হানুয়া যুদ্ধ (মনিরামপুর, যশোর)
হানুয়া যুদ্ধ (মনিরামপুর, যশোর) সংঘটিত হয় জুন মাসের প্রথমদিকে। যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার হানুয়ার গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের এ- যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ফজলুল হক। এতে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং বাকি মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে নিরাপদ স্থানে সরে যান। ঘটনার দিন পাকসেনাদের একটি দল ঘাঁটি গড়ার উদ্দেশ্যে মণিরামপুর থানা সদর থেকে নেঙ্গুড়া মাদ্রাসায় যায়। এ খবর পেয়ে ফজলু বাহিনী-র প্রধান ফজলুল হক পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। রেকি করার জন্য তিনি ২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মাদ্রাসা এলাকায় পাঠান। রাজাকাররা এ খবর জেনে যায় এবং মণিরামপুর সেনাক্যাম্পে তা পৌঁছে দেয়। ফলে রেকি করতে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ২ জন সোর্স পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের হত্যা করে। এরপর বেলা ২টার দিকে ফজলুল হকসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা নওশের সরদারের বাড়িতে খাবার খাওয়ার সময় ১০০ জনের মতো পাকিস্তানি সৈন্য তাঁদের ঘিরে ফেলে আক্রমণ চালায়। ফজলুল হক তাঁর সহযোদ্ধাদের নিরাপদে সরিয়ে দিয়ে নিজে ফায়ারিং শুরু করেন। এক পর্যায়ে পাকসেনারা পেছন থেকে তাঁকে ঘিরে ফেলে। গ্রামের এক মহিলা তা দেখতে পান। শিশুকে যেতে দেখলে পাকসেনারা সন্দেহ করবে না – এমন কৌশল নিয়ে নিজে বাড়ি থেকে না বেরিয়ে তার শিশু সন্তানকে পাঠিয়ে ফজলুল হককে সতর্ক করলে তিনি বুঝতে পারেন শত্রুসেনারা তাঁর কাছাকাছি চলে এসেছে। এ-সময় ক্ষিপ্র গতিতে তিনি নিরাপদ স্থানে চলে যেতে সক্ষম হন। এভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে তিনি রক্ষা পান। এ-যুদ্ধে কৃষ্ণসহ ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং বাকি মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে নিরাপদ স্থানে সরে যান। [আমিনুর রহমান মামুন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড