You dont have javascript enabled! Please enable it! Draft - সংগ্রামের নোটবুক

This is a temporary post for collecting data. Not for posting and not for publishing. Saved only as readable for the editors. Not clickable and not downloadable.

সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ১৯৭১
প্রত্যয় জসীম

১১-৬-৭২ বাংলার বাণী দালাল বিচারের প্রথম রায় রাজাকার চিকন আলীর ফাঁসির নির্দেশ

কুষ্টিয়ার দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সদস্য মি, আর কে বিশ্বাস গত বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত রাজাকার চিকন আলীকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। আসামী চিকন আলীকে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ দালাল আদেশের ১১(ক) ধারার সাথে গঠিত ফৌজদারী আইনের ৩০২ ধারা মতে দণ্ড দান করা হয়। দালাল নির্দেশের অধীনে এটা দেশের প্রথম দণ্ড। মামলার বিবরণে প্রকাশ মিরপুর গ্রামের অধিবাসী আসামী চিকন আলী বাংলাদেশ দখলদার আমলে রাজাকারে ভর্তি হয় এবং হত্যা লুঠ অগ্নি সংযােগ ও মহিলাদের শ্লীলতাহানি কাজে অংশগ্রহণ করে। গণহত্যা ও অন্যান্য ধরনের অপরাধমূলক কাজে সে সক্রিয় ভাবে পাকবাহিনীর দালালী করে। আসামী ১৯৭১ সালে তার গ্রারে জনৈক কামাল উদ্দিন মণ্ডলকে ডেকে নিয়ে বলে যে সে (চিকন আলী) ইয়াজুদ্দিনের বাড়ী থেকে দুলালী বেগমকে অপহরণ করতে চায়। উল্লেখযােগ্য যে আবদুল গফুরের কন্যা দুলালী বেগমকে দখলদার বাহিনী ও রাজাকারদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ইয়াজুউদ্দিনের গৃহে রাখা হয়েছিল। তারপর চিকন আলী ইয়াজুদ্দিনের গৃহে গিয়া দুলালী বেগমকে তার কাছে দিবার জন্য দাবী করে। কিন্তু ইয়াজউদ্দিন অস্বীকার করলে তাকে রাইফেল দিয়া গুলি করে হত্যা করে। আসামী পক্ষের উকিল বলেন চিকন আলী কখনও রাজাকার ছিল না। মাননীয় জজ উক্ত যুক্তি গ্রহণ না করে আসামীকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং তাকে ফাঁসির হুকুম দেন। তবে আদালতে তাকে আপিলের হুকুম দিয়েছেন। উক্ত জজ আসামী একই মামলায় দালাল নির্দেশে ১১(খ) ধারার সাথে ফৌজদারী আইনের ১২১ ধারা মতে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তবে ইতিমধ্যে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেবার ফলে পৃথক কোন দণ্ড দেওয়া হয়নি। সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ সরকারি কৌসুলি জনাব আমজাদ হােসেন আসামী পক্ষে কৌসুলি ছিলেন এড, মীর আতাউর রহমান।

১৭-৬-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালাল হাজী আকিলের জরিমানাসহ ৬ মাস সশ্রম কারাদণ্ড

বেআইনী ঘােষিত নেজামে ইসলাম পার্টির কোষাধ্যক্ষ ও ঢাকার অন্যতম ব্যবসায়ী। হাজী মােহাম্মদ আকিলকে একটি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর দালাল বলে দোষী সাব্যস্ত করেছেন এবং ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা। জরিমানা করেছেন। ট্রাইব্যুনাল গতকাল শুক্রবার প্রদত্ত এক রায়ে বলেছেন হাজী মােহাম্মদ আকিল গত বছর প্রাদেশিক পরিষদের উপ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এদেশে দখলদার বাহিনীর শাসন চালু রাখার কাজে তাদের হাত শক্তিশালী করেছেন। তাই সে তাদের দালাল ছিল। সরকার পক্ষের অভিযােগে বলা হয়, বাংলাদেশের জন সাধারণ যখন জন্মভূমির মুক্তির জন্য এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অবতীর্ণ তখন হাজী আকিল পাক দখলদার বাহিনীর সাহায্যার্থে গত বছর নভেম্বর মাসে প্রাদেশিক পরিষদের উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তাই সরকার তাকে দালাল আইনে শাস্তির জন্য বিচারের ব্যবস্থা করে। ঢাকার অন্যতম সহকারী সেশন জজ জনাব এম, এ, মাহমুদ সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল। বলেছেন, আসামী বাংলাদেশ সরকারের প্রচারণা এবং মুক্তিযােদ্ধাদের বিভিন্ন সময়ের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। ট্রাইব্যুনাল রায়ে উল্লেখ করেছেন, আসামী তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কথা বলেছে। কিন্তু এমন কোন সাক্ষ্য প্রমাণ দেখা যায় না যে, তাকে কেউ জোর করে পরিষদ সদস্য বানিয়েছে। সরকার পক্ষে জনাব এম এ সােবহান মামলা পরিচালনা করেছেন। আসামী পক্ষে হলেন আইনজীবী জনাব আতাউর রহমান খান। তাকে সাহায্য করেছেন জনাব ইকবাল আনসারী খান।

৩০-৬-৭২ দৈনিক আজাদ। দালাল আসগর হােসেনের দুবছর সশ্রম কারাদণ্ড

পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর আমলে প্রাদেশিক উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ, পাকবাহিনীর সাথে দালালী ও গত বছরের এপ্রিল মাসে দৈনিক মর্নিং নিউজ পত্রিকায় বিবৃতি প্রকাশ করায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় সাবেক পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ডেপুটি স্পীকার আসগর হােসেনকে দশ হাজার টাকা জরিমানাসহ দু’বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরাে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের কথা বিচারের রায়ে ঘােষণা করা হয়। ঢাকা শহর বিশেষ আদালত নং-৯ এ এই বিচার অনুষ্ঠিত হয়। বিচারের রায়ে বলা হয় যে, দোষী ব্যক্তির কার্যকলাপে বাংলাদেশে পাকবাহিনীর জবর দখল শাসনে সাহায্য করা হয়েছে এবং যখন বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত তখন দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে দেখানাের চেষ্টা করা হয়েছে।

১-৭-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ বগুড়ার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় : রাজাকার চান্দ মিয়া মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত

সংবাদদাতা, বগুড়া, ৩০শে জুন বগুড়ার এক নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এবং জেলা সেশন জজ জনাব নুরুল ইসলাম বাংলাদেশ দালাল আদেশের ১১(এ) নং অনুচ্ছেদসহ বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৩০১ ধারা মােতাবেক আসামী মফিজুর রহমান ওরফে চান্দ মিয়াকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। দণ্ডাদেশে বলা হয় যে তাকে আমৃত্যু ফাসি দেয়া হবে। তবে মহামান্য হাইকোটের অনুমােদন সাপেক্ষে এই দণ্ডাদেশ কার্যকরী করা হবে। আগামীর বর্তমান বয়স ২২ বছর। সে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিল। এই আসামীর অন্যান্য দুই সৎ ভাইকেও একই অভিযােগে যাবৎ জীবন কারাদণ্ড দন্তিত করা হয়েছে। সংক্ষেপে মামলার অভিযােগে বলা হয়েছে যে, ১৯৭১ সালের ১৭ই অক্টোবর আসামী মুখলেসুর রহমানের আদেশে তার ছােট ভাই মসিউর রহমান সাড়ে বার বছর বয়সের শফিকুর রহমানকে হাত দিয়ে ধরে এবং অপর আসামী মফিজুর রহমান শফিকুর রহমানের বুকে রাইফেল রেখে তাকে গুলি করে হত্যা করেছিল। তিনজন আসামীই রাজাকার ছিল এবং তাদের প্রত্যেকের হাতে রাইফেল ছিল। তিনজন আসামীরা পরস্পর সৎ ভাই এবং তারা ধুনট থানার অধিবাসী। বিশেষ সরকারি উকিল এনামুল হক সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন এবং আসামী পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন জনাব সাজ্জাদুল হক। জনাব আনসারী সাজ্জাদুল হককে এই মামলায় সাহায্য করেন।

১-৭-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালালীর দায়ে কুষ্টিয়ায় ৫ ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়া, ৩০শে জুন কুষ্টিয়ার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সদস্য মি. আর, কে, বিশ্বাস পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর দালাল বলে দোষী সাব্যস্ত করে অভিযুক্ত আকামুদ্দিন বিশ্বাসসহ অন্য চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। এই দণ্ডাদেশ বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ ১৯৭২ এর (ক) ধারার অধীনে দেয়া হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে ৩৯৬১/৩৪ বিপিসি, (বাংলাদেশ দালাল বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদেশ ১৯৭২ এর প্রথম অংশে বর্ণিত) ধারার অধীনে আনীত অভিযােগে তাদেরকে দোষী বলে সাব্যস্ত করা যায়নি এবং এই ধারায় আনীত অভিযােগ থেকে তাদেরকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে।মামলার কার্যবিবরণী বাদী আর, সি, সাহা খােকসা থানার অধীনে জানিপুর গ্রামের অধিবাসী। বিগত স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় খােকসা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান অভিযুক্ত আকিমুদ্দিন কুষ্টিয়া শহর থেকে ৩৮ জন পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর লােককে নিয়ে আসে এবং জানিপুর ইউনিয়ন কাউন্সিলে অবস্থান করায় তাদেরকে চেয়ারম্যান ও অন্য চারজন অভিযুক্ত খাদ্য সরবরাহ করে। অন্য চারজন অভিযুক্ত হচ্ছে জব্বার মল, এম. করম আলী, মমতাজ পারামানিক এবং ফজলুর রহমান। এ সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পাকিস্তানী সেনাদের সহায়তায় ১৯৭১ সালের ২৪শে মে’র রাত থেকে গণহত্যা শুরু করে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাকবাহিনীর বেআইনী দখলকে সমর্থন দেয়। তারা সক্রিয়ভাবে দখলদার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তি সংগ্রামের সকল প্রকার কার্যকে প্রতিরােধ করে। এ সব কজন অভিযুক্ত ব্যক্তি বিবাদীর বাড়ীতে ডাকাতি করে এবং ডাকাতি করার সময় অমি কুমার সাহা নামক এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। সব কজন অভিযুক্ত ব্যক্তিই নিজেদেরকে নির্দোষ বলে দাবি করে এবং বলে যে তাদের বিরােধী দলীয় রাজনৈতিক মতাদর্শের কতিপয় ব্যক্তির প্ররােচনায় তাদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়ানাে হয়েছে। বিচারক অবশ্য তাদের এই নির্দোষ বলে দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। সিনিয়র এডভােকেট জনাব আজিজুর রহমান আক্কাস বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটার হিসাবে সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। মামলা। পরিচালনায় তাকে সাহায্য করেন সৈয়দ মাসুদ রুমী। বিবাদী পক্ষে ছিলেন জনাব সিরাজুল ইসলাম।
৫-৭-৭২ দৈনিক আজাদ আরেকজন দালালের সশ্রম কারাদণ্ড

বেআইনী ঘােষিত পিডিপি’র অন্যতম নেতা জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরীকে গত বছর ঢাকা নির্বাচনী কেন্দ্রে ইয়াহিয়ার উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করার দায়ে দু’মাস সশ্রম কারাদণ্ড ও দু’হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনাব মােহাম্মদ উল্লার নেতৃত্বে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার হয়। ৬০ বছর বয়স্ক জনাব চৌধুরীর বয়সের কথা বিবেচনা করে তাকে স্বল্পস্থায়ী শান্তি দেয়া হয়। বাসস।

৯-৭-৭২ দৈনিক সংবাদ বগুড়ার দালাল আইনে অভিযুক্ত ও তিনভাই একজনের মৃত্যুদণ্ড ও অপর দুইজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
বগুড়ার ১নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এক জেলা সেশন জজ জনাব নুরুল ইসলাম দালাল আদেশের ১১(এ) নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০১ ধারা মােতাবেক আসামী মাজিদুর রহমান ওরফে চান্দু মিয়াকে মৃত্যুদণ্ড ও অন্য দুই বৈমাত্রেয় ভাই মােখলেস ও মশিউর রহমানকে একই অভিযােগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। মামালার বিবরণে বলা হইয়াছে উক্ত আসামী ১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চের পর পাকহানাদার বাহিনীর সহযােগিতা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কাজ করে। তারা রাজাকার ছিল। রাজাকার থাকাকালিন ১৯৭১ সালের ১৭ই অক্টোবর আসামী মােখলেছুর রহমানের আদেশে ছােট ভাই মশিউর রহমান। শফিউর রহমান ওরফে মিন্টুকে হাত দিয়ে ধরে এবং অপর আসামী মফিজুর রহমান সফিউর রহমানের বুকে রাইফেল রেখে আনুমানিক বেলা ১টার সময় গুলি করে হত্যা করে। তাদের প্রত্যেককে হাতে রাইফেল ছিল। তিনজন আসামী পরস্পর বৈমাত্রের ভাই এবং তারা ধুনট থানার সরুগ্রামের অধিবাসী। শুনানীর সময় আসামীরা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবী করে। সরকারি পক্ষের উকিল এনামুল হক ও হাসেম আলী খান। আসামী পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন জনাব সাজ্জাদুল হক ও আনসারী ময়েজ।
১১-৭-৭২ বাংলার বাণী রাজাকারের ১ বছরের জেল ও ৫ শত টাকা জরিমানা

দালাল আইনে অভিযুক্ত দুইজন রাজাকারের প্রত্যেককে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাচশত টাকা করে জরিমানা করা হইয়াছে। জরিমানা অনাদায়ে আরাে ৬ মাসের কারাদণ্ড ভােগ করিতে হবে। যশােরের স্পেশাল জজ জনাব আনােয়ার হােসেন সভাপতিত্বে বিশেষ আদালত এই রায় প্রদান করে।

১১-৭-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দু’জন রাজাকারের জরিমানাসহ সশ্রম কারাদণ্ড

যশাের ৯ই জুলাই। দালাল আইনে যশােরের ৪নং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দু’জন রাজাকারকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচশ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরাে ছ’মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালের প্রধান ছিলেন যশােরের অতিরিক্ত দায়রা জজ জনাব আনােয়ার হােসেন সর্দার। দালাল আইনে যশােরের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এই প্রথম একটি মামলার বিচার করলেন। গত ৫ই জুলাই মামলার রায় প্রদান করা হয়। রায় প্রদানকালে আদালতে জনতার বিশেষ ভীড় ছিল। মামলার একজন আসামী খালাস পান। মামলার বিবরণে প্রকাশ, অভিযুক্ত আতিয়ার রহমান, মতিউর রহমান ও কাওসার আলী রাজাকার ছিলেন। তারা বাদী হারান সরকারের দুটি গবাদি পশু জোরপূর্বক নিয়ে যান। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা রাজাকারের পােশাক পরে সশস্ত্র অবস্থায় বাদী হারান সরকারের বাড়ীতে আসলে বাদী ভয় পেয়ে যান এবং বাড়ীর কাছে ঝােপে লুকিয়ে থাকেন। পরে ঝােপ থেকে ফিরে এসে তিনি দেখতে পান যে, তার দুটি গবাদিপশু নেই। আসামীরা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবী করেন। অভিযুক্ত আতিয়ার রহমান বলেন, তিনি কোন সময়ই রাজাকার ছিলেন না।

অপর দু’জন জানান যে, ঘটনার সময় তারা রাজাকার ছিলেন না। আদালত বাদী পক্ষের দু’জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ট্রাইব্যুনালের জজ তাঁর রায়ে বলেন যে, বাদী পক্ষ বিবাদীদের বিরুদ্ধে আনীত চুরির অভিযােগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ বাদী পক্ষের সাক্ষীদের ঘটনার সময় ঘটনার বিবরণ’ সম্পর্কিত সাক্ষ্য অসামঞ্জস্য ও অসংলগ্নতা পূর্ণ এবং পরস্পর বিরােধী হয়েছে। এছাড়া ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যক্ষদশী কোন সাক্ষী নেই। সুতরাং বিবাদী দুটি গবাদিপশু চুরির অভিযােগে দোষী নন। তবে দালাল আদেশের অনুচ্ছেদ ১১ (সি) অনুযায়ী জজ অভিযুক্ত মতিউর রহমান ও কাওসার আলীকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং আতিয়ার রহমানকে বেকসুর খালাস দেন। ট্রাইব্যুনাল রাজাকার মতিউর রহমান এবং কাওসার কে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচশ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরাে দু’মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। বিশেষ সরকারি কৌসুলি এড, মােস্তাফিজুর রহমান মামলা পরিচালনা করেন। বিবাদী পক্ষে ছিলেন এড. নুরুল ইসলাম।

১২-৭-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালাল মামলা: ফয়েজ বক্সের ১ বছর শ্রম কারাদণ্ড ও ৮ হাজার টাকা জরিমানা

বেআইনী ঘােষিত কনভেনশন মুসলিম লীগের ঢাকা শহর শাখার সভাপতি ফয়েজ বক্সকে এক বছরের শ্রম কারাদণ্ড ও আট হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা শহরের অধিবাসী তরুণ রাজনৈতিক কর্মী ফয়েজ বক্স গত বছর প্রাদেশিক পরিষদের তথাকথিত উপ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পাক সৈন্যদের দালালী করেছে বলে ঢাকার এক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গতকাল মঙ্গলবার রায় প্রদান করেছেন। আসামী নিজেকে নির্দোষ দাবী করে সে বলেছিল তার মনােনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এবং সে পরিষদে নির্বাচিত বলে ঘােষিত হয়নি। ট্রাইব্যুনাল এই যুক্তি নাকচ করে দিয়ে বলেন, দালাল আইনের বিধান মতে আসামীর নির্বাচিত হওয়া না হওয়ার প্রশ্ন বিচার্য বিষয় নয়, সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেই অপরাধ করেছেন। ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, বাংলাদেশ জবরদখলে রাখার জন্য পাকিস্তান সৈন্যদের যখন সারা পৃথিবী ধিক্কার দিচ্ছিল তখন তারা নিজেদের পক্ষে জন সমর্থন দেখাবার ব্যাকুল প্রচেষ্টায় ঐ অবৈধ উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করে। ফলে ট্রাইব্যুনালের মতে, এমন একটি উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করেই আসামী দখলদার বাহিনীর হাত শক্তিশালী করেছেন। মামলার রায়ে বলা হয় আসামীর পক্ষ থেকে এমন কোন প্রমাণ দেয়া হয়নি যে, সে অবস্থার চাপে পড়ে মনােনয়নপত্র দাখিল করেছিল এবং সুযােগ মত তা প্রত্যাহার করেছিল। পক্ষান্তরে দেখা যায় তার বিরুদ্ধ পক্ষ তার কাছ থেকে জোর করে দস্তখত নিয়ে প্রত্যাহারপত্র দাখিল করেছে। এই অভিযােগে সে তা অবৈধ ঘােষণা করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়। আসামী পক্ষ সমর্থন করে চারজন লােক সাক্ষ্য দিয়েছিল যে, সে মুক্তিযুদ্ধের সময় কতিপয় হিন্দু লােকের প্রাণ রক্ষা করেছে। একজন সাক্ষী মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসাবে আসামীর সাহায্য সহযােগিতা পেয়েছে বলে একজন সাক্ষ্য দেয় । ট্রাইব্যুনাল এসব সাক্ষ্যের ওপর কোন গুরুত্ব আরােপ করেননি এবং বলেছেন যে এগুলাে এই মামলার জন্য অপ্রাসঙ্গিক। জনাব রিয়াজ উদ্দিন আহম্মদ সরকার পক্ষে ও জনাব শাহজাহান খান আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।

১২-৭-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালাল মামলা: ফয়েজ বক্সের ১ বছর শ্রম কারাদণ্ড ও ৮ হাজার টাকা জরিমানা

বেআইনী ঘােষিত কনভেনশন মুসলিম লীগের ঢাকা শহর শাখার সভাপতি ফয়েজ বক্সকে এক বছরের শ্রম কারাদণ্ড ও আট হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা শহরের অধিবাসী তরুণ রাজনৈতিক কর্মী ফয়েজ বক্স গত বছর প্রাদেশিক পরিষদের তথাকথিত উপ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পাক সৈন্যদের দালালী করেছে বলে ঢাকার এক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গতকাল মঙ্গলবার রায় প্রদান করেছেন। আসামী নিজেকে নির্দোষ দাবী করে সে বলেছিল তার মনােনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এবং সে পরিষদে নির্বাচিত বলে ঘােষিত হয়নি। ট্রাইব্যুনাল এই যুক্তি নাকচ করে দিয়ে বলেন, দালাল আইনের বিধান মতে আসামীর নির্বাচিত হওয়া না হওয়ার প্রশ্ন বিচার্য বিষয় নয়, সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেই অপরাধ করেছেন।

ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, বাংলাদেশ জবরদখলে রাখার জন্য পাকিস্তান সৈন্যদের যখন সারা পৃথিবী ধিক্কার দিচ্ছিল তখন তারা নিজেদের পক্ষে জন সমর্থন দেখাবার ব্যাকুল প্রচেষ্টায় ঐ অবৈধ উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করে। ফলে ট্রাইব্যুনালের মতে, এমন একটি উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করেই আসামী দখলদার বাহিনীর হাত শক্তিশালী করেছেন। মামলার রায়ে বলা হয় আসামীর পক্ষ থেকে এমন কোন প্রমাণ দেয়া হয়নি যে, সে অবস্থার চাপে পড়ে মনােনয়নপত্র দাখিল করেছিল এবং সুযােগ মত তা প্রত্যাহার করেছিল। পক্ষান্তরে দেখা যায় তার বিরুদ্ধ পক্ষ তার কাছ থেকে জোর করে দস্তখত নিয়ে প্রত্যাহারপত্র দাখিল করেছে। এই অভিযােগে সে তা অবৈধ ঘােষণা করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়। আসামী পক্ষ সমর্থন করে চারজন লােক সাক্ষ্য দিয়েছিল যে, সে মুক্তিযুদ্ধের সময় কতিপয় হিন্দু লােকের প্রাণ রক্ষা করেছে। একজন সাক্ষী মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসাবে আসামীর সাহায্য সহযােগিতা পেয়েছে বলে একজন সাক্ষ্য দেয় । ট্রাইব্যুনাল এসব সাক্ষ্যের ওপর কোন গুরুত্ব আরােপ করেননি এবং বলেছেন যে এগুলাে এই মামলার জন্য অপ্রাসঙ্গিক। জনাব রিয়াজ উদ্দিন আহম্মদ সরকার পক্ষে ও জনাব শাহজাহান খান আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।

১৫-৭-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ খুলনায় দালাল মামলার রায় : পাঁচ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
খুলনা, ১৪ই জুলাই খুলনার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হত্যা ও দালালীর অভিযােগে পাচ ব্যক্তির প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। জনাব কে, এম, আকবরের নেতৃত্বে গঠিত উক্ত ট্রাইব্যুনাল ১৯৭২ সালের রাষ্ট্র প্রধানের ৮নং নির্দেশের ১১ (এ) অনুচ্ছেদের সাথে গঠিত বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারার ১/৩৪ অনুচ্ছেদের অধীনে আবদুর রশিদ মােল্লা, আবদুল হামিদ শেখ, কায়েম উদ্দিন সরদার, রেজাউল শেখ এবং ইঞ্জিল শেখকে অপরাধী সাব্যস্ত করেন। খুলনা জেলার তোেখাদা কলেজের বি.এ. শেষ বর্ষের ছাত্র মুক্তিযােদ্ধা সরফরাজকে হত্যার দায়ে কাতাঙ্কা হাই স্কুলে অবস্থানকারী তেরােখাদা শিবিরের রাজাকার কমাণ্ডার আবদুর রশিদ মােল্লাসহ অন্যান্য আসামীদের বিচার কার্য অনুষ্ঠিত হয়। মামলার বিবরণে প্রকাশ, মুক্তিযােদ্ধা জনাব সরফরাজ সব সময় পাতলার মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পে থাকতেন। ১৯৭১ সালের ১৩ আগস্ট তারিখে সরফরাজ তার পিতার সংগে সাক্ষাতের জন্য গােপনে তেরােখাদা গ্রামে যান। কিন্তু ঐ এলাকারই আবদুল খালেক নামে রাজাকারদের এক গুপ্তচরের কাছে খবর পেয়ে অভিযুক্ত রাজাকাররা সরফরাজকে ধরে ফেলে। তারা সরফরাজকে বেদম প্রহার করে এবং ঐ রাতেই এক নদীর তীরে দাঁড় করিয়ে তাকে গুলি করে নদীতে ফেলে দেয়। সরফরাজ মারাত্মক আহত অবস্থায় কোন রকমে সতরে নিরাপদ স্থানে পৌঁছেন। পরে তাকে যশাের জেলার কালিয়া থানাধীন বাওয়াইসানা গ্রামে তার এক আত্মীয় বাড়ীতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তিনি ১৫ আগস্ট মারা যান। ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয় নিহত সরফরাজের বুকে অথবা মাথায় গুলি করা হয়নি। সুতরাং ঘটনাস্থলেই তাকে হত্যা করার কোন উদ্দেশ্য আসামীদের ছিল না। কিন্তু হত্যার মত অপরাধ তারা করেছে যা হত্যা বলে গণ্য করা যায় না। রায়ে আরও বলা হয় যে কারণে সরফরাজ মারা গেলেন তা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে অথবা তার যাতে মৃত্যু ঘটে সে জন্যই অনুরূপভাবে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানাে হয়েছে। খুলনার বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর জনাব আবদুল লতিফ খান সরকার পক্ষে এবং এডভােকেট মনসুর আলী আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।

১৬-৭-৭২ দৈনিক আজাদ চট্টগ্রামের কক্সবাজারে ২ জন দালাল সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত

বর্বর পাকবাহিনীর সাথে দালালী এবং একজন তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযােগে অভিযুক্ত করে কক্সবাজারের আবু বকর সিদ্দিক ও আবদুল হালিমকে ২নং বিশেষ আদালতের রায়ে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। দোষী ব্যক্তি ২জনকে প্রত্যেককে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ চার হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা। অনাদায়ে প্রত্যেকে আরাে ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞ জজদালালী আইনের ১১(৬) বিধি অনুযায়ী দোষী ব্যক্তিদেরকে আরাে দুই বছর করে। জেল ও ২ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দিয়েছেন। বিচারের রায়ে বলা হয় যে, দুই ব্যক্তি স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে নিজেদের আনসার বলে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ভাবে দখলদার বাহিনীকে সাহায্য করে। ১৯৭১ সনের ৭ই মে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কক্সবাজারে জনৈক দোকানদারের বাড়ীতে প্রবেশ করে এবং তার মেয়ের শ্লীলতাহানি করে।

১৬-৭-৭২ দৈনিক আজাদ চট্টগ্রামের কক্সবাজারে ২ জন দালাল সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত

বর্বর পাকবাহিনীর সাথে দালালী এবং একজন তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযােগে অভিযুক্ত করে কক্সবাজারের আবু বকর সিদ্দিক ও আবদুল হালিমকে ২নং বিশেষ আদালতের রায়ে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। দোষী ব্যক্তি ২জনকে প্রত্যেককে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ চার হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা। অনাদায়ে প্রত্যেকে আরাে ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞ জজদালালী আইনের ১১(৬) বিধি অনুযায়ী দোষী ব্যক্তিদেরকে আরাে দুই বছর করে। জেল ও ২ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দিয়েছেন। বিচারের রায়ে বলা হয় যে, দুই ব্যক্তি স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে নিজেদের আনসার বলে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ভাবে দখলদার বাহিনীকে সাহায্য করে। ১৯৭১ সনের ৭ই মে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কক্সবাজারে জনৈক দোকানদারের বাড়ীতে প্রবেশ করে এবং তার মেয়ের শ্লীলতাহানি করে।

১৮-৭-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালাল মামলা : সিরাজ উদ্দিনের এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড

ঢাকা শহর কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি সিরাজ উদিন আহমদকে গত বছর উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পাক হানাদারদের সহায়তা করার অপরাধে গতকাল সােমবার এক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। আসামী বলেছিল সে ও তার দল গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের স্বার্থের খাতিরে দীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছে এবং ঐ একই কারণে সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। ট্রাইব্যুনাল এ বক্তব্য অগ্রাহ্য করে বলেছেন আসামী দেশের তদানীন্তন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দালালীর কাজ করেছে।
১৯-৭-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালালী মামলা : পটুয়াখালীতে একজনের সশ্রম কারাদণ্ড

পটুয়াখালী, ১৮ই জুলাই পটুয়াখালীতে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নির্বাচনে অংশগ্রহণের অভিযােগে এক ব্যক্তিকে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। পটুয়াখালীতে ট্রাইব্যুনালের এটাই হচ্ছে প্রথম বিচার। সহকারী সেশন জজ জনাব মােহাম্মদের নেতৃত্বে ২নং ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত ডা. শরফুদ্দিনকে দালালী আইনে দোষী সাব্যস্ত করেন। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, যে দখলদার বাহিনী অবৈধভাবে পিই-১০৯ পটুয়াখালী আসনটি শূন্য ঘােষণা করেন। ঐ আসনে জনাব আবুল হাশেম আওয়ামীলীগের টিকিটে এমপি এ নির্বাচিত হন। অভিযুক্ত ব্যক্তি দখলদার বাহিনী কর্তৃক শূন্য ঘােষিত আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। সরকারি কৌসুলি জনাব আশরাফ আলী, রাষ্ট্রের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন।

২২-৭-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালালের কারাদণ্ড
সাম্প্রতি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পটুয়াখালী সেশন কোর্টে দালাল হাফেজ আবদুর রহমানের বিচারের রায় প্রকাশিত হয়। তাকে চার মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাক আমলে। আবদুল বারেক এমপিএ (বর্তমানে এমসিএ) এর বদলে উক্ত দালাল নিযুক্ত হয়েছিল। বহু লুঠজনিত মামলায় এর নাম আছে। উক্ত হাফেজ আবদুর রহমান হাফিজিয়া মাদ্রাসার পরিচালক ছিল। মাদ্রাসায় ছাত্রদের আল বদর বাহিনীতে ভর্তি করেছিল।
২৪-৭-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ টাঙ্গাইলের এক দালালের সশ্রম কারাদণ্ড

টাঙ্গাইলের সরকারি দায়রা জজ এবং ২নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের জনাব এ এইচ চৌধুরী মধুপুরের জনাব দুদু মিয়াকে দেড় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ দালাল আইনের (৬) অনুচ্ছেদের অধীনে এ বিচার কার্য সম্পাদিত হয়েছে। মামলার বিবরণে প্রকাশ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যখন বেআইনী বাংলাদেশ দখল করে লুটতরাজ, অগ্নিসংযােগ, নারী ধর্ষণ ও গণহত্যা চালাচ্ছিল তখন মধুপুরের ময়েজ সরকারের পুত্র দুদু মিয়া দালালীর আশ্রয় করিয়া দখলদার বাহিনীর লুঠ, অগ্নিসংযােগ ও নিমর্ম ধ্বংসযজ্ঞে সক্রিয়ভাবে সহযােগিতা করে। ২৪-১০-৭১ তারিখে আসামী দুদু মিয়া পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনীর হাবিলদার মুশতাককে নিয়ে নবপুর থানাধীন আশুরা গ্রামের অধিবাসী বাদী নিশিকাণ্ড চন্দ্রের বাড়ীতে গিয়া তার বাবা সতীশ চন্দ্রকে মধুপুরে অবস্থিত রাজাকার শিবিরে পাঠাতে নির্দেশ দেয়। একই দিন কয়েকজন রাকাজার বাদীর বাড়ীতে হানা দিয়া তার বাবাসহ বশির, বেলায়েত, ওমর, উপেন্দ্র, হরেন্দ্র, নগেন্দ্র ও খগেনকে ধরে নিয়ে যায় এবং গুলি করে হত্যা করে। জনৈক করিম তালুকদার, একথা বাদীকে জানান। কারণ একই সময় তিনিও করিম রাজাকার শিবিরে। নীত ছিলাে। বহু কষ্টে পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হন। আসামী দুদু মিয়া দখলদার বাহিনীর হাবিলদার মুস্তাকের সাথে নিয়মিত ঘুরে বেড়াতেন এবং তাদের পথ প্রদর্শক হিসাবে কাজ করিত। এছাড়া হানাদার সৈন্যদের লােকজনের বাড়ীঘর চিনিয়ে দিত ও ঘরে ঘরে লুঠ ও আগুন লাগাতাে। থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার ১লা জানুয়ারী প্রাথমিক এজাহার গ্রহণ এবং তদন্তকার্য পরিচালনা করে। চার্জশীট দেন। বাদীপক্ষ পাঁচজন সাক্ষী দেন। কিন্তু আসামী পক্ষে কেউ ছিল না। বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর এড. নুরুল ইসলাম এবং জনাব আব্দুল আলী সিদ্দিক। মােক্তার আসামীর পক্ষে সমর্থন করেন।

২৬-৭-৭২ বাংলার বাণী দালাল আইনে অভিযুক্ত মাজহারুল ইসলামের ৪ মাস সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫শ টাকা জরিমানা।

ময়মনসিংহ, ২৫শে জুলাই (বাসস) পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সহযােগিতা করার অভিযােগে এবং দালাল আইন মােতাবেক ময়মনসিংহের বিশেষ আদালতের সহকারী সেশন জজ জনাব এস আহম্মেদ ময়মনসিংহ জেলার শ্রী লিয়ারদি থানার অন্তর্গত তাতী। হাটি গ্রামের মুন্সী মফিজ উদ্দিনের পুত্র অধ্যাপক মাজহারুল ইসলামকে ৪ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫শত টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা দিতে অপারগ হলে তাকে আরাে একমাস কারাদণ্ড ভােগ করিতে হবে।

১-৮-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালাল মালিক মিয়ার সাজা
কুমিল্লার ১নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও জেলা দায়রা জজ জনাব আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৭২ সালের দালাল আদেশ অনুযায়ী আজ শহরের থিরার পুকুর পাড়ের মানিক মিয়াকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। দালাল আইনে কুমিল্লার এটাই প্রথম রায়।

২-৮-৭২ দৈনিক ইত্তেফাক টাঙ্গাইলে দালাল আইনে ৩ ব্যক্তি দণ্ডিত

টাঙ্গাইলের প্রথম বিশেষ ট্রাইব্যুনাল অদ্য দালাল আইনে গােপালপুর নিবাসী আব্দুল খালেক, আব্দুল মালেক ও মেছের আলীকে যথাক্রমে দেড় বছর এক বছর ও ৬ মাস সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন। মামলার বিবরণে প্রকাশ অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ হইতে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে দখলদার পাকবাহিনীর সাথে সহায়তা করে এবং তথা কথিত শান্তি কমিটির সদস্য হিসাবে তাহারা বিভিন্ন গ্রামে লুণ্ঠন করে এবং অসামরিক লােকজন হত্যা করে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জনাব হাবিবুর রহমান এবং অভিযুক্তদের পক্ষে সমর্থন করে। এড, জনাব আবদুল খালেক।

২-৮-৭২ দৈনিক আজাদ রাজাকার কমান্ডারের দু’বছর কারাদণ্ড

দিনাজপুর, ১লা আগস্ট দিনাজপুর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাসিরুদ্দিন নামক একজন রাজাকার কমান্ডারকে দালালীর অভিযােগে দু’বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচশত টাকা জরিমানা করেছেন। জরিমানার টাকা অনাদায়ে আরাে দু’মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ উক্ত রাজাকার কমান্ডার দখলদার আমলে দুইজন রাজাকারসহ জনৈক আকিমুদ্দিনের বাড়ী ঢুকে তাকে আটক করে এবং তার স্ত্রীকে দাবী করে। এ সময়ে আকিমুদ্দিনের স্ত্রী বাড়ী থেকে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। রাজাকার কমান্ডার তখন আকিমুদ্দিনকে ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং তথায় তার উপর সারারাত অমানুষিক অত্যাচার চালায়। বিজ্ঞ বিচারক উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে উপরােক্ত সাজা প্রদান করেন।

৫-৮-৭২ দৈনিক আজাদ কুমিল্লায় একজন দালালের দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড

কুমিল্লা, ৪ আগস্ট কুমিল্লা বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারে দখলদার বাহিনীর সাথে দালালী করার অভিযােগে দোষী সাব্যস্ত করে মানিক মিয়া নামক এক ব্যক্তিকে দু’বছর সশ্রম কারাদণ্ড সহ এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ দোষী। মানিক মিয়া ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযােগিতায় রায়গঞ্জ বাজারের একটি স্বর্ণের দোকান লুট করে। -এনা

১৪-৮-৭২ দৈনিক আজাদ কুষ্টিয়া স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে দালাল আইনে এক ব্যক্তির দু’বছর সশ্রম কারাদণ্ড
কুষ্টিয়া, ১২ই আগস্ট গত ৩১শে জুলাই কুষ্টিয়ার জেলা জজ ও স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক মি. রবীন্দ্র কুমার বিশ্বাস স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের ৭/৭২নং মামলার রায় প্রদান করেছেন। উক্ত মামলার আসামী খােন্দকার কোরবান আলীকে দালাল আইনে ৪নং তফসীলের (‘বি’) অনুযায়ী ১১ডি অনুসারে ২ বছরে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে প্রকাশ বিগত স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিনিই প্রথম ব্যক্তি। যিনি পােড়াদহ হতে কয়েকশত লােকের একটি মিছিল সহকারে কুষ্টিয়া শহরে বিভিন্ন শ্লোগান প্রদান পূর্বক মেজরের নিকট হাজির হয়ে শান্তি কমিটি স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এছাড়া আরও তিনজন আসামীর ৩৬৪ ধারা অনুযায়ী দালাল আইনের ২নং তফশীল। অনুযায়ী ১১ ‘বি’ ধারা মতে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। তারা হলেন শাহ। মােহাম্মদ হানিফ ও বরকত। এরা প্রত্যেকেই বিহারী। আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জনাব মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এড, জনাব মুসলেমুর রহমান এড, জনাব লুৎফর রহমান এড.। বিহারীদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জনাব নুরুল হক পাবলিক প্রসিকিউটর ও জনাব আমজাদ হােসেন স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর। সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ সরকারি এড, মােঃ আশরাফুল হক।

২৭-৮-৭২ দৈনিক আজাদ দালালীর অভিযােগে কুমিল্লায় ৩ ব্যক্তির সশ্রম কারাদণ্ড

কুমিল্লা, ২৫শে আগস্ট কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দালালীর অভিযােগে ২জন রাজাকার ও তাদের সহযােগীকে ১ বছর থেকে ৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫শত টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করেছেন। অপর একজন অভিযুক্তকে নির্দোষ বলে মুক্তি দেয়া হয়। মামলার অভিযােগে জানা গেছে অভিযুক্ত মােহাম্মদ হােসেন, মােহাম্মদ আলী, আবু তাহের ও আবদুল গফুর গত ১৩৭৮ সালের ২১শে আশ্বিন সকাল প্রায় ১১টার সময় পঞ্চাশ/ষাট জন রাজাকার ও কয়েকজন পাক সৈন্যসহ বাদী রজব আলীর বাড়ী হামলা করে এবং তার ৩টি গৃহ জ্বালিয়ে দেয়। এরপর তারা রজব আলীর সমস্ত খাদ্য শস্য। লুটতরাজ করে নিয়ে আসে। এদিকে বিবাদী পক্ষের কৌঁসুলি অভিযুক্তদের নির্দোষ বলে দাবী করে কতিপয় যুক্তি পেশ করেন। অবশেষে মাননীয় জজ অভিযুক্তদের তিন জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দান করেন এবং অপর একজনকে মুক্তি দেন।

৮-৯-৭২ দৈনিক সংবাদ
হানাদার বাহিনীর দালালী ও অগ্নিসংযোেগ অভিযােগের দায়ে দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কালিগঞ্জ থানার সাবেক ওসি ইউসুফ আলী চৌধুরী ও ওখান কার শান্তি কমিটির সেক্রেটারি সামছুর রহমান ওরফে শাহাজাহান মিয়াকে অগ্নি সংযোগের কাজে ও পাক বাহিনীকে সহায়তা করার দায়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত যাবদষ্টাবন কারাদণ্ড দণ্ডিত করেছেন। ঢাকার সেশন জর্জ জনাব আব্দুল হান্নান চৌধুরী সমন্বয়ে গঠিত দালালদের বিচারের জন্য গঠিত এক নম্বর ট্রাইব্যুনাল উক্ত থানার নগর নরসিন্দিপুর গ্রামের জনাব এমদাদ আলী মােল্লা কর্তৃক তার বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেবার অভিযােগের ভিত্তিতে আসামীদের উপরােক্ত দণ্ড প্রদান করেছেন। মামলায় মােট ১৬ জনে সাক্ষ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে ট্রাইব্যুনাল বলিয়াছেন গত বছর ১৬ই জুন প্রায় ১০০০ পাক বাহিনী আসামীদের সহায়তায় বাদীর গ্রাম ঘিরে ফেলে এবং তার বাড়ীর মােট ১৬টি ঘরে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলে। এতে তার প্রায় তিন লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়। বাদী বলেছেন তিনি আওয়ামীলীগ কর্মী ও তার এলাকায় মুক্তি সংগ্রামের একজন সংগঠক ছিলেন বিধায় ইউসুফ আলী চৌধুরী উক্ত শান্তি কমিটির সেক্রেটারি সাক্ষাতে তাকে নানা রকম ভয় দেখায় এবং তার কাছ থেকে মুক্তির বিনিময়ে ৫০ হাজার টাকা ও আটজন যুবতী মেয়ে দাবী করে। সাক্ষীগণ বলেছেন আসামীদের সহায়তায় পাকবাহিনী কয়েকজন লােককে হত্যা করে। অনেকের উপর নির্যাতন চালায় এবং কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায় ও আটকে রাখে। আদালতের মতে মামলার সাক্ষ্য অত্যন্ত নির্ভরযােগ্য। পুলিশ অফিসার আসামী পাকবাহিনীর অনুকুল লাভের জন্য মুক্তি সংগ্রামকে অপেক্ষা করেছেন। এমন যে সৈন্যদের জন্য যুবতী মেয়েদের সংগ্রহের প্রচেষ্টা পর্যন্ত চালিয়েছেন। আসামীদের নিজেদের নির্দেশ বলে দাবী করে ইউসুফ আলী। চৌধুরী বলেন যে তাকে সৈন্য বাহিনী তাদের সাথে যেতে বাধ্য করেছে। শাহাজান। মিয়াকে বাদীর সাথে শক্রতার ফলে মামলায় জড়ানাে হয়েছে বলে মনে করা হয়। খন্দকার মাহবুব হােসেন সরকার পক্ষের এবং সৈয়দ শওকাত হােসেন ও জনাব আব্দুল গণি সরকার আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।

৯-৯-৭২ দৈনিক ইত্তেফাক দালালীর অভিযােগে ২ ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার ১নং ট্রাইব্যুনাল জজ জনাব আবদুল হান্নান চৌধুরী ঢাকার কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইউসুফ আলী চৌধুরী এবং ঐ থানার অন্তর্গত জিনারদী ইউনিয়নের শান্তি কমিটির সেক্রেটারী শামছুর রহমান ওরফে শাহজাহান। মিয়াকে স্বাধীনতা সংগ্রাম কালে অগ্নিসংযােগ ও দালালীর দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ডিত করিয়াছেন। প্রকাশ আসামী ইউসুফ আলী ঐ মামলার বাদী জিনারদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব ইমদাদ আলী জীবন ও তাহার এলাকাবাসীর জান ও মাল রক্ষা করিবার নিমিত্তে ৫০ হাজার টাকা ও ৮জন সুন্দরী মেয়ে চেয়েছিল। উহা জোগাড় করিয়া না দিতে পারায় ১৯৭১ সালের জুন মাসের ১৬ তারিখে ওসি ইউসুফ আলী। রাগান্তিত হইয়া শামসুর রহমান সহ তিন শত পাকবাহিনী নিয়া ইমদাদ আলীর বাড়ী
আক্রমণ করে এবং ১৬টি বসতবাড়ী আগুন লাগাইয়া তিন লক্ষ টাকার সম্পত্তি নষ্ট করে। ট্রাইব্যুনাল জজ তার রায়ে বলেন জনগণ যখন স্বাধীনতার সংগ্রামে লিপ্ত ছিল তখন ইউসুফ আলী তাহার ব্যক্তিগত স্বার্থে জোর করিয়া টাকা আদায়ে ব্যস্ত। শুধু ইহাতে সে তুষ্ট নহে বরং দখলদার বাহিনীর ফুর্তির জন্য মেয়ে জোগাড়ে ব্যস্ত। ইহা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে সে পাকবাহিনীর দালাল ছিল। তদুপরি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি তাহার পুরােপুরি অবজ্ঞা ছিল। মাননীয় জজ আরাে বলেন ১৯৭১ সালের কালাে রাত্রির পর দখলদার বাহিনী সমস্ত বাঙ্গালীর অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় জোর করে। অন্য দিকে তাহাদের দোসরদের নতুন করিয়া অস্ত্রে সজ্জিত করে। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে দখলদার বাহিনী কর্তৃক শাহজাহান মিয়ার নামে ইস্যুকৃত রিভালবারের লাইসেন্স ইহাই প্রমাণ করে যে সে পাকবাহিনীর একজন দালাল ছিল। ইউসুফ আলী ও শাহজাহান মিয়াকে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৩৬ ধারা এবং ১৯৭২ সালের দালাল আদেশের ১(খ) অনুচ্ছেদের বলে দণ্ডিত করা হইয়াছে। সরকার পক্ষে সিনিয়র স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর খন্দকার মাহবুব হােসেন এবং জনাব আব্দুল গনি সরকার মামলা পরিচালনা করেন।

৯-৯-৭২ দৈনিক ইত্তেফাক দালালীর অভিযােগে ২ ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার ১নং ট্রাইব্যুনাল জজ জনাব আবদুল হান্নান চৌধুরী ঢাকার কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইউসুফ আলী চৌধুরী এবং ঐ থানার অন্তর্গত জিনারদী ইউনিয়নের শান্তি কমিটির সেক্রেটারী শামছুর রহমান ওরফে শাহজাহান। মিয়াকে স্বাধীনতা সংগ্রাম কালে অগ্নিসংযােগ ও দালালীর দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ডিত করিয়াছেন। প্রকাশ আসামী ইউসুফ আলী ঐ মামলার বাদী জিনারদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব ইমদাদ আলী জীবন ও তাহার এলাকাবাসীর জান ও মাল রক্ষা করিবার নিমিত্তে ৫০ হাজার টাকা ও ৮জন সুন্দরী মেয়ে চেয়েছিল। উহা জোগাড় করিয়া না দিতে পারায় ১৯৭১ সালের জুন মাসের ১৬ তারিখে ওসি ইউসুফ আলী। রাগান্তিত হইয়া শামসুর রহমান সহ তিন শত পাকবাহিনী নিয়া ইমদাদ আলীর বাড়ী আক্রমণ করে এবং ১৬টি বসতবাড়ী আগুন লাগাইয়া তিন লক্ষ টাকার সম্পত্তি নষ্ট করে। ট্রাইব্যুনাল জজ তার রায়ে বলেন জনগণ যখন স্বাধীনতার সংগ্রামে লিপ্ত ছিল তখন ইউসুফ আলী তাহার ব্যক্তিগত স্বার্থে জোর করিয়া টাকা আদায়ে ব্যস্ত। শুধু ইহাতে সে তুষ্ট নহে বরং দখলদার বাহিনীর ফুর্তির জন্য মেয়ে জোগাড়ে ব্যস্ত।

ইহা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে সে পাকবাহিনীর দালাল ছিল। তদুপরি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি তাহার পুরােপুরি অবজ্ঞা ছিল। মাননীয় জজ আরাে বলেন ১৯৭১ সালের কালাে রাত্রির পর দখলদার বাহিনী সমস্ত বাঙ্গালীর অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় জোর করে। অন্য দিকে তাহাদের দোসরদের নতুন করিয়া অস্ত্রে সজ্জিত করে। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে দখলদার বাহিনী কর্তৃক শাহজাহান মিয়ার নামে ইস্যুকৃত রিভালবারের লাইসেন্স ইহাই প্রমাণ করে যে সে পাকবাহিনীর একজন দালাল ছিল। ইউসুফ আলী ও শাহজাহান মিয়াকে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৩৬ ধারা এবং ১৯৭২ সালের দালাল আদেশের ১(খ) অনুচ্ছেদের বলে দণ্ডিত করা হইয়াছে। সরকার পক্ষে সিনিয়র স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর খন্দকার মাহবুব হােসেন এবং জনাব আব্দুল গনি সরকার মামলা পরিচালনা করেন।

২৯-৯-৭২ দৈনিক বাংলা দালালীর অভিযােগে তিন বছর কারাদণ্ড

মাইজদীকোট : পাক দখলদার আমলে দালালীর অভিযােগে রামগঞ্জ থানার দরবেশ ইউনিয়নের সামছুল আলমকে গতকাল তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ অভিযুক্ত শামসুল আলম ঔষধের দোকান ও ধান ভাঙ্গাকালে দখলদার বাহিনী আস্তানা গড়ে ও তার সহায়তায় পার্শ্ববর্তী এলাকায় নৃশংস অত্যাচার চালায়। সরকার পক্ষে ইসমাইল ও আসামী পক্ষে জনাব রুহুল আমিন মামলা পরিচালনা করেন।

২-১০-৭২ দৈনিক বাংলা দালালী মামলের রায় : শান্তি কমিটির সভাপতি ৪ বছরের কারাদণ্ড

পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সহযােগিতা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরােধী তৎপরতার অপরাধের জন্য হকিম সৈয়দ হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। আসামী হাকিম সৈয়দ হাবিবুর রহমান টাঙ্গাইল জেলার শান্তি কমিটির সভাপতি ছিল। পাকবাহিনীর দালালীর অপরাধে টাঙ্গাইল সেশন জজ কোর্টে আসামীকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে ছাড়াও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে এক বছরের কারাদণ্ড দণ্ডিত করা হয়।

৩-১০-৭২ বাংলার বাণী দালালীর দায়ে ৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা

পাকিস্তানী দখলদার আমলে টাঙ্গাইল জেলা শান্তি কমিটির সভাপতি হাকিম সৈয়দ হাবিবুর রহমান পাক হানাদার সেনাদের সাথে দালালীর দায়ে দ্বিতীয় জর্জের কোটে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয় বলে জানা গেছে। খবরে আরাে জানা গেছে যে দণ্ডাদেশে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ ও রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দখলদার পাক সেনাদের সাথে সহযােগিতা, দালালী নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও টাঙ্গাইলে বে আইনী একটি বাড়ী। দখলের অভিযােগ আনা হয়েছিল। এ মামলায় সরকার পক্ষের কৌসুলি ছিলেন এড. গৌর পাল সাহা এবং আসামী পক্ষে ছিলেন এড, বাবর আলী।

৪-১০-৭২ দৈনিক বাংলা দালালী মামলা : মাইজীতে ২ জনের সশ্রম কারাদণ্ড
সম্প্রতি নােয়াখালী জেলার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল প্রথম মামলার রায় প্রদান করেন। রামগঞ্জ থানার দরবেশপুর ইউনিয়নের শামসুল হক ওরফে শামসুল ইসলামকে দখলদার বাহিনীর সহিত সহযােগিতা করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে প্রেসিডেন্টের দালাল আদেশ অনুসারে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। মামলাটির বিচার করে নােয়াখালী জেলার স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের জজ জনাব আমিন উদ্দিন আহমেদ। মামলা। সংক্ষিপ্ত বিবরণে প্রকাশ পাকিস্তানী বাহিনীর অবৈধ দখল আমলে রামগঞ্জ থানার হাই স্কুল প্রাঙ্গণে পাকিস্তানী সৈন্যদের অবস্থানকালে আসামী শামসুল হক তাদের কাছে। যাতায়াত করতাে। শামসুল হকের এ অঞ্চলে একটি চালের কল ও ঔষধের দোকান ছিল। সে হানাদার বাহিনীর লুঠ করা ঔষধ তার দোকানে বিক্রি করে তাদের। সহযােগিতা করিত। শামসুল হক হানাদার বাহিনীতে প্রচারিত করে স্থানীয় সৈয়দপুর বাজারে নিয়ে যায় এবং দোকান লুঠ করে এবং পুড়িয়ে দিতে প্ররােচিত করে। এ মামলায় সরকার পক্ষ সমর্থন করেন, পিপি জনাব মােঃ ইসমাইল। আসামী পক্ষ সমর্থন করেন জনাব রুহুল আমিন। মাওলানা খলিলুর রহমানের পাঁচ বছর কারাদণ্ড গত ৩০শে সেপ্টেম্বর নােয়াখালী জেলার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালত জামাতে ইসলামী ও রায়পুর শান্তি কমিটির সদস্য এবং রায়পুর আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক খলিলুর রহমানকে দালালী করার অপরাধে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। মামলায় বিবরণে প্রকাশ অভিযুক্তি মাওলানা খলিলুর রহমান দখলদার পাকবাহিনীকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযােগিতা করেছে। এক জনসভায় গােষণা করেছিল যারা মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করবে তারা। কাফের ও বেহেস্ত পাবে না। সে রাজাকারদের লুটতরাজে সাহায্য করে। তার প্ররােচনায় পাকবাহিনী রায়পুরে বাজারে আগুন দেয়। মামলায় সরকার পক্ষ সমর্থন করে পিপি বাবু শশী মােহন চৌধুরী এবং আসামী পক্ষ সমর্থন করেন জনাব কাজী নুরুজ্জামান।

৬-১০-৭২ দৈনিক আজাদ বগুড়ার চারজন রাজাকার দণ্ডিত
বগুড়া থেকে বিপি আই খবরে প্রকাশ দখলদার বাহিনীর সাথে দালালীর দায়ে চারজন রাজাকারকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বগুড়া ট্রাইব্যুনালের বিশেষ জজ এই দণ্ডাদেশ দিয়েছেন। এই রাজাকারা হচ্ছে মােজাহার আলী, সিরাজ উদ্দিন, সােনার ও নুরদ্দিন। এ ছাড়া দালালীর অভিযােগে পুলিশ বগুড়া শহর থেকে আরাে দুই জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। এরা শান্তি কমিটির সদস্য ছিল। এর হলেন জনাব বায়েন উদ্দিন আহমেদ অধ্যক্ষ ও জনাব রহিম উদ্দিন মােস্তার।

৬-১০-৭২ দৈনিক বাংলা ৩ জন আল বদরের মৃত্যুদণ্ড : ডক্টর আজাদ হত্যা মামলার রায়

গতকাল বৃহস্পতিবার বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. কে, এ. এম. আজাদের হত্যার সহযােগিতা করার দায়ে তিনজন আল বদরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই রায় দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের জজ সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। উপরােক্ত তিন জন হলেন আয়ুব আলী, মকবুল হােসেন ও জুবায়ের। প্রেসিডেন্ট দালাল আদেশ ও বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২ ও ১০৯ ধারা অনুযায়ী তাদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলাে। বিজ্ঞ স্পেশাল জজ তার রায়ে উল্লেখ করেন যে, মামলার প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি ও সূত্রসমূহ তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিশ্লেষণ করেছেন এবং আসামীদের নির্দোষিতার দাবী তার সপক্ষে পেশ করা যুক্তিগুলাে তার কাছে দুর্বল মনে হয়েছে। সাম্প্রতিককালে চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলােচিত ডা. আজাদ হত্যা মামলায় বাদিপক্ষের অভিযােগ করা হয় যে, গত ১৫ই ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হবার আগে দিন সকালে ঢাকার আজিমপুরস্থ দায়রা শরীফের ভবন থেকে কয়েকজন আল বদরের লােক জোরপূর্বক ড. আজাদকে অপহরণ করে। উক্ত দায়রা শরীফের বাসিন্দা জুবায়ের আল বদর বাহিনীকে মরহুমের বাস ভবন দেখিয়ে দেয়। দেশ শত্রুমুক্ত হবার পর ১৮ই ডিসেম্বর রায়ের বাজার বধ্যভূমি থেকে ড, আজাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে আসামী মকবুল হােসেন ও আয়ুব আলীকে মুন্সিগঞ্জ গামী একটি লঞ্চ থেকে ধরে মুক্তি বাহিনীর কাছে সােপর্দ করা হয় ।
আসামী দুইজনকে আটক করেন ড. আজাদের প্রতিবেশী মুস্তাফিজুর রহমান। এই মােস্তাফিজুর রহমানের দুই ভাই মন্টু ও মতিকে আল বদর বাহিনী ঘটনার দিন একই সময়ে অপহরণ করে। মন্টু বদর বাহিনীর কর্তৃক নিহত হয়। মােট ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মাত্র ৩ জন সাক্ষ্য মকবুলের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন। মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে বি স্পেশাল জজ তার রায়ে উল্লেখ করেন দখলদার পাকবাহিনীর সাথে যারা সহযােগিতা করেছে তাদের জন্য সরকার নতুন এই দালাল আদেশ জারী করেছেন। জনগণের প্রত্যশা দালালদের উপযুক্ত শাস্তি হােক। বিবাদী। পক্ষ ন্যায় বিচারে আবার প্রমাণিত হল অপরাধীদের সর্বোচ্চ শান্তি কাম্য। সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন স্পেশাল পিপি আবদুর রাজ্জাক খান। আসামী জোবায়ের মকবুল ও আয়ুব পক্ষে হাজির ছিলেন যথাক্রমে এড. মােঃ আজিজ, এ এম জোয়ারদার ও ফয়জুদ্দিন ভূইয়া পরিচালনা করেন। সংক্ষিপ্ত জীবনী : ড. আজাদ ছিলেন কুষ্টিয়া জেলার রামকৃষ্ণপুরের মৃত এম এ সােবহানের বড় ছেলে। তিনি ১৯৪৭ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৫৩ সালে এমএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম পরে পাকিস্তানী বিমান বাহিনীতে যােগদান এবং ১৯৫৮ সালে চাকুরী ছেড়ে দেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ম্যাক্রেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত গণিতে এমএসসি পাস এবং ১৯৬৮ সালে ঐ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট লাভ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৩৮ বছর।

সূত্রঃ সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ১৯৭১ -প্রত্যয় জসীম
৬-১০-৭২ দৈনিক আজাদ ড. আজাদ হত্যা মামলার রায়

অভিযুক্ত তিন ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত (২য় প্রতিবেদন) বিশিষ্ট গাণিতিক ড. এম এ কে আজাদকে অপহরণ পূর্বক হত্যায় সাহায্য করার দায়ে অভিযুক্ত তিন ব্যক্তির প্রত্যেকেই বিশেষ আদালত গতকাল বৃহস্পতিবার মৃত্যুদণ্ড দান করেছেন। ঢাকার প্রথম আদালতের এ্যাডিশনাল সেশন জর্জ সৈয়দ সিরাজুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ আদালত এই মৃত্যুদণ্ড দান করেন। আদালতের দীর্ঘ রায়ে বলা হয়েছে যে, অভিযুক্ত জুবায়ের ওরফে এস আহমেদুল্লাহ একদল আল বদরকে ড, আজাদের বাসভবন চিনিয়ে দেয় এবং অতঃপর তারা ড. আজাদকে হিংস্রভাবে ঘর থেকে ধরে নিয়ে যায়। উক্ত অভিযুক্ত জুবায়ের আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ছিল এবং বর্তমানে বেআইনী ঘোষিত প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল জামাতে ইসলামীর ছাত্র ফ্রন্ট ইসলামী ছাত্র সংঘের একজন সদস্য ছিল। আদালত রায় দেন যে, অন্য দুজন অভিযুক্ত মকবুল হােসেন ও আইয়ুব আলী ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার একই গ্রামের বাসিন্দা ও তারা রাজাকার ছিল এবং যে পাচ জন আল বদর ড, আজাদকে তাঁর আজিমপুরস্থ বাসভবন থেকে অপহরণ করে এরা তাদের সাথে ছিল । রায়ে বলা হয়েছে যে, এই তিন জন অভিযুক্ত ব্যক্তি অন্যান্যদের সাথে গত বছর ১৫ই ডিসেম্বর স্বাধীনতার একদিন পূর্বে ড. আজাদকে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেছে। তারা এটা করেছেন পাক দখলদার বাহিনীর সাহায্য করে, যারা তাদের শাসন দেশের নেতৃত্ব স্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের নির্মূল করে কায়েম রাখতে চেয়েছিল।

ড. আজাদের শব স্বাধীনতার তিনদিন পর রায়ের বাজারের এক গর্ত থেকে উদ্ধার করা হয়। তার দেহে অসংখ্য মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ মামলায় ২৬ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। স্বাক্ষীদের মধ্যে ড. আজাদের বৃদ্ধ মাতা, ভগিনী ও ভায়েরা ছিলেন। তারা উ, আজাদকে অপহরণ কালের বেদনাদায়ক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং তারা আদালতের সম্মুখে মৌখিক বিবরণ দেন এ দ্বারাই অভিযুক্তদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অভিযুক্তদের নির্দোষিতা প্রত্যয়ন করে আদালত বলেন যে, ঘটনার সময় স্বাক্ষীগণ। কর্তৃক তাদেরকে সনাক্ত করণ তাদের গ্রেফতার তারা যে দোষী তা প্রমাণ করে। সরকার কর্তৃক নিযুক্ত জনাব মােহাম্মদ আজম সৈয়দ হাবিব উল্লাহ ও জনাব এম এ জলিল অভিযুক্ত জুবায়ের জনাব এ এস জোয়ারদার মকবুল হােসেনের এবং জনাব ফরিদুদ্দিন ভুইয়া আইয়ুব আলীর পক্ষ সমর্থন করেন। স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর জনাব আবদুর রাজ্জাক এই মামলা পরিচালনা করেন।

৭-১০-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালালীর দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

যশােরের দায়রা জজ ও ১নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের জজ মি. ডি. এন. চৌধুরী সম্প্রতি বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৬ এবং দালাল আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী জনৈক মেসের আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। অভিযুক্ত মেসের আলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগ সত্য বলে ট্রাইব্যুনালের জজ বুঝতে পেরে মেসের আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। সরকারি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জনাব আবদুল মালেক (২) এবং বিবাদী পক্ষে ছিলেন জনাব সৈয়দুজ্জামান।

১২-১০-৭২ দৈনিক সংবাদ আইন আদালত দালালীর দায়ে যশােরে এক ব্যক্তির ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড

যশােরের সেশন এবং ১নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের জজ মি, ডি এন চৌধুরী সম্প্রতি এক বিচারে জনৈক কাজী বদরুল ইসলাম ওরফে পুটে কাজীকে বাংলাদেশ অপরাধ আইনের ৩৭৯, ৩৮০ ধারা, ও বাংলাদেশ দালাল আইনে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে প্রকাশ আসামী দখলদার আমলে শশা থানার একজন রাজাকার ছিল ঐ সময় অন্যের ঘরে অনধিকার প্রবেশ ও চুরির অপরাধ সংঘটিত করে। জনৈক সাব ইন্সপেক্টর থানা চত্বরে অবস্থিত তার কোয়াটারে সমস্ত জিনিসপত্র রেখে পাক বাহিনীর ভয়ে কেশবপুরে চলে যায়। আসামী পুটে কাজী দখলদার বাহিনীর সক্রিয় সহযােগিতায় ১/৪/৭১ থেকে ১৫/৪/৭১ তারিখের মধ্যে থানা চত্বর থেকে সি, আই, সিট চৌকি ও চেয়ার অপসারিত করে ঘরে অনধিকার প্রবেশ করে ১টি সাইকেল ট্রানজিস্টার, ৬টি ট্রাঙ্ক ভর্তি জিনিস পত্র ও ৬৩১০ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। স্বাধীনতার পরে সাব ইন্সপেক্টর ফিরে এলে তার প্রতিবেশী জনৈক আওয়াল হােসেন তাকে একথা জানান। ৭ জন সাক্ষীকে জেরা করা হয়। আসামী পক্ষ বলা হয়, সে এগুলাের কিছুই জানে না। সে রাজাকার ছিল না। জেরায় সাক্ষীদের কাজ থেকে অভিযােগগুলাের সত্যতা মেলে। আসামীকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। বাদীপক্ষের মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ সরকারি উকিল জনাব হাবিবুর রহমান। আসামী পক্ষের উকিল ছিলেন জনাব লুৎফর রহমান।

১২-১০-৭২ দৈনিক সংবাদ আইন আদালত দালালীর দায়ে যশােরে এক ব্যক্তির ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড

যশােরের সেশন এবং ১নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের জজ মি, ডি এন চৌধুরী সম্প্রতি এক বিচারে জনৈক কাজী বদরুল ইসলাম ওরফে পুটে কাজীকে বাংলাদেশ অপরাধ আইনের ৩৭৯, ৩৮০ ধারা, ও বাংলাদেশ দালাল আইনে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে প্রকাশ আসামী দখলদার আমলে শশা থানার একজন রাজাকার ছিল ঐ সময় অন্যের ঘরে অনধিকার প্রবেশ ও চুরির অপরাধ সংঘটিত করে। জনৈক সাব ইন্সপেক্টর থানা চত্বরে অবস্থিত তার কোয়াটারে সমস্ত জিনিসপত্র রেখে পাক বাহিনীর ভয়ে কেশবপুরে চলে যায়। আসামী পুটে কাজী দখলদার বাহিনীর সক্রিয় সহযােগিতায় ১/৪/৭১ থেকে ১৫/৪/৭১ তারিখের মধ্যে থানা চত্বর থেকে সি, আই, সিট চৌকি ও চেয়ার অপসারিত করে ঘরে অনধিকার প্রবেশ করে ১টি সাইকেল ট্রানজিস্টার, ৬টি ট্রাঙ্ক ভর্তি জিনিস পত্র ও ৬৩১০ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। স্বাধীনতার পরে সাব ইন্সপেক্টর ফিরে এলে তার প্রতিবেশী জনৈক আওয়াল হােসেন তাকে একথা জানান। ৭ জন সাক্ষীকে জেরা করা হয়। আসামী পক্ষ বলা হয়, সে এগুলাের কিছুই জানে না। সে রাজাকার ছিল না। জেরায় সাক্ষীদের কাজ থেকে অভিযােগগুলাের সত্যতা মেলে। আসামীকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। বাদীপক্ষের মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ সরকারি উকিল জনাব হাবিবুর রহমান। আসামী পক্ষের উকিল ছিলেন জনাব লুৎফর রহমান।

১৪-১০-৭২ দৈনিক বাংলা রাজাকারের দশ বছর কারাদণ্ড

টাঙ্গাইলের ১নং বিশেষ আদালতের স্পেশাল জজ জনাব এ, কে, এম, জাফর সম্প্রতি মির্জাপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান নামক জনৈক রাজাকারকে দখলদার পাকবাহিনীর সাথে সহযােগিতা, অগ্নিসংযােগ, লুঠতরাজ ও অন্যান্য অভিযােগে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।
১৪-১০-৭২ দৈনিক বাংলা। দালালী মামলা : যশােরে একজনের সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড

যশােরের দায়রা ও ১নং বিশেষ আদালতের জজ মি. ডি, এন, চৌধুরী সম্প্রতি কাজী বদরুল ইসলাম ওরফে পুটে কাজী কে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৩৭৯ ও ৩৮০ ধারা ও বাংলাদেশ দালাল আইন অনুযায়ী সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দান করেছেন। মামলার বিবরণে প্রকাশ অভিযুক্ত সারসা থানার একজন পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর পাকবাহিনীর ভয়ে তার যাবতীয় মালামাল থানা কম্পাউন্ডের বাসায় রেখে কেশবপুরে পালিয়ে যান। অভিযুক্ত পুটে কাজী দখলদার বাহিনীর দালালী করে ১৯৭১ সালের ১লা এপ্রিল থেকে ১৫ই এপ্রিলের মধ্যে কম্পাউন্ডের সকল ঢেউটিন চৌকি চেয়ার ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যায় এবং গৃহে অনধিকার প্রবেশ করে ১টি সাইকেল, ৬টি ট্রাঙ্ক ও ৬ হাজার।
১০টাকা মুল্যের মালামাল চুরি করে। স্বাধীনতার পর অভিযােগকারী ফিরে এলে বাসার একজন বাসিদা তাকে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে। মামলায় সাতজন স্বাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করে। অভিযুক্ত নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বলে সে কখনও রাজাকার ছিল না। এবং সারসা থানার তদানীন্তন ভারপ্রাপ্ত জিনিসপত্র সরায়। অভিযুক্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণে রাজাকার হিসাবে কাজ করা গৃহে অনধিকার প্রবেশ ও চুরি করা অভিযােগ প্রমাণিত হওয়ায় মাননীয় জজ তাকে সাত বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর জনাব হাবিবুর রহমান মামলা পরিচালনা করেন এবং আসামী পক্ষে ছিলেন জনাব লুর রহমান।২৭-১০-৭২ দৈনিক বাংলা দালালীর দায়ে সিলেটের জালালাবাদ সম্পাদকের তিন বছরের কারাদণ্ড

সিলেটে, ২৪শে অক্টোবর সিলেটের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দালালীর অভিযােগে অধুনালুপ্ত মাসিক জালালাবাদের সম্পাদক ও সাবেক এপিপির সংবাদদাতা জনাব রজিউর। রহমানকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান জনাব এম এ মান্নান এ রায় প্রদান করেন। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযােগে বলা হয় মুক্তিসংগ্রাম চলাকালে সিলেট বেতার কেন্দ্রে মুক্তিযােদ্ধাদের স্ক্রিপ, তাদের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করার জন্য ধ্বনী প্রতিধ্বনী নামক কবিতাটি তিনি। নিয়মিত লিখিতেন। তাছাড়া ঐ সময় মুক্তিফৌজ ও মুক্তিযােদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক। ও হানাদারদের ভূয়শী প্রশংসা করে তিনি সংবাদপত্রে নিয়মিত সংবাদ পাঠাতেন। লালাবাজার হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক জনাব রাজিউর রহমান বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রদের স্কুলে এনে স্কুল চালু করেন। তিনি ছাত্রদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন। দেশ স্বাধীন হবার পর রাজিউর রহমানকে দালালীর অভিযােগে গ্রেফতার করা হয়।

২৭-১০-৭২ দৈনিক বাংলা দালালীর দায়ে সিলেটের জালালাবাদ সম্পাদকের তিন বছরের কারাদণ্ড

সিলেটে, ২৪শে অক্টোবর সিলেটের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দালালীর অভিযােগে অধুনালুপ্ত মাসিক জালালাবাদের সম্পাদক ও সাবেক এপিপির সংবাদদাতা জনাব রজিউর। রহমানকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান জনাব এম এ মান্নান এ রায় প্রদান করেন। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযােগে বলা হয় মুক্তিসংগ্রাম চলাকালে সিলেট বেতার কেন্দ্রে মুক্তিযােদ্ধাদের স্ক্রিপ, তাদের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করার জন্য ধ্বনী প্রতিধ্বনী নামক কবিতাটি তিনি। নিয়মিত লিখিতেন। তাছাড়া ঐ সময় মুক্তিফৌজ ও মুক্তিযােদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক। ও হানাদারদের ভূয়শী প্রশংসা করে তিনি সংবাদপত্রে নিয়মিত সংবাদ পাঠাতেন। লালাবাজার হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক জনাব রাজিউর রহমান বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রদের স্কুলে এনে স্কুল চালু করেন। তিনি ছাত্রদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন। দেশ স্বাধীন হবার পর রাজিউর রহমানকে দালালীর অভিযােগে গ্রেফতার করা হয়।

২২-১১-৭২ দৈনিক ইত্তেফাক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা

গণহত্যা ও নারী নির্যাতনে দখলদার বাহিনীর সহিত সহযােগিতার অপরাধ : ড. মালিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঢাকার ১নং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর আমলে ইয়াহিয়া শাহীর সর্বশেষ গভর্নর ডা, আবদুল মােত্তালিব মালেককে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা গণহত্যা নারী নির্যাতন গৃহদাহ লুটতরাজ চালানাে এবং বাংলাদেশে। মুক্তি সংগ্রাম বানচাল করিয়া দেবার ব্যাপারে দখলদার পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনীর সহিত সরাসরি সহযােগিতার দায়ে অভিযুক্ত এবং বাংলাদেশ দণ্ড বিধির ১২১ ধারা মতে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন। গতকাল বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাননীয় বিচারক জনাব আব্দুল হান্নান চৌধুরী রায়দান প্রসঙ্গে বলেন যে, ডা. এম এ মালেকের বয়স ৭০ বছর। তার এই বার্ধক্য এবং তদুপরি অতীতে তাহার রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে তাহাকে বাংলাদেশ দণ্ড বিধির ১২১ ধারা মতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ড প্রদান করা হইল। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযােগ্য যে মাননীয় বিচারক তাহাকে দোষী সাব্যস্ত এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দান করিয়া রায় ঘােষণার সময় দখলদার আমলে বাংলাদেশে জঙ্গী ইয়াহিয়া শাহীর সর্বশেষ তাবেদার গভর্নর এম, এ, মালেকের মুখে ম্লান হাসি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু তাহার চক্ষু দুইটি সজল হইয়া ওঠে। ইহা ছাড়া মাননীয় বিচারক সুদীর্ঘ সাড়ে ৩ ঘণ্টা ব্যাপী তাহার লিখিত ২১ পৃষ্ঠার রায় পাঠ করিয়া শােনাইবার সময় আসামীর কাঠগড়ায় কড়া পুলিশ পরিবেশিত অবস্থায় উপবিষ্ট ডা, মালেককে সর্বক্ষণই খুবই বিষন্ন দেখাচ্ছিল। তাহাকে কখনও বুকে দুই হাত রাখিয়া কখনও কাঠগড়ার কাঠে দুইহাত রাখিয়া রায় শুনিতে দেখা যায়। ৭০ বছর বয়সের ডা. মালেকের চোখমুখ আরক্ত হইয়া উঠিয়া ছিল। তাহার ঠোট দুইটি বার বার কাপিয়া উঠিতেছিল। মনে হয় তিনি যেন কি পাঠ করিতেছিলেন। মাননীয় বিচারকের রায় ঘােষণার সঙ্গে সঙ্গেই ডা, মালেক তাহার কৌসুলিগণ নিজ নিজ আসন হতে উঠিয়া দাঁড়াইয়া এই রায়ের জন্য হাইকোর্টে আপিল করার জন্য বিচারকের অনুমতি প্রার্থনা করেন। দালাল আইনে অভিযুক্ত ডা, মালেকের মামলার রায় শ্রবণের জন্য এই দিন ঢাকা জেলা ও দায়রা জর্জের আদালত কক্ষে দর্শকের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। সাংবাদিক গ্যালারিতে ভারতীয় সংবাদিকসহ কয়েকজন বিদেশী সংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এইদিন আইনজীবীদের স্বাভাবিক ভিড় পরিলক্ষিত হয়। আদালতের আঙ্গিনা ও বাহিরে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালতের সম্মুখে সদর রাস্তা এবং পিছনে কোট হাউজ স্ট্রীটে পুলিশকে দীর্ঘ বাঁশের লাটির ব্যারিকেড নির্মাণ করিয়া এক বাধভাঙ্গা জনস্রোতকে ঠেকাইয়া রাখিতে হয়। আদালতের পার্শের অফিস ভবনের ছাদে, বারান্দায়, এর দরজা জানালার পাশের সহস্র চক্ষু দৃষ্টি বিস্ফোরিত করিয়া দিয়াছিল আদালতের দিকে। মাননীয় বিচারক তার রায়ে বলেন যে বাংলাদেশ দালাল অর্ডারের (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) ১৯৭২ এর ১২১ এবং ১২৪ (ক) ধারানুযায়ী বর্ণিত সকল অভিযােগে ডা, মালেক দোষী সাব্যস্ত হইয়াছে। তাই তাহাকে ১২১ দণ্ডবিধিতে যাবজ্জীবন দণ্ডিত করা হইল।। ১নং তফসিলে বর্ণিত ১২৪(ক) দণ্ড বিধি অথবা দালাল আইনের ৪(খ) ধারা অনুযায়ী তাকে কোন পৃথক সাজা প্রদান করিলাম না। মাননীয় বিচারক বিবাদী পক্ষের কৌসুলিদের উথাপিত যুক্তির উল্লেখ প্রসঙ্গে রায়ে বলেন যে, বিবাদী পক্ষের বিজ্ঞ কৌসুলি বলিয়াছেন যে অভিযুক্ত ডা, মালেক জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যেহেতু আশ্রয়কারী ব্যক্তি অতএব এই আদালতের তাহার বিচার করার এখতিয়ার নাই । মাননীয় বিচারক তার রায়ে বলেন যে বর্তমান মামলায় ডা, মালেক জন্মগত বাঙ্গালী এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক নহেন। এ কথা বলা যায় না। ডা, মালেক গত ১৩ নভেম্বর এই আদালতে পেশকৃত এক দরখাস্তে সুস্পষ্টভাবে স্বীকার করিয়াছেন যে তিনি প্রকৃত অর্থে একজন বাঙ্গালী। বিবাদী পক্ষের বিজ্ঞ কৌসুলি জেনেভা কনভেনশনের আরাে কতিপয় বিধির উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু আমার অভিমত এই যে ডা, মালেক জেনেভা কনভেনশনের বিধান অনুযায়ী একজন আন্তর্জাতিক আশ্রিত ব্যক্তি নহেন। বিবাদী পক্ষের কৌসুলি এই মর্মে আপত্তি উত্থাপন করিয়াছেন যে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশ যে স্বাধীন হইয়াছে তার কোন প্রামাণ্য সাক্ষী নাই। কিন্তু ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিলের ঘোষণায় স্পষ্টভাবে বলা হইয়াছে যে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করা হইয়াছে। অতএব বিবাদী পক্ষের এ যুক্তি ঠিক, নহে। মাননীয় বিচারক তার রায়ে আরাে বলেন মৌখিক প্রামাণ্য সাক্ষ্য হইতে ইহা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ হইতে দখলদার পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেছিল এবং ডা, মালেক গভর্নরের পদগ্রহণ করিয়া দখলদার বাহিনীকে সরাসরি সাহায্য করিয়াছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষ হইতে মত প্রকাশ করা হইয়াছে যে বাংলাদেশের জনসাধারণের কল্যাণের জন্য তিনি এই পদ গ্রহণ করিয়াছিলেন। কিন্তু তিনি জনগণের কল্যাণ করিয়াছেন এমন কোন প্রমাণ এই মামলায় উত্থাপন করেন নাই। পক্ষান্তরে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণে ইহা প্রমাণ হয় যে, তিনি মুক্তিবাহিনীকে ধ্বংস ও দখলদার বাহিনীর হস্ত শক্তিশালী করার জন্য জনসাধারণকে উস্কানি দিয়াছিলেন। তিনি রাজাকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছিলেন। এই রাজাকারগণ দখলদার বাহিনীকে গণহত্যা এবং মুক্তিবাহিনী ধ্বংস করার কাজে সাহায্য করিয়াছে । এতদ্ব্যতীত তিনি কয়েকটি ভাষণে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টির প্রয়াস পাইয়াছেন। সাক্ষ্য হইতে ইহা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশে বেআইনী দখল অব্যাহত রাখার ব্যাপারে অভিযুক্ত ডা, মালেক দখলদার বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির জন্য সাহায্য এবং সমর্থন জ্ঞাপন করিয়াছেন। তদুপরি এমন কোন আইনের প্রয়ােজনে তিনি গভর্নরের পদ কিম্বা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিশেষ সহকারীর পদ গ্রহণ করেন নাই। ডা, মালেক তদন্তকারী অফিসারের নিকট বলিয়াছেন যে তিনি জনগণকে সাহায্য করার জন্য গভর্নরের পদ গ্রহণ করিয়াছিলেন। কিন্তু তিনি এ ধরনের কোন প্রমাণ দেখাইতে পারেন নাই। বিবাদী পক্ষের কৌঁসুলি বলিয়াছেন যে দালাল অর্ডিন্যান্স একটি খারাপ আইন এবং তাহা সর্বনিম্ন সাজা নির্দিষ্ট করিয়া দিয়া এই আদালতের ক্ষমতা কাড়িয়া লইয়াছে। কোন অপরাধের জন্য সর্বনিম্ন সাজা নিরূপণ সূচক ইহাই কেবল বিশ্বের একমাত্র আইন নহে। এমনকি আমাদের ফৌজদারী। বিধিতেও যাহা বৃটিশ আমলে রচিত হয়েছিল। তাহাতেও সর্বনিম্ন সাজা নির্দিষ্ট
রহিয়াছে । উদাহরণ স্বরূপ বাংলাদেশ ফৌজদারী বিধির ৩০৩ ধারা উল্লেখ করা যাইতে পারে। এই আইনে সর্বনিম্ন সাজা নির্দিষ্ট রহিয়াছে। সুতরাং যে স্থলে বর্তমান ফৌজদারা বিধিও যুগ যুগ ধরিয়া ভালাে আইন বলে বিবেচিত হইয়াছে। সে স্থলে দালাল অর্ডিন্যান্স সর্বনিম্ন সাজা নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় কিভাবে খারাপ আইন হতে পারে তা আমি বুঝি
। উল্লেখ যােগ্য যে এই মামলায় সরকার পক্ষের মােট ২৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ইহা ছাড়া মামলায় প্রামাণ্য সাক্ষ্য হিসাবে একশত দলিল পেশ করা হয়। এই মামলায় সরকার পক্ষে ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধপরাধী মামলার প্রধান। কৌসুলী জনাব সিরাজুল হক। সিনিয়র বিশেষ সহকারী কৌসুলি খােন্দকার মাহবুব হােসেন এবং জনাব আবদুর রাজ্জাক। বিবাদীপক্ষে ছিলেন মেসার্স আতাউর রহমান। খান, খান বাহাদুর নাজির উদ্দিন আহমেদ, আমজাদ আলী, মনসুর রহমান, হাবিবুর রহমান এবং কাজী শাহাদত হােসেন। রায় ঘােষণার পর ডা, মালেক আদালত কক্ষের পার্শ্বের অপর একটি কক্ষে প্রবেশ করিয়া তাহার কৌসুলিদের সহিত গোপন সলা। পরামর্শ করেন। তাহাকে যখন প্রিজন ভ্যানে করিয়া কড়া পুলিশ প্রহরাধীন জেলা কারাগারে লইয়া যাইতেছিল তখন বাহিরে অপেক্ষামান বিশাল জনতা টিটকারীসূচক দূর দূর ও হৈ-হুল্লা করিয়া দখলদার আমলে বাংলাদেশী জঙ্গী ইয়াহিয়া শাহীর সর্বশেষ গভর্নর ডা, মালেককে বিদায় অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন।

২২-১১-৭২ দৈনিক ইত্তেফাক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা

গণহত্যা ও নারী নির্যাতনে দখলদার বাহিনীর সহিত সহযােগিতার অপরাধ : ড. মালিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঢাকার ১নং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর আমলে ইয়াহিয়া শাহীর সর্বশেষ গভর্নর ডা, আবদুল মােত্তালিব মালেককে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা গণহত্যা নারী নির্যাতন গৃহদাহ লুটতরাজ চালানাে এবং বাংলাদেশে। মুক্তি সংগ্রাম বানচাল করিয়া দেবার ব্যাপারে দখলদার পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনীর সহিত সরাসরি সহযােগিতার দায়ে অভিযুক্ত এবং বাংলাদেশ দণ্ড বিধির ১২১ ধারা মতে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন। গতকাল বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাননীয় বিচারক জনাব আব্দুল হান্নান চৌধুরী রায়দান প্রসঙ্গে বলেন যে, ডা. এম এ মালেকের বয়স ৭০ বছর। তার এই বার্ধক্য এবং তদুপরি অতীতে তাহার রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে তাহাকে বাংলাদেশ দণ্ড বিধির ১২১ ধারা মতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ড প্রদান করা হইল। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযােগ্য যে মাননীয় বিচারক তাহাকে দোষী সাব্যস্ত এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দান করিয়া রায় ঘােষণার সময় দখলদার আমলে বাংলাদেশে জঙ্গী ইয়াহিয়া শাহীর সর্বশেষ তাবেদার গভর্নর এম, এ, মালেকের মুখে ম্লান হাসি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু তাহার চক্ষু দুইটি সজল হইয়া ওঠে। ইহা ছাড়া মাননীয় বিচারক সুদীর্ঘ সাড়ে ৩ ঘণ্টা ব্যাপী তাহার লিখিত ২১ পৃষ্ঠার রায় পাঠ করিয়া শােনাইবার সময় আসামীর কাঠগড়ায় কড়া পুলিশ পরিবেশিত অবস্থায় উপবিষ্ট ডা, মালেককে সর্বক্ষণই খুবই বিষন্ন দেখাচ্ছিল।

তাহাকে কখনও বুকে দুই হাত রাখিয়া কখনও কাঠগড়ার কাঠে দুইহাত রাখিয়া রায় শুনিতে দেখা যায়। ৭০ বছর বয়সের ডা. মালেকের চোখমুখ আরক্ত হইয়া উঠিয়া ছিল। তাহার ঠোট দুইটি বার বার কাপিয়া উঠিতেছিল। মনে হয় তিনি যেন কি পাঠ করিতেছিলেন। মাননীয় বিচারকের রায় ঘােষণার সঙ্গে সঙ্গেই ডা, মালেক তাহার কৌসুলিগণ নিজ নিজ আসন হতে উঠিয়া দাঁড়াইয়া এই রায়ের জন্য হাইকোর্টে আপিল করার জন্য বিচারকের অনুমতি প্রার্থনা করেন। দালাল আইনে অভিযুক্ত ডা, মালেকের মামলার রায় শ্রবণের জন্য এই দিন ঢাকা জেলা ও দায়রা জর্জের আদালত কক্ষে দর্শকের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। সাংবাদিক গ্যালারিতে ভারতীয় সংবাদিকসহ কয়েকজন বিদেশী সংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এইদিন আইনজীবীদের স্বাভাবিক ভিড় পরিলক্ষিত হয়। আদালতের আঙ্গিনা ও বাহিরে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালতের সম্মুখে সদর রাস্তা এবং পিছনে কোট হাউজ স্ট্রীটে পুলিশকে দীর্ঘ বাঁশের লাটির ব্যারিকেড নির্মাণ করিয়া এক বাধভাঙ্গা জনস্রোতকে ঠেকাইয়া রাখিতে হয়। আদালতের পার্শের অফিস ভবনের ছাদে, বারান্দায়, এর দরজা জানালার পাশের সহস্র চক্ষু দৃষ্টি বিস্ফোরিত করিয়া দিয়াছিল আদালতের দিকে। মাননীয় বিচারক তার রায়ে বলেন যে বাংলাদেশ দালাল অর্ডারের (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) ১৯৭২ এর ১২১ এবং ১২৪ (ক) ধারানুযায়ী বর্ণিত সকল অভিযােগে ডা, মালেক দোষী সাব্যস্ত হইয়াছে। তাই তাহাকে ১২১ দণ্ডবিধিতে যাবজ্জীবন দণ্ডিত করা হইল।

১নং তফসিলে বর্ণিত ১২৪(ক) দণ্ড বিধি অথবা দালাল আইনের ৪(খ) ধারা অনুযায়ী তাকে কোন পৃথক সাজা প্রদান করিলাম না। মাননীয় বিচারক বিবাদী পক্ষের কৌসুলিদের উথাপিত যুক্তির উল্লেখ প্রসঙ্গে রায়ে বলেন যে, বিবাদী পক্ষের বিজ্ঞ কৌসুলি বলিয়াছেন যে অভিযুক্ত ডা, মালেক জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যেহেতু আশ্রয়কারী ব্যক্তি অতএব এই আদালতের তাহার বিচার করার এখতিয়ার নাই । মাননীয় বিচারক তার রায়ে বলেন যে বর্তমান মামলায় ডা, মালেক জন্মগত বাঙ্গালী এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক নহেন। এ কথা বলা যায় না। ডা, মালেক গত ১৩ নভেম্বর এই আদালতে পেশকৃত এক দরখাস্তে সুস্পষ্টভাবে স্বীকার করিয়াছেন যে তিনি প্রকৃত অর্থে একজন বাঙ্গালী। বিবাদী পক্ষের বিজ্ঞ কৌসুলি জেনেভা কনভেনশনের আরাে কতিপয় বিধির উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু আমার অভিমত এই যে ডা, মালেক জেনেভা কনভেনশনের বিধান অনুযায়ী একজন আন্তর্জাতিক আশ্রিত ব্যক্তি নহেন। বিবাদী পক্ষের কৌসুলি এই মর্মে আপত্তি উত্থাপন করিয়াছেন যে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশ যে স্বাধীন হইয়াছে তার কোন প্রামাণ্য সাক্ষী নাই। কিন্তু ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিলের ঘোষণায় স্পষ্টভাবে বলা হইয়াছে যে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করা হইয়াছে। অতএব বিবাদী পক্ষের এ যুক্তি ঠিক, নহে। মাননীয় বিচারক তার রায়ে আরাে বলেন মৌখিক প্রামাণ্য সাক্ষ্য হইতে ইহা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ হইতে দখলদার পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেছিল এবং ডা, মালেক গভর্নরের পদগ্রহণ করিয়া দখলদার বাহিনীকে সরাসরি সাহায্য করিয়াছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষ হইতে মত প্রকাশ করা হইয়াছে যে বাংলাদেশের জনসাধারণের কল্যাণের জন্য তিনি এই পদ গ্রহণ করিয়াছিলেন।

কিন্তু তিনি জনগণের কল্যাণ করিয়াছেন এমন কোন প্রমাণ এই মামলায় উত্থাপন করেন নাই। পক্ষান্তরে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণে ইহা প্রমাণ হয় যে, তিনি মুক্তিবাহিনীকে ধ্বংস ও দখলদার বাহিনীর হস্ত শক্তিশালী করার জন্য জনসাধারণকে উস্কানি দিয়াছিলেন। তিনি রাজাকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছিলেন। এই রাজাকারগণ দখলদার বাহিনীকে গণহত্যা এবং মুক্তিবাহিনী ধ্বংস করার কাজে সাহায্য করিয়াছে । এতদ্ব্যতীত তিনি কয়েকটি ভাষণে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টির প্রয়াস পাইয়াছেন। সাক্ষ্য হইতে ইহা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশে বেআইনী দখল অব্যাহত রাখার ব্যাপারে অভিযুক্ত ডা, মালেক দখলদার বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির জন্য সাহায্য এবং সমর্থন জ্ঞাপন করিয়াছেন। তদুপরি এমন কোন আইনের প্রয়ােজনে তিনি গভর্নরের পদ কিম্বা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিশেষ সহকারীর পদ গ্রহণ করেন নাই। ডা, মালেক তদন্তকারী অফিসারের নিকট বলিয়াছেন যে তিনি জনগণকে সাহায্য করার জন্য গভর্নরের পদ গ্রহণ করিয়াছিলেন। কিন্তু তিনি এ ধরনের কোন প্রমাণ দেখাইতে পারেন নাই। বিবাদী পক্ষের কৌঁসুলি বলিয়াছেন যে দালাল অর্ডিন্যান্স একটি খারাপ আইন এবং তাহা সর্বনিম্ন সাজা নির্দিষ্ট করিয়া দিয়া এই আদালতের ক্ষমতা কাড়িয়া লইয়াছে। কোন অপরাধের জন্য সর্বনিম্ন সাজা নিরূপণ সূচক ইহাই কেবল বিশ্বের একমাত্র আইন নহে। এমনকি আমাদের ফৌজদারী। বিধিতেও যাহা বৃটিশ আমলে রচিত হয়েছিল। তাহাতেও সর্বনিম্ন সাজা নির্দিষ্ট রহিয়াছে ।

উদাহরণ স্বরূপ বাংলাদেশ ফৌজদারী বিধির ৩০৩ ধারা উল্লেখ করা যাইতে পারে। এই আইনে সর্বনিম্ন সাজা নির্দিষ্ট রহিয়াছে। সুতরাং যে স্থলে বর্তমান ফৌজদারা বিধিও যুগ যুগ ধরিয়া ভালাে আইন বলে বিবেচিত হইয়াছে। সে স্থলে দালাল অর্ডিন্যান্স সর্বনিম্ন সাজা নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় কিভাবে খারাপ আইন হতে পারে তা আমি বুঝি। উল্লেখ যােগ্য যে এই মামলায় সরকার পক্ষের মােট ২৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ইহা ছাড়া মামলায় প্রামাণ্য সাক্ষ্য হিসাবে একশত দলিল পেশ করা হয়। এই মামলায় সরকার পক্ষে ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধপরাধী মামলার প্রধান। কৌসুলী জনাব সিরাজুল হক। সিনিয়র বিশেষ সহকারী কৌসুলি খােন্দকার মাহবুব হােসেন এবং জনাব আবদুর রাজ্জাক। বিবাদীপক্ষে ছিলেন মেসার্স আতাউর রহমান। খান, খান বাহাদুর নাজির উদ্দিন আহমেদ, আমজাদ আলী, মনসুর রহমান, হাবিবুর রহমান এবং কাজী শাহাদত হােসেন। রায় ঘােষণার পর ডা, মালেক আদালত কক্ষের পার্শ্বের অপর একটি কক্ষে প্রবেশ করিয়া তাহার কৌসুলিদের সহিত গোপন সলা। পরামর্শ করেন। তাহাকে যখন প্রিজন ভ্যানে করিয়া কড়া পুলিশ প্রহরাধীন জেলা কারাগারে লইয়া যাইতেছিল তখন বাহিরে অপেক্ষামান বিশাল জনতা টিটকারীসূচক দূর দূর ও হৈ-হুল্লা করিয়া দখলদার আমলে বাংলাদেশী জঙ্গী ইয়াহিয়া শাহীর সর্বশেষ গভর্নর ডা, মালেককে বিদায় অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন।

২৫-১১-৭২ দৈনিক আজাদ। দালালী মামলার রায় : জামাত সদস্যর চার বছর সশ্রম কারাদণ্ড
গতকাল শুক্রবার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক অবৈধ্য ঘােষিত জামায়াতে ইসলামীর সদস্য মাহাবুবুর রহমানকে দালালীর দায়ে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তথাকথিত উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দখলদার বাহিনীর হাতকে জোরদার করার অভিযােগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।
২৬-১১-৭২ দৈনিক বাংলা দালালীর দায়ে জামাত নেতার কারাদণ্ড

দখলদার বাহিনীকে সহযােগিতা করার অপরাধে নিষিদ্ধ ঘােষিত জামাত ইসলামী দলের মাননীয় নেতা এ. জেড, এম, মুর্শেদকে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। কুমিল্লার অতিরিক্ত দায়রা জজ ও কুমিল্লার ১১১ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান কাজী বশির উদ্দিন পাক বাহিনীর দালালীর অপরাধে উক্ত জামাত নেতাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচশত টাকা জরিমানা করেছেন। পাক বাহিনীর দালাল জামাত নেতা মুর্শেদ উপনির্বাচনে পিই-২৪৯ কুমিল্লা নির্বাচনী এলাকা থেকে নাড়িয়ে ছিলেন। দখলদার আয়োজিত উপনির্বাচনে জামাত নেতা মুর্শেদ ১৯৭১ সালের ২১ অক্টোবর তার মনােনয়ন পত্র দাখিল করেছিল ও গৃহীত হয়েছিল।

২৬-১১-৭২ দৈনিক বাংলা দালালীর দায়ে জামাত নেতার কারাদণ্ড

দখলদার বাহিনীকে সহযােগিতা করার অপরাধে নিষিদ্ধ ঘােষিত জামাত ইসলামী দলের মাননীয় নেতা এ. জেড, এম, মুর্শেদকে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। কুমিল্লার অতিরিক্ত দায়রা জজ ও কুমিল্লার ১১১ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান কাজী বশির উদ্দিন পাক বাহিনীর দালালীর অপরাধে উক্ত জামাত নেতাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচশত টাকা জরিমানা করেছেন। পাক বাহিনীর দালাল জামাত নেতা মুর্শেদ উপনির্বাচনে পিই-২৪৯ কুমিল্লা নির্বাচনী এলাকা থেকে নাড়িয়ে ছিলেন। দখলদার আয়োজিত উপনির্বাচনে জামাত নেতা মুর্শেদ ১৯৭১ সালের ২১ অক্টোবর তার মনােনয়ন পত্র দাখিল করেছিল ও গৃহীত হয়েছিল।

২৬-১১-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালালীর অভিযােগে আবদুল মন্নাফের তিন বৎসরের কারাদণ্ড

চট্টগ্রাম, ২৪শে নভেম্বর। চট্টগ্রামের সেশন জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক শেখ মতিয়ার রহমান জনৈক আবদুল মন্নাফকে পাক সৈন্যদের সাথে দালালীর অভিযােগে তিন বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত ও পাঁচশ টাকা জরিমানা করেছেন।

২৬-১১-৭২ দৈনিক ইত্তেফাক দালাল আইনে অভিযুক্ত দখলদার আমলের মন্ত্রী জসিম উদ্দিনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

গতকাল (শনিবার) ঢাকায় দুই নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বিচারক সৈয়দ সিরাজুদ্দিন আহমেদ, ডা. মালেক মন্ত্রিসভার আইন ও পার্লামেন্ট দফতরের মন্ত্রী জনাব জসিম উদ্দিন আহমদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন। বিচারক তাহার রায়ে বলেন, অভিযুক্ত জনাব জসিমউদ্দিন আহমদ মনে-প্রাণে আওয়ামীলীগকে সমর্থন করিতেন। তিনি বহুকাল সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। তাছাড়া তিনি সিলেট বারের একজন সিনিয়র আইনজীবী। তাহার অতীত রাজনৈতিক কার্যকলাপের দিকে লক্ষ্য রাখিয়া তাহার জীবন রক্ষা করা প্রয়ােজন বিধায় আমি তাহাকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিলাম। প্রকাশ, পাকিস্তানের স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার। বরুদ্ধে এক সর্বাত্মক যুদ্ধ চালনার সময় তাহারা এই দেশের কিছু সংখ্যক লােকের সহায়তা চায়। আসামী এই দেশকে পাকিস্তানের শাসনাধীনে রাখার জন্য বর্বর। পাকিস্তানী বাহিনীকে সাহায্য ও সহায়তা প্রদান করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীদের ক্ষেপাইয়া তুলিবার ও সেই সংগ্রামকে নস্যাৎ করিবার জন্য বিভিন্ন স্থানে সভা সমিতি করিয়াছেন এবং বক্তৃতা দিয়া বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ও ঘৃণার সঞ্চার করেন। আসামী মন্ত্রিসভার বৈঠক করিয়া বাংলাদেশ। সমর্থক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার জানা। পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং রাজাকারদের সংখ্যা ১০ লক্ষে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি নিহত রাজাকারদের পরিবার বর্গের মধ্যে খাস জমি বিতরণের ব্যবস্থা করেন।
বিচারক তার রায়ে উল্লেখ করেন, সাক্ষী প্রমণ দষ্টে ইহাই প্রমাণ করে আসামী ইচ্ছাকৃতভাবে মালিক মন্ত্রিপরিষদের যােগদান করিয়া দখলদার বাহিনীকে সাহায্য করেন ও নানা স্থানে সভা সমিতি করিয়া বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ও ঘৃণার সঞ্চার করেন। বিচারক সরকার পক্ষের কৌসুলির সাথে একমত হইয়া বলেন, আসামী এই দেশে পাক সামরিক শাসক প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্য তথাকথিত উপ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিয়াছিলেন। বিচারক আসামীকে জেলখানায় প্রথম শ্রেণীর মর্যদা প্রদান করেন। সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন স্পেশাল পিপি জনাব এম. এ. সােবহান। তাহাকে সাহায্য করেন স্পেশাল পি পি মেসার্স ফয়জদ্দিন ভূইয়া ও এ. বি. এম, রফিকুল্লা। আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মেসার্স খান বাহাদুর নাজির উদ্দিন ও আহাম্মদ আলী মণ্ডল এডভােকেট।

২৭-১১-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালাল বশিরের তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড
কুমিল্লা, ২৫শে নভেম্বর সম্প্রতি কুমিল্লার ১১১নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান সহকারী সেশন জজ জনাব কাজী বশির উদ্দিন পাকবাহিনীর সাথে সহযােগিতার ‘ অভিযােগে বেআইনী যােঘিত জামাতে ইসলামীর জনৈক নেতা এ জেড এম মাের্শেদকে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই শত টাকা জরিমানা করেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি জরিমানার টাকা পরিশােধ না করে তবে তাকে আরও পনের দিন কারাদণ্ড ভােগ করতে হবে। বাংলাদেশে হানাদার বাহিনীর শাসন স্থায়ী করার জন্য যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল অভিযুক্ত মাের্শেদ পিই- ২৪৯ কুমিল্লা- ১১ কেন্দ্র থেকে সেই উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। তিনি ২১-১০-৭১ইং তারিখে প্রাদেশিক পরিষদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনােনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তার মনােনয়নপত্রও গৃহীত হয়েছিল। অভিযােগে বলা হয় যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করে হানাদার বাহিনীর বাংলাদেশকে জোরপূর্বক শাসন করার কাজে সহায়তা করেছেন। মাননীয় বিচারক অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ১৯৭২ইং সালের বিশেষ দালাল ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ আইনের ২/১১ (ডি), ৪ বি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন। মামলায় সরকার পক্ষে ছিলেন স্পেশাল পিপি এড. জনাব আবদুল ওয়াদুদ এবং আসামী পক্ষে ছিলেন জনাব এড. আবু ইউসুফ ও এ এফ এম আবদুল মালেক।

২৯-১১-৭২ দৈনিক বাংলা খুনী রাজাকার আবদুর রহমানের মৃত্যুদণ্ড (দালালী মামলায়)

গতকাল মঙ্গলবার ২৮শে নভেম্বর ঢাকার ১২নং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল জ জনাব শেখ খেলাশেদ আলী খুনী রাজকার আৰু বহনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন :
রাজাকারের বিরুদ্ধে নারায়নগঞ্জ পৌরসভার কর্মচারী গােলাম মােস্তফাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার জন্য পুলিশ চার্জসীটে প্রদান করে। মামলায় বাদী পক্ষের অভিযোগ করা হয় যে বিগত হানাদার আমলে নভেম্বর মাসের ১৮ তারিখে গােলাম মােস্তফার গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে তার বাড়ীর চারিপার্শের জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করতে বলে। নিহত মােস্তফা বলে ইফতারের সময় হয়ে গেছে পরের দিন সে জঙ্গল কাটবে। এতে রাজাকাররা ক্ষুদ্ধ হয়ে তাকে প্রহার করতে করতে মাটিতে ফেলে দেয় এবং আসামী তাকে গুলি করে। গ্রামের লােক ও আত্মীয়-স্বজন গুলির শব্দে পালিয়ে যায় । তার পরের দিন বাদিনী দেখতে পায় যে তার স্বামীর মৃতদেহ শেয়াল কুকুরে খেয়ে ফেলেছে। গৃহপালিত কুকুর প্রভুর মাথাটি বাড়ীর দরজার সামনে রেখে পাহারা দিচ্ছে। দেশ শত্রুমুক্ত হবার পর নিহত মােস্তফার স্ত্রী হামিদা বেগম নারায়ণগঞ্জে আসামীকে রিক্সা চালাতে দেখে কৌশলে তার রিক্সায় চেপে স্থানীয় পরিষদ জনাব আব্দুস সত্তার ভূইয়ার বাড়ীতে নিয়ে যেয়ে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে। তারপর আসামীকে আটক করে থানায় চালান করা হয়। আসামী সরকার পক্ষের নিযুক্ত কৌসুলি সকল অভিযােগ অস্বীকার করে। মাননীয় স্পেশাল জজ সাক্ষ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে তার রায়ে উল্লেখ করেন মৃত্যুদণ্ড ছাড়া কোন লঘুদণ্ড প্রদানে কোন মানবীয় কারণ তিনি খুঁজে পাচ্ছে না। সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র স্পেশাল পিপি খন্দকার মাহবুব হােসেন ও তাকে সহায়তা করেন এ বি এম রফিকুল। আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সরকার নিযুক্ত কৌসুলি সৈয়দ আনােয়ার কামাল।

২-১২-৭২ দৈনিক ইত্তেফাক ৩ জন আল বদরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

জেলা’ সেশন জজ ১নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সভাপতি জনাব এ জেড এম হাফিজুল আলম স্বেচ্ছায় আল বদর হিসাবে নাম ভুক্তির দায়ে ৩ ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। তাদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করিয়া জরিমানা করা হইয়াছে। দণ্ড প্রাপ্ত আল বদর তিনজন হইল মাসুদ আলম, শামসুল আলম ও শহিদুল্লাহ। মামলার বিবরণে প্রকাশ অভিযুক্ত ৩ ব্যক্তি স্বেচ্ছায় পাক সেনাবাহিনীর অধীনে আলবদর হিসাবে নিজেদের নাম তালিকা ভূক্ত করে ও বাংলাদেশে তাহাদের বেআইনী দখল কায়েম রাখার ব্যাপারে সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতা করে। অভিযুক্তরা মুক্তিসেনাদের সনাক্ত করিয়া হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিত। অভিযুক্তরা নিজেরাও অনেক বাঙ্গালীকে হত্যা করেছে। অভিযুক্ত ৩ ব্যক্তি বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর জনাব গােলাম মােস্তফা ও আসামী পক্ষের সমর্থন করেন এড. জনাব মাজহারুল ইসলাম।

১২-১২-৭২ দৈনিক সংবাদ দালাল লুত্যর রহমানের তিন বছরের কারাদণ্ড

মুক্তিযুদ্ধের সময় দখলদার বাহিনীর সাথে সহগিতা করার জন্য সম্প্রতি পটুয়াখালীর বিশেষ আদালত জনৈক লুৎফর রহমান নামক এক ব্যক্তিকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। খবরে প্রকাশ উক্ত আসামী শান্তি কমিটির সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। খবরে আরাে প্রকাশ উক্ত লুৎফর রহমান যুদ্ধ চলাকালিন পাকবাহিনীর সহায়তায় হত্যা লুঠ ও অগ্নি সংযােগ করেছিল।

১৩-১২-৭২ দৈনিক আজাদ দুইজন রাজাকারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
গতকাল শনিবার ২নং আদালতের বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি জনাব এম আই হােসেন বাংলাদেশের দণ্ড বিধির ৩০২, ৩৬৪, ৩২৪, ধারা এবং ১৯৭২ সালের দালাল আইন ২/ক ও ২ক/খ ধারা মতে দোষী সাব্যস্ত করে জনৈক মােসলেম উদ্দিন মােল্লা ও আব্দুল ফতেহ ওরফে ফতেহ আলী নামক দুইজন রাজাকারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এছাড়া উভয়কে ৫০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে ছয় মাস কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। মামলার বিবরণে জানা গেছে আসামী বিগত স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাকহানাদার বাহিনীর সহযােগিতায় ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর মাগুরা মহাকুমার শ্রীপুর থানার খামারপাড়া গ্রামের অধিবাসী জনৈক সন্তোষ কুমার সরকারের গৃহ ঘেরাও করে অমুল্য কুমার ও কিরণ চন্দ্র সরকার নামক দুই ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে থানায় নিয়ে যায়। পরে পাক হানাদার বাহিনীর লােকেরা তাদের দুইজনকে থানা সংলগ্ন নদীতে নামিয়ে রাইফেলের সাহায্যে গুলি করে। ফলে কিরণ চন্দ্র ঘটনা স্থলে মারা যায়। অমূল্য চন্দ্রের হাতে গুলি। লাগলে পাকহানাদার বাহিনী তাকে মৃত ভেবে চলে গেলে কোন রকমে সে আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হয়। আসামীরা নিজেদের নির্দেষ দাবী করলেও মাননীয় বিচারপতি। উভয়কে দোষী সাব্যস্ত করে উল্লেখিত দণ্ড প্রদান করেন।

১৪-১২-৭২ দৈনিক আজাদ। দিনাজপুরে দালালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

দিনাজপুর, ১১ই ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা, লুট, নারী ধর্ষণ ও হত্যার অভিযােগে দারফরু মােহাম্মদ ওরফে আয়াদিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

১৪-১২-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ আরেকজন দালালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

দিনাজপুর, ১২ ডিসেম্বর পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর সাথে যােগ সাজশ এবং লুটতরাজ, ধর্ষণ, অগ্নি সংযােগ ও হত্যার সাথে নিজেকে সক্রিয়ভাবে জড়িত করার জন্য জনৈক দারাঙ্গারু মােহাম্মদ ওরফে আইউদ্দীনকে জেলা ও দায়রা জজ জনাব এম এ আহাদ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। অভিযুক্তকে দুশ টাকা জরিমানাও করা হয়।

১৯-১২-৭২ দৈনিক ইত্তেফাক দালালীর অভিযােগে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড
পটুয়াখালী, ১৭ ডিসেম্বর পটুয়াখালীর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক জনাব সিরাজুল মাওলা দালাল আইনে আটক লতিফুর রহমান ওরফে কাঞ্চনকে পাক বাহিনীর সহিত সহযােগিতার অপরাধে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন।

২৩-১২-৭২ দৈনিক ইত্তেফাক খুলনায় দালাল আইনে এক ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
খুলনা, ২২শে ডিসেম্বর স্থানীয় বিশেষ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান জনাব কে. এফ. রহমান বাংলাদেশ দালাল আইনের ৩০২ ও ৩৬৪ ধারায় এস, এম, সােলেমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

২৪-১২-৭২ দৈনিক ইত্তেফাক দালালীর অভিযােগে ৩ বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড

কুড়িগ্রাম রংপুর ২২শে ডিসেম্বর বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত সৈয়দ আলী এবং আবুল মহসিন প্রামানিক নামক দুই ব্যক্তিকে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাক দখলদার বাহিনীর সহিত দালালী করার অভিযােগে দোষী সাব্যস্ত করিয়া ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করিয়াছেন।

২৪-১২-৭২ দৈনিক ইত্তেফাক দালালীর অভিযােগে ৩ বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড

কুড়িগ্রাম রংপুর ২২শে ডিসেম্বর বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত সৈয়দ আলী এবং আবুল মহসিন প্রামানিক নামক দুই ব্যক্তিকে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাক দখলদার বাহিনীর সহিত দালালী করার অভিযােগে দোষী সাব্যস্ত করিয়া ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করিয়াছেন।
সূত্রঃ সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ১৯৭১ -প্রত্যয় জসীম
২৫-১২-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালালীর অভিযােগে আবুল হােসেনের ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড
রংপুর, ২৪শে ডিসেম্বর রংপুর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেআইনী ঘােষিত | পি,ডি,পির সাবেক জেলা প্রধান আবুল হোসেন মিয়াকে লিগত স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর সাথে সহযােগিতার পরবে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড নিয়েছেন। জানা গেছে যে, বদরগঞ্জ থানাধীন একারচলির আবুল হোসেন মিয়া রংপুর জেলার শান্তি কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন এবং জেলা সদর থেকে ১৩ মাইল দূরে একারচলিতে ১শ জনের একটি রাজাকার দল গঠন করেছিলেন। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ঘােষিত উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২৫-১২-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালালীর দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
বগুড়া, ২৪শে ডিসেম্বর দালাল বিচারের জন্য গঠিত বগুড়ার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক জনাব একে এম হরিজুল আলম দালাল আইনের ১১(ক) ধারা এবং বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৩০২/৩৪ ধারা অনুযায়ী আব্দুর রহিমকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং তার সহকারী অপর পাঁচজনকে তিন বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে পাঁচ শত টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরাে ৬ মাস সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। এই মামলায় জড়িত অপর ছয় ব্যক্তিকে প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ উক্ত আবদুর রহিম জয়পুর হাট থানার অধিবাসী। জনৈক দুইমুদ্দিনের ছেলে মুক্তিবাহিনীতে গেলে আসামী আবদুর রহিম ২০/২৫ জন খান সেনাকে সঙ্গে নিয়ে ছইমুদ্দিনের বাড়ীতে যায় এবং তাকে ধরিয়ে দেয়। পরে খান সেনারা পক্ষে নিয়ে এসে দুইমুদ্দিনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মামলা পরিচালনা করেন সরকারি ক্যাম্পে জনাব হামেশ আলী খান জাহেদী এবং আসামী পক্ষে জনাব মুজিবর রহমান এডভােকেট।
২৫-১২-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ যশােরে দু’জন রাজাকারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
যশোর, ২২শে ডিসেম্বর সম্প্রতি স্থানীয় ২নং বিশেষ আদালতের বিচারক জনাব এম. আই, হােসেন বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৬৪, ৩২৪ ধারা এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ দালাল আইনের ২ ও ২/খ ধারা মতে দোষী সাব্যস্ত করে জনৈক মোসলেম উদ্দিন মােল্লা ও আবদুল ফতেহ ওরফে ফতেহ আলী নামক দু’জন রাজাকারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। আসামীদ্বয় নিঙদেরকে নির্দোষ বলে। দাবী করে। মাননীয় বিচারক উভয়কেই দোষী সাব্যস্ত করে উল্লেখিত দণ্ড প্রদান।

৩১-১২-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ আক্তার গুণ্ডার ফাঁসি
গতকাল শনিবার ঢাকার এক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সময় ঢাকার বুকে হত্যার এক নায়ক মীরপুরের আক্তার গুণ্ডার ফাঁসির হুকুম দিয়েছেন। যে মামলায় তার ফাঁসির হুকুম হয়েছে তাকে সে রাইফেলের গুলিতে একই সময়ে তার এলাকার ১২নং মিরপুরের সেতাব হাজী, শেফাত উল্লাহ ও আহম্মেদ মিয়া নামক তিন জনকে হত্যা করেছে বলে অভিযােগে প্রমাণিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এ ধরনের নরহত্যার আরাে একাধিক মামলা রয়েছে বলে প্রকাশ। গত বছর ৮ই এপ্রিল বাঙ্গালী জাতির জীবনের অন্ধকারময় দিনগুলােকে আক্তার গুণ্ডা ওরফে মােঃ আক্তার অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয়ে তিনজন পাক সৈন্য ও ১০/১২জন অবাঙ্গালী দুষ্কৃতিকারী নিয়ে সেতার হাজীর বাড়ীতে হানা দেয়। তারা সেতার হাজীর ঘর থেকে ২৫০০০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ায় উক্ত তিনজন চিৎকার করে বাধা দিতে চায়। আক্তার গুণ্ডা তখন তাদের উপর গুলি ছােড়ে এবং তাদের হত্যা করে। ভীত সন্ত্রস্ত সেতার হাজীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ও এলাকার কতিপয় লােক নিকটস্থ ঝােপে ঝাড়ে আশ্রয় নেয়। এবং এই অমানুষিক হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করে। আসামী নিজেকে নির্দোষ বলে দাবী করে বলে সে সময় সে করাচিতে ছিল। ট্রাইব্যুনালে এই বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

৩১-১২-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দালাল মন্ত্রী মুজিবুরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
ডা, মালেকের পুতুল মন্ত্রীসভার তথ্য ও বেতার মন্ত্রী জনাব মুজিবুর রহমানকে গতকাল শনিবার ঢাকার এক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। সরকার পক্ষ তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযােগ প্রমাণ করেছেন তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ট্রাইব্যুনাল তার অতীতের মানবসেবামূলক কাজ কর্মের কথা বিবেচনা করে লঘুদণ্ড প্রদান করেছেন। সরকার পক্ষের অভিযােগে বলা হয় গত বছর ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করা হয়। এর পর বাঙ্গালী জাতি দীর্ঘ নয় মাস
পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনীর বিরুদ্ধে এক প্রচণ্ড মুক্তি সংগ্রামে লিপ্ত থাকে। পাক সেনারা এ দেশকে তাদের করতলগত রাখার জন্য ২৫শে মার্চ থেকে বাঙ্গালীদের উপর ব্র নির্যাতন চালিয়ে যায়। বাংলাদেশেরই কতিপয় কু-সন্তান এ কাজে তাদের দোসর হিসাবে কাজ করে। আসামী তাদের অন্যতম। সরকার পক্ষ যে সব অভিযােগ প্রমাণ করেছেন তা হচ্ছে এই যে, আসামী মুক্তি সংগ্রাম চলাকালে গত বছর ৮ই অক্টোবর মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে শপথ গ্রহণ। করেন। তিনি বক্তৃতা বিবৃতি ও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হানাদার বাহিনীর যুদ্ধে সহায়তা করেন এবং বাংলাদেশের আইন সঙ্গত সরকারের বিরুদ্ধে জনমনে বিদ্বেষ সৃষ্টির কাজে লিপ্ত থাকেন। ঐ একই মাসে তৎকালীন জাতীয় পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য তিনি তথাকথিত উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হন। ফলে হানাদার বাহিনীর হাত আরাে শক্তিশালী। হয়ে উঠে। আসামী নিজেকে নির্দোষ দাবী করেন এবং বলেন যে, বাংলাদেশী আইনের চক্ষে এবং সত্যিকার অর্থে গত ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন হয়েছে। তার পূর্বে সংঘটিত অপরাধের জন্য তার বিচার চলে না। তাছাড়া তিনি দাবী করেন যে, তিনি সরল বিশ্বাসে সে এবং জনসেবার উদ্দেশ্যে নিয়ে মন্ত্রিসভায় যােগ দিয়েছিলেন। এবং উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মনে অপরাধের কোন উদ্দেশ্য ছিল না। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারী মামলা চলে না। ট্রাইব্যুনাল তার বক্তব্য অগ্রাহ্য করেছেন। ট্রাইব্যুনালের সভাপতি শ্রী শীব্রত বড়ুয়া অত্যন্ত দ্রুততার সাথে মামলার রায় পড়ে যান। এক পর্যায়ে আসামী শুধুমাত্র দণ্ডাদেশ সম্পর্কিত অংশটুকু পড়লে চলবে এই বলে। ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানান। তখন তাকে কিছুটা বিচলিত মনে হয় এবং তার চক্ষু রক্তবর্ণ ধারণ করে। দণ্ডাদেশের পর তাকে জিজ্ঞাসা করি: রায় শুনে আপনি কি আশ্চর্যান্বিত’? তিনি জবাব দেন “মােটেই না”। তিনি বলেন যে, তিনি সুপ্রীম কোর্টে আপিল করবেন এবং সেখানেও নিজেই স্বপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ করবেন।

৫-১-৭৩ দৈনিক আজাদ দালালীর দায়ে আরাে একজনের ৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড

আজ কালিগঞ্জ থানার অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে ১৯৭১ সালের জাতীয় পরিষদে তথাকথিত উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করার দায়ে ৮ হাজার টাকা জরিমানা সহ ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হইয়াছে। একজন সহকারী দায়রা জজকে নিয়ে। বিশেষ আদালত গঠন করা হয়। আদালত আসামীর বিরুদ্ধে অভিযােগ এনে বলেছেন যে, এ ধরনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানী শাসন। কায়েম রাখার ব্যাপারে দখলদার বাহিনীর হাতকে শক্তিশালী করেছিলেন। এটা বাংলাদেশ দালাল আইনের অন্তর্ভূক্ত বলে আদালত জানান। অর্থমন্ত্রী জনাব। তাজউদ্দিন আহমদ যখন মুজিবনগর থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বিপ্লবী। সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তখন অধ্যাপক ইউসুফ আলী তার নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

৭-১-৭৩ বাংলার বাণী খলিলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
গতকাল শনিবার ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের জজ জনাব মি, এস, বি, বড়য়া সাবেক পিপিআই’র চীপ রিপাের্টার ও কলামিস্ট এডকাস্টিং সার্ভিসের সংবাদদাতা সৈয়দ নাজমুল হককে অপহরণের দায়ে মােঃ খলিলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। দোষী সাব্যস্ত খলিলের বয়স ১৮ বছর এবং সে একজন রাজাকার ছিল।

৯-১-৭৩ দৈনিক আজাদ ডা, মালিকের আরেক মন্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গর্ভনর ডা, মালিকের মন্ত্রী সভার সদস্য পূর্তমন্ত্রী মােশারেফ হােসেনকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের দখলদার বাহিনী কর্তৃক যুদ্ধ পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বিচারপতি শীত বড়ুয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়াছেন। আসামীকে পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনীর সাথে যােগসাজসের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কিন্তু বিচারক এই অপরাধের জন্য পৃথক সাজা দিতে বিরত থাকেন। আসামী নির্দোষ বলে যে অজুহাত দেখিয়াছেন বিচারপতি তা বাতিল করে বলেন যে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর কবল থেকে অনেক বাঙ্গালীর জীবন বাঁচিয়েছে বলে আসামী যে সাক্ষী উপস্থিত করেছেন তা থেকে আসামীর বিরুদ্ধে অপরাধ বাতিল হয় না।

৯-১-৭৩ বাংলার বাণী দালাল মন্ত্রী মােশারফ হােসেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পাকিস্তানী আমলের গভর্নর ডা, এ, এস, মালিকের মন্ত্রী সভার পূর্ত ও বিজলী ও সেচ মন্ত্রী একে এম মােশাররফ হােসেনকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে সহযােগিতা দানের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান। করা হইয়াছে।

২০-১-৭৩ দৈনিক ইত্তেফাক দালালীর দায়ে নাওয়াজেশ আহমেদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
ঢাকার, ৬নং স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের জজ জনাব মােস্তাক আহমেদ চৌধুরী সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা, এম, এ মালেক মন্ত্রিসভার খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রী জনাব নওয়াজেশ আহমেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দালালী ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কার্যকলাপের অভিযােগ সরকার পক্ষ আসামীর বিরুদ্ধে এই মামলা আনয়ন করেন। আসামী পক্ষে জনাব মােঃ আজমের সাথে ছিলেন জনাব নজরুল হক। বাদী পক্ষে ছিলেন স্পেশাল পিপি জনাব আবদুর রাজ্জাক খান ও জনাব আশরাফ উদ্দিন আহমেদ।

২৬-১-৭৩ দৈনিক আজাদ দুজন রাজাকারের সশ্রম কারাদণ্ড
কুমিল্লা, ২৪শে জানুয়ারি কুমিল্লা বিশেষ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও জেলা অতিরিক্ত জজ দু’জন রাজাকারকে ৫ বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে দালালীর অভিযোেগ আনা হয়েছে।

৫-২-৭৩ দৈনিক ইত্তেফাক দালালীর অপরাধে সাবেক পুলিশ ইন্সপেক্টরের ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড
পাবনা-সিরাজগঞ্জ থানার সাবেক সহকারী পুলিশ ইন্সপেক্টর জনাব আব্দুস সােবহানকে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনীর সহিত সহযােগিতা করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করিয়া পাবনা জেলার দায়রা জজ ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ হাজার টাকা জরিমানা। অনাদায়ে আরাে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন।

৭-২-৭৩ দৈনিক ইত্তেফাক দালালী মামলায় সােলায়মানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
গতকাল ঢাকার ১২নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের জজ জনাব শেখ খােরশেদ আলী ডা. মালিক কেবিনেটের সাবেক শ্রম, সমাজ কল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী জনাব এ. এস, এম, সােলাইমানকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ শত টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে দুই মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ, ঘৃণা সঞ্চার করার দায়ে জনাব সােলাইমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচশত টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে দুই মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ট্রাইব্যুনাল তাহাকে তথাকথিত উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করার দায়ে ও তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই শত টাকা। জরিমানা অনাদায়ে আরাে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে। মাননীয় জজ আসামীকে পৃথক পৃথক অপরাধের জন্য তাহাকে আলাদা আলাদা দণ্ড প্রদান করেন। এই তিনটি অভিযােগের জন্য দণ্ডাদেশ একই সঙ্গে কার্যকরী হবে জরিমানা অনাদায়ে প্রদও সাজা পূর্ববর্তী সাজার সহিত যুক্ত হবে। বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটার জনাব খলিলুর রহমান সরকার পক্ষ ও জনাব মােহাম্মদ আজম জনাব সােলাইমানের পক্ষ সমর্থন করেন ।

৯-২-৭৩ দৈনিক পূর্বদেশ দালালীর দায়ে ১০ বছর কারাদণ্ড
পাবনা, ১০ই জানুয়ারী পাবনা ২নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি জনাব কবিরুদ্দিন আহম্মদ দালালীর অভিযােগে অভিযুক্ত সদর মহাকুমার আটঘরিয়া থানার সঞ্চয়পুর গ্রামের জনৈক আবদুল গফুর (পিতা সাদেল প্রামাণিক) ও কুষ্টিপাড়া গ্রামের আবদুস সেলিমকে ৩৯৬ ও ৪৩৬ বাংলাদেশ দণ্ডবিধি অনুসারে প্রত্যেককে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। মামলার বিবরণে জানা। যায় যে, বিগত বাংলা ১৩৭৮ সালের বৈশাখ মাসে আবদুল গফুর আব্দুস সেলিম ও আরাে দশ বারাে জন ডাকাত রাইফেল ও অন্যান্য মারাত্মক অস্ত্রসহ সঞ্চয়পুর গ্রামে জনৈক জসিম উদ্দিনের বাড়ীতে হানা দেয় এবং টাকা পয়সা ও অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে যায়। ডাকাতগণ জসিম উদ্দিনের কপালে ছুরিকাঘাতও করে। ডাকাত দল যাওয়ার সময় গুলি ছােড়ে এবং সেই গুলিতে জসিম উদ্দিনের কন্যা ময়াজান নিহত হয় এবং বড় ছেলে আবুল হােসেন আহত হয়। বাড়ীর লােকেরা ডাকাতদের মধ্যে গফুর ও সেলিমকে চিনতে পারে। বিগত ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৩ তারিখে গফুর হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যদের। সাথে এসে তিনটি গ্রামের ৩০০ বাড়ী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এই গ্রামগুলাে হল সঞ্চয়পুর, কুষ্টিপাড়া ও অভিরামপুর। আসামীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দালালী আইনের ১১ (ক) ও (খ) ধারাতেও অভিযােগ আনা হয় ও তা প্রমাণিত হয়। সর্বমােট ১১জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন প্রধান বিশেষ কৌসুলি জনাব গােলাম হাসনায়েন এডভােকেট ও আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জনাব আবুল কাশেম এড়।
১১-২-৭৩ দৈনিক আজাদ আরেকজন দালাল মন্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
ঢাকার একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গতকাল শনিবার সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা, এ এম মালেকের মন্ত্রী সভার স্থানীয় স্বায়ত্ত্ব শাসন এবং মৌলিক গণতন্ত্র দফতরের মন্ত্রী। মাও, মােঃ ইসহাককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর সাথে সহযােগিতা করার দায়ে তাকে এই দণ্ড দেয়া হয়। দখলদার বাহিনীর সাথে দালালী ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার জন্য তাকে আলাদাভাবে কোন শাস্তি দেয়া হয়নি। যদিও তিনি এই অভিযােগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
১৪-৩-৭৩ দৈনিক পূর্বদেশ দালাল আইনে সাদ আহমেদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
কুষ্টিয়ার সেশন জজ এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সদস্য মি, আর, কে, বিশ্বাস ১৯৭২ সালের বিশেষ দালাল আইনে অভিযুক্ত সাদ আহমেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। করেছেন। গতকাল মহামান্য জজ অভিযুক্ত সাদ আহমেদের শাস্তি প্রদানকালে বলেন যে অভিযুক্ত সাদ আহমেদকে আরাে বেশী শাস্তি দেয়া উচিত ছিল কিন্তু এই জেলার একজন সফল আইনজীবী হিসাবে অতীতের কাজের জন্য তাকে যাবজ্জীবন শাস্তি দেয়া। হলাে। সরকারি পক্ষের কৌঁসুলি সাদ আহমেদের বিরুদ্ধে জেলা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে অধিকৃত বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে সহযােগিতার অভিযােগ আনেন। অভিযুক্ত কুষ্টিয়া ১১ নির্বাচনী এলাকা থেকে সাজানাে উপনির্বাচনে একজন প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এছাড়া অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জোর করে অপহরণ ও নরহত্যার অভিযােগ আনা হয়। অভিযুক্ত নিজেকে নির্দোষ বলে দাবী করেন। কুষ্টিয়ার প্রধান বিশেষ সরকারি কৌসুলী জনাব আমজাদ হােসেন সরকার পক্ষের উকিল ছিলেন, এবং অভিযুক্ত সাদ। আহমেদ নিজেই নিজের পক্ষ সমর্থন করেন তাকে সাহায্য করেন এড. জনাব জিলুর। রহমান এবং জনাব এস এম এমদাদ হােসেন।

২৪-৩-৭৩ দৈনিক ইত্তেফাক পাক দালালের ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড

১৮ই মার্চ, কুমিল্লা : কুমিল্লার ত্রাস সৃষ্টিকারী ও বহু নিরীহ লােকের প্রাণহানির জন্য। দায়ী বর্বর পাক বাহিনীর দোসর কুখ্যাত দালাল ফুল মিয়াকে বিভিন্ন ধারায় আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কুমিল্লার অতিরিক্ত দায়রা জজ ও কুমিলার ২নং দালাল বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি জনাব কাজী বশির উদ্দিন উক্ত দলালকে বাংলাদেশের ফৌজদারী দণ্ড বিধির ৩৮০ ধারার সাথে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ দালাল বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদেশের ২ ও ১১ (বি) ধারায়ও বাংলাদেশ ফৌজদারী দণ্ড বিধির ৩০৯/১৪২ ধারার সহিত ১৯৭২ সনের বাংলাদেশ দালাল বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদেশের ২ ও ১১ (বি) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন এবং মােট আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দেড় হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরে দেড় বছর সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন স্পেশাল পিপি জনাব শাহ আব্দুল অদুদ ও বিবাদীর পক্ষে জনাব মােহাম্মদ আলী ও আলী ইমাম এড, তাহার পক্ষে দুইজন সাফাই সাক্ষ্য দেন।

২৯-৩-৭৩ দৈনিক বাংলা দালালী ও হত্যার দায়ে খুলনায় দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
মুসলিম লীগ নেতা বদর ও অপর এক ব্যক্তিকে হত্যা ও দালালীর দায়ে গতকাল এখানে ১নং বিশেষ আদালতের বিচারপতি জনাব কে এফ আকবর যাবজ্জীবন করাদণ্ড প্রদান করেছেন। উক্ত আদালত একই মামলায় অপর তিন জনকে দালালীর দায়ে প্রত্যেককে ছয় বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। আতাহার আলী খান ও অপর চার ব্যক্তিকে দালালী ও হত্যার দায়ে গ্রেফতার করা হয়। দুবার এম, এন. এ. পদে নির্বাচিত আতাহার আলী খান মহকুমা কনভেনশন মুসলিম লীগের সেক্রেটারি ছিলেন। অভিযােগে বলা হয় আতাহার আলী খানের নির্দেশে সফদার আলী স্বাধীনতা যুদ্ধকালে মােড়লগঞ্জের দায় ভাগ্যকাটির শ্রী বাসুদেব গুহকে প্রকাশ্য দিবালােকে হত্যা করে। শ্রী বাসুদেব গুহ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
৬-৪-৭৩ বাংলার বাণী দালালীর দায়ে জেল ও জরিমানা
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার সাবেক শান্তি কমিটির সেক্রেটারি শরীফ রফিক উদ্দিন আহম্মদ এবং সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ব্যাপারী ও আব্দুল মান্নান ওরফে কুটির বিরুদ্ধে ভাঙ্গা থানার মালতাহ ইউনিয়নের প্রক্ষণকান্ত্রী নিবাসী আব্দুল গফফার মতব্বর ভাঙ্গা থানায় এক দালালী মামলা দায়ের করে। ফরিদপুর জেলা জজের আদালতে উক্ত বিচার হয়। মামলার বিচারে শরীফ রফিক উদ্দিন আহমেদের তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা টাকা অনাদায়ে আরাে ১ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। বাকী দুই ব্যক্তি আব্দুর রাজ্জাক ব্যাপারী ও আব্দুল মান্নান কুটির বিরদ্ধে সঠিক প্রমাণের অভাবে আদালতদের খালাস দেন।

৮-৪-৭৩ দৈনিক আজাদ যশােরে ২ জন রাজাকারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
মুক্তিসংগ্রাম কালে আনিসুর রহমানকে অপহরণ ও হত্যার অভিযােগে যশােরের ১নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি জনাব মােহাম্মদ এন, চৌধুরী রাজাকার আক্কাস আলী। দফাদার ও আফসার আলী মােড়লকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সেই সঙ্গে প্রত্যেককে এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। সরকার পক্ষে বিশেষ সরকারি উকিল জনাব। মতিউর রহমান এড, আসামী পক্ষে জনাব মােস্তাফিজুর রহমান ও সৈয়দ মােকাররম হােসেন মামলা পরিচালনা করেন।

১০-৪-৭৩ দৈনিক ইত্তেফাক দালালীর অভিযােগে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড

টাঙ্গাইল, ৮ই এপ্রিল টাঙ্গাইলের ১নং বিশেষ আদালত হাকিম গত বৃহস্পতিবার মাওলানা আবদুল হাইকে দখলদার পাকবাহিনীর সাথে সহযােগিতার অভিযােগে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হইয়াছে। মাও. আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে আরাে এক অভিযােগে বলা হয় যে, তিনি স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন তথাকথিত উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করিয়া ছিলেন।

১২-৪-৭৩ দৈনিক আজাদ হত্যা, লুট ও দালালী মামলায়

কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ৪১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন দেবীদার থানার জাফরগঞ্জ গ্রামের কুখ্যাত দালাল আব্দুল হাফিজকে বিভিন্ন ধারায়। সর্বমােট ৪১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত দায়রা জজ ও ২নং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল জজ কাজী বশির উদ্দিন উক্ত দণ্ডাদেশ প্রদান করেছেন। এই কারা দণ্ডাদেশ একই সঙ্গে চলবে। মামলার বিবরণে বলা হয় যে ১৯৭১ সালের ১৫ই অক্টোবর রাতে আসামী আবদুল হাফিজ ওরফে হাফিজা কয়েকজন পাক সেনাসহ বাদী ইয়াসিন মিয়ার বাড়ীতে ঢুকে গুলি করলে তার ভাগিনা শাহ আলম নিহত ও তার বােন হালিমা খাতুনের পায়ে গুলি বিদ্ধ হয়। ইত্যবসরে ইয়াসিন মিয়া পাক সেনাদের আলামত দেখে বাড়ীর পিছন দিকে বাথ রুমের পিছনে লুকিয়ে থাকে । ঐদিকে পাক সেনাদের সহাতায় আসামী হাফিজা ইয়াসিন মিয়ার বন্দুক নং কে এইচ ০৫৩৬৮৮ চারটি স্বর্নান্ধুরী, স্বর্ণের বলয় দশটি, দুটি কানফুল, একটি রেডিও ও নগদ ৭৩০ টাকা আলমাৱা ভেঙ্গে নিয়ে যায় । দস্যুরা ইয়ানিনের মাতাকে ঘুসি মারে ও তার পিতাকে ধরে
নিয়ে যায় । ইয়াসিন মিয়া পিতার জীবন রক্ষার্থে পরদিন গ্রামবাসীর নিকট থেকে দুই হাজার টাকা ধার করে দস্যুদের কাছ থেকে পিতাকে ছাড়িয়ে আনে। বাদীর বােন। হালিমা খাতুনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তার একটি পা কেটে বাদ দেওয়া হয়। বাদী ইয়াসমিন মিয়া ১৯-১০-৭১ইং তারিখে থানার লিখিত এজাহার দেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পুলিশ তদন্তক্রমে বিবাদীর বিরুদ্ধে ১৫৫-৭২ তারিখে চার্জশীট দাখিল করে। বাদীপক্ষের মােট ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মামনীয় আদালত বিবৃতিতে বাংলাদেশ ফৌজদারী দণ্ডবিধির ৩০২, ১০৯ ধারার সাথে বাংলাদেশের দালাল বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদেশ ১৯৭২ এবং ২নং বি. অনুচ্ছেদের এবং ১১ (এ) উপধারায় দোষী সাব্যস্ত করে সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

২৫-৪-৭৩ দৈনিক বাংলা ওবাইদুল্লাহ মজুমদারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডাঃ এ এম মালিক মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব ওবাইদুল্লাহ মুজামদারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। বাসস খবরে বলা হয় যে ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকবাহিনীর সাথে সহযােগিতা এবং বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বিরােধী কার্যকলাপ চালানাের যে অভিযােগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা সত্য বলে মনে করেন। অপরদিকে ১৯৭১ সালের অক্টোবরের কোন এক সময়ে অভিযুক্ত ভারত থেকে তার নিজ বাড়ী ফেনী সফরে আসলে দখলদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে এবং মন্ত্রী হতে বাধ্য করা হয় বলে যে বক্তব্য পেশ করে ট্রাইব্যুনাল তা অবিশ্বাস্য বলে বিবেচনা করেন।

৯-৫-৭৩ দৈনিক পূর্বদেশ ৬ জন রাজাকার ও ২ জন দালালের কারাদণ্ড

৬ জন রাজাকার ও দুইজন শান্তি কমিটির সদস্যের প্রত্যেককে দালালীর দায়ে আট বছর সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হইয়াছে। বিভিন্ন ধারার সাজা সমূহ অবশ্যই এক সঙ্গেই চলবে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ ইসহাক মজুমদার একজন বাংলাদেশ সমর্থক। ১৯৭১ সালের ৩০শে জুলাই রাজাকার সিদ্দিকুর রহমান, টুকু মিয়া, জয়নাল, আবদুল মালেক, শামছুল হক, মফিজুর রহমান এবং শান্তি কমিটির সদস্য সিরাজুল হক ও নুরুল ইসলাম তাকে তার বাড়ীর সামনে থেকে ধরে স্থানীয় চেয়ারম্যান আলী আহমেদের বাড়ীতে। নিয়ে মারপিট করে ও শেষ পর্যন্ত তাকে লাকসাম ক্যাম্পে অবস্থানকারী পাক দখলদার
বাহিনীর হাতে সােপর্দ করে। সেখানে তার উপর দুই/তিন দিন যাবদ অকথ্য অত্যাচারের পর রাজাকার বাহিনীতে যােগদানের ওয়াদায় তাকে মুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু অভিযােগকারী কৌশলে সীমান্তের ওপারে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। দেশ স্বাধীন হবার পর ইসহাক মজুমদার লাকসাম থানায় লিখিত অভিযােগ দায়ের করলে পুলিশ। তদন্তক্রমে বিবাদীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। সাক্ষ্যাদির পর কুমিল্লার মাননীয় সহকারী সাবজজ ও দালাল বিচার ট্রাইব্যুনাল নং-৪ কুমিল্লা জনাব এম. এ. হুদা বিবাদী সিরাজুল হক, নুরুল ইসলাম সিদ্দিকুর রহমান, টুকু মিয়া (অনু) জয়নাল, মালেক শামসুল হক ও মফিজুর রহমান (অনু) কে বাংলাদেশ দণ্ড বিধির ৩৪২ ও ৩৬৫ ধারার সাথে দালাল বিচার আইনের ১১ (বি) ও (ডি) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন ও বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৪২ ধারায় প্রত্যেককে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ৩৬৫ ধারায় প্রত্যেককে তিন বছরের কারাদণ্ড ও দালাল আইনের ১১বি ও (ডি) ধারায় প্রত্যেককে চার বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন। উপরােক্ত প্রত্যেককে ৫০০ টাকা জরিমানা করেন অনাদায়ে আরাে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভােগ করার আদেশ দেন। বিবাদী আলী আহমেদকে খালাস দেন। সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন সহকারী পিপি জনাব গােলাম হামজা এড. বিবাদী পক্ষে ছিলেন জনাব কাজী হাবিবুর রহমান, রফিকুল হক ও মােঃ সিরাজ মিয়া এ্যাড।

১১-৫-৭৩ দৈনিক ইত্তেফাক দালালীর অভিযােগে পুলিশ কনস্টেবলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

যশাের ৯ই মে যশােরের সেশন জজ ও এক নম্বর বিশেষ আদালতের জজ দ্বিজেন্দ্র নাথ চৌধুরী দালাল আইনে অভিযুক্ত জনৈক পুলিশ কনস্টেবলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। কুমিল্লায় ৮ ব্যক্তি দণ্ডিত কুমিল্লা হইতে বিপিআই পরিবেশিত খবরে বলা হয় কুমিল্লার বিশেষ আদালতে সম্প্রতি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাক দখলদার বাহিনীর সহিত সহযােগিতা করার অপরাধে ৬ জন রাজাকার, ২ জন শান্তি কমিটির সদস্যের প্রত্যেককে আট বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হইয়াছে। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শান্তি কমিটির সদস্য সিরাজুল হকও নুরুল ইসলাম এবং রাজাকার সিদ্দিক রহমান টুকু মিয়া, জয়নুল আবেদিন, আব্দুল মালেক ও মফিজুর রহমান রয়েছে।

১৪-৫-৭৩ দৈনিক পূর্বদেশ দালালীর দায়ে মৌলভীৰাজারে একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

সিলেটের ১নং বিশেষ আদালতের জজ জনাব মতিউর রহমান খান পাক হানাদার বাহিনীর সাথে যােগসাজস এবং তিনজন পল্লীবধূর শ্লীলতাহানির অভিযােগে মৌলভী বাজারের দীঘল কাজীর জনৈক আসিদ আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। জরিমানার টাকা প্রদানে ব্যর্থ হলে তাকে আরাে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভােগ করিতে হইবে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ উক্ত আসিদ আলী। ১৯৭১ সালের মে মাসে দখলদার পাক সেনাদের নিয়ে দীঘল কাজী গ্রামে মহিলাদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। তারা লিপি বিবি, আনােয়ারা খাতুন এবং অপর এক মহিলার উপর অত্যাচার চালিয়েছে বলে অভিযােগ করা হয়। মামলায় মােট সাত জন। স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আসামী নিজেকে নির্দোষ বলে দাবী করে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযােগ প্রমাণিত হলে মাননীয় জজ তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। এবং হাজার টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়া হয়। সরকার পক্ষের বিশেষ পিপি জনাব মনিরুদ্দিন আহমেদ আসামী পক্ষে জনাব সলমান চৌধুরী এবং জনাব ইউসুফ মামলা পরিচালনা করেন।

২২-৫-৭৩ দৈনিক পূর্বদেশ দালালীর অভিযােগে কেরামত আলীর সশ্রম কারাদণ্ড

জোর করে টাকা আদায় এবং খবর পাচারের দায়ে পাকবাহিনীর দালাল মুন্সিগঞ্জ থানার অন্তর্গত চরসিল মন্সির গ্রামের কেরামত আলী কাজীকে যথাক্রমে পাঁচ বছর ও তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযােগের বিবরণে প্রকাশ ১৯৭১ সালের ১০ই আগস্ট তারিখে উক্ত গ্রামে একদল মুক্তিযােদ্ধা আসে এবং তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কতিপয় লােকের সাহায্য চায়। মামলায় বাদী সামছুদ্দিন আহমেদ নামক এক ব্যক্তির বাড়ীতে নিয়ে যায়। আসামী ও মৃত আব্দুল কাদের তরফদার মুন্সীগঞ্জে পাক বাহিনীর ক্যাম্পে এই খবর পৌছে দেন। ফলে ১৫ই আগস্ট সৈন্য বাহিনী এসে গ্রামটি ঘিরে ফেলে কিছু লােককে হত্যা করে এবং কয়েকজনকে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। আসামী ও এক দারগাকে ১৩০০ টাকা না দেয়া পর্যন্ত তাদের আটক রাখা হয়। আসামী অভিযােগ অস্বীকার করে বলে যে বাদীর সাথে ইতিপূর্বে মামলা মক্কদমা নিয়ে শত্রুতাবশত তাকে এই মামলায় জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। স্পেশাল পি পি জনাব মােসলেহ উদ্দিন আহমেদ সরকার পক্ষে এবং জনাব ফজলুর রহমান আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। মামলায় রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের সভাপতি জনাব মােস্তাক আহমদ চৌধুরী।

২৭-৫-৭৩ দৈনিক ইত্তেফাক শান্তি কমিটির সদস্যের যাবজ্জীবন

গত শুক্রবার ঢাকায় ৬ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল জজ জনাব মােস্তাক আহমেদ চৌধুরী মানিকগঞ্জ শান্তি কমিটির সদস্য নয়ন মিয়াকে পাকবাহিনীর সংগে দালালীর জন্য দোষী। সাবাস্ত করিয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করিয়াছেন।

১৩-৬-৭৩ দৈনিক পূর্বদেশ দালাল শামছুদ্দিন আহমদের পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড
বরিশাল, ১২ই জুন ১৯৭১ সালে দখলদার পাকবাহিনী কর্তৃক অনুষ্ঠিত তথাকথিত উপনির্বাচনে প্রতিযােগিতা করার জন্য এখানকার ১নং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সম্প্রতি এডভােকেট শামছুদ্দিন আহমেদকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা। জরিমানা অনাদায়ে আরাে ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন।

১৭-৬-৭৩ দৈনিক পূর্বদেশ দালালীর দায়ে এডভােকেট রব দণ্ডিত
বরিশাল ১৬ই জুন দখলদার আমলে উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পাকবাহিনীকে সহযােগিতা করার দায়ে তথা কথিত শান্তি কমিটির সভাপতি এড. আব্দুর রবকে দোষী সাব্যস্ত এবং এক হাজার টাকা জরিমানা সহ তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। দোষী ব্যক্তি জরিমানার টাকা প্রদান করতে না পারলে তাকে আরাে একমাসের কারাদণ্ড ভােগ করতে হবে। সম্প্রতি চার নম্বর ট্রাইব্যুনালে তার বিচার অনুষ্ঠিত হয়। আরাে চার ব্যক্তি দণ্ডিত। বরিশাল থেকে বাসস জানিয়েছেন বেআইনী অস্ত্র রাখার দায়ে আরাে চার ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতির ৪০নং আদেশ বলে দণ্ডিত করা হয়েছে। একজন স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট তাদের বিচার করেন। বিচারের এদের প্রত্যেককে পাঁচশত টাকা জরিমানাসহ চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড সহ অনাদায়ে আরাে একমাস সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

১৯-৬-৭৩ দৈনিক ইত্তেফাক বরিশালে পাক বাহিনীর দালালীর অভিযােগে আইনজীবী দণ্ডিত
পাক আমলে তথাকথিত জেলা শান্তি কমিটির সভাপতি আইয়ুব সরকারের অধীনে পার্লামেন্টারী সেক্রেটারি এডভােকেট আবদুর রবকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হইয়াছে। অনাদায়ে আরাে ১ মাস সশ্রম কারাদণ্ড ভােগ করিতে হইবে। ১৯৭১ সালে তথাকথিত উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে পাক হানাদার বাহিনীর দালালী করার দায়ে তাহাকে অভিযুক্ত করা হয়।

২৭-৬-৭৩ দৈনিক ইত্তেফাক ৩ জন রাজাকার প্লাটুন কমান্ডার দণ্ডিত
গত সােমবার ঢাকার ৮নং স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের জজ জনাব মােহাম্মদ আজিজুর রহমান ঢাকা জেলার দৌলতপুর থানার ৩জন রাজাকার প্লাটুন কমান্ডারের অনুপস্থিতিতে তাহাদেরকে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর দালাল বলিয়া দোষী সাব্যস্ত করেন এবং তাহাদের প্রত্যেককে তিন বছর করিয়া সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ে জজ উল্লেখ করেন যে, আসামীদের গ্রেফতারের দিন হইতে দণ্ডাদেশ কার্যকর হবে। উপরােক্ত তিন জন আসামী হলাে দৌলতপুর থানার অন্তর্গত জিয়নপুর গ্রাম নিবাসী রাজাকার প্লাটুন কমান্ডার সুরত আলী ও আব্দুল হালিম খান এবং তৃতীয় জন উক্ত থানার বাসাইল নিবাসী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ আসামীরা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রাজাকার প্লাটুন কমান্ডার হিসাবে দৌলতপুর থানার রাজাকারদের মধ্যে রেশন ও বেতন বিতরন করত। তাহারা বাংলাদেশকে পাক সামরিক জান্তার শাসন প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে পাক দখলদার বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করিয়াছে। স্পেশাল পিপি জনাব শামছুদ্দিন আহমেদ সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এবং আসামী পক্ষে সরকার নিযুক্ত এডভােকেট খােন্দকার নুর মােহাম্মদ।

১-৭-৭৩ দৈনিক বাংলা মুনির চৌধুরী অপহরণ মামলায় দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মুনির চৌধুরীকে অপহরণ করার দায়ে দোষী সাবস্ত করে গতকাল শনিবার ঢাকার একটি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল জামিল ওরফে জামাল এবং খালিদ আহমেদ নামক দুইজন আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। এই মামলায় অপর একজন আসামী পলাতক থাকায় পৃথকভাবে তার বিচার হইবে। ট্রাইব্যুনালের জজ জনাব এম, এ, গফুর আসামীদের দণ্ডাদেশ প্রদান করে উল্লেখ করেন যে বয়স কম বিবেচনা করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা গেল। মামলায় অভিযােগের বিরণে বলা হয় যে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ আসামীরা অপর ৫ জন সহযােগী আলবদর ও রাজাকারকে সাথে করে ১২টার সময় অধ্যাপক মুনির চৌধুরীর বাড়ী সেন্ট্রাল রােডস্থ বাসভবনে আসে। এরা তদানীন্তন ইপিআরটিসির একটি গাড়ী নিয়ে এসেছিল। সে সময় শহরে কার্ফ ছিল। দরজা ধাক্কার শব্দে মরহুম চৌধুরীর ভাই শামসুল আজাদ দরজা খুলে দেয়। আসামীদের একজন জিজ্ঞাসা করে মুনির স্যার কোথায়। উনি বাড়ীতে আছেন জানার পর আল বদর বাহিনী মুনির চৌধুরীর নিকট যেয়ে বলে যে তাকে তাদের সাথে যেতে হবে। উনি যেতে
অস্বীকার করেন ও জিজ্ঞাসা করেন গ্রেফতারী পরােয়ানা আছে কি না। একজন আল। বদর দুষ্কৃতিকারী পিটে স্টেনগান ধরে বলপূর্বক তাকে গাড়ীতে উঠতে বাধ্য করে। এরপর অধ্যাপক মুনির চৌধুরীর আর কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। জনাব শামসু আজাদের এজাহারের পর গােয়েন্দা পুলিশ আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। জনাব আজাদ আসামীদের সনাক্ত করেন। আসামীরা নিজেদের নির্দোষ বলে বর্ণনা করে যে, ঘটনার তিন মাস পরে পুলিশের পরামর্শে জনাব আজাদ তাদের সনাক্ত করেছেন। একজন ভীত সন্ত্রস্ত লােক এতদিন কারও চেহারা মনে রাখতে পারে না। মাননীয় জজ মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে আসামীদের দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। সরকার পক্ষে স্পেশাল পিপি আবদুল মতিন ও আসামী পক্ষে সরকার নিযুক্ত কৌসুলি মােঃ হানিফ মামলা পরিচালনা করেন।

১২-৭-৭৩ দৈনিক পূর্বদেশ দালালীর দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
রাজশাহী, ১২ জুলাই রাজশাহীর ১নং ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি জনাব আবুল আজিম মিয়া রাজশাহী সমবায় সমিতির সাবেক অডিটর শ্রী শান্তি দাস হালদারকে হত্যার অভিপ্রায়ে অপহরণের অভিযােগে জনৈক মুজিবর রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান ও ৬ শত টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে ৬ মাস কারাদণ্ড প্রদান করিয়াছেন। বিচারক গত ৭ই জুলাই তার রায়ে বলেন আসামী যে অপরাধ করেছে তা অতি জঘন্য ও বর্বর ধরনের। তাই আসামী আইনে প্রদত্ত সর্বোচ্চ সাজা পাওয়ার যােগ্য। সংক্ষেপে মামলার বিবরণ হলাে আসামী সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের সিভিল আর্মড ফোর্সের অপর তিন জন লােককে সাথে নিয়ে ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর রাত প্রায় সাড়ে ৮টার দিকে শ্রী হালদারকে তার পাঠান পাড়া পুজার বাসভবন থেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় এবং ১৯৭১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর পদ্মার চর থেকে তার মৃত্যুদেহ উদ্ধার করা হয়।
১২-৭-৭৩ দৈনিক পূর্বদেশ দালালীর দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
রাজশাহী, ১২ জুলাই রাজশাহীর ১নং ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি জনাব আবুল আজিম মিয়া রাজশাহী সমবায় সমিতির সাবেক অডিটর শ্রী শান্তি দাস হালদারকে হত্যার অভিপ্রায়ে অপহরণের অভিযােগে জনৈক মুজিবর রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান ও ৬ শত টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে ৬ মাস কারাদণ্ড প্রদান করিয়াছেন। বিচারক গত ৭ই জুলাই তার রায়ে বলেন আসামী যে অপরাধ করেছে তা অতি জঘন্য ও বর্বর ধরনের। তাই আসামী আইনে প্রদত্ত সর্বোচ্চ সাজা পাওয়ার যােগ্য। সংক্ষেপে মামলার বিবরণ হলাে আসামী সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের সিভিল আর্মড ফোর্সের অপর তিন জন লােককে সাথে নিয়ে ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর রাত প্রায় সাড়ে ৮টার দিকে শ্রী হালদারকে তার পাঠান পাড়া পুজার বাসভবন থেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় এবং ১৯৭১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর পদ্মার চর থেকে তার মৃত্যুদেহ উদ্ধার করা হয়।
১১-৮-৭৩ দৈনিক ইত্তেফাক রাজাকারের যাবজ্জীবন।
৪ই আগস্ট, নােয়াখালী সম্পতি নােয়াখালী দায়রা জজ বাবু জে. চক্রবর্তী রামগঞ্জ থানার অধীন চণ্ডীপুর গ্রামের আবদুর রশিদ পাইনকে হত্যার দায়ে এবং লুটতরাজ ও দালালের অভিযােগে ঐ থানার রতনপুর গ্রামের কালা মিয়া পাটোয়ারীর পুত্র রফিকুল। ইসলাম পাটোয়ারী নামক জনৈক রাজাকারকে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ৩০২/১০৯ এবং রাষ্ট্রপতির আদেশ ৮নং ধারা মােতাবেক যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ গত ১৩-৯-৭১ তারিখ বেলা সাড়ে ৩ টায় মৃত আব্দুর রশিদ পাইন। বাজার করার উদ্দেশ্যে রামগঞ্জ থানাধীন সােনাপুর বাজারে গেলে দণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকার রফিকুল ইসলাম আরাে ২/৩ জন রাজাকার নিয়া আব্দুর রশিদকে ধরিয়া ভীষণ মারপিট করে। আবদুর রশিদ আত্মরক্ষার জন্য দৌড়াইয়া কুমার হাটার একটি খালি। ঘরে আশ্রয় নিতে গেলে রফিকুল ইসলাম তাহার প্রতি পরপর ৩টি গুলি করে। ফলে আব্দুর রশিদ ঘটনাস্থলে মারা যায়। উল্লেখযােগ্য যে মাননীয় বিচারক তার রায়ে উল্লেখ করেন যে আসামী অপ্রাপ্ত বয়স্ক তাই তাহাকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হইল।

২৯-৮-৭৩ দৈনিক আজাদ রাজশাহীতে দালালের ৩ বছরের কারাদণ্ড
রাজশাহী, ২৬শে আগস্ট সম্প্রতি রাজশাহী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আজিজুর রহমানকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে। খবরে প্রকাশ যে তিনি মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন এবং পাকবাহিনীর সাথে সহযােগিতা করেছিল বলে অভিযােগে প্রকাশ। তাছাড়া তিনি পৌরসভার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

১-৯-৭৩ দৈনিক বাংলা কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার মুন্নার মৃত্যুদণ্ড
হত্যার উদ্দেশ্যে একাধিক ব্যক্তিকে অপহরণ, দখলদার বাহিনীর দালালী ও বস্তিবাসী বহু বাঙ্গালী মেয়েকে ধর্ষণ করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে এককালীন শাহাজাহানপুর কলােনীর ত্রাস সঞ্চারকারী রাজাকার কমান্ডার ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর পাণ্ডা মুন্না ওরফে ইসমাইলকে গতকাল শুক্রবার ঢাকার তৃতীয় স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের জজ জনাব এস, এস, মাহমুদ মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। তার রায়ে উল্লেখ করেন যে, আসামী। মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করেছে এবং চরম দণ্ডই তার প্রাপ্য। রেলওয়ে। ড্রাইভার জহিরের পুত্র আসামী মুন্নার বিরুদ্ধে অভিযােগে বলা হয় যে আসামী ১৯৭১ সালের ১৯ শে মে হত্যা করার উদেশ্যে কমলাপুরের দরগা রােডের জনৈক মােশারেফ হােসেনকে অপহরণ করে এবং ঐ বছর ৬ই ডিসেম্বর একই এলাকা থেকে বিকেলে অন্যান্য রাজাকার ও পাকসেনার সাথে মিলে কাজী আবুল মােতিন, শহিদুল আলম ভূইয়া নামে জগন্নাথ কলেজের একজন ছাত্র ও রাঙ্গামাটি কলেজের অধ্যাপক শফিকুর রহমান ভূইয়াকে অপহরণ করে। এ ছাড়া আসামী মােঃ মেছের নামক একজনকে গুলি।
করে হত্যা করে। আসামী যাদের ধরে নিয়ে যায় তারা কেউ পরে ফিরে আসেনি। আসামীর বিরুদ্ধে আরাে অভিযােগে বলা হয় দখলদার আমলে শাহজানপুর কলােনীতে সে এক বিভীষিকার রাজত্ব কায়েম করে এবং নিরপরাধ বস্তিবাসী অনেক বাঙ্গালী মেয়েকে সে বলপূর্বক ধর্ষণ করে এবং পাক সেনাদের ফুর্তির জন্য সরবরাহ করে। দেশের শত্রুমুক্ত হবার পর আসামী মিরপুর অবাঙ্গালী এলাকায় পালিয়ে যায়। দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহক সম্পাদক জনাব মাহমুদ আসাফুদৌল্লা রেজা থানায় আসামীর বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন এবং পুলিশ আসামীকে ধরে তার বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করে। স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল বাদী পক্ষের তেরােজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন এর মধ্যে ষষ্ঠ, অষ্টম ও নবম সাক্ষী সূর্যবান, মনােয়ারা খাতুন ও পেয়ারী বিবি আসামীকে সনাক্ত করে বলে যে, আসামী তাদের উপর এবং বস্তির অনেক মেয়ের উপর বলাৎকার করেছে। মাননীয় স্পেশাল জজ তার রায়ে উল্লেখ করেন যে প্রতিটি সাক্ষী আসামীকে সনাক্ত করেছে এবং আসামী যে নির্দোষ এই মর্মে কোন যুক্তি পাওয়া যায়নি। এতে কোন সন্দেহ নেই যে সে অপরাধী দলের দলপতি ছিল। সরকার পক্ষে খন্দকার মাহবুব হােসেন মােঃ আবদুল মােতিন ও আসামী পক্ষে ইসমাইল হােসেন ইউসুফ মামলা পরিচালনা করেন।

১-৯-৭৩ দৈনিক বাংলা বরিশাল দালালির দায়ে একজনের যাবজ্জীবন
বরিশাল ৩০শে আগস্ট (বাসস) স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকসেনার সঙ্গে সহযােগিতা। করায় অপরাধে গৌরনদীর আব্দুল সাত্তার নামে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হইয়াছে। বিশেষ আদালত ১-এ তার বিচার হয়। অন্য একটি মামলায় আজাহার আলী ও মােতাহার আলীকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫শত টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

৬-৯-৭৩ দৈনিক বাংলা দালালীর দায়ে তিন জনের যাবজীবন কারাদণ্ড
বরিশাল, ৫ই সেপ্টেম্বর দখলদার বাহিনীর দালালী করার দায়ে একটি ট্রাইব্যুনাল। আব্দুল আজিজ, আব্দুল জব্বার ও আবদুল রাজ্জাক নামক তিন ব্যক্তিকে আজ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দখলদার যুগে তারা হত্যাকাণ্ড চালায় বলে ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়। উক্ত অভিযুক্তগণ দখলদার বাহিনীর সহযােগিতায় রাজাপুর থানার আওয়ামীলীগ নেতা জনাব শাহ জামালকে ১৯৭১ সালের ২৯শে নভেম্বর রাতে ভুতের মরাখাল ও বিশখালী নদীর সংযােগস্থলে নিয়ে যায় ও গুলি করে হত্যা করে বলে মামলার শুনানীতে জানা যায়।

১৪-৯-৭৩ দৈনিক ইত্তেফাক দালালীর দায়ে ২ ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পাবনা, ৫ই সেপ্টেম্বর ১নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাননীয় শ্রীলাব্রত বড়ুয়া পাবনা পেলানপুর নিবাসী জনৈক আব্দুর বারেকের পুত্র এয়াকুব আলী এবং শাল গড়িয়া নিবাসী রাজাকার কমান্ডার ঘেটু ওরফে আঃ মাসুদকে বাংলাদেশ দণ্ড বিধি আইনের ৩৬৪ ধারা এবং ১৯৭২ সালের দালাল আইনের ১১ক মােতাবেক দোষী সাব্যস্ত করিয়া তাহাদের উভয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন। উপরােক্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট উভয় আসামীকে ১৯৭২ সালের দালাল আইনে ৪র্থ অনুচ্ছেদে বর্ণিত (খ) উপধারা বলে দোষী সাব্যস্ত করেন। কিন্তু পূর্বে বর্ণিত ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন বলিয়া অত্র ধারায় আসামীদেরকে দোষী সাব্যস্ত করিয়াও কোন পৃথক দণ্ডাদেশ প্রদান করেন নাই।

আসামী রাজাকার কমান্ডার ঘেটু ওরফে আঃ মাসুদ আত্মগােপন করিয়া থাকায় তাহার অনুপস্থিতেই বিচার কার্য অনুষ্ঠিত হয় এবং মাননীয় বিচারক প্রদত্ত রায়ে এই মর্মে আদেশ প্রদান করিয়াছেন যে উক্ত পালাতক আসামী ঘেটু যেদিন ধরা পড়িবে সেই দিন হইতে তাহার বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ কার্যকারী হইবে। উক্ত মামলায় অপর দুই আসামী ইয়াকুবের পুত্রের বিরুদ্ধে আনিত অভিযােগ প্রমাণিত না হওয়ায় মাননীয় বিচারক তাহাদের বেকসুর খালাস প্রদান করিয়াছেন এবং তাহাদের বিরুদ্ধে আর কোন অভিযােগ না থাকিলে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ প্রদান করেন। মামলার বিবরণে প্রকাশ হানাদার পাক দখলী আমলে দালাল গর্ভনর মালেক মন্ত্রী সভার অন্যতম মন্ত্রী মাওলানা ইসহাক পাবনায় আগমন করিলে তাহার ভাষণের জন্য বিগত ১-১২-৭১ তারিখে পাবনা স্টেডিয়াম ময়দানে একটি জনসভা হইতে বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ সদস্য ও মুক্তিবাহিনীর গােপন সংবাদদাতা পাবনা শহর নিবাসী এস্কেন্দার আলীকে রাজাকার কমান্ডার ঘেটু তারা ও ফেরু ধরে আনে এবং শান্তি কমিটির নেতা নুরু খন্দকার ও ইয়াকুব আলীর নিকট হস্তান্তর করে। পরে জনসভা শেষ হবার পর একটি সামরিক ট্রাকে করিয়া এস্কেন্দার আলীকে পাবনার পাক সেনাদের প্রধান ঘাটি ওয়াপদা শিবিরে আনা হয়। নুরু খন্দকার ইয়াকুব আলী ও রাজাকার ঘেটু শিবিরে অবস্থানরত সামরিক অফিসারের নিকট এস্কেন্দার আলীকে হাজির করিয়া তাহাকে আওয়ামী লীগের কর্মী, আওয়ামী লীগ নেতার সাগরেছ মুক্তিবাহিনীর গােপন সংবাদদাতা ও বিশিষ্ট মুক্তিযােদ্ধা শহীদ রিদ্দিকের চাচা বলিয়া পরিচয় করিয়া দিলে হানাদার সামরিক অফিসার এস্কেন্দার আলীকে
গুলি করে হত্যার নির্দেশ প্রদান করে। অবশ্য বহু চেষ্টা তদবীরের পর শেষ পর্যন্ত। তাহার প্রাণ রক্ষা পায়। ইহার কয়েকদিন পর নুরু খন্দকার, ইয়াকুব আলী ও রাজাকার কমান্ডার ঘেটু তাহার বাড়ীতে আসিয়া তাহাকে হত্যার উদ্দেশ্যে। অপারেশন করিবার মতলব করিলে এস্কেন্দার আলী বহু কষ্টে প্রথমে চর ঘােষপুর পরে কুষ্টিয়ায় গিয়া প্রাণ রক্ষা করেন। সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন প্রধান বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর এড, গােলাম হাসনায়েন। ঘেটুর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সরকার নিয়ােজিত উকিল আব্দুর রহিম খান এবং অপর আসামী পক্ষে ছিলেন জনাব আব্দুস সবুর এবং আবুল কাশেম এডভােকেট।

১৭-৯-৭৩ দৈনিক আজাদ দালালীর অভিযােগে এসডিওর সশ্রম কারাদণ্ড
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে সহযােগিতার অপরাধে দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও এর সাবেক মহাকুমা হাকিমকে ঢাকার একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গত শুক্রবার তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে একমাস বেশী কারাদণ্ড ভােগ করিতে হইবে। এই ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জনাব শেখ খােরশেদ আলী। অভিযুক্ত উক্ত এসডিও ১৯৭১ সালে গঠিত ঠাকুরগাঁও এর স্বাধীন বাংলা সংগ্রামী পরিষদকে সাহায্য করার অস্বীকৃতি জানিয়ে ছিলাে এবং তৎকালে গঠিত তথাকথিত শান্তি পরিষদ গঠন করে। দখলদার বাহিনীর সাথে সর্বাত্মক সহযােগিতা করেছিলাে। এছাড়া সে নিজে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল।
১৮-৯-৭৩ দৈনিক পূর্বদেশ খুলনার ২ জন রাজাকারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
১৬ই সেপ্টেম্বর। গত শনিবার খুলনায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তেরােখাদা থানাধীন অবপাঙ্গ কাছির গ্রামের রাজাকার হেমায়েত মােল্লা এবং শামছু মােল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগে বলা হয়, হানাদার আমলে উপরােক্ত রাজাকারদ্বয় অন্যান্যদের নিয়ে ফাজিল মােল্লার বাড়ী ঘেরাও করে তাকে হত্যা করে এবং তার বাড়ী লুট করে। ফাজিল মােল্লার ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এ মামলার অপর তিন আসামীকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। সরকার পক্ষে মােহাম্মদ আলী এবং বিবাদী পক্ষে মনছুর আলী হায়দার এবং সামছুল হক মামলা পরিচালনা করেন।

২২-৯-৭৩ দৈনিক আজাদ দালালীর অভিযােগে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড
সম্প্রতি ময়মনসিংহের সহকারী দায়রা জজ জনাব মুনিউর রহমান ৫নং স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের জজ হিসাবে দালালী এবং গত স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সহযােগিতা করার অভিযােগে প্রফেসর আবদুস সালামকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। জরিমানা অনাদায়ে আরাে ৩ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেছেন। কোর্টের উদ্ধৃতিতে জানা যায় যে প্রফেসর আবদুস সালাম পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়ে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজেকে দালাল রূপে প্রমাণিত করেছেন। কোর্ট তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এই দণ্ডাদেশ প্রদান করেন।

৩০-৯-৭৩ দৈনিক সংবাদ দালালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
সম্প্রতি খুলনার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল দালালীর অভিযােগে অভিযুক্ত মােঃ রিয়াজকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ড বিধির ১০৯, ৩০২, ৩৬৪ ধারা ও রাষ্ট্র প্রধানের ৮নং আদেশের ১১ (ক) উপধারায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। বর্বর পাকবাহিনীর সহায়তায় আসামী মােঃ রিয়াজ খুলনার ৪নং ঘাটের সােবান মিয়ার হােটেল থেকে জনৈক জামাল উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে জোর করে ধরে নিয়ে যায় । কিন্তু জামাল উদ্দিনকে হত্যা সম্পর্কীয় বিষয়ে উপযুক্ত সাক্ষ্য। প্রমাণ না পাওয়ায় আসামী মােঃ রিয়াজকে শুধু বাংলাদেশ দণ্ড বিধির ৩৬৪ ও রাষ্ট্র প্রধানের ৮নং আদেশের ১১ (ক) ধারা মােতাবেক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ বহাল রাখা হয়। এ মামলায় এড. মুনসুর আলী আসামী পক্ষে ও সরকার পক্ষে ছিলেন এড. কাজী শফিকুল্লাহ।

১৭-১০-৭৩ দৈনিক সংবাদ রাজাকারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড (গণি মিয়া এবং রহমান আলী)
কুমিল্লা, ১৫ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার ২নং বিশেষ আদালত মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর সাথে সহযােগিতা করার অভিযােগে দুইজন রাজাকারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। খবরে প্রকাশ রহমান আলী এবং গণি মিয়া নামে দুইজন রাজাকার মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর সাথে প্রত্যক্ষভাবে সহযােগিতা করে হত্যা লুণ্ঠন প্রভৃতি কুকর্মে লিপ্ত হয়।
২৪-১০-৭৩ দৈনিক আজাদ দিনাজপুরে দালাল আইনে ৩ ব্যক্তির সশ্রম কারাদণ্ড
সম্প্রতি দিনাজপুরের ১নং স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের মাননীয় জজ জনাব এম. এ. আহাদ ৩ জন রাজাকারকে দালালী আইনে শাস্তি প্রদান করেন। তার মধ্যে ১জনকে ১৪ বছর ও অপর ২ জনকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ প্রদান করিয়াছেন বলিয়া সংবাদ পাওয়া গেছে। প্রকাশ বীরগঞ্জ থানার পচুয়া আলী, জাবেদ আলী ও ইয়াকুব আলী। দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর অধীনে রাজাকার হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে দখলদার বাহিনীকে সক্রিয় সহযােগিতা করে। বাদী আমির উদ্দিন ওরফে বারুয়াকে মুক্তিবাহিনীর সহযােগী। সন্দেহে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। পরে তাকে না পেয়ে তার ভাইকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। অতঃপর মােজাহার নামক তথাকথিত শান্তি কমিটির জনৈক সদস্যের মাধ্যমে তার পিতার কাছ থেকে ৮শ টাকা নিয়ে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। প্রকাশ সরকার পক্ষে সর্বমােট ১১জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সরকার পক্ষের সাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তি প্রমাণ শ্রবন করে মাননীয় জজ আসামীদের দোষী সাব্যস্ত করেন এবং পত্যেককে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩শত টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরাে ১মাস করে কারাদণ্ডের হুকুম দেন। মাননীয় ট্রাইব্যুনাল পচুয়া আলীকে, দোষী সাব্যস্ত করে আরাে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন এবং মােজাহারের বিরুদ্ধে অভিযােগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অভিযােগ থেকে অব্যাহতি দেন। মাননীয় ট্রাইব্যুনাল আরাে হুকুম দেন যে পচুয়া আলীর উভয় শাস্তি একই সঙ্গে চলতে থাকবে। সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন স্পেশাল পিপি, জনাব এ. আর. মােস্তাজী। এবং আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এড, জনাব আশরাফুল হক চৌধুরী ও এড. জনাব আজিজুল ইসলাম।
৫-১২-৭৩ দৈনিক ইত্তেফাক দুইজন আল বদরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ঢাকার তৃতীয় স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল জজ জনাব এস, এম, মাহমুদ গত শনিবার হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ করার দায়ে আল বদর মকবুল হােসেন, আয়ুব আলী ও আতিয়ার রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করিয়া যাবজ্জীবন করাদণ্ড প্রদান করেন। আসামী আতিয়ার রহমান পলাতক বিধায় তাহার গ্রেফতারের দিন হইতে রায় কার্যকরী হইবে । অভিযােগের বিবরণে প্রকাশ স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সকাল ৮-৩০ মিনিট পাঁচজন আলবদর ষ্টেনগান রিভালবার ও অন্যান্য অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হইয়া বাদী কাজী মােস্তাফিজুর রহমানের আজিমপুৰস্ত বাসভবন হইতে তাহার কনিষ্ট ভ্রাতা মশিউর রহমান ও মন্টু কে ধরিয়া লইয়া যায়। ১৬ ডিসেম্বর মশিউর
রহমান আল বদরের হাত থেকে পালাইয়া বাসায় ফিরিয়া আসেন। মশিউর রহমানের। বক্তব্যে প্রকাশ আলবদর তাহাদিগকে মােহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে নিয়া হাত পা চক্ষু বাঁধিয়া অমানুষিক অত্যাচার করে। ঐ দিন রাত্রে তাহাদিগকে অন্য লােকদের সহিত রায়ের বাজারের বধ্য ভূমিতে প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। তিনি হোঁচট খাইয়া একটা ডােবায় পড়িয়া যান এবং অন্ধকারে কোন প্রকারে পালাইয়া আসে। দেশ স্বাধীনতার পর মন্টুর মৃতদেহ রায়ের বাজার বধ্যভূমি হইতে উদ্ধার করা হয়। ১৯৭১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর বাদী মােস্তাফিজুর রহমান ঢাকা হইতে লঞ্চ যােগে মুন্সিগঞ্জ যাইবার সময় আসামী মকবুল হােসেন ও আবুল আলীকে উক্ত লঞ্চে দেখিতে পাইয়া পুলিশে খবর দিলে পুলিশ তাহাদিগকে গ্রেফতার করে।

২-৪-৭৪ দৈনিক পূর্বদেশ দালালীর দায়ে বরিশালে ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড
বরিশাল জেলার সেশন জজ জনাব আর, কে, বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনীর সাথে সহযােগিতা ও হত্যার অভিযােগে আব্দুল মালেক বেগসহ আরাে ১৪ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। আদালতের কার্যবিধিতে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ২২শে আগস্ট মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অভিযুক্তরা মেহেদীগঞ্জ থানার ভাষানচর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ জনাব আব্দুল বারী মােল্লার দোকানে চড়াও হয়। তারা আব্দুল বারী মােল্লাকে হত্যা করে ও দোকান লুট করে ।

২০-৪-৭৫ দৈনিক সংবাদ পাক দালালীর দায়ে দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

কুমিল্লা জেলার দায়রা জজ এবং ১নং বিশেষ আদালতের সভাপতি জনাব কায়সার। আলী সম্প্রতি দালালীর দায়ে দু’ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। মামলার বিবরণে প্রকাশ শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদ তদানীন্তন পাকিস্তান আর্মির হাবিলদার এবং ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাক হানাদার বাহিনী বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়লে তিনি পালিয়ে এসে কিছু কাল বুড়িচং থানার আরাম আনন্দপুরস্থ তার নিজ বাড়ীতে অবস্থান করেন। পরে তিনি ভারতে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন কিন্তু দৈহিক অপরাগতার দারুন তিনি আবার নিজ। বাড়ীতে ফিরে এসে লুকিয়ে থাকেন। ১৯৭১ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর কথিত বিবাদীদ্বয়। কয়েকজন রাজাকার নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর লােকেরা রফিক উদ্দিনের বাড়া ঘেরাও করে এই বাড়ীর আব্দুর রশিদকে তার ঘর থেকে বের করে আনে। পরে বিবাদী
দু’জনসহ পাকহানাদার বাহিনীর বর্বরেরা রফিক উদ্দিনের ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে বের করে এনে বিবাদী আবদুল হামিদের সম্মুখে একত্রিত করে। এখানে তাদের জিজ্ঞাসা ও মারধর করা হয় এবং পরে বুড়িচং থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বুড়িচং থানা তখন পাক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেদিন ১০/১১ টার দিকে আব্দুর রশিদকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং রফিক উদ্দিনকে পাকবাহিনীর লােকেরা অজানা স্থানের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তিনি আর ফিরে আসেননি। দেশ স্বাধীন হবার পর জনাব রফিক উদ্দিনের স্ত্রী এ ব্যাপারে বুড়িচং থানায় একটি লিখিত এজাহার দিলে পুলিশ তদন্তক্রমে বিবাদী আবদুল হামিদ আজিজউল্লাহ ও আব্দুস সােবাহানের বিরুদ্ধে। চার্জসিট দাখিল করে। মামলা চলাকালীন বিবাদী আব্দুস সােবহানের মৃত্যুর ফলে তার অনুপস্থিতিতে মামলা চলে। মাননীয় আদালত সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের পর আসামী আব্দুল হামিদ ও আজিজ উল্লা উভয়কে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং উভয়ের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। উক্ত মামলায় সরকার পক্ষের মােট ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় এবং সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন সরকারি উকিল কাজী হাচিবুর রহমান, এড, আদালত বিবাদীদেরকে বাংলাদেশ ফৌজদারী দণ্ড বিধির ৩৬৪/৩৪ ধারার সাথে রাষ্ট্রপতির আদেশ ৮এর ১১ (এ) মতে দোষী সাব্যস্ত করেন। এবং উপরােক্ত কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন।