বীর বিক্রম হেলাল মোর্শেদ খান
হেলাল মোর্শেদ খান, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৪৮) মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত), সাব-সেক্টর কমান্ডার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৮ সালে সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের জামাল খান রোডে
জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গোলাম আরব আলী খান এবং মাতার নাম সৈয়দা আফুজা খানম। হেলাল মোর্শেদ খান কলেজ পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্ন করে ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।
১০০ জন ক্যাডেট অফিসারের প্রশিক্ষণে বাঙালি ক্যাডেট অফিসারদের মধ্যে তিনি সর্বোচ্চ এবং সম্মিলিত ক্যাডেটদের মধ্যে দশম স্থান অধিকার করে একজন মেধাবী সেনা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তরুণ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি ৭০-এর জাতীয় নির্বাচনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার নির্বাচনী কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।
৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে হেলাল মোর্শেদ খান ঢাকার অদূরে জয়দেবপুরে ৫৭ ব্রিগেড-এর অধীন ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মার্চ মাসে ট্রেনিং সংক্রান্ত কারণে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটায় অবস্থান করছিলেন। ১৯শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে জয়দেবপুরে বাঙালি সৈনিক ও জনতার মিলিত প্রতিরোধের খবর বিবিসি রেডিওর মাধ্যমে জানতে পেরে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হেলাল মোর্শেদ খান দেশে আসার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠেন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই তিনি কৌশলে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে বহনকারী করাচি থেকে ঢাকাগামী শেষ ফ্লাইটটিতে চড়ে ২১শে মার্চ ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছতে সক্ষম হন। ২ দিন ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত বাসায় অবস্থানের পর সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তিনি জয়দেবপুরে পৌঁছান এবং নিজ রেজিমেন্টের সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন।
হেলাল মোর্শেদ খান সিলেট ও কুমিল্লা জেলার অংশ নিয়ে গঠিত ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে সাব-সেক্টর ‘ডি’-এর অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তিনি ছোট-বড় ১৫টির মতো যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দেন এবং দুবার আহত হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ যুদ্ধ এবং আশুগঞ্জের ২ মাইল দক্ষিণে লালপুর যুদ্ধে তিনি আহত হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দেয়াসহ অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলাল মোর্শেদ খানকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মুনিরা মুর্শেদ খান। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড