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দিলাম । সারাদিন বিভিন্ন ছাত্রদের সঙ্গে যােগাযােগ করলাম। বাগেরহাটের ফালু গত রাতে আমার সঙ্গে ছিল। সে আজ চলে গেল। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মিটিং হল। সভায় প্রথম মেডিকেল ছাত্র ধর্মঘটকে সমর্থন করা হল এবং এফ. এইচ. হলের ইলেকশন সম্পর্কে জানানাে হল। অলি আহাদ, বাহাউদ্দীন প্রমুখের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা হয়েছিল। তাদের সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে কথা বললাম। বিকেল ৫টা পর্যন্ত মধুর স্টলে বাহাউদ্দীন, ড. জনসন ও মাসুদসহ তােয়াহা সাহেবের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু তিনি তার কথা রাখেননি। ই-৯ নম্বর রুমে মিটিং হল। বাহাউদ্দীন আমাদের পার্টির কর্মপরিকল্পনার একটা বৃহত্তর রূপরেখা দিল। ভিপি এবং জিএস-এর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমােদিত হল। কমিটিকে বাদ বাকি প্রার্থী নির্বাচনের দায়িত্ব প্রদান করা হল। প্রায় রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সভা চলেছে। এই সভার পর আনােয়ার, ওয়াজেদ আলী এবং এস, রহমানের সঙ্গে রাত ২টা পর্যন্ত আলােচনা হল। রাতে বাহাউদ্দীন আমার সঙ্গে থাকল। রাত ৮টার দিকে ডাক্তার করিম একটি ছেলেকে কয়েক দিনের জন্য আমার ঘরে থাকতে রেখে গেল। আবহাওয়া : একই রকম

৩১.১. ৫১ সকাল ৭টায় ঘুম ভেঙ্গেছে। আজ কোন ক্লাস করলাম না। বেলা প্রায় ১২টা পর্যন্ত ছাত্রদের সঙ্গে কথাবার্তা বললাম এবং প্রার্থী মনােনয়নের ব্যাপারে তাদের মতামত গ্রহণ করলাম। ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। দুপুর ১টা পর্যন্ত মধুর দোকানে মতিন সাহেব আমার সঙ্গে কথা বললেন। তখন আমার সঙ্গে বাহাউদ্দীন এবং শাহাদাতউল্লাহ ছিল। তারপর ই-৯ নম্বর রুমে গিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করলাম। দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে মননানয়নপত্র দাখিল করা হল। বিকেল ৫টায় অ্যাসেমব্লি হলে জনাব এম. এ. চৌধুরী মনােনয়নপত্র বাছাই করলেন। হাউস টিউটর কর্তৃক ৮টি মনােনয়নপত্র বৈধ বলে গণ্য হল। সারাদিন গােসল এবং খাওয়া হয়নি। রাত ৮টায় প্রীতিভােজ হল। সেখানে প্রভােস্টসহ সমস্ত হাউস টিউটর উপস্থিত ছিলেন। প্রীতিভােজে বাহাউদ্দীন আমার অতিথি হিসেবে ছিল। আমি দ্বিতীয় ব্যাচে খেলাম। মতিন সাহেব সম্ভবত আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য দুপুর আড়াইটায় অলি আহাদকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিলেন। বিকেলে মুস্তাফা প্রমুখরা এসেছিল। রাতে আমরা তেমন কিছুই করলাম না। রাত ১০টায় বাহাউদ্দীন ও আনােয়ার নির্বাচনে আমাদের অবস্থান নিয়ে চূড়ান্ত কথা বলার জন্য অলি আহাদের কাছে গিয়েছিল। আবহাওয়া : একই রকম।

– বৃহস্পতিবার –
সকাল ৭টায় উঠেছি। আজ কোন ক্লাস করিনি। দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এফ. এইচ, এম, হলের সংযুক্ত ছাত্রদের একটা সভা ডাকা হল। সেখানে আমাদের মনােনীত প্রার্থীদের পরিচয় করে দেয়া হল। বাহাউদ্দীন আমাদের কর্মসূচি ও অবস্থানের খসড়া রূপরেখা তুলে ধরল। সভাপতিত্ব করল শাহাদতউল্লাহ। পরে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে রইলাম। তারপর নিমতলি রেলওয়ে ক্রসিংয়ের ডান দিকের দোকানে আমার সাইকেলের চেইন মেরামত করলাম। সন্ধ্যাবেলায় অলি আহাদের কাছে গেলাম। তাকে যুব কনভেনশনের অফিসে পেলাম এবং সামগ্রিক অবস্থা জানালাম। সে কথা দিল আগামীকাল বিকেল ৪টার মধ্যে শাহাদাতউল্লাহর মনােনয়ন প্রত্যাহার করে নেবে। সন্ধ্যা ৭টায় হলে ফিরে এলাম। রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মেইন হল রুমে আমাদের মনােনীত প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিলাম। এরপর ইকবাল হলে গিয়ে খন্দকার জি, মুস্তাফার সঙ্গে যােগদান করলাম। ওখানকার আবাসিক কিছু ছাত্রের সঙ্গে আমাদের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে রাত ১টায় রুমে ফিরলাম। বাহাউদ্দীন রাত ২টায় বাসায় গেল। সে মেনিফেস্টোর খসড়া করবে।

রাত ৩টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : একই রকম। সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। হলে সংযুক্ত ছাত্রদের সঙ্গে যােগাযােগ করার জন্য, দিনের প্রথমার্ধে শহরের বিভিন্ন অংশে দলে দলে কর্মীদের পাঠিয়ে দেয়া হল। তিন বার চেষ্টার পর দুপুর আড়াইটায় অলি আহাদকে বাসায় পাওয়া গেল। অলি আহাদ শাহাদতউল্লাহর সঙ্গে যােগাযােগ করবে না এবং কথা দিল চিঠি তার সিদ্ধান্তের বাইরে যাবে না। আর যদি যায় তবে সেটা হবে দুর্ঘটনা। এই কথার সময় তােয়াহা সাহেব ও সাদিক সেখানে উপস্থিত ছিল। বাহাউদ্দীন সেখানে দুপুর সাড়ে ৩টায় এল। খসড়া মেনিফেস্টো অনুমােদন করা হল। অলি আহাদের সঙ্গে প্রেসের সন্ধানে বের হলাম। বিকাল ৫টায় পাইওনিয়ার প্রেসে মেনিফেস্টো ছাপতে দিলাম । সন্ধ্যাবেলায় আমি কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। তাকে আবদুল খান এবং আমাদের কেস সম্পর্কে বললাম। ওখানে তখন ডিআইবির আনােয়ারউদ্দীন বসা ছিল। সন্ধ্যা ৭টায় ফিরে এলাম। রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে আমাদের মনােনীত প্রার্থীদের ছাত্রদের সঙ্গে পরিচয় করে দেয়া হল। রাত ১টায় ই-৬ রুমে একত্রিত হয়ে পরবর্তী দিনের কাজের কর্মসূচি ঠিক করে ফেললাম। এস, এস. লীগের সেক্রেটারি পদপ্রার্থী আতিকুল্লাহর মনােভাবে আমি চটে গেলাম। রাত ১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই।

সকাল ৬টায় উঠেছি ক্লাস করলাম না। কার্জন হলের সামনে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে বিজ্ঞানের ছাত্রদের নিয়ে মিটিং করলাম। বিকেল ৪টা পর্যন্ত আর্টস বিল্ডিংয়ে ছিলাম।.তারপর সরাসরি পাইওনিয়ার প্রেসে গেলাম। আমি যাবার পর জাহেদি এবং বাহাউদ্দীন সেখানে এল। বিকেলে শখা প্রেসে পরিচিতিপত্র ছাপাতে দিলাম। সন্ধ্যা ৭টায় হলে ফিরে এলাম। রাত ১টার দিকে কে, জি, মুস্তাফা এবং বাহাউদ্দীন গঠনতন্ত্র নিয়ে এল। তারা বাকি রাত আমার বিছানায় ঘুমাল। আমি ভাের ৪টার দিকে মজিদের রুমে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আজ কম ঠাণ্ডা। ৪, ২, ৫১ সকাল ৭টায় উঠলাম। এস, এম, হলের স্পাের্টস আজ। বেলা সাড়ে ১২টায় সমস্ত ক্লাস বাতিল হওয়ায় আজ কোন ক্লাস নেই। সারাদিন নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। দুপুর ৩টার দিকে আধ ঘন্টার জন্য মাত্র একবার এস. এম. হলের স্পাের্টস দেখলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ৫. ২. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। আজ ক্লাসে গেলাম না। সারাদিন নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলাম।

দুপুর ১টার দিকে সখা প্রেসে গিয়ে পরিচিতিপত্র নিয়ে ৩টায় ফিরলাম। রাত ৯টায় ডাইনিং হলে মিটিং করলাম। সভাপতিত্ব করলেন মতিন সাহেব। দুই পক্ষ থেকেই কথা দেয়া হল কেউ কারও বিরুদ্ধে কাদা ছােড়াছুড়ি করবে না। আবহাওয়া : আগের মতই। ৬, ২, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। আজ ক্লাস করলাম না। নির্বাচন শুরু হল সকাল ৯টায়। তীব্র প্রতিযােগিতা হবে বলে মনে হল। বিকেল ৫টার মধ্যে ভােট প্রদান শেষ হয়ে গেল। দুপুর ১টা থেকে ৫টার মধ্যে ভােটারদের অতিরিক্ত ভীড়ের সময় প্রকৃত প্রস্তাবে আমাদের মাইক কাজ করছিল না। কিন্তু এর আগের দিন আমাদের নির্বাচনী অফিসে মাইক চমৎকার কাজ করেছিল। মাইক ঠিকমত কাজ না করার কারণে আমাদের কর্মীরা মনােবল হারিয়ে ফেলেছিল। অন্য পার্টির পক্ষ থেকে একতরফা প্রচার চলছিল। বিকেল ৬টায় তােয়াহা সাহেবের সভাপতিত্বে যৌথ সভা হল। প্রফেসর নজমূল করিম এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। দুই ভিপি, দুই জি এস এবং দুই পার্টির প্রেসিডেন্টরা বক্তব্য রাখলেন। মধ্যরাত ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ৭. ২. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বেলা ১২টা, দুপুর ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম । হলের নির্বাচনের কারণে ৭ দিন পর আজ সকাল ৮টায় গােসল করলাম। আবদুল খান এলে তার সঙ্গে ৯টার সময় হামিদ মােক্তারের কাছে গেলাম। আজিজ খান জল বসন্তে আক্রান্ত হয়েছে, এই মর্মে একটি সার্টিফিকেট তাকে হস্তান্তর করলাম। মামলা মুলতবি রাখার জন্য প্রার্থনা জানাতে হল। বেলা ১০টায় হলে ফিরলাম।
৪০

বিকেল ৪টা থেকে ভােট গণনা শুরু। সর্ব জনাব কিউ, এম, হােসেন, মুজাফফর আহমদ চৌধুরী, সাঈদ, এ, কে, এম, এস, হক প্রমুখ ভােট গণনা পরিচালনা করেছিলেন। রাত সাড়ে ৯টায় ভােট গণনা শেষ হল। জয় পরাজয় দাঁড়াল ৫০:৫০। ইউনাইটেড ডেমােক্রেটস থেকে ভিপি বদিউর রহমান, অ্যাথলেটিক সেক্রেটারি আলী রেজা, এস, এস, লীগ সেক্রেটারি এ. এন. এমরান, অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি মুস্তাফিজুর রহমান, এস, সি, খুরশিদী খানম। ইউনিটি ব্রিগেড (আমার পার্টি) থেকে জি এস মােশাররফ হােসেন চৌধুরী, কমন রুম সেক্রেটারি কিউ. এ. মান্নান, ড্রামা সেক্রেটারি বাহাউদ্দীন, পাবলিসিটি সেক্রেটারি আউয়াল ও এস. সি. রাবিয়া ইসলাম নির্বাচিত হলেন। নির্বাচিত সদস্যরা হলের প্রতিটি রুমে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন। ড, জনসন আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি এবং বাহাউদ্দীন রাত ১টার সময় চলে গেলেন। আবহাওয়া : ক্রমশ: শীত কম অনুভূত হচ্ছে।

৮, ২, ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম না। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস হয়নি। সকাল ৮টায় আতাউর রহমান সাহেবের বাসায় গেলাম। বেলা সাড়ে ১০টায় হলে ফিরে এলাম। আসার সময় নাজিমউদ্দীন রােড থেকে অলি আহাদ আমার সঙ্গে এল। বেলা ১১টায় কোটে গেলাম। কোটে পি অ্যান্ড এ ফিরে আসেনি। তাই ৯, ৩, ৫১ পর্যন্ত কেস মুলতবি হল। কোর্টে উকিল ছাড়াও ফরেস্টার, সিদ্দিক, আনােয়ারুল হক, রেডিও আর্টিস্ট সিরাজুল হক প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। বিকেল ৫টায় হলে ফিরলাম। সাড়ে ৫টায় আবার বের হলাম। বাংলা বাজার, পাটুয়াটুলি, ইসলামপুর থেকে আফসু-দফতু-শাহিদার জন্য বই কিনলাম। ঢাকা হলের সাইফুল্লাহ আমাকে বই কেনায় সহযােগিতা করল। রাত সাড়ে ৮টায় হলে ফিরলাম। রাত ৯টায় স্পিকার নির্বাচন বিষয়ে কথা বলার জন্য কাজী বশিরের ই-৯ রুমে বৈঠক হল। সেখানে বাহাউদ্দীন, ডব্লিউ রহমান, এস, আলম, এল, রহমান প্রমুখ। উপস্থিত ছিল। রাত ১১টায় সভা শেষ হল। আবহাওয়া : বসন্তের রৌদ্রালােকিত দিন। রাতে ঠাণ্ডা।

৯. ২. ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। সকাল ৯টায় এক্সটেনশন ১১ নম্বর রুমে একটি সভা বসল। স্পিকার পদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আমার উপর চাপ সৃষ্টি করা হল। আমি এতে অস্বীকৃতি জানালাম। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য যথাক্রমে বাবর আলী ও আবদুল্লাহর নাম উল্লেখ করা হল। বেলা ১১টায় সভা শেষ হল। এর আগে ওয়ারিস আলী এলে আমি তার হাতে বইগুলাে দিলাম বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য। ওয়ারিস আলী জানাল কোর্ট শেষ হবার পর মফিজউদ্দীন না দেখা করেছে আমার সঙ্গে না তার সঙ্গে। সারাদিন মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে রইলাম। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিছানায় শুয়ে থাকলাম। দুপুর ১২টায় তােয়াহা সাহেব আমার সাইকেল নিয়ে আজিমপুর গেলেন এবং বিকেলে ফেরত দিয়ে গেলেন। রাত ১০টা নাগাদ বাহাউদ্দীন এল। রাত ১১টা পর্যন্ত সে স্পিকার নির্বাচন নিয়ে কথা বলে চলে গেল। বাহাউদ্দীন এ বিষয়ে অন্যান্য পার্টির সঙ্গে আলােচনা করবে। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বসন্তের নির্মল পরিবেশ অনুভূত হল। দিনের বেলা কোন শীতই বােঝা গেল না। রাতেও শীতের প্রকোপ অনুপস্থিত। ১০. ২. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। বেলা ১২টার ক্লাস করলাম। সলিমুল্লাহ হলের নির্বাচন- দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের আলাদা ৩টি সভা অনুষ্ঠিত হল । বাহাউদ্দীন, অলি আহাদ, ড. জনসন প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। মাইকের মাধ্যমে বিভিন্ন দলের জোরালাে নির্বাচনী প্রচার চলতে লাগল। বিকেল। ৫টায় হলে ফিরলাম। নামাজের ঘরে জামাতে এশার নামাজ আদায় করলাম। নামাজের পর রাত সাড়ে

৮টা পর্যন্ত কাদির ও আবদুল হাকিমের সঙ্গে কথা বললাম। হাকিম সাহেব আমাকে বললেন, স্পিকার পদে প্রার্থী না হওয়ার জন্য তিনি সিদ্দিকুল্লাহকে বুঝিয়ে রাজি করাবেন। আগামীকাল বেলা ১২টার মধ্যে তিনি আমাকে সিদ্দিকুল্লাহর সঙ্গে তার আলাপ আলােচনার ফলাফল কি হল জানাবেন বললেন। দু’দিন পর গােসল করলাম। আবহাওয়া : ঠাণ্ডা একেবারে উধাও হয়ে গেল। মৃদু তাপের সাথে হালকা বাতাস বসন্তেরই বার্তাবহ। রাতের শেষাংশ থেকে মেঘাবৃত হয়ে আছে। আকাশ। ১১.২, ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। আজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। সারাদিনই হলে রইলাম। দুপুর ১টার দিকে খাবার পর হাকিমের রুমে গেলাম। কাদির ও হাকিম সিদ্দিকুল্লাহকে বােঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। রাত ১০টায় রুমে ফিরলাম। রাত ১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : পূর্ণ বিকশিত বসন্ত। শীত যেন আকস্মিক এবং আগে আগেই বিদায় নিল। শীতের কাপড়ের আর প্রয়ােজন নেই।
————————————————————————-
মেডিকেল স্কুলের যে ৫ জন ছাত্র নেতা বর্তমান ধর্মঘট পরিচালনা করছিল তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরবর্তীতে সরকার ৯, ২, ৫১ এবং ১০, ২. ৫১ তারিখে এই বহিষ্কারাদেশের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। আজ স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে ছুটি। সকাল সাড়ে ৮টায় ওয়াহিদুজ্জামান আলােচনার জন্য আমাকে ওয়ারীতে দৈবজ্ঞ মি. বােসের কাছে নিয়ে গেল। বেলা সাড়ে ১০টায় হলে ফিরে এলাম। ফেরার পথে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে ডাক্তার করিম ও তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। আমি করিমের সঙ্গে একটা চাকরির ব্যাপারে আধ ঘন্টা কথা বললাম। হল চত্বরে ঢােকার মুখে অলি আহাদকে পেলাম। সে জানাল, তাকে এস, এম, হলে ঢুকতে এবং হল নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হচ্ছে না। দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কমন রুমে ছিলাম। কমন রুমের সামনে অফিস কক্ষে হল কেবিনেটের সভা চলল রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। বদিউর রহমানের কারণে স্পিকার নির্বাচন নিয়ে কোন সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌছানাে গেল না। মুশাররফ এবং তার দল শক্ত অবস্থান নিয়েছে। রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রাতে মৃদু শীত। দিনেরবেলা আরামদায়ক।

১৩, ২, ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। দুপুর ৩টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। সকাল ৯টা নাগাদ এম, কম, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শাহাদাতউল্লাহ হলে এল। সে স্পিকার পদপ্রার্থী হতে চায়। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত আমি তাকে রুম থেকে। রুমে নিয়ে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। পেরেছি গােসল করতে না পেরেছি বেলা ১২টার থিয়ােরি ক্লাস ধরতে। বেলা সােয়া ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। শামসুল হক বন বিষয়ে কথা বলতে বলতে আমার রুম পর্যন্ত এল। সে বিকেল সাড়ে ৪টায় চলে গেল। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করতে সবাই বিকেল ৫টায় ডাইনিং হলে জমায়েত হলাম। নাম প্রস্তাব হচ্ছিল, ঠিক তখনই বাইরে থেকে একদল ছাত্র বন্ধ দরজা ভেঙে হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পড়ল। প্রিসাইডিং অফিসার বাধ্য হয়েই নির্বাচন বাতিল করে দিলেন। ছাত্রদের উপস্থিতি অনেক হয়েছিল। উভয় দলের নেতারাই প্রভােস্টের বাসস্থানে গেলেন। ঠিক হল ১৫. ২. ৫১ তারিখে বিকেল সাড়ে ৫টায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সূর্যাস্তের সময় ফিরে এলাম।

রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই।
———————————————————
মেডিকেল ছাত্ররা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দুপুর আড়াইটা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল। মেডিকেল ছাত্রীরাও এতে অংশ নিয়েছে। ১৪. ২. ৫১ সকাল সাড়ে ৭টায় উঠেছি। বেলা ১২টা এবং দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস হল। তাতে যােগ দিলাম। দুপুর সাড়ে ৩টায় এস, এম, হলে গেলাম। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভােট গ্রহণ চলল। জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে মনে হল। ভিপি পদে তিনটি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ইনডিপেনডেন্ট ফ্রন্ট (এইপিএমএসএল) থেকে সৈয়দ সিদ্দিক হােসেন, অ্যালাইড আইডিয়েল ডেমােক্রেটস (ইপিএমএসএল) থেকে আনােয়ারুল হক এবং ডেমােক্রেটিক লীগ (বর্তমানের পেশাদারী রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত) থেকে হাবিবুর রহমান। সূর্যাস্তের সময় আমার হলে ফিরে এলাম। ফেরার পথে অধ্যাপক শামসুল করিমের সঙ্গে দেখা হল। আমাদের হলের বি, কম, দ্বিতীয় বর্ষের জনৈক আমজাদ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একজন ছাত্র এস, এম, এইচ. ইউনিয়ন নির্বাচনে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ভােট দিতে গিয়ে ধরা পড়েছে। রাত ১০টা থেকে সােয়া ১২টা পর্যন্ত হাকিমের রুমে বসে কথা বললাম। সেখানে সিদ্দিকউল্লাহ ও মােশাররফ এসে আমাদের সঙ্গে যােগ দিয়েছিল। রাত সাড়ে ১২টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই এস. এম. এইচ : সলিমুল্লাহ মুসলিম হল।
৪৫

১৫. ২. ৫১ সকাল সাড়ে ৭টায় উঠেছি। মেডিকেল ছাত্রদের দাবির সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ধর্মঘট পালিত হয়েছে। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে ডাইনিং হলে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল । ড. নূরুল হুদা সভাপতিত্ব করলেন। আমাদের মনােনীত প্রার্থী এম, কম, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এ. এইচ, শাহাদতউল্লাহ এবং এম. কম, প্রথম বর্ষের শেখ আবদুল্লাহ যথাক্রমে সিদ্দিকউল্লা ও তারিক আলীকে। পরাজিত করে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদে নির্বাচিত হয়েছে। শাহাদতউল্লাহ ও সিদ্দিকের মধ্যে টাই হওয়াতে ইস্যুটি লটারির মাধ্যমে মীমাংসিত হল। বিষয়টি তুমুল উত্তেজনাকর ও কৌতূহলপূর্ণ ছিল। রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে হলের প্রতিটি রুমে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয়া হল। রাত ১২টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই।
———————————————————————————
১. ইস্ট বেঙ্গল অ্যাসেমব্লির বাজেট সেশন শুরু হয়েছে আজ দুপুর ২টা থেকে। ২. টাঙ্গাইলে এস, হকের নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে গতকাল। ৩, ১৪, ২, ৫১ থেকে শহরে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ১৬. ২. ৫১ সকাল ৮টায় উঠেছি। বেলা ১১টায় মুখলেসুর রহমান এলেন। তিনি আমার কাছে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে তার নিজের ভূমিকা সম্পর্কে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে ব্যাখ্যা করলেন। তিনি আমার কাছে স্বীকার করলেন যে, তিনি দলিলুর রহমানের ভুল প্রভাবে পড়েছিলেন। ১২টায় তিনি চলে গেলেন। দুপুর আড়াইটার দিকে তােয়াহা সাহেবের বাসায় গেলাম। তার বাসায় দরজা জানালা সব বন্ধ। ভেতরে কেউ নেই। দরজা তালাবন্ধ। ওখানে এক ঘন্টার মত অপেক্ষা করলাম। সেই সময় চাচি তার স্বভাবসুলভ কুৎসিত ব্যবহার করলেন। বিকেল প্রায় ৪টার দিকে সরাসরি এস. এম. হলে গেলাম। সেখান থেকে কে. জি, মুস্তাফাকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের হলে এলাম। মুশাররফ হুসেনকে অভিষেক অনুষ্ঠানের ভাষণ লেখার জন্য নির্দেশনা দিলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কার্জন হলে আমাদের হল ইউনিয়ন কেবিনেটের অভিষেক অনুষ্ঠান হল। ড. হুদা সভাপতিত্ব করলেন। প্রধান অতিথি ছিলেন ভাইস চ্যান্সেলর। সদ্য নির্বাচিত স্পিকার, ভিপি ও জিএস বক্তব্য রাখলেন। তারপর ভাইস চ্যান্সেলর ও সভাপতি বক্তব্য প্রদান করলেন। সভায় উপস্থিতির হার ছিল সন্তোষজনক। রাত ১০টা পর্যন্ত বিচিত্রানুষ্ঠান হল। বিচিত্রানুষ্ঠানের পর অনুষ্ঠান শেষ হল। আজ সন্ধ্যায় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের হল ইউনিয়ন নির্বাচনের ভােট গণনা হয়েছে। জানা গেল শেলি এবং তার দল প্রায় সব কটি গুরুত্বপূর্ণ পদে জয়ী। হয়েছে। রাত ১২টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সকালে বেশ ঠাণ্ডা ছিল। ১৭, ২, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বেলা ১২টার ক্লাস করলাম। সকাল ৭টায় ইয়াসিন (সাদুর বাপ) আমার সঙ্গে দেখা করল। সাবা ফকিরের বাড়িতে ডাকাতি করার অভিযােগে হাজতে আটক তার ছেলের মামলা সে কিভাবে মােকাবিলা করবে তার পরামর্শ চাইল। আমি তাকে ফজলু মােক্তারের কাছে গিয়ে তার সঙ্গে এ ব্যাপারে পরামর্শ করতে বললাম। ১৫/২০ মিনিট পর সে চলে গেল। বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। দুপুর ১টা ৫ মিনিটে এস, এম, হলের নতুন নির্বাচিত কাউন্সিলকে বরণ করার জন্য একটা সভা হল। মুখলেসুর রহমান মধুর স্টলে আমাকে নাস্তা খাওয়াল। শেলি এবং তার দলের বিজয়ে মুস্তাফা, এস, মােহাম্মদ আলী, ওয়াদুদ, বাহাউদ্দীন, মতিন, সামাদ, কিবরিয়া, রুহুল আমিন, অলি আহাদ এবং আরও অনেকে বেশ উল্লসিত। ইপিএমএসএল (আইডিয়েল ডেমাে) প্রার্থী মােশাররফ হােসেন চৌধুরী নির্বাচিত হওয়ায় কিছুটা দ্বিধা নিয়েই তার জন্যও আনন্দ উৎসব হল।

বিকেল সােয়া ৫টার দিকে হলে ফিরলাম। সাড়ে ৫টায় আবার বেরিয়ে সদরঘাটে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করলাম। সােয়া ৬টায় কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গিয়ে ডা. করিমের সঙ্গে আধ ঘন্টা কথা বললাম। তারপর হলে ফিরলাম। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কমন রুমে ছিলাম। মুখলেসুর রহমান (পাগল) রাত ৯টার দিকে কয়েক মিনিটের জন্য আমার সঙ্গে দেখা করল। রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সন্ধ্যা এবং সকালে গায়ে কাঁটা দেয়ার মত শীত ছিল। সম্ভবত এটা। শীতের শেষ কামড়। ১৮, ২, ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম । দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসে গিয়ে ৬ষ্ঠ কিস্তির বকেয়া পরিশােধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসে সাঈদ, বাহাউদ্দীন ও আউয়ালের সঙ্গে দেখা হল। বিকেল সাড়ে ৪টায় জিন্দাবাহার গেলাম। কামরুদ্দীন সাহেব বাইরে থাকায় তাঁর সঙ্গে দেখা হল না। সেখানে আধ ঘন্টার মত অপেক্ষা করে সােজা হলে ফিরে এলাম। বিকেল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কমন রুমে ছিলাম। রাত ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই।

১৯. ২. ৫১ সকাল সাড়ে ৭টায় উঠেছি। বেলা ১১টা এবং দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। এরপর বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে টি, হােসেনের কাছ থেকে কাগজ কপি করলাম। বিকেলে কাগুর বাপ এবং খােজখালির চান্দু আমার সঙ্গে দেখা করল। কাগুর বাপ আমার ছােট বােনের সঙ্গে এফ. গিয়াসউদ্দীনের ছেলের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলল। চান্দু আমন ধান চাষের জন্য ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের রাস্তার পাশের খাদ জমি ইজারা নিতে চায়। রাত ৮টার পর তারা চলে গেল। আগামীকাল সকালে তারা আবার আসবে। ঢাকা হল এক্সটেনশনের শামসুল আবেদীনের রুমে একজন অতিথির থাকা নিয়ে শামসুল আবেদীন ও শামসুদ্দীনের মধ্যে ঝগড়া বেধে গিয়েছিল। কিছু ছাত্র তাদের দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটানাের জন্য পার্টির রঙ লাগিয়ে ব্যাপারটাতে ইন্ধন যােগাচ্ছিল। এখানকার পশ্চিম ব্যারাকের সামনে হামিদ, হায়দার, নাসিরুদ্দীন, রেজা, মুস্তাফা এবং অন্যান্যদের তুমুল হৈ হট্টগােলের মধ্যে আমি সকাল ১০টার দিকে ঘটনাটি মােকাবিলা করলাম। আমি বিষয়টি সৌহার্দ্যপূর্ণ ফয়সালার জন্য প্রচেষ্টা নিলাম। বিকেল সাড়ে ৫টায় সাঈদের সঙ্গে বসলাম। কিন্তু আবেদীন এল না। রাত সাড়ে ৮টায় আবার বসলাম। ঘটনায় জড়িত দু’জনই। সেখানে উপস্থিত ছিল। কিন্তু আবেদীনের অনড় মনােভাব মীমাংসার সব প্রচেষ্টাকেই নষ্ট করে দিল। সাড়ে ৯টায় আমরা চলে এলাম। রাত ১০টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত এন ৬ নম্বর রুমে ছিলাম। এ সময় মােশাররফ চৌধুরী ও এমরান উপস্থিত ছিল। ইমামের জন্য ৩৬০/- বরাদ্দ করতে আমি বদিউরকে অনুরােধ জানালাম। রাত ১২টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ভােরে কুয়াশা।
৫০

২০. ২. ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। বেলা ১২টা এবং দুপুর ১টার ক্লাস করলাম। ৩টা ২০ মিনিটের ক্লাস করিনি। সকাল সাড়ে ৮টায় কাগুর বাপ ও চান্দু এল। তারা জেলা বাের্ডের রাস্তার পাশের খাদ জমি ইজারা নেয়ার জন্য আমার কাছে ১০০/- জমা রাখল। বেলা সােয়া ১১টার সময় হঠাৎ বাড়ি থেকে মফিজউদ্দীন এসে হাজির। সে জানাল রমিজার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আগামী বৃহস্পতিবার বিয়ের কাবিন নিবন্ধন করা হবে। সে আমার কাছ থেকে ১২৫/- নিয়ে তখনি বাড়ি চলে গেল। দুপুর ৩টার সময় বেরিয়ে সদরঘাট-বাবুবাজার থেকে বাচ্চাদের জন্য কিছু বই কিনলাম। বিকেল ৬টার দিকে হলে ফিরে বইগুলাে কাগুর বাপ প্রমুখের হাতে তুলে। দিলাম। ওরা বাড়ি যাচ্ছে। বাবুবাজারে আশুর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছি। তাকে চান্দুর জমির ইজারার ব্যাপারে শহীদ মােক্তার কিংবা ধনঞ্জয় রায়ের সঙ্গে দেখা করতে অনুরােধ করলাম। আবদুল হাকিম রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ইমাম ও বাজেট নিয়ে কথা বলল। তখন মুশাররফও ছিল। কিন্তু সে কোন কথা বলেনি। রাত ১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আজ অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা। দিনেরবেলা দখিন পশ্চিমা বাতাস ছিল। ভাের কুয়াশাছন্ন। ২১. ২৫১ সকাল ৮টায় উঠেছি। বেলা ১২টা, দুপুর ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে সােয়া ৫টা পর্যন্ত কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে কথা বললাম। তখন কিছু সময়ের জন্য অলি আহাদ এসেছিল। আমি সাড়ে ৫টায় হলে ফিরলাম। আমাদের হলের কোর্টে গেন্ডারিয়া টিমের সঙ্গে আমাদের হল টিমের ভলিবল
প্রতিযােগিতা হল। আমরা হেরে গেলাম। রাত ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : শীতের তীব্রতা কম থাকায় মনােরম পরিবেশ। উষ্ণ দিন। পরিষ্কার আকাশ।
——————————————————————-
মেডিকেল ছাত্ররা তাদের ফাইনাল পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া থেকে বিরত রয়েছে। এই পরীক্ষা ১৯, ২. ৫১ তারিখ থেকে কার্জন হলে অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। তাদের মূল ধর্মঘটেরও ২৮ দিন পার হতে চলেছে। ২২. ২. ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। বেলা ১২টা ও দুপুর ১টার ক্লাস করেছি। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ডা, করিম ও অলি আহাদ এল। ডা, করিম আমাদের আশফাকের রেস্তোরায় নাস্তা খাওয়াল। সাড়ে ৯টায় অলি আহাদ চলে গেল। এরপর করিম এবং আমি সাইকেলে চেপে ইনকাম ট্যাক্স কমিশনার আফাজউদ্দীনের কন্যাকে তাদের বাসা থেকে অনুসরণ করে ইডেন কলেজের গেট পর্যন্ত গেলাম। আমি মেয়েটিকে দেখে সন্তুষ্ট হলাম। সে করিমের জন্য উপযুক্ত স্ত্রী হবে। সাড়ে ১০টায় হলে ফিরলাম। তারপর করিম চলে গেল। সকাল ১০টার দিকে কার্জন হলের সামনে রিকশায় হাবিবউল্লাহ ও শামসুল হককে দেখেছিলাম। বিকেল সাড়ে ৫টায় ডাইনিং হলে হল ইউনিয়নের বাজেট মিটিং হল। ভিপি বাজেট আলােচনার সূত্রপাত করতেই আমি বাজেট বিতর্কের সূচনা করে প্রায় আধ ঘন্টার মত গােটা কাঠামােরই সমালােচনা করলাম। মাগরিবের সময় ১৫ মিনিটের বিরতি দিয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত মিটিং চলল। অনেক বক্তাই বাজেটের পক্ষে বিপক্ষে বললেন। আগামীকাল সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মিটিং মুলতবি রাখা হল। রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। রাতের শেষ দিকে মেঘাছন্ন আকাশ। তাই কোন ঠান্ডা নেই। মৃদু বাতাস আছে।

২৩. ২. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় ড, হুদার সভাপতিত্বে মুলতবি বাজেট মিটিং শুরু হল। শেষ হল বেলা সাড়ে ১১টায়। ২টি সংশােধনীসহ বাজেট অনুমােদিত এবং পাশ হল। আমার প্রস্তাব মত অ্যাথলেটিক বিভাগ থেকে ১২৫০/- এবং ইউনিয়নের ২৫০/যােগ করে সর্বমােট ১৫০০/- আলাদা করে রিডিং রুম সংলগ্ন লাইব্রেরি চালু করার সিদ্ধান্ত হল। কেবিনেট সংশােধনী প্রস্তাব গ্রহণ করে প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি পাশ করেছে। বাজেট নিয়ে কথা বলার সময় প্রহসন’ (প্ৰসহনমূলক বাজেট) শব্দটি প্রত্যাহার করার জন্য সভাপতির কুলিং না মানায় হাউস থেকে জনাব মতিনকে বের কের দেয়া হয়। এরপর বাজেটের উপর প্রাণবন্ত আলােচনা হল। সংশােধনীর পর বাজেটের পুরাে কাঠামােই পরিবর্তিত হল। কেবিনেট তা মেনে নিল। পূর্ব পরিকল্পনা মত রাত ৯টায় ৩ নম্বর তােপখানা রােডে কে, বি, আফাজউদ্দীনের বাড়িতে করিমের বৌ দেখার জন্য ডা. করিম, তােয়াহা সাহেব, সিরাজ বেপারি এবং বাকি আমাকে তাদের সাথে নিয়ে গেল। কিন্তু সেখানে পৌঁছার পর আমাদের বিস্মিত করে রাত ১১টায় বিয়েই হয়ে গেল। সেখানে খাবার খেলাম। রাত ২টা। পর্যন্ত নাচ গান চলল। রাত ৩টার সময় হলে ফিরলাম। করিম ওখানে থেকে গেল। রাত সাড়ে ৩টায় বিছানা গেলাম। আবহাওয়া : মনােরম পরিবেশ। ঠাণ্ডা যেমন নেই তেমনি গরমও নেই।

২৪. ২.৫ সকাল ৭টায় উঠেছি। বেলা ১২টা এবং দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে অনুষ্ঠিত এক মিটিংয়ে ১৭-১৮ মার্চে অনুষ্ঠিতব্য যুব কনভেনশনকে সাহায্য সহযােগিতা করার জন্য একটি কমিটি গঠিত হল। এই সভায় এস, এম, হলের ভিপি হাবিবুর রহমান সভাপতিত্ব করলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হলে যাবার পথে মােবারুদ্দিন ও সালাহউদ্দীনের সঙ্গে দেখা হল। মােবারুদ্দিন ঢাকা হল রেস্তোরায় আমাদের নাস্তা খাওয়াল। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হলে ফিরলাম। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কমন রুমে কাটল। রাত সাড়ে ৮টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : আগের মতই। বসন্তের পূর্ণ ছোঁয়া। ২৫, ২. ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর মি. ল্যাঙলির মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় আজ বন্ধ। গতকাল তার মৃত্যু সংবাদ পাওয়া গেছে। দিনের প্রথমার্ধ কাটল বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রের পান্ডুলিপি কপি করতে বিকেল ৪টায় সাইকেলে করে বের হলাম। কেমব্রিজ ফার্মেসিতে ২০ মিনিটের জন্য ডা, করিমের সঙ্গে দেখা করলাম। তারপর সােজা গেলাম জিন্দাবাহারে। কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে এমনি কথা বললাম। তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। সন্ধ্যা সােয়া ৭টায় হলে ফিরলাম। শরশ্চন্দ্রের চরিত্রহীন পড়লাম। রাত ১টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : শীত সত্যিই চলে গেল। কাক্ষিত মৃদুমন্দ বাতাস। রাতে একটা পাতলা চাদর জড়িয়ে নিলেই চলে। লেপ তােষক বাহুল্য হয়ে গেছে। বসন্তের পাখি ঋতু রানীর আগমনী ঘােষণা করছে।

২৬. ২. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠলাম। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়েই ছিলাম। রাত সােয়া ৮টায় এস, এম, হল ইউনিয়নের অভিষেক অনুষ্ঠানে যােগ দিলাম। ৮টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছিল। ভিপি হাবিবুর রহমান (শেলি), জিএস জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, ভাইস চ্যান্সেলর প্রভােস্ট, বিদায়ী কেবিনেটের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব জামান জাহেদি বক্তব্য রাখলেন। শুরুতেই প্রাক্তন ভিপি মুস্তাফা নূরউল ইসলাম বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু আমি তখন সেখানে ছিলাম না। পরে রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিচিত্রানুষ্ঠান চলল। রাত ১১টায় হলে ফিরলাম। মজিদ আমার সঙ্গে ছিল। কুদরতউল্লাহ, কে, জি মুস্তাফা, চাদ মিয়া প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। ফেরার পথে শাহাদতউল্লাহ, এম, এন. ইসলাম প্রমুখ আমার সঙ্গে এল। রাত ১২টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। মৃদুমন্দ বাতাস বইছিল। রাতের শেষ দিক থেকে আকাশ হালকা মেঘে ঢাকা। ২৭. ২.৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। আজ কোন ক্লাস হয়নি। বেলা ১২টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। রুম নম্বর ৬২-তে যুব কনভেনশনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র প্রস্তুতি কমিটির এক সভায় যােগ দিলাম। সভায় মােবারুদ্দিন প্রথমে সভাপতিত্ব করল। তারপর সভায় সভাপতিত্ব করল কমিটির চেয়ারম্যান শেলি। দুপুর আড়াইটায় সভা শেষ হল। বিকেল ৪টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। কফিলউদ্দীন চৌধুরী, টিটু মিয়া, কামরুদ্দীন সাহেব, আতাউর রহমান, মমতাজ মােক্তার, জহিরউদ্দীন, রায়পুরার আফতাবউদ্দীন ভূইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ওখানে তাদের সঙ্গে গল্প করে চলে এলাম।
৫৫

জগন্নাথ কলেজের গেটে ডা, করিমকে দেখলাম। বাচ্চাদের বইয়ের সন্ধানে সদরঘাট, পাটুয়াটুলি, ইসলামপুর থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত ঘুরলাম। কিছু বই কিনে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হলে ফিরলাম। সন্ধ্যার সময় আশুকে তার বাড়িতে পাইনি। হলে আজ নৈশ ভােজ ছিল। রাত ৮টার দিকে প্রথম ব্যাচেই খেলাম। রাত ১১টা বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই সকালের পর সারাদিন পরিষ্কার আকাশ। ২৮, ২, ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। বেলা ১২টা, দুপুর ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে এলাম বিকাল ৪টার সময়। বিকেল সাড়ে ৪টায় আশরাফের দোকানে নূরুল হক আমাকে নাস্তা খাওয়াল। ৫টার সময় হাকিম, শামসুল ইসলামের সঙ্গে তাদের রুমে মিষ্টি খেলাম। কাপাসিয়ার আবুল হােসেন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সেখানে আমার সঙ্গে দেখা করল। সে খাম্বা কিনতে চায়। সে আরও বলল, বনাঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির জন্য শ্রীপুরের রেঞ্জারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। ১৫ মিনিট পর সে চলে গেল। ১৯৫১ সালের আদম শুমারির কারণে চূড়ান্ত লােক গণনার জন্য সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে। আদম শুমারি কাজের আজই শেষ দিন। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বসন্ত উপযােগী গরম দিন। রাতের ঠাণ্ডায় একটা হালকা আচ্ছাদন প্রয়ােজন। সব মিলিয়ে মনােরম আবহাওয়া। খুব গরমও নয় আবার ঠাণ্ডাও নয়। পূর্ণ বসন্তকাল শুরু হল।
————————————
১. করাচিতে ২৫. ২. ৫১ তারিখে ভারত-পাক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হল।
ভারত ১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান নির্ধারিত টাকার অনুপাত গ্রহণে

সম্মত হয়েছে। ভারত কর্তৃক এই বাণিজ্য চুক্তি এবং পাকিস্তানি মুদ্রার অনুপাত গৃহীত হওয়ায় অনেক সমস্যারই সমাধান হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর প্রতিক্রিয়া চলবে। ভারতীয় ১০০/- = পাকিস্তানি ৬৯.৫০ টাকা পাকিস্তানি ১০০/- = ভারতীয় ১৪৪/২. পাটের দর ধীরস্থিরভাবে বেড়ে চলেছে। মাসের শেষে তা ৪০-৪২/- হয়েছে। ৫০ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাটের সর্বোচ্চ দর ছিল মন প্রতি ২৫ টাকা। এখন শতকরা দুই ভাগের বেশি পাট পাটচাষীদের কাছে পাওয়া যাবে। যাদের কাছে পাওয়া যাবে তারা অবশ্যই বড় জোতদার। এতে লাভ হবে পাটের দালালদের। এটা খুব আশ্চর্য, যখন নতুন পাট বােনার মওসুম শুরু হচ্ছে তখনই জুট বোের্ড পাটের দাম বাড়াচ্ছে। ৩, মাসের শুরু থেকে চালের দামও বেড়ে চলেছে। এখন চাল ১৬/- থেকে ২১/ মণ। ধান ১১/- থেকে ১৪/- মণ। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হওয়ায় উদ্দেশ্যমূলক গুজব কাজ করবে। তাতে হয়ত আমাদের এখানে খাদ্য শস্যের দাম বেড়ে যাবে।

– বৃহস্পতিবার –
১, ৩, ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। আজ কোন ক্লাস করিনি। বেলা ১১টায় কোর্টে গিয়েছিলাম। আমাদের হলের হাউস টিউটর জনাব সাঈদ আমাকে রেলওয়ে ওয়ার্কশপের কাছ থেকে তার রিকশায় তুলে ডিবি অফিসের সামনে নামিয়ে দিলেন। দুপুর দেড়টায় ২৬, ৩, ৫১ তারিখ পর্যন্ত কেসের শুনানি মুলতবি রাখা হল। বেলা সােয়া ১১টায় বার লাইব্রেরিতে আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। মফিজউদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে দুপুর ২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত পাটুয়াটুলি ও সদরঘাট থেকে বইপত্র কিনলাম। দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রথম সাব জজের কোর্টে জনাব রেজাই করিমের জেরা শুনেছি। তাঁর জুনিয়র ছিলেন কামরুদ্দীন সাহেব। সেকান্দার মাস্টার উপস্থিত ছিলেন। বাঘিয়ার সাহাদ আলীকে সেখানে দেখলাম । মুকুল সিনেমা হলের সামনে শ্রীপুরের রেঞ্জারকে (সরওয়ার মিয়া) পেলাম। আমি তাকে আমার বন। বিক্রির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। রেঞ্জার বললেন, তিনি আমাকে অনুমতি দেবেন, যদি আমি আবেদন করি। বিকেল ৫টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ১০ মিনিটের মত তার সঙ্গে কথা বলে চলে এলাম হলে ফিরে বইগুলি এবং টিন নিয়ে বিকেল ৬টায় আবার স্টেশনে গেলাম। সেখানে মফিজউদ্দীনের হাতে ৪০/- দিয়ে তাকে বিদায় জানালাম। আমাদের এলাকার ওয়ারিস আলী, জামাত আলী এবং আরও অনেকে একই ট্রেনে গেল। রাত পৌনে ৮টায় হলে ফিরে এলাম। রাত ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ডিবি অফিস : ডিস্ট্রিক্ট বাের্ড অফিস ২, ৩, ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। সারাদিন হলেই কাটিয়েছি। চরিত্রহীন পড়লাম এবং বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রশ্ন কপি করলাম। রাত ১১টা পর্যন্ত কামাল ও মজিদ আমার রুমে ছিল। রাত ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত প্রশ্ন কপি করলাম। রাত ২টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : মনােরম। না ঠাণ্ডা না গরম। সকাল সাড়ে ৭টায় উঠেছি। বেলা ১২টা এবং দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। সম্প্রতি গঠিত জনশিক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে বয়স্ক শিক্ষা পাঠ্যক্রমের ওপর সিএসপি জনাব এইচ, জি, এস, বিভার কম নম্বর ১০০-তে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে প্রায় সােয়া ৫টা পর্যন্ত বক্তব্য রাখলেন। ড. শহীদুল্লাহ, প্রফেসর নজমূল করিম এবং আরও ১৬ জন ছাত্র এতে যােগ দিয়েছিল। বিকেল প্রায় ৬টায় হলে ফিরলাম।
৬০

সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে সলিমুল্লাহ কলেজে গেলাম। সেখান থেকে আমার ইন্টারমিডিয়েট সার্টিফিকেট নিয়ে সােয়া ৭টায় চলে এলাম। পথে ডা, করিমের সঙ্গে তার ফার্মেসিতে দেখা করলাম। সে আমাকে বলল, ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টের এলডি ক্লার্ক জনৈক আবদুল গফুর তার সঙ্গে দেখা করে বলেছে, করিম যে মেয়েকে বিয়ে করেছে সে তাকে বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছিল। রাত ৮টায় হলে এলাম। রাত সাড়ে ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ৪, ৩, ৫১ ভাের ৬টায় উঠেছি। আজ অর্ধ দিবস ছুটি-ফজলুল হক মুসলিম হলের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান। দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে স্পাের্টসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলাম। পুরস্কার বিতরণ করলেন ভাইস চ্যন্সেলর। যুগভাবে চ্যাম্পিয়ন হল বজলুর রহমান এবং মনসুরুল হক। পুরাে অনুষ্ঠানটাই শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল। অতিথিদের প্রতি অভ্যর্থনা তেমন প্রধান্য পায়নি। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কয়েকজন অতিথি এবং আমাদের ছাত্ররা ছাড়া কোন দর্শকই। প্যান্ডেলের নিচে জায়গা পায়নি। স্পাের্টসের শেষ দিকে মােটামুটি বেশ কিছুসংখ্যক লােকের সমাগম ঘটেছিল। দুপুর বেলা খােলা মাঠে গরম আর প্রখর রােদ থাকায় বিকেলে লােক বেশি হয়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউর রহমান ও অ্যাথলেটিক সেক্রেটারি আলী রেজা স্বেচ্ছাসেবীদের উপর কাজের দায়িত্বভার অর্পণে খুব নিচ মনােভাবের পরিচয়। দিয়েছে। তাদের নির্বাচনী দলকে বিশেষ আনুকূল্য দেখানাে হয়েছে এবং কিছু বিশেষ লােককে সর্বত্র দেখা গেছে। অতি অসৎ, নির্লজ্জ মনােবৃত্তি। বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে হলে ফিরলাম।

রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। আজ বেলা ১১টা, দুপুর ১টা এবং ৩টা ২০ মিনিটের ক্লাস হয়নি। আর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করিনি। সকাল ৮টা নাগাদ সােবহান এল। সে তার শ্বশুর এবং অন্যান্যদের সঙ্গে তার বৌয়ের ব্যাপারে কথা বলল। সে আরও বলল, আকবর আলী এবং জব্বার তার সঙ্গে ঢাকায় এসেছে। আকবর আলী তাকে মারু ও ওয়ারিস আলীর বাড়ির ব্যাপারে মামলা করার জন্য বলেছে। সােবহান তার ভাড়া বাবদ আমার কাছ থেকে ১/- নিয়ে। বেলা ৯টা নাগাদ চলে গেল। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে কোর্টে গেলাম। প্রথম সাব জজ হুসেন আলীর কোর্টে সাড়ে ১২টায় সাহাদ আলী ও হরি মােহনের কেস শুরু হল। জনাব রেজাই করিম, জনাব কামরুদ্দীন ও জনাব আফসারউদ্দীন আসামী পক্ষে ছিলেন। সাহাদ আলী যে। মামলায় হারবে সেটা স্পষ্ট বােঝা যাচ্ছিল। বিকেল ৫টায় কোর্ট মুলতবি হয়ে গেল। দুপুর আড়াইটার সময় কামরুদ্দীন সাহেবের সামনে জনাব রেজাই করিম আমার। মামলা সম্পর্কে বললেন। তিনি বললেন, ফরেস্টার তার কেস নেবার জন্য তাকে চাপ দিচ্ছে। দুপুর ৩টার দিকে একই কোর্টের বারান্দায় ডেপুটি এস, পি, জনাব সােবহানকে দেখলাম। বেলায়েত আলী মাস্টার, গিয়াস, আবদুল হাই প্রমুখসহ বাঘিয়ার অনেক মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিল। বিকেল সাড়ে ৫টায় ডাক্তার করিমের ফার্মেসিতে গেলাম। তিনি আমার সঙ্গে ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টের আবদুল গফুরের পরিচয় করিয়ে দিলেন। ৬টা নাগাদ কামরুদ্দীন সাহেব ওখানে এলেন। ডাক্তার করিমসহ আমরা সরাসরি হাশিম সাহেবের বাসায় গেলাম। হাশিম সাহেব তখন বাইরে ছিলেন, তাই করিম চলে গেল।

সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৭টায় হাশিম সাহেব ফিরে আসা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করলা। রাত ৯টা পর্যন্ত তার সঙ্গে কথাবার্তা বললাম। তিনি সিদ্দেশ্বরীতে একটি বাড়ি কেনা এবং পারিবারিক বিষয়ে মুলত কথা বললেন। রাত ৯টা ১০ মিনিটে ওখান থেকে বের হয়ে আমি সােজা হলে ফিরে এলাম। আমরা ওখানে বসে থাকতে থাকতেই শওকত ও আবুল হােসেন হাশিম সাহেবের বাসায় এসেছিল। হলে তােয়াহা সাহেব বদিউরের রুমে বসা ছিল। আমি সেখানে গিয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত ছিলাম। মামুন, মাহমুদ ও মুশাররফ সেখানে উপস্থিত ছিল। রাত ১২টায় মামুন ও তােয়াহা সাহেব চলে গেলেন। রাত সাড়ে ১২টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : রাতের শেষার্ধ থেকে শুরু হয়ে দিনের প্রথম ভাগ পর্যন্ত আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। এই মেঘকে মনে হয়েছিল বৃষ্টিবাহী। সহনীয় বায়ুমন্ডল। সকাল ৬টায় উঠেছি। বিশ্ববিদ্যালয় আজ ছুটি। বিকেল ৫টায় বের হলাম। ডাক্তার করিমের ওখানে গিয়ে দেখি সে নেই। বাকি চা। বাওয়াল। তােয়াহা সাহেবের বাসায় গিয়ে দেখি কেউ বাসায় নেই। ৬টায় আমার জন্য বই খুঁজতে সদরঘাট গেলাম। কিন্তু বই পেলাম না। বিকেলে ওয়ারিতে গেলাম। আফজাল হােসেন, বাকর সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। তাদের সঙ্গে সন্ধ্যা ৭টায় হলে ফিরে এলাম। রাত ৮টায় যুব কনভেনশন নিয়ে আমাদের অ্যাসেমব্লি হলের সভায় যােগ দিলাম। বদিউর রহমান সভায় সভাপতিত্ব করল। তােয়াহা সাহেব আমাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করলেন। সাড়ে ৯টায় সভা শেষ হল। রাত সাড়ে ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : রাতের শেষ ভাগ থেকে দিনের সিকি ভাগ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে ছিল। জলীয় বাষ্প অনুভূত হচ্ছে। দখিনা বাতাস।

৭, ৩, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। আজ বেলা ১২টা এবং দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস হল না। দুপুর ১টার ক্লাস করলাম না। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ আবদুল মােড়ল এল। আমি তাকে সঙ্গে নিয়ে সাড়ে ৮টায় সাদির মােক্তারের কাছে গিয়ে তাদের মামলা সম্পর্কে আলােচনা করলাম। বেলা ১০টায় হলে ফিরে এলাম। সাদির মােক্তারের রুমে জিনার্দির আক্কাস মিয়া ও তরগাঁওয়ের সফিউদ্দীনকে দেখলাম । বেলা সােয়া ১২টায় কোর্টে গেলাম। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সাহাদ আলীর মামলার সাক্ষ্য শুনলাম। এর মধ্যে দুপুর ২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সাদির মােক্তারকে সঙ্গে নিয়ে জনাব রহমানের কোর্টে আবদুল মােড়লের মামলা মুলতবি করার ব্যবস্থা করলাম। শ্রীপুরের রেঞ্জার ও গােসিঙ্গার দুই জন বন রক্ষী তখন সেখানে উপস্থিত ছিল। হাফিজ বেপারি ও সাহেব আলী বেপারিও উপস্থিত ছিল। মােহাম্মদ আলীর কাছ থেকে আবদুল খানের মামলার আরজির নকল নিলাম। বিকেল ৬টার সময় ডাক্তার করিমকে নবাবপুরে পেলাম। আমার জন্য কাপড় কিনলাম। সন্ধ্যার পর ডাক্তার করিমের সঙ্গে তার স্ত্রীর বাড়িতে গেলাম। সেখানে নাস্তা খেলাম। ডাক্তার করিম থেকে গেল। আমি হলে ফিরে এলাম রাত ৯টায়। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : পরিষ্কার আকাশ। বাতাসসহ শুষ্ক আবহাওয়া। সব মিলিয়ে
মনােরম।

৮, ৩, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। বেলা ১২টা এবং দুপুর ১টার ক্লাস করলাম। পরীক্ষার ফর্ম, স্টাইপেন্ড বিলের ওপর ড. হুদার অনুমােদন নিয়ে দুপুর আড়াইটায় হল অফিসে জমা দিলাম। দুপুর ৩টার সময় আমি যখন কোর্টে গেলাম, তখন সাব জজ, হরি মােহনের মামলার ভার জুরিদের হাতে অর্পণ করছেন। ৪টার সময় জুরিরা সর্বসম্মতিক্রমে তাকে নির্দোষ রায় দিলেন। বিকেল ৫টা নাগাদ মুকুল হলের কাছে আফাজউদ্দীনকে পেলাম। ভিক্টোরিয়া পার্কে মফিজউল্লাহর রেস্তোরাঁয় সে আমাকে নাস্তা খাওয়াল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাস ধরে সােজা হলে ফিরে এলাম। রাত ৮টার দিকে ওয়াসি মােল্লার বাড়ির মাস্টার আর একজনসহ হলে এসে আমার সঙ্গে দেখা করল। সে আমাকে বলল, আমরা যে বনটা কিনেছি সেটা ওয়াসি মােল্লা। বিক্রি করার চেষ্টা করছে। তাই ১২. ৩. ৫১ তারিখ সােমবার বিনােদের মামলার তারিখে সে কোর্টে আসতে খুব একটা ইচ্ছুক না। ১০ মিনিট পর তারা চলে গেল। রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। সকাল ৬টায় উঠেছি। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ আমার কাছে সাবু ও আবুসহ চান্দু এল। আমি চান্দুকে ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের রাস্তার পাশের জায়গার খননকাজ ওয়াজউদ্দীনকে বন্দোবস্ত প্রদানের কথা জানালাম এবং ওই কাজের জন্য আমার কাছে গচ্ছিত ১০০/- তাকে ফেরত দিলাম। সাবু আমাকে অনুরােধ করল, হাজি বাড়ির জমিটা গিয়াসউদ্দীনকে ফেরত দিতে। আমি তাকে বললাম, আমাকে এ ব্যাপারে মফিজউদ্দীনের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
৬৫

দুপুর আড়াইটার দিকে সায়েদ আলী এসে হাজির হল। আমি তাকে ফকির। মান্নানের সঙ্গে দেখা করতে বললাম। বিকেল ৫টার দিকে আমি ডাক্তার করিমের কাছে গেলাম। ওরা সবাই আমার সঙ্গে এল। চান্দু আমাকে অনুরােধ জানাল, পথিপার্শ্ব খননের ব্যাপারটা পুনরায় বিক্রির জন্য জেলা বাের্ডের চেয়ারম্যানের কাছে একটা আবেদন পত্র লিখে দিতে। করিমের ওখানে বসে আমি দরখাস্ত লিখে দিলাম। ওরা আমার কাছ থেকে ৬টায় চলে গেল। কিন্তু ওদের জন্য আমি শান্তি মিটিংয়ে যােগ দিতে পারলাম না। রাত ৮টা পর্যন্ত ডাক্তার করিমের সঙ্গে তার ফার্মেসিতে বসলাম। তারপর সােজা হলে ফিরে এলাম। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দিনভর প্রচণ্ড গরম।
—————————————————–
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের নির্দেশে চক্রান্তের অভিযােগে মেজর জেনারেল আকবর খান, ব্রিগেডিয়ার লতিফ, মিসেস আকবর খান, পাকিস্তান টাইমসের সম্পাদক ফয়েজ আহমদ ফয়েজকে আজ গ্রেফতার করা হয়েছে। ১০. ৩. ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। দুপুর ২টা ২০ মিনিট এবং ৩টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। পৌনে দুইটায় হল অফিসে পরীক্ষার প্রবেশ পত্র জমা দিলাম। খুব সকালে চান্দু ও কাগুর বাপ এসেছিল। তারা সাড়ে ৭টার দিকে চলে গেল। চান্দু ও কাগুর বাপ ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের রাস্তার পাশের জায়গা বন্দোবস্ত নেয়ার ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিল। বেলা ৯টার দিকে তরগাঁওয়ের মােসলেহউদ্দীন ফকির আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি রামনাথের ছেলেদের কাছ থেকে কেনা বন বিক্রির আবেদন দেখালেন। আবেদনে গােসিঙ্গার ফরেস্টার তার পক্ষে লিখেছে। আর শ্রীপুরের রেঞ্জার লিখেছে তার বিপক্ষে। মােসলেহউদ্দীন ফকির জানাল, যদি হামিদ বেপারিকে ভাগ দেয়া হয়।

তাহলে রেঞ্জার তার পক্ষে লিখবে। আমি তাকে যদি প্রয়ােজন হয় তবে ডিএফও এবং কনজারভেটরের সঙ্গে দেখা করতে বললাম। সাড়ে ৯টায় তিনি চলে গেলেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় সায়েদ আলী এসে আমাকে জানাল, সে ফকির মান্নানের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। সে বলধা ল’ অফিসের সঙ্গে যুক্ত সুরেন্দ্র বাবু মােক্তারের সঙ্গে এ ব্যাপারে বন্দোবস্ত করেছে। পৌনে ৬টায় সে চলে গেল। রাত ৮টায় তােয়াহা সাহেব এলেন। বদিউর, মুশাররফ, মজিদ এবং আমি তার সঙ্গে পশ্চিম ব্যারাকে গিয়ে ১১টা পর্যন্ত যুব কনভেনশনের জন্য চাঁদা আদায় করলাম । পরে তােয়াহা সাহেব চলে গেলেন। রাত সােয়া ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ১১, ৩, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। আজ রাষ্ট্র ভাষা দিবস-ধর্মঘট। বেলা পৌনে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। খালেক নেওয়াজ খানের সভাপতিত্বে। বেলা ১২টায় একটি সভা অনুষ্ঠিত হল। হাবিবুর রহমান (শেলি), বদিউর রহমান, মােহাম্মদ আলী, এম, মতিন, সিদ্দিক আহমদ, মুখলেসুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করলেন। কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করার পর দুপুর ২টা নাগাদ সভা শেষ হল। ৪ জন অবাঙালি ছাত্র ছাড়া কোন ছাত্রই ক্লাস করেনি। পরে এই ৪ জনের ভেতর ৩ জনই ক্লাস থেকে বেরিয়ে এল। শুধু ১ জন এল না। সে ড. শাদানির ভাগ্নে। সে। আমাদের সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করল। জুবায়ের নামের এই ছেলেটি ক্লাস থেকে বের হয়ে মধুর দোকানে এসে একটা মারদাঙ্গা মনােভাব নিয়ে আরও ঝামেলা তৈরি করল। খাজা আহসানউল্লাহ, যা তিনি সবসময় করেন, অর্থাৎ আগুনে ঘি ঢালা। শিক্ষক এবং আমরা ছাত্ররা বাধ্য হলাম দুই পক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সম্ভাব্য যুদ্ধ থামাতে। ওয়াদুদের পক্ষে এটাই বুদ্ধিমানের কাজ হত; জোরে কথা না বলা। যে কথায় তার রাগ প্রকাশ পাচ্ছিল। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত লাইব্রেরিতে ছিলাম। ৬টায় হলে ফিরলাম।

ভাের ৫টায় উঠেছি। শুধুমাত্র বেলা ১১টার ক্লাস করলাম । বেলা ১২টায় কোর্টে রওনা হলাম। ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতির কারণে বিনােদের মামলা মুলতবি হয়ে গেল। ওয়াসি মােল্লার দেখা পেলাম না। দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এলাম। পরীক্ষার তারিখ বদলানাের জন্য তৃতীয় বর্ষের সমস্ত ছাত্রদের এক সভা দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ৭৪ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠিত হল। ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে পেশ করার

ওয়াসি মােল্লা তার ছেলেকে নিয়ে এসেছিল। তারা সন্ধ্যায় চলে গেছে। আগামীকাল বিনােদের মামলা। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই।

জন্য একটি স্মারকলিপি লেখার পর তা গৃহীত হল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হলে ফিরলাম বিকেল ৫টায় । বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কমন রুমে ছিলাম । রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে কিংবা বাতাসে আর্দ্রতার জন্য অত্যধিক গরম অনুভূত হচ্ছে। ১৩, ৩, ৫১ ভাের ৫টায় উঠেছি। ক্লাস হল এবং দুপুর ১টায় ক্লাস করলাম । দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে রাষ্ট্র ভাষা কর্ম পরিকল্পনা কমিটির সভায় যােগ দিলাম। সভাপতিত্ব করল মকসুদ আহমদ। শেলি, মতিন, আনােয়ারুল হক, বদিউর রহমান, মােশাররফ হােসেন, ওয়াদুদ, এন. আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিল। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মধুর দোকানে কাটিয়ে হলে ফিরে এলাম। বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কমন রুমে ছিলাম। রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। অনেকক্ষণ ধরে বয়ে চলা মৃদুমন্দ বাতাস হঠাৎ থেমে যাওয়ায় উত্তাপ বােঝা যাচ্ছে তীব্রভাবে। রাতের প্রথমার্ধে বেশ গরম ছিল। রাতের শেষ ভাগ এই মওসুমে যেমন হয়, ঠিক তেমনি। মনােরম ।।
———————————————-
১. আজকের কাগজে দেখা গেল ‘চক্রান্তের অভিযােগে করাচিতে এয়ার কমােডর
এম, কে, জানজুয়াকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। ২. পাঞ্জাবে ৯. ৩. ৫১ থেকে নির্বাচন শুরু হয়েছে।

১৪. ৩. ৫১ সকাল সাড়ে ৭টায় উঠেছি। বেলা ১২টা এবং দুপুর ১টার ক্লাস করেছি। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে আধ ঘন্টার জন্য ৬০ নম্বর রুমে যুব কনভেনশনের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের প্রস্তুতি কমিটির সভায় যােগ দিলাম। শেলি, এস, এম, আলী, বদিউর রহমান, মকসুদ আহমদ, রােকেয়া এবং অন্য একজন মহিলা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কিছুই হল না। বিকেল সাড়ে ৩টায় হলে ফিরলাম । জীবনে প্রথম বারের মত নর্থ ২ নম্বর রুমে মজিদের সঙ্গে দাবার বাের্ড নিয়ে বসলাম এবং খেললাম। ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত বীরের মত খেলেও খেলায় হারলাম । রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক।
৭০

১৫, ৩. ৫১ সকাল সাড়ে ৭টায় উঠেছি। দুপুর ১টার ক্লাস করলাম। দুপুর ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। সােয়া ৩টায় আশরাফের রেস্তোরাঁয় গেলাম। শামসুদ্দীনের সঙ্গে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দাবা খেললাম। রাত পৌনে ৮টায় এস, এম, হলে গেলাম। এস, এম, হল রাষ্ট্রবিজ্ঞান অ্যাসােসিয়েশনের পৃষ্ঠপােষকতায় মক ইউএনও-র আয়ােজন করা হয়েছিল। এই আয়ােজনে সভাপতিত্ব করলেন জনাব মুজাফফর আহমদ চৌধুরী। আলােচনার বিষয় ছিল “কোরিয়া থেকে বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহার করা সঠিক কিনা”। আলােচনার এই প্রস্তাবটি রাখলেন প্রফেসর অমিয় চক্রবর্তী। তিনি প্রতিনিধিত্ব করলেন ইউ এস এস আরকে। কু মিন ট্যাং চায়নার প্রতিনিধিত্ব করলেন প্রফেসর আখলাক রহমান। ভারতকে মুনীর চৌধুরী, পাকিস্তানকে এ. টি. এম. মুস্তাফা, আমেরিকাকে এস, এ. সিদ্দিক, তুরস্ককে কে. জে. নিউম্যান, পােল্যান্ডকে এস, এম, আলী, …. মাসুদুল হক, অস্ট্রেলিয়াকে নূরুল আলম এবং যুক্তরাজ্যকে প্রতিনিধিত্ব করল হাবিবুর রহমান। রাত ৮টায় শুরু হয়ে ১০টায় শেষ হল এই প্রাণবন্ত আলােচনা। উপস্থিতির সংখ্যাও ছিল অনেক। বিরুদ্ধে তিন চারটি নিঃসঙ্গ কণ্ঠ ছাড়া কোরিয়া থেকে বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহার করার সপক্ষে সর্বসম্মতিক্রমে সবাই বলল। রাত সাড়ে ১০টায় হলে ফিরে এলাম। হলে ঢােকার সময় গেটে দারােয়ানরা আমাদের হাত উঁচু করতে বললে আমি প্রতিবাদ করলাম। তখন হাউস টিউটর জনাব সাঈদ নিচে নেমে এলেন এবং আমাদের সবাইকে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি দিলেন। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক।

১৬, ৩, ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ে মুশাররফের রুমে গেলাম। সেখানে ম্যাগাজিন কমিটি এবং রিডিং রুম পরামর্শক কমিটি গঠন নিয়ে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কথা বললাম। খাবার পর বেলা ১২টায় কমন রুমে দাবার বাের্ড নিয়ে বসলাম। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত খেললাম। বিকেল ৫টায় গােসল করে সাড়ে ৫টায় বের হলাম। দেওনার সায়েদ আলীর সঙ্গে রেলওয়ে হাসপাতালের কাছে দেখা হল। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তাকে হামিদ মােক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। সেখান থেকে তাকে বংশালে অ্যাডভােকেট আবদুল হাইয়ের কাছে নিয়ে গেলাম। তার সঙ্গে সায়েদ আলীর বিষয় নিয়ে কথা হল। রাত ৮টায় সােজা হলে ফিরে এলাম। মফিজউদ্দীন বাড়ি থেকে এসে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আমার সঙ্গে দেখা করল। রাত প্রায় সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মজিদের সঙ্গে পাশা খেললাম। রাত ১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক।
১৭, ৩, ৫১ সকাল সােয়া ৬টায় উঠেছি। দুপুর ৩টা ২০ মিনিটের ক্লাস হল এবং তাতে যােগ দিলাম। বুলবুলের বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা এবং পারিবারিক বিষয়াদি সম্পর্কে নির্দেশাদী নিয়ে মফিজউদ্দীন বেলা ১০টা ২০ মিনিটের ট্রেনে বাড়ি চলে গেল। সে আমার কাছ থেকে ২০/- নিল। বেলা সাড়ে ১১টায় বার লাইব্রেরিতে গিয়ে উকিল হাইয়ের সাহায্যে সাইয়েদ আলীর জন্য বলধার ম্যানেজারকে টাকা পাঠানাের বন্দোবস্ত করলাম। কামরুদ্দীন সাহেব, আতাউর রহমান সাহেব, টিটু মিয়া প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাম।

বিকেল ৪টার সময় সায়েদ আলী হলে এল। তার সঙ্গে সাড়ে ৫টায় বংশালে গেলাম। বংশালে এ. হাই সাহেবের কাছে গিয়ে তাকে অনুরােধ করলাম সায়েদ আলীর মামলা করার জন্যে। এই জন্য সে তাকে ১৩/- দিল। ৬টায় ওখান থেকে চলে এলাম। সায়েদ আলী চলে গেল। আমি নবাবপুর থেকে একটা লুঙ্গি কিনে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হলে ফিরে এলাম। রাত ৮টায় আমাদের হলে ফোরাম আলােচনা শুরু হল। প্রফেসর মুজাফফর চৌধুরী পাকিস্তানে শিল্পের জাতীয়করণ নিয়ে আলােচনার সূত্রপাত করলেন। সারাদিন কর্মব্যস্ততার দরুণ অসুস্থ বােধ করায় আমি সেখানে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলাম। সােয়া ৮টায় চলে এসে শুয়ে পড়লাম। মতিন সাহেব ও বাহাউদ্দীনকে দিয়ে সাড়ে ৯টায় প্রভােস্ট আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, আমাদের হলের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বাণিজ্য বিষয়ে একটি রেডিও কথিকা প্রস্তুত করতে। রাত সাড়ে ১০টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক।
————————–
পুনশ্চ : নিগুয়ারির মফিজউদ্দীন খান ৪, ৩, ৫১ তারিখে হঠাৎ মারা গেছেন। মফিজউদ্দীন আজ আমাকে খবরটি জানিয়েছে।

১৮, ৩, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। মেডিকেল স্কুলের ছাত্রদের সমর্থনে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৭টায় আমার সাইকেলের খোঁজে যােগীনগর গিয়ে দেখি সেটি সেখানে নেই। তােয়াহা সাহেব সাইকেল নিয়ে মীর্জাপুর গিয়েছিলেন। ফেরার পথে তিনি সেটা ট্রেনে করে পাঠিয়েছেন। স্টেশন থেকে এখনও সেটা আনা হয়নি। সকাল সাড়ে ৮টায় জিন্দাবাহার গেলাম। কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য নিয়ে তার তৈরি করা প্রস্তাব নিয়ে আলােচনা করলাম। তারপর আমার মামলা নিয়ে কথা বলে যুব কনভেনশন বিষয়ে তার পরামর্শ চাইলাম। তিনি আমাকে এ ব্যাপারে কোন ভূমিকা না রেখে, একজন দর্শক হিসেবে তাতে উপস্থিত থাকতে বললেন। বেলা সাড়ে ১২টায় ফিরে এলাম। দুপুর ১টার সময় ডাক্তার করিমের বাড়িতে তার সঙ্গে দেখা করে সার্কাস দেখার ব্যাপার নিয়ে কথা বললাম। দুপুর ২টায় হলে ফিরে এলাম । বিকেল সােয়া ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. হুদার কাছে আমার কথিকা জমা দিলাম। গােসল করেছি। কিন্তু দুপুরের খাবার খেতে পারিনি। বিকেল সাড়ে ৫টায় আমি মুশাররফ ও এমরানসহ জনাব আবুল হাশিমের কাছে গেলাম। আমাদের বার্ষিক মিলাদে তাঁকে দাওয়াত দিতে। ২৩, ৩. ৫১ তারিখে এই মিলাদ অনুষ্ঠিত হবে। জনাব হাশিম সাহেব দাওয়াত কবুল করলেন। আমাদের পরে ওখানে খয়রাত হােসেন ও আনােয়ারা খাতুন এলেন। আমরা রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কথা বললাম। প্রফেসর কাশিম সাহেব ওখানে আসার পর আমরা সবাই চলে এলাম। রাত সােয়া ৯টায় হলে ফিরলাম। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দিন পরিষ্কার। একটানা বাতাসসহ মেঘে ঢাকা রাতের আকাশ। সকাল সােয়া ৬টায় উঠেছি। বেলা ১টার ক্লাস করলাম। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করিনি। বেলা পৌনে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে গেলাম। বকেয়া ৭ম কিস্তি পরিশােধ করে ফিরে এলাম। আবার দুপুর ২টার সময় বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে গেলাম স্টাইপেন্ডের জন্য। কিন্তু ক্যাশিয়ারকে না পেয়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এলাম। রেডিও পাকিস্তানের জনাব নূরুল ইসলাম ড. হুদার রুমে বসে কথা বলছিলেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় মতিন সাহেব ও দলিলুর রহমানসহ জনাব নূরুল ইসলামের সঙ্গে রেডিও অফিসে গেলাম। সেখানে আমাদের কণ্ঠ যাচাই করে দেখা হল। এরপর হলে ফিরে এলাম। হলে ফিরে দেখি আবদুল খান আমার জন্য অপেক্ষা করছে। রাত ৮টায় তাকে নিয়ে হামিদ মােক্তারের কাছে গেলাম। তার সঙ্গে আধ ঘন্টার মত কথা বলে চলে এলাম।
ফেরার পথে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তােয়াহা সাহেবের বাসা থেকে আমার সাইকেল নিয়ে সােজা হলে ফিরে এলাম। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : রাত থেকে অল্প বিরতি দিয়ে সারাদিনই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বাতাসে জলীয়বাষ্প। যে কোন মুহূর্তে বৃষ্টি হতে পারত। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটার মধ্যে মাত্র কয়েক ফোটা বৃষ্টি হল। তারপর একই রকম।

২০. ৩. ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। ক্লাস হল। দুপুর ১টার ক্লাস করলাম। সকাল ৮টায় হামিদ মােক্তারের কাছে গেলাম। তার শাশুড়ি মারা গেছেন। তাই আমাদের কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে যেতে হল। সাড়ে ৮টায় তার কাছে গেলাম। তাকে মামলা সম্বন্ধে জানালে তিনি মােকদ্দমার সার সংক্ষেপ সাজিয়ে দিলেন। আবদুল খান কেরানির সঙ্গে কোটে গেল। আমি বৃষ্টিতে ভিজে বেলা ১১টায় হলে। ফিরলাম। ক্লাসের পর দলিলের সঙ্গে রেডিও অফিসে গিয়ে আমাদের কথিকার জন্য চুক্তিপত্র সই করে হলে ফিরে এলাম। দুপুর সাড়ে ৩টায় বার লাইব্রেরিতে জনাব কামরুদ্দীন সাহেবের কেরানির কাছ থেকে শুনলাম মামলাটি মুলতবি হয়ে গেছে এবং দুপুর ১টা ২০ মিনিটে আবদুল খান বাড়ি চলে গেছে। রথখােলায় এফাজউদ্দীনকে পেলাম। সে আমাকে চা খাওয়াল এবং কথা দিল শুক্রবার লজিংয়ের ব্যাপারে আমার সঙ্গে সে দেখা করবে। পৌনে ৬টায় তার কাছ থেকে চলে এলাম। এরপর উদ্দেশ্যহীন ভাবে মগবাজারের ভেতর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে কাওরান বাজার পর্যন্ত গিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রেসকোর্সের পাশ দিয়ে ময়মনসিংহ রােড ধরে হলে ফিরে এলাম। রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কমন রুমে ছিলাম।
৭৫

রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আকাশ মেঘাবৃত হয়েই রয়েছে। সকাল ঠিক সাড়ে ৯টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি পড়ল। তারপর আর বৃষ্টি হয়নি। এই ঋতুর প্রথম মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের পর নির্মল আবহাওয়া। প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের পর বৃষ্টি থেমে গেল। ২১. ৩. ৫১ সকাল সাড়ে ৭টায় উঠেছি। দুপুর ১টার ক্লাস করলাম না। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গােসল এবং খাবার সময়টুকু বাদ দিয়ে আমি আমাদের হলের বার্ষিক মিলাদের জন্য অতিথিদের নাম লিখলাম। সাড়ে ১১টার সময় ওয়ারিস আলী ও চেরাগ আলী মােড়ল এসে জানাল, আমি যেন অবশ্যই বাড়ি যাই। কারণ বুলবুলের বিয়ের কথাবার্তা বলতে পিরিজপুর থেকে মেহমান আসবে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম দুপুর ১টা ২০ মিনিটে বাড়ি রওনা হব। তাই ক্লাসে যাওয়া থেকে বিরত রইলাম। বেলা সােয়া ১২টায় বার লাইব্রেরিতে গিয়ে কামরুদ্দীন সাহেবকে আমন্ত্রণ পত্র দিলাম। তাঁর কাছে চৌধুরী সাহেব, এ. রহমান এবং জহিরুদ্দীন সাহেবের আমন্ত্রণ পত্রও দিলাম। বেলা পৌনে ১টায় হলে ফিরে এলাম। বাড়ির পথেদুপুর ১টা ২০ মিনিটের ট্রেনে ওয়ারিস আলী ও চেরাগ আলীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি রওনা হলাম। শ্রীপুরে পৌছে চান্দে আলীকে একটি রেজিস্টার্ড চিঠি দিলাম এবং কয়েক মিনিটের জন্য পােস্ট মাস্টার মুস্তাফার সঙ্গে কথা বললাম। সাড়ে ৩টায় বাড়ি রওনা হয়ে সােজা বাড়ি পৌছলাম। বাড়িতে গিয়াস, নাসা, তােফাজ্জলের বাবা, রাফি, তরগাঁওয়ের চাচা, হাকিম ভাইসাহেব, দিগধারের তালুইসাহেব প্রমুখকে দেখলাম। রাত ৯টার দিকে দিগধার ভাইসাহেব ও মওলানা সাহেবের সঙ্গে পিরিজপুরের মেহমান, ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট, হাজি সাহেব, একজন পণ্ডিত ও দু’জন বালক এল। তাদের যথেষ্ট সমাদরের সঙ্গে খাওয়ানাে হল। রাত প্রায় ১২টায় কাজের কথা শুরু হল। কিন্তু বর পক্ষ থেকে আলাপের ধারা তেমন উৎসাহব্যাঞ্জক মনে হল না। এছাড়াও তারা বিশ্বাসযােগ্য কোন আশ্বাস না দিলে আমরাও কোন প্রতিশ্রুতি দিতে পারি না। কাজেই কোন সিদ্ধান্ত হল না।। সারা রাত এক মুহূর্তের জন্যও ঘুমাইনি। অন্যান্যদের মধ্যে দিগধার মমতাজউদ্দীন, আবদুল খান, মামু, কুদুস, সােবহান, আজি, মফিজউদ্দীন মুনসি উপস্থিত ছিলেন। রাতে ঘুমাতে গেলাম না। আবহাওয়া : অপরাহ্ন থেকে সারারাত ঝড়াে ঠাণ্ডা হাওয়া। পুরাে রাত হালকা মেঘ চাঁদকে ঢেকে রেখেছিল। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মেঘ সরে গেল। বিশেষ দ্রষ্টব্য : গতকাল কিংবা তার আগে এই এলাকায় এই মওসুমে কোন বৃষ্টি হয়নি। বিশেষ দ্রষ্টব্য : ১. সকাল ৯টা নাগাদ তােয়াহা এসে বলেছিলেন, গত শনিবার শহীদ তার হাতিয়ার গ্রামের বাড়িতে মারা গেছে। (১৬, ৩, ৫১) (পুকুরে ডুবে)। ২. আজ রাতে আকবর আলী মনসুর আলী মােড়লের বাড়ি গিয়েছিল। মনসুর আলীর মেয়ের সঙ্গে তার ছেলে জাফর আলীর বিয়ের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কথা বলতে। – ঢাকার পথে – গত রাতে ঘুমাইনি। আজ ক্লাস করলাম না। মেহমানদের বাড়িতে রেখে সকাল সাড়ে ৭টায় আমি শ্রীপুর রওনা হলাম। রহমান পণ্ডিত আমার সঙ্গে এল। আমি তাকে বললাম, আমরা ছেলেটিকে সাহায্য করতে অপারগ। সে বলল, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর তারা জানাবে। সকাল সােয়া ৯টার ট্রেনে রওনা হয়ে ১১টা ২৫ মিনিটে ঢাকা পৌছলাম। শ্রীপুরে নিয়ামত সরকার, মজিদ মােড়ল এবং ট্রেনে এফ, মান্নান, বােরহান, মতিন, খাজি।

বেপারি, কুরিয়াদির জব্বার, মওলানা ওয়ারিস আলীর সঙ্গে দেখা হল। শেষের দু’জন ঢাকা এল। গােসল করে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ঘুমালাম। দুপুরের খাবার খেলাম না। বিকেল ৬টায় রেডিও অফিসে গেলাম। আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হল সন্ধ্যা ৭টায়। পাকিস্তানের অর্থনীতির উন্নতি বিষয়ে আলােচনা হল। আলােচনায় নেতৃত্ব দিলেন ড. নূরুল হুদা। আমি বললাম বাণিজ্যের ওপর। কৃষির ওপর দলিল আর শিল্পের ওপর বলল মতিন। সােয়া ৭টা পর্যন্ত আলােচনা হল। রাত পৌনে ৮টায় হলে ফিরলাম। রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কমন রুমে ছিলাম। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত বাতাস ও হালকা শিলাসহ বেশ ভাল বৃষ্টি হল। শীতল পরিবেশ। আকাশ পরিষ্কার নয়। বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এই বৃষ্টি ফসলের জন্য খুবই ভাল কাজ করবে। ২৩. ৩. ৫১ সকাল ৯টায় উঠেছি। আজ ফজলুল হক মুসলিম হলে বার্ষিক মিলাদ। বেলা সােয়া ১১টায় হল থেকে বের হলাম । জনাব আবুল হাশিমকে তার দাওয়াতের কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম। ডাক্তার করিমের সঙ্গে দেখা করে তাকে মিলাদে আমন্ত্রণ জানালাম। জলিল ও হাফিজ বেপারিকেও দাওয়াত দিলাম। জহিরুদ্দীন সাহেবের কাছে গেলাম এবং তাঁকেও দাওয়াত দিলাম। দুপুর ১টায় হলে ফিরলাম। দুপুর ২টায় আবার বের হলাম। রেজাই করিম সাহেবের বাসায় গিয়ে তাঁকে দাওয়াত দিলাম এবং সেখান থেকে শামসুল হক সাহেবের ওখানে গেলাম। তার সঙ্গে ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত কথা বলে সােজা হাশিম সাহেবের বাসায় গেলাম। তাকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় হলে এলাম। এই সময় অনুষ্ঠানও শুরু হল। প্রথমে ড. শহীদুল্লাহ, তারপর আবুল হাশিম সাহেব বললেন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় অনুষ্ঠান শেষ হল। অতিথিদের ফিরনি এবং জর্দা দিয়ে আপ্যায়িত করা হল।

কামরুদ্দীন সাহেব এবং জহিরুদ্দীন সাহেব এসেছিলেন। রাতে আবদুল হাকিম আমার রুমে এল এবং কথায় কথায় ঝগড়া বাধাল। রাত সাড়ে ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আকাশ মেঘ ও জলীয় বাষ্প মুক্ত নয়। রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক পশলা বৃষ্টি হল। পরিবেশ শীতল।। ২৪.৩, ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। আজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ-হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হােলি উৎসব। সারাদিন হলেই ছিলাম। কমন রুমে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পাশা খেললাম এবং কাগজ পড়লাম। মাঝে কিছু সময় এদিক সেদিক হেঁটেছি এবং খাবার খেয়েছি। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : গতকাল থেকে বৃষ্টিস্নাত পরিবেশ। সজল মেঘ ভাসছিল সারাক্ষণ। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হল। পরে আর বৃষ্টি হয়নি। তবে আকাশ যেভাবে মেঘাচ্ছন্ন হচ্ছে তাতে পরবর্তীতে বৃষ্টির সম্ভাবনা থেকেই যায়। শীতল পরিবেশ। ২৫. ৩. ৫১ সকাল ৬টায় উঠলাম। আজ ক্লাস হল। দুপুর ১টার ক্লাস করলাম। দুপুর দেড়টায় ১০০ নম্বর রুমে নিন্দাজ্ঞাপন সভায় যােগ দিলাম। সভায় বদিউর রহমান সভাপতিত্ব করল। সভায় উপস্থিতি ছিল বেশ ভাল। মেডিকেল ছাত্রদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের স্বেচ্ছাচারী কর্মপন্থা ও গত রাতে তাদেরকে মেস থেকে পুলিশ দিয়ে বিতাড়িত করার জন্য নিন্দাজ্ঞাপন করে প্রস্তাব গৃহীত হল। দুপুর আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অফিসে রাষ্ট্র ভাষা কর্মপ্রক্রিয়া কমিটির সভায় যােগ দিলাম। সভায় সভাপতিত্ব করল শেলি। খসড়া কমিটি স্মারকলিপি পেশ করলে সেটা গৃহীত হল। ঠিক হল স্মারকলিপি ইস্ট বেঙ্গলের এম.সি.এ. এবং এম.এল.এ.দের কাছে পাঠানাে হবে। সােয়া ৩টায় মিটিং শেষ হল। এরপর হলে ফিরে এলাম। বিকেল ৪টায় বাইরে বের হলাম। প্রথমে ইসলামপুর গিয়ে আফসু ও দফতুর জন্য জুতাে কিনলাম। তারপর পাটুয়াটুলি থেকে তাদের জন্য বই কিনলাম। আরমানিটোলায় এসে দেখলাম এসডিও (দক্ষিণ) এবং সিটি এস, পি, পুলিশ ফোর্সের সহযােগিতায় মেডিকেল কলেজের ছাত্রীদের তাদের হােস্টেল থেকে বিতাড়িত করছে। পুলিশ সাড়ে ৫টার মধ্যে তাদের সবাইকে বের করে দিল। ৬টার। দিকে ইসলামপুরের ভেতর দিয়ে আমি ডাক্তার করিমের কাছে গেলাম। তাকে আমি আমার অসুবিধার কথা জানিয়ে আমার জন্য একটা চাকরি যােগাড় করে দিতে বললাম। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ হলে ফিরে এলাম। রাত সাড়ে ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সহনীয় পরিবেশ। দিনেরবেলা মেঘাচ্ছন্ন আকাশে মাঝে মাঝে সূর্যের ঝিলিক। বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ২৬. ৩. ৫ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। আজ কোন ক্লাস করিনি। মফিজউদ্দীন সকাল ৮টায় এসে ৯টায় চলে গেল। বেলা ১১টায় কোর্টে হাজিরা দিলাম। হাজিরা নথিভুক্ত করে ২৫. ৪. ৫১ এবং ২৬, ৪. ৫১ তারিখ বিকেল সাড়ে ৪টায় সাক্ষ্য দানের তারিখ ও সময় ঠিক হল। নােয়ব আলী আজ কোর্টে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেল। আজিমউদ্দীন একবার কোর্টে এসেছিল। কোর্টে এস. এ. রহিম, সাদির, হামিদ সাহেব, কামরুদ্দীন সাহেব, আতাউর রহমান সাহেব, হাসান ও কফিলউদ্দীনের সঙ্গে দেখা হল। বিকেল পৌনে ৫টায় কোর্ট থেকে বের হলাম। পাটুয়াটুলি থেকে ইনস্ট্রমেন্ট বক্স ইত্যাদি কিনে ৬টায় হলে ফিরে এলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ৩৬ র্যাংকিন স্ট্রীটে গিয়ে তােয়াহা সাহেবকে এ. রহিমকে দেয়ার জন্য
৮০

১ টাকা দিলাম। শুনলাম ১৪৪ ধারা বার লাইব্রেরি পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। হলে ফেরার পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডাক্তার করিমের সঙ্গে তার ফার্মেসিতে গিয়ে দেখা করে এলাম। মুন্নাকে সঙ্গে নিয়ে রাত ৯টায় মফিজউদ্দীন এল। সে বাড়ির জন্য কেনা বিভিন্ন জিনিস ও জুততা নিয়ে গেল। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মাঝারি বৃষ্টি হল। সারাদিন মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। শুধু বিকেলে একবার সূর্য উকি দিল। বাতাসে ভ্যাপসা ভাব। ২৭. ৩, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। দুপুর ১টার ক্লাস করলাম। দুপুর আড়াইটায় যুব কনভেনশনে যােগ দেয়ার জন্য জিঞ্জিরা বাজারে গেলাম। গিয়ে দেখি উদ্যোক্তরা সব তালগােল পাকিয়ে ফেলেছে। তারা কেউ বিকেল ৬টায়, কেউ সাড়ে ৬টায় হাজির হল। অথচ দুপুর থেকেই সেখানে প্রায় সমস্ত ডেলিগেট এখানে সেখানে ঘােরাঘুরি করছিল। এরা দুপুরে এসেছিল কারণ, কনভেনশন শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুর ২টায়। ডেলিগেটদের উপস্থিতি ছিল প্রায় ২শ’র মত। কনভেনশন উদ্বোধন ঘােষণা করলেন পাকিস্তান অবজারভারের জনাব আবদুস সালাম। সভাপতিত্ব করলেন সিলেটের মাহমুদ আলী। কে, জি, মুস্তাফা আনীত প্রস্তাবের ওপর আলােচনা করলেন ফেনীর খায়েজ আহমদ। পুলিশ প্রতিবেদকরা উপস্থিত ছিল। ৩ ঘন্টা পর রাত ১০টায় মিটিং শেষ হল। প্রতিনিধি অধিবেশন শুরু হল রাত ১১টায়, নদীতে ৪টি নৌকার ওপর। খসড়া গঠনতন্ত্র গৃহীত হল। পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগ গঠিত হল। রাত আড়াইটায় অধিবেশন শেষ হল। তারপর সবাই মিটফোর্ড ঘাটে নেমে যে যার গন্তব্যে রওনা হল। মুশাররফ, নূরুল হক, মজিদ, সালাহউদ্দীন, আমজাদ এবং আমি ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের এক স্টলে চা খেলাম এবং রাত ৪টায় হলে ফিরলাম। রাতের খাবার খাইনি।

২৮, ৩, ৫১ সকাল সাড়ে ৮টায় উঠেছি। আজ ক্লাস করিনি। বেলা সােয়া ১২টায় স্টেট ব্যাংকে গিয়ে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র থেকে দেয়া ১৫ টাকার চেক ক্যাশ করলাম। দুপুর ১টায় ব্যাংক থেকে বের হলাম। ব্যাংকের কাউন্টারে মুনীর চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হল। দেড়টার দিকে মদন মােহন বসাক রােডে আশুর সঙ্গে দেখা হলে তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে নবাবপুর রেলওয়ে ক্রসিং পর্যন্ত গেলাম । বিকেল ৩টায় তাকে সেখানে রেখে ৩৬ র্যাংকিন স্ট্রীটে গেলাম।

ভােররাত সাড়ে ৪টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর পর্যন্ত আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বাতাসে জলীয় বাষ্প। রাত কম। বেশি পরিষ্কা। নমনীয় পরিবেশ। বিকেল সাড়ে ৪টায় ৪৭ ঠাঠারি বাজারে পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগের কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হল। সভাপতিত্ব করলেন জনাব মাহমুদ আলী। প্রায় ৩০ জনের মত সদস্য উপস্থিত ছিল। জনাব মাহমুদ আলীকে সভাপতি এবং অলি আহাদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫ জন সদস্য ও ৮ জন অফিস কর্মকর্তা সমন্বয়ে নির্বাহী কমিটি গঠিত হল। মিটিং শেষ হল ৬টায়। রাতে প্রতিনিধিদের জন্য তেজগাঁওয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সন্ধ্যা ৭টায় ওয়াদুদকে ৯৪ নম্বর নবাবপুরে পেলাম। সে মেডিকেল ছাত্রদের জন্য একটি মিটিং করছিল। রাত সােয়া ৮টায় ওর সাথে আমার লজিংয়ের জন্য ৩ নম্বর কে. জি, গুপ্ত লেনে গেলাম। বাড়ির মালিক অনুপস্থিত থাকায় রাত সাড়ে ৮টায় সােজা হলে চলে গেলাম। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : পরিস্কার দিন ও রাত। বিশেষ করে দিনে তাপমাত্রা একটু বেশি ছিল। সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। ক্লাস হল এবং দুপুর ১টার ক্লাস করলাম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুপুর ৩টায় হলে ফিরলাম। বিকেল সাড়ে ৩টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। আজিজ আহমদ সেখানে ছিলেন। কামরুদ্দীন সাহেবকে জনাব ওবায়দুল্লাহর বদলির বিষয়ে বললাম। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে বার লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে ৩৬ র্যাংকিন স্ট্রীটে গেলাম। সেখানে যুব লীগ নির্বাহী কমিটির সভা শুরু হল ৬টায়। জনাব মাহমুদ আলী সভাপতিত্ব করলেন। ১৮ জনের মত সদস্য উপস্থিত ছিল। সাংগঠনিক ও অর্থ বিষয়ে প্রস্তাব নেয়া হল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সভা শেষ হল। এরপর সেখান থেকে সােজা ৩ নম্বর কে, জি গুপ্ত লেনে গেলাম । ওখানে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বাড়ির লােকজনদের সঙ্গে কথা বললাম। তারা ৬ এপ্রিল শুক্রবারের মধ্যে আমাকে লজিংয়ে যােগ দিতে অনুরােধ করল। আমিও রাজি হলাম। রাত ৮টা ৫০ মিনিটে হলে ফিরে এলাম।

রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বাতাসে জলীয় বাষ্প অনুভূত হচ্ছে। রৌদ্রালােকিত পরিষ্কার দিন। দিন শেষে মেঘ জমতে শুরু করে তা আরও নিবিড়ভাবে পঞ্জিভূত হয়েছে ভােরে। ৩০, ৩. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সাড়ে ৭টায় এফাজউদ্দীন তার অফিসে যাবার পথে আমার সঙ্গে দেখা করে আমার লজিং বিষয়ে এবং তার বিয়ে নিয়ে এক ঘন্টার মত কথা বলল। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বেশির ভাগ সময় হলের রান্না ঘরে ছিলাম। এর মধ্যে দুপুর ২টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আমাদের অ্যাসেমব্লি হলে বৃটিশ ইনফরমেশন সার্ভিসের ছবি ‘পঞ্চম হেনরি’ দেখেছি। তারপর ডাক্তার করিম ও তােয়াহা সাহেবের কাছে গিয়ে কাউকে না পেয়ে সােজা ডিএসএ মাঠে গেলাম। বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মাঠে ছিলাম। সেখানে আমাদের হলের ভলি টিমের সঙ্গে পুলিশ টিমের লীগ খেলা হল। খেলায় পয়েন্ট ভাগাভাগি হল। কাগুর বাপ বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে আমার সঙ্গে দেখা করেছিল। কিন্তু তখন আমি তাকে সময় দেইনি। রাত ৮টা থেকে হলের মাসিক ভােজ সভা (ফিস্ট) শুরু হল। মুশাররফ, মজিদ, মুশতাক, আনিস, হাকিম আহমদ ও আমি খাবার পরিবেশন করলাম। সাড়ে ১০টায় রুমে ফিরলাম। সব মিলিয়ে সফল আয়ােজন। রাত ১১টা নাগাদ তােয়াহা সাহেব এলেন। তিনি আজ রাতে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। রাত সাড়ে ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত হালকা বৃষ্টি হল। সারাদিন রাত মেঘাচ্ছন্ন। বাতাসে জলীয় বাষ্প। রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ল।

৩১. ৩. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। দুপুর ২টা ২০ মিনিট এবং ৩টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম । আজ সকালে আবদুল হাকিম ভাইসাহেব আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়েছেন। তিনি শমসেরউদ্দীন সরকারের ছেলের সঙ্গে মরিয়মের বিয়ের ব্যাপারে কথা বললেন। আমি তাকে গােপনীয়তার সঙ্গে একটি বৈঠক আয়ােজন করতে বললাম।। সকাল ৭টা নাগাদ কাগুর বাপ এল। আমি তাকে বললাম আগামী বুধবার আমি বাড়ি যাব। সে গেসুর জমি ফেরত চায়। বিকেল সাড়ে ৪টায় বাইরে বেরিয়ে অলি আহাদের সঙ্গে দেখা করলাম। তাকে জলিলের বিল পাওয়ার ব্যাপারটা জানালাম। তাকে বললাম, তােয়াহা সাহেব এ ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য জানতে চেয়েছেন। পৌনে ৬টায় ওখান থেকে বের হয়ে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গেলাম। সেখানে ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বসেও ডাক্তার করিমের সঙ্গে কথা বলতে পারলাম না। এরপর সােজা হলে চলে এলাম। ১০০ নম্বর রুমে ৩য় বর্ষের ছাত্রদের এক সভা হল। আমি সভাপতিত্ব করলাম। ওয়াহাব। পুরাে বিরতির সময়টায় পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের ব্যাপারে কথা বলল। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবাহওয়া : সারাদিন রাত আকাশে মেঘ ভাসছিল। বাতাসে জলীয় বাষ্প। দুপুর দেড়টার দিকে হঠাৎ পাঁচ মিনিট বা ওই রকম সময়ের জন্য এক। পশলা বৃষ্টি হল। স্যাঁতসেঁতে ভাব চলছেই।
৮৫

– রোববার –
১, ৪, ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১টার ক্লাস করলাম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাড়ে ৩টায় হলে ফিরেছি। বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মশিউল, শামসুল আলম ও শফিউল হকের সঙ্গে পাশা খেললাম। রাত ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি। বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। হালকা বৃষ্টি হয়েছে। রাত কমবেশি পরিষ্কার। বাতাসে আর্দ্রতা চলছেই। ২, ৪, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। আজ কোন ক্লাস হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় হলে ফিরেছি। বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মজিদের সঙ্গে পাশা খেললাম। দুপুর আড়াইটায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে আতাউর রহমান সাহেব, জমির, কফিলউদ্দীন চৌধুরী, টিটু মিয়া, শামসুল হুদা, জহিরুদ্দীন সাহেব, সাহেব আলী বেপারি এবং কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। কামরুদ্দীন সাহেব জানালেন যে,

গত পরশু রাতে পাকিস্তান অবজারভার অফিসে মাহমুদ আলী এবং অন্যান্যদের সামনে অলি আহাদ তার সঙ্গে যুব কনভেনশনের ব্যাপারে অশােভন আচরণ করেছে। আমি আজ বিকেলেই অলি আহাদের কাছে কামরুদ্দীন সাহেবের অবস্থান ব্যাখ্যা করলাম। তাতে সে সন্তুষ্ট হয়েছে বলেই মনে হল। কিন্তু তারপরও সে একই রকম আচরণ করল! সহনশীল না হলে তার পক্ষে কোন সংগঠন করাই সম্ভব হবে না। শমসেরউদ্দীন সরকার তার ছেলের সঙ্গে আমার বােনের বিয়ের জন্য যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা নিয়ে কামরুদ্দীন সাহেবের ক্লার্ক শামসুদ্দীনের সঙ্গে কথা হল। বিকেল ৫টায় বার লাইব্রেরি থেকে বের হয়েছি। ডা, করিমের খােজ করলাম। অলি আহাদের বাসাতেও গেলাম। কিন্তু তাকে পেলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কেমব্রিজ ফার্মেসিতে করিমের সঙ্গে দেখা হল। সে আমাকে ৭০/দিল এবং জানাল, কোয়েটাতে ন্যাশনাল সার্ভিসে যােগ দেয়ার জন্য তাকে ডাকা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের আক্কাস সেখানে উপস্থিত ছিল। তাকে আমার কেসের ব্যাপারে। বিস্তারিত বললাম। রাত ৮টায় হলে ফিরেছি। রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বিকেল ৪টায় আধ ঘন্টার জন্য চমৎকার এক পশলা বৃষ্টি হল। বাতাসে জালীয় বাষ্পের প্রভাব আছেই। আকাশ সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয়নি। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। ৩, ৪, ৫ সকাল ৬টায় উঠেছি। দুপুর ১টার ক্লাস করলাম। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ব্যাংকিং বিষয়ে অতিরিক্ত আর একটি ক্লাস করলাম। সকাল সাড়ে ৭টায় ৩ কে জি গুপ্ত লেনে গিয়ে নিশ্চিত করে এলাম যে, আমি আগামী শুক্রবার তাদের বাসায় উঠব। সকাল সাড়ে ৮টায় অলি আহাদের কাছে গেলাম। তাকে বললাম, যুব সম্মেলনের বিষয়ে তার ব্যবহারে কামরুদ্দীন সাহেব মর্মাহত হয়েছেন। ৯টার দিকে সে কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা হয়ে গেল।

ডা. করিমের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করলাম। তখন মুন্সিগঞ্জের আক্কাস একজন রােগী নিয়ে সেখানে ছিল। শুক্রবার দিন অমার লজিংয়ের বাসায় যাবার বিষয়টি করিমকে জানালাম। সােয়া ৯টায় হলে ফিরেছি। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসে পরীক্ষার ফিসহ ৮ম কিস্তির টাকা জমা দিয়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরলাম। আবার সােয়া ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে মােগলটুলি গেলাম। সেখান থেকে একটা বড় ট্রাঙ্ক কিনে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হলে ফিরেছি। বিকেল ৬টা ২০ মিনিটের দিকে সদরঘাট হয়ে বাবুবাজার গেলাম। সেখান থেকে বাচ্চাদের জন্য বইপত্র কিনে সন্ধ্যা ৭টার দিকে হলে ফিরেছি। রাত ৮টা থেকে প্রায় ৯টা পর্যন্ত আবদুল হাকিমের সঙ্গে তার রুমে বসে কথা বললাম। তাদের ছেলে শামসুদ্দীনের বিয়ের যােগসূত্রে গুল মােহাম্মদ বেপারির পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হল। হাকিম বিষয়টি জানত। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : এখনও বাতাসে আর্দ্রতা রয়েছে। বিকেলে মনে হচ্ছিল বৃষ্টি হবেই। ৪, ৪, ৫১ – বাড়ির পথে – ভাের রাত ৩টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৬টা ৫ মিনিটের ট্রেনে বাড়ি রওনা হয়েছি। হাসান আমার সঙ্গে আমাদের বাড়ি পর্যন্ত এল। বেলা ১১টার দিকে বাড়ি পৌঁছেছি। শমসেরউদ্দীন সরকার, আবদুল হাই এবং নিগুয়ারির মুরশিদ মিয়া ও মান্নাফ ভাইসাহেবকে বাড়িতে পেলাম। তারা সবাই বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বিকেলে সবাই চলে গেলেন। মুরশিদ মিয়ার মেয়ে পছন্দ হয়েছে। তিনি অন্য কোথাও বিয়ের সম্বন্ধ করতে নিষেধ করলেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা বিয়ের আয়ােজন করবেন বলে জানিয়ে গেলেন। শমসেরউদ্দীন সরকারও মেয়ে দেখে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন। তিনি তখনই এ বিষয়ে আমার সম্মতি চাইলেন। কিন্তু আমি আরও তথ্য জানার জন্য বিষয়টি এড়িয়ে গেলাম।

সন্ধ্যার পর আবদুল খানের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করে হাজি বাড়ির বিষয়ে কথা বললাম। রাত সাড়ে ৯টায় বাড়ি ফিরলাম। জব্বার ও সােবহান রাতে আমার সঙ্গে আমাদের বাড়ির বাংলা ঘরে থেকে গেল। কিন্তু কুদ্স ও অন্যান্যরা জব্বারকে পরে বাড়িতে নিয়ে গেল। আবহাওয়া : মৃদুমন্দ বাতাস। রাত দিন পরিষ্কার। বেশ গরম। ৫, ৪, ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সকালে ঠাকুরা বিলে গিয়েছিলাম। আবদুল খান, আক্কার বাপ, গােসিঙ্গার চান্দু, চিনির বাপ মামাকে নিয়ে আকুর বাপ বাড়িতে এল। সেই সময় হাকিম মিয়া, রজব আলীও উপস্থিত ছিল। হােসেন মৃধা, কাগুর বাপ এবং গেসূও উপস্থিত ছিল। আমি এই বছর গেসুকে জমি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানালাম। কেন জমি ফেরত দেয়া যাবে না তাও বললাম। প্রধান কারণ হল, এ বছর জমি ফেরত দিলে গেসু লাভবান হবে না। উপস্থিত সবাই বলল যে, অন্তত এই বছর আমার ওপর এ ব্যাপারে চাপ দেয়া ঠিক হবে না। দুপুর ১টার দিকে মিটিং শেষ হল। চান্দু দুপুরে আমাদের বাড়িতেই খেল। আমি ও হাকিম মিয়া দুপুরে এক সঙ্গে খেলাম। বিকেলে ওয়ারিস আলী আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। পরে তােফাজ্জলের বাবা ও সন্ধ্যায় সিরাজের বাবাও এসেছিল। বিকেলে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে দিগধার তালুইসাহেব আমাদের বাড়ি হয়ে গেলেন। আজ দিগধায় আমার বড় বােনের মেয়ে সন্তান হয়েছে। মাকে সেখানে যেতে হবে। মা যে কদিন দিগধায় থাকবেন সে কদিন আমার নানীর বােন আমাদের বাড়িতে। থাকবেন। আফসু বিকেলে বাড়িতে এল। কিন্তু দফতু ফেরেনি। খেয়াঘাটের মজিদ প্রায় দুই বছর পর প্রথম বারের মত আমাকে জানাল যে, ওয়ারিস আলীর জন্য তার কাছ থেকে আমি যে ৫০/- নিয়েছিলাম সে টাকা তাকে ফেরত দেয়া হয়নি। সে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আমার সঙ্গে দেখা করেছিল।
৯০

আবহাওয়া : সারাদিন রাত আকাশ পরিষ্কার। বেশ গরম। সুন্দর বাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল। রাতের শেষ ভাগে আকাশে মেঘ জমেছিল। বি. দ্র : এ বছর আমাদের এলাকায় বৃষ্টি সময় মত হয়েছে। এই বৃষ্টির ফলে বিশেষ করে নিচু জমিতে বীজ বপন বেশ সুবিধাজনক হয়েছে। একই কারণে বিশেষ করে ধানের চারা লাগানােও প্রায় শেষ হয়ে গেছে। যদি কয়েক দিনের মধ্যে আবার বৃষ্টি হয় তবে ফসলের উপকার হবে। আর যদি তা না হয় তবে ফসলের ক্ষতি হবে। ৬, ৪, ৫১ – ঢাকার পথে – ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বাড়ি থেকে সকাল ৭টায় শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। বাজারে শ্রীপুর স্কুলের হেড মাস্টার চা খাওয়ালেন। সাড়ে ৯টায় ট্রেন ছাড়ল। বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা স্টেশনে পৌছলাম। শ্রীপুরের হােসেন মােড়ল, কালু মােড়ল, মজিদ মােড়ল, আজিজ মােড়লের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কিন্তু সালেহ আহমদ মােড়লের দেখা পাইনি। বিকেল ৩টায় সব জিনিসপত্রসহ ৩ কে জি গুপ্ত লেনে আমার লজিংয়ের উদ্দেশে বের হয়েছি। তারা গেটেই আমাকে সমাদরে স্বাগত জানাল। হল ছেড়ে আসায় ভীষণ অস্বস্তি বােধ করছিলাম। রাত ৯টার দিকে খাবার খেলাম। ঘুমাতে গেলাম রাত সাড়ে ১০টার দিকে। সহকারী হাউস টিউটর শামসুল হক, বদিউর, তায়েব দারােয়ান প্রমুখ আমাকে জানাল জনাব সাঈদ আমাকে দেখা করতে বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আমি যদি আর্থিক সমস্যার জন্য হল ছেড়ে থাকি তবে তিনি আমাকে টাকা দিতে রাজি আছেন। আবহাওয়া : দিন রাত বেশ পরিষ্কার। যদিও বেশ গরম, তবু সুন্দর বাতাস। বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা আছে।

৭. ৪. ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। আজ ক্লাস হল এবং দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম । বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডব্লিউ ছাত্রের সঙ্গে ওয়ারী পর্যন্ত গেলাম। তারপর অলি আহাদের কাছে গেলাম। ২১ এপ্রিল ইকবাল দিবস পালন করার জন্য বিজ্ঞপ্তি টাইপ করায় তাকে সহায়তা করলাম। খসড়া গঠনতন্ত্র পর্যালােচনার জন্য বিকেল ৪টায় যােগীনগরে যুব লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা হবার কথা ছিল। সেখানে মাকসুদ আহমদ, তােসাদ্দেক আহমদ এবং আরও দু’জন এসেছিল। কেমব্রিজ ফার্মেসিতে ডা, করিমের সঙ্গে দেখা করে তাকে আমার লজিংয়ের খবর দিলাম। সাইকেলের একটা সিট কভার কিনলাম। ফার্মেসিতে ডা, ফজলুল হকের সঙ্গে প্রায় চার বছর পর দেখা হল। রাত সাড়ে ৮টায় লজিংয়ে ফিরলাম। লজিংয়ে ফিরে হাবিবুর রহমান নামে একজনের সঙ্গে দেখা হল। তিনি আমার আগে এখানে ছিলেন। তিনি আইনের ছাত্র। রাত ৯টার দিকে তিনি চলে গেলেন। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দিন রাত পরিষ্কার। দিনে তীব্র রােদ ছিল। আজ বাতাস নেই। বিশেষ করে রাতে বেশ গরম। ৮, ৪, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। শুধু দুপুর ১টার ক্লাস করলাম। এরপর দুপুর ৩টা পর্যন্ত মধুর দোকানে ছিলাম। সেখানে মােহাম্মদ আলী, মুশাররফ, আলী কবির প্রমুখ ইসলাম ধর্ম এবং সামাজিক কাঠামাে বিষয়ে কথা বলছিল। আমি সাধারণ সম্পাদক মুশাররফকে যুব লীগের জন্য অর্থ সংগ্রহের অনুরােধ করলাম। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আশরাফের দোকানে মুশাররফ, নুরুল হক, কাদির এবং মজিদের সঙ্গে পাশা খেললাম।

বেলা সােয়া ১২টার দিকে নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক জনাব মজিবুল হকের সঙ্গে দেখা করেছি। তার সঙ্গে প্রিয়নাথ স্কুলের পুরানাে ছাত্রদের বিষয়ে কি করা যায় তা নিয়ে প্রায় ১৪ মিনিট কথা বলেছি। তার কাছ থেকে বাংলা সেকশনের শিক্ষক বিষয়ে কিছু অনিয়মের কথা জানলাম। সেখানে উর্দু সেকশনের ২০০শ’ জন ছাত্রের জন্য ১৪ জন শিক্ষক নিয়ােজিত আছেন অথচ বাংলা সেকশনে ৫০০শ’ জন ছাত্রের জন্য মাত্র ৬ জন শিক্ষক রয়েছে। রমনা রেস্ট হাউসের সামনে আজিজ আহমদ এবং অলি আহাদের সঙ্গে দেখা হলে আমি তাদেরকে স্কুলের এই অনিয়মের বিষয়টি জানালাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : শুষ্ক, পরিষ্কার এবং গরম। ৯, ৪, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। দুপুর ১টা এবং ৩টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। এর আগে বেলা সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। জনাব আয়ার তার বেলা ১১টার ক্লাসের পরিবর্তে ৩টা ২০ মিনিটের ক্লাস নিলেন। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় তিন দিন পর বাসায় ফিরেছি। দুপুর ১টায় আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। বিকেল ৪টায় গেলাম এফ, এইচ, এম, হলে। গেটে জুতাে মেরামত করতে দিলাম। ওখানে মজিদ, মান্নান, মুশতাক আহমদ, ফাত্তাহ প্রমুখ আমার চারপাশে ভীড় করে মর্নিং নিউজের গ্রাহক চাদা এবং বদিউরের মনােভাব নিয়ে কথা বলল। আর, আর, সেক্রেটারি মর্নিং নিউজ রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু বদিউর তা কেনার জন্য বারবার চাপ প্রয়ােগ করছে। প্রভােস্টও বদিউর রহমানের পক্ষে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হল থেকে নবাবপুরে গিয়ে গেৰি কিনে ৭টায় ফিরেছি। এরপর আবার সদরঘাট গিয়ে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকা কিনে সাড়ে ৭টায় ফিরে এলাম। এই বাসায় আজ সন্ধ্যায় প্রথম বারের মত এক ছেলেকে পড়ালাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : প্রখর রৌদ্রস্নাত দিন। রাত পরিষ্কার বেশ গরম।

১০. ৪, ৫১ সকাল সাড়ে ৭টায় উঠেছি। দুপুর ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম । ড. হুদা ২টা ২০ মিনিটে ব্যাংকিংয়ের ওপর ক্লাস নিলেন। মধুর দোকানে ওয়াদুদের সঙ্গে দেখা হল। বিকেল ৪টায় বাসায় ফিরলাম। ৫টায় দুপুরের খাবার খেলাম। সারা বিকেল ঘরে ছিলাম। সারাদিন খুব দুর্বল লাগছিল। খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম সম্ভবত একটি কারণ। তবে প্রধান কারণ অত্যধিক মানসিক চাপ। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রাতের শেষ ভাগ থেকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। বাতাস
নেই। সারাদিন সূর্য মেঘে ঢাকা ছিল। রাতের আকাশও পরিষ্কার নয়। তবে মনে হয় কাছাকাছি কোথাও বৃষ্টি হওয়াতে বিকেল থেকে সহনীয় তাপমাত্রা। সব মিলে চমৎকার আবহাওয়া। ১১. ৪, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। বৃত্তির টাকা তােলার জন্য দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। কিন্তু তখন ছাত্রীরা। বৃত্তির টাকা তুলছিল। তাই নােটিশ বাের্ড দেখার জন্য হল অফিসে গেলাম। হলের বৃত্তি ঘােষণা করা হয়েছে। কিন্তু আমাকে বৃত্তি দেয়া হয়নি। যােগীনগর গেলাম। কিন্তু অলি আহাদকে পেলাম না। ওখান থেকে বিকেল ৪টায় বের হয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত গেলাম। সেখানে আমাদের হলের আনােয়ারুল হকের সঙ্গে দেখা হল। তার সঙ্গে ৫টা পর্যন্ত একটি লাইব্রেরি চালু করা এবং মান্নানের বিষয়ে কথা হল। সেখান থেকে সরাসরি বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে কামরুদ্দীন সাহেব, চৌধুরী সাহেব এবং জিনারদীর আক্কাসের সঙ্গে দেখা হল। কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে তার কেস নিয়ে কথা বললাম। ৬টায় সেখান থেকে বের হলাম। ডিস্ট্রিক্ট জজ কোর্টের কাছে সাইকেলের টিউবে বাতাস ভরালাম এবং তারপর সদরঘাট থেকে নারিকেল তেল কিনে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফিরে এলাম। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : প্রায় দুপুর পর্যন্ত আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। তারপর থেকে পরিষ্কার। রাতেও পরিষ্কার। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ।

১২. ৪.৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১টার ক্লাস করলাম। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ৬০ নম্বর রুমে ভাষা সংগ্রাম কমিটির সভায় যােগ দিলাম। সভায় বদিউর রহমান সভাপতিত্ব করল। সিদ্ধান্ত হল রাষ্ট্র ভাষা প্রশ্নে পার্লামেন্টে দ্রুত ননাটিশ প্রদানের জন্য পূর্ব বাংলার কয়েকজন এমসিএকে টেলিগ্রাম পাঠানাে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এ বিষয়ে স্মারকলিপি দেবে। ৩টায় সভা শেষ হল। বিকেল সাড়ে ৩টায় বাসায় ফিরেছি। ফেরার পথে রেলওয়ে হাসপাতালের সামনের দোকান থেকে মেরামত করা সাইকেল নিলাম। বিকেল সাড়ে ৫টায় আকরামতউল্লাহ মাস্টার আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি আগামী ১৫. ৪. ৫১ তারিখে শহরে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকা অবস্থায় ঢাকায় তাদের। সভা করার বিষয়ে কথা বললেন। ৬টায় তাকে যােগীনগরে অলি আহাদের কাছে নিয়ে গেলাম। সেখানে এ, সামাদ, মুসা প্রমুখ উপস্থিত ছিল। আলােচনার পর সভার স্থান পরিবর্তন করে জিঞ্জিরা বাজার করা হল। জনাব আকরামতউল্লাহ আগামীকাল সকাল ৮টায় যুব লীগের একজন কর্মীর সঙ্গে যােগাযােগ করবেন। রাত পৌনে ৮টায় বাসায় ফিরেছি। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রৌদ্রজ্জ্বল। নাতিশীতােষ্ণ। বাতাসে জলীয় বাষ্প অনুভূত হচ্ছে।
৯৫

১৩, ৪, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। দুপুর ১টার দিকে ডা, করিম এসেছিল। অ্যালােকেশন বাের্ডের চেয়ারম্যানকে দেয়ার জন্য সে আমাকে একটি দরখাস্ত লিখে দিতে বলল। ১০ মিনিট পর সে চলে গেল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নর্থ ক্ৰক হলের নিকটবর্তী নদীর পারে গেলাম। সেখানে নিমতলি মেসের আহসানউল্লাহ এবং মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের গােলাম মুরশিদের সঙ্গে দেখা হল । এরপর সদরঘাট, ভিক্টোরিয়া পার্ক হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাসায় ফিরে এলাম। দুপুর ৩টার দিকে দাড়িওয়ালা এক যুবক এসেছিল। তার বাড়ি ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর সাব ডিভিশনে। তিনি লাখপুর শিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তবে তিনি তার এখানে আসার কারণ জানাননি। আমার ধারণা, তিনি সম্ভবত কারও জন্য লজিংয়ের খোঁজে এসেছিলেন। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আজ গরম কম। বিশেষ করে রাতে। বাতাসে জলীয় বাষ্প অনুভূত হচ্ছে। রাতের শেষভাগ থেকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে।

১৪, ৪, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আজ ও আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। শমসেরউদ্দীন সরকারের বাড়িতে মরিয়মের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলােচনার জন্য বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মফিজউদ্দীন এবং দিগধার ভাইসাহেব এসেছিলেন। আমি তাদেরকে পরামর্শ দিলাম, আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের সম্পর্কে ভাল ভাবে জানতে পারছি ততক্ষণ বিচক্ষণতার সাথে সময় ক্ষেপণের। তারা দেড়টার দিকে চলে গেলেন। বিকেলে ডা. করিমের জন্য দরখাস্তের একটা খসড়া কপি তৈরি করলাম। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় তাকে সেটি দিতে ফার্মেসিতে গেলাম। সে বলল আমি যেন খসড়াটি টাইপ করে দেই। যােগীনগর গেলাম। অলি আহাদ এবং তােসাদ্দেকের সঙ্গে দেখা হল। তােসাদ্দেককে নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা মিডিয়ামের ছাত্রদের জন্য শিক্ষক নিয়ােগের ক্ষেত্রে মারাত্মক ধরনের পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি জানালাম। সাড়ে ৭টার দিকে ওখান থেকে বের হলাম। রাত ৮টায় কোর্ট হাউস স্ট্রীটে গেলাম। সেখানে অল্প বয়স্ক একজন টাইপিস্টকে পেলাম। কাজ শুরুর পর দেখা গেল এই কাজে সে একেবারেই নতুন। কাজটি দ্রুত শেষ করতে আমাকেই টাইপ করতে হল। রাত ৯টায় টাইপ শেষ করলাম। পরে করিমের বাসায় গিয়ে ১৬ রিফান্ডসহ দরখাস্তটি দিলাম। সে রাতের খাবার খেতে আমাকে প্রায় বাধ্য করল। রাত সােয়া ১০টায় ফিরেছি। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : খুব বেশি গরম না পড়লেও বাতাস আর্দ্র। দিনের তিন চতুর্থাংশ সময়ই আকাশ ঘন কালাে মেঘে ঢাকা ছিল। আকাশে গর্জন, মনে হয়েছিল বৃটি শুরু হওয়ার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। জোরে বাতাস বয়ে যাওয়ায় ধূলার মেঘ তৈরি হল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক ফোটাও বৃষ্টি হল না। আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল।

১৫, ৪, ৫১
– রোববার –
সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ১লা বৈশাখ, বাংলা ১৩৫৮ সন। বাংলা নববর্ষ । বিকেল পৌনে ৬টায় এফ. এইচ, এম, হলে গিয়েছিলাম । দলিল, মােহাম্মদ আলী, আবদুল হাকিম, কাদের প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। নববর্ষ উপলক্ষে কাদির আমাকে আশরাফের নতুন দোকানে পাওয়াল। সন্ধ্যা ৭টায় হল থেকে বের হয়েছি। করিমের সঙ্গে দেখা করতে ঠাঠারি বাজার গিয়েছিলাম। সে জানাল, সময় স্বল্পতার কারণে আজ সকালে ডা. মালিক তার কথা শােনেননি। সদরঘাট থেকে পাকিস্তান অবজারভার কিনে রাত পৌনে ৮টায় বাসায় ফিরেছি। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম । আবহাওয়া : সূর্যালােকিত দিন। আজ খুব গরম নয়। বাতাসে জলীয় বাষ্প। ১৬, ৪. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। দুপুর ১টার ক্লাস করলাম। এর আগে বেলা সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু মি, আয়ার তার ক্লাস নেননি। কাজী আলী আশরাফের সঙ্গে খাজা শাহাবুদ্দীনের অতীত জীবন নিয়ে আলােচনা হল। তিনি খন্দকার রেজাউল হক এবং আমাকে মধুর দোকানে চা খাওয়ালেন। দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হলাম। ড, নিউম্যান আজ অনার্স প্রথম বর্ষ সমাপনী পরীক্ষা ছেড়ে উঠে আসা কয়েকজন ছাত্রকে প্রায় দৌড়ে কমন রুম পর্যন্ত ধাওয়া করে হাস্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেন। ছাত্ররা তার অদ্র আচরণের কারণে হল থেকে বের হয়ে এসেছিল। তিনি প্রথম তাদের সাথে সামরিক বাহিনীর লােকের মত আচরণ করলেন। পরে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা এবং বিশেষভাবে অনুরােধ করায় ছাত্ররা নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় আধ ঘন্টা পর ২টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষা দেয়ার জন্য রুমে ফিরে গেল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হবার মুহূর্তে মুশাররফ চৌধুরী আমাকে জানাল, বদিউর গত পরশুদিন ২ জন ছাত্রীসহ প্রায় ৬০ জন নির্বাচনী বন্ধুদের সিনেমা দেখিয়েছে। আমি তাকে স্পাের্টস অ্যাসােসিয়েশনে কোন ধরনের বৈষম্য বা অনিয়ম ঘটে বা ঘটেছে কিনা সে বিষয়টি আমাকে জানানাের জন্য বললাম। কোর্টে গেলাম। মােহাম্মদ আলী জানাল যে, ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতির কারণে ইদ্রিস গার্ডের মামলাটি ১৫ মে তারিখ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। বিকেল ৪টায় কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি তখন নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হচ্ছিলেন। তিনি আমাকে ডা. করিমকে বলতে বললেন, দ্রুত ডা. মালিকের কাছে লিখতে। বিকেল সাড়ে ৪টায় ফিরেছি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বের হয়ে পাকিস্তান অবজারভার এবং সাইকেলের পাম্পার প্রভৃতি কিনে সাড়ে ৭টায় ফিরেছি। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : গরম। সারাদিন অনেকবার ধূলিঝড়সহ দমকা বাতাস হয়েছে। বি. দ্র. : সম্প্রতি শারীরিক অসুস্থতার জন্য অবসরে যাওয়া বৃটিশ পররাষ্ট্র সেক্রেটারি মি, বেভিন ১৪, ৪, ৫১ তারিখ রাতে মারা গেছেন। ১৭, ৪, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। দুপুর ১টার ক্লাস করলাম। ১টা ৫০ মিনিটে ৭৬ নম্বর রুমে রাষ্ট্র ভাষা কমিটির সভায় যােগ দিলাম। আমি এ সভায় সভাপতিত্ব করলাম। মতিন, বদিউর, সালাহউদ্দীন, রুহুল আমিন চৌধুরী প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিল। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার পথে রমনা রেস্ট হাউসের সামনে ডা, করিমকে রিকশায় দেখে তাকে থামালাম। তাকে জানালাম তার বাধ্যতামূলক নিয়ােগের ব্যাপারে কাকে বলতে হবে তা লিখিতবাবে ডা. মালিককে দ্রুত জানাতে। এ বিষয়ে প্রয়ােজন মনে করলে সে যেন কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা করে । দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরেছি।

১৮, ৪, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বেলা ১২টার ক্লাস করলাম। দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অলি আহাদের সঙ্গে দেখা হল। তার সঙ্গে যুব লীগ। সংগঠনের ব্যাপারে আলােচনা হল । এর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে কর্মীদের দূরদর্শিতার উপর। তাকে বললাম, কোন কর্মী যেন অন্য কারও অনুভূতিতে আঘাত না করে, বিশেষ করে বয়স্কদের, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে। যে কারও অসংলগ্ন কথাবার্তা এবং অসৌজন্যমূলক ব্যবহার একটি সংগঠনে সবাই একত্রিত থাকার ক্ষেত্রে বিরাট বাধা । কারণ একটি সংগঠনে বিভিন্ন মন মানসিকতার ব্যক্তিরা একত্রিত হন।
১০০

সারাটা বিকেল ঘরেই ছিলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : শুষ্ক । প্রখর রৌদ্রজ্জ্বল দিন। সারাদিন এবং রাতে বাতাস থাকলেও বেশ গরম।
অলি আহাদ এবং পরে রেলওয়ে হাসপাতালের সামনে থেকে শহীদুল্লাহ আমার সঙ্গে উত্তর নবাবপুর পর্যন্ত এল। তারপর আমরা যে যার গন্তব্যে চলে গেলাম। দুপুর ২টায় আমি আমার বাসস্থানে ফিরেছি। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর ৩টা পর্যন্ত প্রখর রােদ। তারপর থেকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করল। শেষ বিকেলে মনে হচ্ছিল বৃষ্টি হবেই। কিন্তু দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে আসা প্রবল বাতাস বৃষ্টির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াল। দমকা বাতাসের কারণে ধূলার মেঘে চারদিক ঢেকে গেল। যদিও বৃষ্টির সম্ভাবনা এখনও আছে, কিন্তু বাতাস সেখানে বাধা হয়ে আছে। তাপমাত্রা কমে গেছে। ১৯, ৪, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা এবং দুপুর ১টার ক্লাস করেছি। মি. আয়ার আজ ১১টায় গত সােমবারের ক্লাস নিলেন। দুপুর সােয়া ২টায় স্টাইপেন্ডের টাকা তােলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। কিন্তু আজ এম, কম, এবং এম, এ, দ্বিতীয় বর্ষের তারিখ থাকায় টাকা তােলা সম্ভব হল না। তাই আড়াইটায় সরাসরি বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে জনাব এ, রহমান, কামরুদ্দীন। সাহেব, জমির, জহির, কে চৌধুরী প্রমুখকে পেলাম। কিছুক্ষণ পর মানিক মিয়াও সেখানে এলেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাদের সাথে কথা বললাম। আতাউর রহমান সাহেব কেস দরখাস্তের খসড়ার জন্য তার সঙ্গে দেখা করতে বললেন। ৫টা ১০ মিনিটে বাসায় ফিরেছি। বিকেলে আর বাইরে যাইনি। আজ রাত ৮টায় হলে বিতর্ক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আমি মানসিক অস্থিরতার জন্য সেখানে যাইনি। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : বাতাসের প্রবল বেগ কমে এসেছে। আকাশ প্রায় সারাদিনই মেঘে ঢাকা ছিল। তাপমাত্রা কম এবং আরামদায়ক।

২০. ৪, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের সমস্ত ক্লাস শেষ হল। অবশ্য বাস্তবে গতকালই এই ক্লাস শেষ হয়েছে। সকাল ৭টায় আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করলে তিনি কেস ডায়েরি কপির জন্য পিটিশন তৈরি করে দিলেন। সকাল ৯টায় সেখান। থেকে বের হয়ে বাসায় ফিরে নাস্তা করলাম। তারপর কোর্টে গেলাম। রহমান সাহেব বেলা ১০টায় জনাব ওবায়দুল্লাহর কোর্টে পিটিশন দাখিল করলেন। এরপরে যােগীনগরে গিয়ে দেখি অলি আহাদ আক্কেল দাঁতের প্রচণ্ড ব্যাথায় খুব কষ্ট পাচ্ছে। তাই দেখে করিমকে তার ফার্মেসি থেকে নিয়ে এলাম। তিনি ঔষধ দিলেন। তারপর দেড়টা পর্যন্ত কেস ডায়েরি টাইপ করে আড়াইটায় ফিরে এলাম। অলি আহাদের কাছে থাকার জন্য মতিকে পাঠিয়ে দিলাম। বিকেল পৌনে ৪টায় আবার যােগীনগরে গেলাম। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কেস ডায়েরি টাইপ করলাম। তারপর মুকুল সিনেমা হলে গেলাম। আগামীকাল সকাল সাড়ে ৮টায় ছবি সেন্সর করার জন্য সরকার হল রিকুইজিশন করেছে। রাত ৮টায় বাসায় ফিরলাম । রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সকালের এক চতুর্থাংশ সময় থেকে দুপুর পর্যন্ত গরম ছিল। বেলা ১২টা। থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হালকা বৃষ্টি হয়েছে। বিকেল ও রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া নাতিশীতােষ্ণ। শেষ রাতের দিকে হালকা ঠাণ্ডা ভাব। ২১. ৪. ৫ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। আজ ইকবাল দিবস-তার ত্রয়ােদশ মৃত্যু বার্ষিকী। সকাল পৌনে ৮টায় যােগীনগরে গেলাম। দুপুর সােয়া ১টা পর্যন্ত কেস ডায়েরি টাইপ করলাম। এই কাজের জন্য ইকবাল দিবস উপলক্ষে মুকুল সিনেমা হলে সকাল ৯টায় যুব লীগ আয়ােজিত অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি। দুপুর দেড়টায় কোর্টে গেলাম। আবদুল খানের সঙ্গে দেখা হল। তার কেস মুলতবি করা হয়েছে। বার লাইব্রেরিতে কয়েক

মিনিটের জন্য কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম । জনাব রেজাই করিম সিদ্ধান্তের জন্য আমার কেস পাঠিয়েছেন। দুপুর পৌনে ২টায় স্টেশনে গেলাম। আবদুল খানকে মামলার কাগজপত্র এবং গােসিঙ্গা ইসলামিয়া মাদ্রাসার কমিটির লিস্ট পাঠাতে বললাম। তাকে এ ব্যাপারে একটি চিরকুট দিলাম। বিকেল ৩টায় বাসায় ফিরেছি। দিনের বাকি সময় বাসায় ছিলাম। বাইরে বের হইনি। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এবং সারাদিনই ভ্যাপসা গরম। দুপুর ১টা ১০
মিনিটের দিকে শিলাসহ ৫ মিনিটের জন্য হালকা বৃষ্টি হল। ঠাণ্ডা আবহাওয়া। বিশেষ দ্রষ্টব্য : ইকবাল দিবস উপলক্ষে যুব লীগ আয়ােজিত অনুষ্ঠানে আমি এবং কামরুদ্দীন সাহেব অসহযােগিতা করেছি বলে অলি আহাদ মন্তব্য করেছে। অথচ সে জানত আমার অবস্থা। অন্যদিকে আজ কামরুদ্দীন সাহেবের কোর্টের দিন ছিল এবং আবদুল খানের মামলাসহ তার দুটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা ছিল। এ ছাড়াও তার ছেলে হামে ভুগছে। ২২. ৪. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৭টায় কামরুদ্দীন সাহেবের বাসায় গেলাম। তাকে সঙ্গে নিয়ে সাড়ে ৮টায় আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। শওকত, এন. ইসলাম, মওলানা এ. সালাম প্রমুখ তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আতাউর রহমান সাহেব কামরুদ্দীন সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে বেলা ১০টায় রেজাই করিমের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ায় আমাদের কেসের প্রসঙ্গ তােলা সম্ভব হয়নি। এরপর সাদু থেকে এক জোড়া স্যান্ডেল কিনে পৌনে ১১টায় বাসায় ফিরলাম। বিকেল সােয়া ৪টায় আবার কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে গেলাম। তাকে সঙ্গে নিয়ে ৫টায় আতাউর রহমান সাহেবের কাছে গেলাম। মানিক মিয়া এবং অন্যান্যরা তখন সেখানে ছিল। পরে ডি. এ. রহিম সাহেবও ওখানে এলেন। সেখানে রাজনীতিতে শামসুল হকের ভূমিকা নিয়ে কথা হল। মানিক মিয়া এবং আতাউর রহমান সাহেব তার সমালােচনা করলেন।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আমাদের কে নিয়ে কথা শুরু হল। শেষ হল রাত ১০টায়। রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে বাসায় ফিরে এলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন রাত বেশ আর্দ্র ও ঠাণ্ডা। বিকেলে কয়েক মিনিট হালকা বৃষ্টি
হয়েছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্নই রয়েছে। বি. দ্র. ১) বারবার বলা সত্ত্বেও বাসার কাজের ছেলে নাঈম আমাকে গােসলের পানি এনে দেয়নি। বিষয়টি আমি আনসারুজ্জামান সাহেবকে জানালাম। কামরুদ্দীন সাহেবকে জানিয়েছি, অলি আহাদের আচরণের কারণে আমাকে হয়ত যুব লীগের ওয়ার্কিং কমিটি থেকে সরে দাঁড়ানাের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ২৩, ৪, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সারাদিন ঘরেই ছিলাম। ঠাণ্ডা লাগায় শরীর ভাল নেই। গতকাল দুপুরে বৃষ্টি ভেজা বাতাসের মধ্যে গােসলের জন্য ২ ঘন্টা দাড়িয়ে থাকায় আমার এই ঠাণ্ডা লেগেছে। বিকেলের দিকে এই কষ্ট আরও বেড়ে গেল। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : বিষন্ন একটা দিন। সারাদিন রাত অর্দ্র। সারাক্ষণই আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। তাপমাত্রাও কম। রাতে আমার কথার প্রয়ােজন হল । বিকেলে হালকা বৃষ্টি হয়েছিল । ২৪, ৪, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আকরামতউল্লাহ সাহেব এডিএম অনুমােদিত গােসিঙ্গা ইসলামিয়া মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির লিস্ট নিয়ে এসেছিলেন। তিনি ১৫ মিনিট পরই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলেন।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মফিজউদ্দীন এসেছিল। সন্ধ্যা ৬টায় কামরুদ্দীন সাহেবের বাসা হয়ে আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। কিন্তু তাকে বাসায় পেলাম না। সাড়ে ৬টায় সােয়ারি ঘাট পেলাম। পথে হাকিম মিয়া ও আসমতের সঙ্গে দেখা হল। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমার ফাইল নিয়ে বসলাম। রাত ১০টা পর্যন্ত তা দেখলাম। কামরুদ্দীন সাহেব পরে আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন। হাকিম মিয়া, ওয়ারিস আলী, নবাব আলী ও মফিজউদ্দীনও সেখানে এল । সেন্ট্রাল ক্লাবের শামসুল হুদাও কিছুক্ষণের জন্য সেখানে ছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসায় এলাম । রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আজ বৃষ্টি হয়নি। আর্দ্র ভাব। তাপমাত্রা এখনও কম। বিশেষ করে বিকেলে ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাওয়ায় মনে হচ্ছিল আশেপাশে কোথাও ভাল বৃষ্টি হয়েছে। ২৫, ৪, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বেলা ১০টা ৫০ মিনিটে কোর্টে হাজির হয়েছি সব সাক্ষিই হাজির ছিল। হাজী সালেহ আহমদ, কালু মােড়ল, নিয়ামত সরকার, সামসুদ্দীন সরকার, আহমদ মাস্টার, জব্বার, জামাত আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিল। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে সাক্ষিদের জেরা শুরু হল। একমাত্র আসিমুদ্দিনের জেরা শেষ হল। এপিপি উপেন্দ্র চন্দ্র প্রসিকিউশন পরিচালনা করলেন। বিকেল ৫টায় কোর্ট থেকে বের হয়ে ৬টায় বাসায় গেলাম। সন্ধ্যা ৭টায় আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। কামরুদ্দীন সাহেবও সেখানে পরে এলেন। রাত সাড়ে ৯টায় ওখান থেকে বের হয়ে জিন্দাবাহার গেলাম। সেখানে জব্বারের সঙ্গে ফালু ও সােবহান ছিল। কি করতে হবে তারা সে নির্দেশনা পেয়েছে। ওখান থেকে রাত সাড়ে ১০টায় বাসায় ফিরেছি। রাত ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আজ সারাদিন গরম ছিল। রাতে ঠাণ্ডা। আকাশ সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। এখনও সঁতসেঁতে ভাব অনুভূত হচ্ছে।

১০৫

২৬. ৪. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বেলা ১২টায় কোর্টে হাজির হলাম । আসিমুদ্দীনের পাল্টা জেরা হল বিকেল ৩টা পর্যন্ত। সারােয়ারের সাক্ষ্য ও পাল্টা সাক্ষ্যও শেষ হল সাড়ে ৪টায় । নথিপত্র চেয়ে দুর্নীতি দমনের ডিআইজির কাছে দরখাস্ত জমা দিলাম। এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় আতাউর রহমান সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম। এস, আহমদ মােড়লকে নিয়ে আজিজ সেখানে গিয়েছিল। ইন্সপেক্টর নূরুল হুদাও সেখানে এসেছিল। আমি ওখান থেকে ফিরেছি বেলা ১০টায়। সন্ধ্যা সােয়া ৭টায় আবার আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। শামসুল হুদা, জমির, কামরুদ্দীন সাহেব, এস, আহমদ মােড়ল ও ইউসুফ আলী মামা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। রাত পৌনে ১১টায় বাসায় ফিরেছি। কিন্তু প্রায় ২০ মিনিট দরজা ধাক্কানাে সত্ত্বেও কেউ দরজা খুলল না। কাজেই রাত ১২টায় ঠাঠারি বাজারে গেলাম এবং ডাক্তারের রুমে ঘুমালাম। ডাক্তার অনুপস্থিত ছিলেন। আজ দুপুর এবং রাতে খাওয়া হয়নি। আবহাওয়া : দুপুর আড়াইটায় আধ ঘণ্টার জন্য সুন্দর এক পশলা বৃষ্টি হল বাদ বাকি দিন আকাশ বেশ পরিষ্কার। পরিবেশ তেমন ঠাণ্ডা নয়। ২৭. ৪. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল পৌনে ৭টায় করিমের বাসা থেকে লজিংয়ে ফিরে এসে দেখলাম টেবিলে আমার খাবার ঢাকা রয়েছে। সেটা দেখে আশ্বস্ত হলাম, গত রাতে যে ঘটনা ঘটেছে তা গৃহকর্তার ইচ্ছাকৃত ছিল না। সকাল সাড়ে ৮টায় কোর্টে হাজির হলাম। সােয়া ৯টায় শুনানি শুরু হল। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গার্ড মনমােহন এবং হাফিজউদ্দিনের জেরা এবং পাল্টা জেরা চলল ।। আগামীকাল দুপুর ২টায় আবার মামলার শুনানি শুরু হবে। সােয়া ১২টায় বাসায় ফিরেছি।

দিনের বাকি সময় বাসাতে ঘরের ভেতরই কাটালাম। রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : বিকেল সাড়ে ৩টায় বৃষ্টি শুরু হল। এই বৃষ্টি খুব অল্প বিরতি দিয়ে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলল। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়াে বাতাস ছিল। দু’বার শিলা ঝড় হল। তার পরিমাণ অবশ্য বেশি নয়। আজ ভারি বৃষ্টি হল। সম্ভবতঃ এই মওশুমের সবচেয়ে ভারি বর্ষণ। ২৮. ৪. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। দুপুর দেড়টায় কোর্টের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। ২টা ২০ মিনিটে শুনানি শুরু হল। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত হােসেনউদ্দিন এবং ডেপুটি রেঞ্জার আমিন আলী দফাদারের জেরা ও পাল্টা জেরা হল। প্রসিকিউটর রুস্তম আলী আকন্দ আজিজ সরকার ও আবদুল খালেক (ফালু) কে জেরা করতে অস্বীকৃতি জানালেন। ১০. ৫, ৫১ তারিখ পর্যন্ত মামলা মুলতবি হল । বৃষ্টির কারণে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোর্টেই ছিলাম। শামসুল খান, টুকু মিয়া ও দুলার বাপ এসেছিল। তারা আমাকে বলল, আতাউর রহমান সাহেব যেন মওলানা ভাসানীর সঙ্গে কথা বলে উত্তর আমেরের সভার তারিখ ঠিক করে দেন। আমি তা করলাম। ১৪, ৫, ৫১ জনসভার তারিখ নির্ধারণ করা হল। আমি তাদেরকে জনসভার লিফলেটের খসড়া তৈরি করে দিয়েছি। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আহমদ মাস্টার, হাকিম মিয়া, ওয়ারিস আলী, মফিজউদ্দীন আমার সঙ্গে বাসায় এল। ১৫ মিনিট পর তারা সবাই চলে গেল। এফ, এইচ, এম, হলে গিয়ে আমার টিন নিয়ে এলাম। তারপর ৫১ বংশালে গিয়ে মফিজউদ্দীনকে টিন ও স্যান্ডেল দিলাম বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই কাজ সেরে রাত সাড়ে ৮টায় বাসায় ফিরলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর ২টা পর্যন্ত ছায়ায় ঢাকা দিন। ৩টা ১৫ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভারি বর্ষণ হল। তারপরও আকাশ পরিষ্কার হয়নি। কিছুটা ঠাণ্ডা, বিশেষত রাতে ঠাণ্ডার জন্য বাড়তি কাপড় প্রয়ােজন হল।

২৯. ৪. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। দুপুর আড়াইটার সময় বৃত্তির টাকা তােলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে গেলাম। কিন্তু রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেন হয় না । মধুর দোকানে গেলাম। সেখানে এস, এম, আলী ও আমার ক্লাসের এল, রহমানের সঙ্গে দেখা হল। তারা বলল, পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করে ১৫ জুলাই করা হয়েছে। এরপর আগা সাদেক রােডে গেলাম। কিন্তু জালাল গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে। কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে গেলাম। তিনি তখন আরমানিটোলা স্কুলের মিলাদে যােগ দেবার জন্য বের হচ্ছিলেন। তিনি আমাকে আগামীকাল দেখা করতে বললেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় বাসায় ফিরেছি। রাত ১০টা ১৫ মিনিটে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সকালে সূর্য দেখা দিল। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত সূর্যের আলাে হালকা মেঘে ঢাকা ছিল । ৩টা থেকে আকাশ ঘন কালাে মেঘে ছেয়ে গেল। মেঘের গর্জন শুরু হল। মনে হল, ভারি বর্ষণ হবে। কিন্তু হল না। রাত ১০টা থেকে মেঘ সরে যেতে থাকল। মেঘে অবরুদ্ধ আকাশ মুক্ত হল। পরিবেশ ঠাণ্ডা। রাতে কাঁথর প্রয়ােজন হল।

৩০. ৪.৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৭টায় কামরুদ্দীন সাহেবের বাসায় গেলাম। বেলা ৯টায় তাঁর সঙ্গে দেখা হল। সাক্ষ্য প্রমাণের নকলের জন্য পিটিশন তৈরি করলাম। কে ও টির বিষয়ে কথা বললাম। অবস্থান পরিষ্কার বােঝা গেল। পরে নূরুল ইসলাম আমাদের সঙ্গে যােগ দিল। ছাত্র রাজনীতিতে জনাব শামসুল হকের ভূমিকা নিয়ে আলােচনা হল। সেখান থেকে বেলা ১২টায় বের হয়ে সরাসরি বাসায় এলাম। দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে গিয়ে বৃত্তির টাকা তুললাম। ফেরার সময় ডা. করিমকে না পেয়ে ৩টার দিকে অলি আহাদের কাছে গেলাম। বিকেল ৪টায় ফজলুল হক মুসলিম হলে গিয়ে মুশাররফ চৌধুরী, এন, হক, রাজু
প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। তারা হলের গঠনতন্ত্র সংশােধনে আমাকে সহায়তা করতে অনুরােধ করল। বিকেল পৌনে ৬টায় সেখান থেকে বের হয়ে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গেলাম। ডা. করিমের কাছ থেকে ঔষধ নিলাম। সেখানে আমার শিক্ষক মৌলবি এস, হুদার সঙ্গে দেখা হল। সন্ধ্যা ৭টায় জালালের কাছে গেলাম। তাকে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক চেয়ে পাঠানাে রেকর্ড আমি যেন পাই সেটা দেখার জন্য বললাম। সাড়ে ৭টায় ফিরলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর ৩টা পর্যন্ত রৌদ্রজ্জ্বল। তারপর ঘন মেঘ জমতে শুরু করল। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হল। ঠাণ্ডা আবহাওয়া। বি, দ্র : ক) ২৬ এপ্রিল ৫১ তারিখ সকাল ৯টা ১০ মিনিটে অবলা বােস (জে সি বােসের স্ত্রী) মারা গেছেন। খ) এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে কে. শাহাবুদ্দীন, চৌধুরী নাজির আহমদ এবং সরদার বাহাদুর খান পূর্ব বাংলায় অবস্থান করছেন।

– মঙ্গলবার –
ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সারাদিন ঘরেই কাটালাম। ২৯ এপ্রিল রাত থেকে ঠাণ্ডার সমস্যায় ভুগছি। ঔষধ খাবার ফলে স্নায়ুবিক দুর্বলতায় ভুগছি। ৩০ এপ্রিল থেকে গত দু’দিন গােসল করতে না পারায় আমার স্বাভাবিক নিয়মে ব্যাঘাত ঘটেছে। পানির স্বল্পতা এখানে নিত্য দিনের ঘটনা। বিকেলে ‘টুয়েলফথ নাইট’ বইটি পড়লাম। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সকাল ১০টা পর্যন্ত আকাশ গুমােট ও বিষন্ন । তারপর কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়া দিনের বাকিটা সময় পরিষ্কার ও রৌদ্রস্নাত । রাতও পরিষ্কার। প্রকৃতি তার সব বিরূপতা যেন ঝেড়ে ফেলেছে। তাপমাত্রা বাড়ছে। সব মিলিয়ে সহনীয় দিন। ২. ৫. ৫১ ভাের ৫টায় ঘুম ভাঙল। বিকেল সাড়ে ৪টায় বাইরে বের হলাম। মফিজউল্লাহর রেস্টুরেন্ট পাক ক্যাফেতে নাস্তা করলাম।
১১০

সদরঘাটে কিছু কেনাকাটা করলাম। সেখানে মতলবের আবদুর রবের সঙ্গে দেখা হল। সে এখন মেডিকেল স্কুলের ছাত্র। তার সঙ্গে গল্প করতে করতে হেটে ইসলামপুর পর্যন্ত গেলাম। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সে চলে গেল। কামরুদ্দীন সাহেবের বাসায় গিয়ে শামসুদ্দিন মুহূরির সঙ্গে দেখা করলাম। সে জানাল, নকলগুলি নিতে আমার ৩৯ টাকা ৮ আনা খরচ পড়বে। তখন কামরুদ্দীন সাহেব বাসায় ছিলেন না। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাসায় ফিরলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : উজ্জ্বল সূর্যের আলােয় দিন শুরু হয়েছিল এবং সারাদিন একই রকম ছিল। দিনেরবেলায় তুলনামূলকভাবে গরম ছিল। রাতের প্রথম ভাগ সহনীয়। দ্বিতীয় ভাগ ঠাণ্ড। লক্ষণ দেখে আমার মনে হল আশেপাশে কোথাও হালকা বৃষ্টি হয়েছে। বি. দ্র. ডা, করিমের দেয়া ঔষধ ঠাণ্ডার জন্য ভাল কাজ করেছে। বিশেষ করে ঘুমের সময় শ্বাস কষ্টে। কিন্তু এই ঔষধ আমাকে খুবই দুর্বল করে ফেলেছে।

ভাের ৫টায় উঠেছি। বেলা পৌনে ৯টায় কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম। বিভিন্ন প্রসঙ্গে আলােচনার সময় তিনি জানালেন, জনাব আবুল হাশিম চাচ্ছেন আমি যেন তাঁর প্রকাশনা ব্যবসায় সহায়তা করি। কামরুদ্দীন সাহেবের মতামতে মনে হল, তিনিও চান, আমি প্রস্তাবটি গ্রহণ করি। অন্যান্য আলাপের মধ্যে আমার মামলার অবস্থা, আত্মরক্ষা, সাক্ষি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কথা হল। সাক্ষ্য ও দলিল করার জন্য কামরুদ্দীন সাহেবের ক্লার্ককে ৩৬/- দিলাম। বেলা ১২টায় বার লাইব্রেরিতে গিয়ে রেজাই করিম, আতাউর রহমান, জমির, মােমেন, জহিরুদ্দীন প্রমুখকে পেলাম। জনাব রেজাই করিম আমার মামলার প্রসঙ্গে কথা বললেন। বিনােদের মামলার বিষয়বস্তু লেখা একটি চিরকুট আতাউর রহমান সাহেবকে দিলাম। দুপুর ১টায় বাসায় ফিরলাম।

বিকেল ৪টায় বের হলাম। হল অফিসে গিয়ে নােটিশ বাের্ড দেখলাম। ৪টা ২০ মিনিটে ৭০ নম্বর রুমে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের আয়ােজিত বর্ষ সমাপনী সমাবেশে যােগ দিলাম। মুশাররফ, শফিউল্লাহ প্রমুখ আমার সঙ্গে ছিল। প্রফেসর অমিয় বি. চক্রবর্তী সভাপতিত্ব করলেন। অনুষ্ঠানের তালিকায় ছিল গান, বাজনা এবং কৌতূক। এগুলাে বেশ আনন্দদায়ক ছিল। এই প্রথম বারের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অনুষ্ঠানে ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করল। খুরশিদী খানম দু’টো গান গাইলেন। দম বন্ধ করা অনুষ্ঠানের মধ্যে এই অনুষ্ঠানটি ছিল সফল একটি আয়ােজন। শিক্ষা বর্ষের সমাপনীতে ছুটির আগে এ ধরনের অনুষ্ঠান এই প্রথম। অনুষ্ঠান সম্পর্কে প্রফেসর আখলাকুর রহমানের পর্যালােচনামূলক বক্তব্যের পর সভাপতির উদ্দীপনাময় ভাষণ এবং সমাপনী সঙ্গীত দিয়ে ৬টা ২০ মিনিটে অনুষ্ঠান শেষ হল। কানাই শীলের দোতরা, কামালের রেডিও-র ধারা বর্ণনা, তালগােল পাকানাে রান্না, শরীর চর্চা ও ভাষণ এবং গাজীউল হকের কৌতুক- আরবি হরফে বাংলা, আরবি সুরে বাংলা পড়া এবং বাংলা ভাষাকে আরবিতে রূপান্তর সবচাইতে আকর্ষণীয়। ছিল। এগুলাে একদিকে যেমন ছিল কৌতুকপূর্ণ, অন্যদিকে বােদ্ধা ব্যক্তির অবাস্তব চিন্তাধারার প্রতি ব্যাঙ্গাত্মক ইঙ্গিতবহ। মােবারুদ্দিন আমাকে ও মুশাররফকে ঢাকা হল রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে নাস্তা খাওয়াল। রুহুল আমিন সেখানে ছিল। সে আমাকে ১. ৫. ৫১ তারিখে যুব লীগের সভায় গঠনতন্ত্র নিয়ে কি ধরনের আলােচনা হয়েছে তা জানাল। বিশেষ করে অলি আহাদ এবং সামাদের বক্তব্য সম্পর্কে সে বলল । ওয়াহিদুজ্জামানকে খুঁজে পেলাম। মজিদ, কাজী বশিরউদ্দিন প্রমুখ আমার সঙ্গে দেখা করল। রাত সােয়া ৮টায় বাসায় গেলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সূর্যের উজ্জ্বল আলােয় দিনের শুরু এবং সারাদিনই রৌদ্রজ্জ্বল। দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বেশি। রাত সহনীয়। উজ্জ্বল তারায় ভরা পরিষ্কার রাত।

৪. ৫. ৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হল। বিকেল সাড়ে ৫টায় বের হলাম। উত্তর নবাবপুরে ওয়াদুদ, আউয়াল এবং নূরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা হল। তাদের সঙ্গে আধ ঘন্টা কথা বললাম। ডা, করিমের সঙ্গে তার ফার্মেসিতে দেখা হল।। সেখানে জহিরউদ্দীন এবং জমির উকিল এসেছিল। পৌনে ৭টায় যােগীনগরে গেলাম। তােয়াহা সাহেব এবং তার স্ত্রীর সাথে দেখা হল। তারা তাদের ছেলের মৃত্যুর পর দেশ থেকে ফিরেছেন।। যুব লীগ অফিসে অলি আহাদ এবং মেডিকেল কলেজের কাদিরের সঙ্গে দেখা হল। আমি অলি আহাদকে বললাম ১, ৫, ৫১ তারিখে অনুষ্ঠিত যুব লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভার খবর আমাকে দেয়া হয়নি। সে দৃঢ় ভাবে ভুল দাবি করে বলল, আমাকে সে ৩০, ৪, ৫১ তারিখে খবরটি দিয়েছিল। আমি তাকে সরাসরি বলে দিলাম, ভবিষ্যতে তার সঙ্গে কাজ করতে আমি আর আগ্রহী না। সে একজন অদ্ভুত ব্যক্তি। সৎ, নিষ্ঠাবান এবং পরিশ্রমী নিঃসন্দেহে। কিন্তু অন্যেরও যে এমন গুণাবলী থাকতে পারে তা সে খুব কম সময়ই মানতে চায়। নিজের মত থেকে সে এক পাও নড়তে রাজি নয়। মাঝে মাঝে মিথ্যা বলতে হলেও সে কখনও তার নিজের ভুল স্বীকার করে না। অন্যের ভুলত্রুটির ব্যাপারে সে অত্যন্ত সচেতন। এমন কি নিজের সবচেয়ে ভাল বন্ধুর সামান্যতম ভুলত্রুটিও সে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করতে চায়। বয়স্ক এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষদের মধ্যে নিজেকে উপস্থাপন করার সর্বোচ্চ যােগ্যতা সে ধারণ করে। হার না মানা এবং নিজের কাজের জন্য কখনও লজ্জিত হওয়া, এই দুটি বিষয় তার চলার পথে কখনও বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। তার। উদ্যম ও দূরদর্শিতা অনেকের জন্যই ঈর্ষণীয়। তার উদ্যমকে সে যদি সঠিক পথে পরিচালিত করে তাহলে হয়ত সে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে পারবে। কিন্তু তার স্বভাবের কারণেই অজান্তেই সে অনেক সীমাবদ্ধতা ও কঠিন বাধার সম্মুখীন।

খুব সহজেই সে অনেককে তার বন্ধু হিসেবে কাছে টানতে পারে। কিন্তু তার ব্যবহারের কারণে অনেকেই আবার তার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। যেহেতু তার ব্যবহারে রয়েছে অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করা এবং আস্থায় না নেয়া। তার মধ্যে যেমন আছে বিভিন্ন ধরনের ভাল গুণাবলী তেমনি আছে অদ্ভুত আচরণ । এই প্রকৃতির মানুষেরা কোন রকম সাফল্য ছাড়াই উল্কাপিণ্ডের মতই ঘুরতে থাকে

এবং যে কোন ভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তারপর এক সময় হয়ত লক্ষ্যবিহীন ভাবে যে কোন মুহূর্তে ছিটকে পড়তে পারে নিজের অবস্থান থেকে। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন প্রখর রােদ। তারায় ভরা পরিষ্কার রাত। পরিবেশ মৃদু উষ্ণ। ৫৫, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বিকেল ৬টা ২০ মিনিটে সাইকেল চালিয়ে দিলকুশা রােড হয়ে কমলাপুর ব্রিজ পর্যন্ত এক চক্কর ঘুরলাম। এই এলাকায় বর্তমানে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। রাস্তাগুলি নির্মিত হচ্ছে। তােপখানার রাস্তা ধরে যাবার পথে রমিজউদ্দীন মােল্লা নামে একজন নিজে থেকেই আমার সঙ্গে বর্ধমান হাউস পর্যন্ত গিয়ে আবার ঘুরে শাহবাগ পর্যন্ত এল। তারপর সে তেজগাঁওয়ে তার বাসার দিকে চলে গেল। সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষার মৌখিক পরীক্ষায় কীভাবে পাশ করা যায় সে বিষয়ে সে আমার পরামর্শ চাইল। সে পিএসপির চাকরির ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। ফেরার পথে ফিরােজ আহমদ এবং আমাদের হলের সুলতান আহমদসহ আরও কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে দেখা হলে তারা আমাকে উষ্ণ সম্ভাষণ জানাল। রাত পৌনে ৮টার দিকে বাসায় ফিরেছি। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রচণ্ড রােদের কারণে বেশ গরম ছিল। ৩টার দিকে হঠাৎ ভেসে আসা মেঘে আকাশ ঢাকা পড়ল এবং হালকা বৃষ্টি শুরু হল। এই বৃষ্টি হালকা হলেও প্রায় এক ঘন্টার বেশি স্থায়ী হল। বিকেল ৬টার পর আকাশ প্রায় পরিষ্কার হয়ে এল। দুপুরের বৃষ্টির কারণে রাতের পরিবেশ সহনীয়।

৬. ৫. ৫১ সকাল পৌনে ৬টায় উঠেছি। বিকেল পৌনে ৫টায় বের হয়েছিলাম। ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে অলি আহাদের সঙ্গে দেখা হলে তার সঙ্গে পাইওনিয়ার প্রেসে গেলাম। সেখানে একজন ডাক্তারের কাছ থেকে রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপনের জন্য সে চাঁদা নিল। অলি আহাদকে সেখানে রেখে আমি সােয়া ৫টায় সরাসরি কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম। কিন্তু তিনি তখন বাইরে ছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আতাউর রহমান সাহেবের ওখানে। গেলাম। কিন্তু তিনিও তখন বাইরে ছিলেন। এরপর চক মােঘলটুলিতে আতাউর রহমানের দোকানে আমার সাইকেলের পেছনের চাকার ব্রেক প্যাড লাগালাম। তারপর দেওয়ান বাজার, কার্জন হল, ফজলুল হক মুসিলম হলের সামনে দিয়ে এক চক্কর ঘুরলাম। ফজলুল হক হলের। সামনে থেকে শফিউল্লাহ ও মুশাররফ আমার সঙ্গে যােগ দিয়ে র্যাংকিন স্ট্রীট পর্যন্ত এল। তারপর ওরা ফিরে গেল। আমি ডা. করিমের ফার্মেসিতে গেলাম। সেখানে শওকত, নূরুদ্দীন, আজিজ আহমদের সঙ্গে দেখা হল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফিরেছি। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : নিরবচ্ছিন্ন রৌদ্রজ্জ্বল সারাদিন। দিগন্ত জুড়ে পরিষ্কার আকাশ। দিন রাতে ঘাম ঝরানাে গরম। বাতাস একেবারেই নেই। ৭, ৫. ৫১ ডাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বিকেল পৌনে ৪টায় বের হলাম। ডাফরিন হােস্টেলের সামনে কুদরতউল্লাহর সঙ্গে দেখা হল। বার লাইব্রেরির সামনে আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা হলে তিনি জানালেন, কে. চৌধুরীর নাতির মামলার তারিখ মুন্সিগঞ্জে একই দিনে পড়ায় আমাদের মামলার তারিখ ১০, ৫, ৫১ পরিবর্তন করে ১২, ৫, ৫১ করা হয়েছে। কামরুদ্দীন সাহেব আমাকে জনাব ওয়াদুল্লাহর ইস্যু করা একটি চিঠি দিলেন। এটি খুব জরুরী ভিত্তিতে আসিমউদ্দিনকে পৌছাতে হবে। চিঠি নিয়ে আমাকে কালকেই তার কাছে যেতে হবে।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে যােগীনগর গেলাম। সেখানে অলি আহাদ ছিল। আসিমউদ্দিনের চিঠির একটি প্রাপ্তি স্বীকার চিরকুট টাইপ করলাম। ৬টার দিকে তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। তিনি তখন তার স্ত্রীর সঙ্গে বাইরে থেকে মাত্র এসেছেন। তাকে আমার মামলার বর্তমান অবস্থা জানালাম। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় ডা, করিমের ফার্মেসিতে গেলাম। তার বাবা আসায় সে আমাকে তার কোয়ার্টারে থাকতে নিষেধ করল । ৭টায় বাসায় ফিরলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : ঘর্মাক্ত ঘরম। বিকেল সাড়ে ৫টায় আকাশে মেঘ জমে তখনই বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিলেও রাত ৮টার দিকে কয়েক মিনিট হালকা বৃষ্টি হল। তারপর আকাশ পরিষ্কার। এরপর গরম কমেছে। – বাড়ির পথে – ভাের ৪টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৬টা ৫ মিনিটের ট্রেনে রওনা হলাম। ট্রেন ঠিক সময়েই ছেড়েছে। ট্রেনে কিছু মানুষের সঙ্গে কথা হল। মােসলেমউদ্দিন তালুকদারের সঙ্গে রাজনীতি বিশেষ করে কাশ্মীর প্রসঙ্গে আলােচনা হল। তিনি কুর্মিটোলা স্টেশন থেকে উঠেছিলেন। শ্রীপুর স্টেশনে সালেহ আহমদ মােড়ল, নিয়ামত সরকার এবং পােস্ট মাস্টার জনাব মুস্তাফার সঙ্গে দেখা হল। সেখানে চা খেলাম। আসিমউদ্দিন প্রথমে জনাব ওবায়দুল্লাহর চিঠি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাল। পরে রোর করিমের অনুরােধে শ্রীপুরের এ, সােবহান খানের কাছ থেকে সে তা গ্রহণ করল। কাজী অফিসের সামনে এ, আহমদ, নিয়ামত সরকার এবং আমার সঙ্গে আকবর। আলীর দেখা হল। তিনি আসিমউদ্দিনের কাছে যাচ্ছিলেন। এদের সঙ্গে তিনি প্রায় এক ঘন্টা আলাপ করলেন। পরে সালেহ আহমদ গেলেন পেলাদী এবং সরকার তার বাড়িতে চলে গেল। আমি সাহাদ আলী সরকারের বাড়িতে থেমে তাকে মামলার তারিখ পরিবর্তনের কথা জানালাম।

দুপুর ১টার দিকে বাড়িতে পৌছেছি। পথে ওয়ারিস আলীর সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। বিকেলে বাড়িতে হাকিম মিয়া এসেছিল। তাকেও তারিখের কথা জানালাম। সন্ধ্যায় সােবহান, জব্বার এবং জাফর মােড়ল প্রমুখ আমার সঙ্গে দেখা করল। আমি, আবদুল খান এবং জব্বার ওয়ারিস আলীর বাড়িতে রাতের খাবার খেলাম। বাড়ি ফিরে মধ্য রাত ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আকবর আলী তার বাড়িতে নায়েব আলী সরকার, ফালু প্রমুখের সঙ্গে মিটিং করেছে। আবহাওয়া : প্রখর রৌদ্রস্নাত সারাদিন। দিন রাতে শরীর ঝলসানাে গরম। যদিও রাতে সুন্দর বাতাস ছিল। বি. দ্র. হাফিজা আমার বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। কেমন যেন বােধ করলাম। এটা | কোন ভাবেই আমার তাৎক্ষণিক ভাবনার বেশি কিছু ছিল না। কিন্তু আমার মনে এমন ভাবনা উদয় হওয়ায় আমি সঙ্গে সঙ্গেই অন্তর থেকে খুবই অনুতপ্ত বােধ করলাম। ১. ৫. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নদীর ধারে গিয়েছিলাম। সারা চর এলাকা, বেপারি বাড়ির জমি, হাজি বাড়ির জমিতে হাঁটাহাঁটি করলাম। বেপারি বাড়ির সামনে নায়েবের বাপের সঙ্গে দেখা হল। টুকু ও গেসুকে খেতে নিড়ানি দিতে দেখলাম। প্রায় আধ ঘন্টা শাহাদ আলী এবং তার ভাইয়ের সঙ্গে তাদের বাড়িতে বসলাম। বেলা ১২টায় বাড়ি ফিরেছি। দুপুর আড়াইটায় দিগধার ভাইসাহেব আমাদের বাড়িতে এলেন। তিনি আমার সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলেন। ভাইসাহেব শিমুলিয়া থেকে আসা মরিয়মের বিয়ের প্রস্তাবের ব্যাপারে আমার সম্মতি অথবা অসম্মতির বিষয়ে জানতে জোরাজুরি করছিলেন। তার মতে এই প্রস্তাব ভাল। কিন্তু তিনি কোন প্রতিশ্রুতি দিবেন না। মা এবং মফিজউদ্দীন এই প্রস্তাবের পক্ষে। আমি মফিজউদ্দীনের উপস্থিতিতে এবং এর আগে আমার মায়ের উপস্থিতিতে ভাইসাহেবকে জানিয়েছি যে, আমিও এই
১২০

প্রস্তাবে সম্মত। বাড়ির সবাই এর পক্ষে । তিনি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তার বাড়ির উদ্দেশে চলে গেলেন। উত্তর পাড়া এবং কোণা পাড়ার দিন মজুররা সারাদিন আমাদের পাট খেতের আগাছা পরিষ্কার করেছে। আবহাওয়া : সারাদিন রৌদ্রজ্জ্বল এবং তপ্ত। সন্ধ্যায় বৃষ্টিহীন ঝড় হওয়ায় রাতে তেমন গরম ছিল না। বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এক ফোটাও বৃষ্টি হয়নি।
১০. ৫, ৫১ – ঢাকার পথে – ডাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে রওনা হলাম। সাড়ে ৯টায় ট্রেন শ্রীপুর ছাড়ল। আহমদ ঢাকা পর্যন্ত আমাকে সঙ্গ দিল। আবদুল হাইয়ের ভগ্নিপতির সঙ্গে শ্রীপুর স্টেশনে দেখা হয়েছিল। তিনি সেখানে বদলি হয়ে এসেছেন। বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা স্টেশনে পৌছেছি। দুপুর ৩টা ২০ মিনিটে বাসা থেকে বের হলাম। বার লাইব্রেরিতে কারও দেখা পেলাম না। হাসান, লুলু, নান্না মিয়া, শামসুল হক, সাদির মােক্তার এবং সিরাজ প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। সিরাজ আমাকে কাপাসিয়া পুলিশের দুর্নীতি সম্পর্কে বলল। হাসান ও লুলু একটা বন্দুকের লাইসেন্স করার চেষ্টা করছিল লুলুর নামে। সে জন্য তারা নান্না মিয়ার সহায়তা চেয়েছে। তারা আমাকে ইসলামিয়া রেস্টুরেন্টে নাস্তা খাওয়াল। বিকেল ৫টায় যােগীনগর গিয়ে তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। অলি আহাদ এবং অন্যান্যদের যুব লীগ অফিসে পেলাম। ৬টায় ডা, করিমের ফার্মেসিতে গেলাম। কিন্তু তার দেখা পেলাম না। বাবু বাজারে আশুর সঙ্গে দেখা হল। তার বাবাও সেখানে ছিলেন। সন্ধ্যা ৭টায় কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম এবং মুহুরির কাছ থেকে সাক্ষ্য ও অন্যান্য কাগজ পত্রের নকল নিলাম। আশু সে পর্যন্ত আমার সঙ্গে ছিল।
রাত ৮টায় ফিরলাম। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প। সকালে মেঘের আয়ােজন দেখে মনে হল বৃষ্টি হবেই। তাপমাত্রা বেশি। রাতে বাতাস থাকায় তাপমাত্রা সহনীয়। ১১. ৫.৫১ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টায় বের হলাম। জালালের সঙ্গে দেখা করলাম। সে জানাল, ডিআইজি অফিসে এখন পর্যন্ত কোন চিঠি পেীছেনি। সে আরেক বার খােজ করবে। পাঁচ মিনিটের মত কথা বলে তার বাসা থেকে চলে এলাম। এরপর সরাসরি কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম। তিনি ৮টায় নিচে নামলেন। ৯টায় তার সঙ্গে বার লাইব্রেরিতে গেলাম। জনাব আতাউর রহমানের সঙ্গে দেখা করলাম। বেলা সাড়ে ১২টায় বাসায় ফিরেছি। বিকেল সাড়ে ৫টায় যােগীনগর গেলাম। ওখানে কাউকে পেলাম না। ডা. করিমের ফার্মেসিতে গেলাম। তার কাছে ১০০ টাকা ভাঙালাম। সে আমাকে ৫০/- দিল। সন্ধ্যা সােয়া ৭টার দিকে সেখান থেকে বের হলাম। সাড়ে ৭টায় কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে গেলাম। তিনি বাইরে ছিলেন। রাত পৌনে ৮টায় আতাউর রহমান। সাহেবের ওখানে গেলাম। কামরুদ্দীন সাহেবও ওখানে এলেন। আতাউর রহমান সাহেব রাত ৯টায় বাইরে থেকে ফিরলেন। রাত ১১টার দিকে তার সঙ্গে আমার ফাইল নিয়ে আলােচনা হল। সােয়া ১১টায় বাসায় ফিরেছি। রাত ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : প্রচণ্ড গরম। রৌদ্রজ্জ্বল দিন। পরিষ্কার রাত। বাতাস থাকা সত্ত্বেও সব মিলিয়ে কমবেশি ঘাম ঝরানাে গরম।

সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর দেড়টায় কোর্টে যাবার জন্য বের হলাম। ওয়ারিস আলীও সে সময় এল। ২টায় সাক্ষির জেরা শুরু হল। আতাউর রহমান সাহেব নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে পৌনে ৩টায় পাল্টা জেরা শুরু করলেন। সুফিয়ননেছা, আকবর আলী, আব্বাস সিকদার, ফালু ও সােবহান সাক্ষি দিল। বিকেল সাড়ে ৪টায় আগামী ২/৬/৫১ তারিখ পর্যন্ত কেস মুলতবি হল। কামরুদ্দীন সাহেবের ক্লার্ককে তখনি ১/- দিলাম সাক্ষ্যের নকল তােলার জন্য আবেদন দাখিল করতে। প্রতিশ্রুতি দিলেও ডা. করিম, তােয়াহা সাহেব অথবা অন্য কেউই কোর্টে আসেনি। বিকেল সাড়ে ৫টায় কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম। তিনি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রেজাই করিমের ওখানে গেলেন। সেই সময় আমি আতাউর রহমান সাহেবের কাছে গিয়ে তাকে নিয়ে রাত ৯টায় জনাব রেজাই করিম সাহেবের কাছে গেলাম। সেখানে এফ. রহমান, সামদানী এবং আরও অনেকে ছিলেন। আমি তাদেরকে সেখানে রেখে রাত ১১টায় বাসায় ফিরে এলাম। রাত ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রৌদ্রজ্জ্বল দিন, পরিষ্কার রাত। তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকলেও বাতাসের কারণে সারাক্ষণই সহনীয় ছিল। বি. দ্র. : আমি যে বাসায় থাকি সে বাসার কর্তাব্যক্তি আনসারুজ্জামান গতকাল ১১/৫/৫১ তারিখ বিকেল ৪টায় একরামের হাতে আমার কাছে একটি চিরকুট পাঠিয়েছেন। চিরকুটে আমাকে দায়িত্বে অবহেলা, অসতর্ক চলাফেরা, সুশীলতার অভাব এবং অমার্জিত শব্দ ব্যবহারের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। আমি কিছুক্ষণ পরেই তার মুখের ওপর আমার তাৎক্ষণিক জবাব দিয়েছি। তখন তাকে মনে হল তিনি তার ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত। আবার আজ ১২/৫/৫১ তারিখ রাত সাড়ে ১১টার দিকে এই বাড়ির আর একজন কর্তাস্থানীয় আবদুর রউফ আমার বাইরে যাওয়া নিয়ে তার ছেলেদের মাধ্যমে পরােক্ষভাবে আমার প্রতি রূঢ় শব্দ ব্যবহার করেছেন।
এতে আমার আত্মসম্মানবােধে আঘাত লাগল এবং সম্মান ধুলােয় মিশে। গেল। আমি এখানে থাকব কি না তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছি । ১৩.৫, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বের হলাম। সদরঘাটে জুতাে ও চামড়ার ব্যাগ মেরামত করালাম। সেখানে হঠাৎ এসআই নূরুল হকের সঙ্গে দেখা হল। তিনি আমাদের। মামলা নিয়ে কথা বললেন। আমি তাকে আমার মামলার পরবর্তী তারিখ জানালাম। তাকে আরও বললাম, সেদিন এসআই ইসমাইলের সঙ্গে তাকেও জেরা করা হতে পারে। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে গেলাম। পরে দু’জনে এস, এম. জহিরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম। সেখান থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাসায় ফিরে এলাম। সন্ধ্যার পর ভিক্টোরিয়া পার্কের জনসভায় গেলাম। খুলনার দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে সেখানে জনসভা আয়ােজন করা হয়েছিল। জনাব এ. কে. ফজলুল হক সভায়। সভাপতিত্ব করেছেন। আমি যখন সভায় গেলাম তখন মওলানা ভাসানী তার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে ছিলেন। সাড়ে ৭টায় বার লাইব্রেরি হলে গেলাম। সেখানে যুব লীগ রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠান আয়ােজন করেছিল। হল উপচে পড়া দর্শক। অনেকে চাপাচাপি করে দাঁড়িয়ে। আছে। তখনও অনুষ্ঠান শুরু হয়নি। রাত পৌনে ৮টায় বাসায় ফিরলাম। আবহাওয়া : রৌদ্রজ্জল দিন। অত্যাধিক গরম। অল্প বাতাস আছে।

১৪, ৫.৫১ – মৈশনের পথে – ভাের ৫টায় ঘুম ভাঙল। মওলানা ভাসানী, শামসুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ছাত্র, একজন ডিআইবির রিপাের্টার, আমি এবং নান্না মিয়া, টুকু মিয়া, বুরুজ প্রমুখ সকাল ৬টা ৫ মিনিটের ট্রেনে রওনা হলাম। টঙ্গী থেকে ঝড় বৃষ্টি শুরু হল। শামসুল হক ঢাকা ফিরে গেলেন। বৃষ্টির কারণে আমরা শ্রীপুরের ডিস্ট্রিক্ট বাের্ড বাংলােয় বেলা ১১টা পর্যন্ত। অপেক্ষা করলাম। আগে থেকে যাতায়াতের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। বেলা ১২টায় মহিষের গাড়িতে করে শ্রীপুর থেকে রওনা হয়ে দুপুর আড়াইটায় গােসিঙ্গা পৌছলাম । মহিষের গাড়ি বিকেল ৪টায় আমাদের দেওনা কাচারিতে পৌছে দিল। ওখান থেকে পায়ে হেঁটে মিয়া বাড়ি পৌছলাম এবং সাড়ে ৫টায় দুপুরের খাবার খেলাম । আমি সারা পথ হেঁটে এসেছি। সন্ধ্যা ৬টায় জনসভা শুরু হল। মওলানা ভাসানী সভাপতিত্ব করলেন। প্রায় তিন হাজারের মত মানুষ উপস্থিত ছিল। আমি মওলানা সাহেবকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। মফিজ সাহেব সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলেন। মওলানা সাহেব রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রায় দেড় ঘন্টা বক্তব্য রাখলেন। মাইক ভাল কাজ করেছে। খুলনা থেকে আগত এক যুবক ওখানে সাহায্য প্রার্থনা করল। তার জন্য ৪০/- পাওয়া গেল। স্থানীয় হাই স্কুলের জন্য কিছু টাকা চাঁদা এবং কিছু টাকার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেল। রাত সাড়ে ৯টায় জনসভা শেষ হল। রাতে মিয়া বাড়িতে থাকা হল। সেখানে খাওয়া দাওয়া হল। রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সকাল থেকে আকাশে মেঘ জমছিল। সকাল পৌনে ৭টায় আধ ঘন্টা ভারি বর্ষণ ও ঝড় হল। তারপর মধ্যম বা হালকা বর্ষণ প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। দিনের বাকি সময় মনােরম। সূর্য ও বৃষ্টিহীন। বি. দ্র. : ১) ১৪/৪/৫১ তারিখ সন্ধ্যায় মওলানা হাসরাত মােহানী মারা গেছেন। ২) আজ ১৪/৫/৫১ তারিখ খুব ভােরে হাকিম মিয়ার ভাই আব্বাস আলী মারা গেছে।
১২৫

১৫. ৫.৫১ – ঢাকার পথে – ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম ভাঙল। নাস্তা এবং খাবার খাওয়ার পর সকাল ৮টার দিকে মৈশন থেকে বের হলাম। মওলানা সাহেব আরও কয়েকজনসহ আমাদের বাড়ি পর্যন্ত হেঁটে এলেন। আমি মাইক নিয়ে আসা যুবক বিজয়কে আমাদের মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে এলাম। সে গতকাল শ্রীপুর পৌছানাের পর থেকে ভীষণ জ্বরে ভুগছে। আমরা আধ ঘন্টার জন্য আমাদের বাড়িতে থেমেছিলাম। আমাদের বাড়িতে দৈ খেয়ে বেলা সােয়া ১১টায় আমরা শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। আমরা একেবারে ঠিক সময়ই শ্রীপুর পৌছলাম এবং দুপুর ১টা ১৭ মিনিটে ট্রেনও ছাড়ল সঠিক সময়ে। দুপুর সােয়া ৩টায় ঢাকা পৌছলাম। সবাইকে যার যার গন্ত ব্যে পাঠিয়ে দিলাম। আমি ডা. করিমের বাসায় গেলাম। কোন পুরুষ লোেক বাসায় ছিল না। সেখানে গােসল করে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিশ্রাম নিলাম । ৬টায় লজিংয়ে ফিরেছি। বাকি সময় আর বাইরে বের হইনি। গত দুই দিন দীর্ঘ পথ পায়ে হাঁটার কারণে ভীষণ ক্লান্ত বােধ করছি। রাতের খাবার খাওয়ার পর রাত ১১টার দিকে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন প্রখর রােদ। তাপমাত্রা বেশি এবং প্রচণ্ড গরম। রাতে বাতাস থাকায় এবং তাপমাত্রা কম হওযায় রাতটা কমবেশি আরামদায়ক। ১৬. ৫.৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। দুপুর সােয়া ৩টায় বের হলাম। বের হবার সময় ঢাকা ফেন্সি লন্ড্রিতে শার্ট ও পায়জামা ধুতে দিলাম। দু’টি মামলার কার্যক্রম দেখলাম । একটি প্রথম অতিরিক্ত সাব জজ আদালতে এবং অন্যটি দ্বিতীয় অতিরিক্ত সাব জজের আদালতে। আদালতে জনাব রেজাই করিম, জনাব আতাউর রহমান এবং কামরুদ্দীন সাহেব একে একে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মামলা পরিচালনা করলেন। এরপর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বার লাইব্রেরিতে বসলাম । মুসলিম লীগের মামলা নিয়ে কথা বললাম। আতাউর রহমান সাহেবকে মওলানা ভাসানীর জনসভার বিবরণ দিলাম । তখন সেখানে অন্যান্যদের মধ্যে আসাদুল্লাহ, এফ. রহমান খান, সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন। ফেক্টোতে (Fecto) যেতে চেয়েছিলাম। আকাশের বিস্ফোরণমুখ অবস্থা দেখে তাড়াহুড়াে করে ৬টার দিকে বাসায় ফিরতেই বৃষ্টি শুরু হল। রাত সাড়ে ১০টা বিছানায় গেলাম । আবহাওয়া : সারাদিন ফোস্কাপড়া গরম। সন্ধ্যায় আকাশ ঘন কালাে মেঘে ছেয়ে গেল। ৬টার দিকে আধ ঘন্টার জন্য ভারি বর্ষণ হল। বৃষ্টিহীন রাত। রাতের আবহাওয়া নাতিশীতােষ্ণ। এ বছর অনেকটা অদ্ভুতভাবেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সমগ্র পূর্ব বাংলা থেকেই ঝড়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষয় ক্ষতিরও খবর পাওয়া যাচ্ছে প্রায় সব জায়গা থেকেই। অনেক জায়গা থেকে বৃষ্টিহীন ধুলিঝড়ের খবরও পাওয়া গেছে।
১৭, ৫, ৫১ ডাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মুশাররফ চৌধুরী আমার কাছে এসেছিল। সে আমাদের হলের গঠনতন্ত্র সাব কমিটি নিয়ে কথা বলল। সে আমার মামলার অবস্থাও জানতে চাইল। এই বিষয়টি তারা বাবর আলীর কাছ থেকে জেনেছে। সে সাড়ে ১০টার দিকে চলে গেল। দুপুর আড়াইটায় ফেক্টোতে গেলাম এবং শামসুল খান, নান্না মিয়া প্রমুখ আমাকে যে ২৭/- দিয়েছিল তা জমা দিলাম। পৌনে ৩টায় সেখান থেকে বের হলাম। দুপুর ২টা ৫০ মিনিট থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় সাব জজের আদালতে জনাব রেজাই করিম এবং আতাউর রহমান সাহেবের মামলার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করলাম। সন্ধ্যা ৬টায় লতিফ বিশ্বাস দ্বিতীয় অতিরিক্ত সাব জজের আদালতে একটি মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হল। এই মামলার জুরিদের একজন। আব্বাস মাঝি আমার সঙ্গে যেচে আলাপ করলেন।
এরপর সরাসরি হলে গিয়ে মুশাররফ চৌধুরীর দেখা পেলাম। ১৯/৫/৫১ তারিখ বিকেল ৫টায় গঠনতন্ত্র উপ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। নুরুল হক, এস, আলম, ওয়াহিদুর রহমান প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। তারা সবাই আমার মামলার বর্তমান অবস্থা জানতে চাইল। সন্ধ্যা ৭টার দিকে হল থেকে বের হলাম। নবাবপুরে হানিফের দোকান থেকে শার্টের কাপড় কিনে লক্ষ্মীবাজারে দর্জির দোকানে দিলাম। রাত ৮টায় ফিরলাম। ডা, করিমকে তার ফার্মেসিতে পাওয়া গেল না। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : এই ঋতুর স্বাভাবিক নিয়মে আকাশে ভাসমান মেঘখণ্ড থাকা সত্ত্বেও পরিষ্কার দিন ও রাত। বাতাসের কারণে তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে। ১৮. ৫. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম ভাঙল। দুপুর দেড়টায় কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম। তার সঙ্গে এস, হকের বাচ্চার আকিকায় যাবার ব্যাপারে পরামর্শ করলাম। কামরুদ্দীন সাহেব বললেন, তিনি যাবেন না। কারণ বাচ্চার জন্য উপহার কেনার মত কোন টাকা তার কাছে নেই। তিনি আমাকে আকিকায় যেতে বললেন। আমি সদরঘাট গিয়ে বাচ্চার জন্য জামা ও প্যান্ট কিনলাম। আড়াইটায় ৩২ পন্নিটোলায় (তাঁতিবাজার) জনাব শামসুল হকের বাচ্চার আকিকায় যােগ দিলাম। সেখানে তখন খাবার পর্ব চলছিল। অন্যান্যদের মধ্যে সেখানে আতাউর রহমান খান, কে, চৌধুরী, জি, সামদানী, আলী আহমদ খান এমএলএ, মানিক মিয়া, এস, এ. রহিম, আউয়াল, আলমাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ. রব চৌধুরী, আবুল হাশিম উপস্থিত ছিলেন। অতিথিদের আপ্যায়ন করছিলেন ওয়াদুদ, এন, ইসলাম, বাহার আলী ও শওকত। খাবার পর জনাব আবুল হাশিম আমাদের সঙ্গে কথা বলতে বসলেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কথাবার্তা চলল। তারপর তিনি উমর এবং তার মায়ের সঙ্গে চলে গেলেন। আমি সন্ধ্যা ৭টায় সেখান থেকে বের হয়ে সদরঘাট থেকে আজাদ পত্রিকা কিনে ধুলি ঝড়ের ধাওয়ায় প্রায় দৌড়ে বাসায় ফিরলাম।

রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সন্ধ্যা পর্যন্ত উজ্জ্বল দিন। বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যার পর মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হল। রাতের আকাশ পরিষ্কার নয়। বাতাস ও বৃষ্টির প্রভাবে গরম সহনীয় । ১৯, ৫৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। দুপুর সােয়া ২টায় জজ কোর্টে গেলাম। নান্না মিয়া, শামসুল খান, দুলার বাপ, ওয়ারিস আলী, আইয়ুব আলী প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। ওয়ারিস আলী বলল, দেওনার আশরাফ আলী নামে একজন গত শনিবার তার বাড়িতে ডাকাতি প্রচেষ্টার অভিযােগ এফআইআরে আইয়ুব আলীসহ আরও দু’জনের নাম উল্লেখ করেছে। আইয়ুব আলীও আমাকে সে রকম ইঙ্গিত দিল এবং আমাকে তার বাড়ি নিয়ে যেতে চাইল। জনাব আতাউর রহমান ও কামরুদ্দীন সাহেবের পরিচালনায় মামলার সব ক’জন অভিযুক্ত আসামি মুক্তি পেয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় অ্যাসেমব্লি হলে আমাদের হলের সংবিধান উপ কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলাম। জনাব এম, জি, চৌধুরী সভায় সভাপতিত্ব করলেন। মতিন, বদিউর উপস্থিত ছিল। তােয়াহা সাহেব কমিটির নতুন সদস্য নির্বাচিত হলেন। সন্ধ্যা ৭টায় হল থেকে বের হলাম। ফেরার পথে ফার্মেসিতে ডা. করিমের সঙ্গে দেখা করলাম । করিম আমাকে একজন প্রকাশকের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে বই লেখার কাজে তাকে সহায়তা করার জন্য বলল। রাত ৮টার দিকে ফিরলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : বৃষ্টি হয়নি। কমবেশি পরিষ্কার দিন। রাতও পরিষ্কার। রাতে সুন্দর বাতাস প্রবাহিত হতে থাকল। তাই গরম বেশি অনুভূত হয়নি।

২০. ৫. ৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৯টায় কারকুন বাড়ি লেনে আইয়ুব আলীদের বাসায় গেলাম। সেখানে কাদের ভুইয়া, হাসান ও সামসু উপস্থিত ছিল। আইয়ুব আলী জানাল, দেওনার কোন এক আশরাফ আলী তার বাড়িতে ডাকাতি প্রচেষ্টার জন্য দায়ের করা এফআইআরে সন্দেহভাজন হিসেবে তার নাম দিয়েছে। আইয়ুব আলী আমাকে অনুরােধ করল তার জন্য কিছু করতে। সে আমাকে আরও বলল, থানার ওসিকে বিনামূল্যে জ্বালানি কাঠ না দেয়ায় ওসি ক্রুদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছে। আইয়ুব আলী এসপিকে উদ্দেশ করে ওসির বিরুদ্ধে অভিযােগ করে লেখা দরখাস্তের খসড়া দেখাল। এফআইআর দায়েরকারীর বিরুদ্ধে নয়, শুধুমাত্র ওসির বিরুদ্ধেই সে অভিযােগ করেছে। ওদের সাথে দুপুরে খাবার খেয়ে বিকেল ৪টায় বের হয়েছি। ডা, করিমের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করে বিষয়টি তাকে জানিয়ে যােগীনগর গেলাম। পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক বইয়ের বিষয়সূচি টাইপ করলাম। আমাদের হলের নূরুল হক সেখানে এসেছিল। আমি অলি আহাদকে আইয়ুব আলীর মামলার বিষয়টি জানালাম। তাদের কাছ থেকে শুনলাম হাসনাতের প্রেমিকা নিভা রায় কলকাতা থেকে একা ঢাকায় তার কাছে চলে এসেছে। অলি আহাদ আমাকে যুব লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভার কথা মনে করিয়ে দিল। সন্ধ্যা ৬টায় কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে গেলাম। কিন্তু তিনি তখন বাইরে ছিলেন। পৌনে ৭টায় আইয়ুব আলীর ওখানে গেলাম। সে আমাকে কাপাসিয়া থানার ৮(৫) ৫১ মামলার এফআইআর দেখাল । রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা বললাম। কাপাসিয়ার ওয়াসিমউদ্দিনও সেখানে ছিল। পরে দর্জির কাছ থেকে শাট নিয়ে রাত সাড়ে ৮টায় বাসায় ফিরলাম। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সন্ধ্যার পর থেকে আকাশে মেঘ জমল। দেখে মনে হল যেন বৃষ্টির প্রস্তুতি। রাতে সম্ভবত শেষ রাতে বৃষ্টি হয়েছে। সহনীয় তাপমাত্রা।
১৩০

২১. ৫. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা সােয়া ১১টায় আইয়ুব আলীর ওখানে গেলাম। কাদের ও আইয়ুব আলীর সঙ্গে সেখানে আকবর আলীকে কথা বলতে দেখলাম। আইয়ুব আলীর বাড়ি থেকে আগত সরদার আমাদেরকে জানাল যে, কাপাসিয়ার ওসি রবিবার (গতকাল) থানায় গিয়ে তদন্ত করেছেন। আইয়ুব আলীর অনুরােধে হাসানের সঙ্গে আদালতে গেলাম। সেখানে ফজলু, হামিদ মােক্তার এবং মজিবের সঙ্গে কথা বলে তাদের আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করলাম। বার লাইব্রেরিতে গিয়ে কামরুদ্দীন সাহেবকে বিষয়টি জানালাম । দুপুর ৩টায় কোর্টে আইয়ুব আলী ও সরদার জনাব রহমানের কোর্টে আত্মসমর্পণ করলে তিনি তাদের জামিন মঞ্জুর করলেন। বিকেল সােয়া ৫টায় কোর্ট থেকে বের হয়েছি। যুব লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় অংশ নিতে যােগীনগরে গেলাম। উপস্থিতি কম হওয়ায় কোরাম হল না। অলি আহাদ, তােয়াহা সাহেব, সামাদ ও অন্যান্য কয়েকজন সেখানে ছিলেন। অলি আহাদকে সংবাদে আমার জন্য একটি চাকরি খুঁজে দিতে অনুরােধ করলাম। এই বিষয়ে সে দেখবে বলে রাজি হল। রাত ৮টার দিকে বাসায় ফিরলাম। রাত ১২টার দিকে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সাতসেঁতে পরিবেশ। সন্ধ্যায় হালকা বৃষ্টি হল। রাত ১১টার দিক থেকে দীর্ঘ সময় ধরে ভারি বর্ষণ হল। রাতের তাপমাত্রা কম। ২২. ৫.৫১ সকাল ৬টায় ঘুম ভাঙল। গত রাত লাইলাতুল কদরের রাত ছিল। আজ শবেবরাতের ছুটি। বিকেল সাড়ে ৩টায় যুব লীগের অফিসে গেলাম। প্রেসে দেয়ার জন্য সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সম্পাদকের বিবৃতি টাইপ করলাম।

শুনলাম আজ সন্ধ্যায় নিভা রানী রায়ের সঙ্গে হাসনাতের বিয়ে হবে তার বাসায়। শামসু, বদি, মহিউদ্দীন, পারু, মতি হাসনাতের বাসায় আছে। সন্ধ্যা সােয়া ৬টায় যুব লীগ অফিস থেকে বের হলাম। নবাবপুর-ঠাঠারি বাজার ক্রসিংয়ের কাছে করিমের সঙ্গে দেখা হল। তার সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক লেখা প্রসঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বললাম। এরপর সিমসন রােড হয়ে নদীর তীরে গেলাম। ফেরার পথে মুশাররফ চৌধুরী, নূরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা হল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাসায় ফিরলাম। আমার বাসার দোতলায় রাতে ৯টায় প্রায় এক ঘন্টা মিলাদ-উন নবীর অনুষ্ঠান হল। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দিনেরবেলায় ভাসমান মেঘের কারণে সূর্যের তেজ কম ছিল। সন্ধ্যা থেকে তাপমাত্রা কম। মধ্য রাতের পর থেকে বাতাসের কারণে তাপমাত্রা আরও কম। ২৩, ৫, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম ভাঙল। বেলা ১০টায় আবদুল খানের মামলার বিষয়ে কথা বলতে কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম। সেখানে কেউই ছিল না। মুহুরি রেকর্ড সংগ্রহ করেনি। তিনি বাসায় ছিলেন। বেলা সােয়া ১১টায় স্টেশনে গেলাম। আসিমউদ্দিন ও অন্যান্যরা ট্রেন থেকে নামলেন। কিন্তু আবদুল খানরা আসেনি। বার লাইব্রেরিতে গেলাম। আতাউর রহমান এবং মােমেন সাহেব সেখানে ছিলেন। ওখানে আবদুল খানের দেখা পেলাম । ভুলেশ্বরের গফুর এবং হােসেন খানকে সেখানে দেখলাম। দুপুর ১টায় বাসায় ফিরলাম। গােসল করে খাবার খেলাম। সােয়া ২টায় আবার বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সময় মত সাক্ষিরা উপস্থিত না থাকায় ৩টায় আবদুল খানের কেস মুলতবি হয়ে গেল। এরপরে আদালত থেকে বের হয়ে বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নবাবপুর

থেকে আনােয়ারার জন্য জুতাে এবং আবদুল খানের জন্য গেঞ্জি কিনলাম। নবাবপুর রােডে অলি আহাদ ও ডা. করিমের সঙ্গে দেখা হল। আবদুল খান সেখান থেকে। চলে গেল। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে যােগীনগরে অলি আহাদের কাছে গেলাম। তিনি আমাকে যুব লীগের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ের দু’টি নােট দিলেন। একটি হালিমের জন্য। আমি সাইকেল চালিয়ে পুরানা পল্টনের উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতাধীন সম্পূর্ণ এলাকায় ঘুরলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাসায় ফিরলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। মেঘাচ্ছন্ন দিন। তাপমাত্রা কম। ঠাণ্ডা রাত। ২৪. ৫.৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম ভাঙল। বিকেল সােয়া ৪টায় বের হলাম। জনসন রােডে গিয়ে দেখি হালিমের দোকান বন্ধ। তাই তাকে নােটটা দিতে পারলাম না। বিকেল ৫টায় যােগীনগর গেলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে যুব লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা শুরু হল । আমি সভাপতিত্ব করলাম। সভায় নরসিংদীর সহ সভাপতি জনাব মজিদসহ ৮জন উপস্থিত ছিলেন। রাত ৮টায় সভা শেষ হল। সাড়ে ৮টায় বাসায় ফিরলাম। যুব লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা থাকায় বিকেলে মােমেন উকিলের নাস্তার দাওয়াতে যেতে পারিনি। বৃষ্টির কারণে সাক্ষ্য প্রমাণের নকল নেয়ার জন্য কোর্টেও যেতে পারিনি। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর ১টা থেকে প্রায় দেড় ঘন্টা মুষলধারায় বৃষ্টি হয়েছে। সারাদিন রাত মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। তাপমাত্রা কম। শীতল পরিবেশ।

২৫.৫, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ কবি কাজী নজরুলের ৫২তম জন্মদিন। বেলা সাড়ে ১১টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। আতাউর রহমান সাহেব, কামরুদ্দীন সাহেব, জমির, জহির, জহিরুদ্দীন সাহেবসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হল। সাক্ষ্য প্রমাণের নকল নেয়া হয়েছে। কাদের ভূঁইয়া আমার সঙ্গে কথা বলল। দুপুর পৌনে ১টায় যােগীনগরে গেলাম। সেখানে অলি আহাদসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হল। দুপুর আড়াইটায় বাসায় ফিরেছি। বিকেল সােয়া ৫টায় সাইকেল নিয়ে বের হলাম । ৬টায় জালালের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। কিছু নথিপত্রের জন্য ডিআইজি এবং এসিবিকে লেখা ম্যাজিস্ট্রেট ওবায়দুল্লাহর ইস্যু করা চিঠি নিয়ে কথা বললাম। সােয়া ৬টায় জিন্দাবাহার গেলাম। সেখানে শুধু মুহুরিকে পেলাম। সন্ধ্যা ৭টায় সেখান থেকে বের হলাম। তারপর সাইকেল চালিয়ে লক্ষ্মীবাজার হয়ে সূত্রাপুর থানা পর্যন্ত গিয়ে ফরাশগঞ্জ হয়ে নর্থ ব্রুক হল সংলগ্ন নদীর পারে গেলাম। সেখানে ইফাজউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হল। সে ডা, সুফিয়ানীর মেয়ের প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য রাত ৮টায় আমার সঙ্গে বাসায় এল। রাত সাড়ে ৮টা সে চলে গেল। রাত সাড়ে ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। যতটা পরিষ্কার থাকার কথা, দিন ও রাত ততটাই পরিষ্কার। সহনীয় ও আরামদায়ক পরিবেশ।

২৬. ৫. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম ভাঙল। সারাদিনই বাসায়। একবারও গেটের বাইরে গেলাম না। বিকেল ৫টায় জিএস মুশাররফ হােসেন আমার কাছে এসেছিল। সে আমার সঙ্গে নরসিংদী যাবার বিষয়ে কথা বলল। আমি যাব না বলে জানালাম এবং তাকে অন্য সদস্য ও বন্ধুদের নেয়ার জন্য বললাম। সে ৬টার দিকে চলে গেল। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : উজ্জ্বল সূর্যোদয়ের মধ্যে দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন রৌদ্রস্নাত দিন। তাপমাত্রা যতটা উষ্ণ হওয়ার কথা ততটা নয়। বরং রাতেই গরম বেশি।
—————————-
সরকারের পৃষ্ঠপােষকতায় এ বছর ইকবাল দিবসে নিঃসন্দেহে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাড়া পাওয়া গেছে। কিন্তু জনগণের বিরাট অংশ স্বতঃপ্রণােদিত হয়ে রবীন্দ্র জয়ন্তী এবং নজরুলের জন্মদিন পালন করল। খবর পাওয়া গেছে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ, এমনকি প্রত্যন্ত এলাকার মানুষও নতুন লক্ষ্যে দিবস দুটিতে অংশগ্রহণ করেছে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণ।
১৩৫

২৭. ৫.৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় জিন্দাবাহার পৌছলাম। কামরুদ্দীন সাহেব বললেন, আতাউর রহমান সাহেব ধামরাইয়ে জনসভায় যােগ দিতে গেছেন। তিনি না থাকায় বেজাই করিমের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতিশ্রুতি রাখা গেল না। সকালে বাসা থেকে বের হবার সময় জালালের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। জালালের বাবার চিকিৎসার জন্য ডা. করিমকে একটা চিরকুট লিখে তার হাতে দিয়েছি। পরে জিন্দাবাহর থেকে ওয়াইজ ঘাটে গেলাম। কিন্তু মানিক মিয়ার দেখা পেলাম
। বেলা পৌনে ১০টায় এফ, এইচ, এম, হলে গেলাম। সেখানে নজরুলের জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়ােজন করা হয়েছিল। আমি যখন সেখানে গেলাম তখন সভাপতি মিসেস এস. মাহমুদ বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি তার ভাষণের শেষ পর্যায়ে ছিলেন। এরপর বেলা ১১টা পর্যন্ত কাদির, মােবারুদ্দিন, সফর আলী, শামসুল আলম প্রমুখের সঙ্গে কথা বললাম। তারপর ডা, করিমের ফার্মেসিতে গেলাম। সে জানাল, তার বিয়ে উপলক্ষে আগামী রবিবার তিনি ভােজের আয়ােজন করেছেন। আমি এ প্রসঙ্গে পরামর্শের জন্য তাকে কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে বললাম। তাকে জহর আলীর অসুস্থতা এবং তার আগমনের কথাও জানালাম। দুপুর ১২টায় ফিরলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় জিন্দাবাহার গেলাম। কামরুদ্দীন সাহেব তখন বাইরে ছিলেন । শুনলাম কিছুক্ষণ আগে ডা, করিম সেখানে এসেছিল। বৃষ্টির কারণে সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত সেখানে বসে কথাবার্তা বললাম। ফকির মান্নান ও সামদানী সাহেব একবার ওখানে এসেছিলেন। পরে সদরঘাট গিয়ে লুঙ্গি কিনলাম । ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে বাসায় ফিরলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর ৩টার দিক থেকেই বৃষ্টির জন্য আকাশ প্রস্তুত ছিল। বিকেল
৫টার দিক থেকে আধ ঘন্টার জন্য মুষলধারায় বৃষ্টি হল। রাত মেঘাচ্ছন্ন। ঠাণ্ডা আবহাওয়া।

২৮. ৫. ৫১ ভাের ৫টায় ঘুম ভাঙল। দুপুর ২টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে জনাব রেজাই করিম, জনাব আতাউর রহমান, জনাব কফিল উদ্দীন চৌধুরী, জমির, জহির ও কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। আনােয়ার হােসেন তার বাবাকে নিয়ে পিপির রুমে বসে ছিলেন। তিনি তার বাবার কাছ থেকে আমার মামলার কথা শুনেছিলেন। আমার কাছে তিনি এর সত্যতা সম্পর্কে জানলেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় ডা, করিম সেখানে এলে আমরা কামরুদ্দীন সাহেবের বাসায় গেলাম । করিমের রুসমত অনুষ্ঠানের অতিথিদের তালিকা তৈরি করা হল। রাত পৌনে ৮টায় ওখান থেকে বের হলাম। কামরুদ্দীন সাহেবের বাসায় এই বছরের। প্রথম পাকা আম ও আনারস খেলাম। ঠাঠারি বাজার গিয়ে ডা, করিমের বাবার সঙ্গে দাওয়াতের বিষয়ে কথা বললাম। কার্ড ছাপতে দেয়ার জন্য বাকিকে তখনই প্রেসে যেতে বলা হল। রাত ৯টায় বাসায় ফিরলাম। এর আগে রাত ৮টার দিকে ডা, করিমের চেম্বারে অপ্রত্যাশিতভাবে আনােয়ারুল আজিমের সঙ্গে দেখা। তিনি ডাক্তারি সার্টিফিকেটের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। আমি তাকে কাপাসিয়ার কথা মনে করে দেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি আমায় চিনতে পারছিলেন না। যদিও প্রথমে তিনি বলেছিলেন, আমাকে এফ. এইচ. এম. হলে অনেকবার দেখেছেন। প্রায় সাড়ে ১৪ বছর পর তার সঙ্গে দেখা এবং কথা হল। স্মরণীয় ও রােমাঞ্চকর স্মৃতি আমাদের স্পর্শ করল। বাঘিয়ার মমতাজ এবং দেওনার আশরাফ আলীর সঙ্গে বার লাইব্রেরিতে দেখা হয়েছিল। সাহেব আলী তাদের জমির ফসলের ক্ষতি করেছে বলে জানাল। তারা এসডিও (উত্তর)-এর কাছ একটি দরখাস্ত জমা দিয়েছে। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দিন মােটামুটি পরিষ্কার। খুব বেশি গরম নয়। রাতের তাপমাত্রা না গরম না ঠাণ্ডা।

২৯. ৫.৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম ভাঙল। সকাল ৯টায় আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে তাঁর চেম্বারে দেখা করলাম। ডিআইজি ও এসিবি থেকে নথিপত্র সগ্রহের জন্য তিনি আমাকে তাগাদা দিতে বললেন। বেলা ১১টায় সেখান থেকে বের হয়ে প্রায় সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কামরুদ্দীন সাহেবকে কোর্টে খােজাখুঁজি করলাম। কিন্তু তাঁকে পেলাম না। তারপর বাসায় ফিরে এলাম। দুপুর সােয়া ৩টায় আবার বার লাইব্রেরিতে গিয়ে তাঁকে সেখানে পেলাম। বিকেল ৬টা পর্যন্ত সেখানেই বসে থাকলাম। সাহেব আলী বেপারি একবার সেখানে এসেছিল। ইয়ার মােহাম্মদও এসেছিলেন। পরে কামরুদ্দীন সাহেব, কে, চৌধুরী, মােহাম্মদ হােসেন সাহেবের সঙ্গে বশির দর্জির দোকানে গেলাম। সেখানে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ছিলাম। তারপর তারা উঠলে আমি তাদের সঙ্গে গেলাম না। আমি ক্লার্কের কাছ থেকে পাওয়া সাক্ষির সর্বশেষ সাক্ষ্য প্রমাণের নকল নিয়ে আতাউর রহমান সাহেবের কাছে গেলাম। আতাউর রহমান সাহেব সেগুলি পড়লেন। এস, এ. রহিমও সেখানে গিয়েছিলেন। রাত ৭টা। ৫০ মিনিটে সেখান থেকে বের হয়ে বাসায় ফিরে এলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দিনের প্রথম ভাগ ছাড়া সারাদিন মােটামুটি ঝকঝকে আকাশ।
তাপমাত্রা সহনীয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। রাতের তাপমাত্রা ঠাণ্ডা ও সহনীয়।
৩০, ৫, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম ভাঙল। সকাল সাড়ে ৯টায় জিন্দাবাহার গেলাম। কামরুদ্দীন সাহেব মুন্সিগঞ্জ গেছেন। জানতে পারলাম তিনি পিটিশন লেখেননি। এরপর সরাসরি আতাউর রহমান সাহেবের কাছে গেলাম। তিনি পিটিশনের খসড়া তৈরি করে দিলেন। বেলা সাড়ে ১০টায় ওখান থেকে বের হয়ে যােগীনগরে পিটিশন

টাইপ করে সাড়ে ১১টায় কোর্টে গেলাম । জহিরুদ্দীন ও জহির জনাব ওবায়দুল্লাহর কাছে আবেদন জমা দিল। দুপুর ২টায় নির্দেশ পাওয়া গেল। সােয়া ২টায় বাসায় ফিরলাম। বিকেল ৪টায় আবার কোর্টে গেলাম। ৫টায় আমি কোর্ট থেকে বের হবার আগ পর্যন্ত আতাউর রহমান সাহেব নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরেননি। তার আগে সাড়ে ৪টায় জনাব রেজাই করিমের সঙ্গে কথা বলেছি। রেজাই করিমের সঙ্গে কথা বলে বের হবার পর বার লাইব্রেরির কাছে রুস্তম আলী আকন্দের সঙ্গে দেখা ও কথা হল। ১২টা থেকে ২টার মধ্যে এসডিওর কোর্টের সামনে রওশনউদ্দিন ও ইসমাইলের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বিকেল সাড়ে ৫টায় নবাবপুরে রেলওয়ে ক্রসিংয়ের কাছে জালালের সঙ্গে দেখা হলে তাকে পিটিশনের কথা বললাম এবং কপি দেখালাম। এরপর ডা, করিমের কাছে গেলাম। শওকতও সেখানে গিয়েছিল। বাকিকে সমস্ত দাওয়াত পত্র তৈরি করতে বললাম। সন্ধ্যা ৭টায় যােগীনগরে গিয়ে অলি আহাদের সঙ্গে দেখা করলাম। সাড়ে ৭টায় বাসায় ফিরলাম। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : ঝকঝকে দিন ও রাত । তাপমাত্রা বেশ উষ্ণ।
১৩৯

৩১. ৫.৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা সাড়ে ১০টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে মােমেন সাহেব, ঠাণ্ডা মিয়া, নাঈম, এ. হাই সাহেব প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। বেলা ১১টায় প্রথম অতিরিক্ত সাব জজের আদালতে ডিএবি ঢাকা কর্তৃক দায়েরকৃত নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকা সমবায় সমিতির মামলার কার্যক্রম শুরু হল। জনাব রেজাই করিম যুক্তিতর্ক শুরু করলেন। দুপুর ১টা ১০ মিনিটে যুক্তিতর্ক মুলতবি হল। মামলার যুক্তিতর্কের সময় জনাব রেজাই করিম অতি উচ্চকণ্ঠে ভারতের বিরুদ্ধে তাঁর ব্যক্তিগত আক্রোশ প্রকাশ করলেন। তিনি পিপি শ্রী উপেন্দ্র চন্দ্রকেও তীক্ষ্মভাবে আক্রমণ করলেন। দুপুর ১টা ২০ মিনিটে দুপুরের খাবার খেয়েছি। দুপুর আড়াইটায় আবার কোর্টে গেলাম। ৩টায় আবার যুক্তিতর্ক শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় মুলতবি হল। এই পর্বে এসি পুলিশকে তাদের বেপরােয়া ও হঠকারি কার্যকলাপের জন্য তীক্ষ্ম সমালােচনা করা হল। তাদের এই আচরণের ফলে শিল্পাঞ্চল এলাকা প্রায়ােগিক অর্থে দেউলিয়া হতে চলেছে। এটাই উদ্বিগ্ন হবার বড় কারণ। এই যুক্তি যথাযথ । বিকেল ৪টায় আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। কিন্তু জনাব রেজাই করিমের সঙ্গে বসার ব্যাপারে কোন কথাই তিনি বললেন না। বিকেল ৫টায় জনাব ওবায়দুল্লাহর আদালতের কাছে আহমদ মাস্টার এবং তার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হল। ডিআইজি অফিসে যাবার পথে ব্রিটানিয়া হলের কাছে জালালকে আসতে দেখলাম। সে জানাল, নথিপত্রের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের চিঠি গতকাল তাদের অফিসে পৌঁছেছে। সেগুলি আগামীকাল পাঠানাে হবে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ৪৭ ঠাঠারি বাজার গেলাম। ডা. করিমের বাবার সঙ্গে করিমের | বিয়ে এবং সালেহার বিষয়ে কথা বললাম। করিমের বাবা জানাল, এই বিয়ে হওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট। তিনি চাঁদপুরেও করিমের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়ােজন করেছেন। ডা. করিমের দেখা পেলাম না। রাত পৌনে ৮টায় বাসায় ফিরলাম।

রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন রােদ। বেশ গরম। বিশেষ করে বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তারপর থেকে ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করেছে। মনে হয় কাছাকাছি কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। তখন থেকে বাকি রাত ঠাণ্ডা।
———————
বি. দ্র. ১) ইউএন ফোর্সের আগমনে চীন কোরিয়ার ব্যাপারে বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। ২) তেল খনি জাতীয়করণ করার কারণে তেহরানে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বৃটেন এ ব্যাপারে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। ধান ও চালের দাম বাড়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে। চাল ২৪/-, ধান ২২- প্রতি মণ। ৪) ৭, ৫. ৫১ তারিখের পরে মেডিকেল ছাত্রদের ধর্মঘট শেষ হয়েছে। ৫) গত ১ এপ্রিল থেকে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকদের ধর্মঘট চলছে।

– শুক্রবার – ১, ৬, ৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সােয়া ৯টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে কামরুদ্দীন সাহেব, এ, আর, খান সাহেব, চৌধুরী সাহেব, জহির, জমির প্রমুখের দেখা পেলাম । সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রথম অতিরিক্ত সাব জজের আদালতে জনাব আর, করিমের যুক্তি তর্ক শুনলাম। আজ যুক্তি উপস্থাপনা শেষ হয়েছে। বেলা সাড়ে ১২টায় বার। লাইব্রেরি থেকে বের হলাম। রায় সাহেব বাজারে মােহরউদ্দিন মৌলবির সঙ্গে দেখা হল। হাফিজ বেপারির বাসায় গেলাম। হাসান, শামসু ও হাফিজ বেপারি বাসায় ছিলেন। হাফিজ বেপারি ঠিক তখনই গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছেন। হাসান আমাকে এক কাপ দুধ ও কলা খেতে দিল। ওখান থেকে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে বের হয়ে সরাসরি বাসায় গেলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কামরুদ্দীন সাহেবের বাসায় গেলাম। সেখানে চা খেলাম । কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে রাত সােয়া ৯টায় সােয়ারি ঘাট গেলাম। তারপর জনাব কফিলউদ্দীন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বংশালের বাসায় গেলাম। রাত ১১টায় সেখান থেকে বের হয়ে কামরুদ্দীন সাহেবকে তার বাসার কাছে নামিয়ে দিয়ে সরাসরি বাসায় এলাম। আবহাওয়া : সারাদিন প্রখর রােদ এবং ঘাম ঝরানাে গরম। আজকে মনে হয়। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

২, ৬, ৫১ ভাের ৫টায় ঘুম ভাঙল। সকাল সাড়ে ৭টায় ওয়ারিস আলী আমার কাছে এসেছিল। আধ ঘন্টা পর সে চলে গেল। বেলা সাড়ে ১০টায় কোর্টে হাজিরা দিলাম । দুপুর ২টায় শুনানি শুরু হল। বিকেল ৪টা পর্যন্ত দু’জন আইও (ইনভেস্টিগেশন অফিসার)কে জেরা করা হল। পিডব্লিউ ওয়ানকে কাগজপত্র প্রমাণের জন্য পুনরায় ডাকা হল। তিনটি এনট্রি করা হল। এস, আহমদ মােড়ল, মজিদ মােড়ল এবং সাহাদ আলী সরকার উপস্থিত ছিল। সাহাদ আলী সরকার কোন টাকা দিল না, এমনকি সে উকিল বা আমার সঙ্গে। সৌজন্য সাক্ষাৎও করেনি। আমি এ বিষয়টি তাকে বলায় সে আমাকে ভীষণ মেজাজ দেখাল। বিকেল ৫টায় তাজে নাস্তা করলাম। দেওনার সাঈদ আলী আমার জন্য কিছু আম নিয়ে এসেছিল। সে আমগুলি বাসায় বসে খেলাম। বিকেল ৬টায় ভিক্টোরিয়া পার্কে গেলাম। মফিজউদ্দীনের সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথা হল। আমি আজ খুবই উত্তেজিত অবস্থায় ছিলাম । মফিজকে আমি আমার সমস্যার কথা বলার পরও সে আমাকে শমসেরউদ্দীন সরকারের ব্যাপারে খুব বেশি চাপ দিচ্ছিল। এই বিষয়গুলাে আমাকে ঘুব রাগান্বিত করেছিল। মফিজউদ্দীনকে আমি কঠোরভাবে তিরস্কার করলাম। সে আমাকে মুখের উপর আমি অলক্ষ্মী এবং আমি আমাদের পরিবারকে ধ্বংস করছি এমন ইঙ্গিত দিল। রাত ৮টায় বাসায় ফিরে এলাম । আবহাওয়া : সারাদিন প্রখর রােদ। দিন রাত পরিষ্কার আকাশ। তাপমাত্রা সারাক্ষণ বেশি। অতিরিক্ত গরমের কারণে রাতে ঘুমানাে সম্ভব হল না।

ভাের সাড়ে ৫টা বিছানা থেকে উঠলাম। আমার সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ার জন্য বেলা ১২টায় ইফাজউদ্দিন এসেছিল। সে আমার জন্য জাম ও আম এনেছিল। সেগুলি আমি আজমল ও একরামের সঙ্গে ভাগ করে খেলাম। সে দুটি বিষয়ে পড়ার পর দুপুর আড়াইটার দিকে চলে গেল। রাত ৯টায় আজমলকে সঙ্গে নিয়ে ডা, করিমের রুসমত অনুষ্ঠানে যােগ দেয়ার জন্য কে, বি, আফাজউদ্দীনের বাসার উদ্দেশে রওনা হলাম। একরামের জন্য অপেক্ষা করায় আমাদের দেরি হয়ে গিয়েছিল। একরাম শেষ পর্যন্ত আসেনি। এদিকে বিয়ের অনুষ্ঠানও দেরিতে শুরু হওয়ায় আমাদের দেরি হলেও আমরা প্রায় ঠিক সময়েই ওখানে পৌছালাম। রাত সাড়ে ১০টায় দ্বিতীয় ব্যাচে আমরা খেয়েছি। রাত সােয়া ১২টায় আমি আজমলের সঙ্গে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে সাড়ে ১২টায় বাসায় ফিরেছি। অনুষ্ঠানে উপস্থিতি বেশ ভাল ছিল। পুরুষ অতিথি প্রায় ৩০০শ’ জন এবং বাচ্চাসহ প্রায় ৭০ জন মহিলা অতিথি ছিলেন। এই অতিথিদের অধিকাংশই কনে পক্ষের আমন্ত্রিত। ডা. করিমের বাবাও সেখানে ছিলেন। খাবারের মান খুব ভাল ছিল না। অন্যান্যদের মধ্যে সর্বজনাব কামরুদ্দীন, এ, আর, খান, জহিরুদ্দীন, জহির, তােয়াহা, জলিল, নুরুদ্দীন, কে. বি. এ. রহমান সাহেবও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অলি আহাদ ও শওকতের অনুপস্থিতি বেশ চোখে পড়ার মত ছিল। রাত ১টায় ঘুমানাের জন্য বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বিকেল পর্যন্ত প্রখর রােদ। তারপর আকাশে মেঘ জমল এবং
কিছুক্ষণ বাতাস বইল। সারাদিন ও রাত দম বন্ধ করা প্রচণ্ড গরম। ৪, ৬, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। দুপুর সােয়া ৩টায় কোর্টে গেলাম । আইয়ুব আলীকে পেলাম না। পিডব্লিউ ১২ ও ১৩ (সি) এবং ইএক্স (জি)-র সাক্ষ্য প্রমাণের নকল চেয়ে পিটিশন লিখলাম। সেটা কুদরত আলীকে দিলাম বাকি কাজ সম্পন্ন করার জন্য। তিনি আমাকে আগামী শনিবার বেলা ১১টায় তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বললেন।
১৪৫

বিকেল ৪টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে কামরুদ্দীন সাহেব, জমির, জহিরুদ্দীন, জহির প্রমুখকে পেলাম। সাড়ে ৪টায় ওখান থেকে বের হলাম। মােঘলটুলিতে আতাউর রহমানের দোকানে সাইকেল মেরামত করতে দিলাম। বংশি বাজারের কাছে হাসানের সঙ্গে দেখা হলে সে আমাকে মিটফোর্ড স্কুলের লেকচার থিয়েটারে নিয়ে গেল। সেখানে ৫টা ১০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত যাদু দেখলাম। হল ভর্তি দর্শক ছিল। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে তাঁর চেম্বারে দেখা করলাম। তাকে এ. আর. খান সাহেবের সঙ্গে কথা বলে আমাদের মামলা নিয়ে বসার একটা তারিখ ঠিক করতে বললাম। সাড়ে ৭টায় সেখান থেকে বের হলাম। ইসলামপুরে আকরামতউল্লাহ মাস্টার সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। তিনি আমাকে তাদের ধর্মঘটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানালেন। ১৫ মিনিট তার সঙ্গে কথা বলে পায়ে হেঁটে রাত সােয়া ৮টার দিকে বাসায় ফিরলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন প্রখর রােদ। মধ্য রাত পর্যন্ত দমবন্ধ করা গরম। বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। মুষলধারায় বৃষ্টি পড়তে দেখলাম। ভাের সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে বৃষ্টি হল। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। ভাের ৫টায় উঠেছি। বৃষ্টির কারণে সারাদিন ঘরেই ছিলাম। রাত সাড়ে ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : গতকাল রাত থেকে অবিরাম বৃষ্টি। দিনের বিভিন্ন সময় বিরতি দিয়ে দিয়ে শেষ বিকেল পর্যন্ত মুষলধারায় বৃষ্টি হল। রাতে বৃষ্টি না হলেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। জলীয় বাষ্পের কারণে ঠাণ্ডা যতটা হবার কথা ততটা ঠাণ্ডা নয়। আরামপ্রদ পরিবেশ।

এছাড়া আর কোন যৌক্তিক কারণ ছিল না এমন ব্যবহারের। আমি এই ভেবেই নিজেকে প্রবােধ দিতে পারি। ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জিএস মুশাররফ চৌধুরী আমার সঙ্গে দেখা করল। সে আমার সঙ্গে হলের গঠনতন্ত্র ও সাব কমিটির মিটিং নিয়ে আলােচনার জন্য এসেছিল। আমরা দেড় ঘন্টা কথা বললাম। বেলা ১০ টায় সে চলে গেল। বৃষ্টি ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে তিন দিন বাসায় বন্দি থাকার পর আজ বিকেল ৫টায় বাইরে বের হলাম। সদরঘাটে কিছু কেনাকাটা করলাম। বাকল্যান্ড বাঁধের পূর্ব পার ধরে কিছুক্ষণ হাঁটলাম। করনেশন পার্কের কাছে আমেরের আলীম এবং সন্মানিয়ার কুদরতউল্লার সঙ্গে বসে ছিলাম। সেখানে আমার ক্লাসের এল, রহমান এবং কাজী আলী আশরাফের সঙ্গে দেখা হল। দুর্নীতি দমনের একজন ইন্সপেক্টর যেচে আমার সঙ্গে আলাপ করে আমার মামলার অবস্থা জানতে চাইল। তার সঙ্গে কথা বলার সময় নারায়ণগঞ্জের আউয়াল আমাদের সঙ্গে যােগ দিল। ইন্সপেক্টর চলে গেলে আউয়ালকে বন বিভাগের সঙ্গে আমার মামলা ও দুর্নীতি দমন বিভাগের অসহযােগিতামূলক আচরণের কথা বললাম। সন্ধ্যা সােয়া ৭টায় বাসায় ফিরলাম। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির পর ১টার দিকে মুষলধারায় কিছুক্ষণ বৃষ্টি হয়ে থেমে গেল। পরিষ্কার রাত। বাতাসে এখনও জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। রাত থেকে বাতাস বইছে।

সকাল ৬টায় উঠেছি। বেলা পৌনে ১১টায় বের হলাম। আমার বাসার সামনের লেনে নূরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা হল। সে তার পড়াশােনা ও অন্যান্য বিষয়ে কথা বলল। ঠিক ১১টা ১০ মিনিটে কোর্টে গেলাম। কুদরত আলী মিয়াকে খুঁজে বের করে ১২টার দিকে কপির জন্য টাকা জমা দিলাম। অন্যান্যদের মধ্যে সিরাজুল হকের সঙ্গে দেখা হল। দুপুর ২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বার লাইব্রেরিতে ছিলাম। সেখানে শাহাবুদ্দিন এসেছিল। সে আমাকে কিছুক্ষণের জন্য স্টেট ব্যাংকে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর আমরা পিপির রুমের সামনে গাছের নিচে বসে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কথা বললাম। সে এফ, এ. মান্নানের সঙ্গে তাদের পারিবারিক সমস্যার কথা বিশদভাবে জানাল। মােহাম্মদ হােসেন উকিল তার মেয়ের চোখের সমস্যা, রােজার তাৎপর্য ও অন্যান্য বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বললেন। বিকেল ৫টায় আমরা উঠে পড়ার আগ পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা বললাম। কামরুদ্দীন সাহেবও সেখানে ছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার মামলা নিয়ে আমরা বসব কি না। তিনি বললেন, রােজার মধ্যে সেটা হয়ত সম্ভব হবে না। তবে ১৮, ৬. ৫১ তারিখে জনাব রেজাই করিম সাহেব ফিরে এলে বসা যেতে পারে। পিডব্লিউ ১২ ও ১৩ সাক্ষ্য প্রমাণের নথিপত্রের নকল নিলাম। তারপর কুদরত আলীর সঙ্গে রিকশায় বাবুবাজার পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে আমি মােঘলটুলি গেলাম। দোকান থেকে সাইকেল নিয়ে সন্ধ্যা সােয়া ৭টায় বাসায় ফিরলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন প্রখর রােদ এবং প্রচণ্ড গরম। তবে মৃদুমন্দ বাতাস গরমকে সহনীয় করেছে। রাতেও বাতাসের কারণে তাপমাত্রায় ভারসাম্যতা এসেছে। এখনও বাতাসে জলীয় বাষ্প অনুভূত হচ্ছে। ১০, ৬, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। আজ বাইরে বের হইনি। সারাদিন রুমেই ছিলাম। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই কাটল। সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ঘুমালাম। রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম।

আবহাওয়া : রৌদ্রালােকিত পরিষ্কার দিন। তারায় ভরা রাত। বাতাস সারাক্ষণই তাপকে সহনীয় রেখেছে। ১১. ৬, ৫১ ভাের ৫টায় উঠেছি। বেলা ১১টার দিকে নাবুর ভিটার একজন লােককে নিয়ে ওয়ারিস আলী একটি কাঁঠালসহ এল এবং জানাল, তারা আইয়ুব আলীর টিউবওয়েলের পাইপ নিয়ে যাবার জন্য নৌকা নিয়ে এসেছে। দুপুর দেড়টার দিকে তারা চেলে গেল। দুপুর আড়াইটায় কোর্টে গেলাম। অফিসিয়ালি ইস্যু করার জন্য কুদরত আলীকে সাক্ষ্য প্রমাণের নকল দিলাম। জনাব রহমানের কোটে এ, আর, খানের সঙ্গে দেখা হল। সেখানে তিনি আফতাবউদ্দীনের সঙ্গে সামাদ বেপারির মামলার জেরা পাল্টা জেরা করছিলেন। সােয়া ৩টায় তিনি কোর্ট থেকে বেরিয়ে জানালেন, জনাব রেজাই। করিম সাহেব ফিরেছেন। বিকেল ৪টায় নকল নিলাম এবং বার লাইব্রেরিতে গিয়ে কামরুদ্দীন সাহেবকে। দিলাম। তাকে অনুরােধ করলাম, আগামী রােববার জনাব রেজাই করিম এবং এ, রহমান সাহেবের সঙ্গে সময় ঠিক করার জন্য। বিকেল ৫টায় সেখান থেকে বের হয়ে সরাসরি যােগীনগর গেলাম। প্রথমে সেখানে বরকত, হাসনাত, আসগর এবং পরে অলি আহাদ ও তােয়াহা সাহেব প্রমুখের সঙ্গে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কথা বললাম। কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গেলাম। সেখানে জহিরের সঙ্গে ইফতার করলাম। ডা. জহিরুদ্দীন সাহেবসহ আরও কয়েকজন সেখানে ছিলেন। রাত ৮টায় বাসায় ফিরলাম। রাত ৯টার দিকে আধ ঘন্টার জন্য ওয়ারিস আলীকে নিয়ে আইয়ুব আলী এসেছিলেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় নিয়ে কথা বলেননি। শুধু জানালেন, অগ্রীম টাকা জমা দিয়ে এবং নৌকা নিয়ে এসেও তিনি পাইপ পাননি। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দুপুরে কয়েক ফোটা বৃষ্টি হয়েই থেমে গেল। দিনের বাকি সময় ও রাত পরিষ্কার। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। সারাক্ষণই সুন্দর বাতাস ছিল।
১৫০

১২.৬.৫১
– বাড়ির পথে – ভাের রাত সাড়ে ৩টায় উঠেছি। সকাল ৬টা ৫ মিনিটের ট্রেনে রওনা হলাম। ধনাই বেপারি শ্রীপুর পর্যন্ত আমার সঙ্গে একই কামরায় ছিলেন। শ্রীপুরে আবুল হােসেন, আকরামতউল্লাহ প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। ডিসপেনসারিতে ডা, আহসানউদ্দিনের সঙ্গে কথা বললাম। মােড়ল বাড়ির কাউকে দেখলাম না। আবুল হােসেনকে অনুরােধ করলাম, সালেহ আহমদ সাহেবকে জানানাের জন্য, আজিজকে হয়ত সিডব্লিউ ও ডিডব্লিউ হিসেবে কোর্টে ডাকা হতে পারে। বেলা ১১টার দিকে বাড়ি পৌছলাম। বিয়ের পর এই প্রথম রমিজার স্বামীকে আমাদের বাড়িতে দেখলাম। সে গত চার দিন ধরে এখানে জ্বরে ভুগছে। আমাদের পূর্ব দিকের বাড়িতে রমিজার স্বামীর কাছে বসে কুদুস ও তুফানিয়া আমার সঙ্গে কথা বলল। তাদের সঙ্গে দুপুর ১টা পর্যন্ত আমাদের মামলা, আকবর আলীর সাক্ষি বিষয়ে কথা হল। সেই সময় হাকিম মিয়া সেখানে এসেছিল। আমি তাকে আমাদের মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আমরা কী করব সেই বিষয়ে নির্দেশনা নিতে আগামী সােমবার অবশ্যই ঢাকায় যেতে বললাম। দুপুর ৩টার দিকে সে চলে গেল। শেষ বিকেল পর্যন্ত টুনিয়ার উত্তর পার ও দক্ষিণ পারে আমাদের শস্য খেতের জমিতে ঘুরে বেড়ালাম । টুনিয়ার দক্ষিণ খেতে হাঁটার সময় আকবর আলী সেখানে এসেছিল। সে তাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য বলল। আমি শেষ পর্যন্ত নিচুপ ছিলাম। মফিজউদ্দীন সন্ধ্যায় আড়াল থেকে বাড়িতে এল। সে গতকাল সেখানে গিয়েছিল। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : মধ্যাহ্ন পর্যন্ত আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। কয়েক বার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হল।
বাকি দিন ও রাত পরিষ্কার। আবহাওয়া আরামদায়ক। বিশেষ করে রাতে।

১৩. ৬. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম উঠেছি। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে হাজি বাড়ি, বেপারি বাড়ি, চরের সমস্ত পাট খেত ঘুরে বেলা সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ি ফিরলাম। হাজি বাড়িতে গিয়ে খামেরের কয়েক জন জেলেকে ২টা বাঁশ কেটে নিয়ে যেতে দেখলাম। বেপারি বাড়ির নায়েব আলীর সামনে তাদের প্রশ্ন করে জানলাম, বুড়া লােক, অর্থাৎ আকুর বাপ ৪ টাকায় বাঁশ বিক্রি করেছে। জেলেদেরকে তাকে টাকা না দিতে অথবা আমার উপস্থিতিতে তাকে টাকা দিতে বললাম। ছােট চরের কাছে তুফানিয়াকে দেখলাম। সে বরমী যাচ্ছিল। আমি তাকে বিষয়টি জানালাম। আব্বাস ও সাহানকে দেখলাম মান্দির ঘাট চরের জমিতে নিড়ানি দিচ্ছে। বেলা ১০টার দিকে কালবাড়ি গেলাম। রজব আলী ভীষণ জ্বর ও গণােরিয়ায় ভুগছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা বললাম। ওয়াসিরুদ্দিন মােল্লার বড় ছেলেও সেখানে ছিল। সে বলল, যদি কোন কারণে তার বাবা ১৯, ৬, ৫১ তারিখে কোর্টে হাজির হতে না পারেন তাহলে তার জন্য কিছু করতে। দুপুর ৩টার দিকে আবদুল খান আমাদের বাড়িতে এসে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি কথাবার্তা বলে বিকেল ৫টার দিকে চলে গেলেন। রাত ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর ২টা পর্যন্ত কড়া রােদ। তারপর আকাশে হঠাৎ মেঘ জমল এবং প্রায় এক ঘন্টা বৃষ্টি হল। ভারি বর্ষণ। এই বৃষ্টি ধান গাছের জন্য খুব উপকারী হবে। খরার কারণে তা হুমকির মুখে ছিল। ১৪. ৬. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আবদুল খানের বাড়িতে গেলাম। মূলত বৃষ্টির কারণে তার বাড়িতে আটকে পড়ায় প্রায় দুপুর পর্যন্ত তার সাথে কথা বললাম। তারপর বাড়িতে ফিরলাম। আফসু ও দফতুকে দুপুর ১টার দিকে তরগাঁওয়ের চাচাকে নিয়ে আসার জন্য পাঠানাে হয়েছে।

দুপুর ৩টায় গােসিঙ্গা বাজারে গেলাম। খেয়াঘাটে বসে এক ঘন্টা বা তার কিছু বেশি সময় অনেকের সঙ্গে কথা বললাম। স্কুলের সামনে ৩টা গরু ও ২টা ছাগল জবাই করা হয়েছে। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আমি সেখানে ঘুরে ঘুরে অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বললাম। এদের মধ্যে রুস্তম আলী আকন্দ, সাহাদ আলী সরকার, আরশাদ আলী, এবং এফ, সি স্কুলের দ্বিতীয় শিক্ষক ছিলেন। আসাদের সঙ্গে মামলা এবং তার বাবার আচরণ নিয়ে কথা বললাম। তাকে জনাব আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে বললাম। সাহাদ আলী সরকারের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করে তাকেও বললাম আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে। ৭টায় কাচারিতে নায়েবের সঙ্গে দেখা করলাম। সেখানে ইফতার করলাম। ২ টাকার গরুর মাংস কিনে রাত পৌনে ৮টায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। ফিরে এসে শমসেরউদ্দীন সরকার, রামি, সদুর বাপ, সিরাজের বাবা তরগাঁওয়ের চাচা ও জব্বারের সঙ্গে দেখা হল। রাতে খাবার পর তারাবির নামাজ পড়লাম। রাত ১২টায় সবাই ঘুমাতে গেলাম। সায়েদ আলী ও তার বাবা রাতে আমাদের বাড়িতে আমার সঙ্গে দেখা করেছে। আবহাওয়া : দিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগে মুষলধারে বৃষ্টি হল। বিকেলে বৃষ্টি হয়নি। তবে আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। বাতাসে জলীয় বাষ্প উপস্থিত। ১৫. ৬. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে মরিয়মের বিয়ের দেনা পাওনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সবাই এক সঙ্গে বসলাম। দীর্ঘ ও বিস্তৃত আলােচনার পর সিদ্ধান্ত হল; ৫ তােলা সােনা, পাত্রীর অলংকার ও অন্যান্য জিনিস বাদে কাবিন ৩০০০/-। দুপুর ২টায় রমিজার স্বামী ছাড়া আর সবাই চলে গেল। দিনের বাকি সময় বাড়িতেই কাটালাম।

রাত ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দিনের শেষ ভাগ থেকে বৃষ্টি চলছে। বিকেলে মুষলধারে কিছুক্ষণ বৃষ্টি হল। তারপর থেকে বিরতি দিয়ে দিয়ে শেষ রাত পর্যন্ত হালকা বৃষ্টি। তারপর আবার মুষলধারায় বৃষ্টি। আকাশ ঘন মেঘে ঢাকা। – ঢাকার পথে – সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে রওনা হলাম। দুপুর পৌনে ১টায় শ্রীপুর পৌছলাম। ছাতা নিয়ে যাবার জন্য দফতু শ্রীপুর পর্যন্ত আমার সঙ্গে এল। পথে সাহাদ আলী সরকারের সঙ্গে তার বাড়ির কাছে দেখা হল। আমি তাকে অবশ্যই এ. রহমান। সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে বললাম। দুপুর ১টা ২০ মিনিটে ট্রেন শ্রীপুর ছাড়ল। ৩টায় ঢাকায় পৌঁছলাম। পৌনে ৪টায় বাসায় এলাম । বিকেল সােয়া ৪টায় মােঘলটুলি গেলাম। পুরানাে ছাতা মেরামত না করার পরামর্শ দিল আলাউদ্দীনের দোকান থেকে। বিকেল ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত। হায়দার সাহেবের দোকানে ছিলাম । হায়দার সাহেব তখন দোকানে ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে তাঁর বাসায় দেখা করলাম। আমার মামলা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বললাম। গত তারিখে আতাউর রহমান সাহেবের আচরণে তিনি বিরক্ত হয়েছেন। আমি তাঁকে সব ধরনের ভুল বােঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলার জন্য অনুরােধ করলাম। সন্ধ্যা ৭টায় ওখান থেকে বের হয়ে সরাসরি বাসায় এসেছি। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : গতকাল রাত থেকে শুরু হয়ে বিরতিহীন ভাবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হল। ২টার দিক থেকে বৃষ্টি পড়া বন্ধ হল। রাত কমবেশি পরিষ্কার ও নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ।

১৭. ৬. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা সাড়ে ১০টায় সােয়ারি ঘাট গেলাম। কিন্তু আতাউর রহমান সাহেব তখন বাইরে ছিলেন। এরপর সরাসরি রেজাই করিমের ওখানে গেলে প্রবেশ পথে আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট মিটিংয়ে যােগ দেবার জন্য বের হয়েছেন। চেম্বারের ভেতর তখন কামরুদ্দীন সাহেব, আফসারউদ্দীন ও এফ রহমান খান জনাব রেজাই করিমের সঙ্গে বসে একটি মামলা নিয়ে আলােচনা করছিলেন। দুপুর সােয়া ১২টায় ওখান থেকে বের হয়ে কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে সরাসরি জিন্দাবাহার গেলাম। ৩টা পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কথা বললাম। আমার মামলা নিয়ে বসার ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তহীনতায় আমার বিব্রতকর অবস্থার কথা আমি তাকে বলে ফেললাম। আরও বললাম, শুধু এ কারণেই আমি সারাক্ষণ তাদের পেছনে ছুটতে বাধ্য হচ্ছি। উল্লেখ্য, আমি বাড়ি যাবার আগেই কামরুদ্দীন সাহেবকে অনুরােধ করেছিলাম, আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে কথা বলে জনাব রেজাই। করিমের সঙ্গে বসার জন্য রােববার দিনটি ঠিক করতে। সে জন্যই বৃষ্টির মধ্যে। সমস্ত অসুবিধা এবং খারাপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে আমি গতকালই ঢাকা ফিরেছি। কিন্তু কিছুই নির্ধারিত হয়নি। জানি না কোন কারণে! দুপুর ৩টা ২০ মিনিটে বাসায় ফিরলাম। দিনের বাকি সময়টুকু ঘরের মধ্যেই
রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দিনেবেলা গরম পরিবেশ। ঠিক সূর্যাস্তের সময় হালকা বৃষ্টি হল।
রাতে সহনীয় পরিবেশ। ১৮, ৬, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। সারাদিন বাসাতে ঘরের ভেতরেই কাটালাম। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবদুল হাকিম এসেছিল। তাকে বললাম, ডিডব্লিউকে সম্ভবত নিয়ে আসা যাবে না। হাকিমের সঙ্গে ব্যবসা নিয়ে বিশেষত ভাওয়ালের খাস
১৫৫

বন এবং পাটের ব্যবসা নিয়ে কথা হল। গােসিঙ্গা কাচারির অন্তর্ভুক্ত খাস বন কেনার ব্যাপারে সাহাদ আলী সরকারের পরিকল্পনার কথাও তাকে জানালাম। সাহাদ আলী সরকারের মামলার ফি নিয়ে আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে ভুল বােঝাবুঝি এবং সালেহ আহমদ মােড়লের কাছে আমার ধার ৫০ টাকার কথা তাকে মনে করিয়ে দিলাম । হাকিম মিয়া বললেন, তিনি বিষয়টি জানেন। দুপুর দেড়টার দিকে তিনি। চলে গেলেন। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : প্রখর রৌদ্রালােকিত দিন। প্রচণ্ড গরম, বিশেষ করে রাতের প্রথম ভাগে গরম বেশি অনুভূত হল। ১৯, ৬, ৫১ সকাল ৬টায় বিছানা ছাড়লাম। বেলা সােয়া ১১টায় কোর্টে গেলাম। এসডিওর অফিসের সামনে মানিক মিয়া, আমির আলী এবং পরে শামসুল হকের সঙ্গে দেখা হল। তারা ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের মিছিলের ঘটনায় দায়েরকৃত ১৪৭ নম্বর মামলায় শামসুল হুদা ও অন্যান্যদের জামিনের ব্যবস্থা করছেন। বিনােদের মামলায় আকরামতউল্লার সাক্ষ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। আর কোন সাক্ষি উপস্থিত ছিল না। দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত প্রথম অতিরিক্ত সাব জজের আদালতে ছিলাম। সেখানে আর, করিম, কামরুদ্দীন সাহেব, এফ. রহমান এবং আফসারউদ্দীন আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন। বার লাইব্রেরিতে আতাউর রহমান সাহেবের দেখা পেলাম। তিনি জানালেন, সাক্ষিদের সাক্ষ্য প্রমাণের নথিপত্রের নকলের জন্য গতকাল তিনি একটি আবেদনপত্র তৈরি করেছেন। কিন্তু গতকাল এবং আজ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে না আসায় তা জমা দেয়া যায়নি। আমি গতকাল কোর্টে না যাওয়ায় আতাউর রহমান সাহেবকে আমার ওপর রাগান্বিত মনে হল। বুঝতে পারছি না, আমার এখন কি করা উচিত। কামরুদ্দীন সাহেব জানিয়েছেন, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ডিডব্লিউ ও সিডব্লিউকে ডাকা হবে না।
সে কারণে হাকিম মিয়াকে আমি বাড়ি ফেরত পাঠিয়েছি। সে গতকাল এসেছিল। এটা খুবই স্পষ্ট যে, তাদের মধ্যে কেউ একজন ভুলভাবে সব কিছু বিশ্লেষণ করছেন এবং তার জন্য আমি হয়রানির মধ্যে পড়েছি। আকরামতউল্লাহ ও আহমদ মাস্টার বার লাইব্রেরিতে আমার সঙ্গে দেখা করলে প্রথম জনকে আমি বিশেষভাবে সিডব্লিউর কথা বললাম। তারা দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে চলে গেল। সাড়ে ৩টায় সামসুদ্দীন সরকার খুব অল্প সময়ের জন্য আমার সঙ্গে বার লাইব্রেরিতে দেখা করেছিলেন। বিকেল ৪টায় কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম। অলি আহাদও পরে সেখানে এল। তিনি ঢাকা পৌরসভার নির্বাচন বিষয়ে কথা বললেন। আমরা কথা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ ও আসন্ন সাধারণ নির্বাচন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কথা বললাম। সন্ধ্যা ৭টায় বাসায় ফিরলাম । রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বিকেলের পর থেকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। গরম
পরিবেশ। ১৮, ৬. ৫১ তারিখে (১২ রমজান) ওজন নিয়েছি। আমার ওজন ১ মণ ২৭.৫ সের। ২০. ৬.৫১ – ১০ বছর পূর্তি – ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। দুপুর ১২টায় কোর্টে গেলাম। জনাব ওবায়দুল্লাহ কুষ্টিয়া থেকে ফিরেছেন। কিন্তু তার কোর্টে তাকে পেলাম না। ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত প্রথম অতিরিক্ত সাব জজের আদালতে বসে থাকলাম। পরে আবার জনাব ওবায়দুল্লাহর কোর্টে গেলাম। বৃষ্টির জন্য আমাকে ৩টা পর্যন্ত সেখানে আটকে থাকতে হল। তারপর বৃষ্টির প্রচণ্ডতা হ্রাস পেলে আবার প্রথম অতিরিক্ত সাব জজের আদালতে গিয়ে কামরুদ্দীন সাহেবকে আমার মামলার বিষয়টি জানালাম। কিন্তু তিনি এই সময় চরম বিরক্তি প্রকাশ করলেন তার।

গুরুগম্ভীর আচরণ ও অসহিষ্ণুতার বিশেষ প্রকাশ দেখে পরিষ্কার বােঝা গেল, আমার বার বার আসা তার কাছে আকাক্ষিত নয় অথবা আমার বিষয় তার জন্য খুবই সমস্যার কারণ। দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কোর্টে অপেক্ষা করলাম। কামরুদ্দীন সাহেব বের হয়ে এলে বার লাইব্রেরি গেট পর্যন্ত তার সঙ্গে গেলাম। তিনি আমার সঙ্গে একটাও কথা না বলে রিকশায় চড়ে বাসায় চলে গেলেন। তার পেছন পেছন আমার এই যাওয়া নিল হল। আমি প্রচণ্ড আঘাত পেলাম এবং আকস্মিক বিস্ময়ে চমকে উঠলাম। আমার এই অবস্থাটা একমাত্র তার পক্ষেই বােঝা সম্ভব, যে আসলে আমার অবস্থায় পড়েছে। যে মানুষটিকে মনে হয় আমার শুভাকাক্ষী তাঁর কাছে দিক নির্দেশনা চাওয়া সত্ত্বেও সুনির্দিষ্ট কোন দিক নির্দেশনা দিয়ে তিনি এমন ব্যবহার করলেন! জমির আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারল। এবং আমাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করল। আমি হেসে আমার চেহারায় কষ্টের ভাবটা দূর করে দিতে চাইলেও আমার মুখের অবস্থা দেখে সে সন্তুষ্ট হল না। বৃষ্টিতে বার লাইব্রেরিতে আটকে পড়ায় টিটু মিয়া ও আমি আতাউর রহমান। সাহেবের নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের ভবিষ্যৎ এবং তাঁর ও চৌধুরী সাহেবের অতীত রাজনৈতিক জীবন নিয়ে কথা বললাম। ৬টা ১০ মিনিটের দিকে বাসায় ফিরলাম। বিকেল থেকে মনের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে সেটা লাঘবের জন্য বাচ্চাদের উপন্যাস চীন দেশের ইন্দ্রজাল পড়লাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে যাবার আগেই সেটা পড়ে শেষ করলাম। আবহাওয়া : দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত মুষলধারায় বৃষ্টি। আবার বিকেল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত হালকা বৃষ্টি। তারপর আর বৃষ্টি হল না । শীতল পরিবেশ। ২১. ৬. ৫১ ভাের ৫টায় উঠেছি। সারাদিন বাসায় অলস সময় কাটালাম। মনের চাপ, আমার মামলা নিয়ে কথা বলার জন্য কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা

করা থেকে বিরত রাখল। সারাদিন ও রাতে বিষয়টি ভুলে থাকার যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম । কিন্তু পারলাম না। বরং যতবার ভাবলাম ততবারই গতকালের অস্বস্তিকর অবস্থা মনের মধ্যে তীক্ষ্মভাবে জেগে উঠল। আমি কামরুদ্দীন সাহেবের কাছ থেকে পরিষ্কার হ্যা অথবা না কিংবা দিক নির্দেশনা জানতে চাওয়ায় আমার এই অবস্থা হয়েছে। আমাকে কী করতে হবে তা না জেনে আমি উৎকণ্ঠাপূর্ণ অনিশ্চয়তার মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় আছি। যদিও প্রতিদিনই আমি তাদের সঙ্গে দেখা করেই চলেছি। পানি না থাকায় গােসল না করেই দিন কাটল। গােসল ছাড়া বিশেষত রােজার দিনে কি অবস্থা হতে পারে সহজেই অনুমেয়। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দিনের শুরু হল সূর্যের উজ্জ্বল আলােতে। সূর্যাস্ত পর্যন্ত একই রকম আলােকিত। কি আবহাওয়া আরামদায়ক। পরিষ্কার রাত। ২২. ৬, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বেলা সাড়ে ১০টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে কামরুদ্দীন সাহেব, চৌধুরী সাহেব, রেজাই করিম সাহেব, মােমেন সাহেব এবং অন্যান্যদের সঙ্গে দেখা হল। সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথা বলে কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে বের হয়ে তার বাসায় গেলাম। এর আগে বার লাইব্রেরি থেকে টেলিফোনে আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আজ সকালে নােয়াখালি থেকে ফিরেছেন। রেজাই করিম সাহেব সন্ধ্যায় তাঁর কাছে যেতে বলেছেন। বিকেল পৌনে ৬টা পর্যন্ত কামরুদ্দীন সাহেবের বাসায় ছিলাম। তার ক্লার্ক আমার কাছে টাকা চাইলে আমি তাকে টাকা দিলাম। পরে আমি হিসাব করে বাকি টাকা ফেরত চাইলে সে মিথ্যা খরচ যােগ করে পুরাে টাকাটা রাখতে চাইল। তখন আমি তার ওপর রাগান্বিত হলাম এবং তাকে কঠোর ভাষায় আমাকে ও কামরুদ্দীন সাহেবকে ধোকা ও মিথ্যা কথা বলার ব্যাপারটি বললাম। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় বাসায় ফিরে গােসল করলাম। ইফতারের পর রাত ৮টায় আতাউর রহমান সাহেবের বাসায় গেলাম। তিনি আগেই রেজাই করিম সাহেবের
বাসায় চলে গিয়েছেন। আমিও সরাসরি সেখানে চলে গেলাম। হাবিব সিংয়ের মামলার পর আমার মামলা নিয়ে আলােচনা হল। মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর কামরুদ্দীন সাহেব ও আতাউর রহমান সাহেব সিডব্লিউএস চেয়ে আবেদনের খসড়া তৈরি করলেন। জমির সেখানে ছিল। রাত সাড়ে ১০টায় ওখান থেকে বের হলাম। রাত ১১টায় ফেরার কারণে আমাকে রাতের খাবার দেয়া হয়নি। তাই না খেয়েই রইলাম। রাত সাড়ে ১১টায় বিছানায় গেলাম । আবহাওয়া : সারাদিন রােদ্রালােকিত। সূর্যাস্তের পর থেকে আকাশে মেঘ জমল। রাত সােয়া ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মুষলধারায় বৃষ্টি। তারপর আর বৃষ্টি নেই। বাতাসে জলীয় বাষ্প। সহনীয় পরিবেশ। ২৩. ৬, ৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১০টায় কোর্টে গেলাম। সিডব্লিউএস চেয়ে পিটিশন জমা দিলাম। শুনানি শুরু হল দুপুর ৩টায়। উপেন্দ্র বাবু বিরােধিতা করলেন। ২৫/৬/৫১ তারিখে আবার শুনানি হবে। আতাউর রহমান সাহেব ও কামরুদ্দীন সাহেব গতানুগতিকভাবে ও ক্ষোভের সঙ্গে শুনানী পরিচালনা করলেন। আমি নিজে বিকেল ৪টায় জনাব ওবায়দুল্লাহর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি জানালেন, আগামী সােমবার অভিযুক্তদের উপস্থিতির প্রয়ােজন নেই। তবে অনুপস্থিতির কথা জানিয়ে একটি আবেদন জমা দিতে হবে। কোটে সালেহ আহমদ মােড়ল, মজিদ মােড়ল, নিয়ামত সরকার, সাহাদ আলী সরকার ও আহমদসহ অন্যান্যদের সঙ্গে দেখা হল। বিকেল ৫টায় বার লাইব্রেরি থেকে সরাসরি সােয়ারি ঘাট গেলাম। মামলার ফাইল মানিক মিয়াকে দিলাম। তার সাথে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাদের সম্পর্কে কথা বললাম। আমি বের হওয়ার সময় আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গেও দেখা হল। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে বাসায় ফিরলাম। রাত ১১টা পর্যন্ত আহমদ, একরাম ও আসমতের সঙ্গে ঢাকার রায়ট, আমার আসন্ন
১৬০

সফর এবং অন্যান্য বিষয়ে কথা বললাম। আহমদ হঠাৎ করেই বলল, ঈদের পর সে আমাদের বাড়িতে যাবে। রাত ১২টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : পরিষ্কার আকাশ। বেশ গরম। বিকেল থেকে রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত। ঘাম ঝরানাে গরম। বাতাস নেই।
২৪. ৬. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন বাসাতেই ছিলাম। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বিছানাপত্র, কাঁথা বালিশ রােদে শুকালাম। রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবাহাওয়া : সারাদিন প্রখর একটানা রােদ। প্রচণ্ড গরম। বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প বিশেষ করে রাতে। রাতের আকাশ মেঘে ঢাকা। সারারাত চিটচিটে গরম। বাতাস নেই। রাত ৩টায় কয়েক ফোটা বৃষ্টি পড়লেও মাটিতে তার কোন চিহ্ন নেই। ২৫, ৬, ৫১ ভাের সােয়া ৫টায় উঠলাম। সকাল ৮টায় বাসা থেকে বের হয়ে সরাসরি সােয়ারি ঘাট গেলাম। আতাউর রহমান। সাহেব সাড়ে ৮টায় নিচে নেমে এলেন। সিডব্লিউএস পিটিশনের জন্য তিনি কয়েকটি রুলিং খুঁজে বের করলেন। পৌনে ৯টায় কামরুদ্দীন সাহেব ওখানে এলেন। এই সময় আতাউর রহমান সাহেব হঠাৎ করেই কোরবান আলীর ওপর। প্রচণ্ড রাগ প্রকাশ করলেন। আমি বুঝতে পারলাম না কেন তিনি রাগ করলেন। তবে। আন্দাজ করলাম, কোরবান আলী সম্ভবত আওয়ামী লীগে যােগ দেয়ার ব্যাপারে। দ্বিধা করেছে। অন্যদিকে আতাউর রহমান সাহেব তার দ্বিধা দেখে ধারণা করছেন। যে, সে হয়ত তার নিজের ভবিষ্যৎ গুছিয়ে নিতে সরকারের পক্ষে ঝুঁকে পড়েছে। তিনি কিছু আপত্তিকর রূঢ় শব্দও ব্যবহার করলেন। যা তিনি প্রায় সময়ই অন্যদের বিরুদ্ধে করে থাকেন। কোরবান আলীকে তিনি সদ্য পাট খেত বা পাট খেতের মত

জায়গা থেকে উঠে আসা চাষা বলে উল্লেখ করলেন। সাড়ে ১০টায় তার চেম্বার থেকে বের হলাম । মােঘলটুলিতে আতাউর রহমানের দোকান থেকে সাইকেল নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় কোর্টে গেলাম । দুপুর ১টা পর্যন্ত আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে জনাব সালামের কোর্টে ছিলাম । দুপুর ২টায় আমাদের মামলা কোর্টে উঠল। ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের আবেদনের বিষয়ে ২৮, ৬, ৫১ তারিখে সিদ্ধান্ত দেবেন। পৌনে ৩টায় কোর্ট থেকে বের হলাম । বিকেল ৫টা পর্যন্ত বার লাইব্রেরিতে ছিলাম। সেখানে টিটু মিয়া ও কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে কথা বললাম। তারপর হাফিজ বেপারির বাসায় গেলাম। সেখানে আইয়ুব আলীর সঙ্গে দেখা হল। সে কোর্টে সাহাদ আলী সরকারের হয়ে আমাকে ২- দিয়েছে। তাকে আমি আমার মামলার বর্তমান অবস্থা জানালাম এবং ওয়ারিস আলী ও অন্যান্যদের তা জানানাের অনুরােধ করলাম । বিকেল সাড়ে ৫টায় বাসায় ফিরলাম। সােয়া ৬টায় আসগর ও মজিদ আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তারা সন্ধ্যা সােয়া ৭টার দিকে চলে গেল। মজিদ জানাল, নরসিংদীতে যুব লীগের সম্মেলনের সময় সে মজা করে আমার বিয়ের কথা বলেছে। এখানেই বিষয়টির উৎপত্তি। রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রাত থেকে আকাশ মেঘে ঢাকা। সকালে অল্প সময়ের জন্য গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। জলীয় বাষ্পের কারণে সারাদিন গরম। বিকেল ৬টা। থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভাল বৃষ্টি হয়েছে। সারারাত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। তাপমাত্রা কম। ২৬. ৬. ৫১ ভাের সাড়ে ৪টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বৃষ্টির জন্য সারাদিন ঘরেই ছিলাম। বিকেল ৬টার দিকে আসগর আলী তালুকদার এসেছিল। সে আমাকে জানাল, মজ্ঞিন আমার জন্য কিছু চিনি যােগাড় করেছে। আমি চিনির দাম বাবদ তাকে ৫/অগ্রীম দিলাম। সে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চলে গেল।

রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : খুব অল্প বিরতি দিয়ে সারাদিনই মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ছিল। রাতেও দীর্ঘ বিরতি দিয়ে দিয়ে বৃষ্টি হয়েছে। মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করছে। ২৭. ৬, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সারাদিন ঘরেই ছিলাম। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর ১টা পর্যন্ত মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও স্যাতসেঁতে আবহাওয়ার পর আধ ঘন্টার জন্য বেশ ভাল বৃষ্টি হল। তারপর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্য দেখা গেলেও কখনও কখনও মেঘ সূর্যকে ঢেকে দিচ্ছিল। প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত তারায় ভরা আকাশ। সহনীয় পরিবেশ। ২৮, ৬, ৫১ ভাের ৫টায় উঠেছি। বেলা পৌনে ১০টায় আতাউর রহমান সাহেবের ওখানে গেলাম। তিনি আমাকে কোর্টে যেতে বললেন। যাবার পথে বৃষ্টি শুরু হলে আমার স্কুল জীবনের সহপাঠী হুমায়ুনের দোকানে আশ্রয় নিলাম। সে তখন দোকানেই ছিল। সেখানে উত্তর খামেরের বশিরউদ্দিন আমার সঙ্গে গায়ে পড়ে কথা বলল। কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে গেলাম। তার কাছ থেকে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের জন্য তৈরি করা আবেদন পত্রের কপি নিলাম। তিনি নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে চলে গেলেন। সাড়ে ১০টায় কোর্টে গেলাম। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমাদের মামলা কোর্টে উঠল। ম্যাজিস্ট্রেট সিডব্লিউএস ৬এর জন্য আদেশ দিলেন। বাদী তখন সেখানে উপস্থিত ছিল না। আমাদের পক্ষ থেকে ডিএফও-র চিঠি নিরাপদ হেফাজতে রাখার
জন্য আবেদন তৈরি করলাম। যা পরে আদালত অবমাননার জন্য উচ্চ আদালতে। পেশ করা হবে। দুপুর দেড়টার দিকে আমাদের কাজ শেষ হল। ডিএইচ ৪, ৮.. ৫১ তারিখে। সাদির মােক্তার শমসেরউদ্দীন সরকারের প্রসঙ্গে কথা বললেন এবং তার ছেলেকে অপদার্থ বলে মন্তব্য করলেন। সরকারের বিরুদ্ধে প্রচুর সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে বলে তিনি জানালেন। আহমদ মাস্টারের সঙ্গে দেখা হল। এই সময় তাদের মামলা কোর্টে চলছিল। সেই মামলা খারিজ হয়েছে। দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বার লাইব্রেরিতে ছিলাম। কামরুদ্দীন সাহেবকে আমার মামলার ফাইল দিলাম। পরে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গেলাম। ডাক্তার তখন ছিলেন না। আমি তখনই চলে এলাম। ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে জব্বার ওভারসিয়ারকে পেলাম । তার সঙ্গে আধ ঘন্টার মত কথা হল। তিনি ৬/৭ মাস আগে বিয়ে করেছেন বলে জানালেন। ৬টায় বাসায় ফিরলাম। আজ একদিন পর গােসল করলাম । রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বিরতি দিয়ে দিয়ে সারাদিনই বৃষ্টি। তবে ভারি বর্ষণ হয়নি। রাতও বৃষ্টিস্নাত । তবে বৃষ্টির মত বৃষ্টি হয়নি। সহনীয় পরিবেশ। বৃষ্টিস্নাত দিন অব্যাহত। ভাের ৫টায় উঠেছি। সারাদিনই ঘরের ভেতরে। বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটালাম। সকাল ৭টায় হাকিম মিয়া এসেছিল। তাকে মামলার বর্তমান অবস্থা জানালাম । তাকে বললাম, আবদুল খানকে জানিয়ে দিতে, সে যেন আগামী ২. ৭. ৫১ তারিখে ঢাকায় না আসে। সেদিন ছুটি। সে আধ ঘন্টা পর চলে গেল। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম।

আবহাওয়া : সারাক্ষণই বিষন্ন ও বৃষ্টিস্নাত পরিবেশ। বিকেলে লম্বা বিরতি দেয়া ছাড়া প্রায় সারাদিন এবং রাতে অল্প বিরতি দিয়ে বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ মেঘে ঢাকা। বর্ষাচ্ছন্ন আবহাওয়া চলছেই। সহনীয় পরিবেশ। ৩০. ৬. ৫১ ভাের ৫টায় উঠেছি। বিকেল সাড়ে ৪টায় বের হয়ে মােঘলটুলিতে গেলাম। আলাউদ্দীন ব্রাদার্স থেকে। ৩টা ছাতা কিনলাম। ৫টায় সদরঘাট গেলাম। জিপিও থেকে ৪টা কার্ড কিনলাম। সেখানে মামুন মাহমুদকে পেলাম। সে টেলিগ্রাম করছিল। শ্রীপুরের এসআই নূরুল হককে একটা কার্ডে রােল ঢাকা ৭৮১-র ফলাফল লিখে সেই কার্ড বাক্সে ফেললাম। ফেরার সময় পাতলা খান লেন ও কে জি ও লেন ক্রসিংয়ে মােমেন সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। তিনি প্রায় আধ ঘন্টা পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে কথা বললেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাসায় ফিরলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারা দিনরাত বিষন্ন আবহাওয়া। সারাদিন প্রায় বিরতিহীন ভাবে বৃষ্টি। বিশেষ করে রাতে। এখনও বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প । আবহাওয়া একই রকম অপরিবর্তত।
—————————–
১) জাতিসংঘের প্রতিনিধি ড, ফ্রাঙ্ক পি. গ্রাহাম কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে মধ্যস্থতার জন্য (৩য় মধ্যস্থতাকারী) ৩০, ৬, ৫১ তারিখে করাচি পৌছেছেন। ইউ এস এস আরের আই, মালিক জাতিসংঘের সদর দফতরে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব করেছেন; কোরিয়ায় জাতিসংঘের সিএনসি জেনারেল এম. বি. রিডজওয়ে এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছেন। ১. ৭. ৫১ তারিখে থেকে উত্তর কোরিয়া ও চীনের কমান্ডাররা যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত। যুদ্ধ।
১৬৫

বিরতি কার্যকর হবে ৩৮তম সমান্তরালে। (২৫, ৬, ৫০ তারিখে কোরিয়ান যুদ্ধ শুরু হয়) এই দু’টি বিষয় ছিল জুনের শেষ সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ৩) গত মে মাসে ইরানে তেল জাতীয়করণ এবং জুন মাসের মাঝামাঝি আবাদানের তেল ক্ষেত্রগুলি ইরানের এআইওসির অধিগ্রহণ করার ফলে ইরানে তেল নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল তা এখনও চলছে। বৃটেনের অনমনীয় মনােভাবের কারণে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

– রােববার –
১. ৭. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। দুপুর দেড়টায় সাইকেলে চড়ে বের হলাম। সরাসরি এফ, এইচ, এম, হলে গেলাম। ১৮ নম্বর রুমে বসলাম। সেখানে আবদুল হাকিম ও রহমান নামের দুজন ছিল। তাদের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘন্টা কথা বললাম। মােবারুদ্দিনও সেখানে এসেছিল। কিছুক্ষণের জন্য দলিলের রুমে গেলাম। তারপর সিদ্দিকের রুমে গেলাম। দলিল ও সিদ্দিককে অনুরােধ করলাম, তারা যেন পরীক্ষা শেষে বইগুলাে আমার জন্য রেখে দেয়। আলী হােসেন তখন ছিল না। তাই আলী হােসেনের কাছ থেকে বইগুলাে সংগ্রহ করার জন্য মজিদকে বইয়ের তালিকা দিলাম। মজিদের কাছ থেকে চিনি (আড়াই সের) নিলাম। বিকেল ৪টার দিকে হল থেকে বের হয়ে দলিলের সঙ্গে হেঁটে নবাবপুর পর্যন্ত গেলাম। সেখানে কিছু কেনাকাটা করে ৫টার দিকে বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে তখনই আবার সদরঘাট গেলাম। সেখানে কাওরাইদের হাসমত মিয়ার সঙ্গে দেখা হল। তিনি তার জুতাে মেরামত করাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা বলে বাসায় ফিরলাম। হাসমত মিয়া নিজে থেকে জানালেন, ম্যানেজারকে সন্তুষ্ট করতে না পারায় হাফিজ বেপারি চাকরি হারিয়েছেন। হলে হাকিম, দু’জন রহমান, আনিস, কাদের, সেহাব, দলিল, এফ, হক, বদিউর,
মজিদ, মােহাম্মদ আলী, মােবার ও সফর আলীর সঙ্গে দেখা হয়েছে। সকালের ট্রেনে বাড়ি যাবার পরিকল্পনা বাতিল করলাম। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর ১টা পর্যন্ত বৃষ্টি হল। তারপর থেকে বৃষ্টি থেমে গেলেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। ২. ৭. ৫১ – বাড়ির পথে – ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। সকাল পৌনে ১০টায় কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। তাকে আবদুল খানের মামলার কথা জানালাম । আমি ওখানে যাবার পরেই রহিম মােক্তার। সেখানে এলেন। তাকে আমি পাট ব্যবসায় আমাকে একটি কাজ দেয়ার জন্য। বললাম। তিনি রাজি হলেন। ছুটির পর কামরুদ্দীন সাহেবের উপস্থিতিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বেলা সােয়া ১১টায় ওখান থেকে বের হলাম। দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত ইসলামপুর ও সদরঘাটে কিছু কেনাকাটা করলাম। দুপুর ১টা ১০ মিনিটে বাসা থেকে স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হলাম। দুপুর দেড়টার ট্রেনে ঢাকা ছাড়লাম । আমার কামরায় আবদুল খান ও আজিজ খানের দেখা পেলাম। গােসিঙ্গা পর্যন্ত ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের রাস্তা কাদা ও পানিতে ডুবে থাকায় এই পথটুকু যেতে খুবই সমস্যা হল। আবদুল খান, হাফিজ বেপারি, অজিজ খানসহ গােসিঙ্গা খেয়াঘাটে পৌছলাম। বিকেল সাড়ে ৫টায় আমসুর সঙ্গে বেপারি বাড়ির মাঝপথে আমাদের দেখা হল। এর ঠিক পরেই বাড়ি পৌছলাম। সন্ধ্যায় ওয়ারিস আলী আমার সঙ্গে দেখা করতে এল। সে আমাদের সঙ্গে রাতের খাবার খেল। আশরাফ আলী মুনশি এবং আর একজন মুনশিও আমাদের সঙ্গে খেয়েছে। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আকাশ সারাক্ষণ মেঘে ঢাকা থাকলেও বেলা পৌনে ১২টায় বৃষ্টি শুরু।

হল। বিরতি দিয়ে দিয়ে শেষ রাত পর্যন্ত বৃষ্টি চলল। নাতিশীতােষ্ণ বিষন্ন আবহাওয়া।
————————————
গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার নজিরবিহীনভাবে আমাদের বিল এবং আশপাশের এলাকায় বিপুল পরিমাণ বৃষ্টির পানি জমে আছে। নদীতে পানির উচ্চতা বেশ বৃদ্ধি। পেয়েছে। ৩. ৭, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের রাস্তার পার্শ্ববর্তী এলাকার সমস্ত শস্য খেত হয়ে বক্তার বাড়ির পাশ দিয়ে নদীর পারের ধান খেত, টুন্নার দাড়া, মামদির বাড়ির পাশ দিয়ে হাজি বাড়ির দক্ষিণ পারের শাইল ধানের খেত দেখে, হাজি বাড়ি হয়ে, পারি বাড়ি ও নদীর পার ধরে মামদির ঘাট, ফাইত্তার টেকের ওপর দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। বিকেলের শুরুতে রজব আলী এসেছিল। সােবহান ধানের চারার জন্য বীজ বপণে আমাদের কাজের ছেলেদেরকে সাহায্য করল। পড়ন্ত বিকেলে পশ্চিমের রাস্তায় হেঁটে বেড়ালাম। আবদুল খানের বাড়ির দক্ষিণ পারে গােসিঙ্গার চান্দুর সঙ্গে দেখা হল। গােসিঙ্গার ফরেস্টারকে দেখলাম আকবর আলীর বাড়ি থেকে বের হয়ে গােসিঙ্গার দিকে যাচ্ছে। আবদুল খানের বাড়িতে গেলাম। কিন্তু তার বাড়িতে বয়স্ক কোন মানুষের দেখা পেলাম না। মেন্দির মায়ের ভাই এবং সিংহশ্রীর একজন মুসাফিরের সঙ্গে কথা হল। মুসাফির হুসেইন খান, জব্বার, মমতাজ প্রমুখের ব্যাপারে বিস্তারিত আলােকপাত করল। সূর্যাস্তের পর বাড়ি ফিরলাম। রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : প্রখর রৌদ্রালােকিত দিন। রাত ১০টার দিক থেকে বৃষ্টি শুরু হল। মুষলধারায় বর্ষণ। ভাের পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ল।

৪, ৭, ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন বাড়িতেই ছিলাম । বেলা ১১টার দিকে সাঈদ আলী এসেছিল। রজব আলী। ফকির বলল, হরিমােহনের কাছ থেকে নবা জমি কেনার ফলে সে বঞ্চিত হয়েছে। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর সবাই চলে গেল। মৌলবি বাড়ির দুলা এসেছিল। সে রাতে আমাদের বাড়িতে থাকল। রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর ২টা পর্যন্ত ঝলমলে রােদ। বৃষ্টি ছিল না। এরপর এক পশলা ভাল বৃষ্টির পর সারারাত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ল। বিষন্ন পরিবেশ। সহনীয় তাপ। ৫, ৭, ৫১ সকাল ৬টায় বিছানা ছাড়লাম। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কালবাড়িতে ছিলাম। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাঈদ আলী এসেছিল। সে দুপুর ২টার দিকে চলে গেল। জব্বার, সােবহান, কোটের টেকের তাহের আলী দুপুর ১টার দিকে এসে ঘন্টা খানেক পর চলে গেছে। দুপুর ২টার দিকে দিগধার ভাইসাহেব এসেছিলেন। তাকে মমতাজের আসার বিষয়টি জানিয়ে আড়ালে খবর দিতে বললাম। তিনি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চলে গেলেন। রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বাদল দিন। মেঘাচ্ছন্ন সারাবেলা। হঠাৎ একবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছাড়া বলতে গেলে কোন বৃষ্টি নেই। সহনীয় পরিবেশ। তবে সঁতসেঁতে গুমােট। গহর আলী গাড়িয়াল ২১, ৬, ৫১ তারিখে মারা গেছেন। বাড়ি এসে আমি এই খবর পেয়েছি।
১৭০

৬. ৭. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। আজ ঈদ-উল ফিতর। ঘন কালাে মেঘে আকাশ ঢেকে থাকায় গতকাল সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা যায়নি। কিন্তু কয়েক ঘর ছাড়া প্রায় সব বাড়িতে ঈদ উৎসব পালনের জন্য স্বত:স্ফূর্ত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেলা ১১টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হল। মুসল্লিদের সংখ্যা বরাবরের মত। নামাজের পর মােড়ল বাড়িতে নাস্তা করলাম। রমজান মােড়ল গুরুতর অসুস্থ। তিনি বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। তার বাঁচার সম্ভাবনা বলতে গেলে নেই। মােড়ল বাড়ির মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়লাম। টান চৌড়াপাড়ার মােহাম্মদ আলী ইমামতি করলেন। আবদুল মােড়ল, তুফানিয়া, আয়েত আলী, মনু, শফিরুদ্দিন দফাদারের বড় ভাইসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিল। দুপুরে আমি মােড়ল বাড়িতে খেলাম। জাফর ও নাবু সকালে ও দুপুরে দু’বারই। আমার আপ্যায়নের দায়িত্বে ছিল। ৩টার দিকে বাড়ি ফিরলাম। ফেরার পথে কেওয়ার বাপ ও চেরাগ আলীর সঙ্গে দেখা হল। তাদের সঙ্গে সােবহান ও কেওয়ার বাপের মেয়ের বিয়ের সমস্যা নিয়ে কথা বললাম। ওয়ারিস আলী ও সাঈদ আমাদের বাড়িতে নাস্তা করল। জব্বার, ওয়ারিস আলী, কামরুদ্দীন, নবুর ছেলে আবু বিকেলে আমাদের বাড়িতে খাবার খেল। বরু আমাদের বাড়িতে থাকল এবং সে রাতের খাবার খেল। শামসু সন্ধ্যার পর হাফিজ বেপারির বাড়ি থেকে আমাদের জন্য গরুর মাংস নিয়ে এসেছিল। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সকালে সামান্য কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি ছাড়া সারাদিন রাতে কোন বৃষ্টি
হয়নি। যদিও আকাশ সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ।

৭. ৭, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে ওয়ারিস আলীকে বাড়িতে ডেকে পাঠালাম। তাকে লাখপুর শিমুলিয়ায় গিয়ে ডা, উপেন্দ্র কিশাের রায়কে খুঁজে বের করতে বললাম। বুধবার সকালের মধ্যে সে আমাকে খবর এনে দিবে। বরু নাস্তার পর চলে গেল। বেলা ১০টার দিকে আকুর বাপ এসেছিল। সােবহান তখন আমার সঙ্গে ছিল। সােবহান মফিজউদ্দীনের বিরুদ্ধে গজ গজ করছিল। তার ক্ষোভে ভরা কথা থেকে বােঝা গেল মফিজউদ্দীন তাকে নিয়মবহির্ভূত আনুকূল্য দেয়নি। আমিও এই বিষয়ে তার প্রতি কঠোর মনােভাব দেখালাম। আকুর বাপ বেলা প্রায় ১২টা পর্যন্ত দুরদরিয়া গ্রামে কবে কখন কে কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে গল্প করল। তারপর তারা সবাই চলে গেল। মফিজউদ্দীন আজ সকালে নারায়ণপুর গিয়েছে। সে আজ ফেরেনি। দক্ষিণ বাড়ির শামসু বিকেলে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। শ্রীপুর পােস্ট অফিসে যাওয়া এবং ফেরার পথে দু’বারই সাঈদ আলী আমাদের। বাড়ি হয়ে গেল। সন্ধ্যায় আফসু বড়শি দিয়ে আমাদের পুকুর থেকে একটা রুই মাছ ধরেছে। সন্ধ্যায় তােফাজ্জলের বাবা এসেছিলেন। তিনি রাতে আমাদের বাড়িতে থাকলেন। তিনি জানালেন, তাদের গ্রাম এবং নদীর অপর পারের মানুষেরা আজ ঈদ উৎসব। পালন করেছে। সিংহশ্রীর একজন লােক আজ দুপুরে আমাদের বাড়িতে খেল এবং ফিতরা নিল। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আকাশ পরিষ্কার নয়। বিকেলে খুব অল্প সময়ের জন্য হালকা বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দিনে ও রাতে বৃষ্টি হয়নি।

৮, ৭. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। সারাদিন বাড়িতেই ছিলাম । দুপুর ২টার দিকে লতিফপুর থেকে ৩ জন ছেলে এসেছিল একটি জনসভায় যাবার জন্য দাওয়াত দিতে। আমি বুধবার দুপুর ২টায় জনসভায় যেতে সম্মত হলাম। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দিগধার ভাইসাহেব এবং সাঈদপুরের রমিজউদ্দীন এসেছিলেন। রমিজউদ্দিন শমসেরউদ্দীন সরকারের চিঠি নিয়ে এসেছেন। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, এ সপ্তাহে তারা বিয়ের তারিখ ঠিক করতে পারছেন না। আমি ১৯. ৭, ৫১ তারিখের জন্য প্রস্তাব পাঠালাম। তারা সন্ধ্যায় চলে গেলেন। তােফাজ্জলের বাবাও সন্ধ্যায় চলে গেলেন। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সূর্যের তীব্রতা আজ কম। দিনের একেবারে শেষে সুন্দর বৃষ্টি হল। আকাশ সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয়নি। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ।
৯. ৭, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। ওয়ারিস আলী আজ সকালে লাখপুর গেল ডা, উপেন্দ্র কিশাের রায়কে খোঁজার জন্য। আমি ওয়ারিস আলীকে এফএইচএম হলের এএফএফ মজিদকে লেখা একটি চিঠি খামে ভরে দিলাম পােস্ট করার জন্য। সকালে সাহাদ আলী সরকার এসেছিলেন। আবদুল খান তখন আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। তারা আমার সঙ্গে নাস্তা এবং দুপুরের খাবার খেলেন। আবদুল গফুরও আমাদের সঙ্গে খেলেন। তারা বেলা ১১টার দিকে চলে গেলেন। সূর্যাস্তের পর নাজু মামু এসেছিলেন। কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে তিনি চলে গেলেন। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা থাকলেও দিনে বৃষ্টি হয়নি। রাতের পরিষ্কার আকাশে শুক্লপক্ষীয় সরু চাঁদ এবং তারায় ভরা মনােরম পরিবেশ।

১০, ৭, ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। বেলা ১০টার দিকে কাল বাড়ি গেলাম। ওয়াসি মােল্লা, আইজালির চাচা, রজব আলীর সম্বন্ধির সঙ্গে দেখা হল। আমাদের মামলার অবস্থা নিয়ে কথা হল। কথা প্রসঙ্গে ওয়াসি মােল্লা জানালেন, তারা সি. আর. দাসের নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলনে যােগ দিয়েছেন। তারা মিয়া, জাইদুল হক চৌধুরী, অতুল বাবু, নগেন্দ্র ভট্টাচার্য, মকবুল মৌলবি প্রমুখসহ গ্রামের মাতব্বররা এতে যােগদান করেছেন এবং কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাফিজ বেপারি সভাপতি। তিনি সরকারের দিকে রয়েছেন। গ্রামের নেতারা চৌকিদারের কর বয়কট করেছে। হাইলজোরের ফাজু মােড়ল, বেলকুনার আতর আলী বেপারি, বরহরের ডেঙুরির ছেলেকে হাফিজ বেপারির উস্কানিতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ইউনিয়নের সমস্ত মাতব্বরসহ এদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং শাস্তিও দেয়া হয়েছে। দুপুর ২টার দিকে বাড়ি ফিরলাম। হালিম খানের কাজের ছেলেরা আমাদের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়েছে। তারা শ্রীপুর নিয়ে যাবার জন্য চাল ভর্তি নৌকা নিয়ে গােসিঙ্গা এসেছে। ডা. উপেন্দ্র কিশাের রায়ের ঠিকানা নিয়ে ওয়ারিস আলী আজ শিমুলিয়া থেকে ফিরেছে। আবহাওয়া : বৃষ্টিহীন মেঘলা দিন। রাত পরিষ্কার।
১১. ৭. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। বেলা ১০টার দিকে মমতাজউদ্দীন ও চান মিয়া আড়াল থেকে আমাদের বাড়িতে এলেন। এর আগে রমিজউদ্দিন হাঁটতে হাঁটতে আমাদের বাড়িতে এসেছে। দিগধার তালুইসাহেবও আমাদের সাথে যােগ দিলেন। এরা সবাই আমাদের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়েছেন। শ্রাবণের ২৩ তারিখ (১৯, ৭. ৫১) মরিয়মের বিয়ের দিন ধার্য করা হল। মেহমানরা আজই চলে যাবেন। আমি বিকেল ৬টায় আবদুল গণির সঙ্গে লতিফপুরের জনসভায় যােগ দেয়ার জন্য
রওনা হলাম । আবদুল গণি দুপুরে আমাকে নিতে এসেছিল। সন্ধ্যা ৭টায় আমি আমার বক্তৃতা শুরু করলাম। শেষ হল রাত ৯টায়। মাঝে শুধু মাগরিবের নামাজের জন্য অল্প বিরতি ছিল। আমি আমার বক্তব্যে বিশদ ভাবে প্রধানত শিক্ষা ও গ্রামের উন্নয়নে গঠনমূলক কাজের প্রয়ােজনীয়তার ওপর জোর দিলাম। মওলানা আবদুল হাকিম সভাপতিত্ব করলেন। একজন প্রবীণ মৌলবি, আমিরউদ্দীন মৌলবি, ফজলু মৌলবি প্রমুখ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষ হল রাত পৌনে ১০টায়। বৃষ্টির কারণে আমরা কাছাকাছি একটি বাড়িতে আশ্রয় নিলাম। এ গণির বাড়িতে পৌছলাম রাত সাড়ে ১১টার দিকে । রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলাম প্রায় ১টার দিকে। আবহাওয়া : ছায়াময় দিন। বিকেল থেকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। রাত পৌনে ১০টায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে সকাল পর্যন্ত এবং তার পরও। সহনীয় পরিবেশ। ১২. ৭. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। গণির বাড়িতে নাস্তা করলাম। আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য রশিদ সেখানে গিয়েছিল। সমিতি পরিচালনায় ছেলেদেরকে সহায়তা করার জন্য তাকে অনুরােধ করলাম। বেলা ১০টায় সেখান থেকে রওনা হলাম। তারপর মৌলবি বাড়ি গেলাম। বেলা ১২টা পর্যন্ত মওলানা এ হাকিমের সঙ্গে তার বৈঠকখানায় কথা বললাম। আবুল, ফজলু এবং আসমত মােল্লাসহ অনেকেই। সেখানে ছিল। মওলানা আমাকে ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। তিনি জানতে চাওয়ায় আমি আমার মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তাকে জানালাম। গােসিঙ্গায় আকরামত উল্লাহর সঙ্গে তার স্কুলে দেখা করলাম। তার সঙ্গে প্রায় ২০ মিনিট কথা বললাম; আদালতে সাক্ষিদের তলব প্রসঙ্গে। দুপুর দেড়টার দিকে বাড়ি পৌছলাম। বাড়িতে ফিরে দেখলাম নিগুয়ারির মজনু ও মতি এসেছে। তারা তরগাঁও থেকে এসেছে। খাবার পর তারা চলে গেল। দিনের বাকি সময় বাড়িতেই ছিলাম।
১৭৫

রাতে আবদুল খান ও ওয়ারিস আলী এসেছিল। তারা আমার সঙ্গে রাতের খাবার খেল। আমাদের গ্রামের সমিতি এবং আকবর আলী বেপারির ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ নিয়েই তারা প্রধানত কথা বলল। রাত ১০টার দিকে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সকাল প্রায় ১০টা পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। তারপর আর বৃষ্টি হয়নি। দিন এবং রাতের আকাশ সারাক্ষণই মেঘে ঢাকা। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ১৩. ৭. ৫১ সকাল ৭টায় বিছানা ছাড়লাম। জব্বার, জব্বারের ছেলে, জাবু, তাহের আলী, সােবহান, চৌড়াপাড়ার একজন এবং আমরা দু’জন জুম্মার নামাজ পড়লাম। আমি নামাজে ইমামতি করলাম। মসজিদটার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখানে নিয়মিত জুম্মার নামাজ পড়া হয় না, যত্নও নেয়া হয় না। আনুষ্ঠানিকভাবে মরিয়মের বিয়ের তারিখ নির্ধারিত হল। তারা সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ফালু ও আঙ্গুর নাম দিয়েছে। আমাদের উত্তরের বন এলাকা ঘুরে জোহরের শেষ প্রহরে বাড়ি ফিরলাম। শেষ বিকেলে আক্কাস আলী এসেছিল। গত বছরের এই সময়ে আকবর আলীর নির্যাতনে আমাদের দুর্দশা নিয়ে কথা হল। এছাড়াও চৌড়াপাড়ার লােকদের দিয়ে তার বাড়ির পাশের গাছ উপড়ানাে, শুকনা গাছ কাটা এবং পরে আবার নিজেই গিয়ে তাদের কাজ থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা নিয়েও কথা হল। সূর্যাস্তের সময় আক্কাস আলী চলে গেল। রাত ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর এবং বিকেলে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। সারাদিন রাত মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। বিষন্ন পরিবেশ। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া।

১৪. ৭, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ থেকে অনার্স পরীক্ষা শুরু হল। আমি পরীক্ষায় অংশ নিলাম না। বেলা ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আবদুল হামিদ খানের সঙ্গে তার বাড়িতে ছিলাম। করম আলী জানাল, শ্রীপুরে রেঞ্জারের উপস্থিতিতে আকবর আলী তার সঙ্গে কেমন উস্কানিমূলক আচরণ করেছে। দুপুর ২টায় হামিদ খান ও রইস খান আমাদের বাড়িতে এলেন। দুপুরে খাবার পর আমি হামিদ খানকে মরিয়মের বিয়ের কথা জানালাম। তারা রাতে আমাদের বাড়িতে থাকলেন। বিকেলে আমাদের পশ্চিমের রাস্তায় হাঁটাহাঁটির সময় আসমতকে নিয়ে তুফানিয়া এল। সে পাট ক্রয়ের সমবায় সমিতির সম্পর্কে জানতে চাইল। তাকে আমি এই বিষয়ে ধারণা দিলাম। প্রায় এক ঘন্টা কথা হল। মফিজউদ্দীন দাওয়াত দেয়ার জন্য তরগাঁও এবং কাপাসিয়ার দিকে গিয়েছে। সে রাতে বাড়ি ফেরেনি। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : বর্ষাচ্ছন্ন আবহাওয়া। তবে কোন বৃষ্টি হল না।১৫. ৭. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম ভাঙল। মফিজউদ্দীন আজ সকালে বাঘিয়া থেকে ফিরেছে। সকাল ১০টার দিকে নিগুয়ারির মেহমানরা চলে গেলেন। দুপুর ৩টার দিকে হাকিম ভাইসাহেব এলেন। জহুরার মা বা সিরাজের মা, কেউই। আসতে পারবেন না। তিনি ঘন্টাখানেক থেকে চলে গেলেন। বিকেল ৬টায় গােসিঙ্গা হাটে গেলাম। সেখানে নায়েব, মুহুরি, প্রফুল্ল বসুর সঙ্গে দেখা হলে তাদের কাছ থেকে শুনলাম, ডিপার্টমেন্টের প্রধানের মাধ্যমে সমন জারি করা হবে। আরিফ, আবেদ আলী, আজিজ, আরশাদ আলী, আসমত প্রমুখের সঙ্গে

দেখা হল। নিয়ামত সরকার বাজারে আসেননি। শ্রীপুরে যাবার জন্য ফেরি থেকে নামার সময় হাকিম মিয়ার দেখা পেলাম । তাকে বললাম উপেন্দ্র বাবু সম্পর্কে সে যেন নিজেকে ওয়াকিবহাল রাখে। ওয়ারিস আলী একটা কাঁঠাল দিল। তাকে সঙ্গে নিয়ে রাত ৯টায় বাড়ি ফিরলাম। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দিনের একেবারে শেষ বেলায় অল্প সময়ের জন্য হালকা বৃষ্টি হল। বিকেলে বৃষ্টি ছিল না। রাতেও অল্প সময়ের জন্য, কিন্তু ভারি বর্ষণ হল। সঘন স্নান আবহাওয়া। ১৬. ৭. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন বাড়িতেই কাটালাম। সন্ধ্যায় মাঝের টেকের পশ্চিম প্রান্ত ধরে পূবের খেতের যে দিকটায় দিন মজুরেরা ধানের চারা লাগাচ্ছিল, সে দিকটায় হেঁটে বেড়ালাম। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দুপুরের আগে হালকা ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হল। তারপর আর বৃষ্টি হয়নি। বিষন্ন আকাশ। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ১৭. ৭. ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। দুপুর ১টার দিকে আয়েত আলী শেখ এসেছিল। তার মামলা ও মেয়ের বিয়ে নিয়ে প্রায় এক ঘন্টা কথা হল। দুপুর ২টার দিকে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। সাহাদ আলী সরকার আমার সঙ্গে ছিলেন। বিকেল ৪টার দিকে শ্রীপুর পৌছেছি। সালেহ আহমদ মােড়লের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করে আগামী বৃহস্পতিবার মরিয়মের বিয়ের দাওয়াত দিলাম। তাকে আমাদের মামলার বর্তমান অবস্থাও
জানালাম। এই বাড়িতে নাস্তা করে বাজারে গেলাম। কালু মােড়ল ও সামাদ খানকে এক সঙ্গে দাওয়াত করলাম। তারপর সাত্তার খান ও মজিদ মােড়লকেও দাওয়াত দিলাম। এর আগে সাত্তার খানের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তখন বাড়ি ছিলেন না। আবদুল হাকিম ভূঁইয়াকে দেখলাম পুকুরে মাছ ধরছিলেন। অন্যান্যদের মধ্যে আবুল হুসেনের সঙ্গেও দেখা করলাম। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাহাদ আলী সরকারের সঙ্গে বাজার থেকে বের হলাম। রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে এস.আই. নুরুল হকের সঙ্গে দেখা হল। সেখান থেকে সরাসরি বাড়ি ফিরলাম। উত্তর পাড়ার দিন মজুরেরা আমাদের বাড়িতে ছিল। তারা আজ রাত সাড়ে ১০টার দিকে চলে গেল। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুরের আগে বেশ কয়েকবার হালকা বৃষ্টি হয়েছে। তারপর আর
বৃষ্টি হয়নি। বিকেলে সূর্যের মুখ দেখা গিয়েছিল। পূর্ণিমার চাঁদের আলােয় উজ্জ্বল পরিষ্কার রাত। মনােরম চারদিক।
১৮, ৭. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন বাড়িতেই ছিলাম। মফিজউদ্দীন আগামীকালের জন্য বাজার করতে বরমী গিয়েছিল। অন্যান্য বাজারের সঙ্গে সে দু’টি খাসি নিয়ে এসেছে। আমি নিজে বাড়ির সামনের চত্বর পরিষ্কার করলাম এবং কাজের লােকদের নির্দেশ দিলাম বাড়ির চারপাশের বেড়া, দেয়াল সব ঘষেমেজে পরিষ্কার করার জন্য। দুপুরে দফতু পণ্ডিতের মাকে নিয়ে বাড়িতে এসেছে। রাতে বরমী থেকে মফিজউদ্দীনের সঙ্গে খন্দকার বাড়ির জামাই এসেছে। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুরের আগ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার হালকা বৃষ্টি হল। এরপর আর বৃষ্টি হয়নি। উজ্জ্বল ও পরিষ্কার রাত। বেশ উষ্ণ আবহাওয়া।

১৯, ৭, ৫১
– বৃহস্পতিবার – ভাের সাড়ে ৪টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ মরিয়মের বিয়ের অনুষ্ঠান। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বর যাত্রী খেয়াঘাটে এসে পৌঁছেছে। বর যাত্রীদের মধ্যে শহীদ মােক্তার, জহুর মিয়া, মজিবুর রহমান খান পিইউবি, ডা. গিয়াসউদ্দীন, যদু মিয়া ও অন্যান্যরা ছিলেন। বেলা ১০টায় তারা নাস্তা করলেন। দুপুর ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে তরগাঁওয়ের আবদুল জব্বার খানের মধ্যস্থতায় মওলানা ওয়ারিস আলী বিয়ের কাজ পরিচালনা করলেন। আমন্ত্রিতদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই উপস্থিত ছিলেন। দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে প্রথম ব্যাচের খাওয়া শেষ হল। বিকেল ৬টায় দ্বিতীয় ব্যাচ খাওয়া শেষ করল। এদের অধিকাংশই আমাদের স্থানীয় লােকজন। বর যাত্রীরা ছাড়াও বিয়ের অনুষ্ঠানে মওলানা ওয়ারিস আলী, সব ক’জন জামাই, আবদুল খান, আনসার আলী, জব্বার, ওয়ারিস আলী, তুফানিয়া, বরু, আইয়ুব আলী বেপারি, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক মােসলেমউদ্দিন এবং আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠান সব দিক থেকে সুষ্ঠু ও সুসম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠান সব দিক থেকে স্বার্থক হওয়ার পেছনে আবহাওয়ার কৃতিত্বই প্রধান। নতুন জামাই এবং তার সঙ্গের দু’জন বর যাত্রী ছাড়া প্রায় সবাই সন্ধ্যায় চলে গেলেন। তােফাজ্জলের বাবা, খন্দকার বাড়ির জামাই, দিগধার গণি রাতে আমাদের বাড়িতে থাকল। বিয়ের অনুষ্ঠানে চোখে পড়ার মত এক অদ্ভুত ঘটনা হল, তরগাঁও, দেওনা ও দিগধা থেকে পারিবারিক ঝামেলার জন্য আমার কোন বােন আসেনি। আজিজ মিয়া ছাড়া নিগুয়ারি থেকেও কেউ আসেনি। আজিজ মিয়া সন্ধ্যায় তরগাঁওয়ে চলে গেছেন। বরু, ওয়ারিস আলী, তােফাজ্জলের বাবা, রফি, সিদ্দির বাবা, খন্দকার বাড়ির জামাই, সুরুজ আলী অতিথি আপ্যায়নের দায়িত্ব পালন করেছে। পুরাে অনুষ্ঠানেই সুরুজ আলী অত্যন্ত সুন্দরভাবে কাজ করেছে। রান্না ঘরে সাহেরা একা রান্নার দায়িত্ব পালন করেছে। তাকে রান্নায় সহায়তা করেছে ইরুন, হাজি ও অন্যান্যরা। কাজী পক্ষে তার ক্লার্ক উপস্থিত ছিলেন। তিনি মােহরানা ও অন্যান্য বিষয়গুলি লেখেন। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম।
১৮০

আবহাওয়া : সারাদিন পরিষ্কার আকাশ। সূর্যালােকিত দিন। চন্দ্রালােকিত উজ্জ্বল সুন্দর রাত। সারাদিন সুন্দর বাতাস ছিল। রাতে অবশ্য গরম পড়ল। ২০. ৭, ৫১ ভাের ৪টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মরিয়ম তার স্বামীর সঙ্গে শশুর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হল। আফসু, দফতু, দুলা ও গণি তার সঙ্গে গেল। জুম্মার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়ে শুনলাম নামাজ শেষ হয়ে গেছে। বরু আমাকে জব্বার গাড়িয়ালের সঙ্গে সীমানা নিয়ে বিরােধের মধ্যস্থতা করতে বলল। জব্বারকে সাবধান করা হল। মফিজ, জব্বার, জাবু, টুক্কা খান, অলি মাহমুদ প্রমুখ সেখানে ছিলেন। দুপুরে খাবার পর বিকেল ৫টায় নদীর ওপার গেলাম। কাচারিতে বেলায়েত হােসেন মুহুরির সঙ্গে এক পলক দেখা হল। সাহাদ আলী সরকারের ওখানে কাউকে পেলাম
। অনেক খোঁজাখুজির পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নিয়ামত আলী সরকারের বাড়ি পেীছলাম। এই প্রথম আমি তার বাড়ি এলাম। তার সাথে ১৫ মিনিটের মত কথা বললাম। তিনি সমন পেয়েছেন। সেখান থেকে বের হয়ে ঠিক সন্ধ্যার আজানের সময় খেয়াঘাটে পৌছালাম। আসমত খান ও আরশাদ আলী সরকারের সঙ্গে দেখা হল। আরশাদ আলীকে অভিযুক্ত এবং সাক্ষিদেরকে ১টার ট্রেনে পাঠানাের জন্য বললাম। এরপর সরাসরি নদী পার হলাম। আসমতকে খেয়ায় উঠতে দেখলাম। কোন দিকে না গিয়ে সরাসরি বাড়ি ফিরলাম। ওয়ারিস আলী সকালে কনের নৌকায় করে লাখপুর গিয়েছিল। সে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি ফিরল। উপেন্দ্র বাবুর কোন খবর পাওয়া গেল না। গত বাংলা মাসের শেষে তার কোলকাতা থেকে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তিনি এখনও ফেরেননি। ওয়ারিস আলী রাতে আমার সাথে খেয়ে ১০টার দিকে তার বাড়িতে গেল। সরকার বাড়ি থেকে ফেরার পথে কয়েক জন মজুরকে সঙ্গে করে সাদত আলী এবং তার ছােট ভাইকে আসতে দেখেছি। তারা যেচে আমার সাথে আলাপ করল। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম।

আবহাওয়া : সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ৫ মিনিটের জন্য খুব হালকা বৃষ্টি হল। এরপর আর বৃষ্টি হয়নি। রৌদ্রালােকিত দিন। চাঁদের আলােতে আলােকিত উজ্জ্বল রাত। গরম পড়েছে তবে অন্যান্য দিনের মত নয়।
—————–
বি. দ্র. জর্ডানের বাদশা আবদুল্লাহ শুক্রবার ২০, ৭. ৫১ তারিখে জুম্মার নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদুল আকসায় প্রবেশকালে প্রবেশপথে আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৯। তিনি মধ্যযুগীয় মানসিকতার ব্যক্তি স্বার্থবাদী মানুষ ছিলেন এবং আরব জাতির স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করেছেন। ২১. ৭. ৫১ – ঢাকার পথে – ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে আসমত আমাদের বাড়িতে এল দেখা করতে। আমি তাকে ওয়ারিস আলীর বাড়ি থেকে কাঠালগুলাে নিয়ে শ্রীপুরে যেতে বললাম। সে তখনই চলে গেল। বেলা পৌনে ১১টার দিকে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা দিলাম। ১২টা ২৫ মিনিটে শ্রীপুরে পৌছলাম। আবদুল হাইয়ের বাবা ও সাইদপুরের একজন আমার সঙ্গে এল। খােজেখালির ফরাজী ও আজিজ মােড়ল এবং আরও অনেকের সঙ্গে স্টেশনে দেখা হল। রেলওয়ের চৌকিদার আমাকে পানি খাওয়াল। ট্রেন দেরিতে আসায় দুপুর সাড়ে ৩টায় ট্রেন শ্রীপুর থেকে ছাড়ল। আসমত ২টা কাঠাল ট্রেনে তুলে দিয়েছিল। কাঁঠাল দুটি জিন্দাবাহার লেনে পৌছে দিলাম। কামরুদ্দীন সাহেব তখন বাসায় ছিলেন না। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমার লজিংয়ে পৌছালাম। সন্ধ্যায় ডা, করিম বাসার পাশ দিয়ে যাবার সময় রিকশা থামিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করে গেল। সৌজন্য বিনিময় ছাড়া আর কোন কথা হয়নি। একরামপুরের একজন হিন্দু ভদ্রলােক, যিনি আমার লজিংয়ের গৃহকর্তার হিসাবপত্র তৈরি করেছেন, তার সঙ্গে সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আলাপ করলাম।
রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন প্রখর রৌদ্রস্নাত ছিল। সারাক্ষণ বিশেষ করে রাতে ঘাম ঝরানাে গরম। রাতের বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। ২২. ৭. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বের হলাম। সরাসরি জিন্দাবাহার গেলাম। কিন্তু কামরুদ্দীন সাহেব তখন বাইরে ছিলেন। সেখান থেকে আমি আমার সাইকেল নিলাম । বিকেল ৬টায় ৫১ বংশাল রােডে গেলাম। সেখানে নাস মিয়াকে দেখলাম । জ্বরের তীব্রতা কমলেও তার জ্বর এখনও প্রায় ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট আছে। বংশাল। ক্রসিংয়ের কাছে হাকিম মিয়ার সঙ্গে দেখা হলে তাকে আমার শ্রীপুর স্কুলে যােগদানের বিষয়টি জানালাম। সে জানাল, আহমদ আমাকে দেখা করতে বলেছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সােয়ারি ঘাট গেলাম। কিন্তু সেখানে কাউকে না পেয়ে তখনই ফিরলাম। সন্ধ্যা ৭টায় ডা. করিমের সঙ্গে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে দেখা করলাম। সাড়ে ৭টায় বাসায় ফিরলাম। মওলানা মােজাম্মেলের দেখা পেলাম । আজ অনার্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সকালে কয়েক ঘন্টা আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। তারপর প্রখর রৌদ্রস্নাত দিন। রাতও পরিষ্কার। প্রচণ্ড গরম, বিশেষ করে রাতে। ভাল ঘুম হয়নি। বি. দ্র. : কবি কায়কোবাদ ২১.৭.৫১ তারিখে দুপুর সােয়া ৩টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তিনি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার আগলাতে ১৮৫৭ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভারত উপমহাদেশে কবিদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি দীর্ঘজীবী ছিলেন।
২৩. ৭. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর আড়াইটায় কোর্টে গেলাম। ভাওয়াল সি, ডব্লিউ, এস্টেটের ম্যানেজারের মাধ্যমে পেশকারের কাছ থেকে বেলায়েত হােসেনের জন্য সমন নিলাম। গচার সিরাজুল হক, হামিদ মােক্তার, সাদির, এস, এ. রহিম, মমতাজ, কুদরত আলী, ফজলু, ইউনুস, আহমদ মাস্টার ও আরও অনেকের সঙ্গে কোর্টে দেখা হল। মমতাজ মােক্তার বিনােদ ও ইদ্রিসের নথিপত্র জনাব সালামের কোটে তুলতে সহায়তা করল। বিকেল ৫টায় কোর্ট ছাড়লাম। কামরুদ্দীন সহেবের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। সেখানে কাঠাল, পিঠা ও চাসহ নাস্তা করলাম। সবেদ আলী ডাক্তার সেখানে এসেছিলেন। বিকেল ৬টায় বের হলাম । ৫১ বংশালে গেলাম। সেখানে হাকিম, আজিজ, আহমদ ও সালেহ আহমদ প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। মাত্র কয়েক মিনিট তাদের সাথে কথা বললাম। আহমদের সঙ্গে এফ,এইচ,এম, হলে গেলাম। হলের বাইরে আ. হাকিমের সঙ্গে দেখা হল। রুহুল আমিন চৌধুরী, ফজলুল হক, মােস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে দেখা হল হলের ভেতরে। প্রায় ২০ মিনিট পর রেসকোর্সে গেলাম এবং একটা পুলের কাছে ঘাসের ওপর কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। সেখানে শাহাবুদ্দীন ও সালাহউদ্দীনের দেখা পেলাম। আহমদ আমাকে শ্রীপুর স্কুলে যত দ্রুত সম্ভব যােগদানের অনুরােধ করে চলে গেল। আমি ১০, ৮, ৫১ তারিখে সেখানে যােগ দিতে সম্মত হলাম। রাত সাড়ে ৮টায়। বাসায় ফিরলাম। রাত সাড়ে ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : প্রখর রৌদ্রস্নাত দিন। রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচণ্ড গরম। তারপর বাতাস এবং কয়েক মিনিটের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি তাপমাত্রা কমিয়ে দিল। রাতের বাকি সময় তাপমাত্রা কম ছিল।

২৪. ৭. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। বিকেল সাড়ে ৫টায় বের হয়ে কোর্টে গেলাম। কুদরত আলীর সহায়তায় আকবর আলী ও আইয়ুব আলীর মামলার জি, আর, নম্বর খুঁজে বের করলাম। ৬টার দিকে ডি.এস.পি, সােবহান সাহেবের সঙ্গে দেখা করে এস.ডি.ও. উত্তরের খালি চেম্বারে তার সঙ্গে প্রায় পৌনে ১ ঘন্টা কথা বললাম। তিনি আমাকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধের হুমকির রাজনৈতিক তাৎপর্য ও সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে বললেন। ভারতের সাধারণ নির্বাচন, খাদ্য অবস্থা এবং অর্থনৈতিক মন্দার প্রসঙ্গ তুলে ধরে আমি বিষয়টি ব্যাখ্যা করলাম। আমি রেঞ্জার সরওয়ারের প্রদত্ত জামিননামার কপির জন্য তাকে অনুরােধ করলাম। তিনি বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে তাকে জানানাের জন্য বললেন। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে যােগীনগর গেলাম। অফিসে অলি আহাদ, মাকসুদ, তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় অলি আহাদ আমার উপর খুব রাগ করল। আমি কারণ ব্যাখ্যা করলাম। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বাসায় ফিরলাম। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রখর রােদ। তারপর আকাশে মেঘ জমতে শুরু করল। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পৌনে সাতটা পর্যন্ত ভাল এক পশলা বৃষ্টি হল। তারপর টিপটিপ বৃষ্টি হল রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত। রাত পরিষ্কার নয়। সহনীয় পরিবেশ।
২৫. ৭. ৫ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টায় কোর্টে গেলাম। কুদরত আলীর মাধ্যমে শ্রীপুর ৩(৮)৫০ এবং কাপাসিয়া ৮(৫)৫১ কেসের আদালত কপির জন্য আবেদন জানিয়ে ২টা দরখাস্ত তৈরি করলাম। জনাব শামসুল হক এম.এস.সির সঙ্গে দেখা হল। নাগরিকত্বের সার্টিফিকেটের জন্য এএইচটি তাকে এস.ডি.ও. (উ) ও (দঃ) এর সঙ্গে যােগাযােগে সহায়তা করল।
১৮৫

সাহেব আলী বেপারির সঙ্গে দেখা হল । তিনি সদর সাব ডিভিশনের বহুমুখী সমিতির পরিচালকদের সভায় যােগ দেয়ার জন্য এসেছেন। কামরুদ্দীন সাহেব ও জহিরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা করে দুপুর দেড়টায় বাসায় ফিরলাম। দুপুর ৩টায় মজিদ এসেছিল। তার সঙ্গে এক ঘন্টা মানবিক বিভাগে ভর্তিসহ অন্য প্রসঙ্গে কথা বললাম। তার কাছ থেকে নেয়া গলায় জড়ানাের কাপড় তাকে ফেরত দিলাম এবং আমার জন্য সে যে ৩/- খরচ করেছিল তা তাকে দিলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় আবার কোর্টে গেলাম। সেখানে তেমন কোন কাজ হল না। দিল্লী রেস্টুরেন্টে এস, এ. রহিমের সঙ্গে নাস্তা করলাম । ৬টার দিকে আদালত থেকে বেরিয়ে এলাম। হাফিজ বেপারির বাসায় গেলাম । হাফিজ বেপারি, সাহেব আলী, বাহার আলী বেপারি এবং মওলানা ওয়ারিস আলী সেখানে ছিলেন। মওলানা মাদ্রাসার সভার নােটিশ বইয়ে আমার প্রায় ৭/৮টি স্বাক্ষর নিলেন। যে মিটিংয়ের কথা তিনি আমাকে সময় মত জানাননি। মওলানা আমাকে উত্তর নবাবপুর নিয়ে গেলেন এবং ছাতা কিনলেন। আমি তার কাছ থেকে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে চলে এলাম। ডা. করিম, অলি আহাদ কিংবা তােয়াহা সাহেব কাউকেই তাদের বাসায় পেলাম না। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফিরলাম। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : ঝকঝকে সারাদিন। সন্ধ্যায় আকাশে মেঘ জমলেও বৃষ্টি হল না। দুপুর থেকে শুরু হয়ে সারারাত বাতাস। ২৬. ৭. ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। বেলা সাড়ে ১০টায় কোটে গেলাম । ইদ্রিস গার্ড তাকে সহায়তা করার জন্য আমাকে অনুরােধ করল। প্রথম তার মামলা শুরু হল । ওয়াসিরুদ্দিন মােল্লা হলফ করে সাক্ষ্য দিল। ইদ্রিস অব্যাহতি পেল । দুপুর দেড়টায় বাসায় ফিরলাম। দুপুর আড়াইটার দিকে জি.এস. মুশাররফ আমার কাছে এসেছিল। সে বিকেল ৪টায় চলে গেলে আমি কোর্টের দিকে রওনা দিলাম।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাহাদ আলী সরকারের হাতে বেলায়েত হেসেনের সমন পৌছালাম। কোর্টের বারান্দায় আশরাফ আলী, বাখের আলী, আহমদ মাস্টার, সালেহ আহমেদ মােড়ল, সাইদপুরের আবদুল হাইয়ের দেখা পেলাম। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আহমদের সঙ্গে কথা বলে সরাসরি বাসায় ফিরলাম। রাত ১১টায় বিছানায়। আবহাওয়া : বেলা সাড়ে ১২টার দিক থেকে ১টা পর্যন্ত হালকা বৃষ্টি হল। দিনের বাকি সময়ে বৃষ্টি হয়নি। আকাশ প্রায় পরিষ্কার। সহনীয় পরিবেশ। ২৭, ৭, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বেলা পৌনে ১১টায় কোর্টে গেলাম । এস. এ. রহিমের দেখা পেলাম। কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম এবং শুনলাম আতাউর রহমান সাহেব গতকাল খুলনা থেকে ফিরেছেন। পৌনে ১২টার দিকে কোর্ট থেকে বের হয়ে সরাসরি ৪৭ ঠাঠারি বাজার গেলাম। সাড়ে ১২টার দিকে ডাক্তার এল। দুপুর দেড়টার দিকে অলি আহাদ ও তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে তাদের বাসায় দেখা করলাম। অলি আহাদ জানাল, শামসুজ্জোহা আগামীকাল পাট ক্রয় এজেন্সি প্রসঙ্গে জানাবে। সেখান থেকে বের হয়ে দুপুর আড়াইটায় বাসায় ফিরলাম। ৩টার দিকে আক্কাস আলী ও বরু আমার বাসায় এসেছিল। বন বিভাগ আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট পাঠিয়েছে। তাদের সন্ধ্যার পর মমতাজ মােক্তারের কাছে যেতে বললাম। তারা ৫টায় চলে গেল। বিকেল সাড়ে ৫টায় আতাউর রহমান সাহেবের কাছে গেলাম। তাকে। সি,ডব্লিউ,এস, বিশেষত উপেন্দ্র বাবুর কথা বললাম। সাড়ে ৬টায় বের হয়ে সরাসরি রেজাই করিম সাহেবের কাছে গেলাম। জনাব রহমান বি. এ. সিদ্দিকীর মাধ্যমে ডি.এফ.ও.-র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে মামলা করতে বললেন। রাত ৮টার দিকে রেজাই করিম সাহেবের ওখান থেকে বের হলাম। জমির ও অন্যান্যরা সেখানে ছিল। সাদি তার ছােট ছেলেকে হারিয়ে ভীষণ মানসিক কষ্টের ভেতর আছে।

এরপর সরাসরি মমতাজ মােক্তারের কাছে গেলাম। আদালতে আক্কাসের হাজির। হবার ব্যবস্থা করলাম। রাত ১০টার দিকে ফিরলাম। সাড়ে ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন প্রখর রােদ। প্রচণ্ড গরম। রাত ১০টার দিক থেকে সহনীয়।
পরিবেশ। শেষ রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মুষলধারায় বৃষ্টি চলছেই। ২৮. ৭. ৫১ ভাের ৫টায় উঠেছি। বেলা সােয়া ১১টায় কোর্টে গেলাম। সাড়ে ১১টায় কুদরত আলীর সহায়তায় আক্কাস আলীর মামলা ও মামলার তারিখ বের করলাম। আক্কাসকে চলে যেতে বললাম। পৌনে ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দ্বিতীয় অতিরিক্ত সাব জজের আদালতে কামরুদ্দীন সাহেব ও জহিরুদ্দীন সাহেব পরিচালিত মামলার শুনানি শুনলাম। দুপুর দেড়টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বিরতির সময় বার লাইব্রেরিতে বসে চা খেলাম। জনাব রেজাই করিম, সােবহানসহ অন্যান্যরা সেখানে আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আমি কামরুদ্দীন সাহেবকে ঢাকার ডি.এফ.ও.-র (ইএক্স)’র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার জন্য মামলা শুরু করার কথা জানালাম। আগামী সপ্তাহে তিনি খুব ব্যস্ত থাকবেন বলে মনে হল। দ্বিতীয় অতিরিক্ত সাব জজের আদালতের বারান্দায় হাসান মােড়লের সঙ্গে দেখা হল। বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে ফিরলাম। বিকেলটা বাসাতেই কাটল। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : বিরতিহীনভাবে বিকেল প্রায় সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বৃষ্টি চলল। কখনও মুষলধারায় আবার কখনও গুড়ি গুড়ি। স্নান সূর্যের আলােয় পরিষ্কার বিকেল। রাতে বৃষ্টি বা বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা দেখা গেল না। সহ। পরিবেশ।

২৯. ৭. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে বের হলাম। উত্তর নবাবপুরে মুশাররফ হােসেন ও শফিউল্লাহর সঙ্গে দেখা হল। কিছুক্ষণ কথা বললাম। তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। তার সঙ্গে পল্টন ময়দানের জনসভায় যােগদানের জন্য বের হলাম। ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা সমস্যা প্রসঙ্গে আজ সেখানে জনসভা ডাকা হয়েছে। যাবার পথে ক্যাপিটালে চা খেলাম। নূরুল আমিন সাহেবের বক্তব্য শুরুর মুহূর্তে আমরা জনসভায় পৌছলাম । তার বক্তব্য শেষ হলে বেরিয়ে এলাম। বিশাল সমাবেশ। মুশাররফ, অলি আহাদ, এ. রহমান প্রমুখকে দেখলাম। সবাই যার যার মত চলে গেল। সূর্যাস্তের সময় গভর্ণর হাউসের প্রবেশ পথের কাছে আশুর দেখা পেলাম। নবাবপুরের পুরােটা পথ তার সঙ্গে কথা বললাম। নবাবপুর বাস স্ট্যান্ডের কাছে। ইদ্রিস আলী দেওয়ানের সঙ্গে দেখা হল। আশু আমাকে রায় সাহেব বাজারে ইসলামিয়া রেস্টুরেন্টে চা খাওয়াল। আশু তার শ্বশুর বাড়ির প্রসঙ্গে কথা বলল। তাদের ব্যবহারে সে খুবই বিরক্ত। ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে প্রায় এক ঘন্টা ধরে আমি তাকে গ্রামের রাজনীতি নিয়ে পরামর্শ দিলাম। সে চলে গেলে আমি রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসায় ফিরলাম। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : অল্প বিরতি দিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে।
স্যাতসেঁতে আবহাওয়া সত্ত্বেও পরে আর বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টিময় সহনীয় পরিবেশ।৩০, ৭, ৫১ ডাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা সােয়া ১১টায় কোর্টে গেলাম। ফাইল কিনলাম। কোর্ট ফি জমা দিলাম। কুদরত আলীকে সাথে নিয়ে পৌনে ১২টার মধ্যে সেগুলি অনুলিখন বিভাগে জমা দিলাম। প্রথম অতিরিক্ত সাব জজের কোর্টে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত একটি খুনের মামলার শুনানি শুনলাম। জনাব রেজাই করিম, আফসারুদ্দীন ও কামরুদ্দীন সাহেব।
এই মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন। এরপর বাসায় ফিরে দিনের বাদ বাকি সময় বাসাতেই ছিলাম। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন রাত সঁাতসেঁতে পরিবেশ। দীর্ঘ বিরতির পর দুপুর থেকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হল। রাতের প্রথম ভাগ পরিষ্কার ও তারায় ভরা। তারপর আবার বিষন্ন ও বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়া। সহনীয় পরিবেশ। ৩১. ৭. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। বেলা সােয়া ১০টায় বের হলাম। সরাসরি যােগীনগর গেলাম। আজিজের কাছ থেকে আমাকে লেখা মােশাররফ চৌধুরীর চিরকুট নিলাম। | মােশাররফ চৌধুরী আমাকে এফ,এইচ,এম, হলে যেতে বলেছে। সরাসরি হলে গিয়ে হল ইউনিয়ন অফিসে গঠনতন্ত্র কমিটির সভায় যােগ দিলাম। তােয়াহা সাহেব, মতিন, বদিউর ও মােশাররফ সভায় উপস্থিত ছিল। মূল লক্ষ্যকে ঠিক রেখে সংশােধনীসহ আমাদের হলের গঠনতন্ত্র গৃহীত হল। বেলা সাড়ে ১১টায় সভা শেষ হল। হল অফিসে হেড ক্লার্ক রকিবুদ্দিনের সঙ্গে প্রায় আধ ঘন্টা কথা বললাম। অন্যান্য প্রসঙ্গের মধ্যে আমি আগামী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি প্রভৃতি বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম । মােশাররফের সঙ্গে কথা বলে দুপুর ১টার দিকে হল থেকে বের হলাম । ফেরার পথে কাদের ও মজিদের সঙ্গে দেখা হল। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় মজিদ ও আমি রমনা পােস্ট অফিসে প্রায় আধ ঘন্টার মত আটকে থাকলাম। দুপুর আড়াইটার দিকে কোর্টে গেলাম। সেখানে আয়ু দফাদার ও রাজেন্দ্রপুরের ফালু গার্ডকে পেলাম। তারা হালকা ও চটুল কথাবার্তায় আমাকে শান্ত করতে চাইল । কুদরত আলী আমাকে দেখাল সে, আক্কাসের মামলার কপি নিয়ে যাচ্ছে। ৩টায় ফিরলাম।
১৯০

বিকেলে আর বের হলাম না। রাত ৯টার দিকে এস, এম, হলের আশরাফউদ্দীন সরদারকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীপুরের। আহমদ এসেছিল। তারা আমাকে আগামীকাল কাজে যােগ দিতে বলছে। ২০ মিনিট কথা বলার পর তারা চলে গেল। রাত ১২টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দিনে ও রাতে বেশ কয়েকবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও ভারি বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া বৃষ্টিভেজা বিশেষ করে রাতে। সহনীয় পরিবেশ।
—————————-
বি. দ্র. ১) এই মাসে পাটের দাম ৩৫/- থেকে ৪০/- মধ্যে ওঠানামা করেছে। মৌসুমের শুরুতে এই দর ৪০/- থেকে ৫০/- ছিল । ২) পাকিস্তান সীমান্তে ভারতের সৈন্য সমাবেশের কারণে উচ্চপর্যায়ে বৈঠক চলছে এবং এই অঞ্চলে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

– বুধবার –
১. ৮, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। সারাদিন ঘরে পেপার কাটিং গুছিয়ে ঠিক করলাম । সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাইরে বের হবার জন্য কাপড় পরতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে আমাকে আটকে দিল। আবহাওয়া : আর্দ্রতার কারণে তুলনামূলকভাবে গরম আবহাওয়া। সারাদিন
ছায়াময় এবং বিরতি দিয়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত বিরতি দিয়ে হালকা বৃষ্টি হল। রাতে বৃষ্টি হয়নি।
২৮.৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৯টায় বাইরে বের হলাম। সরাসরি সােয়ারি ঘাট গিয়ে আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে তার চেম্বারে দেখা করলাম। তিনি সকাল ১০টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের উদাহরণ দিয়ে পূর্ব বাংলায় বিরােধী দলের অবস্থান নিয়ে কথা বললেন। তিনি আরও বললেন, এখানে নিজেকে কেউ কমী ভাবে না, সবাই নেতা হতে চায়। তিনি জানালেন, আমরা আগামীকাল কামরুদ্দীন সাহেবের বাসায় বসব। ১০টা ২০ মিনিটে কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম। দুপুর ১২টা পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা

বলে সােজা বাসায় ফিরলাম। ৩টায় বার লাইব্রেরিতে গিয়ে জনাব রহমান, জনাব কে. আহমদ, জনাব কে. চৌধুরী, জনাব এ. সােবহান, জনাব এফ রহমান খান প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। তাদের সঙ্গে বিকেল ৫টা ২০ মিনিট পর্যন্ত কথা বলে চলে এলাম। আবুল হায়াত চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে এস.ডি.ও. (দক্ষিণ)-এর কোর্ট বারান্দায় দেখা হল। তিনি আমার মামলা ও অন্যান্য বিষয়ে খোঁজখবর করলেন। আমাকে তিনি তার ঠিকানা দিলেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফিরলাম । যােগীনগরে গেলাম। সেখানে তােয়াহা সাহেব ও অলি আহাদের সঙ্গে মূলত আমার পাটের ব্যবসা নিয়ে কথা বললাম। অলি আহাদ আমাকে র্যাংকিন স্ট্রীটে শ্রী দাসের। বাসায় নিয়ে গেল। সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জের জোহাকে টেলিফোন করল। জোহা। ব্যবসা শুরু করার ব্যাপারে অলি আহাদকে নারায়ণগঞ্জ যেতে বলল। নবাবপুর পর্যন্ত অলি আহাদ আমার সঙ্গে এল। আমরা দু’জনে তােয়াহা সাহেবের পারিবারিক ও স্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে আলাপ করলাম। রাত ৯টায় যার যার গন্তব্যে গেলাম। আমি সােজা সােয়ারি ঘাট গেলাম। কিন্তু এ. রহমান সাহেব তখন ছিলেন না। ২২২ নম্বরে টেলিফোন করে কে, আহমদ সাহেবকে খবরটা জানালাম। রাত ১০টায় ফিরলাম। ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি। খুব গরম। প্রখর রােদ। রাত ১টা।
পর্যন্ত ঘাম ঝরানাে গরম। রাতের শেষ ভাগে হালকা বৃষ্টি হল। ৩. ৮, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৯টায় কোর্টে গেলাম। সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বার লাইব্রেরিতে কে. আহমদ সাহেবসহ আতাউর রহমান সাহেবের জন্য অপেক্ষা করলাম। কিন্তু তিনি বার লাইব্রেরিতে এলেন না। সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নিম্ন আদালতে আকতারের মামলার কাগজপত্র সগ্রহ করলাম। ইদ্রিস গার্ড সেখানে ছিল। মােহাম্মদ আলীর কাছ থেকে রায়ের কপি নিলাম। ডি.এস.পি, সােবহান সাহেব

আমাকে ডেকে বললেন যে, বিনােদের মামলায় ওয়াসিরুদ্দিনের সম্ভবত শাস্তি হবে। আমি তদন্তকারী এস.আই. শামসুল হককে পরিষ্কারভাবে মুখের উপর বললাম, তারা ঠিকভাবে মামলা তদন্ত করেনি। দুপুর ১টায় বাসায় ফিরলাম। এর আগে সকালে আমার কাছে জি.এস. মুশাররফ হােসেন এসেছিল। তাকে হল গঠনতন্ত্রের কাগজপত্র দিলাম। গঠনতন্ত্রের মাননান্নয়নের জন্য আমি যে সমস্ত প্রস্তাব করেছি, তাকে সেই বিষয়ে পরামর্শসহ আমার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করলাম। সে ৯টায় চলে গিয়েছিল। দুপুর ৩টায় ঢাকা রেল স্টেশনে পৌছলাম। তখনই ট্রেন এল। প্রফুল্ল বাবু, বেলায়েত হােসেন, নিয়ামত সরকার, ইয়াকুব আলী আকন্দ এলেন। আমি তাদের সরাসরি জিন্দাবাহার নিয়ে গেলাম। প্রায় সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কথা বললাম এবং চা খেলাম। তারা আবার সন্ধ্যার পর সবাই বসবেন। রুস্তম আলী আকন্দও তাদের সঙ্গে এসেছে। ৪ অগাস্ট তার মামলার আপিলের শুনানি আছে। সন্ধ্যা সােয়া ৭টায় সােয়ারি ঘাট গেলাম এবং রাত পৌনে ১০টায় আতাউর রহমান সাহেবসহ জিন্দাবাহার এলাম। সাক্ষিদের কাছ থেকে তিনি পুরাে ঘটনার বিবরণ শুনলেন। সেখানে সালেহ আহমেদ মােড়ল, রুস্তম আলী আকন্দ এবং মাওনার একজন পিএলএ উপস্থিত ছিল। রাত সাড়ে ১০টায় আমরা যে যার বাসস্থানের উদ্দেশে রওনা দিলাম। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাতে মাত্রাতিরিক্ত গরম। প্রখর রৌদ্রস্নাত দিন। বাতাসে প্রচুর অর্দ্রতা সত্ত্বেও সহসা বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ৪. ৮.৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল পৌনে ৮টায় কামরুদ্দীন সাহেবের বাসার উদ্দেশে রওনা দিলাম। ইসলামপুর রােডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মহিউদ্দীনের সঙ্গে দেখা হল। সে আমাকে তার চাকরির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্বাভাবিক আচরণ বিষয়ে জানাল। আজিজ সকাল ৯টায় কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে এল। সালেহ আহমদও এল। বেলা ১০টায় আজিজকে নিয়ে সােয়ারি ঘাট গেলাম । আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর ১০টা ৫০ মিনিটে তার সঙ্গে আদালতে গেলাম।
১৯৫

বেলা সাড়ে ১২টায় আমাদের মামলা আদালতে উঠল। দুপুর প্রায় সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ৪ জন সিডব্লিউএসকে জেরা করা হল। অন্যান্যদের মধ্যে আশু, হাসান, লুলু, সৈয়দপুরের খলিফা, শামসুদ্দিন সরকার, রুস্তম আলী আকন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিল। মুহুরি, আজিজ, নিয়ামত সরকার, হাকিম, মজিদ মােড়লকে নাস্তা খাওয়ালাম। সবাই বিকেল ৫টায় চলে গেল। সন্ধ্যা ৬টার দিকে জহিরুদ্দীন সাহেব আমাকে, কামরুদ্দীন আহমদ, কে. চৌধুরী, সামদানী ও জহিরকে বার লাইব্রেরিতে চা খাওয়ালেন। সাড়ে ৬টায় জহিরকে নিয়ে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গেলাম। ডা. করিম পরে এলেন। মফিজকে দেয়ার জন্য ক্রসেন্ট সল্ট কিনে ৭টার দিকে স্টেশনে গিয়ে আসমতকে দিলাম। রাত সােয়া ৮টায় বাসায় ফিরলাম। রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ইসলামিয়া রেস্টুরেন্টে আহমদ, আজমল, একরাম ও আমি রাতের খাবার খেলাম। আমি শুধু চাপাতি খেলাম। আদালতে ব্যস্ত থাকায় দুপুরে আমার খাওয়া হয়নি। গিয়াস ভাইসাহেব, দিনত আলী, তরগাঁওয়ের আফতাবউদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাত ১টার দিকে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাতে খুবই গরম। প্রখর রৌদ্রস্নাত দিন। রাতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হল।
৫.৮, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা সােয়া ১১টায় বের হয়ে সরাসরি জিন্দাবাহার গেলাম। কিন্তু কামরুদ্দীন সাহেবকে পেলাম না। জনাব আর, করিমের খোঁজে গেলাম। তাঁকেও পেলাম না। যােগীনগরে গেলাম এবং তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললাম। এরপর ডা, করিমের ফার্মেসিতে গিয়ে, তার সঙ্গে দেখা করে হাসান যেন পরীক্ষায় পাশ করতে পারে সে বিষয়ে তাকে কিছু করতে অনুরােধ করলাম। সাড়ে ১২টায় বের

হয়ে কারকুন বাড়ি লেনে গেলাম। কিন্তু হাসানকে পেলাম না। ওর জন্য চিরকুট লিখে দুপুর ১টায় ফিরলাম। দুপুর পৌনে ৩টায় দুপুরের খাবারের জন্য রেস্টুরেন্টের খোঁজে ইসলামপুরে গেলাম। ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত মান্নান খলিফার দোকানে লতিফ ভূইয়ার সঙ্গে কথা বললাম। বিকেল ৪টায় মােক্তার বার লাইব্রেরিতে জুট ফেডারেশনের সভায় গেলাম। সেখানে কোরবান, অলি আহাদ, হাবিব সিং, এস. এ. রহিম, জসিমুদ্দীন এবং আরও ৩০। জন লােক উপস্থিত ছিল। ৭টায় সভা শেষ হল। চাষিদের জন্য সর্বনিম্ন দর দাবি করা হল ৪০ টাকা। হাবিব সিং ও জসিমুদ্দীন সভায় সমস্যা সৃষ্টি করল। ফেরার পথে কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম কিন্তু তাকে পেলাম না। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফিরলাম। দুপুরে খাবার খেতে পারিনি। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : শুষ্ক গরম আবাহাওয়া। আর্দ্রতা অনুভূত হচ্ছে। ৬. ৮.৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় আতাউর রহমান সাহেবের ওখানে গিয়ে ১০টা পর্যন্ত ছিলাম। সেখান থেকে সােজা জিন্দাবাহার গেলাম। কামরুদ্দীন সাহেবকে আমার শ্রীপুর যাবার বিষয়টি জানিয়ে তার মতামত চাইলাম। শেষ পর্যন্ত কিছুদিনের জন্য যাওয়া স্থির হল। রুস্তম আলী আকন্দের সিভিল কেসের ব্যাপারে তাকে জানালাম। তিনি রুস্তমকে পাঠাতে বললেন। বেলা ১১টায় আদালতে গেলাম। ডি.এস.পি, সােবহান সাহেবের সঙ্গে দেখা করে প্রায় আধ ঘন্টা ইদ্রিস আলীর মামলা নিয়ে কথা বললাম। কুদরত আলীকে পেলাম। দুপুর ১টায় বাসায় ফিরলাম। সােয়ারি ঘাট যাবার আগে কারকুন বাড়ি লেনে হাসানের সঙ্গে দেখা করলাম। সে জানাল, তার পরীক্ষার ফলাফলের জন্য শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করার আর সময় নেই। রায় সাহেব বাজার ব্রিজের কাছে মােশাররফ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হল।
দুপুর ২টায় মতি ভাই রেস্তোরায় দুপুরের খাবার খেলাম। প্রথমে আহমদ হােসেন ও পরে মিয়ারউদ্দীনের সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী এলাকা ও ফকির মান্নান প্রভৃতি বিষয় নিয়ে ৪টা পর্যন্ত কথা বললাম। তারপর ফিরলাম। বিকেল সাড়ে ৫টায় যােগীনগরে গেলাম। অলি আহাদ অনেকবার জোহার সঙ্গে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। রাত ৮টায় বের হলাম। নবাবপুর থেকে গেঞ্জি ও ব্লেড কিনে বাবুবাজারে গেলাম। কিন্তু চেম্বারে মমতাজ মােক্তার কিংবা কে, আব্বাস কেউই ছিলেন না। সাড়ে ৮টায় ফিরলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : শুকনাে পরিবেশ। সারাদিন সূর্যালােকিত। রাতে বাতাস। ৭, ৮, ৫১ – শ্রীপুরের পথে – ভাের ৬টায় উঠেছি। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে বের হলাম। সরাসরি বাবুবাজার গেলাম। আক্কাস আলীর মামলার কাগজপত্র নিলাম। কুদরত আলীকে ৮(৫)৫১ নং কেসের জন্য ৫/দিলাম। ৮টায় বের হয়ে এস, এম, হলে গেলাম। আহমদ ইতােমধ্যে বাড়ি চলে গেছে। ৯টা পর্যন্ত কিবরিয়ার সঙ্গে কথা বললাম। ডা, করিমের ওখানে গেলাম। সেখান থেকে বাকিকে সঙ্গে নিয়ে ৯টা ৫০ মিনিটে আমার বাসায় ফিরলাম। দুপুর সােয়া ১২টায় লজিংয়ের পাট চুকিয়ে বের হলাম। আনসারুজ্জামানের কাছে পেপার বাবদ হকারের জন্য ২ টাকা ৯ আনা রাখলাম। বাকির কাছে ১টা ট্রাঙ্ক ও একটা সুটকেস থাকল। দুপুর ১টা ৩৪ মিনিটের ট্রেনে ঢাকা ছাড়লাম। বাকি আমাকে স্টেশনে বিদায় জানাল। ট্রেনের কামরায় ইজ্জত আলী সরকার, বুধাই বেপারি, কাপাসিয়ার ইয়াসিন আর শ্রীপুরের স্টেশন মাস্টার ছিলেন। ট্রেন দেরি করে দুপুর আড়াইটায় ঢাকা ছাড়ল। শ্রীপুরে গাজিউল হক ও মজিদের দেখা পেলাম। আমার থাকার জায়গা ও বেতন নিয়ে সন্ধ্যায় আহমদের সঙ্গে কথা হল। হাকিম মিয়া উপস্থিত ছিলেন। আমি ১০০
টাকা বেতন চাইলাম। আহমদ বলল, তারা এতে রাজি আছে। রাতে কালু মােড়লের বাড়িতে থাকলাম। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। দুপুরে খাবার খেতে পারিনি। বিকেলে কালু মােড়ল, প্রধান শিক্ষক ও সমেদ খানের সঙ্গে দেখা হল। আবহাওয়া : সারাদিন প্রখর রােদ। গরম। সন্ধ্যার পর কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি হল। সহনীয় রাত। ৮. ৮. ৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টায় স্কুলে যােগ দিলাম। বিকেল সােয়া ৪টা পর্যন্ত নির্ধারিত ক্লাস নিলাম। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সােয়া ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত আমাদের চাকরির শর্তাবলি নিয়ে আলােচনা করলাম। আমি তাকে জানালাম, প্রতি মাসে ১০০/- বেতনের নিশ্চয়তা পাবার পরই আমি স্কুলে যােগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্কুলের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি আমাকে যে ধারণা দিলেন তা রীতিমত আশঙ্কাজনক। বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্কুলের মাঠে ছিলাম। স্কুল ও অফিসের মধ্যে একটা খেলা হয়েছিল। ৪-১ গােলে অফিস জিতেছে। রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত আমাদের রুমে প্রধান শিক্ষক, কালু মােড়ল, সালেহ আহমদ মােড়ল, আর একজন ফরেস্টারের সাথে কথা বললাম। আমাদের আলােচনার বিষয় ছিল উন্নত দেশগুলাে সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা এবং ভারত পাকিস্তান সম্পর্ক। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : কাঠ ফাটা রােদ। দিন ও রাতে প্রচণ্ড গরম। বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা
নেই।

৯. ৮, ৫১
– বাড়ির পথে – সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ১১টা থেকে দুপুর সােয়া ১টা পর্যন্ত ক্লাস নিলাম। গাজিউল হক আজ স্কুলের চাকরি ছেড়ে চলে গেল। সে দুপুর ১টা ১৭ মিনিটের ট্রেনে ঢাকা রওনা হল। আমরা স্টেশনে তাকে বিদায় জানালাম। একই ট্রেনে মি, মজিদও ঢাকা গেলেন। প্রধান শিক্ষক আমাকে দুপুর আড়াইটার দিকে হাসান মােড়লের কাছে নিয়ে গেলেন। হাসান মােড়লের সঙ্গে স্কুলের অবস্থা নিয়ে বিশেষ করে বলাই ও প্রসন্নের বহিষ্কারের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দেড় ঘন্টা কথা হল । হাসান মােড়ল তাদের আবার ফিরিয়ে নিতে রাজি হলেন। আমার বেতনের প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, প্রতি মাসে ১০০/- দেয়া হবে। ৪টায় কোয়ার্টারে ফিরলাম । বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাইকেলে করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। পথে হাকিম মিয়ার সঙ্গে দেখা হল। তিনি শ্রীপুর যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাড়ি পৌছলাম । গােসিঙ্গায় নায়েব, মুহুরি, সাহেদ আলী সরকার, আসমতসহ আরও অনেকের সঙ্গে দেখা হল। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : প্রচণ্ড রােদ। পরিষ্কার আকাশ। বিশেষ করে রাতে ঘাম ঝরানাে গরম। ১০, ৮, ৫১ সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে দাঁত মাজতে মাজতে চারপাশের জমির অবস্থা দেখলাম। আবদুল খানের বাড়িতে গেলাম। তারা দু’জনই বাড়িতে ছিলেন। সেখানে নাস্তা সেরে সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি ফিরলাম।
২০০
সাড়ে ১১টার দিক থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘুমালাম। বিকেলে কালবাড়িতে গেলাম । সেখানে রজব আলী, আয়েস আলীর জ্যাঠা ও আমাদের কাজের লােকদেরকে পেলাম। তাদের সঙ্গে প্রায় এক ঘন্টা কথা হল। সূর্যাস্তের পর আশরাফ আলী সেখানে এসে এফ আর-এর কপি দেয়ার জন্য আমাকে অনুরােধ করল। রাত ৮টার দিকে বাড়ি ফিরলাম। খন্দকারকে হাফিজ বেপারির বাড়িতে পৌছে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ওয়ারিস আলী আমাদের উঠোনে এসে কয়েক মিনিটের জন্য দেখা করে গেল। তখন রাত প্রায় সাড়ে ৮টা। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সকাল থেকে রাত ২টা পর্যন্ত প্রচণ্ড গরম। তারপর বৃষ্টি শুরু হল।
বিরহতিহীনভাবে ঝিরঝির বৃষ্টি চলছে। ১১.৮, ৫১ -শ্রীপুরের পথে – সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ সকাল সাড়ে ৮টায় খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে ফরেস্টার আরিফ এবং গার্ড তাহের আলী আমাদের বাড়িতে আমার সঙ্গে দেখা করতে এল। আরিফ ১০টা পর্যন্ত অনবরত কথা বলে গেল। তার মিষ্টি কথা আমার ভাল লাগেনি। সে আমাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বলতে লাগল, নিজের এলাকায় আমার কোন মূল্যায়ন হবে না। করাচিতেই আমার চলে যাওয়া উচিত, সেখানেই আমার মূল্যায়ন হবে। আমি তার কথা শুধু শুনে গেলাম। আমার মনের প্রতিক্রিয়া তাদের বুঝতে দিলাম । সে বলল, আমার বিরুদ্ধে যা কিছু হয়েছে তা আবদুল খান ও আক্কাস আলী বিদ্বেষপূর্ণ ও প্রতারণামূলকভাবে করছে। কিন্তু কথার ফাঁকে বেখেয়ালে সে বলে ফেলল, আগামীকাল রেঞ্জার করিম তার সঙ্গে দেখা করতে আসছে। আমি শ্রীপুরে এসে তাকে তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক করে দিলাম। তারা আমাকে তােষামােদ করার কারণ হল, আমি যখন সমস্যার মধ্যে ছিলাম সে সময়ে তারা সরকারি বনের যে ক্ষতি সাধন করেছে এবং অর্থ আত্মসাৎ করেছে তা যেন আমি প্রকাশ না করি। সকাল সাড়ে ১০টায় বৃষ্টির মধ্যেই শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হয়ে দুপুর সােয়া ১২টায়
পৌছলাম। তাড়াতাড়ি ক্লাস নিলাম। বৃষ্টির জন্য ক্লাসে উপস্থিতি খুব কম ছিল। পৌনে ২টায় স্কুল ছুটি দেয়া হল। ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস রুমে বসে রইলাম। কিন্তু নিয়ামত সরকার ছাড়া আর কেউ আসেনি। নিয়ামত সরকার আমার বাসস্থান পর্যন্ত এলেন এবং আধ ঘন্টা কথা বলে কেনাকাটার জন্য হাটে গেলেন। বিকেলে মজিদ সাহেব ও আমি আহমদের বাড়িতে গেলাম। সেখানে হাসান মােড়ল ও আহমদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের মনােভাবের বিপরীতে আমাদের অবস্থান কী হবে তা নিয়ে কথা বললাম। সূর্যাস্তের সময় ফিরলাম। আবহাওয়া : গতকাল রাত থেকে বিরতিহীনভাবে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভাল বৃষ্টি হয়েছে। তারপর আর বৃষ্টি হয়নি। বিকেলে সূর্যের মুখ দেখা গেল। সহনীয় গরম। ১২. ৮. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সােয়া ৪টা পর্যন্ত ৭টা ক্লাস নিলাম । সন্ধ্যায় মজিদ সাহেবের সঙ্গে স্কুলের মাঠে হাঁটলাম। হেড মাস্টার তার বাড়ির কাছ থেকে আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন। বাসস্থানে ফেরার পথে বাজারে বসে ক্ষমতাসীনদের ব্যক্তি স্বার্থের কারণে সাধারণ মানুষের বর্তমান দুর্দশার বিষয় নিয়ে আলােচনা করলাম। মজিদ মােড়ল, ভাংনাহাটির সিরাজসহ অনেক মানুষ জড়াে হয়েছিল সেখানে। রাত ৯টায় বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে পত্রিকা পড়লাম। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : রৌদ্রালােকিত দিন। গরম আবহাওয়া। বাতাসে জলীয় বাষ্প অনুভূত হচ্ছে। শেষ রাত থেকে মেঘের আনাগােনা।
১৩, ৮. ৫১
ঢাকার পথে – সকাল ৬টায় উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ক্লাস নিলাম। তারপর বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত আসন্ন স্বাধীনতা দিবসের জন্য মজিদ সাহেবের সহযােগিতায় ছেলেদের নিয়ে স্কুলের প্রবেশ পথে তােরণ নির্মাণ করলাম। দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে প্রধান শিক্ষক ঢাকা থেকে ফিরেছেন। বিকেলে মজিদ সাহেবের সঙ্গে স্কুলের মাঠে হাঁটলাম। সেখানে ডা. আহসানউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হল। তিনি বলাই ও প্রসন্নর বহিষ্কারের প্রসঙ্গে কথা বললেন। রাত সাড়ে ৯টার ট্রেনে মজিদ সাহেবের সঙ্গে ঢাকার পথে রওনা হলাম। কিন্তু ট্রেন। ছাড়ল সােয়া ১০টায় । রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকা স্টেশনে পৌছলাম। মজিদ সাহেব এস, এম, হলে গেলেন। আমি রাতে ৪৭ ঠাঠারি বাজারে বাকির সঙ্গে থাকলাম। এর আগে অলি আহাদের দরজায় কড়া নেড়েছিলাম, কিন্তু কোন সাড়া পাইনি। রাত ২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ঘাম ঝরানাে প্রচণ্ড গরম। তারপর
সুন্দর বাতাসের প্রবাহে তাপমাত্রা হ্রাস পেল। ১৪, ৮, ৫১ স্বাধীনতা দিবস। ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। সকাল ৮টায় বের হয়ে সােজা সােয়ারি ঘাট গেলাম। সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করলাম। মানিক মিয়ার কাছ থেকে আমার মামলার নথিপত্র সংগ্রহ করে ১০টার দিকে জিন্দাবাহার গেলাম। সেখানে মদন মিয়া (সি.এল.আই.বি.) এসেছিলেন এবং তিনি আমার সঙ্গে প্রায় আধা ঘন্টা আত্মপক্ষ নিয়ে কথা বলে চলে গেলেন। বেলা ১২টার দিকে কামরুদ্দীন সাহেব ফিরলেন। আমি দুপুর দেড়টায় মর্ডান হােটেলে দুপুরের খাবার খেলাম।
এরপর নদীর পারে গেলাম। সেখানে প্রথম দলের নৌকা বাইচ দেখে দুপুর আড়াইটায় জিন্দাবাহার এলাম। সিরাজও সেখানে এল। বেলা ৩টায় কামরুদ্দীন সাহেব আমাদের মামলা নিয়ে বসলেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় সেখান থেকে বের হলাম। সদরঘাটে গেলাম। সেখানে নেওয়াজ আলীর সঙ্গে দেখা করলাম। সে। ভিক্টোরিয়া পার্কের পার্ক ক্যাফেতে নাস্তা খাওয়াল। জনসন রােডে থেকে মােখলেসুর রহমান (ইতিহাস) আমাদের সঙ্গে এল। আমরা ৩ জন পল্টন ময়দানে গিয়ে কিছুক্ষণ বসলাম। সন্ধ্যা ৭টার দিকে নবাবপুর স্টেশন রােড জংশন থেকে আমরা যে যার মত চলে গেলাম। আমি কাপ্তান বাজারে খেয়ে যােগীনগরে গেলাম। কেউ বাসায় ছিল না। আজিজকে আমার আসার খবর অলি আহাদকে জানানাের জন্য বললাম। রাত ৮টার দিকে ঠাঠারি বাজার গেলাম। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। গ্রাম থেকে বেড়াতে আসা লােকজনের ভিড়ে শহরের প্রধান সড়কগুলাে পরিপূর্ণ। সাজসজ্জা তেমন আকর্ষণীয় নয়। আবহাওয়া : সারাদিন প্রচণ্ড রােদ ছিল। খুব গরম আবহাওয়া। ১৫, ৮, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় বের হয়ে নাস্তা খেয়ে সরাসরি জিন্দাবাহার গেলাম। কামরুদ্দীন সাহেবকে তার অন্যান্য মক্কেলদের তালিকা তৈরিতে সহায়তা করলাম। বেলা সােয়া ১১টায় আদালতে উপস্থিত হলাম। কুদরত আলীর সহায়তায় অনুলিখন বিভাগ থেকে সিডব্লিউএস-র সাক্ষ্য প্রমাণের কপি নিলাম। দুপুরে দিল্লী রেস্টুরেন্টে খেলাম। দেড়টায় যােগীনগরে গেলাম। সেখানে ভাবির হাতে কোরবানের বিয়ের দাওয়াতপত্র দিলাম। এটি বার লাইব্রেরিতে কামরুদ্দীন সাহেব আমার কাছে দিয়েছিলেন পৌছে দেয়ার জন্য। ঠিক এই সময়ে অলি আহাদ এবং তােয়াহা সাহেব। ফিরলেন। তােয়াহা সাহেবকে অনুরােধ করলাম তিনি যেন হাশিম সাহেব ও উমরকে বিয়ের কার্ড পৌছে দেন। দুপুর পৌনে ২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ডাক্তারের বাসায় বিশ্রাম নিলাম। বিকেল পৌনে ৪টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। যাবার পথে তাজে লাচ্ছি খেলাম। জনাব
এ. আর. খান, সিদ্দিক, টিটু মিয়া, কামরুদ্দীন সাহেব প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। সন্ধ্যা ৬টায় কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে জিন্দাবাহার গেলাম। সাড়ে ৭টায় তার সঙ্গে সােয়ারি ঘাট গেলাম। রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আমাদের মামলার কাগজপত্র নিয়ে আলােচনা হল। রাত পৌনে ১১টায় বের হলাম। কামরুদ্দীন সাহেবকে তার বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমি নবাবপুরের শেষ মাথায় এলাম। স্টেশন। রােডে এক রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার পর ১২টার দিকে ফিরলাম। রাত সাড়ে ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : প্রচণ্ড রৌদ্রম্নত সারাদিন। উত্তপ্ত আবহাওয়া। ১৬, ৮, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। সকাল ৯টায় বের হয়ে সরাসরি সােয়ারি ঘাট গেলাম। আতাউর রহমান সাহেব। ততক্ষণে আমার কাগজপত্র নিয়ে বসেছেন। ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত আমরা সেগুলাে দেখলাম। বেলা পৌনে ১১টায় কিছু বইসহ মানিক মিয়ার সঙ্গে আদালতে গেলাম। দুপুর সােয়া ১টার দিকে বাদি পক্ষের উকিল উপেন্দ্র চন্দ্রের যুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম শুরু হল। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে চলল দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। তারপর আতাউর রহমান খান সাহেব তার যুক্তি প্রদান শুরু করলেন। অল্প বিরতি দিয়ে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত তিনি তার যুক্তি প্রদর্শন করলেন। ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত মামলা মুলতবি করা হল। মামলার রায় দেয়া হবে সেদিন। বৃষ্টির কারণে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বার রাইব্রেরিতে থাকতে হল। কামরুদ্দীন। সাহেব, কে চৌধুরী, সিদ্দিক সাহেবকে চা খাওয়ালাম। কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে উত্তর নবাবপুর গেলাম। সেখানে আতাউর রহমান খান ও কফিলউদ্দীন চৌধুরী ছিলেন। তাঁরা কোরবানের বিয়ের উপহার কিনলেন। তারা কিছুক্ষণের জন্য কেমব্রিজ ফার্মেসিতেও বসেছিলেন। জহিরও আমাদের সঙ্গে ছিল। তারা সন্ধ্যায় চলে গেলেন। কামরুদ্দীন সাহেব গেলেন সাড়ে ৭টায়। আমি তাকে আবদুল খানের মামলাটি দেখার জন্য অনুরােধ করলাম।
২০৫

রাত সােয়া ৮টায় ঠাঠারি বাজার ফিরলাম। বাকি ও জাহানারার সঙ্গে রাতের খাবার খেলাম। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আজ দুপুরে খাওয়া হয়নি। মামলার কারণে অতিরিক্ত কাজ করতে গিয়ে আমার শরীরের ওপরে প্রচণ্ড চাপ পড়ছে। তাই কোরবানের বিয়েতে যাবার পরিকল্পনা বাদ দিলাম । চার রাত বাকির সঙ্গে ডাক্তারের বাসায় থাকলেও ডাক্তারের সঙ্গে দেখা হয়নি। তার সঙ্গে আজ সন্ধ্যায় ফার্মেসিতে দেখা হয়েছে। এই বাসায় থাকার সময় বাকি, জাহানারা এবং এক ভৃত্য ছাড়া আর কারও সঙ্গেই আমার দেখা হয়নি। আবহাওয়া : বিকেলের আগ পর্যন্ত প্রচণ্ড রােদ। বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভাল বৃষ্টি হল। তারপর একেবারেই বৃষ্টি নেই। বৃষ্টির কারণে রাতের আবহাওয়া সহনীয় ও স্বস্তিকর। তবে রাতের আকাশ পরিষ্কার নয়।
১৭, ৮, ৫১ -শ্রীপুরের পথে – সকাল পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৬টা ৫ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। আমি যে কামরায় উঠলাম সে কামরায় মফিজউদ্দীন, ওয়ারিস আলী ও লুলুও ছিল। তারা শ্রীপুরে নেমেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হল। আমি মফিজউদ্দীনের হাতে ‘হাইপােক্যাল’ ও ৩টি প্লেট দিয়ে দিলাম। দুপুর প্রায় ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত গত ৭ তারিখ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত অন্য কাগজে লিখে রাখা আমার দিনলিপি মূল ডায়েরিতে লিখলাম। সেই সাথে সমস্ত জমা খরচেরও হিসাব করলাম। আমি মাঠ থেকে ফেরার পর সন্ধ্যায় আবদুল খান এলেন। তার সঙ্গে আহমদ, হাকিম মিয়া প্রমুখ ছিলেন। আমি তাকে মামলার বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশ ও পরামর্শ সম্বলিত কামরুদ্দীন সাহেবের দেয়া একটি কাগজ দিলাম। তারা রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলেন।

রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : ভােরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল এবং হালকা বৃষ্টি হয়েছে বােঝা
যাচিছল। রৌদ্রস্নাত দিন। রাত আরামদায়ক ও শীতল। ১৮.৮, ৫১ সকাল সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সােয়া ৪টা পর্যন্ত ক্লাস নিলাম। আবদুল খান ঢাকা থেকে ফিরে সাড়ে ৪টার দিকে আমার সঙ্গে দেখা করল। বন বিভাগ থেকে কেউ হাজির না হওয়ায় তার মামলার শুনানি হয়নি। ১৫ মিনিট কথা বলার পর সে চলে গেল। সকাল সােয়া ১০টায় বরু এসেছিল। সে আমসুর পক্ষ থেকে আমাকে দাওয়াত দিতে এসেছিল। আমসু আজ দুপুরে হাফিজ বেপারির জন্য দাওয়াতের আয়ােজন করেছে। বরুকে বুঝিয়ে বললাম, স্কুলে ক্লাস থাকায় আমি যেতে পারছি না। বিকেলে স্কুলের মাঠের দিকে যেতে নিয়েছিলাম, কিন্তু বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখে সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে এলাম। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে স্কুল থেকে ফেরার পথে নিয়ামত সরকার, আজিজ প্রমুখের সঙ্গে চায়ের দোকানে দেখা হয়েছিল। তাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেছি। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রৌদ্রস্নাত দিন। সূর্যাস্তের সময় কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি হল। তারপর আবার পরিষ্কার আকাশ। গরম আবহাওয়া।
১৯, ৮, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সােয়া ৪টা পর্যন্ত ক্লাস নিলাম। ক্লাসের অবসরে আমাদের থাকা-খাওয়া প্রসঙ্গে আলােচনায় প্রধান শিক্ষক কোন কারণ ছাড়াই ঝাপিয়ে পড়লেন। তার এই অযাচিত আগ্রহের পেছনে নিশ্চয়ই কোন
কারণ আছে। সারা বিকেল বাড়িতে বসে যৌন বিজ্ঞান বইটি পড়লাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : ঝকঝকে রৌদ্রময় দিন। রাত দিন সারাক্ষণই গরম। ২০. ৮, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ক্লাস নিলাম । ছাত্ররা ৭ম পিরিয়ডে ছুটি নিয়ে স্কুলে নিজেদের মধ্যে আয়ােজিত ফুটবল ম্যাচ খেলল। প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি তার মামলার জন্য ঢাকায় গেছেন। বিকেল পৌনে ৫টায় বাসায় ফিরলাম। ক্লাসের পঞ্চম পিরিয়ডে আক্কাস আলী আমার সঙ্গে দেখা করেছিল। তাকে ঢাকা যাবার সময় আমার সঙ্গে দেখা করতে বললাম। ২/৩ মিনিট কথার পর সে চলে। গেল। শেষ বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে শ্রীপুরের কাচারি পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন বিশেষ করে বিকেলে ঘাম ঝরানাে গরম। বিদ্যুৎ চমক, গর্জন ও মেঘের আনাগােনা বৃষ্টির আগমনকে রােধ করল। শুধু রাতের শেষ ভাগে মাত্র কয়েক ফোটা বৃষ্টি পড়ায় গরমের কোন হেরফের হল না। ২১, ৮, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সােয়া ৪টা পর্যন্ত ক্লাস নিলাম। সারা বিকেল ‘যৌন বিজ্ঞান বই পড়ে কাটালাম। হাফিজ বেপারিকে বিদায় জানাতে ঢাকা যাবার পথে ওয়ারিস আলী এবং আমসু

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমার কাছে এসেছিল। হাফিজ বেপারি আগামীকাল হজ্বের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। কাওরাইদ থেকে ফিরতে মজিদ সাহেবের দেরি হচ্ছিল। রাত সাড়ে ১০টায় তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত তাই রাতের খাবার খাইনি। কিন্তু তিনি ফিরে এসে আর খেলেন না। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সহনীয় গরম। শেষ রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মাঝারি মাত্রার ভাল বৃষ্টি হল। বৃষ্টিভেজা আবহাওয়া । ঝিরঝির বৃষ্টি চলছেই। ২২, ৮, ৫১ সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে সােয়া ৪টা পর্যন্ত ক্লাস নিলাম। বৃষ্টির কারণে সারা বিকেল রুমের ভেতরেই আবদ্ধ থাকতে হল। আক্কাস আলী সকাল সাড়ে ৯টার ট্রেনে ঢাকা গিয়েছে। তার হাতে কুদরত আলীকে লেখা একটি চিঠি দিলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : মাঝে মাঝে ভারি বর্ষণসহ সারাদিন একনাগারে বৃষ্টি হল। বিষন্ন আবহাওয়া। মাঠ ঘাট পানিতে ডুবে গেছে।
২৩.৮.৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ক্লাস নিলাম। আক্কাস আলী ঢাকা থেকে ফিরে বিকেল ৪টার দিকে আমার সঙ্গে দেখা করেছে। মাকে দেয়ার জন্য তার হাতে আমার বদনা দিলাম। সে সাড়ে ৪টার দিকে চলে গেল।

| বিকেল ৫টার দিকে হাবিবুর রহমান গার্ড আমার সাথে দেখা করার জন্য বাসায় এল। সে মনােহর ও আসিমুদ্দিনের বিরুদ্ধে কথা বলল। সে বলল, তারা বন ধ্বংস করছে। তার কথায় মনে হল, সে আসিমুদ্দিন ও রেঞ্জারের গােপন এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে এবং চাতুরী করে আমার কাছ থেকে কথা বের করার চেষ্টা করছে। বৃষ্টিভেজা আবহাওয়া ও কাদাভরা রাস্তার কারণে সারা বিকেল ঘরেই আবদ্ধ থাকলাম। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আকাশ সারাদিন রাত মেঘে ডাকা। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টির বিরতি। রাতে সম্ভবত বৃষ্টি হয়নি। তবে মাঝে মাঝে প্রবল দমকা বাতাসের সঙ্গে বজ্রপাতের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। ঝড়াে আবহাওয়া চলছে। ২৪. ৮. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ঝড়াে হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে সারাদিন ঘরেই ছিলাম। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর জন্য প্রশ্ন তৈরি করলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : ঘন মেঘের আড়ালে সূর্য ঢাকা পড়ে আছে। মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে মুষলধারায় বৃষ্টি। বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়া চলছে। সহনীয় পরিবেশ। ২৫. ৮, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ক্লাস নিলাম। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জনাব এম. এ. হােসেন ছাত্রদের উদ্দেশে দক্ষিণ ছাউনিতে দুপুর ২টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বক্তব্য রাখলেন। তারপর তিনি প্রধান শিক্ষক, মজিদ সাহেব ও আমাকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তুললেন। এরপর আর ক্লাস হল না। বিকেল প্রায় সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রধান
২১০

শিক্ষকের সহায়তায় স্কুলের খরচের প্রতিটি খাত আলাদা করে হিসাবপত্র ঠিক করলাম। তাকে চায়ের দোকানে চা খাওয়ালাম। নাস্তার পর বিকেল সাড়ে ৫টায় স্টেশনে গিয়ে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সন্ধ্যা ৭টায় তারা চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কথা বললাম। এই সদস্য দলে ছিলেন পশ্চিম পাঞ্জাবের জনাব এম, এ. হােসেন, পূর্ব পাঞ্জাবের রফিক মির্জা, বরিশালের জনাব এম, এ, করিম। এছাড়াও ছিলেন বরিশাল, সিলেট ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে একজন করে সার্জেন্ট এবং ঢাকার কালীগঞ্জ থানার সার্জেন্ট লুৎফর রহমান। তারা আমার ঠিকানা নিলেন। গত ২৩ তারিখে ভাঙ্গনাহাটিতে জরুরী অবতরণের কারণে যে প্লেনটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল সে প্লেনটি তারা গুদামে রেখে গেলেন। একটা ডানা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া ছাড়া মানুষ কিংবা প্লেনের কোন যন্ত্রাংশের ক্ষতি হয়নি। পরিচিত অনেকের সঙ্গে সেখানে দেখা হল। ৮টার দিকে ফিরেছি। রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : ভাল বিরতি দিয়ে মাঝে মাঝেই মুষলধারায় বৃষ্টি হয়েছে। ঝড়াে ও বৃষ্টিভেজা আবহাওয়া। নাতিশীতােষ্ণ।
২৬. ৮. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সােয়া ৪টা পর্যন্ত ক্লাস নিলাম। টুকু বাড়ি থেকে আমার জন্য এক টিন ভর্তি মুড়ি নিয়ে এসেছে। সে জানাল, আফসু গত ৭/৮ দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। এই খবর আমাকে খুবই উদ্বিগ্ন করল। আমি নিজেই ঔষধের দোকান থেকে আফসুর জন্য ঔষধ কিনে টুকুর হাতে দিলাম। ডা, আহসানউদ্দিন আমাকে চা খাওয়ালেন। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সােজা বাসায় ফিরলাম। সন্ধ্যায় দশম শ্রেণীর ছাত্র ইসলাম এসেছিল। সে পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে জানাতে চাইল। আমি তাকে বিবর্তনের ইতিহাস বুঝিয়ে বললাম। সে ৮টায় চলে গেল। আহমদ সকালে আমাদের সঙ্গে নাস্তা করেছিল। সকালে গােছল করতে পারিনি বলে সন্ধ্যায় অসময়ে গােসল করলাম ।

রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : গত ২৪ ঘন্টায় কোন বৃষ্টি হয়নি। বাতাসে জলীয় বাষ্পের কারণে
সারাদিন তীব্র গরম।। রাত নাতিশীতােষ্ণ। আকাশ সারাক্ষণই মেঘে ঢাকা। ২৭, ৮, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সােয়া ৪টা পর্যন্ত ক্লাস নিলাম। বলাই বাবু আজ স্কুলে যােগ দিয়েছেন। ক্লাস শেষে তিনি আমাদের সঙ্গে নাস্তা করলেন। বলাই বাবু এবং আমি স্কুলের অবস্থা, প্রধান শিক্ষকের কী করা উচিত এবং তিনি কী করছেন, এই সমস্ত বিষয়ে আলােচনা করলাম। সাড়ে ৫টায় তিনি চলে গেলেন। স্কুল থেকে ফেরার পথে ইফু দফাদারের সঙ্গে দেখা হল। সে ঢাকা থেকে ফিরে বাড়ি যাচ্ছিল। প্রায় ৫ মিনিট ধরে ইষ্ণু দফাদার দুর্নীতি দমন বিভাগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে চলে গেল। দশম শ্রেণীর ছাত্র ইসলামের ফরেস্টার ভাই মজিদ সাহেবের খোঁজে এসে সাড়ে ৬টা থেকে রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত আমার সাথে গল্প করল। কালু মােড়ল সাহেবের উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষক আমাকে জানালেন, তিনি আমাদের প্রত্যেককে মাসে ৭০/- করে দেবেন। বাকি টাকা মােড়লের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ জানালাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : যদিও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, কিন্তু সূর্যাস্তের সময় হালকা বৃষ্টি ছাড়া সারাদিন আর কোন বৃষ্টি হয়নি।

২৮, ৮, ৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সােয়া ৪টা পর্যন্ত সবগুলি ক্লাস নিলাম। বলাই আজ আসেননি। সারা বিকেল রুমে কাটালাম। ফরেস্টার তার ভাই ইসলামসহ ৬টার দিকে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তিনি আমাকে অনুরােধ করলেন আমি যেন তার ভাইকে পড়াই। সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বৃষ্টি হয়নি। সূর্যের মুখ দেখা না গেলেও প্রচণ্ড গরম। সারাক্ষণ আকাশ মেঘে ঢাকা। বাতাসে অতিরিক্ত অর্দ্রতা। ২৯. ৮.৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। দ্বিতীয় পিরিয়ডের পর ক্লাস ছুটি দিয়ে দেয়া হল। দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধান শিক্ষক সাহেবের আয়ােজিত এক ভােজে যােগ দিলাম। সেখানে এস,আই, জনাব নুরুল হক, ৪ জন কনস্টেবল, একজন জমাদার, কালু মােড়ল, সালেহ আহমেদ মােড়ল, ধনাই বেপারি, স্টেশন মাস্টারসহ অনেকেই এসেছিলেন। এটা স্পষ্ট হল, এস.আই. নূরুল হকের জন্যই এই আয়ােজন। আমি দুপুর দেড়টায় খেতে বসলাম। ঠিক যে সময় উত্তরের দমকা বাতাসের সাথে মুষলধারায় বৃষ্টি শুরু হল। আমরা সম্পূর্ণ ভিজে গেলাম। অনুষ্ঠানের আমেজ নষ্ট হয়ে গেল। আমরা কোন রকমে খাবার খেয়ে নিলাম। স্কুলের আবাসিক ছাত্রদের জন্য নির্মানাধীন ভবনে আমাদের খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দুপুর আড়াইটায় বৃষ্টির মধ্যেই বাসায় ফিরলাম। দুপুর ৩টায় আহমদ ঢাকা থেকে ফিরেছে। সে বিকেলে রেল স্টেশনের পূর্ব দিকে ডিস্টি বাের্ডের রাস্তা ধরে আমার সঙ্গে হাঁটল। সন্ধ্যার পর সে বাড়ি গেল। তাকে কাজী সাহেব, প্রধান শিক্ষক ও কালু মােড়লের বিষয়ে জানালাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম।

আবহাওয়া : দুই দিন বন্ধ থাকার পর হঠাৎ করেই আজ দুপুর দেড়টার দিক থেকে প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত মুষলধারায় বৃষ্টি হল। উল্লেখ করার মত প্রচণ্ড বৃষ্টি। এরপর বেলা ৩টা পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়ে বৃষ্টি পড়া বন্ধ হল। মেঘলা আকাশ। সহনীয় আবহাওয়া। ৩০.৮, ৫১ – ঢাকার পথে – ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দ্বিতীয় পিরিয়ড পর্যন্ত ক্লাস নিলাম। দুপুর ১টা ১৭ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। আহমদ এবং হাকিম মিয়া সঙ্গে এল। দুপুর সােয়া ৩টায় ঢাকা পৌছলাম। রাজবাড়ি ইউনিয়ন বাের্ডের প্রেসিডেন্ট আমাদের সঙ্গে একই কামরায় ছিলেন। কাওরাইদের হাসমত স্টেশন থেকে ৪৭ ঠাঠারি বাজার হয়ে আদালত পর্যন্ত আমার সঙ্গে এসে তারপর চলে গেল। হাসমত আমাকে ঠাঠারি বাজারে বিন্দুর দোকানে চা খাইয়েছিল। স্টেশনে আমার পুরান শিক্ষক রাখাল বাবুর সঙ্গে দেখা হল। বিকেল ৪টায় আদালতে পৌঁছলাম। চুনকুটিয়ার এ. রউফের সঙ্গে দেখা হল। কামরুদ্দীন সাহেবকে প্রথম সাব জজের আদালতে পেলাম। সেখানে বিকেল পৌনে ৬টা পর্যন্ত ছিলাম। এরপর কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে জিন্দাবাহার গেলাম। কোর্টে আক্কাসের মামলার শুনানি চলছে। রাত ৮টা পর্যন্ত জিন্দাবাহারে ছিলাম। তারপর বের হলাম। এর আগে কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে নাস্তা করেছি। ইসলামপুর রােডে বেলায়েত আলী মাস্টার ও গিয়াস ভাইসাহেবের সঙ্গে দেখা হল। আসু এবারও আসতে পারেনি। রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এ, জে, শামসুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে তার বইয়ের দোকান কিতাবিস্তানে ছিলাম। গ্রীন রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেয়ে সাড়ে ১০টার দিকে ঠাঠারি বাজারে ফিরলাম। রাতে সেখানে থাকলাম। বাসায় ডাক্তার, বাকি, ভাবি, জাহানারা ও
দু’জন ভৃত্য ছিল। রাত ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। রাত পৌনে ১০টায় এক পশলা বৃষ্টি
হল। সকাল থেকে দুপুরের আগ পর্যন্ত রৌদ্রালােকিত দিন। মাঝে মাঝে টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ।
৩১. ৮. ৫১ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টায় বের হলাম। যােগীনগরে গিয়ে কাউকে পেলাম না। সাড়ে ৮টার দিকে আদালতে গেলাম। সামসুদ্দিন সরকার, কালু মােড়ল, সালেহ আহমেদ, হাসনাত, আসু, আহমদ, গিয়াস, ডা, করিম, অলি আহাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিল। আদালতে কী রায় হতে পারে সে বিষয়ে কেউই কোন ধারণা দিতে পারল না। বরং সবাই ভাবছিল রায় বিপক্ষেই যাবে। বেলা ১১টার দিকে (সােয়া ১১টার আগেও না পরেও না) কামরুদ্দীন সাহেবের উপস্থিতিতে মি. ওবায়দুল্লাহ সবাইকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আদেশ দিলেন। রায় ঘােষণার আগ মুহূর্তে আমার যে অবস্থা তা সারাজীবন মনে রাখার মত। অনিশ্চয়তার অন্ধকারের ফাঁক গলে এক চিলতে আশার কোন আলাে দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমি এতটাই উৎকণ্ঠায় দোলায়মান হয়েছিলাম যে, আমার ইস্পাত কঠিন ধৈৰ্য্য সত্ত্বেও আমি নিজের ভেতরে তীক্ষ কম্পন অনুভব করতে পারছিলাম। আমি বেঞ্চ স্টাফ ও মমতাজসহ সবাইকে প্যারামাউন্টে খাওয়ালাম। কিছুক্ষণের জন্য বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে জহিরুদ্দীন সাহেব ও কোরবান আলীকে পেলাম। কোরবান আলী আমাকে। অনুরােধ করল, আক্কাস ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলায় আমি যেন তাদের সাহায্য করি।
২১৫

বিকেল ৫টায় প্রথমে যােগীনগরে অলি আহাদের সঙ্গে দেখা করলাম। তারপর। কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম। তারপর ৬টার দিকে সিরাজদীখানের ৩ জন। লােকসহ নীলখেত ব্যারাকে গেলাম। প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর জাফর মাস্টারকে পেয়ে তাকে আক্কাসের কেস সম্পর্কে বললাম। জাফর মাস্টার তার মেয়ের স্বামীর সঙ্গে এই ব্যারাকেই থাকে। সােয়া ৯টায় সেখান থেকে বের হয়ে বাজারে গেলাম। কে, আলীর কাছ থেকে কাপাসিয়া ৮(৫)৫১ মামলার কাগজপত্র নিয়ে কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম। আক্কাসও সেখানে এল। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঠাঠারি বাজার ফিরলাম।

রাতে খাবার খাওয়া হয়নি। রাত সাড়ে ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুরে আধ ঘন্টা বেশ ভাল বৃষ্টি হল। এরপর আর বৃষ্টি হয়নি। আকাশ প্রায় পরিষ্কার। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া।
——————-
বি. দ্র. (১) ২১. ৫. ৫০ তারিখে বন বিভাগের সহায়তায় আসিমুদ্দিনের দায়ের করা মিথ্যা ও বিদ্বেষপরায়ণ মামলা ৩১-৮-৫১ তারিখে শেষ হল বেকসুর খালাসের রায়ের মধ্য দিয়ে। (২) জুট বাের্ড এখন পর্যন্ত পাটের দাম নির্ধারণ করে দেয়নি। ঢাকা
জেলায় এখন পাটের মূল্য মণ প্রতি ২০/- থেকে ৩০/- মধ্যে ওঠা নামা করছে। কিন্তু মফস্বল জেলায় বিশেষত উত্তরবঙ্গে পাটের দাম মণ প্রতি ১৪/- থেকে ২০/- মধ্যে থাকছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বাজারে দামের উর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। ঢাকা জেলায় প্রতি মন চাল বিক্রি হচ্ছে ২২/- থেকে ২৪/- | দাম বাড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। (৪) অগাস্ট মাসের শেষ সপ্তাহের ভারি বর্ষণ থেকে ধারণা করা যাচ্ছে এবার ভাল শাইল ধান হবে।

– শনিবার – ১, ১, ৫১
-শ্রীপুরের পথে – ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টায় বের হলাম। সদরঘাটে রউফ, হাজী একরামুল হক খান এবং ৩ কে, জি, গুপ্ত লেনের আহমদের সঙ্গে দেখা হল। একরামুল এবং আহমদ আমাকে মৌলবি বাজারে তাদের দোকানে নিয়ে গিয়ে চা খাওয়াল। ৯টায় সােয়ারি ঘাটে আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আদালতের রায়ে বেশ খুশি হয়েছেন। রায়ের কপি ও অন্যান্য কাগজপত্র তােলার জন্য মানিক মিয়াকে সােয়া ১২ টাকা দিলাম । সাড়ে ১০টায় বের হয়ে জিন্দাবাহারে গেলাম। সেখান থেকে কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে বার লাইব্রেরি পর্যন্ত গিয়ে শ্রীপুরে যাবার জন্য বিদায় নিলাম। বার লাইব্রেরিতে জমির, মােমেন সাহেব, নাইম সাহেব প্রমুখকে পেলাম। সাড়ে ১১টার দিকে ঠাঠারি বাজারে ফিরে এলাম। করিমের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে দুপুর পৌনে ১টায় স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম। ডা. করিমকে ফার্মেসিতে পাওয়া গেল, একটু পর জলিলও সেখানে এল। দুপুর ১টা ৩৪ মিনিটের ট্রেন ঠিক সময়ে ছাড়ল। বাঘিয়ার সাহাদ আলী এবং কপালেশ্বরের আজিজ মাস্টার আমার সঙ্গে একই কামরায় ছিলেন। শ্রীপুরে পৌছে সাদির মােক্তারকে একই ট্রেন থেকে নামতে দেখলাম। সাদির মােক্তার আমার অতিথি হলেন। তাকে নাস্তা খাওয়ালাম। রাতে খাবার পর

রাত সাড়ে ৯টার ট্রেনে তিনি ঢাকা ফিরে গেলেন। মজিদ সাহেব ও আমি তাকে বিদায় জানালাম। কাজী আবদুল লতিফ সাহেব সাদির সাহেবের সঙ্গে একই কামরায় উঠলেন। ট্রেন ছাড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি আমার মামলা নিয়ে কথা বললেন। আমি বাসায় ফেরার পরপরই নিয়ামত সরকার এসেছিল দেখা করতে। রাত সাড়ে ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া : সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শুরু হয়ে সােয়া ১১টা পর্যন্ত বিরতি দিয়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হল। এরপর আর বৃষ্টি নেই, দিনের শেষ পর্যন্ত সূর্যালােকিত। রাত পরিষ্কার। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেল সােয়া ৪টা পর্যন্ত নির্ধারিত ক্লাস নিলাম। আজ বিকেলে মজিদ সাহেব বন দফতরে বদলি হলেন। প্রধান শিক্ষক ও বলাই বাবু স্কুল শেষে কালু মােড়লের কাছে গিয়ে মজিদ সাহেবের বদলির ব্যাপারে কথা বললেন। প্রধান শিক্ষক দ্বৈত ভূমিকা নিলেন। কালু মােড়লের উপস্থিতিতে তিনি মজিদ সাহেবের এখানে থেকে যাবার পক্ষে কথা বললেন। অথচ ফরেস্টারের সাথে মিলে এই বদলির বিষয়ে সমস্ত কিছু তিনিই করিয়েছিলেন। সূর্যাস্তের পর স্কুল মাঠে প্রায় আধ ঘন্টা ধরে হাঁটলাম। সিরাজ রাতে আমার সঙ্গে পড়ালেখা করল। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন প্রচণ্ড রােদ ছিল। পুরাে দিনরাত আকাশ পরিষ্কার। আবহাওয়া গরম। ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। স্কুলে আমার জন্য নির্ধারিত প্রত্যেকটি ক্লাস নিলাম।
২২০

স্কুল ছুটির পর মজিদ সাহেব আমার সঙ্গে নাস্তা করলেন। বিকেলে আসিমুদ্দিনের সঙ্গে বসে মামলার সমস্ত হিসাবপত্র ঠিক করলাম । রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন প্রখর সূর্যালােক। আকাশ একেবারেই পরিষ্কার। শরীর
ঘামাননা গরম। ৪. ৯, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। নির্ধারিত ক্লাস নিলাম। বেলা ১০টার দিকে দফতু এল। গত শনিবার থেকে তার জ্বর। ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ নেবার জন্য আমি তাকে একটা চিরকুট লিখে দিলাম। দফতু জানাল আকবর আলী তার স্ত্রী ও পুত্রদের নিয়ে কয়েকদিন আগে আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল । সকাল ১০টার দিকে কালু মােড়ল সাহেব আমাদের স্কুলের দফতরি ইসব আলীকে ভাল রকম বকাঝকা করলেন। এম. ই. স্কুলে মল ছোড়ার ব্যাপারে তার হাত ছিল এই সন্দেহে। প্রধান শিক্ষক সম্ভাব্য শাস্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন। আমি তাকে বললাম, তিনি যেন কমিটির সাথে যােগাযােগ করেন এবং তিনি যদি জানেন যে, ইসব আলী দোষী নয়, তবে তা যেন তিনি জোরের সাথে উপস্থাপন করেন। বিকেলে রান্নাঘরের জিনিসপত্র কিনলাম। প্রচণ্ড গরমে আমি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলাম। আমার কাজের মেয়েটি মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফিরিয়ে আনল। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন শরীর ঝলসানাে রােদ। বিশেষ করে বিকেলের দিকে। মধ্য রাতের পর গরমের তীব্রতা কমে এল। ভাের পর্যন্ত আবহাওয়া ঠাণ্ডা ছিল।
সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টায় স্কুলে গেলাম। উপস্থিতি খুব কম, বৃষ্টির দিনে যেমনটি দেখা যায় । বৃষ্টির কারণে শ্রীপুর থানার ওসি তার ঘােড়াসহ আমার বাসায় ঢুকে পড়েছিলেন। তিনি ঘন্টাখানেক আমার সাথে বসে কথা বলেছেন। স্কুলের পর প্রায় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিছানায় শুয়ে ছিলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রাতের শেষ ভাগ থেকে আকাশে মেঘের আনাগােনা শুরু হয়। সকাল। ৯টার দিকে ঝড়াে বাতাসসহ বৃষ্টি শুরু হল। আধ ঘন্টার মত প্রচণ্ড বৃষ্টি হল। দুপুর ২টা পর্যন্ত ঝিরঝিরে বৃষ্টি চলতে থাকল । আবহাওয়া বিষন্ন । রাত ১০টার পর অল্প বৃষ্টি হল। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়া। সহনীয় পরিবেশ। ৬. ১. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। দুপুর ২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। প্রধান শিক্ষক, বলাই বাবু এবং আবদুল খালেক শেখ আবদুল্লাহর ব্যক্তিগত চরিত্র নিয়ে বিতর্কে মেতে উঠল। আমি তাদের এই কথার মধ্যে ঢুকে তাদের থামালাম। খালেক আমার বাসায় এসেছিল। সে নাস্তা খেয়ে ৩টার দিকে চলে গেল। দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে আমি বাড়ির পথে রওনা হলাম। নবম শ্রেণীর সুলতান আমার সঙ্গে বাড়ি পর্যন্ত এল। সে নামা বরােহর গেল। ওয়ারিস আলী, বরু এবং পরে টুক্কা ও শহর রাতে আমার সাথে দেখা করল। রফিক আর খন্দকার বাড়ির জামাই সন্ধ্যায় এসে রাতে থেকে গেল। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েকবার হালকা বৃষ্টি হয়েছে। সহনীয় পরিবেশ। পরিষ্কার রাত।

৭, ৯, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। সকালে নবু চৌকিদার, আনসু, রজব আলী আর ওয়ারিস আলী আমাকে কোরবানীর জন্য কেনা দুলুর গরু দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কোন ফয়সালা না হওয়ায় ফিরে এলাম। সকালে রফিক এবং তরগাঁওয়ে জামাই ময়মনসিংহে চলে গেল। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এলাহী এবং শ্রীপুরের ৭/৮জন ছেলে আমাদের বাড়িতে এসেছিল। মৈশন থেকে ফেরার পথে তারা আর আসেনি। আক্কাস আলী, ওয়ারিস আলী ও বরু আমার সঙ্গে দেখা করে ১০টার দিকে চলে গেল। নবু চৌকিদার নাস্তা খেয়ে গেল। জুম্মার পর জব্বার আমার সঙ্গে দেখা করল। এরপর এক ফকির ও তার স্ত্রী আমার সঙ্গে দেখা করল। তারা কালডাইয়া থেকে এসেছিল। বিকেল ৬টার দিকে শ্রীপুরের দিকে রওনা হলাম। আমার সঙ্গে শ্রীপুর ফিরে যাবার জন্য নবম শ্রেণীর সুলতান আমাদের বাড়িতে এসেছিল। আমরা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীপুরে পৌছলাম। আবহাওয়া : বিকেলে ৪টার দিকে হালকা বৃষ্টি ছাড়া সারাদিনই পরিষ্কার আকাশ ও সূর্যালােকিত দিন। গরম আবহাওয়া।
ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। দুপুর ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। স্কুল ছুটির পর নিজের জন্য কিছু কেনাকাটা করলাম। আমাদের দিকের অনেক লােক এসেছে কোরবানীর গরু ছাগল কেনাকাটার জন্য। এদের মধ্যে আবদুল খান, জব্বার, জবু, কুদুস, মাজি, ওয়ারিস আলী, হাওয়ার বাপ, শহর, বরু, রজব আলী, কাগুর বাপ প্রমুখ ছিল। তারা একটা বলদ কিনে সূর্যাস্তের পর বাড়ির পথে রওনা হল। নিয়ামত সরকার, আকরামতউল্লাহ, আবুলসহ আরও অনেকের সঙ্গে বাজারে দেখা হয়েছে।

রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন প্রচণ্ড রােদ। পরিষ্কার আকাশ। গরম আবহাওয়া হবে। অস্বাভাবিক নয়।
৯. ৯, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেল সােয়া ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ক্লাস নিলাম। বলাই বাবু ও প্রধান শিক্ষক স্কুলের পরে আমার কাছে এলেন এবং প্রায় আধ ঘন্টা গল্প করলেন। আমি তাদের প্রথম শ্রেণীর একটা হােটেল ও ক্লাব করার ধারণা দিলাম। বাইরে যাইনি। শ্রীপুরের ওসির বাবা এসে আমার সঙ্গে মিনিট পনের বসে গেলেন। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রৌদ্রকরােজ্জ্বল দিন। রাত ৮টার দিকে ঝড়াে বাতাস শুরু হয়। সাড়ে ১১টার দিকে এক পশলা বৃষ্টি হল। সারারাত প্রবল বাতাস বইল। আবহাওয়া ঠাণ্ডা । আকাশ খুব একটা মেঘে ঢাকা নেই। মৃদুমন্দ । বাতাস বইছে। ১০. ১. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত। কাল থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত আমি পবিত্র ঈদের অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকব। সালেহ আহমেদ মােড়ল বিকেলে আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি আমাকে আসিমুদ্দিন ও রেঞ্জার করিম তার বিরুদ্ধে হয়রানি করার যে পরিকল্পনা করেছে সে। বিষয়ে আমাকে জানালেন। আসিমুদ্দিন আমাদের বিরুদ্ধে যা করছে সে বিষয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী হবে তা জানালাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি চলে গেলেন।

ঢাকায় মৌখিক পরীক্ষা দিতে যাবার পথে চান মিয়া সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে দেখা করেছে। সে রাতে আমার সাথে খেয়ে ৯টায় চলে গেল। রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর ১২টা থেকে ২টা এবং রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত
হালকা বৃষ্টি হয়েছে। সহনীয় ঠাণ্ডা পরিবেশ। বৃষ্টিভেজা আবহাওয়া অব্যাহত। ১১. ৯, ৫১ ভাের সাড়ে ৪টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ ছুটির প্রথম দিন। টাকার জন্য বৃথাই বাসায় বসে থাকলাম। প্রধান শিক্ষক আমার সঙ্গে বেলা ৩টার দিকে দেখা করলেন। তিনি আমার সঙ্গে প্রায় আধ ঘন্টা। কথা বললেন। কিন্তু এই কথার মধ্যে তিনি আমার বেতন সম্পর্কে কোন কথা বললেন না। সেই সময় ঢাকা থেকে আহমদ সরাসরি আমার কাছে এসেছিল। তখন প্রধান শিক্ষক চলে গেলেন। বিকেল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কেনাকাটা করলাম। এম. ই. স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব রইসউদ্দীন ভূইয়া রাতে আমার সঙ্গে খেয়ে সাড়ে ৯টার দিকে চলে গেলেন। রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সকাল সাড়ে ১০টার দিক থেকে প্রায় দু’ঘন্টা বেশ ভালরকম বৃষ্টি
হল। বিকেলে বৃষ্টি নেই। কিন্তু রাতে আবার বৃষ্টি হল। আবহাওয়া তুলনামূলক ভাবে ঠাণ্ডা। আকাশ মেঘাচ্ছন্নই আছে।
সকাল ৬টায় ঘুম ভাঙল। সাড়ে আটটার দিকে বাড়ি যাবার জন্য বের হলাম। বলাই বাবুর বাড়িতে সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক ও বলাই বাবুর সাথে কথা বললাম। তারপর হাকিম ভূইয়া ও তার বাবার সঙ্গে তাদের বাড়ির সামনে এক ঘন্টার মত কথা বললাম।
২২৫
পথে ওয়ারিস আলী বাড়িতে থেমে দুপুর ২টার দিকে বাড়িতে পৌছলাম। বিকেলে আবদুল খানের বাড়িতে গিয়ে আক্কার বাপ, আজিজ খান ও সােবহানের সঙ্গে সন্ধ্যা পর্যন্ত কথা বলে ফিরে এলাম। মফিজউদ্দীন বরমী গিয়েছিল। রাত ১০টার দিকে সে ফিরে এল। রাত সাড়ে দশটায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দিনে বৃষ্টি হয়নি। চাঁদ ও তারায় ভরা পরিষ্কার আকাশ। সহনীয়
পরিবেশ। ১৩, ৯, ৫১ আজ ঈদ-উল আজহা। ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আমি আবদুল খান, রজব আলী, নাজু মামু আমাদের বাড়িতে নাস্তা খেলাম। ওয়ারিস আলী নাস্তা খায়নি। মফিজের বকা খেয়ে সােবহান গুড় না নিয়েই চলে গেল। সকালে বরু একজোড়া নারিকেল দিয়ে গেল। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঈদের নামাজ হল। সব সময়ের মত পরিচিত নামাজিরাই উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ১টার দিকে কোরবানীর মাঠে গেলাম। সব মিলিয়ে ২৪টি গরু আর ১ টা। ছাগল জবাই করা হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের গরুটাই সবচেয়ে ভাল ছিল। বিকেল ৫টার মধ্যে মাঠ পরিষ্কার করে ফেলা হল। আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে উপস্থিত থেকে গরীবদের মধ্যে মাংস বিতরণ করলাম। সূর্যাস্তের সময় বাড়িতে ফিরলাম। রাত ৮টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে সাড়ে ৮টার দিকে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : নামাজের আগ পর্যন্ত অল্প বিরতি দিয়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হল। তারপর থেকে পরিষ্কার আকাশ। তবে দুপুর ৩টার দিকে ২৩ মিনিটের জন্য কয়েক ফোটা বৃষ্টি হয়েছে। সারাদিন রাতে সুন্দর বাতাস। আরামদায়ক আবহাওয়া।

১৪. ৯. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আবদুল খান, আহমদ, রজব আলী, বরু, ওয়ারিস আলী, সােবহান প্রমুখ সকালে আমাদের বাড়িতে এসে দুই ঘন্টা গল্পগুজব করে কাটাল। প্রথম দু’জন ও শেষের জন ছাড়া অন্যরা নাস্তা করল। ওয়ারিস আলী ও আমি সাড়ে ১০টার দিকে ভুলেশ্বরের উদ্দেশে বের হলাম। মফিজউদ্দীন মুনসির বাড়িতে গিয়ে রুটি দিয়ে নাস্তা করলাম। দুপুর ১২টার দিকে আবার বের হলাম। ঠিক জুম্মার নামাজের সময় হাফিজ বেপারির বাড়িতে পৌছলাম। সেখানে জুম্মার নামাজ পড়লাম। আইয়ুব আলীর শ্বশুর এবং তাদের নারায়ণপুরের জামাইসহ দুপুরের খাবার খেলাম। অসুস্থ সাহেব আলী বেপারির সঙ্গে তার ঘরে দেখা করলাম। তার সঙ্গে তার ছেলের অসুস্থতার বিষয় নিয়ে কথা বললাম। জামাত আলী এবং এরপর মওলানা ওয়ারিস আলী সেখানে এলেন। সূর্যাস্তের সময়ে বের হলাম। জামাত আলীকে সাথে নিয়ে আইয়ুব আলীর বাড়িতে গেলাম। সেখানে ১৫/২০ মিনিট ছিলাম। তারপর ওয়ারিস আলীকে নিয়ে তরগাঁও যাবার জন্য রওনা হলাম। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় তরগাঁয়ে যাবার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাড়িতে ফিরে এলাম। বরু আর করম আলী আমাদের বাড়িতে রাতের খাবার খেল। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রৌদ্রময় দিন। সুন্দর বাতাস ছিল। কিন্তু রাতে বাতাস কমে যাওয়ায়
বেশ গরম অনুভূত হল। মধ্য রাতের পর বৃষ্টি হওয়ায় গরম কমল। ১৫. ৯, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ১০টার দিকে দরদরিয়া বাজার ঘাট থেকে বরুর নৌকায় তরগাঁও রওনা দিলাম। করম আলী ও সােবহান নৌকার দাঁড় বাইল। আলিমউদ্দিন আমাদের সঙ্গে ছিল।

লতিফপুরের মওলানা আস্তাকিম দাশুর ঘাটে নেমে গেলেন। আমি কাপাসিয়া ফেরিঘাটে নামলাম। কুদরত আলীকে তার বাড়ির সামনে পেলাম। সেই সময় ফিরােজ ডাক্তার সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। দুপুর ১টার দিকে ফকির বাড়িতে। পৌছলাম। বাড়িতে সবজে আলী ফকির এবং রহম আলী ছিলেন। দুপুরে খাবার পর বিকেল ৫টার দিকে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। কোন নৌকা। পেলাম না। তাই পায়ে হেঁটে রাত ৮টার দিকে বাড়িতে ফিরলাম। পথে বাঘিয়াতরগাঁও সীমানা মসজিদের কাছে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বললাম। তারপর কজলীর জামাই ও অন্যানদের সঙ্গে তাদের বাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে কথা বললাম। এরপর রাঙ্গামাটিয়া খালে বরুকে পেলাম। ফেরার পর ওয়ারিস আলীর সঙ্গে দেখা হল। রুস্তম আলী আকন্দের জামাই এবং ওয়ারিস আলী আমাদের সঙ্গে রাতের খাবার খেল। জামাই রাতে থেকে গেল। ওয়ারিস আলী চলে গেল। আমি রাতে খেলাম না। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। ১টা থেকে আড়াইটা। পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হল। তারপর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হতে লাগল। রাতে বৃষ্টি নেই কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সহনীয় পরিবেশ। ১৬. ১. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। জব্বার, সােবহান, রুস্তম আলী আকন্দের জামাইয়ের সঙ্গে নাস্তা করলাম। জামাই ১১টার দিকে চলে গেল। আবদুল খান প্রমুখও সেই সময় উপস্থিত ছিলেন। ঠিক হল রাতে গ্রাম সমিতির একটা সভা বসবে। দুপুরে সবাই চলে গেল। সাড়ে ১২টার দিকে আবদুল বানের বাড়িতে গেলাম। করম আলী, বরু, আজিজ খান প্রমুখ এবং পরে মহিম শীল এল। ঘন্টাখানেক পরে আমি ফিরে এলাম। শেষ বিকেল পর্যন্ত ঘুমালাম। দুপুরের খাবার খাইনি। সারাদিন বাড়িতে কাটালাম। রাতে আবদুল খান, ওয়ারিস আলী, শহর, হাওয়ার বাপ চলে যাবার পর জব্বার,

তাহের আলী, সােবহান প্রমুখ এল। কিন্তু ভিন্নমত পােষণকারীরা কেউ এল না। জবু, ফালু, মজি প্রমুখ সন্ধ্যায় আক্কাস আলীর সঙ্গে পরামর্শ করলেও কেউই এল । রাত ১১টার দিকে সবাই চলে গেল। ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুরের দিকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হল। সহনীয় পরিবেশ। রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। ১৭. ৯.৫১ – ঢাকার পথে – সকাল ৬টায় ঘুম উঠেছি। ঢাকার ট্রেন ধরার জন্য শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। বেলা ১১টায় খেয়াঘাটের কাছে গিয়াস ভাইসাহেবের সঙ্গে দেখা হল। তার সঙ্গে পনের মিনিট কথা বললাম । ঘাট পর্যন্ত ওয়ারিস আলী আমার সঙ্গে ছিল। ইদ্রিস গার্ড গােসিঙ্গা থেকে শ্রীপুর পর্যন্ত আমার সঙ্গে এল। বর্তমান বন কর্মচারিদের দুনীতি সম্পর্কে সে অনেক কথা বলল। পথে আমিরুদ্দিন আকন্দের ছেলে আবদুল আউয়াল আমাকে তার স্কুলের বকেয়া ১৭ টাকা দিল। শ্রীপুরের দিক থেকে আকবর আলীকে আসতে দেখলাম। শ্রীপুরের বাসা থেকে আমার জুতা ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিলাম। মুসলিম ফকিরকে দেখলাম। দুপুর ১টা ২২ মিনিটে ঠিক সময়েই ট্রেন ছাড়ল। একই কামরায় আহমদ ও সুবােধ আমার সঙ্গে ছিল। ৩টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌছলাম। সরাসরি ৪৭ ঠাঠারি বাজারে গেলাম। চুল কাটার পর গোসল করলাম। সন্ধ্যায় জিন্দাবাহারে গেলাম। কিন্তু কামরুদ্দীন সাহেবকে পেলাম না। আমাদের হলের কামাল আমার সঙ্গে তাঁতিবাজার ক্রসিং পর্যন্ত এল। ৭টায় সােয়ারি ঘাটে গিয়ে আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম । মানিক মিয়া উপস্থিত না থাকায় রায়ের কপি পেলাম না। রাত সাড়ে ৮টায় বের হয়ে ঠাঠারি।

বাজারে ফিরে এলাম। রাতে খেয়ে সেখানেই থেকে গেলাম। রাত ১০টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : সারাদিন শরীর ঝলসানাে রােদ। রাত কমবেশি আরামদায়ক। আকাশ খানিকটা মেঘাচ্ছন্ন। ১৮, ৯, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় জিন্দাবাহারে গেলাম। বেলা পৌনে ১১টায় কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে আদালতে গেলাম। আদালতে আমাদের প্রধান শিক্ষককে পেলাম। এছাড়াও পরিচিত সব উকিল ও ক্লার্কদের সঙ্গে দেখা হল। এ. রহমান সাহেব আবদুল খানের মামলা খারিজ করে দিলেন। সেখানে তখন আসিমুদ্দিন, হােসেনউদ্দিন ও জুলফিকার গার্ড উপস্থিত ছিল। আমি কুদরত আলীকে নাস্তা খাওয়ালাম। তারপর পেশকারের কাছে গেলাম । আবদুল খান ও আমার মামলার রায়ের কপি যােগাড় করলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বের হবার আগ পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে কোর্টেই কুদরত আলীর সাথে আটকা ছিলাম । সন্ধ্যা ৭টায় সােয়ারি ঘাট গেলাম। কামরুদ্দীন সাহেব বাসায় ছিলেন না। রাত সাড়ে ৮টায় আতাউর রহমান সাহেবের সাথে গাড়িতে করে জনাব রেজাই করিমের ওখানে গেলাম। সেখানে কামরুদ্দীন সাহেব, কাদির সরদার প্রমুখ ছিলেন। রাত সাড়ে ১১টায় আতাউর রহমান ও কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে বের হলাম । আমি ঠাঠারি বাজারে ফিরে রাতের খাবার খেলাম। রাত সাড়ে ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু সারারাত ঘুম হল না। আজ গােসল করতে পারিনি। দুপুরে খাওয়াও হয়নি। ডাক্তারের সঙ্গে আদালতে মাত্র একবার দেখা হয়েছিল। আবহাওয়া : বিকেল থেকে অল্প বৃষ্টি শুরু হল। ৬টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হল। রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। তুলনামূলকভাবে ভাল আবহাওয়া। বাতাসে আর্দ্রতা আছে।
২৩০
১৯, ৯, ৫১
– শ্রীপুরের পথে – ভাের সাড়ে ৪টায় বিছানা থেকে উঠলাম। আজ স্কুল খুলেছে। বেলা ১১টা থেকে ক্লাস নিলাম। ২য় টার্মিনাল পরীক্ষার জন্য স্কুল অর্ধদিবস ছুটি দেয়া হল। সাড়ে ৩টার দিকে স্কুল থেকে বের হলাম। ২৪ দিনের বেতন বাবদ ৭৭ টাকা ৬ আনা পেলাম। বিকেল ৬টা পর্যন্ত বাজারে চায়ের দোকানে হাসমত, মােসলেউদ্দীন এবং তারপর সালেহ আহমদ মােড়লের সঙ্গে কথা বলে বাসায় ফিরে এলাম। সন্ধ্যায় প্রধান শিক্ষক ও নূরুল ইসলামের সাথে হেঁটে রেল লাইন ধরে উত্তর দিকে ডিস্ট্রিক্ট সিগন্যাল পর্যন্ত গেলাম। নূরুল ইসলাম শ্রীপুরে একটি ওষুধের দোকান বােলার ব্যাপারে আলােচনা করলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রধান শিক্ষক আমার বাসা পর্যন্ত এলেন এবং প্রায় ৯টা পর্যন্ত কথা বলে চলে গেলেন। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। রাতের শেষ ভাগের আগে ঘুম আসেনি। আবহাওয়া : ট্রেনে আসার সময় কুর্মিটোলা ও টঙ্গীর মধ্যবর্তী এলাকায় বৃষ্টি হল। শ্রীপুরে বৃষ্টি নেই, গতকালও হয়নি। দিনের বাকি সময় পরিষ্কার আবহাওয়া। রাতের প্রথম ভাগে আকাশে মেঘ ছিল। বাতাসে। শরতের মৃদু স্পর্শ। শিশির পড়ছে। ভােরে হালকা কুয়াশার আভাস। শরতের শীতল আমেজ। ২০. ১. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ক্লাস নিলাম। দুপুর সােয়া ৩টা পর্যন্ত মজিদ সাহেব, আহমদ, রইসউদ্দীন সাহেব আর সুবােধের সঙ্গে চায়ের দোকানে বসে ছিলাম। তারা ময়মনসিংহের দিক থেকে আসা ট্রেন ধরলেন। বিকেল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ডাক বাংলাের প্রাঙ্গণে কাবাডি খেলা দেখলাম।

রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দিন রাত পরিষ্কার। সহসা বৃষ্টি হবার কোন সম্ভাবনা নেই। রাতে
শরতের ঠাণ্ডা আমেজ। ২১. ১. ৫ – ঢাকায় যাওয়া এবং ফিরে আসা – সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৯টার ট্রেনে ঢাকায় রওনা হলাম। ঢাকা স্টেশন পর্যন্ত আহমদ আমার সঙ্গে ছিল। ঢাকা স্টেশনে পৌছলাম দুপুর ১২টায়। সরাসরি আদালতে গেলাম। সেখানে কুদরত আলি এবং ফজলু মােক্তারের সঙ্গে দেখা হল। কুদরত আলীকে ১ টাকা ১২ আনা দিলাম। সে আমার সঙ্গে জিন্দাবাহার মােড় পর্যন্ত এল। বেলা সাড়ে ১২টায় কামরুদ্দীন সাহেবের বাসায় তার সঙ্গে দেখা করলাম। আমরা। দু’জনই আমাদের মামলায় মি. ওবায়দুল্লাহর দেয়া রায়ের আদেশ দেখলাম ও পড়লাম। আমি সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত থেকে ফেরার জন্য স্টেশনে রওনা। হলাম। কামরুদ্দীন সাহেবকে অনুরােধ করলাম আদালত অবমাননা বিষয়ে পরামর্শ করতে। তিনি অবিলম্বে একটি সংসদীয় রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা বললেন। আমি তার সঙ্গে একমত হলাম। আমরা যখন কথা বলছিলাম তখন রেলওয়ে লীগের (পূর্ব) আবদুল হাই একজন লােকসহ কিছুক্ষণের জন্য এসেছিলেন। ইসলামপুরের এল, মল্লিক থেকে কিছু কেনাকাটা করলাম। করিমকে সঙ্গে নিয়ে উত্তর নবাবপুর থেকে কাপড় কিনলাম। করিমের সঙ্গে মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গেলাম। কারণ ট্রেনের সময় হয়ে যাচ্ছিল। সেখানে জহিরুদ্দীন, জাহেরুদ্দীন সাহেব প্রমুখ ছিলেন। রাত ৮টার ট্রেনে শ্রীপুর রওনা হলাম। সাড়ে ১০টার দিকে পৌছলাম। সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : ঢাকায় সারাদিন রােদ ছিল। গরম সহনীয়। শ্রীপুরে ফিরে দেখলাম সেখানে বৃষ্টি হয়েছে। রাতের আকাশ প্রায় পরিষ্কার। আরামদায়ক পরিবেশ।

২২, ৯, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ক্লাস নিলাম । স্কুল ছুটি হবার পর খেলাম । সকালে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বাজারে ছিলাম। শার্ট ও পায়জামা তৈরি করতে দিলাম। বাজারে কয়েক জন কর্মকর্তার সঙ্গে মেস করে থাকার ব্যাপারে কথা বললাম। সােমেদ খান, মজিদ খান, মুজাফফর, সালেহ। আহমেদ মােড়ল প্রমুখের সাথে কথা হল। সােমেদ খানের দোকানে টুকু আমার সঙ্গে দেখা করল। সে মফিজউদ্দীনের জন্য ওষুধ নিল। দুপুর আড়াইটার দিকে আবদুল খান আমার সঙ্গে বাসায় দেখা করল। মামলা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে সে প্রায় বিকেল ৪টা পর্যন্ত আমার সঙ্গে কথা বলল। তারপর সে গরুর হাটে চলে গেল। সন্ধ্যা পর্যন্ত কেনাকাটা করলাম। ফটিক ভাইসাহেব, আফতাবদ্দীন, নিয়ামত সরকার, রুস্তম আলী আকন্দ, আকরামতউল্লাহ প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। সন্ধ্যার পর মজিদ খানকে সঙ্গে নিয়ে সােমেদ খানের দোকানে গেলাম। কালু মােড়ল আমাদের সঙ্গে যােগ দিল। চা খেয়ে ৮টার দিকে ফিরলাম । বাজারে হাসান মােড়লের সঙ্গে আহমদের ইংল্যান্ড যাবার ব্যাপারে কথা হল। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রৌদ্রজ্জ্বল দিন। পরিষ্কার রাত। রাতে শীতের আগমনী টের পেলাম।
২৩, ৯, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ ক্লাসও হল না, পরীক্ষাও হল না। বেলা ১২টা পর্যন্ত লাইব্রেরিতে বসে ছিলাম। দুপুর প্রায় ১টা পর্যন্ত এম. ই. স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে তার কক্ষে মজিদ সাহেবসহ স্কুলের গুজব নিয়ে কথা হল। দুপুর ১টা ২২ মিনিটের ট্রেনে প্রধান শিক্ষক এবং বলাই বাবু ঢাকা গেলেন। বিকেল ৩টার ট্রেনে মজিদ সাহেব, সুবােধ, শাহাবুদ্দিন, বাবর আলী প্রমুখের সঙ্গে খেলা দেখতে গফরগাঁও গেলাম। গফরগাঁও মার্চেন্টস ও মােসাখালির মধ্যে খেলা
হল। মােসাখালি ১-০ গােলে হেরে গেল । রাত ১০টায় শ্রীপুর ফিরলাম। রাত ১১টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : পরিষ্কার সূর্যালােক। তারা ভরা আকাশ। রাত ১১টা পর্যন্ত প্রচণ্ড গরম। এরপর থেকে সহনীয় আরাদমায়ক পরিবেশ।
২৪. ৯, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম ভাঙল। বেলা সাড়ে ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। আজ থেকে পরীক্ষা শুরু হল। বিকেল ৪টার দিকে খাবার খেলাম। সন্ধ্যায় মজিদ সাহেব, আহমদ, সুবােধ প্রমুখের সঙ্গে স্কুলের মাঠে হাঁটলাম। ওসি, সেনিটারি ইন্সপেক্টর প্রমুখও আমাদের পাশাপাশি হাঁটল এবং একটি ক্লাব করার বিষয়ে কথা বলল। সন্ধ্যায় হাকিম মিয়া এসেছিল। গাড়িয়াল বাড়ির আনােয়ারকে নিয়ে ঢাকা যাবার পথে আক্কাস আলী আমার সঙ্গে দেখা করে গেল। আমি তার মামলার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কুদরত আলীর জন্য একটি চিরকুট আক্কাস আলীর হাতে দিলাম। রাত ১১টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : সারাদিন রাত পরিষ্কার আকাশ। প্রচণ্ড রােদ এবং গা ঝলসানাে গরম। গত কয়েকদিন ধরে রাত ১১টার পর থেকে গরম কম অনুভূত হচ্ছে। যথানিয়মে শরতের শিশির পড়তে শুরু করেছে। ২৫, ৯, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেলে কেনাকাটা করলাম। সন্ধ্যায় স্কুলের মাঠে গেলাম। আহমদ, পশু চিকিৎসক, বলাই বাবু এবং আমি স্কুলের মাঠে বসে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত কথা বলে

বাসায় ফিরে এলাম। বেলা ১১টার দিকে হাসান মােড়ল স্কুলে এসেছিলেন। তিনি আমাকে আহমদের বিদেশ যাবার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে অনুরােধ জানালেন। সন্ধ্যায় হাবিব গার্ডকে বললাম আসিমুদ্দিনকে আপীল করার ব্যাপারে রাজি করাতে। সেটা আমার জন্য ভাল হবে। আবহাওয়া : দিন রাত পরিষ্কার আকাশ। দিনেরবেলা গরম। রাত ১১টার পর থেকে পর্যন্ত আবহাওয়া সহনীয়। বাতাসে আর্দ্রতার চিহ্ন নেই। ২৬, ৯, ৫১ সকাল পৌনে ৬টায় উঠেছি। হাকিম মিয়া ও আহমদ বেলা ১০টার দিকে এসে সাড়ে ১১টায় চলে গেল। আমি হাকিম মিয়াকে এ, আর, খান অথবা কে, আহমদের সঙ্গে যােগাযােগ করে আসিমুদ্দিন ও রওশনউদ্দিনের নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে বললাম। সাহাদ আলী সরকারের অর্থ প্রীতির কথাও আমি তাকে জানালাম। ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেলে স্কুল মাঠে হাঁটলাম। বলাই, সুবােধ, মজিদ, সালেহ আহমদ, আহমদ প্রমুখ মাঠে ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাসায় ফিরলাম। রাত ১১টা পর্যন্ত দশম শ্রেণীর পরীক্ষার খাতা দেখলাম। সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ২৭. ৯. ৫১ – বাড়ির পথে – ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম।
২৩৫

সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ির পথে রওনা হয়ে সূর্যাস্তের সময় পৌছলাম । আজ সন্ধ্যায় আফসু ও দফতু বাড়ি ফিরেছে। রাতে আবদুল খান, ওয়ারিস আলী, শহর, টুক্কা এল। গ্রাম সমিতি নিয়ে আমরা যখন কথা বলছিলাম তখন আব্বাস, সালমান ও নাজু মােড়ল এল। আব্বাস জানাল, আশরাফ আলী মৌলবি করম আলীর সঙ্গে তার মেয়ের বিয়েতে অসম্মতি জানিয়েছে। আমি তার ওপর রাগ করলাম সমিতিতে ধান না দেয়ার জন্য। উপস্থিত সবাই ব্যাপারটা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করল। তাকে দেখে মনে হল সে ধরা পড়ে গেছে। সে কি করেছে তা জানার জন্য আমি সবাইকে মৌলবির কাছে যেতে বললাম। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওরা চলে গেল। রাত ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। গতকালের চেয়ে আজ দিনে বেশি গরম ছিল। ২৮, ৯, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বরু, সােবহান, আক্কা ও ওয়ারিস আলী সকালে এসে দুপুরে গেল। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সাইকেল নিয়ে দিগধায় রওনা হলাম। জুম্মার নামাজ ধরতে পারিনি। মওলানার বাসায় দুপুরে খেলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে গেলাম। ৫টায় মিটিং শুরু হল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মিটিং শেষ হল। মওলানা সাহেব, মফিজদ্দীন মাস্টার সাহেব ও আমি কথা বললাম । আরজু মিয়া সভাপতির দায়িত্ব পালন করলেন। নির্দিষ্ট কোন ফলাফল পাওয়া গেল না। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণী চালু করার সিদ্ধান্ত হল। রাত সাড়ে ৯টার দিকে জব্বার, ওয়ারিস, আক্কাস আলী, আনসারসহ বাড়িতে ফিরলাম । মিটিংয়ে আইয়ুব আলীও উপস্থিত ছিল। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : প্রচণ্ড রােদ। সারাদিন আকাশ পরিষ্কার । ঘাম ঝরানাে প্রচণ্ড গরম। রাতেও গরম ছিল তবে তুলনামূলক কম। কিন্তু আগের রাতগুলাের মত নয়।
২৯.৯.৫১- শ্রীপুরের পথে – ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আবদুল খান, আবদুল মােড়ল, কাগুর বাপ, জব্বার, সােবহান, ওয়ারিস, কোটেরটকের জাহের আলী, রানি বাড়ির টুক্কা আমাদের বাড়িতে এসেছিল। সমিতির একটা মিটিং হবার কথা ছিল। কিন্তু জবু ও কুদুস আজ আসতে অপারগতা জানিয়েছে। যদিও তারাই এই তারিখ ঠিক করেছিল। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে শ্রীপুরে রওনা হলাম। প্রথম ৩ জন বাদে বাকি সবাই আমার সঙ্গে চৌকিদার বাড়ি পর্যন্ত এল। আমি তাদের আকবর আলীর প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সমিতির কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে শক্ত থাকতে পরামর্শ দিলাম। সমিতি ভেঙ্গে দেয়ার ব্যাপারে আকবর আলী ও তার মত মানুষের কী। ধরনের স্বার্থ আছে তাও আমি তাদের বললাম। বেলা সাড়ে ১১টায় শ্রীপুর পৌছলাম । বেলা ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেলে দুপুরের খাবার খেলাম। সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কেনাকাটা করলাম। ওয়ারিস আলী গরুর হাটে এসে একটা গরু কিনল। টাকা কম পড়ায় সে আমার কাছ থেকে ৫ টাকা নিল। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দিনেরবেলা অসহনীয় গরম এবং চোখ ধাধানাে আলাে। রাত শুরু ২৯হলে পূর্ব আকাশে বিদ্যুৎ চমকাতে থাকল। বাতাসে আর্দ্রতা অনুভূত হচ্ছে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের কারণে রাতে শিশির পড়েনি। রাত ৯টার দিকে দমকা বাতাসের ফলে তাপমাত্রা কমে এল। বাকি রাত। আরামদায়ক।

৩০. ৯, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা সাড়ে ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত স্কুলে। এসডিও (উ.) আজ সকালে শ্রীপুরে এসে দেড়টার দিকে চলে গেলেন। তিনি ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডাকলেন। তিনি অন্যান্য বিষয় ছাড়াও ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করলেন। আমিও একজন সদস্য হিসেবে তাতে অন্তর্ভুক্ত হলাম। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে একটা নােটিশ পেলাম। সারা সন্ধ্যা বাসায় বসে ছাত্রদের নম্বরের তালিকা তৈরি করলাম। রাতে কালু মােড়ল দেখা করে অনুরােধ জানালেন, আমি যেন বিভিন্ন খাতের হিসাবগুলাে দেখি। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : ভেজা আবহাওয়া আর বাতাসের জন্য দিনে খুব একটা গরম পড়েনি। বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে প্রায় আধ ঘন্টার মত মুষলধারে বৃষ্টি হল। মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া চলছে। অল্প বিরতি দিয়ে রাতে ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ল সহনীয় পরিবেশ।
———————
১.
মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ২২/২৫ টাকা ২৫/৩০ টাকা। এ মাসে পাটের দাম প্রায় স্থিতিশীল। গত মাসের তুলনায় এ মাসে কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও স্থিতিশীল আছে। বর্তমানে মফস্বল শহরগুলােতে ২৫/৩০ টাকার মধ্যে দাম ওঠা নামা করছে। ৩০-৩৫ টাকার মধ্যেই বেশি বিক্রি হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হবার খবর পাওয়া গেছে। ধান যতটা ভাল হবে বলে মনে হচ্ছিল বর্তমানে তা ততােটা আশাব্যঞ্জক মনে হচ্ছে না। অসময়ে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাবার ফলে অনেক এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে রােগ বালাই এবং পােকা মাকড়ের আক্রমণ হয়েছে। শুকনাে জমিতে পানির প্রয়ােজন ছিল। তারপরও প্রয়ােজনের সময় পার করে মাসের শেষে যে বৃষ্টি হল, তাতে আশা করা যায় ক্ষতি। কিছুটা হলেও দূর হবে।

– সােমবার – ১. ১০, ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকালে এবং সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষার খাতা দেখলাম। দুপুর সােয়া ৩টার দিকে দর্জির দোকান থেকে শার্ট-পায়জামা তুললাম। সন্ধ্যায় আহমদ এসে সেকেন্ড এসআই এনএইচ-এর বিরুদ্ধে একটি পিটিশন তৈরি করল। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : পুরাে দিন রাত বৃষ্টিভেজা আবহাওয়া। সারাক্ষণ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। মেঘের কারণে অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে। আবহাওয়া ঠাণ্ডা ও বিষন্ন । ২. ১০. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা সাড়ে ১০টায় স্কুলে গেলাম। রােল কল করার পর ক্লাস ছুটি হয়ে গেল। বেতনের রশিদগুলি পরীক্ষা করে দেখলাম। এই কাজের প্রথম দিকে সেনিটারি। ইন্সপেক্টর, হাসান আলি মােড়ল এবং ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ২টার দিকে আবার বসলাম। এবার সেনিটারি ইন্সপেক্টর একাই এসেছিলেন। আমি বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে চলে এলাম। স্পষ্টতই প্রধান শিক্ষক আমাদের ওপর প্রচণ্ড বিরক্ত।

বিরামহীন বৃষ্টির জন্য কেনাকাটা করতে পারলাম না। আজ বাজারও বসেনি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে রান্না ঘরে বসে রাতের খাবার খেলাম। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন রাত আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। সকাল ৯টার দিক থেকে
শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সারাদিন মাঝারি ধরনের বৃষ্টি। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হল। কোন বিরতি না দিয়ে আবার গভীর রাতেও কয়েক ঘন্টা বৃষ্টি হয়েছে। এই মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। ভােরের আগে বৃষ্টি থেমে গেল। অন্ধকারাচ্ছন্ন বিষন্ন আবহাওয়া থেকেই গেল। সহনীয় শীতল পরিবেশ। সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। এখন থেকে আমি পূর্ব পাকিস্তান মান সময় ধরে কাজ করব। যা গত ১ তারিখ থেকে কার্যকরি হয়েছে। এই সময় স্থানীয় সময় হিসেবে ঢাকার মধ্যবর্তী সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। এই সময় ভারতীয় মান সময় থেকে আধ ঘন্টা আগে এবং বাংলার সময় থেকে আড়াই ঘন্টা পিছিয়ে। হিসাবপত্র যাচাই করার জন্য ১১টায় স্কুলে গেলাম। ১২টা পর্যন্ত অডিট দলের কোন সদস্য এলেন না। কাজেই আমি ফিরে এলাম। দুপুর ৩টায় আবার স্কুলে গিয়ে ডাক্তার ও ইন্সপেক্টরকে দেখলাম বসে আছেন। সপ্তম শ্রেণীর একেবারে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত হিসাবপত্র যাচাই করলাম। এর মধ্যে ডাক্তার চলে গেলেন। আজিজ মােড়ল এলেন। আমরা বিকেল সাড়ে ৪টায় ওখান থেকে বের হলাম। রাত প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সেনিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে তার বাসায় প্রধান শিক্ষক ও মােড়লদের মধ্যে সৃষ্ট মতবিরােধের নেপথ্যের বিষয় নিয়ে কথা বলে ফিরে এলাম। রাত ১০টায় বুধাই বেপারির এক ছেলে আরেক বালকসহ এসে রাতে থেকে গেল।
২৪০

আবহাওয়া : আকাশে আজ সূর্য দেখা যায়নি। কিন্তু তারপরও সারাদিনে এক ফোটাও বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টি শুরু হল সূর্যাস্তের সময় থেকে। বিশেষ করে রাত ১০টার পর প্রচণ্ড বৃষ্টি হল। সহনীয় শীতল পরিবেশ। আবহাওয়ায় বিষণ্ণতা চলছেই।। ৪. ১০. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টার দিকে প্রধান শিক্ষক দেখা করতে এলেন। আমরা হাসান আলী মােড়লকে সকালের ট্রেন থেকে নামতে দেখলাম। আমি তাকে স্কুলের অফিসে নিয়ে গেলাম। তার উপস্থিতিতে আমি প্রধান শিক্ষকের কাছে আমাদের পাওনা দাবি করলে, তিনি সেক্রেটারি ও মােড়লদেরকে উদ্দেশ করে গালাগাল করলেন। সেক্রেটারি কোন উত্তর দিতে পারলেন না। তবে, কথা দিলেন বিকেলে পাওনার। বিষয় নিয়ে তিনি কিছু করবেন। তিনি সাড়ে ১০টায় চলে গেলেন। রােল কলের পর স্কুল ছুটি দিয়ে দেয়া হল। পুজা এবং মহররমের বন্ধের পর স্কুল। আবার খুলবে ২১ অক্টোবর। নবম ও দশম শ্রেণীর ভূগােল এবং অষ্টম শ্রেণীর ইংরেজি বিষয়ের ফলাফল ঘােষণা করা হল। বেলা ৩টার দিকে দুপুরের খাবার খেলাম। বিকেলে মজিদ সাহেব এলেন। তারপর আহমদ। আমি আহমদকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি এবং প্রধান শিক্ষকের মধ্যে যে বিষয়গুলি ঘটছে তা জানালাম। তাকে বললাম, এই ব্যাপারে সে যেন অগ্রসর না হয়। সূর্যাস্তের পর সে চলে গেল। পূর্ব নির্ধারিত থাকলেও আজ অডিট কমিটি কাজে বসল না । রাত ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি ছিল। এরপর আর বৃষ্টি হয়নি। আকাশ আগের মতই মেঘে ঢাকা। তাপমাত্রা কিছুটা কম।

ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে প্রধান শিক্ষক আমাকে তার বাড়িতে ডাকলেন। সেখানে বলাই বাবু ও মজিদ সাহেব উপস্থিত ছিলেন। আমরা সবাই স্কুলে এলাম। আমরা আমাদের বেতন দাবি করলাম। দুপুর ১২টায় ফিরে এলাম। আহমদ আমাকে ২০ টাকা দিতে চাইল। তাকে আমি মজিদ সাহেবকে আগে টাকা দেয়ার পরামর্শ দিলাম। সাড়ে ১২টায় সে চলে গেল। সন্ধ্যায় প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে গেলাম। উনি আমাকে এক কাপ চা খাওয়ালেন। তিনি আমাকে স্থানীয় রাজনীতি ও কালু মােড়ল সম্পর্কে অনেক কিছু বললেন এবং এই রাজনীতিতে কালু মােড়লের সংশ্লিষ্টতার কথাও বললেন। আমি রাত ৮টায় ফিরে এলাম। প্রধান শিক্ষক আমাকে জানালেন, তিনি খুব তাড়াতাড়িই এই স্কুল ছেড়ে দেবেন। তিনি ময়মনসিংহ শহরের একটি স্কুলে যােগ দেবেন। আমি বাসায় ফিরে এসেই আহমদকে এ কথা জানালাম। সে তার এই মনােভাব খুব একটা পছন্দ করছে বলে মনে হল না। আমি তাকে বললাম, যদি বর্তমান প্রধান শিক্ষক চলে যান, সে ক্ষেত্রে একজন প্রধান শিক্ষক ঠিক করে রাখতে। রাত ১২টায় ঘুমাতে গেলাম । আবহাওয়া : সারাদিন রাত বিষন্ন আবহাওয়া। দিনে কয়েকবার বৃষ্টি হল, রাতেও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। সন্ধ্যায় এবং রাতের প্রথম ভাগে ভাল বৃষ্টি হয়েছে। সহনীয় ঠাণ্ডা আবহাওয়া। কিন্তু রাতের শেষভাগে শরীর চাদরে ঢাকতে হল। ৬. ১০, ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। সকাল ৮টার দিকে প্রধান শিক্ষক আমাকে বাবার পাঠালেন। আমি একটি চায়ের দোকানে তার সঙ্গে দেখা করলাম। কালু মােড়ল সেখানে ছিলেন। তারা দু’জনেই আমার বাসায় এলেন। ‘৫০-‘৫১ সালের সরকারি হিসাব নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক তার অবস্থান পরিষ্কার করলেন এবং জানালেন, স্কুলের অর্থ প্রদান ও আয়ের

হিসাবপত্রে ৬০০ টাকা কম রয়েছে। তিনি আরও বললেন, তিনি শ্রীপুরে থাকবেন, কারণ তাকে অপবাদ দেয়া হয়েছে। তার ভৃত্যকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং তার ধানী জমি নষ্ট করা হয়েছে। তারা প্রায় এক ঘন্টা ধরে কথা বললেন। প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও আমাকে একটা পয়সাও দেয়া হল না। ফলে আমি রান্নার জিনিসপত্রও কিনতে পারলাম না। সন্ধ্যায় আহমদ এল। সে জানতে চাওয়ায় তাকে। বললাম, আমি শনিবারের হাট এড়িয়ে গেছি। হাওয়ার বাপ আমার সঙ্গে বাসায় দেখা করেছিল। সে আমাকে বাড়িতে যেতে বলল। কারণ আমাদের বাড়ির কাছে খাস জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সে তুফনিয়ার সঙ্গে একটা গরু বিক্রি করতে এসেছিল। তারা গরুটি বিক্রি করেছে। সপ্তম শ্রেণীর পরীক্ষার খাতা দেখলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সূর্য দেখা না গেলেও দিনে রাতে কোন বৃষ্টি হল না। সহনীয় ঠাণ্ডা আবহাওয়া। ৭. ১০. ৫১ – ঢাকার পথে – ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। সকালে ১০টার দিকে খবর পেয়ে আমি সেনিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করতে গেলাম। আলােচনার মূল বিষয় ছিল হিসাব নিরীক্ষণ। তিনি জানালেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাকে সর্বসাধারণের বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে নিষেধ করেছেন। এরপর সােয়া ১১টা পর্যন্ত রাজনীতি, বিভিন্ন সমস্যা, এগুলাের সমাধান এবং বর্তমান নেতাদের ভূমিকা নিয়ে কথা হল। অন্য একজন ভদ্রলােক ওখানে মূল। আলােচনাকারী ছিলেন। তারপর ফিরে এলাম। দুপুর ১২টার ট্রেনে ঢাকায় রওনা হলাম। কালু মােড়লও একই ট্রেনে উঠলেন। বলাই বাবু আমার সঙ্গে একই কামরায় ছিলেন। আমরা প্রধান শিক্ষক এবং মােড়লদের বিষয় নিয়ে আলােচনা করলাম। ফরেস্টার সিদ্দিক টঙ্গীর স্টেশন থেকে উঠে তেজগাঁওয়ে নেমে গেল। সে রেঞ্জার

সরওয়ারের নিচতা সম্পর্কে বলল। সরওয়ার তাকে রাণীগঞ্জ চেকিং অফিসে বদলি করেছে। দুপুর পৌনে ২টায় ঢাকা স্টেশনে পৌছলাম। সরাসরি ৪৭ ঠাঠারি বাজারে গেলাম। সেখানে ঘন্টাখানেক বিশ্রাম নিলাম। বাকি বাসায় ছিল। যােগীনগরে অলি আহাদ ও তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে দেখা করে আধ ঘন্টা পর বের হলাম। জিন্দাবাহারের পথে মেডিকেল কলেজের কাশেম ও মান্নানের সঙ্গে দেখা হল। কাশেমের সঙ্গে এক ঘন্টা কথা হল। একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য তাকে অনুরােধ জানালাম। বিকেল পৌনে ৬টায় জিন্দাবাহারে গেলাম। কামরুদ্দীন আহমদ সাহেব সরদারের ওখানে ছিলেন। ৬টায় সেখানে তার সঙ্গে দেখা করলাম। শামসুল হুদা, আবুল হাসনাত সাহেব, আহসানউল্লাহ খান, কবি আজিজুল হাকিম এবং পরে কফিলুদ্দীন চৌধুরী ও আমি সাড়ে ৯টায় বের হয়ে সােয়ারি ঘাটে গেলাম । আতাউর রহমান সাহেব বাইরে থেকে ফিরে এলেন। একটি সংঘবদ্ধ বিরােধী দল গঠনের ব্যাপারে আলােচনা হল। পৌনে ১২টায় বের হলাম। জিন্দাবাহারে কামরুদ্দীন সাহেবকে পৌছে দিয়ে জনসন রােডে ইসলামিয়া রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেলাম। রাত ১টার দিকে ঠাঠারি বাজারে ফিরে এলাম। বাকি গ্রামের বাড়িতে গেছে। ডাক্তার এবং তার স্ত্রী বাসায় ছিলেন। রাত দুইটার দিকে ঘুমাতে গেলাম । আবহাওয়া : দিনে রাতে পরিষ্কার আকাশ। দুপুরে রােদ আর রাতে তারাভরা আকাশ। গরম আবহাওয়া। বৃষ্টি পুরােপুরি বন্ধ । ৮, ১০, ৫১ – শ্রীপুর – সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। সকাল ৮টার দিকে যােগীনগরে গেলাম। ডাক্তার করিম ও অলি আহাদের ভাই এলেন। নাস্তা করলাম। ১০টা পর্যন্ত কথা বললাম। সাড়ে ১০টায় তােয়াহা সাহেবসহ বেরিয়ে এলাম। হেঁটে জিন্দাবাহারের দিকে রওনা দিলাম। অলি আহাদও সাথে এল। দুপুর ২টা পর্যন্ত সংসদীয় সংঘবদ্ধ বিরােধী দল গঠনের বিষয়ে আলােচনা করলাম। ঠিক করলাম আমি এতে অংশ নেব। কামরুদ্দীন সাহেব সব আয়ােজন করবেন। সেখান থেকে বেরিয়ে তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে হেঁটে সরাসরি

যােগীনগরে এলাম। পথে আহমদ মাস্টার ফকিরের ওখান থেকে আমাদের সঙ্গে যােগীনগর পর্যন্ত কথা বলতে বলতে এল। তােয়াহা সাহেব ও অলি আহাদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম। রফিকের সঙ্গে তার বৈঠকখানায় কথা বললাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় বের হলাম। ঠাঠারি বাজারে গিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে সন্ধ্যা ৬টায় বের হলাম। সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুরে রওনা হলাম। সময় মতই শ্রীপুরে এসে পৌছলাম। রাতের খাবার খেলাম । রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক পরিষ্কার আকাশ। গরম আবহাওয়া। নাতিশীতােষ্ণ রাত। ৯. ১০. ৫১ – বাড়িতে – সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে রজব আলি এল। সে ঘণ্টাখানেক পর চলে গেল। কালু মােড়লের সঙ্গে অডিটের বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির প্রতি তাদের অবস্থান সম্পর্কে কথা বললাম। তিনি এগুলাে এড়িয়ে যেতে চাইলেন। আমি তাকে বললাম, তিনি যেন সরকারি হিসাব নিরীক্ষক নিয়ােগ করেন এবং প্রধান শিক্ষককে এর সাথে সংযুক্ত রাখেন। আমার প্রস্তাবে তিনি সম্মত হয়েছেন মনে হল। তিনি আমাকে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে অনুরােধ করলেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় এক ঘন্টা তার সঙ্গে কথা বললাম। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে তার বইয়ের দোকানে দেখা করলাম। তাকে অডিট এবং এর সাথে তার সংযুক্ত থাকার বিষয়ে কথা বললাম। তাকে দেখে মনে হল তিনি নিজের অবস্থান এবং ভবিষ্যতে কী হতে পারে সে সম্পর্কে সচেতন। বাড়ির পথে রওনা হবার আগে সেনিটারি ইন্সপেক্টর মি. মালেকের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে খবর পাঠিয়েছিলেন। ১০ মিনিটের মত কথা হল। আমি তাকে বললাম, তিনি যেন জানিয়ে দেন, তার ডিপার্টমেন্ট থেকে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত তিনি অডিটের কাজে এগুতে পারছেন না। প্রধান শিক্ষককে তিনি তা লিখে জানাবেন বলে একমত হলেন।
২৪৫

ঠিক মাগরিবের আজানের সময় সাইকেলে করে রওনা হলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাড়িতে পৌছলাম । ওয়ারিস আলী আমার সঙ্গে তার বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি পর্যন্ত এল। আবদুল খান, আব্দুল মােড়ল, চেরাগ আলী, নওয়াব আলী বেপারি, রজব আলী, আয়েস আলী, জব্বার হােসেন মৃধা প্রমুখ রাতে আমাদের বাড়িতে বসল। আলােচনার মূল বিষয় ছিল, তুফানিয়ার কাছে হাসান মৃধার শাইল ধানের জমি বিক্রি। রজব আলী সংক্ষেপে সব জানাল। মধ্যরাত পর্যন্ত আলােচনা হল। তারপর সবাই চলে গেল। এদের কয়েকজন গেল আকবর আলীর বাসায়, বনের অঘােষিত বিষয়গুলাে নিয়ে কথা বলার জন্য। রাত ১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। সারাদিন বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে ঘাম ঝরানাে গরম। রাত ১১টার পর আবহাওয়া নাতিশীতােষ্ণ হল।
১০.১০, ৫১ সকাল ৮টায় উঠেছি। রজব আলীর জমি বিক্রির ব্যাপারে আবদুল খান, রজব আলী, হােসেন মৃধা আমার সঙ্গে দেখা করল। সিদ্ধান্ত নেয়া হল আগামী শুক্রবার রায়েদে একটি সালিশে যােগ দেয়া হবে। দুপুরের দিকে বের হলাম। আবদুল খানের সঙ্গে সাহাদ আলীর বাসায় বসলাম। রজব আলীও পেছনে এল। কয়েক দিন জ্বরে ভুগে সাহাদ আলীর মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মস্তিষ্ক বিকৃতি তাকে পেয়ে বসেছে। আমি উপস্থিত সবাইকে বললাম তার মাথায় পানি ঢালতে। আবদুল খান, রজব আলী, বুধাই, ওসমান, নায়েব আলী, টুকু প্রমুখ মিলে তার মাথায় ২০ কলসি পানি ঢালল। মােহাম্মদ আলী আর শুকুর আলী পুরাে ব্যাপারটা দাড়িয়ে দেখল। তাকে গােসল করানাে হল এবং তারপর তার জ্ঞান ফিরল। দুপুর আড়াইটার দিকে বাড়ি ফিরলাম। রজব আলী ও আমার নাম দিয়ে বিকেলে জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে ভাওয়াল সিডব্লিউ এস্টেট ম্যানেজার বরাবর পিটিশন লিখলাম।

আজ দুপুরে তরগাঁওয়ের জামাই বাড়িতে চলে গেল। রাত ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সকালবেলা মুষলধারায় বৃষ্টি হল। দিনের বাকি সময় ও রাত বৃষ্টিহীন। রাত ৯টার পর থেকে আবহাওয়া নাতিশীতােষ্ণ। ১১.১০.৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৯টার দিকে সাহাদ আলীর বাড়িতে গেলাম। সে এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। ১০/১৫ মিনিট পর বের হলাম। সেখানে আশরাফ আলী মৌলবি, নাজু মােড়ল, আহমদ, নায়েব আলী প্রমুখ বসে ছিল। ১০টার দিকে ঢাকায় যাবার পথে মওলানা ওয়ারিস আলী ও আইয়ুব আলী কয়েক মিনিটের জন্য আমার সঙ্গে দেখা করে উচ্চ মাদ্রাসা তৈরি ব্যাপারে টাকা পাবার কথা জানাল। ট্রেন ধরার জন্য কয়েক মিনিট পর তারা চলে গেল। সাড়ে ১০টার দিকে কালবাড়ি গেলাম। আবদুল মোেড়ল সেখানে এলে দুপুর প্রায় ১টা পর্যন্ত কথা বললাম। সে আমাকে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় খােলার জন্য বলল। সন্ধ্যায় আবদুল খানের বাড়ির কাছে ওয়ারিস আলী আমার সঙ্গে দেখা করে আধ ঘন্টার মত কথা বলল। রাত সাড়ে ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। বিকেলে অল্প সময়ের জন্য গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হল। রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। তবে বৃষ্টি নেই। ১২. ১০, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ১০টার দিকে হাকিম মিয়া এসে আমাকে আগামী ১৭ তারিখে বেরার চালায় একটি সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানাল। আমি আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম।

হাকিম মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে আমি দুপুরের খাবার খেলাম। রায়েদের উদ্দেশে আবদুল খান, রজব আলী, বাঘিয়ার কেরামত আলী ও আবদুল মােড়লকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হলাম। পরিখার বাড়ি পর্যন্ত হাকিম মিয়া আমাদের সঙ্গে ছিল। তখন প্রায় সাড়ে ১২টা বাজে। উত্তর হাইলজোড় মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়লাম। নামাজের পরপরই মৃধা বাড়িতে গেলাম। রজব আলীর জোতের জমি হাসান মৃধার বিক্রি করা নিয়ে সালিশ শুরু হল দুপুর ৩টার দিকে। চেরাগ আলী মােড়ল, নবাব আলী বেপারি, আয়েত আলী শেখ, হাসির বাপ, ফালুর বাপ, মমতাজ ডাক্তার এবং আরও অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিল। রাত ৩টা পর্যন্ত আলােচনা চলল। হাসান মৃধা বিনা দামে ১ পাখি জমি দেয়ার প্রস্তাব করল । কোন সিদ্ধান্ত হল না। রজব আলী, আবদুল খান ও আমি ছাড়া আর সবাই চলে গেল। আলিমনের জামাইয়ের বাড়িতে রাতের খাবার খেয়ে রাতে সেখানেই থেকে গেলাম। রাত সাড়ে ৩টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সন্ধ্যায় হালকা ও অল্প বৃষ্টি হল। রাত পরিষ্কার নয়। সহনীয় গরম আবহাওয়া। ১৩. ১০, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আলিমনের জামাইয়ের বাড়িতে নাস্তা করলাম। এরপর ঠিক হল হাসান মৃধা রজব আলীকে বিনা মূল্যে ১ পাখি ৮ গণ্ডা জমি দেবে। ১০টার দিকে ওখান থেকে বের। হলাম। আবদুল খান সেখানে রয়ে গেল। আমি দুপুর ১টার দিকে রজব আলীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে ফিরলাম। পথে ওয়াসি মােল্লার সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। রজব আলীর বাড়িতে কিছুক্ষণের জন্য থামলাম। বিকেলে সাহাদ আলীকে দেখতে গেলাম। সে অজ্ঞান ছিল। সন্ধ্যায় ওয়ারিস আলী ও তুফানিয়া আমার সঙ্গে আমাদের বাড়িতে দেখা করল। আবদুল খান তখন উপস্থিত ছিল। তুফানিয়া যে কোন কিছু মেনে নিতে সম্মত আছে বলে জানাল।

রাতে হাসির বাপ এল। সে একজন চক্ষু রােগীকে হাসপাতালে পাঠানাের ব্যাপারে আগ্রহী। ঠিক একই সময়ে আয়েত আলী টান চৌরাপাড়ার আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে এল। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সবাই চলে গেল। ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া। পরিষ্কার রাত। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ১৪. ১০. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে সাহাদ আলীকে দেখতে গেলাম। সে বসে ছিল। মিনিট বিশেক পর তুফানিয়া আমাকে সেখান থেকে বাইরে নিয়ে এল। সে বলল, যে জমি সে কিনতে প্রস্তাব দিয়েছে তার দাবি সে ছেড়ে দেবে না। এমনকি রজব আলী কিনলেও না। যদিও সে গতকাল সন্ধ্যায় স্বেচ্ছায় বলেছিল, যে কোন কিছু মেনে নিতে সে রাজি আছে। আমি আবদুল খানের কাছে গিয়ে এ কথা জানালাম। বেলা ১১টা থেকে বিকেল প্রায় ৩টা পর্যন্ত ঘুমালাম। বিকেল ৪টার দিকে কোঠা তৈরির দুই কারিগর এল। আইয়ুব আলী তাদের পাঠিয়েছে। মফিজউদ্দীন তাদের নিয়ে দরদরিয়া বাজারে গেল আইয়ুব আলীর সঙ্গে দাম ঠিক করার জন্য। বিকেলে তােফাজ্জলের বাবা এলেন। তিনি আমার সঙ্গে খেয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে চলে গেলেন। আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবদুল খানের বাড়ির পাশে আমাদের উত্তর দিকের ধানি জমির দিক দিয়ে ঘুরে সাড়ে ৬টার দিকে বাড়িতে ফিরলাম। আবহাওয়া : পরিষ্কার আকাশ। সারাদিন প্রচণ্ড রােদ। পূর্ণ চাঁদের উজ্জ্বল সাদা আলােয় আলােকিত রাত। আরামদায়ক আবহাওয়া। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। নদীর ওপার থেকে সন্ধ্যায় ভাল বৃষ্টিপাতের আওয়াজ পাওয়া গেল।

১৫. ১০, ৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টার দিকে বরােহরে রমিজার নানার বাড়িতে গেলাম। মওলানা ওয়ারিস আলী, আইয়ুব আলী এবং বালাহির ছেলে সেখানে আগেই পৌঁছেছে। এদের সঙ্গে ছিল নাসিরুদ্দীন, ইউসুফ আলী, হাকিম, আবদুল আজিজ মােল্লা, কেরামত আলী এবং আরও অনেকে। ববােহর মৌজার সব অধিবাসীর জন্য মাথাপিছু চাদা নির্ধারণ করে দেয়া হল। মিয়ারুদ্দীনের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম। বেলা ২টার দিকে বের হয়ে বলাকুনায় গেলাম। সবুর মুন্সির বাড়িতে বসলাম। সেখানে বিশাল জন সমাবেশ হয়েছে। বরাদ্দকৃত অর্থ মাথা পিছু ২৫ টাকা করে নগদ সংগৃহীত হল। আমরা ওখানে পৌছে তুফানিয়াকে পেয়েছি। বিকেল ৫টার দিকে আমরা চলে এলাম। আইয়ুব আলী। মাঝপথে চলে গেল। সূর্যাস্তের পর আমি বাড়ি পৌছলাম। রাত ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : হঠাৎ করেই আকাশে মেঘ জমল এবং বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৃষ্টি
শুরু হল। প্রায় এক ঘন্টার প্রচণ্ড বৃষ্টিতে মাঠ-ঘাট পানিতে ভরে। গেল। সূর্যাস্ত পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হল। রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। কিন্তু বৃষ্টি নেই। সহ্য সীমার মধ্যে ঠাণ্ডা আবহাওয়া। ১৬. ১০.৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৯টার দিক থেকে একে একে আবদুল খান, জব্বার ও কোটের টেকের তাহের আলী এল। সমিতি নিয়ে কথা হল। আমি তাদেরকে অসন্তুষ্ট সদস্যদেরকে যুক্তি দিয়ে বােঝাতে বললাম। আরও বললাম, আগামী শুক্রবার গ্রাম ধরে ধরে। সবার সঙ্গে দেখা করতে। দুপুর ৩টার দিকে সবাই চলে গেল। বিকেল থেকে সন্ধ্যা। পর্যন্ত বেপারি বাড়ি, হাজি বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়ালাম। সাহাদ আলীকে দেখতে গেলাম। তার মানসিক অবস্থা ভালর দিকে। সূর্যাস্তের সময় বাড়িতে ফিরে এলাম ।
২৫০

তুফানিয়া তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে আমাদের কিংবা রজব আলীকে কিছু না জানিয়ে হাসান মৃধার কাছ থেকে কেনা জমি রেজিস্ট্রি করতে জয়দেবপুরে গেছে। আমাদের একটা মহিষ হারিয়ে গিয়ে আকবর আলীর ধান নষ্ট করেছে। এ জন্য গফুর আলী অকথ্য ভাষায় আমাদের গালাগালি করেছে। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রােদ ঝলমলে সারাদিন। উজ্জ্বল চাঁদনী রাত। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া।
———————–
মি, লিয়াকত আলী খান, পাকিস্তানের প্রথম এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ১৬, ১০. ৫১ (মঙ্গলবার) বিকেল ৩টায় রাওয়ালপিন্ডির এক জনসভায় সৈয়দ আকবর নামে এক দুৰ্বত্তের হাতে গুলিবিদ্ধ হন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি স্থানীয় মিলিটারি হাসপাতালে মারা যান। তিনি পূর্ব পাঞ্জাবের কর্ণওয়ালে ১৮৯৫ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তার আততায়ীকে উম্মত্ত জনতা পিটিয়ে পদদলিত করে মেরে ফেলেছে। আমি বেরারচালায় যাবার পথে বরােহরে এই খবরটি শুনেছি। বরমীর হাটে পূর্ণ। হরতাল পালিত হল। লােকজন সেখান থেকে ফিরে গেল। তখন দুপুর প্রায় ১২টা। এরপর বেরারচালায় বিকেল ৪টার দিকে (১৭. ১০.৫১) সংবাদের বিশেষ সংখ্যায় এই ঘটনার নিশ্চিত খবর পাওয়া গেল। ১৭. ১০.৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ১০টার দিকে ওয়ারিস আলীকে নিয়ে বেরারচালায় যাবার জন্য রওনা হলাম। পথে ববােহরে হাকিমের বাড়িতে থেমে দুপুরের খাবার খেলাম। দুপুর ২টার দিকে বেরারচালায় পৌছলাম। সেখানে নৌকায় কাপাসিয়ার ওসি ছিলেন। আমি তাকে লিয়াকত আলী খানের মৃত্যু সংবাদ দিলাম। কাচারিতে পূবাইলের জমিদার উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সভা আরম্ভ হল। চেংনার মীর আবদুর রশিদ সভাপতিত্ব করলেন। আমি প্রথমে কথা শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার আহ্বান জানালাম। মাগরিব পর্যন্ত আমি আমার বক্তব্য রাখলাম। মাগরিবের
পর থেকে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত হােসেনপুরের মওলানা আবদুল হামিদ বক্তব্য রাখলেন। লােকজনের চাপ থাকা সত্ত্বেও রশিদ সাহেব আমাকে আমার বক্তব্য শেষ করতে দিলেন না। রাত ১০টার দিকে সভা শেষ হল। সভাপতির ভাষণে বর্তমান শাসক দলের দেখানাে কারণসমূহের আপত্তিকর প্রতিধ্বনিই শােনা গেল। তার বক্তব্য ছিল নির্বোধের মত। বিশেষ করে তার বক্তব্যে প্রাথমিক শিক্ষকের প্রতি সহানূভূতিহীন আচরণ প্রকাশ পেয়েছে। কাছাকাছি এক বাড়িতে রাত কাটালাম। রাত ৩টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : মেঘে ঢাকা আকাশ। আর্দ্রতা টের পাওয়া গেল। আবহাওয়া গরম। বিকেলে কয়েকবার হালকা বৃষ্টি হল। তবে জমিতে পানি জমেনি। ১৮, ১০, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। রাতে আমরা যে বাড়িতে ছিলাম, সেখানে নাস্তা আর খাবার খেলাম। বেলা ১০টার দিকে ইউসুফ আলী মামার মেয়ের স্বামীর বাড়িতে গেলাম। সেখানে দুপুরে খেয়ে দেড়টার দিকে বাড়িতে দিকে রওনা হলাম। পথে প্রায় আধ ঘন্টার মত বয়ােহরে থামলাম । সাড়ে ৪টার দিকে বাড়িতে পৌছলাম। ফজু নামের এক বালককে নিয়ে সন্ধ্যায় শমসেরউদ্দীন সরকার সাহেব আমাদের বাড়িতে এলেন। রাতে প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে তিনি আমাকে বেশ কিছু ভাল উপদেশ দিলেন। রাত ৯টার দিকে গ্রাম সমিতি নিয়ে আমাদের বাড়িতে একটা সভা হল। জব্বার, আবদুল খান, তাহের আলী, জব্বার গাড়িয়াল, টুক্কা খান, হাওয়ার বাপ, শহর, আয়েত আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিল। রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত কথা হল। কাল জুমা। মসজিদে সবাই একত্রিত হব। রাত সাড়ে ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন আকাশ পরিষ্কার। রাতও পরিষ্কার। আবহাওয়া গরম।

১৯. ১০. ৫১ সকাল সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৯টার দিকে তুফানিয়া, ওয়ারিস আলী, রজব আলী, জব্বার, হাওয়ার বাপ আবদুল খান ও পরে আনসু আমাদের বাড়িতে সমবেত হল। হাসান মৃধার জমি রেজিস্ট্রি করার ব্যাপারে তুফানিয়াকে প্রতারণা করার দায়ে অভিযুক্ত করা হল। আমাদের চরের জমি অন্যায়ভাবে দখল করার জন্যও তাকে অভিযুক্ত করা হল। সে কোণঠাসা হয়ে পড়ল। আমরা যখন জুম্মার নামাজের জন্য উঠছি তখন তুফানিয়া উস্কানিমূলক ভাবে মফিজউদ্দীনকে পাজি বলায়, মফিজউদ্দীন উত্তেজিত হয়ে তার প্রতিশব্দ উচ্চারণ করল। পরিবেশ অসুন্দর বেমানান হয়ে পড়ল। বিশেষ করে ঘটনাটি যখন আমাদের বাড়িতে এবং আমি কথা বলছি আর শমসেরউদ্দীন সরকার সেখানে উপস্থিত। আমরা জিতে থাকা অবস্থানে থেকেও হেরে গেলাম। মফিজউদ্দীনের এই ব্যবহারে সবাই দমে গেল। আমার ইমামতিতে জুম্মার নামাজ পরার পর সবাই মিলে পুরােন মসজিদের পাশে একটি মাটির দেয়ালের মসজিদ তৈরি করতে লেগে গেলাম। এরপর আমরা সমিতির ব্যাপারে আলােচনা শুরু করলাম এবং অসন্তুষ্ট সদস্যদের আমাদের পক্ষে নিয়ে এলাম। রাত প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আলােচনা চলল। ভিন্নমতাবলম্বী সদস্যরা সমিতি চালাতে সম্মত হল এবং ঠিক হল আগামীকাল আকবর আলীর বাড়িতে তার সঙ্গে বসা হবে। এই বিষয়ে সবাই একমত হয়ে আমরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে এলাম। এই সভায় উপস্থিত ছিল আবদুল মােড়ল, আয়েত আলী, মােঃ আবদুল খান, ওয়ারিস আলী, জব্বার, আকুর বাপ, আসু, আনসু, তুফানিয়া, টুক্কা খান, জবু, ফালু, মজিদ, কুদুস, সাবু এবং দরদরিয়া ও টান চৌরাপাড়ার আরও অনেকে। তুফানিয়া, আনসু ও ওয়ারিস আলী আমার সঙ্গে আমাদের বাড়ি পর্যন্ত এসে নিজেদের বাড়িতে চলে গেল। আবহাওয়া : পরিষ্কার দিন-রাত । গরম আবহাওয়া। রাতের আবহাওয়া সহনীয়।
—————–
বি. দ্র. গত ৩ অক্টোবর বুধবার বরমীর হাটে হঠাৎ করে লবণের দাম বেড়ে গিয়েছিল। তখন থেকে এই দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমাদের এলাকার বিভিন্ন হাটে বর্তমান মূল্য ২ থেকে ৩ টাকা ৮ আনা প্রতি সের।

বরমীর হাটে দাম ২ থেকে আড়াই টাকা। সরকার গরীবের এই কষ্ট কমাবার জন্যে কিছুই করছে না। প্রবলভাবে মুনাফাকারীদের রাজত্বই চলছে। ২০, ১০, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সরকার সাহেব ওয়ারিস আলীসহ আমাকে তুফানিয়ার বাড়িতে নিয়ে গেলেন। সেখানে খই খেলাম। সরকার সাহেব গতকালের ঘটনা। তুফানিয়াকে বােঝানাের চেষ্টা করলেন। এক ঘন্টার মধ্যে ফিরে এলাম। সকাল ১১টার দিকে সরকার সাহেব দিগধার ভাইসাহেবসহ তাদের বাড়ির উদ্দেশে চলে গেলেন। তারা গতকাল এসেছিলেন। চন্দনদিয়ার মিয়া চাদের ভাগিনা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। সে নাস্তা এবং দুপুরের খাবার খেয়ে বিকেলে চলে গেল। শেষ বিকেলে গতকালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আকবর আলীর বাড়িতে সমিতির সভায় বসা হল। প্রথমেই শাহাবিদ্যারকোটে একটি স্কুল শুরু করার বিষয়ে কথা হল। এরপর মূল কথা শুরু হল। আমি যুক্তি দিয়ে তাদের কোণঠাসা করে ফেললাম এবং যে কোন সময় হিসাবপত্র দেখার আমন্ত্রণ জানালাম । কুদুস, জবু ও মজিদ সমিতি বানানাের ব্যাপারে আগ্রহী হল না। আমি অন্যদের জিজ্ঞেস করলে তারা সর্বসম্মতভাবে সমিতি চালিয়ে যাবার ঘােষণা দিল এবং অবাধ্য সদস্যদের তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও অন্যায় কাজের জন্য দোষারােপ করল। রাত ১১টার দিকে চলে এলাম। সভায় উপস্থিত ছিল আবদুল মােড়ল, আয়েত আলী, ইয়াসিন সরকার, নায়েব আলী। সরকার, সাবেদ আলী দফাদার, আবদুল খান, আনসু, জব্বার, ফালু, কুদুস, মজিদ, ওয়ারিস আলী, টুক্কা খান, শহর, টুকা, জবু, রজব আলী, হাওয়ার বাপ প্রমুখসহ প্রায় ৪০ জন। দেওনার ভাইসাহেব এসেছেন। তিনি রাতে থেকে গেলেন। রাত ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : শুকনাে। রােদ আছে। পরিষ্কার রাত। দিনে গরম। নাতিশীতােষ্ণ রাত।

২১. ১০. ৫১
-শ্রীপুর – ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। হাকিম ভাইসাহেবের সঙ্গে নাস্তা করলাম। আবদুল খানকে বললাম, সে যেন আন্তরিকতার সাথে সমিতির কাজ চালিয়ে নেয়। সমিতির পক্ষ থেকে মওলানা ওয়ারিস আলীকে দিয়ে যেন মিলাদ পড়ায় এবং সমিতির কিছু জিনিসপত্র কেনার জন্য ধান সংগ্রহ করে রাখে। সকাল ১০টার দিকে সাইকেল নিয়ে শ্রীপুরে রওনা হলাম। পৌনে ১১টায় পৌছলাম। মি. লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুর জন্য রােল কলের পর ক্লাস ছুটি দিয়ে দেয়া হল। তার সম্মানে আগামীকালও ছুটি দেয়া হল। আমি দশম শ্রেণীর ভূগােল এবং অষ্টম ও সপ্তম শ্রেণীর ইংরেজির ফলাফল ঘােষণা করলাম। সাড়ে ১২টার দিকে চলে এলাম। কালু মােড়লের বাড়িতে দুপুর ও রাতের খাবার খেলাম। মজিদ সাহেব এলেন। বিকেলে তিনি আমাকে কাগজপত্র দিলেন। প্রধান শিক্ষক দু’বার এলেন। দ্বিতীয় বার কালু মােড়ল, সালেহ আহমদ মােড়ল প্রমুখ সেখানে ছিলেন। আমি তাদের ছেলেদের মেধা সম্পর্কে জানালাম। সবাই চলে গেল। সালেহ আহমদ মােড়ল আমার সঙ্গে প্রায় রাত ১১টা পর্যন্ত কথা বলে তারপর গেলেন। আমি তাকে স্কুল এবং ম্যানেজিং কমিটির অবস্থা সম্পর্কে জানালাম। রাত সাড়ে ১২টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া : শুকননা, পরিষ্কার, গরম দিন। নাতিশীতােষ্ণ রাত। ২২. ১০. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন ঘরেই কাটালাম। বিকেলে স্কুল প্রাঙ্গণে বসে পত্রিকা পড়লাম। আজানের সময় চলে এলাম। প্রধান শিক্ষক দু’বার দেখা করতে এসেছিলেন। একবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হাসান আলী মােড়লসহ এবং পরে আরেক বার সাড়ে ৭টার দিকে। তিনি হাসান মোেড়লকে আগামী শুক্রবার স্কুলের অনুমােদনের ব্যাপারে ইন্সপেক্টরের অফিসে
২৫৫

যেতে বললেন। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : শুকনাে। পরিষ্কার আকাশ। গরম দিন। নাতিশীতােষ্ণ রাত।
২৩, ১০, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। দুপুর সােয়া ৩টায় প্রধান শিক্ষকের সভাপতিত্বে স্কুল প্রাঙ্গণে একটি শােক সভার আয়ােজন করা হল। দশম শ্রেণীর ছাত্র আমিরুদ্দিন ৫ মিনিট বক্তব্য রাখল। আমি ৪টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত লিয়াকত আলী খানের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বক্তব্য রাখলাম। দোয়ার পর সভা শেষ হল। সভার শেষের দিকে নিয়ামত সরকার এবং আবদুল হেসেন সেখানে যােগ দিল। নিয়ামত সরকার বাসায় এসে আমার মামলার অবস্থা সম্পর্কে কথা বলে মিনিট পনের পরে চলে গেল। সন্ধ্যায় ওসির সঙ্গে স্টেশনের সামনে রেল লাইনের পাশ দিয়ে হাঁটলাম। তিনি নাজিম সাহেবের মন্ত্রণালয়ের অবস্থা সম্পর্কে আমার মতামত জানতে চাইলেন। আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করলাম। আজিজ মােড়ল, উষা রায়, সালেহ আহমদ মােড়ল প্রমুখ আমাদের সঙ্গে দেখা করল। ওসি অভিযোেগ করলেন, শ্রীপুরের লােকজন শােক সভা না করে বরং আনন্দ উল্লাস, গান বাজনার আয়ােজন করছে। সালেহ আহমদ মােড়ল আমাকে ডাবের পানি খাওয়ালেন। আমি সন্ধ্যা ৭টায় বাসায় ফিরলাম। ঘুমাতে গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সারাদিন পরিষ্কার আকাশ। শুকনাে। গরম দিন। নাতিশীতােষ্ণ রাত।

২৪. ১০. ৫১ সকাল সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। দুপুর আড়াইটায় মােহরুদ্দিন মৌলবি আমাদের স্কুলে এসেছিলেন। তিনি ঢাকার ট্রেন ধরতে পারেননি। স্থানীয় ক্লাব ব্যবস্থাপকদের পক্ষ থেকে লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুতে আয়ােজিত এক শােক সভায় যােগ দিলাম। প্রস্তাব আসায় এবং সেনিটারি ইন্সপেক্টর ও পরে ইসরাইল ওসি সমর্থন করায় আমি সভাপতি হলাম। সন্ধ্যা ৭টায় পবিত্র কোরান থেকে তেলােয়াত করার মধ্য দিয়ে সভা আরম্ভ হল। ওসি, মি, মালেক, সেনিটারি ইন্সপেক্টর, একজন মৌলবি, আহমদ এবং আরও ২ জন প্রায় এক ঘন্টা ধরে বক্তব্য রাখলেন। আমি লিয়াকত আলী খানের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আলােকপাত করলাম এবং এই মুহূর্তে আমাদের করণীয় কী তা নিয়ে আলােচনা করলাম। আমি ১০টা। পর্যন্ত প্রায় ২ ঘন্টা কথা বললাম। তারপর সড়া শেষ হল। উপস্থিত ছিলেন কালু মােড়ল, সালেহ আহমদ, মজিদ মােড়ল, উষা রায়, এএসএম, পিএম এবং আরও প্রায় ৪০ জন। বাসায় খাবার দেয়ার জন্য কেউ না থাকায় রাতে খেতে পারলাম না। রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম আবহাওয়া : আগের মতই। রাতের তাপমাত্রা গতকালের চেয়ে কিছুটা কম।
২৫. ১০. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বাসায় ফিরে খাবার খাওয়ার পর প্রচণ্ড ক্লান্ত বােধ করায় বিছানায় শুয়ে পড়লাম। সূর্যাস্ত পর্যন্ত ঘুমালাম। সন্ধ্যায় ক্লাবে গেলাম, কিন্তু পত্রিকা পেলাম না। প্রধান শিক্ষক আমাকে খবর পাঠালে আমি তার সঙ্গে স্কুলে দেখা করলাম। তিনি
আমাদের বেতন সমস্যা নিয়ে কথা বললেন। রাত ৮টার দিকে বাসায় ফিরে এলাম। রাত সাড়ে ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ২৬, ১০, ৫১ – ঢাকায় যাওয়া এবং ফিরে আসা – সকাল পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টার ট্রেনে ঢাকায় রওনা হলাম। সােয়া ১০টায় পৌছলাম । ডা, করিমের সঙ্গে দেখা করলাম। বেলা ১১টা পর্যন্ত তার ফার্মেসিতে বসলাম। মি, তাসাদুক আহমদ সেখানে ঔষধ নিতে এসেছিলেন। জিন্দাবাহার গেলাম কিন্তু কামরুদ্দীন সাহেবকে পেলাম না। আমাকে বলা হল তিনি নারায়ণগঞ্জে গেছেন। দুপুর ১২টায় যােগীনগরে ফিরে এলাম । কিন্তু সেখানেও কেউ ছিল না। সােয়া ১২টায় আবার ডা, করিমের ওখানে গেলাম। সেখানে দুপুরের খাবার খেলাম। একটা সময় ছিল যখন আমি ডা, করিমের সবচেয়ে ভাল বন্ধু ছিলাম। সে আমার সঙ্গে সবকিছু ভাগাভাগি করত। কিন্তু এখন একটা লক্ষণীয় পার্থক্য বােঝা যায়। সে তার স্ত্রীর সঙ্গে খেতে বসল, যখন একই সময়ে আমাকে তার বৈঠকখানায় খাবার দেয়া হল। আমি করিমের কাছে আমার লেখাপড়া বিষয়ে তার পরামর্শ চাইলাম। সে বুদ্ধিমানের মত হেসে বিষয়টি এড়িয়ে গেল। দুপুর ৩টা ৫ মিনিটে যােগীনগরে গেলাম। যুব লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা সময় মত শুরু হল। তােয়াহা সাহেব সভাপতিত্ব করলেন। প্রত্যেকটি বিষয়বস্তু আলােচনা করা হল। উপস্থিত ছিলেন তােয়াহা সাহেব, অলি আহাদ, মােতাহার সাহেব, হালিম, প্রাণেশ সমাদ্দার, রুহুল আমিন এবং কিছু দর্শক। বিকেল সাড়ে ৫টায়। তাসাদুক আহমেদের মত অলি আহাদও আমাকে বলল, পূর্ব নির্ধারিত সব বিরােধী দলের সম্মেলন আগামী ২৮ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে না। বিকেল ৬টায় সেখান থেকে চলে এলাম।
৬টা ৩৭ মিনিট পর্যন্ত ফার্মেসিতে অপেক্ষা করলাম কিন্তু ডাক্তারকে পেলাম না। ৬টা ৪৯ মিনিটের ট্রেনে রওনা হলাম। রাত ৮টা ৩৭ মিনিটে শ্রীপুর পৌছলাম । রাতের খাবার খেলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আর্দ্রতার কারণে দিনে অস্বাভাবিক গরম। সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ চমকাল। রাত আগের মতই। ২৭. ১০.৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সােয়া ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। জব্বার, সােবহান, শহর ও টুক্কা সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে দেখা করতে এল। তারা আব্বাসের মেয়ের প্রতি আকবর আলীর দূরভিসন্ধিপূর্ণ পদক্ষেপের কথা জানাল। তারা হাটে এসেছিল সমিতির জন্য রেভিনিউ স্ট্যাম্প নিতে। রেলওয়ে ক্রসিংয়ে ওসির সঙ্গে দেখা হল। আমরা দু’জনে ক্লাবে এসে পত্রিকা পড়লাম। তিনি কিছুক্ষণ পর চলে গেলেন। সেখানে আহমদ ছিল। মজিদ সাহেব এবং আমি তাকে আমাদের বেতন বনাম তার অবস্থান সম্পর্কে বললাম। সে ৩/৪ দিন সময় চাইল। মজিদ সাহেব ও আমি বলাই বাবুর রুমে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি বেতনের টাকা পাবার ব্যাপারে কথা বললেন। রাত ৮টায় ফিরে এলাম। রাত ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : শুকনাে আবহাওয়া। দিনে সহনীয় গরম। রাত ঠাণ্ডা।
২৮.১০, ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। টেংরায় গেলাম। উজলাবা ও বাকাসারার মধ্যে অনুষ্ঠিত ‘আবুল হােসেন কলেজ

শিল্ড’ প্রতিযােগিতার ফাইনাল খেলা দেখতে। দুই পক্ষই সাড়ে ৪টায় মাঠে নামল। উজলাবা জিতল ১-০ গােলে। দুই দলেই শ্রীপুর থেকে ভাড়া করা খেলােয়াররা খেলল। টেংরার নায়েব ইউসুফ আলী ঢালি সভাপতিত্ব কলেন। খেলা শেষে পুরস্কার দেবার পর আমি ছােট্ট বক্তব্য রাখলাম। কমিটি আমাদের চা খাওয়াল। রাত ৮টার দিকে সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে ফিরে এলাম। দু’দিন আগে মজিদ সাহেব সাইকেলটা নিয়েছিলেন। তারপর থেকে সেটা অকেজো ।। রাত ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই।
২৯, ১০. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। কালী পূজার জন্য স্কুল বন্ধ। বিকেল ৫টা পর্যন্ত রুমে ছিলাম। এরপর বের হয়ে ক্লাবে গিয়ে মাগরিব পর্যন্ত পত্রিকা পড়লাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের বাসায় ছিলাম। তিনি অতীতে ইনসিওরেন্স ব্যবসায় তার সাফল্যের কথা বললেন। দশম শ্রেণীর ইসলাম আহমদ সেখানে ছিল। সে আমাকে তার নিজের ব্যাপারে কথা বলল। সন্মানিয়ার প্রেসিডেন্ট মজিবুর রহমান খান রাতে আমার রুমে থেকে গেলেন। আমি যে দোকানে নাস্তা খাই সেখানে তাকে খাওয়ালাম। ফরেস্টার মােসলেউদ্দিন এবং প্রাক্তন ডেপুটি রেঞ্জার আমির আলী দফাদার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমার সঙ্গে দেখা করল। পাকিস্তানের বন সম্পদের অবস্থা নিয়ে তাদের সাথে ঘন্টাখানেক কথা বললাম। তারা রাত সাড়ে ১১টার দিকে চলে গেল । আবহাওয়া : আকাশে মেঘ থাকায় রাতে উষ্ণ আবহাওয়া।
২৬০

৩০, ১০. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সােয়া ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। স্কুল ছুটির পর খাবার খেলাম। বিকেলে আমার কাছে ওয়ারিস আলী এসেছিল। সমিতির জন্য বাতি কিনতে সে আমার হাতে তেষটি টাকা ৪ আনা দিল। সন্ধ্যায় সে চলে গেল। সন্ধ্যায় পত্রিকা পড়ে রেল স্টেশনের সামনে হাঁটতে গেলাম। আমার সঙ্গে ওসি, সেনিটারি ইন্সপেক্টর এবং মজিদ সাহেব ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রুমে ফিরলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দুপুরে গাঢ় মেঘে আকাশ ছেয়ে গেল। সাড়ে ১২টায় ঘন্টাখানেকের জন্য বেশ ভাল এক পশলা বৃষ্টি হল। বাকি দিন পরিষ্কার। রাতও পরিষ্কার। রাতের আবহাওয়া ঠাণ্ডা। ৩১. ১০, ৫১ – ঢাকা – ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সাড়ে ১২টার ট্রেনে ঢাকায় রওনা হলাম। এর আগে বলাই বাবুর রুমে তার সঙ্গে বসে হেড মাস্টারের বাড়ি থেকে পাঠানাে খাবার খেয়েছি। সােয়া ২টায় ঢাকা স্টেশনে পৌছলাম। আমাদের হেড মৌলবি ঢাকায় এসেছেন। যােগীনগরে ব্যাগ রেখে বেলা সােয়া ৩টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। বার লাইব্রেরির সামনে শ্রীপুরের ওসি ও আজম আলী মাস্টারের দেখা পেলাম। জওহরউদ্দীন সাহেব, জমির, টিটু মিয়া, মােমেন সাহেব প্রমুখের সাথে দেখা হল। সাড়ে ৪টায় বের হয়ে সরাসরি জিন্দাবাহারে এলাম। রাত ৯টা পর্যন্ত কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে কথা বললাম। শেষের দিকে সেখানে অলি আহাদ এসেছিল।

শুরুতে ছিল জমিরুদ্দীন। রাত সাড়ে ১০টায় গ্রীন হােটেলে রাতের খাবার খেলাম । সেখানে বরােহরের চান মিয়ার সঙ্গে দেখা হল। রথখােলায় সে আমাকে মিষ্টি খাওয়াল। সে চলে গেলে সােয়া ১১টার দিকে আমি যােগীনগরে ফিরে এলাম। ফিরে এসেই অলি আহাদের সাথে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দিনের প্রথম ভাগে ভাল রােদ ছিল। কিন্তু পৌনে ১টার দিকে বাতাস বইতে শুরু করার পরপরই বৃষ্টি শুরু হল। বেশ ভাল বৃষ্টি হয়েছে। পরিষ্কার রাত, সহনীয় ঠাণ্ডা পরিবেশ।
———————–
১. লবণের দাম বেড়ে গিয়ে নজীরবিহীন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। লবণ সবার জন্যেই প্রয়ােজনীয় পণ্য। বিশেষ করে গরীবদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। কারণ জীবনভর এরা লবণ-ভাতের ওপরেই নির্ভরশীল। আর যা কিনা আজ তারা স্বাভাবিক নিয়মেও কিনতে পারছে না। যুদ্ধের আগে খুচরা বাজারে প্রতি মণ লবণের দাম ছিল আড়াই টাকা। এমন কি, যুদ্ধের প্রথম দুই বছর সেই একই দাম বজায় ছিল। ১৯৪৪ সালের প্রথম দিক থেকে লবণের মূল্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। তখন সের প্রতি ১ টাকা মূল্য বৃদ্ধি ঘটে। তবে, সব এলাকায় নয়। তখন থেকেই নিয়ন্ত্রিত অথবা মুক্ত পণ্য হিসেবে লবণের দাম ৫ আনা থেকে ৮ আনায় ওঠা নামা করছিল। খবর পাওয়া যাচ্ছিল, মাসের শুরু থেকেই লবণের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ১০ অক্টোবরে বরমীর হাটে লবণের দাম ১২ আনা থেকে ১ টাকা ৪ আনায় ওঠা নামা করেছে। এরপর থেকেই পুরাে প্রদেশে ধীরে ধীরে দাম বেড়েছে। খবর পাওয়া গেছে দাম বাড়তে বাড়তে প্রতি সের ২৩ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু এই যে প্রতি সের লবণ ৬ থেকে ১০ টাকা এ যেন স্বাভাবিক ব্যাপার। লবণের মূল্য শ্রীপুরে কয়েক দিন ৬ টাকা দামের এই অবস্থা ধনী দরিদ্র প্রত্যেক পরিবারে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। তবে দরিদ্রদের মধ্যে শ্রমিক শ্রেণী সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। পাটের দাম মনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে স্থির ছিল। কিন্তু লবণ ডাকাতেরা লবণের মুল্য বৃদ্ধি করে পাটের দামের সুফলকে লুণ্ঠন করেছে। কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকার একে অন্যের প্রতি কাদা ছােড়াছুড়ি করে মূলত নিজ নিজ দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে।
– বৃহস্পতিবার – ১. ১১, ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে চা খেয়ে বেলা সােয়া ১০টায় আদালতে গেলাম। আতাউর রহমান সাহেব, কামরুদ্দীন সাহেব, চৌধুরী সাহেব ও অন্যান্যদের সঙ্গে আদালত এবং বার লাইব্রেরিতে দেখা হল। বেলা পৌনে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলা জজের আদালতে ছিলাম ।। আমাদের মামলার আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপিল করা হয়নি। এরপর সােয়া ১২টায় গেলাম প্রথম সাব জজ মি. হােসেন আলীর আদালতে। দুপুর আড়াইটা থেকে ৩টা পর্যন্ত বিরতি দিয়ে আবার সেখানে উপস্থিত থাকলাম। সেখানে আহমদ মাস্টারের তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হল। আলিম সাহেব ও জমির বাদী পক্ষে আর রায় বাহাদুর কে. মিত্র রাষ্ট্রের পক্ষে মামলা পরিচালনা করলেন। আকবর আলী আর কুদুসকে দেখলাম আদালতে বসে আছে। তারা আমাকে দেখেছে। তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে আদালত থেকে বের হয়ে ইসলামপুরে মােতাহার সাহেবের। বাড়িতে গেলাম। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। সেখান থেকে বের হয়ে। ইসলামপুরের মধ্য দিয়ে সদরঘাট হয়ে নবাবপুরে এলাম। মােগলটুলির আতাউর রহমান সাহেবের সহায়তায় একটি কোলম্যাক্স বাতি কিনলাম। তারপর কেমব্রিজ ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে রাত ৮টার দিকে যােগীনগরে ফিরলাম।

খাবার পর তােয়াহা সাহেব অলি আহাদের আন্দোলন তৎপরতার বর্তমান পদ্ধতি নিয়ে আলােচনা করলেন। তিনি তার আচরণ নিয়ে অভিযােগ করলেন। বিশেষ করে তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে সে কোন ধরনের আলােচনাই করে না বলে তিনি জানালেন। আজ গােসল করতে পারিনি। দুপুরের খাওয়াও হয়নি। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। পরিষ্কার দিন ও রাত।
২.১১. ৫১ – শ্রীপুর – ভাের সাড়ে ৫ টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৯টায় আদালতে গেলাম। সােয়া ১১টা পর্যন্ত আহমদ মাস্টারের তিন ভাইয়ের মামলার শুনানি শুনলাম। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে যােগীনগরে ফিরে খেয়ে নিলাম। ১২টা ২৫ মিনিটে স্টেশনে গিয়ে দেখলাম ট্রেন চলে গেছে। কাজেই ডা, করিমের বাসায় ফিরে গেলাম। সেখানে গােসল করলাম। বিকেলে আরমানিটোলা ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় যােগ দিলাম। কফিলুদ্দীন চৌধুরী সাহেব সভাপতিত্ব করলেন। আবদুল জব্বার খদ্দর, এ. আর খান, কামরুদ্দীন আহমদ সাহেব অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখলেন। সভায় জমির, রাজশাহীর আতাউর রহমান, দেওয়ান মাহবুব আলী, কামরুদ্দীন আহমদ আতাউর রহমান খান, কফিলুদ্দীন চৌধুরী, আজিজ আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মাগরিবের সময় জনসভা শেষ হল। এরপর তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে রিকশায় ঠাঠারি বাজারে এলাম। সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুরে রওনা দিলাম। শ্রীপুরের ওসি আমার সঙ্গে একই কামরায় ছিলেন। রাত সাড়ে ৮টায় পৌছলাম ।
রাত ১০টায় কালু মােড়লের বাড়ির পূর্ব ভিটায় রাতের খাবার খেলাম। সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। ঠাণ্ডা রাত। ৩.১১. ৫ সকাল সােয়া ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। আজ স্কুলে যাবার আগে শফির মা খাবার দিয়েছে। প্রধান শিক্ষক আমাকে তার বাড়িতে দুপুরের খাবার খাওয়ালেন। শেষ বিকেলে সেনিটারি ইন্সপেক্টরের কোয়ার্টারে গেলাম। পত্রিকা নিলাম। তার সঙ্গে প্রায় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রেল লাইনের ধারে হাঁটলাম। তারপর ফিরে এলাম। রেঞ্জারের সঙ্গে মােড়লদের বর্তমান সমস্যায় হাবিব গার্ড আমার সঙ্গে মােড়লদের যােগসূত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করল। সে অত্যন্ত চাতুরতার সঙ্গে আমার সামনে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরল। সে বােঝাতে চাইল, বিষয়গুলাে আমি তাে আগে থেকেই জানি। অথচ, প্রথমবারের মত আমি তার কাছ থেকেই আজ কথাগুলাে শুনেছি। সেনিটারি ইন্সপেক্টর আমাকে আগেই জানিয়েছিলেন, ক্লাবের বিষয়ে এসআই এন হক এবং রেঞ্জার যে আচরণ দেখিয়েছে তা থেকেই বােঝা যায় তারা খুবই নিচু মনের লােক। রাত ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ৪.১১. ৫১ সকাল পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। পৌনে ৯টায় ডিসপেনসারিতে গিয়ে ক্যালসিয়াম ইনজেকশন নিয়ে ফিরে এলাম। বেলা ১১টা থেকে সােয়া ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। স্কুল থেকে ফেরার পথে সাহেব আলী বেপারির সঙ্গে দেখা হল। তিনি আমার

বাসায় এলেন এবং আমাকে সিংহশ্রী স্কুলের জন্য একজন প্রধান শিক্ষক যােগাড় করে দিতে বললেন। এছাড়াও মওলানা ওয়ারিস আলীকে উচ্চ মাধ্যমিক মাদ্রাসা শুরু করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করার জন্যও অনুরােধ জানালেন। চা দিয়ে তাকে। আপ্যায়িত করলাম। তিনি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চলে গেলেন। সন্ধ্যায় স্কুল মাঠ থেকে ফেরার পথে কালু মােড়ল ও সামাদ খানকে চায়ের দোকানে বসে থাকতে দেখলাম। আমিও সেখানে বসলাম এবং দেশের বর্তমান সঙ্কট এবং এ ক্ষেত্রে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব সম্পর্কে কথা বললাম। সেখানে অনেক মানুষ জড়াে হয়েছিল। রেঞ্জার করিমও সেখানে কিছুক্ষণ বসে ছিল। কিন্তু পরিবেশ প্রতিকূল বুঝে সে চলে যায়। সামাদ খান রাতে খাবার দাওয়াত দিলেন। আমি মুজাফফরকে নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার বাড়িতে গেলাম। বাবার খেয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফিরে এলাম । আমার সঙ্গে বাজার থেকে সালেহ আহমদ মােড়ল এলেন। তিনি রেঞ্জার এবং ম্যানেজারের সঙ্গে তার সমস্যার কথা বললেন। আমি তাকে কিছু পরামর্শ দিলাম। সাড়ে ৯টার দিকে তিনি চলে গেলেন। তরগাঁওয়ের আফতাবুদ্দিন রাতে আমার সঙ্গে থেকে গেল। সে ঢাকা থেকে। এসেছে। শশাবার আগে আক্রান্ত চামড়ায় এসকেবিয়াল ওষুধ লাগালাম। রাত সােয়া ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : শুকনাে আবহাওয়া। দিনে পরিষ্কার সূর্যের আলাে। রাতে গায়ে চাদর নেয়ার মত ঠাণ্ডা। ৫.১১. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। স্কুল থেকে ফেরার পথে হাইলজোড়ের হুসেন মৃধা ও আরও কয়েকজন এবং ভুলেশ্বরের ইয়াসিন সরকার ও সাহাদ আলী আমার সঙ্গে বাসায় এল। কিছুক্ষণ কথা বলে ওরা চলে গেল। সন্ধ্যায় সাইকেল নিয়ে স্কুল মাঠে এবং পরে ডিবি রােড ধরে পূর্ব দিকে ঘুরতে। গেলাম। সূর্যাস্তের সময় ফিরে এলাম।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রধান শিক্ষক ও মজিদ সাহেব এসেছিলেন। তারা ঘন্টাখানেক থেকে চলে গেলেন। সেই সময় হাইলজোড়ের কয়েকজন আমার সঙ্গে দেখা করেছিল। হামিদ মােক্তারের ক্লার্ক মােহাম্মদ আলী রাত সাড়ে ৮টায় ট্রেন থেকে নেমে আমার বাসায় এসেছিল। সে জানাল, আহমদ মাস্টারের ভাইয়েরা অভিযােগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। সে তখনই চলে গেল। রাত সাড়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রােদ ঝলমলে দিন। গরমের তীব্রতা কমে গেছে। রাতে বেশ ঠাণ্ডা পড়ছে। ৬. ১১. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। নির্ধারিত সময়ে স্কুলের ক্লাস নিলাম। সকাল সাড়ে ৮টায় ডিসপেনসারিতে গিয়ে ক্যালসিয়াম ইনজেকশন নিলাম। ডাক্তার তখন সেখানে ছিলেন। বুধাই বেপারি ও আসিমুদ্দিনকেও সেখানে পেলাম । ৯টায় চলে এলাম। বিকেলে পত্রিকা পড়লাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফিরে এলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : দিনে রাতে পরিষ্কার আবহাওয়া। শীতের আমেজ পুরােপুরি পাওয়া। যাচ্ছে। গতকাল থেকে সকালে এবং সন্ধ্যায় গরম কাপড়ের প্রয়ােজন পড়ছে। রাতে গায়ে কাপড় জড়ানাের মত যথেষ্ট ঠাণ্ডা।
——————–
পাঁচবাগের মওলানা শামসুল হুদা হঠাৎ করেই আজ ৬.১১. ৫১ তারিখ দুপুর ২টার। দিকে আমাদের স্কুল অফিসে এসেছিলেন। সাত খামারের আজম আলী মাস্টার ঢাকায় এসডিও (উত্তর)-এর অফিসে হার্টফেল করে মারা গেছে। সে সময় তিনি এসডিও (উত্তর)-এর সঙ্গে বরমী ইউনিয়নের লবণ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে কথা বলছিলেন।

৭. ১১. ৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠলাম। স্কুল নির্ধারিত নিয়মেই । দেওনার পিচুনি বাড়ি যাবার পথে স্কুল অফিসে দেখা করতে এল। একই সময়ে (সাড়ে ১২টার দিকে) ধনাই বেপারি এবং ইউ.বি-র সিরাজ ক্লার্ক স্কুল অফিসে। এল। ঘন্টাখানেক কথা বলার পর আমি দুপুরের খাবার জন্য বাসায় ফিরলাম । সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৬টা পর্যন্ত খানের হােটেলের সামনে বসে পাক অবজারভার পড়ে বাসায় ফিরলাম। রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত শাহাবিদ্যারকোট পল্লী মঙ্গল সমিতির গঠনতন্ত্রের খসড়া তৈরি করে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ৮, ১১, ৫১ – বাড়িতে – সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। স্কুল-নির্ধারিত সময়ে। সকাল ৮টায় আহমদ মাস্টার এলেন। তিনি ঢাকা থেকে ফিরে বাড়ি যাচ্ছিলেন। দুপুর ২টার দিকে আবদুল গফুর এলে আমি সমিতির জন্য কিনে রাখা বাতিটা তার হাতে দিয়ে দিলাম। কালু মােড়ল দুপুরে শ্রীপুরের প্রাক্তন সেকেন্ড এসআই জসিমউদ্দীনকে খাওয়াল। আমিও তার সঙ্গে খেলাম। বর্তমান ওসি আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করেছেন। আমি বেলা পৌনে ৫টায় ইনজেকশন নিলাম। সােয়া ৫টার দিকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়ে সরাসরি বাড়ি পৌছলাম। কোলম্যাক্স বাতিটা জ্বালিয়ে দেখলাম ওটা ঠিকমত কাজ করছে। এই পাড়া এবং উত্তর পাড়ার প্রায় সমস্ত মানুষই এসেছে বাতিটা দেখতে। ওরা রাত প্রায় সাড়ে ৯টা। পর্যন্ত বসল।
২৭০

আমি তাদের গঠনতন্ত্রের খসড়া পড়ে শােনালাম। তারা এর সাথে একমত হল। তােফাজ্জলের বাবা, গনি, আখির বাপ রাতে আমাদের বাড়িতে থাকলেন। রাত ১০টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ৯. ১১.৫১ সকাল সােয়া ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। নাস্তার পর নদীর ধারে গেলাম। তুফানিয়া আমাদের খালের পারের জমি মাপল সীমানা দেয়ার জন্য। ওয়ারিস আলী ও জব্বারসহ তুফানিয়া নিজেই মাপজোক করল । ওখানে মূল চরের জমিতে আমাদের জমি রয়েছে। শহর, সােবহান, হাওয়ার বাপ, ওসমান, আবদুল খান, টুকু প্রমুখের উপস্থিতিতে তুফানিয়ার ভৃত্য মুন্না খুঁটি বসিয়ে সীমানা দিল। এরা সবাই জমি মাপার সময়েও উপস্থিত ছিল। এছাড়াও ভুলেশ্বরের হাজা, মােহাম্মদ, আব্বাস, ডালু, আশরাফ আলী মৌলবি প্রমুখ উপস্থিত ছিল। দুপুর আড়াইটার দিকে চলে এলাম। জমি মাপার ওখানে থাকায় জুম্মার নামাজ পড়তে পারিনি। নিজের কাজের জন্য তুফানিয়া নিজেই বিরক্ত হল, কারণ এতে সে জমি হারাল। বিকেলে ঠাকুরা বিলের দিকে গেলাম। সেখানে ধানি জমি দেখলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত রজব আলীর বাড়িতে ছিলাম। আক্কা এবং সােবহান সেখানে এল। এরপর নাজু মােড়লের ভিটা পর্যন্ত সােহান আমার সঙ্গে এসে চলে গেল। সন্ধ্যার পর আবদুল খান, ওয়ারিস আলী, নাজিমুদ্দীন, তাহের আলী, জব্বার, মােহাম্মদ, আনসু, রজব আলী, হাওয়ার বাপ, শহর, টুক্কা খান প্রমুখ আমাদের বাড়িতে একত্রিত হল। তারা আব্বাসের মেয়ের ব্যাপারে কী করা যায় সে বিষয়ে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত পরামর্শ করল। তারপর চলে গেল। সিরাজের মা আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি আজ বিকেলে চলে গেলেন। তােফাজ্জলের বাবা সকালে চলে গেছেন। আবহাওয়া : আগের মতই।

১০, ১১, ৫১
-শ্রীপুর – ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টায় স্কুলে পৌঁছে আগের নিয়মে ক্লাস নিলাম। শ্রীপুরে আসার পথে গােসিঙ্গার কাচারিতে বসেছিলাম। মুহুরিসহ আরসাদ আলী, তালেব আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিল। ওরা আমাকে চা খাওয়াল। আমি আমাদের মামলার ব্যাপারে আরসাদ আলীকে তার বাবার আচরণের কথা বললাম। সকালে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কথা হল। স্কুল ছুটির পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্কুলে বসে পত্রিকা পড়লাম । এরপর বাজারে এসে প্রসন্ন বাবুর ছুটির দরখাস্তে হাসান মােড়লের স্বাক্ষর নিলাম। প্রধান শিক্ষক আমার সঙ্গে ছিলেন। প্রসন্ন বাবু আমাদের চা খাওয়ালেন। বাের্ডিংয়ে বলাই বাবুর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফিরে এলাম। রাত ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ১১.১১. ৫১ সকাল সােয়া ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। স্কুল-সময় অনুযায়ী। বাড়ি থেকে শামসু আমার জন্য মুড়ি নিয়ে এল। সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ডিসপেনসারিতে গিয়ে ইনজেকশন নিলাম। স্কুল ছুটির পর প্রধান শিক্ষকের বাসায় গেলাম। সেখানে চা-মুড়ি খেলাম। মুসাখালি ও শ্রীপুরের মধ্যে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হল স্কুলের মাঠে। খেলা ১-১ গােলে ড্র হল। খেলাটা ভালই ছিল। সন্ধ্যায় ইসলামিয়া রেস্টুরেন্টের সামনে সাত্তার খান আমাকে জানালেন, লবণ মামলায় রুস্তম আলী গােলন্দাজ ও অন্যান্যরা আত্মগােপন করেছে।

সাড়ে ৬টার দিকে আমার কাছে প্রধান শিক্ষক এসেছিলেন। তিনি টুকিটাকি বিষয়ে কথা বলে ৮টার দিকে চলে গেলেন। রাত সাড়ে ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ১২.১১. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। চতুর্থ পিরিয়ড পর্যন্ত ক্লাস হল। সাড়ে ১২টার ট্রেনে প্রধান শিক্ষক ঢাকায় গেলেন। আকবর আলী আব্বাসকে তার জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য জয়দেবপুরে নিয়ে যাচ্ছিল। মজিদ ওদের সাথে ছিল। সকাল সাড়ে ৮টার ট্রেন ছাড়ার আগে ওয়ারিস আলী ও হাওয়ার বাপ আব্বাসকে স্টেশন থেকে ধরে আমার কাছে নিয়ে এল। আমি তাদের ঝগড়া না করে শান্তিপূর্ণ মনে বাড়ি ফিরে যেতে বললাম। ওরা চলে। গেল। দুপুর ২টার ট্রেনে কাওরাইদ গেলাম। সাড়ে ৩টার দিকে সভা আরম্ভ হল। ফকির আবদুল মান্নান নিজেদের প্রশংসায়পূর্ণ এক ভাষণ দিলেন। সেখানে লবণ, পাট, কেন্দ্র বনাম প্রাদেশিক রাজস্ব প্রথা, নদীতে পলি জমা-এগুলাে ছিল আলােচনার মুল বিষয়বস্তু। পাটের ব্যাপারে কোন কথাই বলা হল না। অন্যান্য বিষয়গুলােও সতর্কতার সাথে আলােচনা করা হল। বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে সােয়া ৫টা। পর্যন্ত গিয়াসুদ্দীন পাঠান বক্তব্য রাখলেন। স্থানীয় সমস্যা আলােচনার জন্য কাউকে। কথা বলতে সুযােগ দেয়া হল না। জনতার দাবি সত্ত্বেও ফকির আবদুল মান্নান বক্তা হিসেবে আমার নাম বাদ দিয়ে দিলেন। মাগরিবের নামাজের সময় সভা শেষ হল। সভায় প্রায় এক হাজার আনসার ও দুই হাজার সাধারণ লােক উপস্থিত ছিল। গফরগাঁও থেকে খুব কম লােক এসেছিল। অথচ তা পাঠান সাহেবের নিজের জায়গা এবং তার নির্বাচনী এলাকা। রাত ১০টায় ফিরে এলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। তবে যথেষ্ট ঠাণ্ডা পড়ে গেছে।

১৩. ১১. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী স্কুলে ছিলাম । ঢাকা থেকে ফেরার পথে দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে আইয়ুব আলী ও মওলানা ওয়ারিস আলী আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তারা দিগধা মাদ্রাসার জন্য একটি জনসভার আয়ােজন করছেন। স্কুল ছুটির পর স্কুল মাঠে বসে থাকার সময় কলতাবাজারের সাখাওয়াত হােসেনের সঙ্গে দেখা হল। সে সেকেন্ড অফিসার এন, হকের কাছে এসেছে। তাকে খাওয়ালাম। ওর সঙ্গে অন্ধকার নামার আগ পর্যন্ত হাঁটলাম। সে আমার সঙ্গে রাতের খাবার খেল। সাড়ে ৮টায় ওকে নিয়ে থানায় গেলাম। রাত ৯টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে ওসির সঙ্গে কথা হল। থানার সমস্ত অফিসার উপস্থিত ছিল। রাত ১০টায় স্টেশনে সাখাওয়াতকে বিদায় জানালাম। প্রায় রাত ১২টা পর্যন্ত ৮ম শ্রেণীর ইংরেজি প্রশ্নপত্র তৈরি করে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ১৪, ১১. ৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। স্কুলে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী। সকাল ৮টায় একটা ইনজেকশন নিলাম। ফেরার সময় প্রায় ১০টা পর্যন্ত সালেহ আহমদ মােড়লের সঙ্গে বাজারে বসে কথা বললাম। স্কুল শেষে প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলাম । ফিরলাম সন্ধ্যায়। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নবম শ্রেণীর ভূগােলের প্রশ্নপত্র তৈরি করে তারপর ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। শীতের প্রকোপ বাড়ছে।

১৫.১১. ৫১
– বাড়িতে – সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সন্ধ্যায় সাইকেলে করে বাড়ি পৌছলাম। গােসিঙ্গা ঘাটে সালেহ আহমেদ মােড়লের সঙ্গে দেখা হল। রাতে মােহাম্মদ, আবদুল খান, হাওয়ার বাপ, শহর, ওয়ারিস আলী, করম আলী, রজব আলী প্রমুখ বাড়িতে দেখা করতে এল। ১১টা পর্যন্ত আব্বাসের মেয়ের ব্যাপারে কথা বলে সবাই চলে গেল। সন্ধ্যার পর আফসারউদ্দীন বাড়িতে এল। দরদরিয়ার সব আনসার সদস্যরা তরগাঁওয়ে গেছে। আজ সেখানে এসডিও (উত্তর) আনসার র্যালি পরিদর্শন করতে এসেছেন। রাত সােয়া ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ১৬. ১১.৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেলে উত্তর পাড়া মসজিদে গিয়ে সভার জন্য প্যান্ডেল তৈরি করলাম। সেখান থেকে ফিরে দেখলাম মওলানা ওয়ারিস আলী ও বালুচড়ার কুদ্দুস এসেছে। বেপারি বাড়ি মসজিদে জুমার নামাজ পড়লাম। বিনা দাওয়াতে আহমদ আমার সঙ্গে বাড়িতে এসে মওলানার সঙ্গে বসে দুপুরের খাবার খেল। উত্তর পাড়া মসজিদের সামনে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হল। বিকেল ৪টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হল। সাহেব আলী বেপারি উপস্থিত ছিলেন। মওলানা ওয়ারিস আলী ও বগার বাপ মৌলবি রাত ৮টা পর্যন্ত বক্তব্য রাখলেন। রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আমি সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বক্তব্য রাখলাম। তারপর রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বললেন সাহেব আলী বেপারি। রাত সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠান শেষ হল। প্রায় দুইশ’ পঁচিশ জন লােক উপস্থিত ছিল। আকবর আলী ও মজি আসেনি।
২৭৫
মওলানা, কুদুস ও সভাপতি আমাদের বাড়িতে থেকে গেলেন। খাবার খেয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে রাত আড়াইটার দিকে শুতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ১৭, ১১.৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে জব্বার, আবদুল খান, নাজু মােড়ল, সােবহান ও অন্যান্যরা আমাদের বাড়িতে এল। মওলানা, কুন্দুস, সাহেব আলী বেপারি, জব্বার, নাজু মােড়ল সাড়ে ৯টার দিকে নাস্তা ও খাবার খেয়ে ১১টার দিকে চলে গেল। নদীর ধারে আমাদের জমির আশেপাশে হেঁটে বেড়ােলাম। দুপুর ১টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে সাহাদ আলীর বাড়িতে গেলাম। সে এখনও আবােলতাবােল বকছে। বিকেলে ঠাকুরা বিল, যুবার বাপের বাড়ি, টুনিয়ার খেত ঘুরে আবদুল খানের বাড়ির পশ্চিম খেতের পাশে বসলাম। সেখানে তাহের আলী আরেকজনকে নিয়ে ধান বুনছিল। খেতের পাশ দিয়ে যাবার সময় আমর সরকার তার মামলা নিয়ে কথা বলল। এরপরে এল কুদ্স। সে জব্বারের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলল। কিন্তু সূর্যাস্তের পর শেষ পর্যন্ত আমি কুদুসের মিথ্যা তােষামােদে বিরক্ত হয়ে তার কাজকর্ম ও আকবর আলী বেপারির সঙ্গে তার একাত্মতা নিয়ে কিছু অপ্রিয় কথা শুনিয়ে দিলাম। সেই মুহুর্তে কাল বাড়ির কাছে আক্কাস আলীর সঙ্গে আমাদের দেখা হল। এরপর আমি ফিরে এলাম। আবদুল খান রাতে আমার সঙ্গে দেখা করল। আমি তাকে দেওনার কুদুস ও ফালুর মধ্যে গন্ডগােল মেটাতে বললাম। সে চলে যাবার পর আমি সাড়ে ৯টার দিকে শুয়ে। পড়লাম। আবহাওয়া : আগের মতই।
১৮.১১. ৫১
– শ্রীপুর – সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আবদুল খান, আবদুল মােড়ল, জব্বার, আক্কা, ওয়ারিস আলী বাড়িতে আমার সঙ্গে দেখা করল। আমি জব্বারকে বকলাম এবং এই বলে সতর্ক করে দিলাম যে, নেতা হতে হলে তাকে সবার প্রতি সুবিচার করতে হবে। সাড়ে ৯টার দিকে শ্রীপুরে রওনা হলাম। গােসিঙ্গায় আবেদ আলীর দোকানে এক কাপ চা খেলাম । আরসাদ আলী প্রমুখ সেখানে উপস্থিত ছিল। উত্তর নারায়ণপুরের সুবেদ আলীকে সেখানে দেখলাম। ঠিক ১১টায় স্কুলে পৌছলাম । স্কুলে ছুটির পর সেনিটারি ইন্সপেক্টর আমাকে তার কোয়াটারে ডেকে কুইনাইন নিয়ে ডা. আহসানউদ্দিনের সঙ্গে তার বিবাদের কথা জানালেন। বিকেলে ডাক্তার ও ইন্সপেক্টর আমার সঙ্গে বসে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কথা বললেন। ক্লাবে পত্রিকা পড়ে রাত ৮টার দিকে ফিরে এলাম। আমাদের স্কুলের হেড মৌলবি জানালেন, ইউনিয়ন বাের্ডের ক্লার্ক সিরাজের কাছে তিনি আমার ও বন বিভাগের মধ্যে চলা একটি মামলার সাক্ষি হবার নােটিশ দেখেছেন। আবহাওয়া : শুকনাে। শীত কম অনুভূত হচ্ছে। জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি বােঝা যাচ্ছে। ১৯.১১. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। স্কুল-যথা সময়ে। প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত। দ্বিতীয় পিরিয়ড শেষ হবার পর বলাই বাবু চলে গেলেন। সকাল ৮টায় কম্পাউন্ডারের কাছে গিয়ে ইনজেকশন নিলাম। ফেরার পথে হাসান মােড়ল আমাকে তার গােডাউনে নিয়ে গেলেন এবং চা-ডালপুরি খাওয়ালেন। আমি আহমদের ব্যাপারে কথা বললাম। মনে হল তিনি আহমদকে বিদেশে পাঠাবেন না। সাড়ে ৯টায় ফিরলাম।

বিকেলে ক্লাবে গিয়ে পত্রিকা পড়ে সাড়ে ৬টা ফিরে এলাম। রাত ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই।
২০.১১. ৫১ সকাল সােয়া ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। স্কুল-নির্ধারিত সময় অনুসারে। স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেললাম। ভলিবল খেলায় অংশ নিলাম। এই মৌসুমে প্রথমবারের মত খেললাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ক্লাবে গেলাম। প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শাহজাহান নাটকের মহড়া হল। ওসি, সেনিটারি ইন্সপেক্টর, বলাই বাবু ও অন্যান্য আরও অনেকে উপস্থিত থেকে অংশ নিলেন। এরপর আমি প্রায়। সাড়ে ৯টা পর্যন্ত শরাফতের দোকানে বসে থেকে বাসায় ফিরে এলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই । বাতাস থেকে আর্দ্রতা পুরােপুরি দূর হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।। ২১.১১. ৫১ সকাল সােয়া ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। স্কুল-যথাসময়ে। বার বার খবর পাঠানাে সত্ত্বেও দুপুরে আমাকে খাবার দেয়া হল না। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আমি খেতে পারলাম। বিকেলে ভলিবল খেললাম। সকাল সাড়ে ৮টার ট্রেনে হাসেমকে ঢাকায় পাঠালাম ডিএইচও-র কোয়াটারে যােগ দিতে। রাত সাড়ে ৮টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : শুকনাে, বিকেল থেকে হালকা ছাড়া ছাড়া মেঘ জমেছে। রাতে
শীতের প্রকোপ কম। শিশির পড়ছে না।

২২.১১. ৫১
– ঢাকা – ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। স্কুল-নির্ধারিত সময়ে। বেলা সাড়ে ১২টার ট্রেনে ঢাকায় রওনা হলাম। দুপুর সােয়া ২টায় পৌছলাম । ঢাকা স্টেশনে মফিজুদ্দিন মাস্টার সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। তিনি আমাকে রেঞ্জ ইন্সপেক্টরের অফিসে নিয়ে গেলেন। দিগধা মাদ্রাসা এবং সরকারের শিক্ষা নীতি নিয়ে কথা হল। দুপুর ৩টার দিকে ঠাঠারি বাজারে গেলাম। ডা. করিমকে সঙ্গে নিয়ে বের হলাম। তাকে নিয়ে নবাবপুরের হানিফ অ্যান্ড সন্স থেকে শেরওয়ানির জন্য ট্রপিক্যাল ব্ল্যাক কাপড় কিনলাম। দাম পড়ল ৪৫ টাকা। পাটুয়াটুলির ‘ডুরা’য় বানাতে দিলাম । ডাক্তার চলে গেল। আমি চক পর্যন্ত গেলাম কিন্তু দেখলাম সব দোকান বন্ধ। ইসলামপুরে এসে স্কুলের জন্য কিছু কেনাকাটা করলাম। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে তাঁর বাসায় দেখা করলাম। সাড়ে ৬টায় তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে পাকিস্তান অবজারভার অফিসে গেলাম । ওখানে সিভিল লিবার্টি কমিটির একটি সভা হচ্ছিল। সেখানে কামরুদ্দীন আহমদ, আতাউর রহমান খান, আলী আহমদ খান, আবদুস সালাম, মাহবুব, খালেক নেওয়াজ, এস, হক, মানিক মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বরিশাল পৌরসভার একজন কমিশনার এবং পাক অবজারভারের একজন সংবাদদাতা নিরাপত্তা আইনের আওতায় বরখাস্ত হয়েছে। এ খবর কমিটিকে জানানাে হল। এর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে আমি যে পরামর্শ দিলাম তা কমিটি পুরােপুরি গ্রহণ করল। রাত ৯টার দিকে চলে এলাম। ঠাঠারি বাজারে এসে ডাক্তারকে বাসায় পেলাম না। সেখান থেকে বের হয়ে ১০টার দিকে এফএইচএম হলে (বর্ধিত অংশ) গেলাম। মােশাররফ হােসেন চৌধুরীর সঙ্গে খেয়ে তার ওখানে রাতে থেকে গেলাম। ওদের কাছে ইউনিয়নের সদস্য এবং প্রভােস্টের মধ্যে সৃষ্ট সমস্যার কথা শুনলাম। প্রভােস্ট গঠনতন্ত্র লংঘন করে ফুটবল টিমের ভ্রমণের জন্য প্রায় সাড়ে ৪০০ টাকা বরাদ্দ করেছেন। কিন্তু এরপরও তিনি
তার কল্পনার জগতে বাস করছেন। ছেলেরা এ ঘটনা ভালভাবে নেয়নি এবং প্রভােস্টের উদ্ধত আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে বিতর্ক সভা থেকে তারা বেরিয়ে আসে। এখনও রেষারেষি চলছে। রাত ১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রাতে শীত কম । শুকনাে আবহাওয়া। ২৩.১১. ৫১ – শ্রীপুর – ভাের সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আশরাফের রেস্টুরেন্টে আমার অনেক দিনের পুরানাে সহযােগীদের দেখা পেলাম । সেখানে আমিরুল ইসলাম, সফর আলী, নােয়াখালির মােশাররফ, নুরুল হক, সালাউদ্দীন প্রমুখ ছিল। এছাড়াও শিহাবুদ্দিন, বদিউর রহমান, শামসুল আলম, মােহাম্মদ আলী, মওলানা মােজাম্মেল, মাশুকুর রহমান প্রমুখকে দেখলাম । মােশাররফের রুমে খেয়ে দুপুর ১২টায় হল থেকে বের হলাম। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুর রওনা হলাম। সােয়া ২টায় পৌছলাম । গােসল করে খেলাম। বিকেলে ব্যাডমিন্টন আর ভলিবল খেললাম।। পশু চিকিৎসকের ভাগিনা আবদুল্লাহ হাসান মােড়লের ছেলে মমতাজের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হওয়ায় অনুষ্ঠান করল। সে আমাদের মিষ্টি খাওয়াল। হাকিম মিয়া, হাবিব, সুবেদ আলী, আহমদ, সুবােধ ও আরও অনেকে উপস্থিত হয়েছিল। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা ২০ মিনিট পর্যন্ত আমরা সেখানে ছিলাম। আজ মজিদ মােড়লের মেয়ের। সাথে বি, কম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কবিরের বিয়ে হচ্ছে। আমি যেতে পারিনি। রাত ৯টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : কিছুটা শীত পড়েছে।
২৮০

২৪. ১১. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। স্কুল-নির্ধারিত সময়ে। বিকেলে ভলিবল খেললাম। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে নাটকের মহড়ায় উপস্থিত ছিলাম। পাক সামরিক বাহিনীর এক লােক রাতে আমার সঙ্গে থাকল। তার বাড়ি সিলেট জেলায়। হাটের সময় নিয়ামতউল্লাহ সরকার ও পরে আকরামতউল্লাহ আমার সঙ্গে দেখা করল। শরাফতের দোকানে তাদের চা খাওয়ালাম। বলাকোনার নসিব আলীর ছেলে সকালে আমার সঙ্গে দেখা করেছিল। হাইলজোড়ের মমতাজ, ভুলেশ্বরের ফজর আলী সন্ধ্যায় দেখা করল। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : শুকনাে। গত রাতের চেয়ে আজ কিছুটা বেশি ঠাণ্ডা।
২৫.১১. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। আজ থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত দুপুর ২টায় ক্লাস শেষ হবে। কালু মােড়ল ও সামরিক অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে পিঠা ও রান্না তরকারি দিয়ে নাস্তা সারলাম। বিকেলে ব্যাডমিন্টন ও ভলিবল খেললাম।। রাত ৮টা পর্যন্ত নাটকের মহড়া পরিচালনা করলাম। রাত ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সকাল থেকে বাতাসে বেশ ভাল পরিমাণে আর্দ্রতা টের পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে দিনের মধ্যভাগ থেকে আকাশ মেঘে ছেয়ে।

গেছে। রাতে মেঘ আরও গাঢ় হল। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সারারাতে বেশ কয়েকবার টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ল। বৃষ্টিভেজা আবহাওয়া চলছে। ২৬.১১. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। অবিরাম বৃষ্টির কারণে স্কুলে যেতে পারিনি। সকাল ৯টা থেকে বেলা প্রায় সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঘুমালাম। সন্ধ্যায় ব্যাডমিন্টন খেললাম। রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। ভুলেশ্বরের ফজর আলীর ভাই বিকেলে এসে আমাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইল। আমি অসম্মতি জানালাম। সে ফিরে গেল। রাত সাড়ে ১০টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবিশ্রান্ত বৃষ্টি। প্রচণ্ড বৃষ্টি। মাঠ। ঘাট সম্পূর্ণ ভেজা। সারাদিনে সূর্যের মুখ দেখা গেল না। বিষন্ন আবহাওয়া। রাতেও আকাশে ঘন মেঘ। ঠাণ্ডা সে রকম নেই । ২৭. ১১.৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম । সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যাডমিন্টন আর ভলিবল খেললাম । পত্রিকা পড়ে সন্ধ্যা ৭টায় বাসায় ফিরলাম । খেলার সময় দেওনার সাইদ আলী আমার সঙ্গে দেখা করল। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সকাল ৯টা পর্যন্ত কুয়াশা ছিল। ১০টার দিকে সম্পূর্ণ মেঘ সরে গেল। দিনে রােদ উঠল। পরিষ্কার শীতের রাত।
২৮.১১. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। আখেরী চাহার সােম্বা উপলক্ষে স্কুল বন্ধ। সােয়া ৮টায় কমপাউন্ডারের কাছে গিয়ে ইনজেকশন নিলাম। সাড়ে ৮টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ওখানে গেলাম। তার সঙ্গে বসে মুড়ি খেলাম। সাড়ে ৯টার দিকে ফিরলাম। আড়াইটার দিকে সাইদ আলী এল। আমি তার হাতে বাড়িতে ২০ টাকা পাঠালাম । বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেললাম। রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। রাত ৯টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : পরিষ্কার দিন রাত। রাতে ভীষণ ঠাণ্ডা। ২৯. ১১. ৫১
– ঢাকা যাওয়া এবং ফিরে আসা – সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। দুপুর সাড়ে ১২টার ট্রেনে ফজর আলীর ভাইয়ের খরচে তার সঙ্গে ঢাকায় রওনা হলাম। সােয়া ২টায় পৌছলাম। সরাসরি বার লাইব্রেরিতে গিয়ে আবদুল হাই সাহেবের সঙ্গে আলােচনা করলাম। জমির, জহির, মােমেন, কফিলুদ্দীন চৌধুরী প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। কিন্তু কামরুদ্দীন আহমদ এবং আতাউর রহমান খানের সঙ্গে দেখা হল না। তােয়াহা সাহেব বার লাইব্রেরিতে ছিলেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে ‘ডুরায়’ গিয়ে শেরওয়ানির মাপ। দিলাম। ডিসেম্বরের ৮ তারিখে শেরওয়ানি নেব। স্টেশনে যাবার পথে সন্ধ্যা ৬টার দিকে পাঁচ মিনিটের জন্য ডা, করিমের সঙ্গে ফার্মেসিতে দেখা করলাম। ৬টা ৪৯ মিনিটের ট্রেন ধরে শ্রীপুরে পৌছলাম রাত সাড়ে ৮টায়। জহিরুদ্দীন

জানিয়েছে, পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আবেদন জানালেও সরকার পক্ষের উকিল তা। গ্রহণ করেনি। রাত ১০টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : শুকনাে। ঠাণ্ডা। পরিষ্কার আকাশ ।

৩০. ১১. ৫১ সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেল পর্যন্ত রুমে ছিলাম। সাড়ে ৩টার দিকে বলাই বাবু এসে আমার সাইকেল নিয়ে গেলেন। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যাডমিন্টন আর ভলিবল খেলে ফিরে এলাম। রাত সাড়ে ৯টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : পুরাে দিন রাতে পরিষ্কার আকাশ। রাতে যথেষ্ট শীত। সকাল প্রায় ৯টা পর্যন্ত প্রচণ্ড কুয়াশা ছিল।
———————
১. প্রত্যেক প্রত্যন্ত এলাকায় সরকার এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রেশনে লবণ দিতে শুরু করেছে। প্রতি সেরের নিয়ন্ত্রিত মুল্য পড়বে ৪ আনা ৬ পয়সা থেকে ৫ আনা। কিন্তু গ্রামে যে পরিমাণে লবণ দেয়া হয়েছে তা প্রয়ােজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। ফলে এখনও কালােবাজারি করার প্রবণতা রয়ে গেছে। কালােবাজারে প্রতি সের লবণের মূল্য ১০ আনা থেকে ১ টাকা। এতেই বােঝা
যায় কালােবাজারে লবণ কোথা থেকে আসছে। | ২, মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চালের দাম কমে এসেছে। প্রতি মণ ২২ টাকায়
বিক্রি হচ্ছে। ৩, পাটের দাম ৩০ থেকে ৩৭ টাকার মধ্যে স্থির হয়ে আছে। এ বছর প্রত্যেক বাড়িতে পাট সংরক্ষণ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত বছরের মত তারা এ বছর আর লােকসান দিতে চায় না। যদি লবণ সঙ্কট না ঘটত কপাল ভাল।
থাকলে হয়ত গরীবরাও নিজেদের পাটের মজুত গড়তে পারত। ৪. গত বছর নভেম্বরের ১৭, ১৮ এবং ১৯ তারিখে বৃষ্টিভেজা আবহাওয়া ছিল। প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছিল। এ বছরও কাকতালীয়ভাবে একই ঘটনা ঘটল, একই সময়ে। যদিও পুরাে সপ্তাহ ধরে নয়।

১. ১২. ৫১ ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে এবং রাতে পড়াশােনা করলাম। যথাসময়ে স্কুল। ইবিএসইবিতে পরীক্ষকের জন্য ফর্ম পাঠালাম। বিকেলে ব্যাডমিন্টন আর ভলিবল খেললাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম । ৭টার দিকে টুক্কা খান আর নােয়ব আলী ক্লাবে এসে আমার সঙ্গে দেখা করে তাদের বােনের স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরােধ জানাল। আমি জানালাম, তাকে ঢাকায় পাঠালে আমি ডাক্তারকে একটা চিঠি লিখে দিতে রাজি। আছি। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : শুকনাে। পরিষ্কার আকাশ। সকালে, সন্ধ্যায় আর রাতে হার কাঁপানাে শীত ।। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে এবং রাতে পড়াশােনা করলাম।

সময় অনুযায়ী স্কুলে। বিকেল ৪টায় একটা ইনজেকশন নিলাম। ১০% ক্যালসিয়ামের ৫ সি. সি. করে। ১০টা অ্যাম্বুলের একটি নিয়ে ওষুধের কোর্স শেষ করলাম। বিকেলে ব্যাডমিন্টন আর ভলিবল খেললাম। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। ঘুমাতে গেলাম রাত সাড়ে ৯টায় ।। আবহাওয়া : আগের মতই। ৩, ১২, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। স্কুল-নির্ধারিত সময়ে। বিকেলে ব্যাডমিন্টন আর ভলিবল খেললাম। সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওয়ারিস আলী আমাকে আমাদের বাড়িতে আয়ােজিত মাহফিলে ওয়াজ শােনার জন্য আগামীকাল বাড়ি যেতে বলল। এক জৈনপুরী মওলানা ওয়াজ করবেন। আবহাওয়া : আগের মতই। ৪. ১২. ৫১ – বাড়িতে – ঢাকায় – তাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। যথাসময়ে স্কুলে। ওয়াজ মাহফিলে যােগ দেবার জন্য দুপুর ২টার দিকে বাড়িতে গেলাম। মূল বক্তা ছিলেন মওলানা আকুব জৈনপুরী। তিনি দেরি করে বিকেল ৪টার দিকে এলেন। ওয়াজ শুরু করলেন ৫টার দিকে। প্রায় ৩০০ জন উপস্থিত ছিল। মাগরিবের আজানের সময় শ্রীপুরে রওনা হলাম। গােসিঙ্গা থেকে আবদুল হাকিম

আমার সঙ্গে শ্রীপুরে এল। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমরা শ্রীপুর পৌছলাম। রাত সাড়ে ৯টার ট্রেনে ঢাকায় রওনা দিলাম। একই কামরায় সাহেব আলী আর হাফিজ বেপারিও ঢাকায় যাচ্ছিল। শ্রীপুরে আমার রুমে বসে সাহেব আলী দরদরিয়া খালের পুনঃখনন এবং এর জন্য প্রয়ােজনীয় টাকা পয়সার কথা বলেছিলেন। উনি চাইছিলেন আগামী ১৬ তারিখে দিগধার সভায় আমি যেন এসডিও (উত্তর)-এর কাছে কথাটা বলি। এর আগে চায়ের দোকানে সালেহ আহমেদ মােড়ল ও কালু মােড়ল আমাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। রাত ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকা স্টেশনে পৌছলাম। সরাসরি এফএইচএম হলের বর্ধিত ভবনে চলে গেলাম। রাতে মুশাররফের রুমে ছিলাম । আগামীকালের সভার ব্যাপারে কথা হল। ঘুমাতে গেলাম রাত দেড়টায় । আবহাওয়া : শীত কম বােধ হল। আগের মতই। সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। ৮টায় অ্যাসেমব্লি হলে হল কমিটির নিজস্ব সভায় যােগ দিলাম। ডেপুটি স্পীকার মি, আবদুল্লাহ সভাপতিত্ব করলেন। শুধু চেঁচামেচি আর উত্তপ্ত আলােচনাই হল। আলােচনার বিষয়বস্তুতে কোন অগ্রগতি হল না। ফলে সাড়ে ১০টায় আগামীকাল ৮টা পর্যন্ত আলােচনা স্থগিত ঘােষণা করা হল। বিকেল ৪টায় অ্যাসেমরি হলে হলের বার্ষিক সাহিত্য সম্মেলনে যােগ দিলাম। বিষয় ছিল বাংলা কবিতা। প্রতিযােগী ছিল ৩৫ জন। এদের মধ্যে আব্বাসউদ্দীনের ছেলে মােস্তফা কামাল প্রথম ও গাজীউল হক দ্বিতীয় হল। সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠান শেষ হল। ড. শহীদুল্লাহ প্রধান বিচারকের এবং মি, সাঈদ প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করলেন। সাড়ে ৮টার দিকে মুশাররফের রুমে বসলাম। পরদিনের সভা এবং হলের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলােচনা হল। উপস্থিত ছিল গাজীউল হক, মােমেন, আমিরুল ইসলাম, সফর আলী, নুরুল হক, জেড. রহমান, সালাহউদ্দীন ও মুশাররফ। সাড়ে

১০টায় উঠে পড়লাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ৬. ১২. ৫১ – শ্রীপুরে – সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। গতকালের মুলতবি সভা শুরু হল ৮টায় । ডেপুটি স্পীকার সভাপতিত্ব করলেন। অনেক আলােচনার পর আমি এই বলে আলােচনার মােড় ঘুরিয়ে দিলাম যে, কিছুদিনের মধ্যে সিলেট সফরের হিসাবপত্র কেবিনেটকে এই সভায় হাজির করার নির্দেশ দেয়া হােক। ভাইস প্রেসিডেন্ট আগামী বড় দিনের আগেই সভায় এই হিসাবপত্র হাজির করার ব্যাপারে রাজি হলেন। আমার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হল। ১০টায় সভা শেষ হল । দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটের ট্রেনে উঠে শ্রীপুরে ফিরলাম আড়াইটায় । বিকেলে খেললাম। মজিদ সাহেব অভিযােগ করলেন, গত অক্টোবরের বেতন চাইতে গেলে প্রধান শিক্ষক তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। রাত ১০টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ৭. ১২. ৫১ – বাড়ি গিয়ে ফিরে আসা – সকাল সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টার দিকে স্কুলে গেলাম। প্রধান শিক্ষককে কয়েকটা ফর্ম লিখতে সাহায্য করলাম। ১০টায় ফিরে এলাম।
২৯০

বেলা ১১টার দিকে বাড়িতে রওনা হয়ে সরাসরি বাড়ি পৌছলাম। পথে হাকিম মিয়াকে পেলাম। সে শ্রীপুরে যাচ্ছে। সে ঢাকায় যেতে পারে। হাকিম মিয়া বাঘিয়ার বন কেনা এবং আইয়ুব আলীর আচরণের কথা জানাল। আমি বাড়িতে যাবার আগেই দুপুরের দিকে আড়ালের তালুই সাহেবের সহায়তায় পশ্চিম ভিটিতে ঘর তৈরির জন্য জায়গা নির্বাচন করে কামলাদের দিয়ে মাটির দেয়াল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বিকেলে শ্রীপুরে ফিরে এলাম। ভলিবল ও ব্যাডমিন্টন খেলায় অংশ নিলাম । ৭টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। সকালে টুকা খান তার বােনের স্বামীর চিকিৎসার জন্য ডাক্তার করিমকে লেখা আমার একটি চিঠি। নিল। সে সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকায় রওনা হয়েছে। রাত ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : শীত বেড়েছে কিছুটা। বি. দ্র. গত ৫ তারিখে ফেকু হার্টফেল করে কার্জন হল এলাকায় মারা গেছে। ৮, ১২. ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। জেলা পরিদর্শক মি. এ. রশীদ আজ আমাদের স্কুল পরিদর্শনে এলেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হল। বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। এরপর খেললাম। সােয়া ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ১, ১২, ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকাল ৯টায় স্টেশনে সেকেন্ড ইন্সপেক্টর অব স্কুলস জনাব এ. রহমানকে মেইল

ট্রেনে দেখলাম। ট্রেনটি ক্রসিংয়ের জন্য থেমেছিল। তিনি ময়মনসিংহের গােপালপুরে যাচ্ছিলেন। ট্রেন ছাড়ার আগ পর্যন্ত আমি তার সঙ্গে কথা বললাম। অংকের প্রশ্নপত্র বলাই বাবু ফাস করে দেয়ায় তার সঙ্গে মজিদ সাহেবের মনমালিন্য চলছে। বিকেলে ডিবি বাংলােতে এসডিও (উত্তর)-র সঙ্গে মিনিট কয়েকের জন্য কথা হল। ব্যাডমিন্টন খেললাম। সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। রাজেন্দ্রপুরের মাে, কামরুদ্দিন সন্ধ্যায় আমার সাথে দেখা করল। সে ডা. আহসানুদ্দিনের কাছে এসেছে। বরারচালার চাদ মিয়া ঢাকার ট্রেন ধরার আগ পর্যন্ত আমার রুমে বসে থাকল। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম । আবহাওয়া : রাতের আকাশ ভারী মেঘে ছেয়ে থাকায় শীত কম অনুভূত হল। ১০. ১২. ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম । আজ থেকে টেস্ট পরীক্ষা শুরু হল। বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেললাম। ৬টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম । হাইলজোড়ের মমতাজ আলী প্রমুখ সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে দেখা করতে এল। তাদের মামলার জন্য তারা একজন উকিল ঠিক করে দিতে বলল। আগামী ১৩ তারিখ এই ব্যাপারে ঢাকায় যাবার প্রতিশ্রুতি দিলাম । রাত ১০টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : আকাশ সারাদিন মেঘে ঢাকা। রাতে আকাশ মেঘে পুরােপুরি ঢেকে গেল। এ কারণে আজ শীতই পড়েনি।
১১.১২ ৫১ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। স্কুলের পর বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেললাম। প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। নাস মিয়া আর যতীন্দ্র খলিফা ক্লাবে ঝগড়া করেছে। ঘুমাতে গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতই।
১২.১২.৫১ সকাল সােয়া ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ ফাতেহা ইয়াজদাহমের জন্য স্কুল বন্ধ। সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আমার টুপি সারাই করে নুতনভাবে সেলাই করলাম। বিকেলে খেললাম। আহমদ উপস্থিত ছিল। প্রায় ৭টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। ঘুমাতে গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : রাতে আকাশ পরিষ্কার থাকলেও আগের মতই কম শীত। ১৩. ১২. ৫১
– চাকা যাওয়া এবং ফিরে আসা – সকাল ৬টায় উঠেছি। সাড়ে ৮টার ট্রেনে হাইলজোড়ের মমতাজ আলী ও অন্যান্যের খরচে ঢাকায় গেলাম। খালেক মাস্টার সঙ্গে ছিলেন। করিমের সঙ্গে দেখা করে সরাসরি কোর্টে গেলাম। আতাউর রহমান সাহেবকে মমতাজ আলী ও অন্যান্যের মামলা পরিচালনার ভার দিলাম। জনাব রেজাই করিম, কফিলুদ্দীন চৌধুরী, জহুরুদ্দীন, জহির, জমির, টিটু মিয়া, সাদির, হাকিম মােক্তার, মমতাজ, কাপাসিয়ার রশীদ প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। এসআই এ. এইচ. চৌধুরী তার কামরায় আমাকে চা খাওয়ালেন। সাড়ে

৪টায় কোর্ট থেকে বের হলাম। নূরুল হুদা ও আমার মামলার ব্যাপারে আতাউর রহমান খান, রেজাই করিম, কামরুদ্দীন আহমেদ ও এফ আর খান সাহেবের সঙ্গে আলােচনা হল। হােটেল আকবরিয়ার কাছে তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে কয়েক মিনিটের জন্য দেখা হল। দেওয়ান মাহবুব আহমদ আগামী ১৯ ডিসেম্বর হল নির্বাচনের খবর দিল। সন্ধ্যা ৬টায় ডা. করিমের সঙ্গে গিয়ে শেরওয়ানি নিয়ে স্টেশনে পৌছলাম। রাত ৮টা ৫০ মিনিটে শ্রীপুরে ফিরলাম। আকরামতউল্লাহ আমার সঙ্গে ছিল। হাইলজোড়ের লােকজন রাতে আমার সঙ্গে থেকে গেল। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। বার লাইব্রেরিতে সাইদ আলীকে দেয়ার জন্য আমি নাঈম উকিলকে ১ টাকা দিয়েছি। আবহাওয়া : শীত বেড়েছে। আকাশ পরিষ্কার। ১৪. ১২. ৫১ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। স্কুলে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী। বিকেল প্রায় ৪টা পর্যন্ত কমে ছিলাম। তারপর খেলতে বের হলাম। সন্ধ্যা ৬টায় ফিরে এলাম। ঘুমাতে গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : পরিষ্কার আকাশ। শীত প্রচণ্ড বেড়েছে। ১৫. ১২.৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বাজার করার সময় ওয়ারিস আলীর সঙ্গে দেখা হল। সন্ধ্যায় হাকিম মিয়া দেখা
করল। দুপুর ১টার দিকে ইদ্রিস গার্ড দেখা করতে এল। সিএসআই এস, হক আমাকে যা বলেছেন, তাই আমি ইদ্রিস গার্ডকে বললাম। বিকেলে খেললাম। ৭টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। রাত ৯টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : প্রচণ্ড ঠাণ্ডা।
১৬. ১২. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। বেলা ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাইকেলে করে বাড়িতে পৌছলাম। গােসল করে খেয়ে নিলাম। বেলা ২টার দিকে হাফিজ বেপারির বাড়িতে গেলাম। সাহেব আলী বেপারি ও আইয়ুব আলী প্রমুখসহ সভায় যােগ দেয়ার জন্য দিগধা মাদ্রাসায় গেলাম। ফকির মান্নানের সভাপতিত্বে সভা শুরু হল বিকেল ৪টায় । আমি বক্তব্য রাখার পর আবদুল হামিদ হােসেনপুরী বক্তব্য রাখলেন। শফিউদ্দীন, সাহেব আলী বেপারি ও মফিজুদ্দিন মাস্টার সাহেব কথা বলার জন্য সময় চাইলেন। কিন্তু ওয়ারিস আলী সাহেবের ইঙ্গিতে ফকির মান্নান তাদের কথা বলার সময় দিলেন না। কিন্তু একের পর এক লােকজন বক্তব্য রাখতে থাকায় শেষ পর্যন্ত তারাও বক্তব্য রাখতে পারলেন। মাদ্রাসার জন্য সব মিলিয়ে ৮২৬ টাকা সংগৃহীত হল। রাত ১০টার দিকে সভা শেষ হল। প্রায় ৩০০০ জন উপস্থিত ছিল। মওলানার বাড়িতে রাতে খেলাম। সরকারের শিক্ষা নীতি নিয়ে কথা বললাম। রাত সাড়ে ১২টায় সেখানে থেকে বের হলাম। হেঁটে বাড়িতে পৌছলাম রাত ২টার দিকে। তারপর শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : আগের মতই।
২৯৫

১৭. ১২. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। আবদুল খান, নাজু মােড়ল, আবু ও ওয়ারিস আলী আমাদের বাড়িতে এল। আবদুল খান তুফানিয়া ও আমাদের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরােধ নিয়ে কথা বলল। ওয়ারিস আলী গােসিঙ্গা পর্যন্ত আমার সঙ্গে একই বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে এল। ১১টায় সাইকেলে করে শ্রীপুর পৌছলাম। সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সাহাবুদ্দিন, হাকিম মিয়া প্রমূখের সঙ্গে ৪টার দিকে সাইকেলে বরমী গেলাম। হাবিবুল্লাহ বাহার সভাপতিত্ব করলেন। এফ. এ. মান্নান, বি. এম. ইলিয়াস, আবদুল হামিদ বুলবুলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিতি ছিল প্রায় ৬০০০। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সভা শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শশষ হল। আমি ১৫ মিনিট কথা বললাম। এফ. এ. মান্নান আমার বক্তব্য রাখার বিরােধিতা করলেও কমিটি আমাকে বক্তব্য দেয়ার সুযােগ দিল। রাতে হােসেন খানের দোকানে থাকলাম। রাতের খাবার খাইনি। রাত ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : হাড় কাঁপানাে শীত। ১৮.১২.৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। ৭টার দিকে সাহাবুদ্দিন ও অন্যান্যদের সাথে শ্রীপুরে ফিরে এলাম। দুপুর ২টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম । বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেললাম। আজ গফরগাঁও থেকে গায়েনদের একটি দল এসেছে। তারা একটি গীতিনাট্য পরিবেশন করেছে। নাম ‘দুলাল’। আমি যােগ দেইনি। রাত ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই।

১৯. ১২. ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। বেলা ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেলে খেললাম। সন্ধ্যা ৬টায় ফিরে এলাম। ওসি-র বদলির আদেশ বাতিল করার জন্য এসপি-র কাছে আবেদন করার একটি খসড়া তৈরি করলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ২০. ১২. ৫১ সকাল ৭টায় উঠলাম। স্কুলে আজ পরীক্ষা নেই। সকাল ১০টার সময় নবম শ্রেণীর ভূগােলের নম্বর পত্র। জমা দিলাম। সন্ধ্যায় খেললাম। রাতে ‘চাষার ছেলে’ নাটকটি মঞ্চস্থ হল। আমি উপস্থিত ছিলাম না। রাত ১০টায় । ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ২১.১২ ১ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। বেলা ১০টায় দশম শ্রেণীর ভূগােলের নম্বর পত্র জমা দিলাম। সাড়ে ১২টায় স্কুল থেকে ফিরে এলাম। আবার আড়াইটায় স্কুলে গিয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত থাকলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত খেললাম। হাকিম মিয়া ঢাকা থেকে ফিরেছে। সে আমাকে লেখা আওয়ামী লীগের একটি চিঠি নিয়ে এসেছে। এই চিঠি তার হাতে কামরুদ্দীন আহমদ সাহেব দিয়েছেন। সাড়ে ৬টায় ফিরে এলাম। আজ শাহজাহান নাটকটি মঞ্চস্থ হল। আমি যােগ দেইনি।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে আক্কাস আলী দেখা করল। আমি তার মামলার জন্য ঢাকায় যাবার প্রতিশ্রুতি দিলাম। রাত ১০টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ২২. ১২. ৫১ – ঢাকায় – সকাল ৬টায় উঠেছি। সকালে মওলানা ওয়ারিস আলী ও কুদুস দেখা করল। আমি তাদের চা খাওয়ালাম। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে ঢাকায় রওনা হলাম। সাহেব আলী বেপারি সঙ্গে ছিলেন। কোর্টে ওয়াসিক, সাদির, হামিদ, মমতাজ, কুদরত আলী, আশু এবং কামরুদ্দীন আহমদ সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। দুপুর ১টায় আশুকে নিয়ে অফিসে জালালের সঙ্গে দেখা করলাম। তােয়াহা সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে ইসলামপুর থেকে। আশুর জন্য কাপড় এবং অন্যান্য জিনিস কিনলাম । সাড়ে ৫টায় কামরুদ্দীন আহমদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম । তােয়াহা সাহেব, অলি আহাদ ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিল। আলী আহমদের (এমএলএ) বাড়িতে মিটিংয়ে যােগ দিলাম। কে, চৌধুরী, এ. আর. খান, ভাসানী, এস, হক, কে, আহমদ, শামসুদ্দীন, অলি আহাদ, মােস্তফা, হাশেম সাহেব, এ. মনসুর খান ও আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৭টায় মিটিং শুরু হয়ে শেষ হল রাত সাড়ে ১২টায়। দুপুরে খাওয়া গােসল কোনটাই হয়নি। রাত দেড়টায় তােয়াহা সাহেবের বাসায় ঘুমালাম। আবহাওয়া : আগের মতই।

২৩. ১২. ৫১
-শ্রীপুরে – ঘুম থেকে উঠেছি ভাের ৪টায়। ভাের ৫টার ট্রেনে শ্রীপুরে রওনা হলাম। সাহেব আলী বেপারি সঙ্গে এল। হাসান মৃধাও। সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। টেস্টের ফলাফল ঘােষণা করলাম। বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেললাম। ৬টায় ফিরে এলাম। দুপুর ২টায় কালবাড়ির গেসু তুফানিয়ার ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিল। সন্ধ্যা ৭টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ২৪.১২.৫১ সন্ধ্যা ৭টা উঠেছি। দুপুর সােয়া ২টার আপ ট্রেনে করে আহমদ মাস্টার আর সৈয়দপুরের আফাজুদ্দিন এল। ওদের সাথে হেঁটে কথা বলতে বলতে মাইলখানেক দূরে চলে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে আকিক মিয়ার সঙ্গে তার অফিসে দেখা করে সেখানে রায়েদের দুই ছেলেকে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। বলাকোনার জাইয়ের সঙ্গে বিয়ে সংক্রান্ত একটি বিরােধে ছেলে দু’জন জড়িয়ে পড়েছে। তারপর ফিরে এলাম। সন্ধ্যায় ব্যাডমিন্টন খেললাম। ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। সাড়ে ৯টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : আগের মতই।

২৫. ১২. ৫১
– বাড়িতে – সকাল ৭টায় উঠেছি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাইকেলে বাড়ি পৌছলাম। সন্ধ্যা ৬টার দিকে নাসিরুদ্দীন মােল্লার সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম । রজব আলী আমার সঙ্গে ছিল। রাতে খেয়ে ১২টার দিকে ফিরলাম। রাত ১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ২৬. ১২. ৫১ সকাল ৭টায় উঠেছি। দুপুর ৩টার দিকে সাইকেলে শ্রীপুর পৌছলাম। হাকিম মিয়া, জামাত আলী ও অন্যান্যদের সঙ্গে গােসিঙ্গা ঘাটে দেখা হল। সাড়ে ৪টার দিকে বিদায়ী এবং নতুন ওসি-র সঙ্গে এবং ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে ছবি তােলা হল। সন্ধ্যা ৬টায় বিদায়ী সমাবেশ হল। আমি সভায় বক্তব্য রাখলাম। রাত ৯টার দিকে সভা শেষ হল। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আকাশে মেঘ থাকায় শীত কম লাগল। ২৭. ১২. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। ধনাই বেপারি তার দোকানে মজিদ সাহেব, প্রধান শিক্ষক ও আমাকে চা খাওয়াল। আমি বেতনের প্রসঙ্গ তুললাম। প্রধান শিক্ষক রেগে গেলেন। কাজেই আমি ঠাণ্ডা মাথায় জবাব দিলাম।
৩০০

সেনিটারি ইন্সপেক্টর ডিম ভাজি ও অন্যান্য খাবার দিয়ে সকালের নাস্তা করালেন। দুপুর ১২টায় বের হয়ে সরাসরি বাড়িতে এলাম। আবহাওয়া : আকাশ পরিষ্কার বলে বেশ শীত। ২৮, ১২, ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। দুপুরের আগে ভুলেশ্বরের গফুর আর রমিজার নানা দেখা করল। আইনুদ্দিন, রাহানুদ্দিন ও পরে হাকিম মিয়া আমাদের বাড়িতে এল। দুপুরে খাবার পর ওরা চলে গেল। শাহাজুদ্দিনের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আইনুদ্দিনের কথা সুবিধের মনে হল না। বিকেলে শহরের বাড়িতে গেলাম। ওর ছেলে গতকাল থেকে কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে। আজ তার অবস্থা কিছুটা ভাল। শিকদার তাকে দেখাশােনা করছে। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : ঠাণ্ডা আবহাওয়া। ২৯. ১২. ৫১ – ঢাকায় – ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সােয়া ৮টায় সাইকেলে শ্রীপুর পৌছলাম । কিন্তু ট্রেন ধরতে পারলাম না। দুপুর ১২টা ১৪ মিনিটের ট্রেন ধরার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আহমদ, সেনিটারি ইন্সপেক্টর, পােস্ট অফিসের ক্লার্ক প্রমুখের সঙ্গে দাবা খেললাম। ট্রেনে ওঠার সময় বেলাসির জইয়ের সাথে দেখা হল। দুপুর পৌনে ২টায় ঢাকা পৌছলাম। সরাসরি। যােগীনগরে গেলাম। তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে খেলাম। অলি আহাদের সঙ্গে রাতে ওখানেই থাকলাম। গােসল করতে পারিনি। রাত সাড়ে ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই।

৩০. ১২. ৫১ সকাল ৬টায় উঠেছি। যুব লীগের বার্ষিক কাউন্সিলের সকালের অধিবেশন সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় শেষ হল । জনাব মাহমুদ আলী সভাপতিত্ব করলেন। জে. সি. ঘােষ, পিও-র এ. সালাম এবং কামরুদ্দীন আহমদ বক্তব্য রাখলেন। সম্পাদকের রিপাের্ট পড়া হল। দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সাবজেক্ট কমিটির মিটিং হল। দ্বিতীয় দফায় বসা হল। বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। তৃতীয় দফায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা। পর্যন্ত মিটিং চলল। সম্পাদকের রিপোের্ট পর্যালােচনার পর গৃহীত হল। সাবজেক্ট কমিটির আলােচনায় কিছু নতুন প্রস্তাব গৃহীত হল। সাড়ে ১০টায় ফিরে এলাম। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই। ৩১.১২. ৫১ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগের মুলতবি মিটিং সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে এক বসায় দুপুর ২টা ৩৭ মিনিটে শেষ হল। কার্যকরি কমিটি এবং নির্বাহীদের নির্বাচিত করা। হল। ১৯৫২ সালের জন্য মি, মাহমুদ আলী সভাপতি ও অলি আহাদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন। সর্বসম্মতিক্রমে এরা নির্বাচিত হলেন। দুপুর ৩টায় ফিরে এলাম। সােয়া ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হল। শেষ হল রাত পৌনে ৯টায়। রাত ৯টার দিকে বাকির সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। সে জানাল যে, গত । এক সপ্তাহ ধরে ডা, করিম নিম্ন রক্তচাপে ভুগছে। রাত সাড়ে ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতই।
৩০৩