হোটেল দেওয়ান অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর)
হোটেল দেওয়ান অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর) পরিচালিত হয় নভেম্বর মাসের শেষের দিকে। এ অপারেশনে নেতৃত্ব দেন মৌলভী সৈয়দ। দেওয়ানহাট ব্রিজের দক্ষিণ পাশেই ছিল হোটেল দেওয়ান। এখানে রাজাকার বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। ডবলমুরিং থানা অঞ্চলের কিছু গুণ্ডাপাণ্ডা ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী)-র সহযোগিতায় এ ক্যাম্পটি গড়ে ওঠে। এখান থেকেই রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা পুরো ডবলমুরিং অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের মধ্যে প্রায় সবাই ছিল সিএসডি গোডাউনের ব্লাকার। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় এলাকার অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত কিছু ব্যক্তি। তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ভয়ভীতি দেখিয়ে লোকজনের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা। ক্যাম্পের রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের ওপর অত্যচার চালাত। তারা নির্দোষ ব্যক্তিদের ধরে এনে মুক্তিপণ দাবি করত। সাধারণ লোকজন ধরে এনে হোটেলে বন্দি করে রাখত এবং তাদের ওপর অত্যাচার চালাত। তাদের টাকা-পয়সা ও মালামাল লুটে নিত। অনেকের কাছ থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করত। বন্দিদের মধ্যে কাউকে স্বাধীনতার পক্ষের বলে সন্দেহ হলে তাকে কর্ণফুলী নদীর তীরে নিয়ে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হতো। এ হোটেলে বন্দি হওয়া অনেককে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। মৌলভী সৈয়দের ঘাঁটি নামে খ্যাত আগ্রাবাদ পানওয়ালাপাড়ার ক্যাম্প থেকে দেওয়ানহাটস্থ এ রাজাকার ক্যাম্প অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা সাধারণ মানুষের বেশে দেওয়ান হোটেলে ঢুকে রাজাকারদের আক্রমণ করেন। অতর্কিত এ আক্রমণে রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের অস্ত্রগুলো দখলে নেন এবং তাদের আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যান। নভেম্বরের এ অপারেশনের পর রাজাকার ক্যাম্পটি বন্ধ হয়ে যায়। রাজাকাররা প্রাণের ভয়ে উক্ত নির্যাতন কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। পরে অবশ্য শত্রুসেনারা এখানে অবস্থান নেয়। [জামাল উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড