You dont have javascript enabled! Please enable it! যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক হাবিবুর রহমান - সংগ্রামের নোটবুক

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক হাবিবুর রহমান

হাবিবুর রহমান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৩৭) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩৭ সালের ১২ই আগস্ট বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার গাববাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম মুন্নুজান বেগম এবং পিতার নাম আবুল হাশেম হাওলাদার। তিনি পিরোজপুরের দামুড়া স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি ছিলেন খুবই সাহসী।
হাবিবুর রহমান ১৯৬৩ সালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ (ইপিআর)-এ যোগ দেন। ইপিআর-এর সিপাহি হিসেবে তিনি ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রম, রাঙ্গামাটি ও খুলনায় চাকরি করেন। ৭১-এর মার্চে তিনি খুলনার রূপসায় সাপোর্ট প্লাটুনে দায়িত্বরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি খুলনা থেকে নিজের রাইফেল নিয়ে পালিয়ে কাশিপুর আওয়ামী লীগ অফিসে জমা দেন। এখান থেকে তিনি নিজের গ্রাম গাববাড়িতে যান এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেন। উজিরপুরে পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ভারতে যান। ৯ নম্বর সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত করে তাঁকে বরিশাল-পটুয়াখালী এলাকায় যুদ্ধ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। দেশে ফিরে হাবিবুর রহমান পাকসেনা ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে ১৪টি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি অপরিসীম সাহসিকতা প্রদর্শন করেন। তিনি তাঁর দলের এলএমজি চালাতেন বলে ‘এলএমজি হাবিব’ নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। জয়শ্রী ব্রিজ (শিকারপুর) অপারেশনের সময় হাবিবুর রহমান নিজে ৩ জন পাকসেনা ৫ জন রাজাকারকে তাদের ক্যাম্প থেকে ধরে আনেন। ভাণ্ডারিয়ার একটি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তিনি ৭ জন পাকসেনাকে আটক করেন। ২রা ডিসেম্বর বরিশালের বাবুগঞ্জ যুদ্ধে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। একাধিক যুদ্ধে তিনি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার হাবিবুর রহমানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস্ (বিডিআর; বর্তমান বিজিবি)-এ যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে তিনি সুবেদার হিসেবে বিডিআর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ৩ কন্যা ও ৪ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম নূর জাহান বেগম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড