হাটুভাঙ্গা যুদ্ধ (রায়পুরা, নরসিংদী)
হাটুভাঙ্গা যুদ্ধ (রায়পুরা, নরসিংদী) সংঘটিত হয় ১৭ই নভেম্বর। এতে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। অপরপক্ষে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত এবং কয়েকজন গ্রামবাসী নিহত হন।
রায়পুরা থানার মুক্তিযুদ্ধে হাটুভাঙ্গা একটি অতি পরিচিত নাম। হাটুভাঙ্গা গ্রামের মাইলখানেক উত্তরে শিবপুর থানা এলাকা। এলাকাটি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। কাজেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এটি ছিল অত্যন্ত নিরাপদ জায়গা। তাই সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। হাটুভাঙ্গা গ্রামের মাঝখান দিয়ে রেল লাইন ভৈরবের দিকে চলে গেছে। এ রেল লাইন দিয়েই নরসিংদী থেকে রায়পুরা ও ভৈরবে পাকবাহিনী তাদের সৈন্য, অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ নিয়ে যাতায়াত করত। পুরাতন কুঠির বাজার দিয়ে শিবপুর-বেলাব-পুটিয়া যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটিও ছিল হাটুভাঙ্গা এলাকায়। এছাড়া রায়পুরার মুক্তিযুদ্ধের প্রধান ব্যক্তি গয়েছ আলী মাস্টারের বাড়িও ছিল এ গ্রামে।
মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি ক্যাম্প কাছাকাছি অবস্থানে থাকায় যখনই তাঁরা রেলে করে পাকসেনাদের যাতায়াতের খবর পেতেন, তখনই রেলে আক্রমণ করতেন। অপরদিকে এ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত অবস্থান ভেঙ্গে দেয়ার জন্য পাকবাহিনীও তৎপরতা চালাত। এ কারণেই এ এলাকায় কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এসব যুদ্ধে গয়েছ আলী মাস্টার, লতিফ ও এন এ চৌধুরী নেতৃত্ব দেন।
রায়পুরা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে হাটুভাঙ্গা গ্রাম। ১৭ই নভেম্বর পাকবাহিনীর একটি কোম্পানি রায়পুরা থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশে যাত্রা করেছে এ খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনী হাটুভাঙ্গা ও বাঙালি নগরের উত্তর পাড়ায় ক্যাম্প স্থাপন করে। পাকসেনারা ৩টি গ্রুপে ভাগ হয়ে রেল লাইন বরাবর পশ্চিম দিকে যেতে থাকে। দুটি গ্রুপ খানাবাড়ি স্টেশনের দিকে চলে যায় এবং তৃতীয় গ্রুপটির ওপর মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে। এতে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। অপরপক্ষে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত এবং কয়েকজন গ্রামবাসী নিহত হন।
হাটুভাঙ্গা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন গয়েছ আলী মাস্টার, মইন উদ্দিন চৌধুরী, কিরন, কাউসার, নায়েক সুবেদার আ. গফুর, নায়েক জালাল, লতিফ, সার্জেন্ট শাহজান, জয়দার আলী কমান্ডার, হাবিলদার ইদ্রিছ, ছিদ্দিক ও আজিজ। [মুহম্মদ ইমাম উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড